Crss colum

Friday, August 24, 2018

বাওবাব এক অদ্ভুত গাছ।

বাওবাব এক অদ্ভুত গাছ।
বাওবাব এক অদ্ভুত গাছ।
যদি কখনো এমন গাছ দেখেন  যার শিকড় মাথার দিকে তবে খুব অবাক হয়ে যাবেন।
তাই না?
আসলে বাওবাব গাছটি এক নজরে দেখে মনে হয়‌ ঈশ্বর বুঝি গাছটিকে উল্টো করে সৃষ্টি করেছেন।
বাওবাব মূলত শুস্ক ভূমির বৃক্ষ। এটা প্রধানত আফ্রিকা ও আরব দেশের মরু অঞ্চলে দেখা যায়।
এটা Adansonia গোত্রের গাছ।
মাটি থেকে বিশাল আকারের কান্ড সোজা উঠে গেছে ।একদম মাথার কাছে কিছু  ঝোপঝাড়ের মতো ডালপালা,এক ঝলক দেখলে মনেই হয় কেউ বুঝি উল্টো করে গাছটিকে পুঁতে দিয়েছে।
এটা পর্ণমোচী শ্রেণীর বৃক্ষ। বছরের বেশীরভাগ সময় এই গাছে কোন পাতা থাকে না।
কোনো কোনো বাওবাব গাছকে পঁচাত্তর ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়।
মরু অঞ্চলের মানুষের কাছে এই গাছ খুব আদরণীয়। বাওবাব গাছ কান্ডের মধ্যে জল জমিয়ে রাখে। এই গাছের বাকল থেকে পোশাক ও দড়ি তৈরী করা হয়। এই গাছের বীজ খাওয়া যায়।যা ভিটামিন সি তে ভর্তি। এর বিশাল কান্ডের ভিতরে গর্ত করে  মানুষ বসবাস করতে পারে। অনেক মরু যাত্রী মরুঝড়ের সময় বাওবাব গাছের কান্ডের গর্তে আশ্রয় নেয়।
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের সাভানুর এ তিনটি বাওবাব গাছ আছে। এই গাছ বহু বছর বেঁচে থাকে। সবচেয়ে প্রাচীন বাওবাব গাছটির কার্বন ডেটিং পরীক্ষায় পাওয়া গেছে তার বয়স ছয়‌হাজার বছর।

Friday, August 17, 2018

সম্রাট দেবপাল , বাঙালির বিস্মৃত ইতিহাস

সম্রাট দেবপাল , বাঙালি র বিস্মৃত ইতিহাস।
রাষ্ট্রকূট  সম্রাট অমোঘবর্ষে র  দূত এসেছে গৌড়েশ্বর সম্রাট দেবপালের কাছে।
দেবপাল  পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের পৌত্র ,ও সম্রাট ধর্মপালের পুত্র।  পিতা ধর্মপাল ও মাতা রন্না দেবী আজ গত হয়েছেন ।দেবপালের কাঁধে আজ এই গৌড় সম্রাজ‍্যের ভার । সে ভার তিনি ভালোই সামলাচ্ছেন।  এই কাজে সর্বক্ষণ তার সাথী মহামন্ত্রী দর্ভপাণি।
কিন্তু হঠাৎ রাষ্ট্রকূট রাজ অমোঘ বর্ষের দূত সব গোলমাল করে দিলো। অমোঘবর্ষ রাষ্ট্রকূট রাজ গোবিন্দের পুত্র। পিতার ন‍্যায় বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে তার মধ্যে। দেবপাল সম্পর্কে তার ভাগ্নে ।মহারাজ ধর্মপাল সমগ্র উত্তরাপথের রাজচক্রবর্তী হিসাবে সম্মান পেয়েছেন। তিনি একই সাথে  গুর্জর রাজ নাগভট ও তিব্বত রাজ এর আক্রমণ থেকে উত্তরাপথ তথা গৌড়মগধ সাম্রাজ্য কে রক্ষা করেছিলেন।আর এই কাজে তাকে সহায়তা করেছিলেন রাষ্ট্রকূট শক্তি। তখন ধর্মপালের ভীষণ বিপদ। একদিকে আক্রমণ শানিয়েছে তিব্বত রাজ শ্রক শেম গাম্পো।অন‍্যদিকে সেই বিপদের সময় গুর্জর রাজ নাগভট তার বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে গৌড় সাম্রাজ্যের সীমায়।সে এক ভীষণ বিপদের দিন। ঠিক সেই সময় দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূটরাজ গোবিন্দ সাহায্যে র হাত বাড়িয়ে দিলেন । অচিরেই গৌড় ও রাষ্ট্রকূট মিলিত শক্তি র কাছে উভয় আক্রমণকারী শক্তি পরাভূত হলো। গোবিন্দ বিনা কারণে ধর্মপালকে সহায়তা করেন নি। তিনি তার কন্যা রন্নাদেবী কে বিবাহের প্রস্তাব পাঠালেন গৌড় সম্রাট ধর্মপালের কাছে। কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রকূট রাজকন্যা রন্নাদেবী গৌড়ের সাম্রাজ্য লক্ষ্মী রূপে আগমন করলেন । সেসব বহু দিন আগের কথা।
তারা সকলেই আজ গত হয়েছেন।রাষ্ট্রকূট রাজ এখন গোবিন্দ পুত্র অমোঘবর্ষ।
তার বড়ই শখ আর্যাবর্তের সব নৃপতি তার অধীনতা স্বীকার করে নেবেন।তাই তিনি দূত পাঠিয়েছেন সব নৃপতি বর্গের কাছে। দূত এসেছে দেবপালের কাছেও। অধীনতা স্বীকার করার দাবি নিয়ে। গৌড়ের রাজসভা সেদিন প্রত‍্যক্ষ করলো গৌড়েশ্বরের চোখে দৃঢ়তার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।
অমোঘবর্ষের এই অন‍্যায় দাবি মেনে নেওয়ার প্রশ্ন ই ওঠে না।
পাল্টা লিপি গেল গৌড়ের পক্ষ হতে । সেই লিপি তে লেখা রইলো “ রাজকুমারী রন্না দেবীর সাথে সম্রাট ধর্মপালের  বিবাহের যৌতুক হিসেবে বিন্ধ‍্যপর্বতের পাদদেশে কয়েকটি ছোট রাজ‍্য গৌড় সাম্রাজ্যের অধীনে আসার কথা। কিন্তু তা এতোকাল সম্পন্ন হয় নি। সুতরাং রাষ্ট্রকূট রাজ অমোঘ বর্ষ তা অবিলম্বে গৌড়েশ্বর দেবপালের নিকট প্রদান করুক।”
গৌড়ের দূতের কাছে লিপি পাওয়ার পর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো অমোঘ বর্ষ। এতদূর স্পর্ধা ঐ অর্বাচীন গৌড় রাজের। এতদিন আত্মীয় বলে বিরোধীতা করেন নি। কিন্তু আর নয়। অবিলম্বে সাজ সাজ রব পড়ে গেল । বিরাট রাষ্ট্রকূট সৈন্য বাহিনী বেরিয়ে পড়লো গৌড়ের উদ্দেশ্যে।
এদিকে যুদ্ধে র প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে এপক্ষেও।
দেবপালের দুই ভাই বাকপাল ও জয়পাল সুদক্ষ সেনাপতি।
জয়পাল ছিল উৎকলে।আর বাকপাল ছিল নেপাল সীমান্তে।
দেবপালের নির্দেশে বাকপাল ও জয়পাল মিলিত হলো কনৌজে। দেবপাল তার বিন্ধ‍্যপর্বত অভিযানে সর্বাধিনায়ক করলেন বাকপাল কে।
বাকপাল বিরাট সৈন‍্য সজ্জায় ব‍্যাপ‌ৃত হলেন। অর্ধলক্ষ রণহস্তী, ঢালী সৈন্য অর্ধলক্ষ,  রথী ও অশ্বারোহী মিলে ত্রিশ হাজার।
ইতিমধ্যে গৌড়  হতে এলো মহামন্ত্রী দর্ভপাণির নির্দেশ।
“এখনি যুদ্ধ যাত্রা করো না, রাশ টেনে ধর।”
কারণ গুর্জর রাজ নাগভটের পৌত্র ভোজরাজ।
ভোজরাজের মনের ইচ্ছা তার পিতামহ নাগভটের মতোই উত্তরাপথের রাজচক্রবর্তী হওয়ার। তিনি গৌড় ও রাষ্ট্রকূট উভয় শক্তি র বিষয়ে চর মুখে অবগত ছিলেন। তিনি চাইলেন গৌড় ও রাষ্ট্রকূট শক্তি যখন বিন্ধ‍্যপর্বতের প্রান্তে লড়াইয়ে ব‍্যাস্ত থাকবে ঠিক তখনই তিনি কনৌজ দখল করবেন।
গুর্জররাজ ভোজের ওপর আগাগোড়া সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন মহামন্ত্রী দর্ভপাণি। তিনি যখন চর মুখে  খবর পেলেন রাষ্ট্রকূট শক্তি ও গুর্জর শক্তি উভয়েই বিরাট সৈন্য বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছে কনৌজ স্কন্ধাবার উপলক্ষে , তিনি গোপন নির্দেশ পাঠালেন রাজভ্রাতা বাকপাল কে তার কনৌজ স্কন্ধাবার থেকে এখনি না বের হতে।
ভোজরাজ পরিকল্পনা ঠিক করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী দর্ভপাণি তার চাল উল্টো করে দিলেন।
কনৌজের অদূরে রাষ্ট্রকূট সৈন্য ও গুর্জর সৈন্য মুখোমুখি হলো। অমোঘবর্ষ ও ভোজরাজ উভয়েই চেয়েছিলেন গৌড় কে চূর্ণবিচূর্ণ করতে , কিন্তু বাঙালী র কূটনীতির কাছে পরাভূত হয়ে উভয় শক্তি মুখোমুখি হলো।গুর্জর ও রাষ্ট্রকূট উভয় শক্তি বংশানুক্রমিক শত্রু। তাই যুদ্ধ হলো । যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পলায়ন করলো ভোজরাজ। কিন্তু রাষ্ট্রকূট বাহিনী প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে।বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রকূট সৈন্য বাহিনী র। এই অবস্থায় গৌড়ের সাথে লড়তে যাওয়া মানে আত্মহত্যা র সামিল।
তাই যতো শীঘ্র সম্ভব  পলায়ন যুক্তিযুক্ত। ঠিক এই সময় সেনাপতি বাকপালের কাছে এলো মহামন্ত্রী দর্ভপাণির নির্দেশ। “রাজভ্রাতা এবারে রাশ আলগা দাও, ঝাঁপিয়ে পড়ো দূর্বল রাষ্ট্রকূট বাহিনীর উপর।”
জলের মতো ধেয়ে এলো গৌড়ের বাহিনী। পলায়নপর রাষ্ট্রকূট বাহিনীর সাথে লড়াই হলো বিন্ধ‍্যপর্বতের পাদদেশে।
ইতিহাসে প্রথম বার রাষ্ট্রকূট শক্তি পরাভূত হলো বাঙালি দের কাছে।
সন্ধি করতে বাধ্য হলেন অমোঘ বর্ষ। স্বীকার করে নিলেন দেবপাল উত্তর ভারতের রাজচক্রবর্তী হিসাবে।আর সেই সাথে বিন্ধ‍্য পাদদেশে র যে ছোট ছোট রাজ‍্য গুলো নিয়ে বিরোধ তা তুলে দিতে বাধ্য হলেন গৌড় সম্রাট দেবপালের হাতে।


পরবর্তীতে দেবপাল অভিযান চালিয়ে ছিলেন আরো দক্ষিণে।কন‍্যাকুমারিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল তার সাম্রাজ্য। সবটুকু তার সরাসরি শাসনাধীন না থাকলে ও দেবপাল তার জীবদ্দশায় সমগ্র ভারতের সার্বভৌম সম্রাট হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন।