Crss colum

Thursday, December 21, 2017

বাংলা ভূতের গল্প - অশরীরী আতঙ্ক।

বাংলা ভূতের গল্প -      অশরীরী আতঙ্ক (ছোট গল্প) ---
এখনো ভাবলেই গায়ে শরীর জুড়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে যায়।
আমাদের নতুন কেনা ফ্ল্যাট বাড়ীটায় রুপা আর আমি মেঝেতে  সতরঞ্জী পেতে রাতের খাবার খেতে বসে ছিলাম। শীতের রাত। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ ছিল। জানালায় ছিটকিনি দেয়া ছিল। কিন্তু দরজা আলতো করে ভেজানো ছিল। দুজনে খেতে খেতে টুকিটাকি সংসারের গল্প করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ ঘরের  দরজাটা সশব্দে খুলে গেল। ঠিক যেন  কেউ দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো। আমার স্ত্রী দরজার দিকে পিছন ফিরে , আমার মুখোমুখি বসে খাচ্ছিল। এই ভাবে দরজা খোলার আওয়াজে রুপা ‘বাবাগো মাগো’ বলে আঁতকে উঠলো।
আমি হেসে বললাম “কি গো ভয় পেলে নাকি ?”
রুপা বললো , “না ,পিছন দিক থেকে  হঠাৎ আওয়াজে চমকে উঠেছি।”
আমি মজা করে বললাম, “ তোমার সবটাতেই ভয় । ঘরে ভূত ঢুকেছে। এই দেখ তোমার ভূতকে বেরিয়ে যেতে বলছি।”
এই বলে আমি দরজার দিকে তাকিয়ে ছদ্ম আদেশের সুরে বললাম , “এই  দরজা খুলে কে ঘরে ঢুকলি রে ? আমার বৌ ভয় পেয়েছে।এখনই দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যা ।”
আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই, দুজনে র শিরদাঁড়ার মধ্যে হিমেল স্রোত বয়ে গেল। দেখলাম ক‍্যাঁচ আওয়াজ করে ঘরের দরজা টা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেলো।
যেন যে এসেছিলো ,সে আমার কথা শুনে চলে গেল।
সেই রাতে আতঙ্কে দুজনেই ঘুমোতে পারলাম না।
পরেরদিন সকালে গেলাম মিলনের বাড়িতে।
এই  ফ্ল‍্যাটবাড়ীটা র খোঁজ ওই এনেছিল।
অফিস থেকে লোন নিয়ে ও জমানো সঞ্চয় ভেঙে অনেক কষ্টে এই ফ্ল‍্যাট বাড়ীটা কিনেছি। এর আগে উত্তর কোলকাতার এক ঘিঞ্জি অঞ্চলে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। বহু দিনের ইচ্ছা ছিলো নিজের বাড়ীর। আমার বেসরকারী চাকরীর অল্প রোজগার। আর রূপার প্রাইমারী স্কুলের চাকরীর  রোজগার,এই ছিল ভরসা।
যাইহোক মাথা গোঁজার আশ্রয় না হয় হলো।
কিন্তু নতুন ফ্ল্যাটে এসব কি বিপত্তি ?
মিলনের কাছ থেকে তেমন কিছুই তথ্য পাওয়া গেলো না।
মিলন শুধু জানে , ফ্ল্যাট টি যার ছিল তারা এখন আমেরিকায় চলে গেছে।
আর ফ্ল্যাট টি র কথা ও জেনেছিলো ওর বন্ধু তপনের কাছ থেকে।তপন সপ্তাহ খানেক আগে দিল্লি তে বদলি হয়ে গেছে।
মিলন আমায় বলল , “তুই এই ইন্টারনেটে র যুগেও এখনো ভূতের বিশ্বাস করিস ? এসব তোদের উদ্ভট কল্পনা।”
আমি ও একটু দোটানায় পরলাম। যা দেখেছি যা যেমন উড়িয়ে দিতে পারছি না, আবার এই আধুনিক যুগে একটা ঘটনা র জন্য ভূত প্রেত ইত‍্যাদী ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।
হয়তো এ ঘটনা র কোনো যুক্তি গ্রাহ্য কারণ আছে যেটা আমি বুঝতে পারছি না।
দেখতে দেখতে বেশ কয়েক দিন কেটে গেলো। নতুন কিছু ঘটলো না। আমরা দুজন ঐ ঘটনার কথা প্রায় ভুলতে বসেছি।
রবি বার আমার অফিসের ছুটি । রুপা বললো , “চলো না আজ একটা সিনেমা দেখে আসি।” আপত্তি র কিছুই ছিলো না । সুতরাং ইভনিং শোয়ে সিনেমা দেখে ভালো রেঁস্তোরায় খেয়ে দেয়ে যখন ঘরে ফিরলাম তখন ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই।
দরজা  খুলে ঢুকতেই দুজনেই ফোনে ‘সাবওয়ে সার্ভার’ গেম খেলার আওয়াজ পেলাম। কয়েক দিন আগে ই এই গেমটি ফোনে ভরেছি। রুপা এই গেমটি খেলতে খুব ভালো বাসে।
চমকে গিয়ে রুপা কে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম , “ফোন নিয়ে যাওনি?”
রুপা ফিসফিস করে ই উত্তর দিল , “না”।
আওয়াজ টি আসছে আমাদের শোয়ার ঘর থেকে। দুজনে শোয়ার ঘরের খোলা দরজা র কাছে গিয়ে উঁকি দিলাম।
যা দেখলাম তাতে , আমাদের দুজনের সেদিনের অনুভূতি টা ফিরে এলো।
দেখলাম, …..
রুপা র ফোনটা বিছানা থেকে এক হাত উঁচু তে ভাসছে। ঠিক কেউ যেন বিছানায় বসে ফোনে গেম খেলছে। তফাত শুধু , খেলোয়াড় অদৃশ্য।
কতক্ষন যে এইভাবে দেখছিলাম জানি না। হঠাৎ আঁক করে একটা আওয়াজে ঘুরে দেখি রুপা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। ততক্ষণাত ঘরের ভিতরে থাকা খেলোয়াড় ফোন টি বিছানায় ফেলে দিলো। আমি রুপাকে ধরে তোলবার চেষ্টা করছি, তখন অনুভব করলাম কেউ যেন আমার পাশে দিয়ে সাঁৎ করে বেরিয়ে গেল।
অবিলম্বে ডাক্তার এলো । ডাক্তার রুপা কে দেখে শরীর দূর্বল বললো। আমরা দুজনেই চুপচাপ রইলাম। আমাদের কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।
রুপা বেশ ভয় পেয়েছে । আমি ফোনে অফিসের বস কে স্ত্রীর শরীর খারাপ বলে সাতদিন ছুটি নিলাম।
আমি জানি রুপা মনে মনে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আমাদের কোন সন্তান নাই। তাই আমাকেই ওর পাশে থাকতে হবে। এই সময়ে ওর পাশে থাকা জরুরী।
দিন দুয়েক পরের কথা । আমি দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু ভাত ঘুম দিয়ে ছিলাম। রুপা দুপুরে ঘুমায় না। এটা ওটা সংসারের কাজ করে। নয়তো টিভি তে সিরিয়াল দেখে। বিকেলে চা করে নিয়ে এসে রুপা আমায় ডাকলো। বিছানায় বসেই দুজনে চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম। তখন রুপা আমায় বলল , “তুমি যদি রাগ না করো , তবে একটা কথা বলবো ?” আমি  বললাম 'কি?’
রুপা উত্তর দিল “জানো ও আসলে একটা ছোট্ট ভারি মিষ্টি দেখতে  মেয়ে।”
আমি বললাম  “বুঝতে পারলাম না।”
রুপা বললো “যে আমাদের বাড়িতে আজব কান্ড ঘটাচ্ছে, তার কথা বলছি। আরে বাবা, সেদিন ফোনে যে গেম খেলছিলো , তার কথা বলছি।”
আমি এতক্ষণে বুঝতে পারলাম।
আমি বললাম “তুমি কি করে জানলে , ওটা একজন বাচ্ছা মেয়ে ?”
রুপা উত্তর দিলো “আমি দেখেছি । তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে , আমি তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলাম। তখন আয়নার মধ্যে দিয়ে দেখলাম একটা বছর তিনেকের  ছোট্ট মেয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে আছে । আমার দিকে চেয়ে হাসছিলো।কি সুন্দর মিষ্টি দেখতে।”
আমি রুপা কে বললাম , “তুমি ভয় পেয়োনা । আমি  একটা তান্ত্রিক বা রোজা ডাকার ব‍্যবস্থা করছি ।”
রুপা মনে হয় কথাটা শুনে খুশি হলো না । কিছু না বলে ঘর থেকে চলে গেল।
দেখতে দেখতে ছুটি শেষ হয়ে গেল । নতুন কিছু ঘটনা ঘটলো না । কিন্তু আমার মনে হচ্ছে রুপা আমার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছে । রুপা কে আগের থেকে একটু বেশি হাসিখুশি লাগছে। আগে সন্তান না হওয়ার জন্য সবসময় মনমরা হয়ে থাকতো ।এখন আর সেইরকম নেই । বরং আগের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত লাগছে।
যাইহোক আমি অফিসে জয়েন করলাম। বিভিন্ন চেনা পরিচিত লোককে একটা ভালো রোজা বা তান্ত্রিক এর সন্ধান দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। হঠাৎ এই ধরনের অনুরোধ শুনে অনেকেই জানতে চাইলো ব‍্যাপারটা কি ? সুতরাং কিছু কিছু ঘটনা র কথা তাদের কাছে প্রকাশ করতে হলো।সব শুনে অনেকেই  বললো , তারা চেষ্টা করবেন ।
অফিস থেকে বাড়ী ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা সাতটা বেজে যায় । আমার কাছে মেইন দরজার একটা চাবি থাকে ,আর একটা চাবি রুপা র কাছে থাকে।যে যখন আসি যাই নিজের নিজের চাবি ব‍্যবহার করি। চাবি ঢুকিয়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকতেই শুনতে পেলাম রুপার কন্ঠ। কাউকে যেন বলছে , ' দুষ্টুমি করবি না , আমার কোলে আয় , না হলে বাবাকে বলে দেবো।’
আমি পা টিপে টিপে শোয়ার ঘরের দরজা র কাছে গিয়ে উঁকি দিলাম। দেখলাম….
                রুপা মেঝেতে বসে আছে আর তার কয়েক হাত দূরে একটা বাচ্ছা মেয়ে বসে আছে । বাচ্ছা মেয়ে টির মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল , ফর্সা রং ,আর হাসিটা ভারি মিষ্টি।  রুপা মেয়েটির সাথে কথা বলছিলো। আমার রুপা কে হাসিখুশি দেখে ভারি ভালো লাগছিলো । কিন্তু না , এসব দূর্বলতা কে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক নয়। একটা গলা খাকারি দিলাম । আমার আওয়াজ শুনে রুপা আমার দিকে তাকালো। আর বাচ্ছা মেয়ে টি শূন্যে মিলিয়ে গেল।
এটা দেখে রুপা আমার ওপর ঝাঁঝিয়ে উঠলো। রুপা বললো , “দিলে তো আমার মেয়ে টিকে ভয় পাইয়ে। যতক্ষণ তুমি থাকবে, সে ভয়ে আমার কাছে আসবে না।”
রুপা সারা সন্ধ্যে আমার সাথে কথা বললো না। রাত্রে খাওয়াদাওয়া র পর আমার ওপর রাগ দেখিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। রাগ আমারো হয়ে ছিলো। আমি ও বেশী জোরাজুরি না করে নিজের ঘরে শুয়ে পড়লাম।
ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। ঘড়িতে দেখলাম রাত দুটো। বাথরুমে গেলাম । হালকা হয়ে এসে ভাবলাম , রুপা রাগ করে ঐ ঘরে শুয়ে আছে। দেখি যদি রাগ ভাঙানোর যায়।
পাশের ঘরে ঢুকে দেখি রুপা ঘুমোচ্ছে আর তার পাশে একটা ফুটফুটে ডল পুতুলের  মতো মেয়ে ঘুমিয়ে আছে।
আমি একটুও ভয় পেলাম না । দুজনে র পায়ের কাছে বিছনার ওপর বসলাম। একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম দুজনে র দিকে। এমন একটি পরিবারের স্বপ্ন ই তো আমি আর রুপা দেখেছিলাম । আমরা দুজন আর আমাদের সন্তান। ভাগ্য আমাদের সন্তান দেয় নি । আজ এই মেয়ে টির মধ্যে রুপা নিজের মাতৃত্ব অনুভব করছে। হতে পারে এই শিশু টি জীবিত নয়। কিন্তু রুপা র কাছে এই শিশু টি সন্তান সম। রুপার কাছে তো,এ যখন আসে শরীর ধারণ করেই আসে । মনে হয় শৈশবে ই মৃত্যু হওয়ায় মায়ের আদর থেকে অনেক দিন বঞ্চিত হয়ে আছে। তাই রুপার কাছে মাতৃস্নেহ পেয়ে বারেবারে তার কাছে আসে।
আমি বসে আছি মনে হয় টের পেয়ে রুপার ঘুম ভেঙে গেল। রুপা উঠে বসলো। আমি মেয়ে টির দিকে চেয়ে আছি দেখে রুপা বললো , “ওর নাম রেখেছি  ‘তমা’। আমি বললাম “খুব সুন্দর নাম ।”
আমাদের কথা শুনে ই মনে হয়  'তমা’র ঘুম ভেংগে গেল।চোখ রগরাতে রগরাতে মায়ের কোলে বসলো । রুপা হাসি মুখে ‘তমা’ কে বললো ,যা বাবার কোলে বস। ছোট্ট দুষ্টু টা টলটল  পায়ে এগিয়ে এসে আমার কোলে বসলো । একটা সূক্ষ্ম অপার্থিব বস্তু দিয়ে তৈরি শরীর।দেখা যায় কিন্তু আঁকড়ে ধরা যায় না । কিন্তু এই বা কম কি ? আমাদের সন্তান হীনতার দুঃখ দুজনকেই পীড়া দিতো ।আজ মনে হচ্ছে ,সব দুঃখ দূর হয়ে গেছে। এই দিনটি র জন্য ই আমরা স্বামী স্ত্রী অপেক্ষা করেছি। আমার চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা চোখের জল পড়তে লাগলো। আমার দেখাদেখি রুপা ও কাঁদতে লাগলো। আমি জানি এই অশ্রু আনন্দের।
পরেরদিন সকালে রুপা আর আমি বিছানায় বসে চা খাচ্ছি , এমন সময় মিলনের ফোন টা এলো। ফোনে মিলন বললো , “দাদা , আপনি একজন তান্ত্রিকের সন্ধান চেয়ে ছিলেন , তেমন একজন ভালো তান্ত্রিকের সন্ধান পেয়েছি।”
আমি একবার রুপার মুখে র দিকে তাকালাম। মেঝেতে খেলায় ব‍্যাস্ত 'তমা'র দিকে তাকালাম।
তারপর ফোনে মিলন কে উত্তর দিলাম “না ভাই, আমার আর কোন তান্ত্রিকের প্রয়োজন নেই । ভেবে দেখলাম ঐগুলি সবই আমার মনে র ভুল ছিল । আজকের আধুনিক  যুগে ভূতের বিশ্বাস করাটা বোকামি।”
ফোন টা রেখে রুপার ও তমার দিকে চেয়ে হেসে ফেললাম।(শেষ)।

Tuesday, November 21, 2017

গল্পঃ - দেহহীন।

কিছুক্ষণ আগে আমার মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে বুঝতে পারি নি। কর্মক্ষেত্রে একা থাকি। স্ত্রী ও কন্যা আগে আমার সঙ্গেই থাকত। কিন্তু কিছুদিন আগে আমি নতুন বাড়ি করার পর ,সেখানেই থাকে। আমি পুরানো অফিস কোয়ার্টারে একাকী দিন যাপন করি। সপ্তাহে একদিন বা কখনো দুই দিন বাড়ি যাই। বাড়ি বেশি দূরে নয়। ঘণ্টা দুয়েকের রাস্তা। কিন্তু প্রতিদিন ভোরবেলা অফিসে আস্তে অসুবিধা তাই এখানেই থাকি।
গতকাল সন্ধ্যা থেকেই শরীরটা একটু গড়বড়  করছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম এসিডিটি হয়েছে। ঘরে একটা এন্টাসিড ছিল সেটাই খেয়েছিলাম। রাত ন'টা নাগাদ আমার স্ত্রী মিনতি ফোন করেছিল । এটা-ওটা কথা বলার পর, আমি বলেছিলাম’ “শরীরটা ভালো নেই”। মিনতি  শুনে ই আমায় একগাদা কথা শুনিয়ে দিল। আমি নাকি লোভ সামলাতে না পেরে এটা-ওটা খাই, তাই আমার এত শরীর খারাপ করে। রাগে আমি তৎক্ষণাৎ ফোনটা কেটে দিয়েছিলাম। রাত্রে তেমন কিছু আর না খেয়ে , শুধু  একগ্লাস দুধ খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম । রাত্রে ভালো ঘুম হয়নি। ভোর চারটে নাগাদ একবার বাথরুমে গিয়েছিলাম। বাথরুম থেকে এসে সবে  বিছানায় শুয়েছি এমন সময় বুকের বাঁ দিকটা চিনচিন করে উঠলো। প্রথমে খুব একটা পাত্তা দিইনি। তারপর ক্রমশ যন্ত্রণাটা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মনে হয় জ্ঞান হারিয়েছিলাম।
পুনরায় যখন আমার অস্তিত্বে ফিরে এলাম দেখলাম আমি আমার ঘরে দাঁড়িয়ে আছি। ঘরে নাইট ল্যাম্প জ্বলছে। নাইটল্যাম্পের মৃদু আলোয় মনে হল বিছানায় কেউ একজন শুয়ে আছে। প্রথম নজরে মনে হল আমার চেনা কেউ। হঠাৎ আমি ভয়ে শিউরে উঠলাম ,” “ ঐ লোকটা তো আমি”।
তবে কি আমি  , অনির্বাণ চ‍্যাটার্জ্জী কি আর বেঁচে নেই ??
আমার এবার সত্যি খুব ভয় পাচ্ছে।
এখনো যে আমার অনেক কাজ বাকি আছে।
না, যে করেই হোক আমাকে বাঁচতেই  হবে। আমি বারবার চেষ্টা করলাম শরীরের মধ্যে পুনরায় প্রবেশ  করতে ।।
না কিছুতেই পারছি না।
এখনো যে আমার অনেক কাজ বাকি। মেয়ে টার পড়াশোনা বাকি। ইচ্ছা ছিলো মেয়ে টার  বিয়ে ভালো ঘরে ধুমধাম করে দেবো।
কিছুই শেষ পর্যন্ত হলোনা।
আমার মৃতদেহের দিকে চেয়ে এত কথা ভাবছিলাম ।
একটা ফাঁকা ঘরে, একটা মৃতদেহ র সাথে এতক্ষন আছি বেশ ভয় ভয় লাগছে। হলেও বা নিজের মৃতদেহ। পাশের ঘরে গেলাম। পাশের ঘরটি ঠাকুরঘর। বহুদিন থেকে আমি মা কালীর একনিষ্ঠ ভক্ত। বছরে বছরে আমার ঘরে কালীপুজোর দিন বড় করে পুজো হয়। মা কালীর মূর্তি র দিকে চেয়ে মনে মনে বললাম “মাগো, তুই একি করলি ? এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। এর মধ্যেই টেনে নিলি।”

এখনই ভোর হবে। হরিপদ ঘর পরিষ্কার করতে আসবে।
হঠাৎ ইচ্ছা হল মিনতিকে দেখবার। মূহুর্তের মধ্যেই দেখি আমি আমার ঘরে পৌঁছিয়ে গিয়েছি। নতুন কেনা বক্স খাটের উপর মিনতি ও লেখা শুয়ে আছে। মিনতি বাচ্চাদের মত  জড়সড় হয়ে শুয়ে থাকে। আর আমার মেয়ে লেখা এখনো মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। দু'জনেই এখনো জানেনা, আমি আর নেই।
হঠাৎ মনে হল হরিপদ ডাকছে “বাবু, ও বাবু, দরজাটা খুলুন।”
তৎক্ষণাৎ আমি আবার আমার ঘরে পৌঁছে গিয়েছি।
ওরে হরিপদো, আমি আর কখনই দরজা খুলব না।
বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর, পাশাপাশি কোয়ার্টারের কয়েকজন চলে এলো। হরিপদো তাদের উদ্দেশ্যে বলল, “অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি, বাবু সাড়া দিচ্ছে না।”
অবিলম্বে কিছুক্ষণের মধ্যে ই অফিসের সিকিউরিটি অফিসার চলে এলেন। সবাই মিলে দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিল। দরজা ভেঙ্গে ফেলা মাত্র হরিপদো ছিটকে  ঘরের ভিতরে ঢুকল। আমাকে দেখামাত্রই “বাবু  গো” বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আমি জানি হরিপদো আমায় খুবই ভালবাসতো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর চলে গেল সর্বত্র।
আমার স্ত্রী ,মেয়ে ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন , সহকর্মীরা ও অধীনস্ত লোকেরা সবাই এসে ভিড় করলো।
আমি ছিলাম অফিসের দোর্দণ্ডপ্রতাপ জুনিয়ার ম‍্যানেজার । তাই লোকের ভীড় তো হবেই।
আমি সবকিছুই দেখতে পাচ্ছি কিন্তু কেউ আমায় দেখতে পাচ্ছে না। আমার কোয়ার্টারের সামনের ফাঁকা জায়গায় আমার মৃতদেহ ছোট মৃতদেহ বহন কারি খাটের উপর রাখা হয়েছে। গলায় অফিসের সহকর্মীদের দেয়া ফুলের মালা। চড়া গন্ধের ধূপ জ্বলছে। একদিকে দেখলাম আমার সহকর্মী সুশান্ত খুব কাঁদছে। দেবুকে দেখলাম তার কাছে গিয়ে  সান্তনা দিচ্ছে। সুশান্ত কাঁদতে কাঁদতে বলল, “অনির্বাণ দার সাথে আমার মতপার্থক্য ছিল, কিন্তু আমি তাকে বড় দাদার চোখে দেখতাম। আজ মানুষটি চলে গেছে ন , আমার মনে হচ্ছে যেন প্রিয়জন হারালাম।”
এক কোণে দেখলাম আমার মেয়ে লেখা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। আমি জানি ওর কাছে আমি ই সব ছিলাম।
ক্রমশ মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল। মেয়ে মুখাগ্নি করল । আমি একধারে দাঁড়িয়ে দেখছি আমার নশ্বর শরীরটাকে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করছে।
হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমাকে ‘খোকা’ বলে ডাকলো। চেয়ে দেখি মা দাঁড়িয়ে আছেন। মা বহুদিন আগে গত হয়েছেন। মা বললেন “খোকা এখানে আর থাকতে হবে না। চল তোকে তোর নিজের জায়গায় পৌঁছে দিই।”
আমি বললাম “কোথায় মা”?
মা বললেন “মৃত্যু র পর পুনরায় জন্ম না নেওয়া পর্যন্ত প্রত‍্যেক আত্মার কর্ম অনুযায়ী নিজের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে জ্ঞান অর্জন এর জন্য অবস্থান করতে হয় । তারপর আবার জন্ম নিতে হয় , এই চক্র ই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আমার পুনঃ জন্মের নির্দেশ এসেছে। শুধু তোর সাথে দেখা করবো বলে এতদিন অপেক্ষা করছি।চল যাওয়া যাক।”
মায়ের হাত ধরে এক অজানা সুন্দর স্থানে হাজির হলাম। একটি খরস্রোতা নদী বয়ে চলেছে। প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোরম।
আমি মাকে প্রশ্ন করলাম “মা এটা ই কি স্বর্গ ?”
মা উত্তরে বললেন “হতে পারে। আসলে তোর কর্ম তোর অবচেতন মনের ইচ্ছা অনুযায়ী সূক্ষ্ম জগতে  এই জায়গাটা সৃষ্টি করেছে। প্রত‍্যেক মানুষ এর  কর্ম অনুযায়ী তাদের থাকার স্থান ভিন্ন ধরনের হয়। আমার থাকার স্থান ভিন্ন। আমি শুধু তোকে এখানে পৌঁছে দিতে এসেছি। এবার চলি”।
আমি বললাম “মা আমি কি এখানে একা থাকবো ?”
মা বললেন “সেটা তোর ইচ্ছে র উপর নির্ভর করছে। তবে তোর চেয়ে নিম্ন স্তরের কেউ তোর এখানে আসতে পারবে না ।”
মা চলে গেলেন।
আমি নতুন জায়গা টা ভালো করে দেখতে লাগলাম। হ‍্যাঁ , আমি ঠিক এই ধরনের জায়গা র কথাই স্বপ্নে দেখেছি। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমার জায়গা টা ভালো লেগে গেলো। এখানে  দিন রাত নেই।  সব সময় যেন ঊষা কাল। সব সময় কোন কাজ করার চেষ্টা করি । এখানে যে কোন কাজ  সহজেই হয়ে যায়। কোন কিছু জানার চেষ্টা করলে বা জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করলে সেই জ্ঞান আপনা আপনি অন্তরে অনুভব হয়। [ কৃতজ্ঞতা স্বীকার ঃ অনেক দিন আগে বিভূতিভূষণ এর দেবযান পড়ে ছিলাম। এই লেখাটি তে তার ছায়া আছে ,বিশেষত পরলোকের বর্ণনায় ।]
এক দিন নদীর ধারে ঘুরছি ,দেখি  আধপাগলা মতো   মধ‍্য বয়স্ক  একটা লোক নদীর ধারে বসে আছে। কাছে গিয়ে বললাম “আপনি কে ?”
তিনি উত্তর দিলেন , “আমি মায়ের ছেলে। বসে বসে মায়ের লীলা খেলা দেখছি।”
আমি প্রশ্ন করলাম, “আপনার মা কোথায়?”
তিনি বললেন “যা দেখছি সবই তো আমার মা । এই বিশ্ব প্রকৃতি ই তো আমার মা । এমনকি এই স্থূল শরীর, সুক্ষ্ম শরীর  ,কারণ শরীর, সবকিছুই আমার মা। মা নিজেই বিশ্ব প্রকৃতি।”
ভাল করে তাকিয়ে ওনাকে আমার খুব চেনা মনে হল।
আরে ;! ইনিই তো সেই বিখ্যাত…...।
ওনাকে সেই কথা বলতে , উনি বললেন  “জানি না , হয়তো হবেও বা….”
এই বলে গভীর জঙ্গলের দিকে চলে গেলেন।
হঠাৎ মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো লেখার কথা ভেবে। ভাবা মাত্রই পৌঁছে গেলাম লেখা র কাছে। দেখলাম লেখা  আমার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে টসটস করে চোখের জল ফেলছে। আমিও কেঁদে ফেললাম। “ মাগো তোকে ছেড়ে আমিও সুখে নেই।”
আবার ফিরে এলাম নিজের জায়গায়। এমনি করেই দিন কাটতে লাগলো। মাঝে মাঝে যাই লেখা ও মিনতি কেমন আছে দেখতে। হঠাৎ শুনলাম লেখার বিয়ে। আমি মারা যাওয়ার পর আমাদের বাড়ির আর্থিক অবস্থা নিন্মগামী হয়েছে। তাই লেখার বিয়ে কোন রকমে এক বেসরকারি চাকুরী জীবির  সাথে হচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম লেখার বিয়ে আরো উন্নত ঘরে হোক। কিন্তু আমার কিই বা করার আছে। যাই হোক বিয়ের মন্ডপে সূক্ষ্মরূপে উপস্থিত হয়ে আমি লেখাকে প্রাণ ভরে আর্শীবাদ  করলাম ।
“মাগো যে ঘরে যাবি , সেই ঘরকে আলোকিত করে রাখবি।”
দিন যায় এক এক করে। এখানে এক দিন মানে পার্থিব এক চান্দ্র মাসের সমান। অনেক জ্ঞান অর্জন হচ্ছে।আল্টিমেট ট্রুথ বলে কিছু নেই। ঈশ্বর ই একমাত্র সত্য। এই জগতে তার শরীর স্বরূপ।
তবুও  সব কিছু র মাঝে  মনটা বড়ই উচাটন করে লেখা র জন্য। লেখার অভাব অনটন আমায় বড়ই পীড়া দেয়। হয়তো আমার কৃত  পাপের এটাই নরকভোগ ।
একদিন দেখা হয়ে গেল সেই পাগলা ঠাকুরের সাথে । তিনি বললেন ,”তোকে যেতে হবে। এখানে তোর থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে।”
আমি বললাম “কোথায় যাবো ?”
তিনি উত্তর দিলেন “যেখানে তোর মন যেতে চাইছে, তোর মেয়ের কাছে”।  “বাবা হয়ে মেয়ের দুঃখ দূর করতে পারিস নি , যা এবার  পুত্র হয়ে মেয়ের প্রতি কর্তব্য পালন কর। মায়ের দুঃখ দুর কর।”
আমি বললাম  “ঠাকুর মনে মনে আমি হয়তো এটাই চাইছিলাম। তুমি আমায় আশীর্বাদ করো আমি যেন নিজের কর্তব্য পালন করতে পারি।”

সেই পাগলা ঠাকুর আর্শীবাদ করলেন। আমি অনুভব করলাম আমি যেন ছোট হয়ে যাচ্ছি। ক্রমশ সূক্ষ্ম হতে সূক্ষ্ম তর হচ্ছি। একসময় বিন্দু তে পরিণত হলাম। সেই বিন্দু আমি পৃথিবী তে এসে ঘুরতে ঘুরতে কোন এক আশ্চর্য উপায়ে হয়তো বা ঈশ্বরের আশীর্বাদে এক অন্ধকারে আশ্রয় পেলাম। আমি জানি এটাই মাতৃগর্ভ।
“ মাগো আর কিছু দিন অপেক্ষা করো , আমি আসছি তোমার কোলে শিশু রূপে তোমার সব দুঃখ ঘোচাতে।” (শেষ)।








Monday, November 20, 2017

বাংলা গল্প: গল্প -ভাগ‍্যবদল

বাংলা গল্প: গল্প -ভাগ‍্যবদল: গল্পঃ - ভাগ্য বদল। মানুষের যখন অনেক দুঃখ হয় তবে ই সে জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবে। জীবন খুবই আশ্চর্য ঘটনা র সম্মূখীন করে দেয় মানুষ কে...

গল্প -ভাগ‍্যবদল

গল্পঃ - ভাগ্য বদল।
মানুষের যখন অনেক দুঃখ হয় তবে ই সে জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবে।
জীবন খুবই আশ্চর্য ঘটনা র সম্মূখীন করে দেয় মানুষ কে ।রবি যথেষ্ট দৃঢ়চেতা । মৃত্যু র কথা কখনো ই সে চিন্তা করেনি।সে তার অনেক দুঃখের মধ্যেও বাঁচতে চেয়েছিলো। ছোট বেলা থেকেই অসীম কষ্টের সাথে বড় হয়েছে। বাবা মারা গিয়েছিল ছোটবেলায় ।মা অনেক কষ্টকরে রবিকে মানুষ করেছে।মা খুব ভালো সেলাই করতেন । অসময়ে সেই সেলাই বোনা ই সংসার টাকে টিকিয়ে দিলো । কোনরকমে মা ছেলের সংসার চলতে লাগলো। রবি পড়াশোনা য় খুবই ভালো  ছিল। একটি র পর একটি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হতে হতে রবি একসময় বি এসসি   পাশ করলো। রবি এরপরও মাষ্টার্স ডিগ্রী করতে চেয়েছিলো  । কিন্তু মায়ের দিকে চেয়ে আরো পড়বো এই কথাটা বলতে পারলো না ।তার পড়াশোনার খরচ যোগাড় করতে ,  মা দিন রাত  পরিশ্রম করেছেন । রবি পড়াশোনা করার জন্যে এতদিন ভালো করে মায়ের দিকে চেয়ে দেখেনি। আজ দেখলো । মায়ের শরীর একেবারে ভেঙ্গে গেছে । তাই সে “আরও পড়বো” না বলে ,'মা এবার থেকে আমি চাকরি করব' এই কথাটা বললো।
কিন্তু চাকরি কি এতো সহজে ই জোটে ? অনেক চেষ্টার পর একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি তে ৬০০০ টাকা মাইনের  একটা চাকরি জুটলো। কিন্তু রবি র  এমনই কপাল ,এই চাকরি পাবার এক মাসের মধ্যে মা মারা গেলেন। মা ছাড়া রবির আর কেউই ছিলো না পৃথিবীতে। রবি একা হয়ে গেল।
একাকীত্বের জীবন। সারাদিন কাজ আর রাতে বাড়িতে ফিরে ঘুম। বেশ চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিনের ঘটনা তার জীবন ওলট-পালট করে দিল। মিথ্যা টাকা চুরির অপরাধে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো। চুরির অপবাদ সহ্য হলো না। সে ভাবল এই জীবন রেখে কি হবে? দুঃখ ছাড়া এই জীবনে তার আর কিছুই পাওয়ার নেই । এই জীবন রাখার চেয়ে শেষ করে দেওয়া ভালো। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল আজকেই তার জীবন শেষ করে দেবে। শহরের এক পাশে নদীর ধারে একটি পোড়ো বাড়ির সন্ধান রবি জানতো । সেখানে কেউ থাকেনা। রবি ঠিক করল ওখানে গিয়ে  বাড়িটির তিনতলা থেকে নদীতে লাফ  দিয়ে জীবন শেষ করে দেবে। রবি সাঁতার জানত না।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রবি সেই বাড়িটির তিন তলার  ছাদে উঠলো। তখন সন্ধ্যা হয় হয় । কেউ কোথাও নেই। রবি সেই বাড়িটির ন‍্যাড়া  ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকালো। অনেক নিচে খরস্রোতা নদী বয়ে চলেছে । রবি চোখ বুজে ' মা তোমার কাছে আসছি ' এই বলে নীচে লাফ দিল। নীচে নদীতে পড়বার আগেই , রবি  জ্ঞান হারিয়ে ফেললো । জ্ঞান হারাবার ঠিক আগে রবি  ডান হাতের আঙুলে শক্ত মতো কিছু একটা বস্তু অনুভব করল ।
রবির যখন জ্ঞান ফিরল, দেখল সে নদীর ধারে মাটিতে শুয়ে আছে । চারিদিকে অন্ধকার। কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু নদীর জলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রবি শুয়েই  রইল । শরীরে অসহ্য ব্যাথা। হঠাৎ চোখের সামনে একটা নীল আলোর বিন্দু দেখা দিল। রবি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল। নীল আলোর বিন্দু টা ক্রমশ বড় হতে লাগলো । রবি অবাক হয়ে গেল। এক সময় আলোর বিন্দুটি থেকে একটি মানুষের মূর্তি দেখা গেল। রবি  দেখলো মানুষটিকে হুবহু  তার মত দেখতে। সেই আলোর মধ্যে থাকা মূর্তি টি তার দিকে চেয়ে হাসলো। রবি প্রশ্ন করল ‘তুমি কে?’। সেই মূর্তি টি উত্তর দিল‘আমি রবিন।’ ‘আমি অন্য জগৎ থেকে  আসছি’। রবি পুনরায় প্রশ্ন করল‘তার মানে ?’। রবিন উত্তর দিলো‘তার মানে খুব স্পষ্ট। তোমাদের বিশ্ব তিন মাত্রার। আমরা ছয়  মাত্রার বিশ্বে থাকি। আমরা তোমাদের চেয়ে অনেক উন্নত। আমাদের বিশ্বে আমি তোমারি প্রতিরূপ । আমাদের বিশ্বে সময় আরো ধীরে চলে ।প্রতিটি মাত্রা র বিশ্ব একে অপরের মধ্যে পিঁয়াজের খোলা র মতো রয়েছে।শুধু মাত্রা ভিন্ন হওয়ার জন্য ঐ সব মাত্রার অবস্থান কারী প্রাণীরা যা বুঝতে পারে না। তারা ভাবে অন্য জগত বলে কিছু নেই। আসলে বিভিন্ন dimension অসংখ্য প্রাণী জগৎ দ্বারা পরিপূর্ণ। তোমাদের এখানের 100 বছর মানে আমাদের জগতের এক বছর সময়। আজ এক মুহূর্তের জন্য তোমার তিন মাত্রার জগত ও আমার ছয় মাত্রার জগত এর সাথে সংযুক্ত হয়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময় আমার একটি দুর্লভ ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তু এই জগতে তোমার কাছে চলে আসে। কারন এই জগতে তুমি আমারই প্রতিরূপ। এই দুর্লভ বস্তুটি হল আমারই আবিষ্কৃত সৌভাগ্য আংটি।  এটি এখন তোমার ডান হাতের অনামিকায় শোভা পাচ্ছে। রবি তৎক্ষণাৎ তার ডান হাত এর দিকে চেয়ে দেখল তার ডানহাতে একটি লাল রংয়ের ধাতব আংটি।
রবিন পুনরায় বলল , এই আংটি টি আমি এখনো সম্পূর্ণ রূপে পরীক্ষা করে উঠতে পারিনি। ভালোই হলো, আমার নিজের তৈরি probability analyzer বা সম্ভাবনা বিশ্লেষক যন্ত্রটি আমায় জানাচ্ছে যে তোমার ভবিষ্যৎ খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি এই জগতে এসেছি আমার হারিয়ে যাওয়া সৌভাগ্য আংটি ফেরত নিয়ে যেতে। কিন্তু এই আংটি ফিরত নিয়ে গেলেও , তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আমাকে নিশ্চিত হতে হবে যে এটি আমার আকাঙ্ক্ষিত কাজ নিশ্চিতভাবে করবে। তারচেয়ে এই ভালো যে এটি তোমার কাছেই থাক। আমি আমার জগত থেকে লক্ষ্য রাখবো এই আংটি টি কিভাবে তোমার জীবন পরিবর্তন করে।  তোমার জীবনে যখন এটির প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে তখন এটি আমি এটি ফিরত নিয়ে যাবো।

এরপর নীলাভ আলোটি ও তার মধ্যে থাকা মূর্তিটি মিলিয়ে গেল।
এদিকে পূর্ব আকাশ লাল হয়ে উঠেছে। রবি উঠে দাঁড়ালো। সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। নদীতে জলের ধারে গিয়ে মুখ চোখে জল দিল। এরপর বাড়ির পথ ধরল। ঘরে যখন পৌঁছল তখন খিদেতে পেট চুঁইচুঁই করছে। মুড়ির টিন থেকে একটা বাটিতে মুড়ি বার করে খেতে লাগলো। এমন সময় বাইরে থেকে কেউ একজন “ও রবিদা” বলে ডাকলো। রবি ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল মোড়ের মাথায় লটারির টিকেট বিক্রেতা অমর দাঁড়িয়ে আছে। অমর কে বেশ উত্তেজিত মনে হচ্ছে। অমর হাঁস ফাঁস করে যা বলল তার মানে দাঁড়ায় এই যে কয়েক দিন আগে অমর রবিকে জোর করে যে লটারির টিকেট গিয়েছিল আজ তার result বেরিয়েছে। রবি প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। পুরো 5 লাখ টাকা। tax কেটে হাতে 300000 পাবে। রবি কিছুক্ষণের জন্য হতম্ভব হয়ে গেল। একবার নিজের ডান হাতের অনামিকার দিকে চেয়ে দেখল। হাতের আংটি টি যেন আরো লাল দেখাচ্ছে।
কয়েক দিনের মধ্যেই রবি পুরস্কারের টাকাটা পেয়ে গেল। টাকা পাওয়ার পর রবি কয়েক দিন ভাবল সে কি করবে। সে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরীর কাজ খুব ভালো করে জানে। সে ঠিক করল একটা ছোটখাটো প্যাথলজিক্যাল laboratory খুলবে। এমনিতে এই অঞ্চলে প্যাথলজিক্যাল laboratory র অভাব রয়েছে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। কয়েক দিনের মধ্যেই নিজের বাড়ির সামনের ঘরে মায়ের নামে একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি খুললো। মাস তিনেক যেতে না যেতেই সেটা রমরমিয়ে চালু হয়ে গেল।
একবছর বাদের কথা। রবির এখন দুটি ব্যবসা। একটি laboratory ও অন্যটি গাড়ির ব্যবসা। একদিন রবি এক ডাক্তারের চেম্বারে দেখা করতে গিয়েছিল, সেখানে দেখল অনন্যা বসে আছে। রবি আগে যেখানে কাজ করতো সেই  ল্যাবরেটরির মালিক সুরজিৎ বাবুর মেয়ে অনন্যা। কাজের সূত্রে রবি র সাথে অনন্যার পরিচয় ছিল। যদিও তখন ছিল মালিক ও কর্মচারীর সম্পর্ক । রবি অনন্যা কে দেখে প্রশ্ন করল “তুমি এখানে?”
অনন্যা ম্লান হেসে উত্তর দিল “বাবার খুব অসুখ”। রবি উদ্বেগের সঙ্গে প্রশ্ন করল “কেন কি হয়েছে?”। অনন্যা বলল “cancer। তুমি পারলে একবার এসো। বাবা একবার তোমার সাথে দেখা করতে চায়।”  রবি বলল “আজ বিকালে যাবো তোমাদের বাড়িতে”।
ডাক্তার খানা থেকে বেরিয়ে রবির মন খারাপ হয়ে গেল । সন্ধ্যাবেলা সুরজিৎ বাবুর বাড়ি পৌঁছে কলিং বেল টিপতে অনন্যা দরজা খুলে দিল। অনন্যার মা আগেই মারা গিয়েছিল। বাবা ও মেয়ের সংসার। অনন্যা সাথে শোবার ঘরে গিয়ে দেখল সুরজিৎ বাবু শুয়ে আছেন। চেহারা একদম কঙ্কালসার হয়ে গেছে। রবিকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করলেন। রবি বলল “উঠতে হবে না। আপনি যা বলবার শুয়ে শুয়েই বলুন।” সুরজিৎ  বাবু বললেন, “রবি তুমি আমায় ক্ষমা কর। আমি অন্যায় ভাবে তোমায় অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। আমি একবারও তোমায় অপবাদ দেওয়ার আগে জানবার চেষ্টা পর্যন্ত করিনি ‘তুমি দোষী কিনা।’ পরে বুঝতে পেরেছি তুমি আদৌ চুরি করনি। চুরিটা অন্যজন করেছিল। এবং আমায় ভুল বুঝিয়ে তোমার নামে অপবাদ দেয়ানো হয়েছিল। তুমি আমার ক্ষমা কর। তুমি চলে যাবার পর আমার ব্যবসা ক্রমশ নিচের দিকে গেছে। আজ আমার ক্যান্সার হয়েছে। আর কয়েকদিন মাত্র আমার আয়ু। তুমি আমার একটি উপকার কর। তুমি নতুন করে আমার ব্যবসার হাল ধর। এই জগতে আমার মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। তুমি যদি আমার ব্যবসা ও আমার মেয়ে অনন্যার দেখা শোনা র ভার নাও তবে আমি নিশ্চিন্তে মরতে পারি।” এতগুলি কথা বলতে গিয়ে  সুরজিৎ বাবু হাঁপিয়ে  উঠলেন। রবি তাড়াতাড়ি তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল “আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”
দুই বছর পরের কথা রবি তার বিবাহিত স্ত্রী অনন্যা র সাথে দিঘা বেড়াতে গিয়েছিলো। এখনো অনেক রাত্রে অনন্যা ঘুমিয়ে পড়ার পর, রবি ঘুম না আসায় বাইরে বারান্দায় বসে ছিল। হঠাৎ সামনে নীল আলোর বিন্দু দেখা দিল। আলোর বিন্দু কি ক্রমশ বড় হয়ে, তারমধ্যে থেকে একটি মুর্তি দেখা দিল। রবি চিনতে পারল।
রবিন  রবি কে প্রশ্ন করল “কেমন আছো?” রবি উত্তর দিল “ভাল আছি ।”
রবিন বলল “তোমার সময় পাল্টিয়ে গেছে কি ?”  রবি বলল “হ‍্যাঁ ।” “কিন্তু কিভাবে বুঝব আমার ভাগ্য অন্যরকম ছিল”। রোবিন উত্তর দিল “আমার সৌভাগ্য আংটি তোমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আসলে তুমি সেই রাত্রে নদীর জলে ডুবে মারা গিয়েছো। কিন্তু নদীতে পড়বার আগে আমার তৈরি সৌভাগ্য আংটি তোমার হাতে আসায় তুমি বেঁচে যাও। এই দেখো বিকল্প ইতিহাস কি বলছে,”। এই বলে রবিন নিজের কাছ থেকে একটি কাগজ বের করে রবির হাতে দিল। রবি দেখলো সেটি একটি ডেথ সার্টিফিকেট। যাতে পরিষ্কার করে রবি র নাম লেখা আছে। তারিখটা সেইদিনের। এছাড়া একটি খবরের কাগজের কাটিং রবিন রবিকে দিল। যাতে একটি মৃতদেহের  ছবির  নিচে  হেডিং লেখা আছে জলে ডুবে আত্মহত্যা করেছে রবি দাস নামে এক যুবক। ছবির মৃতদেহ টি হুবহু রবির মতোই দেখতে।” রবি কাগজগুলো ফিরত দিয়ে , আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করল “কিন্তু এটি কিভাবে কাজ করে?”
রবিন উত্তর দিল “প্রত্যেকটি ঘটনারই ঘটবার  বা ,না ঘটবার সম্ভাবনা একই সাথে কাজ করে। আমার আংটি আসলে খুবই সূক্ষ্ম উন্নত মানের একটি গেজেট,  যেটি ধারণকারীর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সম্ভাবনা টি কে বাস্তবায়িত করে। এখন  আমি আমার যন্ত্রটি তোমার কাছ হতে ফিরিয়ে নিতে এসেছি। আমার সম্ভাবনা বিশ্লেষক জানাচ্ছে তোমার ভবিষ্যৎ জীবনে কোন অসুবিধা হবে না। তাই তুমি এবার আমার আংটি টি ফেরত দাও।”
রবি হাসি মুখে আংটি টি খুলে রবিনের হাতে দিয়ে বলল “আবার কবে আমাদের দেখা হবে ?”
রবিন উত্তর দিল “ আমি আর তুমি আলাদা সত্ত্বা নই।   প্রতি ব্রহ্মাণ্ড এ , প্রতি টি মাত্রায় আমরাই আছি আলাদা শরীরে । কিন্তু আসলে আমরা একটাই চেতনা।  একটি ই চেতনা প্রতি ডাইমেনশন এ  আলাদা আলাদা শরীর ধারণ করে এই জগত কে উপভোগ করি। কিন্তু আমরা ঘুমের মধ্যে  পরস্পরের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে নিজেদের চৈতন্য কে আরো উন্নত করি।”
“বিদায় , হয়তো আবার দেখা হবে ভবিষ্যতে।”
নীলাভ আলোটি ও তার মধ্যে থাকা রবিন ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।”
পিছনে খুট করে আওয়াজ পেয়ে   রবি চেয়ে দেখল অনন্যা ঘুমিয়ে থেকে উঠে এসেছে। অনন্যা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো “কার সাথে কথা বলছিলেন ?”  
রবি উত্তর দিল “নিজের সাথে। চলো ঘরে যাই ভিতরে যাই , বাইরে  ঠান্ডা পড়ছে ।” (শেষ ) ।

Wednesday, October 18, 2017

শুভ দীপাবলি

কাল কে যিনি নিয়ন্ত্রণ করে না তিনি ই কালি । তিনি চতুর্দশ ভূবন ও পঞ্চ ভূতের অধিপতি ,তাই ভূত চতুর্দশী  তিথিতে তার আরাধনা । তিনি মহাকাল রূপে শব রূপি শিবের উপর ক্রিয়াশীল । এখানে শব রূপি শিবের জড় জগতের প্রতীক । তিনি জ্ঞান রূপি খড়্গের সাহায্যে জীবের মায়া বন্ধন ছেদন করেন । এই দেবীর আরাধনা করলে জীবের  পার্থিব উন্নতীর সাথেই আধ‍্যাত্মিক উন্নতি ও সাধিত হয় ।

Saturday, June 17, 2017

আমি হিন্দু

আমি বৈদিক সভ্যতার উত্তরাধিকার ,আমি হিন্দু .যখন বাকী পৃথিবীর মানুষ অসভ্য বর্বরের জীবনযাপন করছিলো তখন আমিই সমগ্র দুনিয়ার আদর্শ ছিলাম .আমার কাছেই সবাই শিখেছে  'বসুধৈব কুটুম্বকম  '.আমিই প্রথম শুনিয়েছি  '' অসতো মা সদগময়  ,তমস মা জ্যোর্তিগময়  ,মৃত্যং মা অমৃতংগময়  '' .শান্তির বাণী পৃথিবী জুড়ে প্রচার আমিই করেছি .শূন্যর ব্যবহার আমার কাছ থেকেই পেয়েছে বাকী দুনিয়া .আমিই কৃষ্ণ রূপে পৃথিবীকে শুনিয়েছি গীতার অমৃত বাণী .আমিই রাম রূপে শিখিয়েছি প্রজাপালন . সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আমিই সংগ্রাম করেছি তক্ষশিলার রাজা পুরু হয়ে .কখনো আবার লড়েছি মহারানা প্রতাপ হয়ে হলদিঘাটের যুদ্ধে .যখন সমগ্র বৈদিক সভ্যতার বিরুদ্ধে নেমে এসেছিলো অনাত্মবাদী নাস্তিক বৌদ্ধদের আগ্রাসন ,তখন আমিই আমার ক্ষুরধার যুক্তির জালে পরাস্ত করেছি তাদের ,জগদগুরু শংকরাচার্য হয়ে . আমি শিবাজী রূপে দেখেছি হিন্দু রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন .আমার শাণিত তলোয়ার ঝিলিক দিয়ে ওঠে শত্রুর গলদেশ নিশানা করে .আমি গীতার আদর্শে গড়ে ওঠা বীর যোদ্ধা .আমি গর্বিত হিন্দু .আমার একমাত্র লক্ষ্য - '' পরিত্রানায় সাধুনাং , বিনাশায়চ দুস্কৃতাম  ,ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামী যুগে যুগে.

Wednesday, June 14, 2017

হিন্দুত্ববাদ ও বিজেপি

একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন ?
যখন বামফ্রণ্টের রাজত্ব ছিলো ,তখন নব্বই শতাংশ মুসলিম বামফ্রণ্টের সমর্থক ছিলো . তৃণমুলের নাম শুনলেই রে রে করে তেড়ে আসতো . ক্রমে বামফ্রণ্টের দিন গেলো .তৃণমুল ক্ষমতায় এলো .দেখুন লক্ষ করে প্রায় সব মুসলিম তৃণমুলকে সমর্থন করছে .
প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় তৃণমুলের পর ক্ষমতায় বিজেপি আসতে চলেছে .

একটা ভবিষ্যতবাণী করছি , বিজেপি ক্ষমতায় এলে দলে দলে মুসলিম পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেবে . কারণ এরা পৃথিবী জুড়ে চলা ,হাজার হাজার কোটি পেট্রোডলার দিয়ে তৈরী  'গোটা দুনিয়ার  ইসলামীকরণ  ' চক্রান্তের অংশ হিসাবে সবসময় ক্ষমতাসীনের পক্ষে . যখনই  পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে  ,তক্ষুণি সৌদি থেকে সব মসজিদ দরগায় নির্দেশ আসবে প্রতিটি মুসলিমকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করার জন্য .
সুতরাং প্রিয় হিন্দুত্ববাদী বন্ধুরা ,সময় থাকতে সাবধান হও . মনে রাখবে বিজেপিও  একটি রাজনৈতিক দল . ক্ষমতায় যাবার জন্য আজ হিন্দুত্ববাদের সমর্থক . কিন্তু কাল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মুসলিমদের পা চাটতে দ্বিধা করবে না . যদি সত্যিই তেমন হয় তবে আমাদের একুল ওকুল  ,দুকুল-ই গেলো .
তাই আমরা বিজেপিকে সমর্থন করবো খুব সাবধানের সহিত .
প্রয়োজনে বিজেপিকেও ছুঁড়ে ফেলে নতুন হিন্দুত্ববাদী দলকে গ্রহণ করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে .

রামকৃষ্ণ বলেছিলেন  'সংসারে থাকবি পাঁকাল মাছের মতো , গায়ে পাক লাগতে দিবি না '.
আমি  ঐ কথাটাই একটু ঘুরিয়ে বলছি , 'বিজেপি করুন ভালোবাসা ও আবেগরহিত হয়ে শুধুই হিন্দুত্ববাদের স্বার্থে .প্রয়োজনে যদি দেখি বিজেপি হিন্দুত্ববাদ থেকে সরে যাচ্ছে তবে আমরা হিন্দুত্ববাদীরাও নতুন করে ভাবনা চিন্তা করে যে দল হিন্দুদের পক্ষে সহানুভুতি দেখাবে তাদের পক্ষ অবলম্বন করবো .ঠিক আজ যেটা মুসলিমরা করে থাকে .

Thursday, May 25, 2017

সত্যিকারের ভালোবাসা

নিশা যখন হাওড়া স্টেশনে ঢুকলো তখন ঘড়িতে দশটা বাজে   |  নয় নম্বর প্লাটফর্মে এসে দেখলো রনির বাবা মা দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে   |  নিশাকে দূর থেকে আসতে দেখেই রনির বাবা এগিয়ে এলো  | এক গাল হেসে নিশাকে বললো ‘তুমি আসার একটু আগেই ঘোষণা করলো রাজধানী এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা লেটে আসছে   | তার মানে  বারোটা নাগাদ আসবে   |  আমি আর তোমার মাসীমা একটু কফি খেতে যাবো  | তুমি কি যাবে আমাদের সাথে ?'  নিশা মাথা নেড়ে না বললো | রনির বাবা মা চলে যেতেই নিশা একটা ফাঁকা বেঞ্চি দেখে বসে পড়লো |
আজ রনির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে মনে পড়ছে একদিন রনি তার জন্য অপেক্ষায় থাকতো | সময় কত দ্রুতগামী | এই তো সব কিছু মনে হচ্ছে গত কালকের কথা  |কলেজে প্রথম বর্ষে যে কটি মেয়ে ভর্তি হয়েছিল তাদের মধ্যে নিশাই ছিলো সবচেয়ে সুন্দরী  |তাই তার পেছনে ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলে লাইন দিয়ে পড়েছিলো |   কয়েকজন তো আকারে ইঙ্গিতে এমনও জানিয়ে ছিলো নিশার কথায়  প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারবে   |  শুধুই পরীক্ষা প্রার্থনীয়   | প্রথম প্রথম কিছুদিন নিশার  অসস্তি লাগতো   |কিন্তু ক্রমে ক্রমে নিশা বেশ উপভোগ করতো   |
একদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছে  | নিশা যাবো না যাবো না করেও শেষ পর্যন্ত সেদিন কলেজে গিয়ে দেখলো আট দশ জন মাত্র ক্লাসে এসেছে  | প্রফেসাররা ও সবাই আসেন নি  | তাই দুটো ক্লাসের পর ছুটি হয়ে গেলো | তখন মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছে |  কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি  একটু ধরতেই সবাই  এক এক করে হাওয়া হয়ে গেলো | নিশা দেখলো সে আর একটা ফর্সা রোগা পটকা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে | নিশা সেদিন ছাতা আনতে ভুলে গিয়েছিলো   | তাই বৃষ্টি পুরোপুরি না থামা পর্যন্ত  বেরোতে পারছিলো না | এদিকে বৃষ্টি ধরার কোনো লক্ষণ নেই |  ছেলেটি  কিন্তু ছাতা এনেছিলো  |তবুও সে ছাতা খাটিয়ে চলে যাচ্ছিল না | সবাই চলে গেলে ,ছেলেটি গলা খাঁকারি দিয়ে বললো ‘কিছু যদি মনে না করেন ,তবে একটা কথা বলবো ?’ নিশা তার দিকে চেয়ে বললো ‘বলুন  ’ |  ছেলেটি বললো ‘বৃষ্টি তো এক্ষুণি থামবে বলে মনে হচ্ছে না ,চলুন না কলেজের  ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ করে চা খাওয়া যাক | এই বৃষ্টির দিনে ভালোই লাগবে | ’ নিশা ছেলেটির সাহস দেখে অবাক হয়ে গেলো | সে কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ,আর তাকে অবলীলায় সরাসরি চা খাওয়ার প্রস্তাব ! তবুও নিশা এই একঘেয়ে বৃষ্টির দিন বলে বোধহয় রাজী হয়ে গেলো | ক্যান্টিনটা কলেজের মূল বিল্ডিং এর সামনে খেলার মাঠের একপাশে | বৃষ্টি তখনো পড়ছে | নিশা বললো ‘কি করে যাবো  ? ’ ছেলেটি তখন ছাতা খাটিয়ে বললো 'এই ছাতায় চলে আসুন  | এইটুকু তো রাস্তা !'
অতঃপর দুজনে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখলো বৃষ্টির দিন বলে বোধহয় ক্যান্টিন প্রায় ফাঁকা | শুধু কয়েকটি জোড়া কপোত কপোতি এক সাইডের টেবিলে বসে আছে | ছেলেটি দুটি ছোটো কাঁচের গ্লাসে চা আর একটা প্লেটে দুটি ভেজিটেবল চপ নিয়ে একটা  টেবিলের দু সাইডে মুখোমুখি বসলো | বসেই বললো ‘নিন খাওয়া শুরু করুন | ’ নিশা একটা ভেজিটেবলে একটু কামড় দিয়ে বললো ‘আপনার নাম ?’ ছেলেটি বললো  'একই কলেজের সহপাঠীদের মধ্যে আপনি কথাটা আপত্তিজনক | আমি রনিত | সবাই আমায় রনি বলেই ডাকে | বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র | ' নিশা বললো ‘আমি নিশা | ’রনি মুচকি হেসে বললো ‘জানি | তোমাকে  কলেজের সব ছেলেই চেনে | সবার হার্টথ্রব | ’ নিশা এই কথায় একটু লজ্জা পেয়ে বললো  ‘ওসব ছাড়ুন |তুমি তো ছাতা নিয়েই এসেছিলে  ,তাহলে চলে গেলে না কেনো ?’ রনি ভেজিটেবলটা শেষ করে চায়ে একটা মৌজ করে চুমুক দিয়ে বললো ‘ফাঁকা কলেজ বিল্ডিং এ একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকবে এটা ভাবতে খারাপ লাগছিলো ,আর তোমার সাথে আলাপ করার লোভ তো ছিলোই | ’
কিছুদিন পরের কথা কলেজের এখানে সেখানে রনি আর নিশাকে দেখে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে [Link](http://ashwadimba.wordpress.com) সবাই ভাবতে শুরু করেছে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়েছে |  রনি সত্যি সত্যি নিশাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে  | কিন্তু নিশার দিকে ব্যাপারটা ছিলো অন্য | রনিকে নিশার ভালো লাগতো কিন্তু নিশার কাছে তার চেয়ে বড় ছিলো তার কেরিয়ার |  ছোটোবেলা থেকেই নিশা শুনে আসছে সে সুন্দরী | একটু বড় হতেই দেখেছে ছেলেরা তার জন্য পাগল | এজন্য নিশার মনে ভীষণ গর্ব ছিলো | আর তাই তার মনে জেগেছিলো নামী মডেল হওয়ার বাসনা |  কলেজে পড়ার সময়েই এক নামী প্রতিষ্ঠানে মডেল হওয়ার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলো | এই উঠতি সময়ে  রনির ভালোবাসার মতো তুচ্ছ সেন্টিমেন্টের জন্য নিশার জীবন নষ্ট করার মানে হয় না | একদিন রনি নিশাকে বলেই ফেললো কথাটা | সেদিনটাও ছিলো বৃষ্টিঝরা দিন | কলেজে ছাত্রছাত্রী কম | ক্লাসে ষ্টুডেন্ট কম থাকায় দুটি ক্লাস হওয়ার পর বাকি ক্লাস বাতিল হয়ে গেলো | সবাই চলে গেলেও নিশারা কয়েকজন বসে গল্প করছিলো | রনির ক্লাসও বাতিল হয়ে গেছে তাই রনিও এসে নিশাদের সাথে যোগ দিলো | প্রায় সব বন্ধুবান্ধব মনে করতো রনি আর নিশা পরস্পরকে ভালোবাসে | তাই রনি আসায় কেউ কিছু মনে করলো না | [Link](http://ashwadimba.blogpot.in ) একটু ভিড় পাতলা হতেই রনি ও নিশা বিরাট ক্লাসরুমের এক কোণে সরে বসলো |  বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে |  সেই বৃষ্টির দিকেই নিশা তাকিয়ে ছিলো | রনি হঠাত নিশার বাম হাত ধরে নিশার দিকে গাঢ় স্বরে বললো ‘নিশা তোকে একটা কথা বলার ছিলো | ’ নিশা আনমনেই উত্তর দিলো ‘বল | ’ রনি চাপা গলায় বললো ‘নিশা আমি তোকে ভালোবাসি | আমি জানি তুইও আমায় ভালোবাসিস | ’ নিশা রনির কথায় চমকে উঠলো | নিশা আন্দাজ করেছিলো এমন দিন একদিন আসবে | কিন্তু সেই দিনটা যে আজই তা ভাবতে পারে নি | মুহূর্তের মধ্যে নিশা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো | এই ব্যাপারটা কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না | সামনে নিশা নিজের উজ্জ্বল কেরিয়ারের হাতছানি দেখতে পাচ্ছে | কোনো ভাবেই তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে ম্লান হতে দেওয়া চলে না | নিশা চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো কেউ রনির কথা শুনতে পায় নি | সবাই নিজেদের গল্পে মশগুল | নিশা প্রথমে নিজের হাতটা রনির হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো | তারপরে গলা নামিয়ে রনিকে বললো ‘আমরা দুজনে শুধুই বন্ধু |  আমি তোকে জীবনসঙ্গী হিসাবে ভাবতেই পারি না | আর তুই যেটাকে ভালোবাসা বলছিস সেটা আসলে তোর মোহ | আশা করি  তোর “সত্যিকারের ভালোবাসার” সন্ধান একদিন পাবি | সেদিন যেনো আমায় ধন্যবাদ জানাতে ভুলিস না | ’
রনি নিশার কথাগুলো চুপচাপ শুনলো | হয়তো নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না |  এরপর কয়েকদিন রনি কলেজে এলো না | নিশা একদিন ফোন করে জানলো রনির শরীর খারাপ |  আরো কয়েকদিনের পর রনি কলেজে এলে নিশার সাথে দেখা হলো | রনি কেমন যেন নিশাকে এড়িয়ে গেলো | তার কয়েকদিনের মধ্যেই পরীক্ষা চলে এলো | সকলেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো |  পরীক্ষার পর কলেজে যাওয়া বন্ধ | নিশা রনিকে কয়েকবার ফোন করলো কিন্তু প্রতিবারই রনির মা বললো রনি বাড়ী নেই |
পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে দেখা গেলো রনি খুবই ভালো রেজাল্ট করেছে | নিশা রনিকে কনগ্রাচুলেশন জানাতে গেলে রনি বললো ‘কয়েকদিনের মধ্যেই দিল্লী চলে যাচ্ছি | ওখানে হায়ার ষ্টাডি করবো | তোকে আর জ্বালাবো না | ’ নিশা উত্তরে বললো ‘তুই আমায় জ্বালাস একথা কি কোনোদিন বলেছি ? ফালতু সেন্টিমেন্টের পিছনে না দৌড়ে নিজের কেরিয়ারে মন দে | আশা করি একদিন তুই “সত্যি ভালোবাসা” কাকে বলে অনুভব করবি | ’
সেই শেষ দেখা রনির সাথে |
রনির সাথে দেখা না হলেও নিশার সাথে যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি | হোয়াটস এপের সাহায্যে প্রায়ই খবরের আদানপ্রদান চলে | নিশা জেনেছে রনি এখন  বিশাল বড় মাল্টিনেশানাল কোম্পানীতে অফিসার | দিল্লিতে নিজস্ব ফ্ল্যাট ,গাড়ী সবকিছুই রয়েছে | আর নিশা র নিজের জীবন আগের মতো নেই | মডেলিং করতে গিয়ে নিশা জেনেছে ‘যা কিছু চকচক করে তাহাই সোনা নয় ’ | প্রথমদিকে এই জগতের সব কিছুই মনোমুগ্ধকর মনে হলেও পরে দেখেছে এর কদর্য রূপ | এ জগতে প্রতিভার কোনো দাম নেই | এখানে মেয়েদের উপরের দিকে উঠতে গেলে এমন কিছু দিতেই হয় যেটা নিশা কখনই পারবে না | নিশা উচ্ছাকাঙ্খী বটে কিন্তু খারাপ নয় | তাই আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে | আজ নিশার প্রায়ই মনে পড়ে রনির কথা | সেই মুহূর্তে উচ্ছাকাঙ্খার ভূত যদি মাথায় না চাপতো তবে নিশা হয়তো এতদিনে রনির ঘরণী হতো | হয়তো চুটিয়ে সংসার করতো | কিন্তু রনি সেই যে গেছে প্রায় তিন বছর হতে চললো একবারো বাড়ী আসেনি | নিশা কতোবার ভেবেছে হোয়াটস এপে নিজের মনের কথা লিখে পাঠাবে | কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সংযত করেছে  | নিশা বুঝেছে সেদিনের সেই আঘাতের ক্ষত রনির বুকে শুকিয়ে যায়নি | সেই আঘাতের উপর ভালোবাসার প্রলেপ দিতে হলে নিশাকে রনির সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইতে হবে | তাই দিন তিনেক আগে রনির মেসেজটা পেয়ে নিশা উতফুল্ল হয়ে উঠলো ,এতদিনে রনি বাড়ী ফিরছে | এবারে আর নিশা ভুল করবে না , প্রথম সুযোগেই ক্ষমা চেয়ে নেবে |  মেসেজে রনি জানিয়েছে নিশার জন্য নাকি সারপ্রাইজ আছে | পাগলটা নিশ্চয়ই কোনো দামী গিফট আনছে |
  ' ডাউন রাজধানী এক্সপ্রেস নয় নম্বর প্লাটফর্মে আসছে ' ঘোষণায় নিশার সম্বিত ফিরে এলো | রাজধানী ঢুকছে | কুলীরা দৌড়াদৌড়ি করছে | ঐ তো সবাই নামছে | ঐ তো রনি | নিশার মনে হলো একছুটে গিয়ে রনিকে জড়িয়ে ধরে | কিন্তু রনির আশেপাশে অনেকগুলি মানুষের ভিড় | রনির বাবা  মা এগিয়ে গেলো |  রনি ঝুঁকে প্রণাম করলো ওদের | রনির বাবা রনিকে কিছু যেন বললো   | রনি এদিকে ওদিকে তাকাতে রনির বাবা নিশার দিকে আঙুল দেখালো | নিশা হাত নাড়লো | রনি মালপত্র বাবার কাছে রেখে নিশার কাছে এগিয়ে এসে বললো ‘কেমন আছিস ? ’নিশা হেসে বললো ‘ভালো | ’রনি বললো ‘তোকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার আছে | আয় আমার সাথে | ’ এই বলে রনি নিশার হাত ধরে নিয়ে চললো ট্রেনের কাছে | নিশা মনে মনে ভাবলো  'পাগলটা একইরকম আছে | সারপ্রাইজ তো পরে দিলেও চলতো | ' তখনো সবাই ট্রেন নামেনি | রনি সেই জটলার দিকে উদ্দেশ্যে ডাকলো ‘সোমা  ,সোমা | ’ একটা হলুদ চুড়িদার পরা মেয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এলো | রনি বললো ‘তোমায়  বলেছিলাম না  আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা | এই হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিশা  | ’ তারপরে নিশার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো ‘একদিন তুই বলেছিলিস আমি আমার “ সত্যিকারের ভালোবাসা ” খুঁজে পাবো | আজ পেয়েছি | ধন্যবাদ তোকে |  এ হলো সোমা কোলকাতার মেয়ে | দিল্লিতে কাজ করে  | আগামী মাসে আমাদের বিয়ে | তোকে কিন্তু আসতেই হবে | ’ নিশা র চোখটা বড় কড়কড় করে উঠলো | চোখের জল কোনোরকমে লুকিয়ে  কাঁপা কাঁপা গলায় বললো ‘আমার ভবিষ্যতবাণী ফলেছে দেখে ভারী খুশী হলাম | আজ আসি রে | অনেক কাজ বাকী আছে | তুই আসছিস বলে সব ফেলে তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম | চলি ….. | ’
অনেক রাত্রে বিছানায় শুয়ে বালিশে চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিশা বলে চললো “হে ঈশ্বর ……কেন ? …….কেন ? …কেন ? ……” | (শেষ)