Crss colum

Sunday, March 12, 2017

মাঝ রাতের আতঙ্ক .

মাঝ রাতের আতঙ্ক  ---- ভূতেশ বাবু অনেক কিছু বিশ্বাস করেন কিন্তু ভূত বা ভগবান কোনোটাই বিশ্বাস করেন না . জীবনে অনেক দুঃখ কষ্টে পড়েছেন কিন্তু কখনো ভগবানের নাম নেননি . আসলে খুব ছোটোবেলায় উনি খেলতে খেলতে মায়ের একটা সোনার চেন হারিয়ে ফেলেছিলেন . মা সোনার চেন টা  টেবিলে খুলে স্নান করতে গিয়েছিল .সেই সুযোগে ছোটো ভূতেশ চেনটা নিয়ে খেলছিলো .খেলতে খেলতে ছোটো ভূতেশ  চেনটা হারিয়ে ফেলে .তারপর কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি .খুঁজে না পেয়ে মায়ের মারের ভয়ে সরল বিশ্বাসে ঠাকুর ঘরে প্রণাম ও কেঁদে ভাসানো .কিন্তু ঠাকুর এমনই পাষাণ  ছোটো ভূতেশ অতক্ষণ কাঁদা সত্ত্বেও হারিয়ে যাওয়া জিনিসটা ফেরত দিলো না .তারপর যা হয় .বাবা , মা দুজনের হাতে উত্তম মাধ্যম ঠেঙানি . সেই থেকে ভূতেশবাবু ভগবানে আর কখনো বিশ্বাস করেন নি .ছোটোবেলার সেই অবিশ্বাস বয়স বাড়ার সাথে আরো পাকা হয়েছে .সেই সাথে ভূত প্রেত ইত্যাদি সবকিছু তেই বিশ্বাস চলে গেছে . এখন ভূতেশ বাবুর বয়স পঁয়ষট্টি .একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করতেন .অবসর নেবার পর  কিছুদিন ঘরে বসে ছিলেন .কিন্তু যারা কাজ পাগল মানুষ তাদের ঘরে মন টিকবে কেনো  ?তাই আবার চাকরির চেষ্টা .শেষে এক বন্ধুর সুপারিশে মাছের ভেড়ির পাহারাদারের চাকরি . এই অঞ্চলে প্রচুর মাছের ভেড়ি আছে . পাহারার ব্যবস্থা না থাকলে মাছ চুরি হয় .তাছাড়া অনেক সময় শত্রুতা করে জলে বিষ মিশিয়ে মাছ মেরে দেয় .তাই সব ভেড়ির মালিক পাহারার ব্যবস্থা রাখে . ভূতেশ বাবুকে নিয়ে দুজন পাহারাদার .ভূতেশবাবু দিনের বেলা আর রামরতন বলে একজন বিহারী রাতের বেলা থাকে .   বারো ঘণ্টা করে ডিউটি .কাজে লাগার পর দিন গুলো ভালোই কাটছিলো ভূতেশবাবুর .বিরাট জায়গা নিয়ে মাছের ভেড়ি .চার চৌকো আকৃতির .একদিকের পাড় থেকে খানিকটা সেতুর মতো পাড় ভেড়ির মাঝামাঝি পর্যন্ত এগিয়ে গেছে .যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা তাঁবু খাটানো .সারাদিন ভূতেশবাবুর তাঁবুর মধ্যেই কেটে যায় . তাঁবু থেকে বেরোলেই পুরো ভেড়ির চারপাশ টা নজরে আসে .ভূতেশবাবু আসার সময় পাড়ার লাইব্রেরি থেকে কিছু গল্পের বই নিয়ে আসেন .দুপুরে তাঁবুর ভেতরে স্টোভে দুটো চালডাল ফুটিয়ে নেন .খেয়েদেয় একটা চমতকার ভাতঘুম দেন .ঘুম থেকে উঠে একটু ঘোরা ঘুরি অথবা গল্পের বই পড়া .সন্ধ্যা সাতটা বাজলে রামরতন আসে .তাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ি চলে আসেন .মাঝেমাঝে রামরতনের সাথে দু চারটে কথাবার্তা হয় .ভূতেশবাবু একদিন রামরতন কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি চলে যাওয়ার পর রামরতন কি করে ? রামরতন তার ভোজপুরি হিন্দিতে বলেছিল “ ইখানে বাবু রাতে ভূত পিরেতের আড্ডা .হামি খেয়ে লিয়ে এক ছিলিম গাঁজা খেয়ে শুয়ে পড়ি .একদম সুবা নিকলতা হুঁ .” শুনে ভূতেশবাবু মনে মনে খুব হেসে ছিলেন.শালা ভূত না গাঁজার নেশায় উল্টো পাল্টা দেখা .

কিছু দিন বাদে রামরতন দেশে গেলো .ভেড়ির মালিক ভূতেশবাবুকে রাতে পাহারা দিতে বললেন .সেইমতো ভূতেশবাবু রাতে আসতে লাগলেন .কয়েকদিন কেটে গেলো .

তারপর এলো সেই দিন .সেদিনটা ছিলো পূর্ণিমা .আকাশে ভরা চাঁদের আলো .চারিদিকে জ্যোতস্না . অন্যদিনের মতো আজ সন্ধ্যার কিছু পরেই ঘর থেকে আনা খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিলেন .মাঝ রাত্রে প্রসাবের বেগ লাগায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো . উঠে তাঁবুর বাইরে এসে প্রসাব করে চারিদিকে দেখতে লাগলেন .সঙ্গে টর্চ আছে .এদিকে ওদিকে আলো ফেলতে ফেলতে হঠাত্ লক্ষ্য করলেন তার সামনে দিকে ঠিক ভেড়ি অপর পাড়ে কেউ একজন দাঁড়িয়ে. টর্চের আলোয় মনে হলো মহিলা. ভূতেশবাবু একটা জোরালো হাঁক দিলেন  “কে ?” কোনো জবাব এলো না .আশেপাশে তাকাতে ভূতেশবাবুর শরীর হিম হয়ে গেলো .ঠিক সামনের পাড়ের মহিলাটির মতো অন্য দুই পাড়ে দুই মহিলা দাঁড়িয়ে আছে .ভূতেশবাবুর শরীর দর দর করে ঘামতে লাগলো . হঠাত্ সামনের মহিলাটি জলের কাছে এলো . তারপরে ভূতেশবাবু কে অবাক করে দিয়ে জলের উপর দিয়ে ভূতেশবাবুর দিকে হেঁটে আসতে লাগলো .সাথে সাথে পাশের দুই পাড়ের মহিলা দুটি ও জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে লাগলো .ভূতেশবাবু টর্চের আলোয় পরিস্কার দেখতে পাচ্ছেন তিনদিক থেকে তিনটি ঘোমটা পড়া মহিলা তার দিকে জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসছে .ভয়ে ভূতেশবাবুর শরীর থর থর করে কাঁপতে লাগলো .মুখ দিয়ে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো .হাতের টর্চ পড়ে গেলো .তিনি ঘুরে পিছন ফিরে দৌড়োবার উপক্রম করলেন .কিন্তু  পারলেন না .ঠিক দশহাত দূরে একজন ঘোমটা পড়া মহিলা দাঁড়িয়ে আছে .

পরের দিন সকালে ভেড়ির এক কর্মী ভূতেশবাবুর অজ্ঞান দেহ আবিষ্কার করলো .না এরপর ভূতেশবাবু আর কোনোদিন ভূতে অবিশ্বাস করেননি. (শেষ). 

2 comments: