আমি বললাম “বুঝতে পারলাম না।”
Crss colum
Thursday, December 21, 2017
বাংলা ভূতের গল্প - অশরীরী আতঙ্ক।
আমি বললাম “বুঝতে পারলাম না।”
Tuesday, November 21, 2017
গল্পঃ - দেহহীন।
Monday, November 20, 2017
বাংলা গল্প: গল্প -ভাগ্যবদল
গল্প -ভাগ্যবদল
জীবন খুবই আশ্চর্য ঘটনা র সম্মূখীন করে দেয় মানুষ কে ।রবি যথেষ্ট দৃঢ়চেতা । মৃত্যু র কথা কখনো ই সে চিন্তা করেনি।সে তার অনেক দুঃখের মধ্যেও বাঁচতে চেয়েছিলো। ছোট বেলা থেকেই অসীম কষ্টের সাথে বড় হয়েছে। বাবা মারা গিয়েছিল ছোটবেলায় ।মা অনেক কষ্টকরে রবিকে মানুষ করেছে।মা খুব ভালো সেলাই করতেন । অসময়ে সেই সেলাই বোনা ই সংসার টাকে টিকিয়ে দিলো । কোনরকমে মা ছেলের সংসার চলতে লাগলো। রবি পড়াশোনা য় খুবই ভালো ছিল। একটি র পর একটি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হতে হতে রবি একসময় বি এসসি পাশ করলো। রবি এরপরও মাষ্টার্স ডিগ্রী করতে চেয়েছিলো । কিন্তু মায়ের দিকে চেয়ে আরো পড়বো এই কথাটা বলতে পারলো না ।তার পড়াশোনার খরচ যোগাড় করতে , মা দিন রাত পরিশ্রম করেছেন । রবি পড়াশোনা করার জন্যে এতদিন ভালো করে মায়ের দিকে চেয়ে দেখেনি। আজ দেখলো । মায়ের শরীর একেবারে ভেঙ্গে গেছে । তাই সে “আরও পড়বো” না বলে ,'মা এবার থেকে আমি চাকরি করব' এই কথাটা বললো।
কিন্তু চাকরি কি এতো সহজে ই জোটে ? অনেক চেষ্টার পর একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি তে ৬০০০ টাকা মাইনের একটা চাকরি জুটলো। কিন্তু রবি র এমনই কপাল ,এই চাকরি পাবার এক মাসের মধ্যে মা মারা গেলেন। মা ছাড়া রবির আর কেউই ছিলো না পৃথিবীতে। রবি একা হয়ে গেল।
একাকীত্বের জীবন। সারাদিন কাজ আর রাতে বাড়িতে ফিরে ঘুম। বেশ চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিনের ঘটনা তার জীবন ওলট-পালট করে দিল। মিথ্যা টাকা চুরির অপরাধে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো। চুরির অপবাদ সহ্য হলো না। সে ভাবল এই জীবন রেখে কি হবে? দুঃখ ছাড়া এই জীবনে তার আর কিছুই পাওয়ার নেই । এই জীবন রাখার চেয়ে শেষ করে দেওয়া ভালো। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল আজকেই তার জীবন শেষ করে দেবে। শহরের এক পাশে নদীর ধারে একটি পোড়ো বাড়ির সন্ধান রবি জানতো । সেখানে কেউ থাকেনা। রবি ঠিক করল ওখানে গিয়ে বাড়িটির তিনতলা থেকে নদীতে লাফ দিয়ে জীবন শেষ করে দেবে। রবি সাঁতার জানত না।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রবি সেই বাড়িটির তিন তলার ছাদে উঠলো। তখন সন্ধ্যা হয় হয় । কেউ কোথাও নেই। রবি সেই বাড়িটির ন্যাড়া ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকালো। অনেক নিচে খরস্রোতা নদী বয়ে চলেছে । রবি চোখ বুজে ' মা তোমার কাছে আসছি ' এই বলে নীচে লাফ দিল। নীচে নদীতে পড়বার আগেই , রবি জ্ঞান হারিয়ে ফেললো । জ্ঞান হারাবার ঠিক আগে রবি ডান হাতের আঙুলে শক্ত মতো কিছু একটা বস্তু অনুভব করল ।
রবির যখন জ্ঞান ফিরল, দেখল সে নদীর ধারে মাটিতে শুয়ে আছে । চারিদিকে অন্ধকার। কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু নদীর জলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রবি শুয়েই রইল । শরীরে অসহ্য ব্যাথা। হঠাৎ চোখের সামনে একটা নীল আলোর বিন্দু দেখা দিল। রবি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল। নীল আলোর বিন্দু টা ক্রমশ বড় হতে লাগলো । রবি অবাক হয়ে গেল। এক সময় আলোর বিন্দুটি থেকে একটি মানুষের মূর্তি দেখা গেল। রবি দেখলো মানুষটিকে হুবহু তার মত দেখতে। সেই আলোর মধ্যে থাকা মূর্তি টি তার দিকে চেয়ে হাসলো। রবি প্রশ্ন করল ‘তুমি কে?’। সেই মূর্তি টি উত্তর দিল‘আমি রবিন।’ ‘আমি অন্য জগৎ থেকে আসছি’। রবি পুনরায় প্রশ্ন করল‘তার মানে ?’। রবিন উত্তর দিলো‘তার মানে খুব স্পষ্ট। তোমাদের বিশ্ব তিন মাত্রার। আমরা ছয় মাত্রার বিশ্বে থাকি। আমরা তোমাদের চেয়ে অনেক উন্নত। আমাদের বিশ্বে আমি তোমারি প্রতিরূপ । আমাদের বিশ্বে সময় আরো ধীরে চলে ।প্রতিটি মাত্রা র বিশ্ব একে অপরের মধ্যে পিঁয়াজের খোলা র মতো রয়েছে।শুধু মাত্রা ভিন্ন হওয়ার জন্য ঐ সব মাত্রার অবস্থান কারী প্রাণীরা যা বুঝতে পারে না। তারা ভাবে অন্য জগত বলে কিছু নেই। আসলে বিভিন্ন dimension অসংখ্য প্রাণী জগৎ দ্বারা পরিপূর্ণ। তোমাদের এখানের 100 বছর মানে আমাদের জগতের এক বছর সময়। আজ এক মুহূর্তের জন্য তোমার তিন মাত্রার জগত ও আমার ছয় মাত্রার জগত এর সাথে সংযুক্ত হয়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময় আমার একটি দুর্লভ ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তু এই জগতে তোমার কাছে চলে আসে। কারন এই জগতে তুমি আমারই প্রতিরূপ। এই দুর্লভ বস্তুটি হল আমারই আবিষ্কৃত সৌভাগ্য আংটি। এটি এখন তোমার ডান হাতের অনামিকায় শোভা পাচ্ছে। রবি তৎক্ষণাৎ তার ডান হাত এর দিকে চেয়ে দেখল তার ডানহাতে একটি লাল রংয়ের ধাতব আংটি।
Wednesday, October 18, 2017
শুভ দীপাবলি
Saturday, June 17, 2017
আমি হিন্দু
আমি বৈদিক সভ্যতার উত্তরাধিকার ,আমি হিন্দু .যখন বাকী পৃথিবীর মানুষ অসভ্য বর্বরের জীবনযাপন করছিলো তখন আমিই সমগ্র দুনিয়ার আদর্শ ছিলাম .আমার কাছেই সবাই শিখেছে 'বসুধৈব কুটুম্বকম '.আমিই প্রথম শুনিয়েছি '' অসতো মা সদগময় ,তমস মা জ্যোর্তিগময় ,মৃত্যং মা অমৃতংগময় '' .শান্তির বাণী পৃথিবী জুড়ে প্রচার আমিই করেছি .শূন্যর ব্যবহার আমার কাছ থেকেই পেয়েছে বাকী দুনিয়া .আমিই কৃষ্ণ রূপে পৃথিবীকে শুনিয়েছি গীতার অমৃত বাণী .আমিই রাম রূপে শিখিয়েছি প্রজাপালন . সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আমিই সংগ্রাম করেছি তক্ষশিলার রাজা পুরু হয়ে .কখনো আবার লড়েছি মহারানা প্রতাপ হয়ে হলদিঘাটের যুদ্ধে .যখন সমগ্র বৈদিক সভ্যতার বিরুদ্ধে নেমে এসেছিলো অনাত্মবাদী নাস্তিক বৌদ্ধদের আগ্রাসন ,তখন আমিই আমার ক্ষুরধার যুক্তির জালে পরাস্ত করেছি তাদের ,জগদগুরু শংকরাচার্য হয়ে . আমি শিবাজী রূপে দেখেছি হিন্দু রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন .আমার শাণিত তলোয়ার ঝিলিক দিয়ে ওঠে শত্রুর গলদেশ নিশানা করে .আমি গীতার আদর্শে গড়ে ওঠা বীর যোদ্ধা .আমি গর্বিত হিন্দু .আমার একমাত্র লক্ষ্য - '' পরিত্রানায় সাধুনাং , বিনাশায়চ দুস্কৃতাম ,ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামী যুগে যুগে.
Wednesday, June 14, 2017
হিন্দুত্ববাদ ও বিজেপি
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন ?
যখন বামফ্রণ্টের রাজত্ব ছিলো ,তখন নব্বই শতাংশ মুসলিম বামফ্রণ্টের সমর্থক ছিলো . তৃণমুলের নাম শুনলেই রে রে করে তেড়ে আসতো . ক্রমে বামফ্রণ্টের দিন গেলো .তৃণমুল ক্ষমতায় এলো .দেখুন লক্ষ করে প্রায় সব মুসলিম তৃণমুলকে সমর্থন করছে .
প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় তৃণমুলের পর ক্ষমতায় বিজেপি আসতে চলেছে .
একটা ভবিষ্যতবাণী করছি , বিজেপি ক্ষমতায় এলে দলে দলে মুসলিম পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেবে . কারণ এরা পৃথিবী জুড়ে চলা ,হাজার হাজার কোটি পেট্রোডলার দিয়ে তৈরী 'গোটা দুনিয়ার ইসলামীকরণ ' চক্রান্তের অংশ হিসাবে সবসময় ক্ষমতাসীনের পক্ষে . যখনই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে ,তক্ষুণি সৌদি থেকে সব মসজিদ দরগায় নির্দেশ আসবে প্রতিটি মুসলিমকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করার জন্য .
সুতরাং প্রিয় হিন্দুত্ববাদী বন্ধুরা ,সময় থাকতে সাবধান হও . মনে রাখবে বিজেপিও একটি রাজনৈতিক দল . ক্ষমতায় যাবার জন্য আজ হিন্দুত্ববাদের সমর্থক . কিন্তু কাল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মুসলিমদের পা চাটতে দ্বিধা করবে না . যদি সত্যিই তেমন হয় তবে আমাদের একুল ওকুল ,দুকুল-ই গেলো .
তাই আমরা বিজেপিকে সমর্থন করবো খুব সাবধানের সহিত .
প্রয়োজনে বিজেপিকেও ছুঁড়ে ফেলে নতুন হিন্দুত্ববাদী দলকে গ্রহণ করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে .
রামকৃষ্ণ বলেছিলেন 'সংসারে থাকবি পাঁকাল মাছের মতো , গায়ে পাক লাগতে দিবি না '.
আমি ঐ কথাটাই একটু ঘুরিয়ে বলছি , 'বিজেপি করুন ভালোবাসা ও আবেগরহিত হয়ে শুধুই হিন্দুত্ববাদের স্বার্থে .প্রয়োজনে যদি দেখি বিজেপি হিন্দুত্ববাদ থেকে সরে যাচ্ছে তবে আমরা হিন্দুত্ববাদীরাও নতুন করে ভাবনা চিন্তা করে যে দল হিন্দুদের পক্ষে সহানুভুতি দেখাবে তাদের পক্ষ অবলম্বন করবো .ঠিক আজ যেটা মুসলিমরা করে থাকে .
Thursday, May 25, 2017
সত্যিকারের ভালোবাসা
নিশা যখন হাওড়া স্টেশনে ঢুকলো তখন ঘড়িতে দশটা বাজে | নয় নম্বর প্লাটফর্মে এসে দেখলো রনির বাবা মা দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে | নিশাকে দূর থেকে আসতে দেখেই রনির বাবা এগিয়ে এলো | এক গাল হেসে নিশাকে বললো ‘তুমি আসার একটু আগেই ঘোষণা করলো রাজধানী এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা লেটে আসছে | তার মানে বারোটা নাগাদ আসবে | আমি আর তোমার মাসীমা একটু কফি খেতে যাবো | তুমি কি যাবে আমাদের সাথে ?' নিশা মাথা নেড়ে না বললো | রনির বাবা মা চলে যেতেই নিশা একটা ফাঁকা বেঞ্চি দেখে বসে পড়লো |
আজ রনির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে মনে পড়ছে একদিন রনি তার জন্য অপেক্ষায় থাকতো | সময় কত দ্রুতগামী | এই তো সব কিছু মনে হচ্ছে গত কালকের কথা |কলেজে প্রথম বর্ষে যে কটি মেয়ে ভর্তি হয়েছিল তাদের মধ্যে নিশাই ছিলো সবচেয়ে সুন্দরী |তাই তার পেছনে ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলে লাইন দিয়ে পড়েছিলো | কয়েকজন তো আকারে ইঙ্গিতে এমনও জানিয়ে ছিলো নিশার কথায় প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারবে | শুধুই পরীক্ষা প্রার্থনীয় | প্রথম প্রথম কিছুদিন নিশার অসস্তি লাগতো |কিন্তু ক্রমে ক্রমে নিশা বেশ উপভোগ করতো |
একদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছে | নিশা যাবো না যাবো না করেও শেষ পর্যন্ত সেদিন কলেজে গিয়ে দেখলো আট দশ জন মাত্র ক্লাসে এসেছে | প্রফেসাররা ও সবাই আসেন নি | তাই দুটো ক্লাসের পর ছুটি হয়ে গেলো | তখন মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছে | কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি একটু ধরতেই সবাই এক এক করে হাওয়া হয়ে গেলো | নিশা দেখলো সে আর একটা ফর্সা রোগা পটকা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে | নিশা সেদিন ছাতা আনতে ভুলে গিয়েছিলো | তাই বৃষ্টি পুরোপুরি না থামা পর্যন্ত বেরোতে পারছিলো না | এদিকে বৃষ্টি ধরার কোনো লক্ষণ নেই | ছেলেটি কিন্তু ছাতা এনেছিলো |তবুও সে ছাতা খাটিয়ে চলে যাচ্ছিল না | সবাই চলে গেলে ,ছেলেটি গলা খাঁকারি দিয়ে বললো ‘কিছু যদি মনে না করেন ,তবে একটা কথা বলবো ?’ নিশা তার দিকে চেয়ে বললো ‘বলুন ’ | ছেলেটি বললো ‘বৃষ্টি তো এক্ষুণি থামবে বলে মনে হচ্ছে না ,চলুন না কলেজের ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ করে চা খাওয়া যাক | এই বৃষ্টির দিনে ভালোই লাগবে | ’ নিশা ছেলেটির সাহস দেখে অবাক হয়ে গেলো | সে কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ,আর তাকে অবলীলায় সরাসরি চা খাওয়ার প্রস্তাব ! তবুও নিশা এই একঘেয়ে বৃষ্টির দিন বলে বোধহয় রাজী হয়ে গেলো | ক্যান্টিনটা কলেজের মূল বিল্ডিং এর সামনে খেলার মাঠের একপাশে | বৃষ্টি তখনো পড়ছে | নিশা বললো ‘কি করে যাবো ? ’ ছেলেটি তখন ছাতা খাটিয়ে বললো 'এই ছাতায় চলে আসুন | এইটুকু তো রাস্তা !'
অতঃপর দুজনে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখলো বৃষ্টির দিন বলে বোধহয় ক্যান্টিন প্রায় ফাঁকা | শুধু কয়েকটি জোড়া কপোত কপোতি এক সাইডের টেবিলে বসে আছে | ছেলেটি দুটি ছোটো কাঁচের গ্লাসে চা আর একটা প্লেটে দুটি ভেজিটেবল চপ নিয়ে একটা টেবিলের দু সাইডে মুখোমুখি বসলো | বসেই বললো ‘নিন খাওয়া শুরু করুন | ’ নিশা একটা ভেজিটেবলে একটু কামড় দিয়ে বললো ‘আপনার নাম ?’ ছেলেটি বললো 'একই কলেজের সহপাঠীদের মধ্যে আপনি কথাটা আপত্তিজনক | আমি রনিত | সবাই আমায় রনি বলেই ডাকে | বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র | ' নিশা বললো ‘আমি নিশা | ’রনি মুচকি হেসে বললো ‘জানি | তোমাকে কলেজের সব ছেলেই চেনে | সবার হার্টথ্রব | ’ নিশা এই কথায় একটু লজ্জা পেয়ে বললো ‘ওসব ছাড়ুন |তুমি তো ছাতা নিয়েই এসেছিলে ,তাহলে চলে গেলে না কেনো ?’ রনি ভেজিটেবলটা শেষ করে চায়ে একটা মৌজ করে চুমুক দিয়ে বললো ‘ফাঁকা কলেজ বিল্ডিং এ একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকবে এটা ভাবতে খারাপ লাগছিলো ,আর তোমার সাথে আলাপ করার লোভ তো ছিলোই | ’
কিছুদিন পরের কথা কলেজের এখানে সেখানে রনি আর নিশাকে দেখে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে [Link](http://ashwadimba.wordpress.com) সবাই ভাবতে শুরু করেছে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়েছে | রনি সত্যি সত্যি নিশাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে | কিন্তু নিশার দিকে ব্যাপারটা ছিলো অন্য | রনিকে নিশার ভালো লাগতো কিন্তু নিশার কাছে তার চেয়ে বড় ছিলো তার কেরিয়ার | ছোটোবেলা থেকেই নিশা শুনে আসছে সে সুন্দরী | একটু বড় হতেই দেখেছে ছেলেরা তার জন্য পাগল | এজন্য নিশার মনে ভীষণ গর্ব ছিলো | আর তাই তার মনে জেগেছিলো নামী মডেল হওয়ার বাসনা | কলেজে পড়ার সময়েই এক নামী প্রতিষ্ঠানে মডেল হওয়ার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলো | এই উঠতি সময়ে রনির ভালোবাসার মতো তুচ্ছ সেন্টিমেন্টের জন্য নিশার জীবন নষ্ট করার মানে হয় না | একদিন রনি নিশাকে বলেই ফেললো কথাটা | সেদিনটাও ছিলো বৃষ্টিঝরা দিন | কলেজে ছাত্রছাত্রী কম | ক্লাসে ষ্টুডেন্ট কম থাকায় দুটি ক্লাস হওয়ার পর বাকি ক্লাস বাতিল হয়ে গেলো | সবাই চলে গেলেও নিশারা কয়েকজন বসে গল্প করছিলো | রনির ক্লাসও বাতিল হয়ে গেছে তাই রনিও এসে নিশাদের সাথে যোগ দিলো | প্রায় সব বন্ধুবান্ধব মনে করতো রনি আর নিশা পরস্পরকে ভালোবাসে | তাই রনি আসায় কেউ কিছু মনে করলো না | [Link](http://ashwadimba.blogpot.in ) একটু ভিড় পাতলা হতেই রনি ও নিশা বিরাট ক্লাসরুমের এক কোণে সরে বসলো | বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে | সেই বৃষ্টির দিকেই নিশা তাকিয়ে ছিলো | রনি হঠাত নিশার বাম হাত ধরে নিশার দিকে গাঢ় স্বরে বললো ‘নিশা তোকে একটা কথা বলার ছিলো | ’ নিশা আনমনেই উত্তর দিলো ‘বল | ’ রনি চাপা গলায় বললো ‘নিশা আমি তোকে ভালোবাসি | আমি জানি তুইও আমায় ভালোবাসিস | ’ নিশা রনির কথায় চমকে উঠলো | নিশা আন্দাজ করেছিলো এমন দিন একদিন আসবে | কিন্তু সেই দিনটা যে আজই তা ভাবতে পারে নি | মুহূর্তের মধ্যে নিশা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো | এই ব্যাপারটা কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না | সামনে নিশা নিজের উজ্জ্বল কেরিয়ারের হাতছানি দেখতে পাচ্ছে | কোনো ভাবেই তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে ম্লান হতে দেওয়া চলে না | নিশা চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো কেউ রনির কথা শুনতে পায় নি | সবাই নিজেদের গল্পে মশগুল | নিশা প্রথমে নিজের হাতটা রনির হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো | তারপরে গলা নামিয়ে রনিকে বললো ‘আমরা দুজনে শুধুই বন্ধু | আমি তোকে জীবনসঙ্গী হিসাবে ভাবতেই পারি না | আর তুই যেটাকে ভালোবাসা বলছিস সেটা আসলে তোর মোহ | আশা করি তোর “সত্যিকারের ভালোবাসার” সন্ধান একদিন পাবি | সেদিন যেনো আমায় ধন্যবাদ জানাতে ভুলিস না | ’
রনি নিশার কথাগুলো চুপচাপ শুনলো | হয়তো নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না | এরপর কয়েকদিন রনি কলেজে এলো না | নিশা একদিন ফোন করে জানলো রনির শরীর খারাপ | আরো কয়েকদিনের পর রনি কলেজে এলে নিশার সাথে দেখা হলো | রনি কেমন যেন নিশাকে এড়িয়ে গেলো | তার কয়েকদিনের মধ্যেই পরীক্ষা চলে এলো | সকলেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো | পরীক্ষার পর কলেজে যাওয়া বন্ধ | নিশা রনিকে কয়েকবার ফোন করলো কিন্তু প্রতিবারই রনির মা বললো রনি বাড়ী নেই |
পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে দেখা গেলো রনি খুবই ভালো রেজাল্ট করেছে | নিশা রনিকে কনগ্রাচুলেশন জানাতে গেলে রনি বললো ‘কয়েকদিনের মধ্যেই দিল্লী চলে যাচ্ছি | ওখানে হায়ার ষ্টাডি করবো | তোকে আর জ্বালাবো না | ’ নিশা উত্তরে বললো ‘তুই আমায় জ্বালাস একথা কি কোনোদিন বলেছি ? ফালতু সেন্টিমেন্টের পিছনে না দৌড়ে নিজের কেরিয়ারে মন দে | আশা করি একদিন তুই “সত্যি ভালোবাসা” কাকে বলে অনুভব করবি | ’
সেই শেষ দেখা রনির সাথে |
রনির সাথে দেখা না হলেও নিশার সাথে যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি | হোয়াটস এপের সাহায্যে প্রায়ই খবরের আদানপ্রদান চলে | নিশা জেনেছে রনি এখন বিশাল বড় মাল্টিনেশানাল কোম্পানীতে অফিসার | দিল্লিতে নিজস্ব ফ্ল্যাট ,গাড়ী সবকিছুই রয়েছে | আর নিশা র নিজের জীবন আগের মতো নেই | মডেলিং করতে গিয়ে নিশা জেনেছে ‘যা কিছু চকচক করে তাহাই সোনা নয় ’ | প্রথমদিকে এই জগতের সব কিছুই মনোমুগ্ধকর মনে হলেও পরে দেখেছে এর কদর্য রূপ | এ জগতে প্রতিভার কোনো দাম নেই | এখানে মেয়েদের উপরের দিকে উঠতে গেলে এমন কিছু দিতেই হয় যেটা নিশা কখনই পারবে না | নিশা উচ্ছাকাঙ্খী বটে কিন্তু খারাপ নয় | তাই আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে | আজ নিশার প্রায়ই মনে পড়ে রনির কথা | সেই মুহূর্তে উচ্ছাকাঙ্খার ভূত যদি মাথায় না চাপতো তবে নিশা হয়তো এতদিনে রনির ঘরণী হতো | হয়তো চুটিয়ে সংসার করতো | কিন্তু রনি সেই যে গেছে প্রায় তিন বছর হতে চললো একবারো বাড়ী আসেনি | নিশা কতোবার ভেবেছে হোয়াটস এপে নিজের মনের কথা লিখে পাঠাবে | কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সংযত করেছে | নিশা বুঝেছে সেদিনের সেই আঘাতের ক্ষত রনির বুকে শুকিয়ে যায়নি | সেই আঘাতের উপর ভালোবাসার প্রলেপ দিতে হলে নিশাকে রনির সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইতে হবে | তাই দিন তিনেক আগে রনির মেসেজটা পেয়ে নিশা উতফুল্ল হয়ে উঠলো ,এতদিনে রনি বাড়ী ফিরছে | এবারে আর নিশা ভুল করবে না , প্রথম সুযোগেই ক্ষমা চেয়ে নেবে | মেসেজে রনি জানিয়েছে নিশার জন্য নাকি সারপ্রাইজ আছে | পাগলটা নিশ্চয়ই কোনো দামী গিফট আনছে |
' ডাউন রাজধানী এক্সপ্রেস নয় নম্বর প্লাটফর্মে আসছে ' ঘোষণায় নিশার সম্বিত ফিরে এলো | রাজধানী ঢুকছে | কুলীরা দৌড়াদৌড়ি করছে | ঐ তো সবাই নামছে | ঐ তো রনি | নিশার মনে হলো একছুটে গিয়ে রনিকে জড়িয়ে ধরে | কিন্তু রনির আশেপাশে অনেকগুলি মানুষের ভিড় | রনির বাবা মা এগিয়ে গেলো | রনি ঝুঁকে প্রণাম করলো ওদের | রনির বাবা রনিকে কিছু যেন বললো | রনি এদিকে ওদিকে তাকাতে রনির বাবা নিশার দিকে আঙুল দেখালো | নিশা হাত নাড়লো | রনি মালপত্র বাবার কাছে রেখে নিশার কাছে এগিয়ে এসে বললো ‘কেমন আছিস ? ’নিশা হেসে বললো ‘ভালো | ’রনি বললো ‘তোকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার আছে | আয় আমার সাথে | ’ এই বলে রনি নিশার হাত ধরে নিয়ে চললো ট্রেনের কাছে | নিশা মনে মনে ভাবলো 'পাগলটা একইরকম আছে | সারপ্রাইজ তো পরে দিলেও চলতো | ' তখনো সবাই ট্রেন নামেনি | রনি সেই জটলার দিকে উদ্দেশ্যে ডাকলো ‘সোমা ,সোমা | ’ একটা হলুদ চুড়িদার পরা মেয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এলো | রনি বললো ‘তোমায় বলেছিলাম না আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা | এই হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিশা | ’ তারপরে নিশার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো ‘একদিন তুই বলেছিলিস আমি আমার “ সত্যিকারের ভালোবাসা ” খুঁজে পাবো | আজ পেয়েছি | ধন্যবাদ তোকে | এ হলো সোমা কোলকাতার মেয়ে | দিল্লিতে কাজ করে | আগামী মাসে আমাদের বিয়ে | তোকে কিন্তু আসতেই হবে | ’ নিশা র চোখটা বড় কড়কড় করে উঠলো | চোখের জল কোনোরকমে লুকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো ‘আমার ভবিষ্যতবাণী ফলেছে দেখে ভারী খুশী হলাম | আজ আসি রে | অনেক কাজ বাকী আছে | তুই আসছিস বলে সব ফেলে তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম | চলি ….. | ’
অনেক রাত্রে বিছানায় শুয়ে বালিশে চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিশা বলে চললো “হে ঈশ্বর ……কেন ? …….কেন ? …কেন ? ……” | (শেষ)