Crss colum

Thursday, January 25, 2018

বাংলা কল্পবিজ্ঞান - মহাশূন্যের পথিক (অন্তিম পর্ব)।

বাংলা অনলাইন কল্প বিজ্ঞান - মহাশূন্যের পথিক (অন্তিম পর্ব ) - ঐ কৃষ্ণ গহ্বর দেখা যায়।সব কিছু সেই রাক্ষস অবিরত গিলে চলেছে।  রাহুল ও রোশনি অবাক বিস্ময়ে সেই অনন্ত অনন্ত ব‍্যাপি বিশ্বের কেন্দ্র স্থলে অবস্থিত কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর কয়েকটা মূহুর্ত । হঠাৎ 'আই’ বলে উঠলো “কমান্ডার, একটা ব‍্যাপার লক্ষ্য করুন। আমরা যে গোলকের মধ্যে অবস্থান করছি সেটা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।”
রাহুল ও রোশনি দুজনেই লক্ষ্য করলো তাদের ঘিরে থাকা বুদবুদ টি বা গোলকটি ক্রমেই ছোট হচ্ছে। দেখতে দেখতে বিরাট গোলকটি ছোট হয়ে হয়ে শুধু ই তাদের ঘিরে থাকা ছোট্ট গোলকে পরিণত হলো। এরপর সেই গোলকটি সোজা মরণ ঝাঁপ দিলো কৃষ্ণ গহ্বরের অভ‍্যন্তরে।

বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী কৃষ্ণ গহ্বরের আকর্ষণের মধ্যে পড়া মাত্রই তাদের একটি বিন্দু মাত্র হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু চরম আশ্চর্য এই যে ,সেসব কিছুই হলো না ।  গোলকটি তাদের রক্ষা কবচ হয়ে দিব‍্যি এগিয়ে চলেছে কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্রের দিকে।এ এক অত‍্যাশ্চর্য ঘটনা। রাহুল , রোশনি, 'আই’, তিনজনেই নিজেরা আলোচনা করে বুঝতে পারছিলো না কিভাবে এই ঘটনা সম্ভব ? তবে কি আরো বিস্ময়কর কোন কিছু অপেক্ষা করছে তাদের জন্য ।
কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে সময় ,আলো সব কিছুই আটকা পড়ে যায়।তাই কত সময় ধরে তারা এগিয়ে চলেছে তারা নিজেরাই জানেনা।
তাদের মনে হতে লাগলো অনন্ত অনন্ত কাল ধরে তারা এগিয়ে চলেছে ।
তাদের বুদবুদের পাশ দিয়ে হু হু করে এগিয়ে চলেছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় ম‍্যাটার । মনে হচ্ছে এক ক্ষুধার্ত রাক্ষস অবিরত গিলে চলেছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
দূরে যেন মনে হচ্ছে একটি বিন্দু তে গিয়ে সব কিছুই মিশে যাচ্ছে।ঐ টি কি কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্র ?
ক্রমেই বিন্দুটি এগিয়ে আসছে।
বুদবুদ টি কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্র সেই বিন্দুটি র কাছে গিয়ে স্থির হয়ে গেল ।

ঘন কালো অন্ধকারে র মধ্যে একটি অতীব উজ্জ্বল আলোর কণা।


কৃষ্ণ গহ্বর প্রতি মূহুর্তে যে কোটি কোটি নক্ষত্রের সময় পরিমাণ ম‍্যাটার গিলে চলেছে তা এতটা পথ আসতে আসতে বিশুদ্ধ এনার্জি তে পরিণত হয়ে  এই বিন্দুতে মিলিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু বড়ই আশ্চর্য রাহুল, রোশনি, 'আই’, সকলেই বুদবুদের মধ্যে নিরাপদ ভাবে কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্রে আসতে পেরেছে।
“স্বাগতম”
হঠাৎ রাহুল ও রোশনি, 'আই’  এই  কথা টি শুনতে পেলো।
না ঠিক শুনতে পায়নি। বরং বলা চলে মস্তিষ্কের মধ্যে এই সম্ভাষণ টি অনুভব করলো।
পৃথিবীর কোন ভাষায় এই সম্ভাষণ টি করা হয় নি।  
আসলে তারা নিজেদের আপন ভাষাতেই এই কথা টি অনুভব করলো। 'আই’ কথাটি অনুভব করলো কম্পিউটারের ভাষায়।
রাহুল বললো , “কে আপনি ?”

উত্তর এলো , “আমি বিন্দু।”

রোশনি বললো, “দয়া করে বুঝিয়ে বলুন আপনি কে ?”
উত্তর এলো, “ তোমাদের  ভাষায় সিংগুলারিটি।”
রাহুল বললো, “আমরা এখানে জীবিত অবস্থায় কি ভাবে ও কেন এসেছি ?”
বিন্দু হতে উত্তর এলো , “তোমরা আমার ইচ্ছায় এখানে এসেছো। এই ভয়ানক স্থানে (space - এ) কোনো কিছুই জীবিত অবস্থায় থাকতে পারে না। এখানে কেবলমাত্র আমি একক সত্ত্বা নিয়ে উপস্থিত থাকি। আমি -ই সব কিছুর স্রষ্টা। এই জগতের সব কিছুই আমার প্রত‍্যক্ষ বা পরোক্ষ ইচ্ছায় পরিচালিত হয়। তোমরা কোথায় থেকে এসেছো এবং কি উদ্দেশ্যে এসেছো ,তার আমি জানি। যেখানে তোমাদের প্রেরণ করা হচ্ছিল , সেখানে পৌঁছতে পারলে তোমাদের বিপদ হতো। তোমরা যে নভেরীয় জাতির সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে চেয়েছিলে , তারা জন্মগত ভাবেই বড় কুটীল প্রকৃতির।ছলনার আশ্রয় নিয়ে তারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব প্রাণীদের আমন্ত্রণ করে তাদের বন্দী করে এক বৃহৎ সংগ্রহশালা তৈরি করতে চায় ।
সেই উদ্দেশ্যে তোমাদের আমন্ত্রণ জানানো।”
এই ব্রহ্মান্ডের সব ঘটনা আমি জানি, কিন্তু বিশেষ উদ্দেশ্য ভিন্ন কখনো কোন  ব‍্যাপারে আমি সরাসরি অংশগ্রহণ করি না।”

রোশনি বললো, “তবে আমাদের কেন রক্ষা করলেন  ?”
পুনরায় উত্তর অনুভব হলো, “এই সৃষ্টি র রচনা থেকেই আমি সৃষ্টি র প্রতিটি সম্ভাবনা (probability) কে   উপযুক্ত ভাবে বিচার করে  তবেই বাস্তবায়ন করি। আমি তোমাদের জন্য নির্ধারিত সম্ভাবনা কে বাতিল করে আরো উপযুক্ত বিকল্প ভবিষ্যৎ রচনা করেছি ।
 ।
তোমরা যে সামান্য ক্ষণ আমার নিকটে রয়েছো , সেই টুকু সময়ের মধ্যেই তোমাদের নির্দিষ্ট সময় মানের কোটি কোটি বৎসর অতীত হয়ে গেছে। তোমাদের জানা পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
আমি তোমাদের গ্রহকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার জন্য তোমাদের এখানে নিয়ে এসেছি।
এই কাজে তোমাদের সহায়তা করার জন্য তোমাদের ই সৃষ্ট এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন  'আই’ সহায়ক হবে। আমি তার জ্ঞান ভান্ডার এ আরো প্রয়োজনীয় সংযোজন(software upgrade)করেছি। এছাড়া  তোমাদের পৃথিবীর একটি বিশেষ স্থানে পৃথিবীর সব প্রাণী , উদ্ভিদ,  ইত‍্যাদীর বীজ(DNA) ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত করে রেখেছি ।তার সকল তথ্য ও তার বিকশিত করার পদ্ধতি তোমাদের এই 'আই’ এর বুদ্ধিমত্তায় সংযোজিত করেছি। এই সংরক্ষিত বীজের মধ্যে কিছু বিশেষ মানুষ এর বীজ (DNA) রয়েছে। তোমাদের সন্তান ও ঐ সব বীজ হতে উদ্ভব মানব সন্তানের দ্বারা নতুন পৃথিবীর মানব জাতি গড়ে উঠবে।
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো কি উদ্দেশ্যে তোমাদের রক্ষা করেছি।”

রাহুল বললো, “আপনি কি ঈশ্বর ?”

উত্তর অনুভব হলো, “আমি ই ওংকার।।
এই যা কিছু দেখতে , শুনতে, অনুভব করতে পারছো তা আমি।
আমি ই এই জগৎ। দৃশ্য অদৃশ্য সব কিছুই আমার শরীর। আমি ছাড়া আর কিছুরই অস্তিত্ব নেই। আমি একা। নিজেকে বহুতে বিভক্ত করেছি। এ সবই করেছি নিজের লীলা হিসেবে। মানবজাতির ইতিহাসে প্রথম দিন হতে যে যে ধর্মের উদ্ভব হয়েছে তার মূল আরাধ্য হিসেবে আমাকেই অর্চনা করেছে।
কেউ সাকার আবার কেউ নিরাকার হিসেবে আমার অর্চনা করেছে। আমি ই কখনো কৃষ্ণ, কখনো কালি, কখনো গড, কখনো আল্লাহ, কখনো জিহোবা, এইসব রূপে পূজিত হয়েছি। আসলে আমি এক ও অভিন্ন। আমি অতি সূক্ষ্ম, আবার অতি বিরাট। আমি আকার যুক্ত, আবার আমি নিরাকার। এই জগতে র সব কিছুই আমার আকার , কারণ আমি ছাড়া দ্বিতীয় কিছুরই অস্তিত্ব নেই। আবার আমি নিরাকার বটে কারণ ঐ আকার যুক্ত সব কিছুই প্রকৃত আমি নই।
আমি আসলে বিশুদ্ধ শক্তি (Energy)। নিরাকার রূপে আমি নিস্ক্রিয়।তাই সৃষ্টি র প্রয়োজনে আমি আকার যুক্ত হয়ে সক্রিয় হই।
হে নতুন পৃথিবীর রূপকার, তোমরা যাও তোমাদের লালিত বিশ্বে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দাও। বিভেদের শিক্ষা র বদলে এক হয়ে থাকার জ্ঞান সকল কে প্রদান কর।”

আস্তে আস্তে গোলকটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র স্থল থেকে দূরে যেতে লাগলো  ।অতি দ্রুত কৃষ্ণ গহ্বরের বাইরে চলে এলো তারা। তারপর দ্রুত বেগে এগিয়ে চললো তাদের পরিচিত জগতে র উদ্দেশ্যে। যেখানে অপেক্ষা করে আছে তাদের পৃথিবী, নতুন অঙ্কুরোদগমের জন্য।(শেষ)

1 comment: