Crss colum

Sunday, January 14, 2018

বাংলা অনলাইন কল্পবিজ্ঞান - মহাশূন্যের পথিক (মধ‍্যম পর্ব)।

আর কয়েকটা মূহুর্ত। তারপর সব শেষ। মহাকাশ যান “নিউটন 2350”এই অজানা অচেনা মহাকাশে এক আশ্চর্য চকচকে গোলকের আঘাতে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
রোশনি সজল চোখে রাহুলের দিকে তাকালো।যতই নিজেকে দৃঢ় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করুক, আসলে সে একজন মেয়ে।তাই আবেগ অনুভূতি গুলি পুরো পুরি চেপে রাখতে পারেনি।
রাহুল বললো, “দুঃখ পেয়োনা ।এ আমাদের গর্বের মূহুর্ত। বিজ্ঞানের সাধনায় জীবন উৎসর্গ করছি আমরা। এই কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মহাকাশযানটির  অগ্রভাগ গোলকটি কে স্পর্শ করলো।

এরপর …….


যেমন করে এক টুকরো পাথর জলের মধ্যে ডুবে যায় তেমনি মহাকাশযান  ‘নিউটন2350’ গোলকটি র অভ‍্যন্তরে ঢুকে গেলো।
কোন ক্ষতি হলো না। গোলকটি র অভ‍্যন্তরে  ঠিক মধ‍্যস্থলে মহাকাশ যানটি স্থিতিশীল হয়ে গেল।
রাহুল ও রোশনি দুজনেই অবাক হয়ে গেলো।এ কেমন আশ্চর্য রহস্য। মহাকাশ যান ‘নিউটন 2350’ এর গণকযন্ত্র বলছে  এই মুহূর্তে যানটির গতিবেগ শূন্য।অথচ মহাকাশ যানের জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে গোলকটি র  চতুর্দিকে র মহাকাশের পটভূমি অতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে।এর অর্থ একটাই । গোলকটি গতিশীল। এবং মহাকাশযানটি কোনো অজানা কারণে গোলকটি র অভ‍্যন্তরে স্থির হয়ে আছে।
যদিও মহাকাশ যানটি র পরমাণু চালিত ইঞ্জিনটি চালু আছে। ইতিমধ্যে 'আই’ একটা জরুরী  ইনফরমেশন দিলো। গোলকটি র অভ‍্যন্তরে পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল আছে যা কিনা অক্সিজেন সমৃদ্ধ ও মানুষের বসবাস এর জন্য উপযুক্ত।
রাহুল রোশনি কে বললো ,”তুমি যানের ভিতরে থাকো। আমি একবার যানের বাইরে যাচ্ছি।  রোশনি বললো , “না , তোমার একা মহাকাশ যানের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। আমার মনে হয় তোমার সঙ্গে আমার যাওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে 'আই’ কেও নিয়ে যাওয়া উচিত।কারণ কখন কি বিপদ আসবে,তা জানি না।  'আই’ সঙ্গে থাকলে যে কোন বিপদের মোকাবিলা করা সহজ হবে ।”
রাহুল রোশনি র যুক্তি এড়িয়ে যেতে পারলো না।
যদিও 'আই’  এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী গোলকটি র ভিতরের আবহাওয়া মানুষের পক্ষে অনুকূল, তবুও সাবধানতা হিসাবে স্পেস শুট পরে নিলো।
রোশনি ও রাহুল 'আই’ এর সাথে মহাকাশ যান  ‘নিউটন2350’এর বাইরে এলো।
সবাই বাইরে আসার পর ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনা।
যে মূহুর্তে সবাই মহাকাশ যানের বাইরে এলো , মহাকাশযানটি র কম্পিউটার চালিত স্বনিয়ন্ত্রিত  দরজাটি ভিতর হতে  বন্ধ হয়ে গেলো। মহাকাশ যানটি এখন দূর নিয়ন্ত্রিত ব‍্যবস্থা দ্বারা মহাকাশ চারীদের সাথে যুক্ত।আর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে , 'আই’ এর অধীনে।
কিন্তু সবাই কে আশ্চর্য করে মহাকাশ যানটি হঠাৎ গতিশীল হলো। রাহুল বিপদের সংকেত বুঝতে পেরে , 'আই’ কে বললো , “'আই’ মহাকাশ যানটির হঠাৎ গতি বেড়ে যাচ্ছে কেন ? এখনি ওটাকে থামানোর ব‍্যবস্থা করো।”
'আই’ উত্তর দিলো , “কমান্ডার , আমি কিছু ই করছি না, আমি  থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা  করছি। কিন্তু ভিতরে র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আমার কমান্ড রিসিভ করছে না । আমার সন্দেহ হচ্ছে কোন শক্তি আমাদের মহাকাশ যানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। এবং তারা আমার কমান্ড রিসিভ করার যন্ত্র টি বন্ধ করে দিয়েছে।”
এরপর সকলের চোখের সামনে মহাকাশ যানটি গোলকটি র বাইরে ছিটকে গেলো।
পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার শেষ সম্ভাবনা টুকুও রইলো না।



একটা গোলকের ভিতরে তিনজন। দুটি জীবিত প্রাণী,আর একটি অতীব বুদ্ধিমান রোবট। কোন এক অজানা লক্ষ্য বস্তু র দিকে গোলকটি ছুটে চলেছে।সময় যেন থমকে গেছে। অভিযাত্রী যা বিস্ময়ে চেয়ে রইলো বাহির পানে। রাহুল স্পেস শ‍্যুটের হেলমেট খুলে ফেললো। না , বাইরের বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস প্রশ্বাসের কোন কষ্ট হচ্ছে না। রাহুলের দেখাদেখি রোশনি ও  হেলমেট খুলে ফেললো।
এরপর শুধুই অপেক্ষা । অপেক্ষা গন্তব্যে পৌঁছবার।
কতক্ষন বা কতদিন গোলকটি তাদের নিয়ে চললো অজানা র উদ্দেশ্যে জানা নেই। সময়ের হিসাব নেই। নেই ক্ষুধা ,তৃষ্ণা ,ঘুম বোধ। শুধু ই এগিয়ে চলা ।
'আই’ বললো , “নক্ষত্রের পজিশন দেখে অনুমান করছি , আমরা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র স্থলের দিকে এগিয়ে চলেছি।”
রোশনি 'আই’কে জিজ্ঞেস করলো “বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র স্থলে কি আছে ?”
'আই’ উত্তর দিলো “বিজ্ঞানী রা এখনো জানেন না। তবে কিছু বিজ্ঞানী বলেন কেন্দ্রীয় অংশ পুরো ফাঁকা, আবার কেউ বলেন বিশ্বের কেন্দ্র স্থলে এক বিশাল ব্ল‍্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর আছে। আমি এপর্যন্ত যেটুকু তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং সেগুলো অ‍্যানালিসিস করে নিশ্চিত হয়েছি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে এক কোটি কোটি আলোকবর্ষ ব‍্যাপী কৃষ্ণ গহ্বর বিদ‍্যমান রয়েছে। আমার সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত কিনা আপনারা কিছু ক্ষণের মধ্যে ই বুঝতে পারবেন। এই মূহুর্তে গোলকটি অতি আলোক গতি'তে ছুটে চলেছে। আমরা সময়কে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছি।কারণ সময় আলোকের গতি সম্পন্ন।আর আমরা আলোর চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশি গতিতে এগিয়ে চলেছি।
ঐ দেখুন আমার অনুমান সঠিক। দূরে দেখুন কৃষ্ণ গহ্বর দেখা যাচ্ছে। যদিও ঐ কৃষ্ণ গহ্বর টি প্রায় একশো আলোকবর্ষ দূরে আছে ।”

দেখতে দেখতে কৃষ্ণ গহ্বর টি গোলকটি র আরো কাছে চলে এলো।
আর কয়েকটা মূহুর্ত পর গোলকটি সোজা কৃষ্ণ গহ্বরের মধ্যে ঝাঁপ দেবে।যেখান থেকে আলোও ফিরতে পারে না।(মহাশূন্যের পথিক - মধ‍্যম পর্ব শেষ)
[পরবর্তী পর্বে র জন্য এখনি ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন আমার অশ্বডিম্ব ব্লগ]

No comments:

Post a Comment