Crss colum

Tuesday, April 16, 2019

শেষ লোকালের আলো

আজ সন্ধ্যায় মনে হয় বৃষ্টি হয়েছে। এখানে ওখানে জল জমে আছে।আজ পূর্ণিমা।গোল চাঁদটা এখন মাঝ আকাশে আসবো আসবো করছে।আর আকাশের ঝকঝকে চাঁদের প্রতিবিম্ব বৃষ্টিস্নাত জলার জমা জলে পড়ে ঝিলিক দিচ্ছে।ঐ দূরে জলার পাড়ে পাইকপাড়ার দিকে কেমন ধোঁয়াশা ভাব ।মনে হয় হালকা হিম পড়েছে। শীতকালে সাধারণত বৃষ্টি হয় না । কিন্তু আজ হয়েছে।আর বৃষ্টি যেন হিমেল ভাবটা বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি রাত জাগা পাখির কর্কশ ডাকে যেন হুঁশ ফিরে পেলাম।
না , দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না।আমায় হাঁটতে হবে। এখনো অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হবে। হাঁটতে আমার ভালো লাগে।সবাই বলে কালু সেখের ছেলেটা সারারাত শুধু এদিকে ওদিকে হেঁটে বেড়ায়।তারা সবটুকু যে ঠিক বলে তা নয়। হেঁটে বেড়াই একথা ঠিক। কিন্তু এদিকে ওদিকে নয়। প্রতি রাতে আমি নির্দিষ্ট রাস্তায় হাঁটতে থাকি। যেখানে থাকি সেখান থেকে শুরু করে বুড়ির বাঁধ দিয়ে  গিয়ে  ভৈরবতলার শ্মশান।সেখান থেকে ডান হাতি বেঁকে একটু হাঁটলেই রেললাইন। রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্য পর্যন্ত।
আমি যখন হাঁটি তখন প্রায় নিশুতি রাত।এদিক পানে এমনিতেই কেউ আসে না।তাই এই নির্জন রাস্তায় কি যে ভালো লাগে তা বলার নয়। ঝিঁঝিঁ র ডাক, ব্যাঙের গ্যাঙোর গ্যাং, জোনাকির মিটমিটে আলো সরীসৃপের বুকে হাঁটার শব্দ সব যেন নেশা ধরানো স্বপ্নের মতো লাগে। সবাই বলে কালু সেখের ছোট ছেলেটা পাগল।তা বলুক। কিছু আসে যায় না। শুধু ছোট্ট ছোট্ট হারামি বাচ্চাগুলো মাঝে মাঝে আমায় দেখলে ঢিল ছোঁড়ে তখন খারাপ লাগে। আব্বা আমায় স্কুলে পাঠিয়েছিলো ছোটোবেলায়। কিন্তু মাস্টার মশাইয়ের কড়া শাসন আমার ভালো লাগে নি। তাই একদিন মাস্টার মশাই ছড়ি বাগিয়ে মারতে এলে তার হাত থেকে ছড়ি কেড়ে দুই আধখানা করে ফেলে দিয়ে দে দৌড়। তারপর থেকে আর স্কুলে যাই নি। আব্বা কয়েকবার পাঠাবার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আম্মি আর যেতে দেয়নি।
আম্মি আমায় খুব ভালোবাসে। আম্মি আমায় বলে "আলি তোকে নিয়েই আমার চিন্তা"।আলি আমার ডাক নাম। ভালো নাম একটা ছিল। কিন্তু সে নাম কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। তাছাড়া পাগল ছাগল মানুষের নাম নিয়ে কি হবে।সবাই আমায় আলি পাগলা বলেই ডাকে।
ঐ সব ডেকরা ছোঁড়াগুলো ঢিল ছুড়ে মারে বলে আমি দিনের বেলায় খুব একটা বেরোই না।সুয্যিমামা পাটে গেলে রাতের আঁধারে হাঁটতে বেরোই। প্রথম প্রথম বাড়ির বাকি মানুষজন যেমন আব্বা, আম্মি , দাদারা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আমি ঠিক লুকিয়ে পালাতাম সারা রাত হেঁটে ঘুরে বেড়িয়ে ভোর বেলায় ঘরে ফিরতাম। আম্মি আমার ঘরে পান্তা রেখে দিতো। ভোরবেলায় এসে পান্তা খেয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোতাম।সবার এটা গা সওয়া গোছের হয়ে যাওয়ায় এখন আর কেউ বাধা দেয় না।
এখন অবশ্য এদিকে ওদিকে হাঁটি না।যে রাস্তা বলছিলাম সেটা দিয়েই শুধু হাঁটি।আর আমার হাঁটার রাস্তায় ভুল করেও যদি কেউ এসে যায় তবে তাকে নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়ি। আমার ভয়ে ইদানিং কেউ আর এদিকে আসে না।
আজ ভৈরব তলার শশ্মানে এসে দেখলাম সদ্য কেউ মরা পুড়িয়ে গেছে। এখনো চিতা থেকে পোড়া পোড়া একটা গন্ধ উঠছে।না কেউ কোথাও নেই। পায়ের কাছে একটা খসখস শব্দ শুনে দেখলাম একটা কালো ছয় হাতি বুক বেয়ে এগিয়ে আসছে। শীতকালে সাধারণত সাপ বেরোয় না।আজ মনে হয় গর্তে জল ঢুকে পড়ায় বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু কি হলো জানিনা। মনে হয় বিপদের গন্ধ পেয়েই সাপটি পাশের জলার দিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো।
যাই হোক আমি ডানহাতি রাস্তা ধরে রেললাইনে এসে পড়লাম। রেললাইনের পাশ দিয়ে যাতায়াত করার রাস্তা আছে। কিন্তু আমি সকলের থেকে আলাদা ধাঁচের। আমি রেললাইন ধরে হাঁটতে শুরু করলাম।দুরে কোথাও হতে একটু কোলাহল মতো শোনা যাচ্ছে।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম চার পাঁচ জন লোক একসাথে কথা বলতে বলতে হেঁটে আসছে। আমি ভ্রুক্ষেপ করলাম না রেললাইন ধরে হাঁটতে লাগলাম। অনেক দূরে একটা ছোট্ট আলোক বিন্দু দেখা যাচ্ছে। যতই সময় যাচ্ছে বিন্দু টি ততই বড়ো হচ্ছে।  বিন্দু টি ক্রমশ একটি জোরালো হেডলাইটের রূপ নিচ্ছে। শেষ লোকালের আলো।পিছনের লোকগুলো মনে হয় আমায় দেখতে পেয়েছে।পিছন থেকে হৈ হৈ শুনতে পাচ্ছি। আমি আরেকটু জোরে হাঁটতে লাগলাম। সামনে শেষ লোকালের আলো জোরদার হচ্ছে। পিছনের পায়ের শব্দ গুলো দ্রুত হচ্ছে। মনে হয় আমায় বাঁচাতে দৌড়ে আসছে। ওরা জানে না ঐ আলোই আমার গন্তব্য। আমি আলোর দিকে দৌড়ে যেতে লাগলাম। শেষ লোকালের ড্রাইভার একটুও ট্রেন থামানোর চেষ্টা করলো না। এই লাইনের প্রতিটি ট্রেন ড্রাইভার জানে ঠিক এই জায়গায় প্রতিদিন এক আধ পাগল পথিক ট্রেনে কাটা পড়ে। যেমন পড়েছিল তিন বছর আগে। বহুবার ট্রেনে কাটা পড়ার পর ট্রেন থামিয়ে খোঁজাখুঁজি হয়েছে কোনো লাশ পাওয়া যায় নি।আজো পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন রাতে আমি আমার কবর থেকে জেগে উঠি। তারপর পরিচিত রাস্তা দিয়ে হেঁটে এসে ঠিক এই খানে শেষ লোকালের আলোয় নিজেকে শেষ করে দিই। এই একই ঘটনা দিনের পর দিন পুনরাবৃত্তি হয়। হয়তো এটাই চলবে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত।
ঐ আসছে শেষ লোকাল।ঐ আমার গন্তব্য। আমি ছুটে চলেছি………(শেষ)

Monday, April 15, 2019

কণাদ - 666

ল্যান্ড ফোনের আওয়াজে অমলের ঘুম টা ভেঙে গেল। বালিশের পাশে রাখা মোবাইলে  দেখলো রাত তিনটে বেজে কুড়ি। এতো রাতে আবার কে ফোন করলো?
বীণার দিকে তাকিয়ে দেখলো  ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছে। হালকা নাক ডাকছে। বীণার প্রিয় বিড়াল লীলা ওর পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে।
উঠবো কি উঠবো না করতে করতে শেষে উঠেই পড়লো অমল। হতে পারে কোনো জরুরি দরকার।
ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দা । বারান্দার একপাশে ডাইনিং টেবিল।তার পাশে ছোট একটি টেবিলের উপর রাখা আছে ল্যান্ড ফোন। আজকাল খুব কমই ব্যবহার হয়। আত্মীয় স্বজন সবাই মোবাইলে ফোন করে। শুধু অফিসের কিছু দরকার থাকলে ল্যান্ড ফোনে কল করে।অমল এমনিতেই খুব হিসেবি মানুষ। ঘরে মোবাইল থাকতে ল্যান্ড ফোনের মতো সাদা হাতি পোষার কোনো মানে হয় না। শুধু অফিস থেকেই এই ল্যান্ড লাইনের সব খরচ দেয় তাই ।
অমল ঘরের দরজা খুলে বারান্দা দিয়ে ল্যান্ড লাইনের কাছে এসে দাঁড়ালো। এখনো ফোনটা বেজে চলেছে।এক মূহুর্ত ভেবে তারপর ফোনটা তুলে নিয়ে বললো "হ্যালো"
ওপাশ থেকে একটা চেনা গলা বলে উঠলো "অমল চক্রবর্তী বলছেন?"
অমল বললো "হ্যাঁ বলছি"।
চেনা গলা টি আবার বললো "আপনার সঙ্গে দেখা করার খুব প্রয়োজন। এখনি একবার দেখা করতে পারবেন?"
অমল গলা টি চেনার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না। অমল বললো "কেন দেখা করা প্রয়োজন ? কোথায় দেখা করতে হবে ?"
চেনা গলাটি বললো "এখন ফোনে বলার সময় নেই। তাছাড়া আপনার ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে। দেখা হলে সব বুঝতে পারবেন। দেখা করার জন্য বেশি দুরে আপনাকে যেতে হবে না। আপনার কোয়ার্টারে র ছাদে একবার আসুন। ওখানেই দেখা হবে।একাই আসুন।ভয়ের কিছু নেই। আমি আপনার পরিচিত। শুধু এটুকু বলছি আপনার জীবন সংকট। তাহলে এখনি আসুন।"

কট করে ফোনটা কেটে গেল।
অমল চুপচাপ ভাবতে লাগলো।
অমল ইসরোর সিনিয়র রিসার্চার। ইসরোর কম্পাউন্ডের ভিতর অমলের কোয়ার্টার। কোয়ার্টার বলতে ছোট ছোট কটেজ। তাছাড়া এই অঞ্চলটি হাই সিকিউরিটি জোনের ভিতর। এখানে বাইরের উটকো লোক কেউ আসবে বলে মনে হয় না। তবুও অমল একবার চিন্তা করলো সিকিউরিটি অফিসে ফোন করবে কিনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরস্ত হলো বুকের ভেতর থাকা অদম্য কৌতুহল এর জন্য।দেখাই যাক না কি হয়।
পুনরায় একবার ঘরে গিয়ে  নাইট ড্রেস চেঞ্জ করে প্যান্ট জামা পরে নিলো। বীণা এখনো ঘুমাচ্ছে।
নিজের আলমারির লকার থেকে গত বছর মার্চে লাইসেন্স পাওয়া নতুন কেনা লোডেড পিস্তল টি বের করে পোশাকের ভিতরে নিয়ে নিল। এখনো এটি একবারো ব্যবহার হয় নি।বলা যায় না।আজকেই হয়তো আত্মরক্ষার প্রয়োজন হবে।
এবার ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চলে এলো।
বেশ বড়সড় ছাদ। কিন্তু কেউ কোথাও নেই।
অমল ভাবলো কেউ মজা করলো না তো। আজকে পয়লা এপ্রিল কিনা মনে করার চেষ্টা করলো। কিন্তু এখন তো সবে মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে।
ছাদের মাঝখানে দুটি পাথরের বেঞ্চ। মুখোমুখি দুজন মানুষ বসে গল্প করতে পারে। বীণা শখ করে বসিয়েছে।অমল গিয়ে একটা বেঞ্চে  বসলো।
 রাতের এই নির্জনতা বেশ ভালো লাগছে।
আচমকা অমলের মনে হলো ঠিক তার সামনে  কিছু একটা ঘটছে।ছাদ টি পুরো অন্ধকার নয়।দুরের  উচুঁ লাইট পোষ্টের আলো এসে পড়েছে। সেই হালকা আলোয় অমল দেখলো ঠিক তার সামনে একটি আলোর বৃত্ত ফুটে উঠেছে।আলোর বৃত্ত টির ভিতরে একটা আবছা মানুষের আদল ফুটে উঠেছে। ধীরে ধীরে মানুষের চেহারাটা স্পষ্ট হলো।
হে ভগবান! এ তো অমলের চেনা।
শুধু চেনা বললে কম হবে। সামনে আলোর বৃত্ত থেকে যে মানুষটি এসে দাঁড়িয়েছে সে তো অমল নিজেই।
আগুন্তক অমল বললো ,"খুব অবাক লাগছে না ? আমি অমল। তবে আপনার এই ব্রহ্মান্ডের নয়। আমি প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে আসছি। আপনার আমার উভয়ের খুবই বিপদ।"
প্রথম অমল বললো ,"প্যারালাল ইউনিভার্স আছে একথা তত্ত্ব গত ভাবে জানি। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান এর অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারে নি। আপনি যে প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে ই আসছেন তার প্রমাণ কি?"
আগুন্তক অমল প্রথম অমলের মুখোমুখি পাথরের বেঞ্চে বসলো।

 দ্বিতীয় অমল বললো , "এই ব্যাপারে সরাসরি কোনো প্রমাণ দেওয়া একটু মুশকিল। তবে এটুকু বলতে পারি আপনার ও আমার উভয়ের জন্মতারিখ তেসরা মে। তবে আপনার জন্ম তেসরা মে ১৯৮৫সালে।আর আমার তেসরা মে ২১৮৫সালে। কারণ আমার ইউনিভার্সে টাইম লাইন আপনার ইউনিভার্সের চেয়ে দুশো বছর এগিয়ে। এছাড়া আমাদের দুজনেরই বাম ঊরুতে একটি করে জরুল আছে। আমরা দুজনেই মিস্টি খেতে ভালোবাসি।ছয় বৎসর বয়সে দুজনেই পেটের যন্ত্রণা য় ভুগেছিলাম। তখন আমাদের দুজনের অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন হয়েছিল। আমাদের দুজনের ব্যাক্তিগত জীবনে অনেক মিল আছে। তবে সামাজিক ব্যাপারে মিল নেই। যেমন আপনি ইসরোর একজন সিনিয়র রিসার্চার। কিন্তু আমি ইসরোর ডিরেক্টর। আপনি বিবাহিত  কিন্তু আমি অবিবাহিত। আপনার পরিচিত মানুষের সঙ্গে আপনি যে সম্পর্ক যুক্ত , তা আমার সঙ্গে একই সম্পর্কযুক্ত নাও হতে পারে। যেমন আপনার স্ত্রী বীণা আমার ইউনিভার্সে আমার ব্যক্তিগত সেক্রেটারি। আপনার আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধবরা আমার কাছে অন্য সম্পর্ক যুক্ত।
  দুই প্যারালাল ইউনিভার্সের মধ্যে এমনি অনেক মিল ও অমিল রয়েছে।"
এই পর্যন্ত বলে দ্বিতীয় অমল থামলো। এই ফাঁকে প্রথম অমল প্রশ্ন করলো , "আপনি কেন এসেছেন?"
দ্বিতীয় অমল বললো ," আমাদের ইউনিভার্স প্রায় আপনাদের মতোই। তবে তা বিজ্ঞানে আপনাদের চেয়ে একটু এগিয়ে। আপনাদের এখানে ভারত উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু আমাদের ওখানে ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ। আমরা টাইম ট্রাভেল ও স্পেস টাইম এর মধ্যে দিয়ে  যে কোন ইউনিভার্সের যে কোন ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়ার পোর্টেবল যন্ত্র আবিষ্কার করেছি। তবে এই সব টেকনোলজি সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। এগুলো বিশেষ  প্রয়োজনে সরকারের বিশেষ লোকজন ব্যবহার করতে পারেন। এই টেকনোলজি ভারত ছাড়া আরো তিন চারটি দেশ অবগত আছে।তার মধ্যে একটি আমাদের শত্রু দেশ।
কয়েকবছর আগে আমরা এক প্রোজেক্ট হাতে নিই। এই প্রোজেক্ট সম্পূর্ণ হলে  ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমস্যা চিরতরে দূর হবে।অতি ছোট  পরমাণু রিঅ্যাক্টর তৈরী করা যাবে। এগুলো অত্যন্ত নিরাপদ ও সহজে বহনযোগ্য হবে। এই প্রোজেক্টের কোডনেম 'কণাদ 666'। আপনাদের এখনকার সব পরমাণু রিঅ্যাক্টর ফিউশন পক্রিয়ায় চলে। কিন্তু আমার প্রস্তাবিত এই নতুন 'কণাদ 666' তে ফিশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে।এর ফলে পরমাণু বর্জ তৈরী হবে না।
কিন্তু কিছুদিন আগে আমাদের সরকারের গুপ্তচর বিভাগের পক্ষ থেকে আমাকে জানায় আমাদের সংস্থায় শত্রু দেশের এক গুপ্তচর কাজ করছে। আমরা বেশ কিছু দিনের চেষ্টায় তাকে আইডেন্টিফাই করি।সে আর কেউ নয়। আমার ব্যক্তিগত সেক্রেটারি বীণা। তাকে আমরা গ্রেপ্তার করি।
কয়েকদিন টানা জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আমরা নিশ্চিত হই যে ধরা পড়েছে সে আমার সেক্রেটারি বীণা নয়। তবে হুবহু বীণা র মতো দেখতে। এবং এই মহিলা দাবি করেন যে তিনি আমার স্ত্রী। আমরা উন্নত লাই ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হই সে সত্যি কথাই বলছে।
তখন দুটি সম্ভাবনা মাথায় আসে ।প্রথমত হয় এটি বীণার কোনো যমজ বোন। কিন্তু আমরা বিভিন্ন ভাবে তদন্ত চালিয়ে দেখে নিশ্চিত হই বীণার কোনো যমজ বোন ছিল না।
তখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় সম্ভাবনা মাথায় আসে। সেটা হলো  এই মহিলা প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে এসেছে। সেক্ষেত্রে বিপদ আরো বেশি। আমাদের শত্রু দেশ বেআইনি ভাবে প্যারালাল ইউনিভার্স যাওয়ার টেকনোলজি ব্যবহার করেছে । কিন্তু কেন ?
সেটাই সবচেয়ে ভাবিয়ে তুললো সবাইকে।
অবশেষে একজন বিজ্ঞানী এই রহস্যের সমাধান দিলেন।
কিছুকাল আগে আবিস্কৃত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায় যে প্যারালাল ইউনিভার্সে থাকা একই মানুষ গুলি একে অন্যের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। একজনের স্বপ্নে অন্য জনের বাস্তব জীবন ফুটে ওঠে। অর্থাৎ একজনের স্বপ্ন অন্যজনের কাছে বাস্তব। যেমন তুমি স্বপ্ন দেখো তুমি একদিন ইসরোর ডিরেক্টর হবে এবং গোপন বিষয় নিয়ে গবেষণা করবে । সেটা তোমার জীবনের ক্ষেত্রে স্বপ্ন হলেও আমার জীবনে ওটা বাস্তব। আবার আমি স্বপ্ন দেখি সুন্দর সংসার করার ও বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশ করার সেটা তোমার ক্ষেত্রে ঘোরতর বাস্তব।

আমাদের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স নিশ্চিত হলো আমার সেক্রেটারি বীণা নিজেকে তোমার স্ত্রী র সঙ্গে বদলাবদলি করেছে তোমাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমাদের শত্রু দেশ তোমায় হাতে পেলে ওষুধের সাহায্যে ঘুম পাড়িয়ে ' ড্রিম অ্যানালাইজার ' যন্ত্রের সাহায্যে তোমার স্বপ্ন বিশ্লেষণ করলেই আমার যাবতীয় কার্যকলাপের হদিশ পেয়ে যাবে।আর এটা হতে দেওয়া যায় না।তাই আমি নিজেই ঝুঁকি নিয়ে চলে এসেছি তোমাকে বাঁচাতে। আমার বদলে অন্য কেউ এলে তোমার বিশ্বাস হবে না।
প্রথম অমল বললো ,"আপনি যা দাবি করছেন তা অবিশ্বাস্য। কিন্তু আমার মনে হয় আপনি কোথাও একটা ভুল করছেন। আমার স্ত্রী বদলে গিয়েছে বলে আমার অন্তত মনে হয় না।"
পিছন হতে একটি মহিলা কন্ঠ বলে উঠলো "এই ভন্ড প্রবঞ্চকের কথা তুমি একফোঁটাও বিশ্বাস করো না।"

দুই অমল হকচকিয়ে তাকিয়ে দেখলো সিঁড়ির দরজার কাছে বীণা দাঁড়িয়ে।
দ্বিতীয় অমল বললো , "তুমি এই নিরীহ মানুষটি এই সব ব্যাপারে জড়িও না। তুমি ধরা দাও। আমি চেষ্টা করবো যাতে তোমার কম শাস্তি হয়।"
বীণা বললো "তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে আমি তোমার সেক্রেটারি ?"
দ্বিতীয় অমল বললো "ও, তার মানে তুমি আমাদের সব কথাই শুনতে পেয়েছো। বেশ প্রমাণ আমি দিচ্ছি। আমার দফতরে কাজে লাগার সময় সব কর্মীদের ঘাড়ের উপর অতি ছোট মাইক্রো ট্র্যাকিং ডিভাইস অপারেশন করে লাগিয়ে দেওয়া হয়।যাতে সেই ব্যক্তি হারিয়ে গেলে বা নিরুদ্দেশ হলে আমাদের তৈরী এই বিশেষ যন্ত্রে তার অবস্থান জানতে পারা যায়।"
এই বলে দ্বিতীয় অমল একটা ছোট রিমোটের মতো যন্ত্র পোশাকের ভিতর থেকে বার করলো।
দ্বিতীয় অমল বললো "আর এই যন্ত্রটি র এই রেড বাটনটি  টিপে দিলে তোমার মাইক্রো ট্র্যাকিং ডিভাইসের ভেতরে থাকা ছোট্ট স্পীকার তোমার ট্র্যাকিং কোডটি বলে উঠবে। এই রেড বাটনটা আমি টিপে দিলাম।"
রেড বাটনটা দ্বিতীয় অমল টেপা মাত্র বীণার ঘাড়ের কাছ থেকে একটা যান্ত্রিক কন্ঠস্বর বলে উঠলো "BINA-9425"।
বীণা দ্রুত তার পোশাকের ভিতর থেকে একটা পিস্তল টাইপের অদ্ভুত অস্ত্র বের করে প্রথম অমলের দিকে তাক করলো।
বীণা বললো ,"আমি আমার দেশের জন্য মরতেও রাজি। কিন্তু তার আগে এই 'কণাদ -666'এর গোপন তথ্য যাতে আমার দেশের সরকার পায় তার ব্যবস্থা করবো।"
দ্বিতীয় অমল বললো ,"বীণার হাতের ঐ যে অস্ত্র টি দেখছো ,
 ওটা একটা পোর্টেবল 'স্পেস টাইম সিঙ্কার' মেশিন। ওটা তোমার ওপর চালানো হলে তোমাকে ঘিরে একটি আলোর বুদবুদ তৈরী হবে। সেই বুদবুদ স্পেস টাইমের মধ্যে দিয়ে তোমায় আগে থেকেই পোগ্রাম করা জায়গা ও সময়ে নিয়ে গিয়ে ফেলবে।"
বীণা প্রথম অমলের দিকে তাক করা অস্ত্র টি উঁচিয়ে ধরে বললো "যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।"
ঠিক এই সময় বীণার পোষা বিড়াল লিলি ঘুম থেকে উঠে এসে বীণার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে গলে সামনে আসলো। বীণা চমকে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেল।ওর হাত থেকে 'স্পেস টাইম সিঙ্কার' মেশিন টি ছিটকে পড়লো।
ইতিমধ্যে দ্বিতীয় অমল অনুরূপ একটি মেশিন  বার করে বীণার দিকে তাক করে চালিয়ে দিলো।
মূহুর্তের মধ্যেই বীণাকে ঘিরে একটা আলোর বুদবুদ তৈরী হলো।
আলোর বুদবুদ টি কয়েকবার আলোর ঝলকানি দিয়ে বীণা সহ মিলিয়ে গেল।
প্রথম অমল বললো "বীণা কোথায় হারিয়ে গেল ?"

দ্বিতীয় অমল বললো "চিন্তা করবেন না। ওটা আপনার স্ত্রী নয়। ওকে সঠিক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এতক্ষণে সে আমার লোকেদের হেফাজতে । এবার চলুন আপনার স্ত্রী কে আপনার কাছে পৌঁছে দিই। আপনার শোওয়ার ঘরে চলুন।"
দুই অমল শোওয়ার ঘরে এলো।
দ্বিতীয় অমল একটি স্মার্টফোন বার করলো।
দ্বিতীয় অমল স্মার্টফোনে কিছু একটা লেখা দ্রুত টাইপ করে পাঠিয়ে দিলো।
তারপর প্রথম অমলকে বললো "এটিও স্মার্টফোন। তবে আপনাদের চেয়ে উন্নত প্রযুক্তির। এটা যে কোন স্পেস টাইমে ক্যমুনিকেট করতে পারে।"
দ্বিতীয় অমলের কথা শেষ হওয়ার পরেই বিছানায় একটা আলোর বুদবুদ ফুঁটে উঠলো। তারপর আলোর মধ্যে একটা মহিলা র মূর্তি সৃষ্টি হলো। অবশেষে বিছানায় নিদ্রিত বীণাকে দেখা গেল।
দ্বিতীয় অমল  বললো "বীণার মন থেকে আমরা কয়েকটি দিনের স্মৃতি মুছে দিয়েছি। বেশ কয়েকটি ঘন্টা বীণা ঘুমিয়ে থাকবে। তারপর জাগলে ওর মনে হবে ও যেন স্বপ্ন দেখছিলো। আপনিও এই সব ঘটনা নিয়ে ওকে কিছু বলবেন না।"
প্রথম অমল বললো "ঠিক আছে।"
দুজনে পুনরায় ছাদে এলো।
দ্বিতীয় অমল বললো "আমি তবে আসি।"
প্রথম অমল বললো "আবার কি আমাদের দেখা হতে পারে ?"
দ্বিতীয় অমল  'স্পেস টাইম সিঙ্কার ' মেশিন টি বার করে নিজের দিকে তাক করে ট্রিগার চেপে দিয়ে বললো "সম্ভাবনা নেই।"
কয়েকটি মূহুর্ত পর ছাদে একটা অমলের অস্তিত্ব রইলো।
পূর্ব দিকে সূর্যোদয় হচ্ছে।তার গৈরিক আলোকচ্ছটা চারিদিক উদ্ভাসিত করছে।
সেই অপরূপ সৌন্দর্যের দিক তাকিয়ে অমল মনে মনে বললো "জীবন বড়ই অদ্ভুত।"( শেষ)