Crss colum

Friday, March 31, 2017

স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা

সুমন ছুটির দিনে একটু বেলা করে উঠতে ভালোবাসে .কিন্তু আজ সকাল সকাল উঠতে হল .সকাল বেলায় মা ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বললো ‘বাবু ,তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে চা খেয়ে ফুলের দোকান থেকে ফুল এনে দে .’ আজ লক্ষ্মী পূজো .সকালে না গেলে ফুল  নাও পেতে  পারে .তাই তাড়াতাড়ি উঠতে হলো .কিন্তু রেডি হয়ে  যেতে বেশ দেরি হয়ে গেলো . ফুলের দোকান পাড়ার শেষ মাথায় . গিয়ে দেখলো বেশ ভিড় .সকলের বাড়ীতেই আজ পুজো .সুমন ক্রমশ ভিড় ঠেলে একেবারে দোকানের সামনে চলে এলো .দোকানি সুমনের  ফুল মালা একটা পলিথিনে রাখছে ঠিক তখন একটা সুরেলা গলা সুমনের পাশ থেকে বলে উঠল ‘আমাকে একটা রজনী গন্ধার মালা দেবেন .সাথে দুটো গাঁদার মালা দেবেন .’ সুমন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো একটি বছর কুড়ি বয়সী মেয়ে .ফর্সা ,রোগা ,কিন্তু মুখশ্রী অপূর্ব .মেয়েটি সুমনের দিকে তাকাতে সুমন চোখ নামিয়ে নিল .কোনো অজানা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়.তারপর সারাদিনের ব্যাস্ততার মাঝে  মেয়েটির কথা আর মনে এলো না .রাত্রে শুয়ে পড়লেই সাথে সাথে ঘুম আসে না .এটা ওটা চিন্তার মধ্যে হঠাত্ মেয়েটির কথা মনে এলো .কে মেয়েটি ? বেশ সুন্দর দেখতে .আগে কখনো এই পাড়ায় দেখেনি সুমন .মনে হয় নতুন এসেছে . এইসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম এসে গেলো .সকালে উঠে অফিস যাবার তাড়াহুড়োয় সুমনের কিছুই মনে রইলো না . সুমন পড়াশোনায় বরাবর খুব ভালো ছেলে বলেই পরিচিত. ক্লাসে কখনো সেকেণ্ড হয় নি .এম এসসি পাশ করার পর মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই  বোস ইন্সটিউটে জুনিয়ার রিসার্চারের পদে যোগ দিয়েছে. ছোটোবেলা থেকেই ক্রিকেটের ভক্ত .নিজেও ভালো ক্রিকেট খেলে .লম্বায় প্রায় ছ ফুট হওয়ায়  ফাস্ট বোলিং করে.এখনো ছুটির দিনে মাঠে নেমে পড়ে .  কয়েকদিনের মধ্যে কালীপূজো চলে এলো .সুমনদের পাড়ায় একটাই কালী পূজো হয় .কালী পূজো উপলক্ষে প্রতি বছর বিচিত্রানুষ্ঠান হয়.বাইরের ভাড়া করা শিল্পী দের সাথে পাড়ার প্রতিভাবান দের সুযোগ দেওয়া হয় .ঐ দিন খুব হৈ চৈ হয় .সুমন এই দিনটা কখনো মিস করে না .এ বছর ভাই ফোঁটার দিন বিচিত্রানুষ্ঠান হবে .সকালে বোন সুমতি ফোঁটা দেবার বললো ‘দাদা ,আজ সন্ধ্যাবেলায় ফাংশান .আমাকে নিয়ে যাবি কিন্তু .’আজ অফিস ছুটি .সন্ধ্যা হতে দু ভাইবোনে সেজে পূজো তলায় গেলো.যেতেই ক্লাবের ছেলেরা ওদের সামনের সারির চেয়ারে বসালো .সুমন এই পাড়ার গর্ব .তাছাড়া ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলেছে দীর্ঘকাল. অনুষ্ঠান শুরু হলো .প্রথমে উদ্বোধনী সঙ্গীত .তারপর এটা ওটার পর ঘোষক বললো এবার রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনাবেন শ্রেয়সী মিত্র. যে মেয়েটি মঞ্চে উঠল তাকে দেখে সুমন চমকে গেলো .সেই মেয়েটি.সবাইকে প্রণাম জানিয়ে  গান শুরু করলো . “‘বধু কোন আলো লাগলো চোখে .”অপূর্ব সুরেলা গলা .সুমতি বললো ‘দাদা এইটি আমার প্রিয় বান্ধবী .’ বাড়ী আসার পর সারাক্ষণ একটা সুরেলা স্মৃতি কানে অনুরণন হয়ে চললো .এক অদ্ভুত ভালোলাগা .কয়েকদিন পরের কথা,বাবা সকালে মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরে সুমনের উদ্দেশ্যে বললো ‘খোকা  ,আজ মিত্র বাবু বলছিলেন ওনার মেয়ে বি এসসি সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ে .পড়াশোনায় খুব ভাল.এই নতুন জায়গায় এসে  ভাল টিউশন  মাস্টার পাচ্ছে না .তুই তো একটু দেখিয়ে দিলে পারিস .’  সুমন বললো ‘আমার সময় কোথায় ? সেই সন্ধ্যা সাতটায় বাড়ী ফিরি .’ বাবা বললো ‘রাত আটটা থেকে নটা ,একঘন্টা দেখিয়ে দিতে পারিস .আর রবিবার যখন হোক একঘন্টা দেখিয়ে দিবি .তাছাড়া সুমতিও এবারে অঙ্কের অসুবিধে বলছিলো .মিত্র বাবুর মেয়ে আর সুমতি  দুজনে খুব বন্ধু হয় .দুজনে একসঙ্গে তোর কাছে অঙ্কটা দেখে নিতে পারবে .’  বাবার কথা সুমন ফেলতে পারলো না .তাই মত দিতেই হলো .রবিবার সকালে মিত্র বাবুর মেয়ে শ্রেয়সী পড়তে এলো .সুমতি তো খুব খুশি.এতদিন বন্ধুর কাছে নিজের দাদার পড়াশুনার খ্যাতি করেছে .সুমন পড়ার ঘরে দুজনকে পড়াতে বসলো .কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলো মেয়েটি পড়াশোনায় খুব ভালো .আর খুব লাজুক .কয়েক সপ্তাহ পড়াবার পর সুমন মেয়েটির প্রতি একটু দুর্বলতা অনুভব করলো.কিন্তু সুমতি থাকে বলে কিছু বলতে পারছিলো না .একদিন সুমতি জ্বর হওয়ায় পড়তে বসলো না . সেদিন শ্রেয়সী একাই পড়তে বসেছিল .সুমন পড়াতে পড়াতে মনের কথা প্রকাশ করতে না পেরে শেষে শ্রেয়সীর গান তারপর সেই সূত্রে রবীন্দ্রনাথের জীবনে প্রেমের প্রকাশ নিয়ে কথা শুরু করে দিলো .শ্রেয়সী চুপচাপ সুমনের কথা শুনছিলো .সুমন আচমকা শ্রেয়সীকে প্রশ্ন করলো ,তার জীবনে কখনো প্রেম এসেছে কিনা . শ্রেয়সী এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ,সুমনের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো ‘আমার বাবা খুবই কড়া প্রকৃতির মানুষ .আমার এক পিসি প্রেম করে বিয়ে করেছিলো .পিসেমশাই মারা গেছে .তবুও বাবা আজ পর্যন্ত পিসির সাথে সম্পর্ক রাখেন নি .আমাদের বাড়ী প্রেমের প্রবেশ নিষেধ .’ সুমন তার জবাব পেয়ে গেলো .

কিছুদিন হলো মা সুমনকে বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছিলো .সুমন এতদিন গা করেনি .শ্রেয়সীর কাছ থেকে পরোক্ষ ভাবে না শোনার পর একদিন মাকে বলেই দিলো তার বিয়ের ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই .শ্রেয়সী এখনো পড়তে আসে .সুমন নিরাসক্তভাবে পড়ায়. কয়েকদিন পর মা একটা ছবি দিয়ে গেলো সুমনের ঘরে .ছবির মেয়েটি বেশ সুন্দর ,শিক্ষিত .সুমন রাজী হয়ে গেলো  .দেখা শোনা কমপ্লিট হয়ে গেলো . কেবলমাত্র বিয়ের দিনটা ঠিক হতে বাকী .আচমকাএকদিন সকালে বাবার কাছে একটি ফোন এলো  .বাবা ফোনের কথাগুলো শুনে ‘ঠিক আছে ‘  বলে ফোন রেখে দিলো .মা বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলো .বাবা বললো ওরা বিয়ে দেবে না .কোনো এক জ্যোতিষি নাকি বলেছে এই বিয়ে সুখের হবে না .  কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর আবার দেখাশোনা চলতে লাগলো .এক জায়গায় আবার কথাবার্তা ফিক্সড হলো .কিন্তু এবারেও তারা তুচ্ছ বাহানা করে  বিয়ে কেটে দিলো . এবার বাবা মা দুজনেই চিন্তা করতে লাগলো .প্রতিবার সুমনের বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে কেন ?এবারে সুমনের অফিসের অজিতদা  ওনার একটি আত্মীয়ের মেয়ের জন্য সম্বন্ধ আনলেন .কথাবার্তা ,দেখাশোনা ফাইনাল হয়ে গেলো .কিন্তু আগের দুবারের মতো এবারেও শেষ মুহূর্তে সামান্য ছুঁতোনাতা দেখিয়ে বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো .আসল খবরটা কয়েকদিন বাদে অজিতদা দিলো .একটি ফোন এসেছিল মেয়েটির বাড়ী .একজন মেয়ে ফোন করে পরিস্কার জানিয়েছে সুমনের সাথে তার অনেকদিনের প্রেমের সম্পর্ক . অজিতদাকে অনুরোধ করতে  ফোন নম্বরটা এনে দিলো . সুমনের এক বন্ধু শচীন কোলকাতা পুলিশে ডি এস পি .সুমন তার কাছে গিয়ে সব জানিয়ে সাহায্য চাইলো . শচীন পরের দিন ফোন করে বললো  ‘নম্বরটা ট্রেস করেছি .বালিগঞ্জে বাড়ী .কাল রবিবার সকালে চল .খোঁজ খবর নিয়ে আসি .’ পরের দিন   সকালে দুজনে যেতে যেতে কথাবার্তা হলো .শচীন বললো ‘ ফোনটি মনোরমা বসুর নামে. উনি বিধবা .বিশাল বাড়ীতে একাই থাকেন .একটি ছেলে আমেরিকায় চাকরি করে .  ওনার ফোন থেকে তোর বিয়ের ভাংচি যাবে এটা অবাক লাগছে .’ কিছুক্ষণের মধ্যে মনোরমা দেবীর বাড়ী চলে এলো .বাড়ীর চাকর ওদের দুজনকে বসার ঘরে নিয়ে গিয়ে বললো ‘আপনারা বসুন .মামণি পূজোয় বসেছেন .এখনই আসবেন .’ ওরা দুজনে বসে রইলো .ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো . বিভিন্ন ছবি দিয়ে সাজানো .সব পারিবারিক ছবি .হঠাত্ একটা ছবির দিকে সুমনের নজরে এলো .সুমন ছবিটার কাছে গিয়ে একমনে দেখতে লাগলো .কিছুক্ষণ দেখার পর সুমনের মুখে হাসি ফুটলো .পুরো ব্যাপারটা সে বুঝতে পেরেছে .শুধু কয়েকটা জায়গা ক্লিয়ার হওয়া দরকার .মনোরমাদেবী আসলে দুজনেই নমস্কার জানালো.শচীন  নিজের পরিচয় দিয়ে জানালো সে একটা জালিয়াত চক্রের তদন্ত করছে .তারা বিভিন্ন মানুষের ফোন নম্বর হ্যাক করে ফোন করছে .সম্ভবত তারা মনোরমা দেবীর ফোন হ্যাক করেছে .তাই তাদের ধরার জন্য মনোরমা দেবীর সাহায্য চাই . মনোরমা দেবী বললেন ‘কি সাহায্য করতে পারি বলুন  ?’ শচীন মনোরমা দেবীকে ইন্টারোগেশন করতে লাগলো  .হঠাত্ সুমন মনোরমা দেবীকে প্রশ্ন করলো  ‘ আচ্ছা ,নিউ টাউনে কি আপনার কোনো আত্মীয় থাকেন ?’ মনোরমা দেবী উত্তর দিলেন ‘আমার দাদা কুণাল মিত্র থাকেন . আমি ভালোবেসে বিয়ে করায় দাদা আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন নি .তবে ভাইঝি মাঝে মাঝে আসে .’ সুমন প্রশ্ন করলো আপনার ভাইঝির নাম কি শ্রেয়সী  ? সে কি আপনার ফোন ব্যবহার করে .মনোরমা দেবী চমকে গিয়ে উত্তর দিলেন ‘ হ্যাঁ ,আপনি জানলেন কি করে ?সে মাঝেমাঝে এসে আমার সাথে সময় কাটিয়ে যায় .তখন হয়তো ফোন করে থাকবে .’ আরো কিছুক্ষণ টুকটাক কথাবার্তার পর দুজনে চলে এলো .সুমন শচীন কে বললো ‘তোকে অনেক ধন্যবাদ .আমি সব বুঝতে পেরেছি .আর এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে না .’ ……

তার কয়েক দিন পরে সুমন মাকে জানিয়ে দিলো সুমতি পাশ করার আগে সে বিয়ে করবে না .সুমতি ,শ্রেয়সী দুজনেই খুব ভালোভাবে একদিন পাশ করলো .আরো কিছুদিন বাদে সুমনের বাড়ী থেকে সুমনের বাবা কুণাল বাবুর কাছে শ্রয়সী র সাথে সুমনের বিয়ের প্রস্তাব দিলো .কুণালবাবু রাজী হলেন .একদিন  ধুমধাম করে দুজনের বিয়ে হয়ে গেলো .বিয়েতে শচীন এসে ছিলো .সুমন শ্রেয়সীকে দেখিয়ে শচীনকে চুপি চুপি বললো ‘ এই হলো তোর ফোন কান্ডের আসামী .’ মধুচন্দ্রিমায় সুমন তাদের তদন্তের কাহিনী শ্রেয়সীকে বললো .শ্রেয়সী চুপ করে শুনলো .সুমন বললো একটাই  খটকা আছে ‘ তুমি জানতে কি করে কোথায় আমার দেখাশোনা হচ্ছে ? আর ফোন নম্বর জানতে কি করে ?’ শ্রেয়সী লাজুক মুখে উত্তর দিলো ‘সুমতি সব জানিয়ে দিতো .’ সুমন ফের প্রশ্ন করলো ‘আমি যখন প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ছিলাম  তখন না করে দিয়েছিলে কেন ?’ শ্রেয়সী জবাব দিলো ‘আমি তো আগেই বলেছি আমার বাবা খুব কড়া .আমাদের বাড়ী প্রেম নিষিদ্ধ . এছাড়া আমার কিছু করার ছিলো না .’ সুমন  খোলা জানালা দিয়ে দূর আকাশে চাঁদের দিকে তাকাল .তারপর শ্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে  ভাবলো ‘ ঐ চাঁদ যেন আজ তার ঘরে চলে এসেছে.’ (শেষ).

Monday, March 27, 2017

আটলানটিসের পাথর (তৃতীয় পর্ব)

[প্রিয়ব্রতর চিঠি থেকে সুমন আটলানটিসের আশ্চর্য্য আংটির কথা জানতে পারে .প্রিয়ব্রতর করা পুঁথির অনুবাদ থেকে জানতে পারে আলেকজান্ডারের রাজ বৈদ্য মেসিডান বহু কষ্টে মানস সরোবরের নিচে অবস্থিত নব আটলানটিসের প্রবেশ দ্বারে পৌঁছায় .ক্ষুধা তৃষ্ণায়  জ্ঞান হারাবার আগে শুনতে পায় পাথরের দেওয়াল সরে যাবার ঘর ঘর শব্দ .তারপর .….]
চোখ খোলার পর আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে গেলো.আবার চোখ বুজিয়ে ফেললাম .কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে তাকালাম .মনে হলো এক বিশাল ঘরের মধ্যে  শুয়ে আছি . ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক কাজ করা শুরু করলো .মনে পড়লো ,‘আমি মেনডিস .’
আস্তে আস্তে উঠে বসলাম .একটা ছোট্ট ঘরের মধ্যে আমি শুয়ে আছি .মাথার উপর একটা আলোর চাকতি .খুবই অবাক হয়ে গেলাম .আমি আমার প্রভু আলেকজান্ডারের সাথে এই সুদীর্ঘ কাল ব্যাপি অভিযানের সময় আশ্চর্য্য বস্তু দেখেছি কিন্তু এমন অদ্ভুত আলো বিতরণ কারী চাকতি কখনোই দেখিনি .দিনে সূর্যের আলো .রাতে মশাল বা প্রদীপের আলো .এছাড়াও এমন অদ্ভুত আলো বিতরণ কারী কোনো অদ্ভুত চাকতি থাকতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না . এইসব ভাবছি হঠাত দরজা খুলে এক জন লোক ঘরের মধ্যে আমার কাছে এলো .গায়ে অদ্ভুত পোশাক . এসে আমার কাছে অজানা ভাষায় কিছু প্রশ্ন করলো .আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না . ভাবলাম আমার নাম জিজ্ঞাসা করছে .আমি বললাম‘ আমি মেনডিস .’
লোকটি এবারে হেসে আমার নিজের ভাষায়  বললো ‘নব আটলানটিসে তোমায় স্বাগত ,বন্ধু .’আমি অবাক হয়ে বললাম ‘আপনি আমার ভাষায় কথা বলছেন কিভাবে ?’লোকটি উত্তর দিলো ‘ সভ্য জগত কে ভাষা আমরাই শিখিয়েছি .তাদের ভাষা ,উন্নতি ,প্রগতি  সব কিছুর খবরই আমরা রাখি . আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি দক্ষিণের আর্য ভূমি হতে এসেছো . তাই সংস্কৃত ভাষায় প্রশ্ন করেছিলাম .কিন্তু তোমার মুখে গ্রীক ভাষা শুনে বুঝেছি তুমি আমাদের আদি ভূমির কাছাকাছি অঞ্চলের মানুষ .  তুমি এতদুরে আমাদের প্রবেশ দ্বারের কাছে কিভাবে এলে ?’
আমি  তখন বললাম‘ আমি সুদূর আথেন্সে বড় হয়েছি .চিকিত্সা বিদ্যায় পারদর্শীতার কারণে মহান সম্রাটের রাজকীয় বাহিনীর ও সম্রাটের ব্যাক্তিগত চিকিত্সক হিসাবে স্থান পেয়েছি .পূর্বেই পড়াশোনার সময়ে মহান প্লেটোর লেখনী পড়ে আটলানটিসের বিষয়ে জানতে পারি .কৌতূহল একটা ছিলোই .একদিন এক  বৃদ্ধের মুখে এই নব আটলানটিসের কথা শুনি .সচক্ষে দেখার আশায় বেরিয়ে পড়ি. ’ লোকটি এবারে হেসে বললো  'আমি এখানকার শাসক .আমায় সবাই ইন্দ্র বলে .তুমি আমাদের এখানে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে  প্রবেশ করোনি .তাই এই নব আটলানটিসের সব রহস্য তোমার জন্য উন্মুক্ত করবো . কিন্তু তোমায় কথা দিতে হবে তোমার নিজের জগতে ফিরে যাবার পর এই নব আটলানটিসের কথা কোথাও প্রকাশ করা চলবে না . এরপর ইন্দ্র আমায় নিয়ে  প্রথমে একটি মিনারে উঠলো .মিনারের সর্ব্বোচ্চ প্রান্তে উঠে আমায় বললো 'এখান হতে তুমি  সম্পূর্ণ নব আটলানটিস শহর কে দেখতে পাবে .দেখলাম মাটির বহু নিচে দিগন্ত ব্যাপি এক শহর চারদিকে কৃত্রিম আলোয় উদ্ভাসিত.চারদিকে বড় বড় প্রাসাদ.আমি দেখলাম তাদের ইতিহাসের ঘর .সেখানে নাকি তাদের সব কিছু সংরক্ষিত আছে .আরো অনেক কিছু বললো ,অনেক কিছু দেখালো .আমি আমার সীমিত বুদ্ধির দ্বারা সব বুঝলাম না .ইন্দ্র বললো ‘সৃষ্টির আদিতে মানুষ যখন আগুনের ব্যবহার শেখে নি .তখন আমরা অতি উন্নত সভ্যতার সৃষ্টি করেছি. আজ আমাদের শেখানো পদ্ধতিতে মানুষ কৃষিকাজ থেকে  নির্মাণ সব কিছু শিখেছে .' এরপর ইন্দ্র আমায় নিয়ে গেলো তাদের শক্তি ঘরে .দেখলাম বিশাল ঘর নীলাভ আলোয় ভরে আছে . ঘরের মধ্যবর্তী জায়গায় একটি মানুষ সমান স্বচ্ছ বেদীর উপর  উপর একটি  নীল পাথর রাখা আছে .  সেই পাথর থেকে ই এই নীল আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে .  ইন্দ্র বললো' আমাদের আদি ভূমি আটলানটিস যখন সমুদ্রের জলোচ্ছাসে ধ্বংস হয় , তখন আমাদের সব কিছুই নষ্ট হয়ে যায় .  সামান্য কিছুজন এই ভয়ংকর ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পায় .সাথে নিয়ে আসে আমাদের সব  জ্ঞানের আকর এই পাথর .বহু দিনের চেষ্টায় আমাদের জ্ঞানীরা এই  পাথরের মধ্যে সব কিছু সংরক্ষণ করে রেখেছেন .এই পাথর স্বয়ং সম্পূর্ণ .এই পাথর এই বিশ্বের সব জীবিত প্রাণীকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে .এই পাথর অশুভ শক্তির হাতে গেলে সম্পূর্ণ বিশ্বের বিপদ হবে.যিনি এই পাথর পাবেন সব প্রাণী তার দাস হয়ে যাবে .আমরা তাই এই পাথর এই বেদীর উপরে রেখেছি .যে কোন সৃষ্টি বা জীবন ধারণের  প্রয়োজনীয় উপকরণ বা কোনো বিপদ ,সর্বক্ষেত্রেই পাথর আমাদের মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান উতপত্তি করে . '  আমি দেখলাম মাটির নীচে কৃষিকাজ .তাদের অস্ত্র ভাণ্ডার দেখলাম .তারা বললো এই অস্ত্রের সাহায্যে সব কিছু তারা ধ্বংস করে দিতে পারে .
বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর  একদিন তারা আমায় এক দ্রুতগামী উড়ন্ত রথে করে লোকালয়ের কাছে পৌঁছে দেয় .আমি তাদের কথা দিই যে তাদের কথা কাউকে জানাবো না . আজ যখন মৃত্যু আমার শিয়রে তখন মনে হচ্ছে আমার জীবনের গুপ্ত কথা লিখে রেখে যাওয়া উচিত .যাতে ভবিষ্যতের মানুষ তাদের উপযুক্ত হলে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে .”
মেনডিসের পুঁথি এখানেই শেষ .পড়া শেষ হলে সুমন অর্জুনের দিকে তাকালো .তারপর অয়নবাবুর দিকে প্রশ্ন করলো ‘কাকাবাবু  ,সবই তো শুনলেন এখন আমাদের কি করা উচিত .’ অয়নবাবু বললেন‘তোমার বাবা প্রিয়ব্রত আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন .তার স্বভাব ছিলো কোনো কাজে হাত দিলে তা সম্পূর্ণ করা .এখন ছেলে হয়ে তোমার উচিত বাবার অসম্পূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণ করা . তবে এই ব্যাপারে আমার বয়স হয়েছে তাই আমি সাহায্য করতে পারবো না .তবে অর্জুন তোমায় সব রকম সাহায্য করবে .আমি চাই তোমরা দুজনে যত তাড়াতাড়ি পার এই নব আটলানটিস অভিযানে বেরিয়ে পড় .
'
এরপর কয়েকদিন দুই বন্ধু এই অভিযানে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিলো .মানস কৈলাস চীন দেশে .সেখানে যেতে গেলে পাসপোর্ট ভিসা ইত্যাদি চাই .সবচেয়ে সহজ যাওয়ার রাস্তা কোলকাতা থেকে কাঠমান্ডু  প্লেনে .সেখান থেকে  পুনরায় প্লেনে গংগার এয়ার পোর্ট তারপরে জীপে করে লাসা .লাসায় একদিন থাকার পর বিভিন্ন আশেপাশের দর্শনীয় জায়গা যেমন পোতালা প্রাসাদ ইত্যাদি আরো কিছু গুম্ফা ও মঠ  দেখে জীপে করে মানস সরোবর .ওখানে পুজো দেওয়ার পর  যমদ্বার পর্যন্ত জীপে .তারপর শুরু হাঁটা পথে কৈলাস পরিক্রমা .
সুমন ও অর্জুন ঠিক করলো এই পথেই যাবে .যখন হাঁটা পথে কৈলাস পরিক্রমা শুরু হবে ওরা দুজনে তখন কোনোভাবে মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে নব আটলানটিসের প্রবেশ দ্বার খোঁজ করবে .
<এরপর চতুর্থ পর্বে যাত্রা শুরু ..>


Sunday, March 26, 2017

আটলানটিসের পাথর (দ্বিতীয় পর্ব)

আটলানটিসের আংটি -( দ্বিতীয় পর্ব )
( প্রিয়ব্রতর চিঠি থেকে সুমন আটলানটিসের পাথরের কথা জানতে পারে .আশ্চর্য্য শক্তি এই পাথরের .আটলানটিসের সব জ্ঞান এই পাথরের মধ্যেই লুকিয়ে রাখা আছে .এই পাথরের র যাবতীয় রহস্য একটি পুঁথির মধ্যে গ্রীক ভাষায় লেখা আছে .সেই পুঁথিটির বঙ্গানুবাদ প্রফেসার বাগচীর ভয়ে প্রিয়ব্রত ব্যাঙ্কের লকারে রেখে দেয় . তারপর …..)

পুঁথির অনুবাদ  ---
অবিলম্বে সুমন  ও অর্জুন ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সমেত দেখা করে . ম্যানেজার খুবই ভালো লোক . প্রিয়ব্রত বাবুর দূর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর শুনে খুবই দুঃখ প্রকাশ করলেন.তারপর সুমনের  কাছ  থেকে সব ওয়ারিশন সংক্রান্ত কাগজ পত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র  নিয়ে  চেক করে  সব কিছু সুমনের নামে করার প্রতিশ্রুতি দিলেন .
কয়েকদিন পরের কথা . লকার থেকে মোটা খামে মোড়া পুঁথিটির অনুবাদ আনা হয়েছে .ইতিমধ্যে এক অচেনা ব্যাক্তি সুমনকে ফোনে অনুবাদ টি তাকে দিয়ে দেবার জন্য হুমকি দেয় . সুমন এই উড়ো হুমকিকে গ্রাহ্যই করেনি .গত পরশু রাতে কেউ একজন বাইরের পাঁচিল টপকে গ্রীল ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে .কিন্তু বাড়ীর কাজের লোক অভিরাম সতর্ক থাকায় ও হাঁকডাক করায় পালিয়ে যায় . আজ অয়নবাবু ও অর্জুনের উপস্থিতিতে পুঁথিটি পড়া হবে . অনুবাদটা দিন দুয়েক আগে নিয়ে এলেও সুমন ওটা পড়েনি .আজ সন্ধ্যায় অয়নবাবু ও তার ছেলে  অর্জুন  এলে সুমন গোদরেজ আলমারী থেকে  পুঁথিটির অনুবাদ বার করে নিয়ে এলো .  তারপরে তিনজনে পড়ার ঘরে গিয়ে একটি গোল টেবিলের চারদিকে বসে পড়া শুরু করলো .
" আমি  মেনডিস  , সুদূর মেসিডোনিয়া  থেকে মহামতি আলেকজান্ডারের সাথে  রাজবৈদ্য  হিসাবে এই দেশে আগমন করি .ইহা শুধুই যে কর্মের কারণে তা নয় .তাহার চেয়ে অধিক   জ্ঞান লাভের এবং দেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে .  এই দেশে আসার পর আমি যে   আশ্চর্য্য অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি তা আজ আমি বিবৃত করবো . মৃত্যু আমার শিয়রে . আমি নিজে চিকিৎসক .আমি নিশ্চিত জানি যে ব্যাধিতে আমি আক্রান্ত তার একমাত্র পরিত্রাণের পথ মৃত্যু .মৃত্যুর পদধ্বনি আমি শুনতে পাচ্ছি .তাই এই আশ্চর্য্য অভিজ্ঞতার বিবরণ আমি লিখে রেখে যাচ্ছি .
আমি শিক্ষা লাভ করেছি এথেন্সে .আহা ! আমার সুন্দরী এথেন্স .অসাধারণ গুণী জনের সাহচর্যে আমার শিক্ষা বিকশিত হচ্ছে ,এমন সময় আমার হাতে আসে মহান প্লেটোর একটি বিবরণী .যাতে তিনি এক প্রাচীন সভ্যতা আটলানটিসের কথা লিখেছেন. পরে বীর আলেকজান্ডারের সাথে সিন্ধু নদের উপকণ্ঠে হাজির হলে এখানের এক  জ্ঞানী বৃদ্ধের সাথে আমার পরিচয় হয় .তার কাছে দ্বিতীয়বার আটলানটিসের নাম শুনে আমি চমকে উঠি .সেই বৃদ্ধ আমায় বলেন এখান হতে আরো উত্তরে সিন্ধুর উৎপত্তি স্থানে রয়েছে এক মহান সরোবর  .যার নাম এদেশে মানস সরোবর .সেই মানস সরোবরের পাশেই রয়েছে  অনুপম সূউচ্চ পবিত্র দেবতার বাসভূমি  এক পর্বত .নাম কৈলাস .এই মানস সরোবরের নিম্নদেশে রয়েছে ভূপৃষ্ঠের নিচে এক লুক্কায়িত সভ্যতা .নাম নব আটলানটিস . কৈলাস পর্বত হতে এক জলধারা এসে পড়েছে মানস সরোবরে .ঐ জলধারা ধরে পর্বতের উপরে উঠতে থাকলে এক গুহা মুখের সামনে উপস্থিত হবো .ঐ গুহাই হলো সেই ভূগর্ভ স্থিত সভ্যতার প্রবেশ দুয়ার . আমি মেসিডোনিয়ার অভিজাত বংশের সন্তান . অজানা কে জানার নেশা আমার রক্তে .এই নব আটলানটিসের কথা শুনে তাকে সচক্ষে দেখার নেশায় একদিন বেরিয়ে পড়লাম দুর্গমের পথে .বহু বাধা অতিক্রম করে একদিন হাজির হলাম মানস সরোবরের তীরে .খুঁজে পেলাম সেই গুহামুখ .বিশাল কৈলাস পর্বতের গা বেয়ে নেমে গেছে এক শীর্ণ জলধারা . জলধারা অনুসরণ করে কিছুটা উচ্চতা উঠতেই চোখে পড়লো এক বিশাল পাথরের আড়ালে এক গুহামুখ . পাথর টা থাকায় নিচে থেকে এই গুহাটি কোনো ভাবেই দেখা যায় না . গোল গুহামুখটির উপরে গোল বৃত্তের মধ্যে ত্রিভুজ আঁকা আছে . এই রহস্যময় চিহ্ন দেখে বুঝলাম আমি নব আটলানটিসের প্রবেশ দ্বার হিসাবে যে  গুহাটি খুঁজ ছিলাম এটাই সেটি .সঙ্গে আনা খাবার দিন দুয়েক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো .সন্ধ্যার মুখে গুহামুখ টি খুঁজে পেয়েছিলাম .সেই রাত্রে আর গুহার ভিতর ঢোকার ঝুঁকি নিলাম না . রাত্রে ঝরণার জল খেয়ে শুয়ে পড়লাম .পরের দিন সূর্যের আলো ফোঁটার সাথে সাথে  গুহায় ঢোকার প্রস্তুতি নিলাম .প্রথমে আমার সাথে আনা ছোটো মশাল টি জ্বালিয়ে নিলাম .গুহার ভেতরে অন্ধকার . মশাল সাথে থাকলে দেখার সুবিধা হবে সেই সাথে যদি কোনো জীব জন্তু থাকে তারা আক্রমণের সাহস পাবে না . গুহামুখটি সংকীর্ণ হলেও কিছুটা যাবার পর গুহাটি বেশ চওড়া হয়ে গেছে . লক্ষ্য করলাম গুহার গায়ে অজানা ভাষায় লেখা .বুঝলাম আমি সঠিক জায়গায় এসেছি .এই ভাবে কতক্ষণ চলেছি জানি না .হয়তো বা অর্ধেক দিন  অথবা পুরো দিন .আসলে দুই দিনের ক্ষুধার্ত পেটে চলেছি তাই সময়  জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি .আর পারছিলাম না .গুহার ভিতর দিয়ে নিম্ন অভিমুখে হেঁটেই চলেছি .শেষে মনে হচ্ছিল যে কোনো মুহূর্তে  জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো .ঠিক তখনই একটা মোড় ঘুরেই দেখলাম পথ শেষ .এক বিশাল পাথরের দেওয়াল সামনের পথ জুড়ে .মশালটাও দপ দপ করছে .যে কোনো মুহূর্তে মনে হয় নিভে যাবে .মশালের ক্ষীণ হয়ে আসা আলোয় দেখলাম দেওয়ালের মাঝখানে একটা গর্তের আভাস .বিদ্যুতের চমকের মতো  মনে হলো ওখানে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করার কথা .মনে হওয়া মাত্র ভূমি থেকে একটি পাথর তুলে নিয়ে গায়ের সবচেয়ে জোর প্রয়োগ করে ঐ দেওয়ালের গর্তে আঘাত করলাম .ক্ষুধার্ত শরীরে অতখানি শক্তি খরচ হলে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না .মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম .সেই মুহূর্তে মশালটাও দপ করে উঠে নিভে গেলো .   জ্ঞান  হারিয়ে ফেলার মুহূর্তে শুনতে পেলাম পাথরের দেওয়াল সরে যাবার ঘর ঘর শব্দ.  [ এরপর তৃতীয় পর্বে আটলানটিসের মধ্যে .…]
(দ্বিতীয় পর্ব  সমাপ্ত)


Thursday, March 23, 2017

আটলানটিসের পাথর

প্রিয়ব্রত র চিঠি -
প্রিয় সুমন  ,
আশা করি তুমি কুশলে আছো . তুমি যখন এই চিঠি পড়ছো  তখন  আমি আর ইহ জগতে নেই .আজ তোমায় এক অতি গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ কথা জানাবো .
তুমি কি কখনো আটলানটিসের কথা শুনেছো . গ্রীক দার্শনিক প্লেটো লেখা থেকে আধুনিক মানুষ প্রথম আটলানটিসের কথা জানতে পারে . তিনি এই বিষয়ে মিশরের  মন্দিরের পুরোহিতদের কাছ থেকে জানতে পারেন .আজ যেখানে আটলানটিক মহাসাগর সেখানেই ছিলো দ্বীপ রাষ্ট্র আটলানটিস .সেই সময় যখন সমগ্র পৃথিবী অন্ধকার যুগে পড়ে আছে তখন এরা পরমাণু শক্তির ব্যবহার জানতো . শিক্ষা ,বিজ্ঞান ,প্রযুক্তি ,কলা সবেতেই এরা ছিলো উন্নত .এক বিশাল জলোচ্ছাসে এই দ্বীপ রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যায় .এমন জনশ্রুতি আছে এই আটলানটিস ধ্বংস হয়ে যাবার সময় সেখানকার কিছু মানুষ  মূল ভূখন্ডে পালিয়ে আসে .সাথে নিয়ে আসে অমূল্য  জ্ঞান সম্পদ . সেই  জ্ঞান তারা একটি পাথরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে .অবাক হয়ে যাচ্ছ ? ছোটো মাইক্রো চিপের ভেতর বহু ছবি গান  সিনেমা  লুকিয়ে রাখা যায় . সেই  রকম ঐ ছোটো পাথরের ভেতর তাদের ইতিহাস ,বিজ্ঞান ,কলা বিদ্যা ইত্যাদি সব কিছুই লুকানো আছে . কোয়ার্টজ পাথরে তৈরী পাথর . আমি কিভাবে এই পাথরেরর কথা জানতে পারলাম সেটা তোমায় বলি .

আমি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কে নিয়ে গবেষণা করছিলাম .গবেষণার সূত্রে ঘুরতে  ঘুরতে আলাপ হয় প্রফেসার বাগচী র সাথে . তিনি আমায় এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন .তিনি বলেন কাশীর এক মন্দিরে তিনি এক আশ্চর্য্য পুঁথি দেখেছেন .সেটি এক অজানা ভাষায় লেখা .আমি কৌতূহল বোধ করলে তিনি আমায় সেই মন্দিরে নিয়ে যান .সেখানে পুরোহিতের সাথে আলাপ করার পর  ,তিনি আমায় সেই অজানা ভাষায় লেখা পুঁথিটি দেখান . দেখলাম পুঁথিটি কোন ভারতীয় ভাষায় লেখা নয় .কিন্তু যে ভাষায় লেখা সেটি আমি চিনি .এটি প্রাচীন গ্রীক ভাষায় লেখা .কয়েকদিনের চেষ্টায় আমি সেই লেখার বঙ্গানুবাদ করি .তা থেকে প্রথম এই আশ্চর্য্য পাথরের কথা জানতে পারি . কিন্তু কোন ভাবে প্রফেসার বাগচি আংশিক অনুবাদ পড়ে ফেলে  .এটা আমারই গাফিলতির ফল .আমার আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো . যেটুকু পড়ে তাতে শুধু পাথরের বর্ণনা ও গুণাগুণ লেখা ছিলো .পুরো বঙ্গানুবাদ করার পর তিনি আমায় এই পাথরটি কোথায় পাওয়া যাবে তা জানার জন্য পীড়াপীড়ি করেন .কিন্তু আমি বলতে  রাজী না হওয়ায় প্রথমে টাকার লোভ দেখান .তাতে কাজ না হওয়ায়  প্রাণের ভয় দেখান . সেটা যে নিছক হুমকি নয় তা অচিরেই জানতে পারি . তখন আমি পুরো অনুবাদটি লুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই . পুঁথির অনুবাদ আমার ব্যাঙ্কের সেফটি লকারে রাখা আছে . ব্যাংকে আমার স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে আমার মৃত্যুর পর আমার ওয়ারিশন আমার পুত্র অর্থাত্ তুমি সব কিছুর মালিক হবে . আর এই চিঠিটি লিখে আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু অয়ন বাবুকে দিয়ে যাই তোমায় দেবার জন্য .এখন তুমি এই চিঠি ও অন্যান্য কাগজ পত্র নিয়ে ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করলে ঐ লকারটির মালিক হবে . তখন মূল অনুবাদটা পড়ে পাথরটি উদ্ধারের বিষয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিও .
ইতি
আশীর্বাদক বাবা প্রিয়ব্রত চৌধুরী .
সুমন চিঠিটি রেখে অর্জুনের দিকে তাকালো .তারপর মৃদু কনঠে বললো ‘ এখন কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় ?’
অয়নবাবু ছেলে অর্জুনের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বললো ,‘প্রথম কাজ লকার থেকে বঙ্গানুবাদটি সংগ্রহ করা .তারপর অবস্থা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে .’ অয়নবাবুর কথায় সুমন ও অর্জুন নীরব সম্মতি জানালো .
(প্রথম পর্ব সমাপ্ত.)


Wednesday, March 22, 2017

Bengali story

https://ashwadimba.wordpress.com/

Tuesday, March 21, 2017

সাহেব বাংলোর ভূত

'তখন ইংরেজ আমল.’এই টুকু বলে দাদু থামলেন .  বংশীকে ঈশারা করে জলের জগটা দেখালেন .    জলের জগটা আনতে তা থেকে ঢক্ ঢক্ করে খানিকটা জল খেলেন আমরা চার জন হাঁ করে দাদুর দিকে তাকিয়ে আছি .    আমি. রনি  ,নিশা ও সানি .আমরা সবাই মামাতো  পিসতুতো ভাইবোন .   সকলেই সম্পর্কে দাদুর নাতি নাতনি .    এছাড়া ঘরে আমাদের বাড়ীর পুরানো কাজের লোক বংশী রয়েছে .    কালী পূজা ও ভাই ফোঁটা উপলক্ষে বাড়ীতে এক উতসব চলছে.    আর আমরা সব ভাইবোন একজোট হয়েছি.    সন্ধ্যাবেলায় এটা ওটা দুষ্টুমি করতে করতে বোরিং হয়ে গিয়ে শেষে নিশাই বললো ‘কেউ ভূতের গল্প শোনালে হেব্বি হয়   .’   আমি তক্ষুণি রাজী হয়ে গেলাম.    রনি ও সানিও রাজি    .   কিন্তু মুশকিল হলো এই যে আমরা সবাই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া আধুনিক ছেলেমেয়ে.  .ভূতের গল্প আমরা কেউই জানি না .    তখন নিশাই যুক্তি দিলো চল দাদুর কাছে গিয়ে ভূতের গল্প শোনাতে বলি .    তখন সবাই দাদুর ঘরে হৈ হৈ করে গিয়ে উতপাত শুরু করলাম   .  .কিছুক্ষণের মধ্যেই দাদুর প্রাণ ওষ্ঠাগত করে ছাড়লাম .   শেষে দাদু বললেন ‘আচ্ছা তোদের ভূতের গল্প শোনাচ্ছি .   তবে এটি গল্প নয় সত্যি ঘটনা .  আমার বাবার জীবনে ঘটেছিল.’
দাদু জল খেয়ে পুনরায় শুরু করলেন .  দাদু বললেন ‘বাবা যেমন ভাবে আমায় বলেছিলেন ,সেই ভাবে বাবার মতো করেই কাহিনীটা বলছি.’
তখন ইংরেজ আমল.   আমি তখন সদ্য যুবক .    বি এ পাশ করার পর কাজ জুটল কোলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং এ.  কেরানী গিরির চাকরি .  প্রধানত টেবিলে বসে কলম পেষা আর  মাঝে মাঝে কাজের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো .    একদিন আমি কাজ করছি এমন সময় জোনাথন সাহেবের খাস বেয়ারা আবদুল এসে আমায় সেলাম দিলো .      আমি মুখ তুলে তাকালে সে বললো  'সাহেব আপনাকে বুলাইতেছেন .'
আমি টেবিল ছেড়ে উঠে সাহেবের কামরার সামনে গিয়ে টোকা মেরে বললাম ‘মে আই কাম  ইন.’    সাহেব উত্তর দিলো ‘কামিং  ,কামিং.’
আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে সাহেব বলে উঠলো ‘আরে বাবু টুমাকেই আমার দরকার.     একবার বিশেষ প্রয়োজনে টুমায় মেদিনীপুর যেতে হোবে.    দরকারে কয়েকদিন টুমায় ওখানে থাকতে হোতে পারে .’
সেই মতো পরের দিন সকালে বাক্স পেঁটরা গুছিয়ে রওনা দিলাম .    মেদিনীপুর  পৌঁছে ডিস্ট্রিক্ট মেজিষ্টেটের অফিসে হাজিরা দিলাম .      ওখানকার বড় বাবু বা হেড ক্লার্ক অবনীবাবু আমায় কাজ বুঝিয়ে দিলেন .    আমি বুঝতে পারলাম কাজ সম্পূর্ণ হতে দিন কুড়ি  লাগবে . অতএব অবনী বাবুকেই বললাম কয়েকদিনের জন্য একটা মাথা গোঁজার আস্তানা সংগ্রহ করে দিতে .   তখন মেদিনীপুর শহরে এত হোটেল ছিলো না .   দু একটি যাও বা ছিলো তাতে নেটিভ ইণ্ডিয়ান দের থাকবার অধিকার ছিলো না .  সাধারণ লোকে থাকবার প্রয়োজনে কারো বাড়ি ভাড়া নিতো .    তো অবনী বাবুকে আমি তেমনি একটি ভাড়া বাড়ী দেখে দিতে অনুরোধ করলাম .
অবনীবাবু বললেন ‘আজ রাতটা আপনি আমার বাড়ীতেই থাকুন .    কাল আপনাকে একটা বাড়ী দেখে দোবো.’সেই মতো আমি অবনী বাবুর বাড়ীতে গেলাম .   ওনার বাড়ীতে ওনার স্ত্রী ও কন্যা থাকে .   ওনার স্ত্রী আমার পরিচয় পেয়ে ভারি আদর যত্ন করলেন.ওনার কন্যা কিশোরী.বয়স ষোল বা সতেরো  হবে .ভারি সুন্দর ব্যবহার .অল্পক্ষণেই আমার সাথে আলাপ জমে গেলো. নাম জানলাম শোভনা  . যাই হোক সেই রাতটি খুবই ভালো ভাবে কেটে গেলো.    পরের দিন রবিবার.  অফিস ছুটি .   সকালে জলখাবার খেয়ে আমি আর অবনী বাবু  ভাড়া বাডি খুঁজতে বেরোলাম .    এদিক ওদিক ঘোরা ফেরার পর শহরের এক সাইডে চমতকার একটি বাড়ী পেলাম .   দুটি পরস্পর সংলগ্ন ঘর .   একটি ঘরের মধ্যে দিয়ে অপর ঘরে যেতে হয় .   সামনে একটু বারান্দা .সেখানে স্টোভে রান্না করা চলবে.    ভেতরের ঘরে একটি  তক্তপোষ .   একটা চেয়ার ও একটা টেবিল আছে .   ভেতরের ঘরের পিছন দিকে একটা বড় জানালা .   জানালা খুলে দিলে ফুরফুরে হাওয়া আসছে .  জানালা দিয়ে দেখলাম পিছনে একটা সাহেবী কেতার বাংলো টাইপের বাড়ী.   আমি যেদিকটা দেখতে পাচ্ছি সেটা বাড়ীর পিছনের দিক .   আমার ঘর ও সাহেব বাংলোর মধ্যে বেশ বড় বাগান .  বাগানে একটা বসার কাঠের তৈরী দুজনে বসার মতো বেন্চী .   গাছ থেকে একটা কাঠের দোলনা ঝুলছে .   বেশ বুঝতে পারলাম সাহেব খুবই সৌখিন স্বভাবের .   অবনী বাবুর কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম ওটা হগ সাহেবের বাংলো .    সাহেব একাই থাকে চাকর বাকর নিয়ে .   কয়েক বছর আগে স্ত্রী গত হয়েছেন . তারপর সাহেব আর বিয়ে করেননি .
যাইহোক সব দেখে শুনে ঘরটি আমার ভারী পছন্দ হলো .   দরদস্তুর করে বাড়ীর মালিকের সাথে ভাড়া ঠিক হলো ছয় টাকা .   চার টাকা অগ্রিম দিতে হবে .  বাড়ীর মালিক অবনী বাবুর আত্মীয় .   অবনী বাবু মধ্যস্থতা করলেন বলে এতো কমে হলো .  আমি ঠিক করেছিলাম দুবেলা স্টোভে  যা হোক কিছু রান্না করে নেবো .    কিন্তু   অবনী বাবুর স্ত্রী শুনলেন  না.   প্রায় জোর করলেন যাতে দুবেলাই তার ওখানে খাওয়া দাওয়া করি .    শেষে অনেক কষ্টে তাকে  প্রতিদিন দুপুরে খাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা পাই .  সেইমতো   সব কিছু গুছিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ  ভাড়া বাড়ীর দখল নিলাম .   আজ রাতের খাবার অবনী বাবুর স্ত্রী টিফিন বক্সে দিয়ে দিয়েছেন .  অবিলম্বে রাতের খাবার খেয়ে নিদ্রা দেবীর আরাধনা শুরু করে দিলাম .  মাঝ রাতের দিকে ঘুমটা একটু পাতলা হতে মনে হলো পিছনের বাগানে কোনো মহিলা যেন গান গাইছে .  ঘুমের ঝোঁক থাকায় উঠে দেখলাম না .  আবার ঘুমিয়ে পড়লাম .  পরদিন থেকে পুনরায় অফিস .দুপুরে   খেতে যেতাম অবনী বাবুর বাড়ীতে . এখনকার মতো তখন এতো কড়াকড়ি ছিলো না .খেয়েদেয়ে পুনরায় তিনটে নাগাদ অফিসে আসতাম .  দুপুরে অবনী বাবুর স্ত্রী খুবই আদর যত্ন করতেন .  তার পিছনে অবশ্য একটা গূঢ় উদ্দেশ্য ছিলো .ঘরে অনূঢ়া কন্যা.আর সামনে আমার মতো অবিবাহিত সরকারী কর্মচারী. অবনী বাবুর স্ত্রীর এই আদর যত্ন বিফলে যায় নি .আমার বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই আমার ও শোভনার শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল.
কিন্তু সে অন্য ঘটনা .মূল কাহিনীতে ফিরে আসি . 
আমি প্রতিদিন সকালে কিছু জলখাবার খেয়ে অফিস যেতাম.  দুপুরে অবনী বাবুর বাড়ী খেয়ে পুনরায় অফিসে যেতাম .বিকাল পাঁচটা নাগাদ অফিস থেকে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতের জন্য স্টোভে রান্না বসিয়ে দিতাম .ভাত ,আলুভাতে আর ঘি .তোফা খাওয়া .তখন এতো রুটি খাওয়ার চল ছিলো না .তারপর একটু  বই পড়তাম.ঘর থেকে আসার সময় কিছু নভেল এনেছিলাম . সময় কাটাবার জন্য.তারপর রাত নটা বাজলে খেয়ে দেয়ে ঘুম .   প্রথম দিন রাতে একটা সুরেলা গলা শুনতে পেয়েছিলাম .  কিন্তু ঘুমের ঝোঁক থাকায় জানালা খুলে দেখিনি .  দিন তিনেক পর গরম বেশী থাকায় পিছনে মাথার কাছে  জানালা খুলে শুয়েছিলাম .  বেশ ফুরফুরে হাওয়া আসছে .  শুক্ল  পক্ষের রাত .  আকাশে চাঁদের আলো . জানালা দিয়ে হগ সাহেবের বাগানটা ছবির মতো দেখা যাচ্ছে .  আমি  এটা ওটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছি . হঠাত ঘুমটা ভেঙে গেলো একটা গানের সুরে .ইংরেজি গান . কোন মহিলা যেন দুঃখের সাথে গাইছেন .ধড়ফড়  করে উঠে বসলাম .জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পেলাম পিছনে হগ সাহেবের বাগানে গাছ থেকে খাটানো দোলনায় বসে এক মেম সাহেব গান করছেন . আমার নতুন নিউ মার্কেট থেকে কেনা সুইস হাত ঘড়িটায়  টেবিল  ল্যাম্পের আলোয় দেখলাম রাত একটা .  আমি সেই মায়াবী দৃশ্যের দিকে চেয়ে রইলাম .  কয়েক মিনিট পর হগ সাহেবের বাংলোর পিছনের দরজা খুলে গেলো .এক  জন লোক বেরিয়ে এলো . বুঝলাম ইনিই হগ সাহেব . সাহেব এসে মেম সাহেবের পাশে দোলনায় বসলেন .  দুজনের একান্ত ব্যাক্তিগত  দৃশ্য দেখা উচিত নয় ভেবে শুয়ে পড়লাম . জানালা দিয়ে কথোপকথন ভেসে আসছিল .হঠাত্ মনে পড়ে গেলো অবনী বাবু বলছিলেন সাহেব একা থাকেন .স্ত্রী মারা গেছেন .ভাবলাম অবনী বাবু  ঠিক জানেন না তাই ভুল খবর দিয়েছেন .  ভাবলাম পরের দিন অবনী বাবুর ভুলটা ভেঙে দোব .  কিন্তু কাজের চাপে এই কথাটা বলতে ভুলে গেলাম  .
হগ সাহেব ছিলেন পুর্ত বিভাগের বড় কর্তা .আম দিন দুয়েক পর একটা বিশেষ রিপোর্ট আনতে হগ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম . তখন কার ইংরেজ বড় কর্তারা অধস্তন বাঙালী কর্মীদের সাথে ভালোই ব্যবহার করতেন . আমি হগ সাহেবের কাছে কাজের সূত্রে যেতে উনি আমার সাথে ভালোই ব্যবহার করলেন .একথা সেকথা বলবার ফাঁকে আমায় প্রশ্ন করলেন ' কোথায় আছি ? ' আমি উত্তর দিলাম ‘সাহেব ,আপনার বাংলোর পিছন দিকে বাগানের পাশে যে বাড়ীটা আছে ,তাতেই উঠেছি .’  সাহেব শুনে খুশী হয়ে বললেন ‘তাহলে টো ভালোই হলো ,তুমি রবিবার সকালে হামার সাথে দেখা করো .দুজনে একসাথে চা পান করা যাবে .’ আমি ও রাজী হয়ে গেলাম .
সেই মতো রবিবার  সকালে সেজে গুঁজে সাহেবের বাংলোয় গেলাম .সাহেব দারুণ খাতির যত্ন করলেন . চাকর চা ও  কেক দিয়ে গেলো .সাহেব বললো  ,‘এই কেক ঘরে বানানো .তুমি খেয়ে দেখো .আমার স্ত্রী এই চাকরটি কে নিজে এই কেক বানানো শিখিয়েছেন . ’ আমি বললাম ‘ সার ,মেম সাহেবের গানের গলা ভারি সুন্দর .তার সাথে আলাপ করলে খুবই খুশী হতাম .’ আমার এই কথায় সাহেব যেনো চমকে গেলেন .তারপর খানিকটা চুপ করে থেকে বললেন ,‘আমার স্ত্রীর গান তুমি কোথায় শুনেছো  ?’ আমি  উত্তর দিলাম ‘কেন সার বাগানে ,উনি দোলনায় বসে গান করছিলেন .’ সাহেব কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দিলেন ‘ তুমি ভুল দেখেছো .আমার স্ত্রী দুই বছর হলো মারা গেছেন .তারপরে আমি আর বিবাহ করি নাই. রাতে আমি একাই থাকি .চাকরটি রান্না করে আমার খাওয়া হয়ে গেলে বাড়ী চলে যায় .’ আমি সাহেবের সাথে তর্ক করলাম না .এমন অমায়িক সাহেব .এত সুন্দর ব্যবহার .কিন্তু সেই তিনি এমন অম্লান বদনে এমন মিথ্যা কথা বললেন . বেশ আমিও কোলকাতার  ভবানীপুরের ছেলে .এর রহস্য আমি ভেদ করে ছাড়বো .মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করে সাহেবের থেকে বিদায় নিলাম পরের রবিবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে . সেই দিন দুপুরে অবনী বাবুর বাড়ীতে দুপুরে খেতে গিয়ে  অবনী বাবুকে সব খুলে বললাম .  আমাকে অবাক করে অবনী বাবুও বললেন আমি ভুল দেখেছি.  আমারো  জেদ চেপে গেলো . কয়েকদিন তক্কে তক্কে রইলাম .  কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না .এদিকে আমার বাড়ী ফেরার সময় হয়ে আসছে .এই ব্যাপারটা ছাড়াও মন অন্যদিকেও ব্যাস্ত আছে .অবনী বাবুর মেয়ে শোভনার ও আমার অনুরাগ পর্ব বেশ এগিয়েছে .ঠিক করেছি বাড়ী ফিরে মা বাবাকে বলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো .
যেদিন বাড়ী ফিরবো ঠিক করেছি সেই দিনটা রবিবার .তার আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় আমার জিনিসপত্র সবই গোছগাছ করে নিয়েছি . পরেরদিন সকালে খালি বিছানা পত্র গুছিয়ে অবনী বাবুর বাড়ী সকলের সাথে বিশেষত শোভনার সাথে দেখা করে বেলা এগারোটার রেলের গাড়ী চেপে কোলকাতায় ফিরবো . আজ রাতে শুয়ে আর ঘুম আসছে না .  কেবলই শোভনার ঢলঢল মিষ্টি মুখটা মনে পড়ছে . এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না.
ঘুমটা ভেঙে গেলো একটা গানের শব্দে . চোখ রগড়ে  টেবিল লেম্পের আলোটায় দেখলাম রাত তিনটে .জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলাম পূর্ণিমার আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত .দেখলাম দোলনায় মেম সাহেব ও হগ সাহেব দোল খাচ্ছে .মেম সাহেব হাল্কা সুরে একটা খুব শ্রুতি মধুর ইংরেজী গান শোনাচ্ছেন . মনের মধ্যে সেদিনের প্রতিজ্ঞার কথা মনে পড়ে গেলো .আজ একটা হেস্তনেস্ত করবো. যা থাকে কপালে .সাহেবের মিথ্যা কথা হাতেনাতে ধরে প্রমাণ করে দেবো . সেই মতো চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ীর পিছন দিকে গিয়ে সাহেবদের  দিকে সন্তর্পণে এগোতে লাগলাম .
  যখন সাহেব  ও মেম সাহেবের কাছ থেকে দশ হাত দূরে তখন একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম ‘“ সাহেব তোমার মিথ্যা কথা ধরা পড়ে গেছে আমার কাছে .”’ আমার কথা শুনে দুজনেই পিছন ফিরে চাইলেন .তারপরের মুহূর্তে যে ঘটনাটা ঘটলো তার জন্য আমি তৈরী ছিলাম না . আমার চোখের সামনে পরিস্কার পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় মেম সাহেব ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলেন . আমি এমন আশ্চর্য্য ঘটনাটা দেখে ভয়ে শিহরিত হয়ে গেলাম . মাথা ঘুরে ট লে  পড়েই যাচ্ছিলাম .কিন্তু দেখলাম হগ সাহেব আমায় ধরে নিলেন .  আমার হাত ধরে উনি নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন .একটা চেয়ারে বসিয়ে কফি করে আনলেন .এক কাপ আমায় দিয়ে আরেকটি কাপ নিজে নিয়ে সামনে আরেকটি চেয়ারে বসলেন .
হগ সাহেব বললেন “ বাবু তুমি আজ যাকে দেখলে উনি আমার স্ত্রী রোজি . আমি তখন নতুন চাকরি নিয়ে লণ্ডন ছেড়ে এদেশে এসেছি .রোজি ছিলো এক পাদ্রীর মেয়ে .অপূর্ব গান গাইতে পারতেন.এক বন্ধুর বাড়ীতে রোজির সাথে পরিচয়.তারপরে প্রেম ও বিবাহ .আমাদের কোনো সন্তানাদি হয় নি .রোজি প্রতিদিন আমায় গান শোনাতো . দুই বছর আগে  টাইফয়েড হয়ে রোজি মারা যায় .তারপর আমার একাকি জীবন শুরু হয় .একদিন রাতে বাগান থেকে গানের শব্দ শুনে গিয়ে দেখি রোজি দোলনায়  বসে গান গাইছে .তুমি বিশ্বাস করো বাবু ,আমি ভয় পাইনি.উল্টে আমার খুবই আনন্দ হয় .সেই শুরু .তারপরে মাঝে মাঝেই রোজি আমায় গান শুনিয়ে ডাকে. আমি গেলে আমার সাথে কথা বলে . তোমায় বাবু অনুরোধ করছি তুমি এই কথা কাউকে বোলো না .”
পরের দিন আমি কোলকাতায় চলে এসেছিলাম .তারপরে শোভনার সাথে বিবাহ সূত্রে অনেক বার মেদিনীপুর গিয়েছি .কিছুদিন বাদেই শুনেছি হগ সাহেব মারা গেছেন .
আজ আর হগ সাহেবের বাংলো নেই.সেখানে এখন স্টেডিয়াম তৈরী হয়েছে .স্টেডিয়ামের পাহারাদার দের মুখে শোনা যায় ,কোনো কোনো পূর্ণিমার রাতে সেখানে অলৌকিক ভাবে একটা গাছ দেখা যায় .সেই গাছ থেকে একটি দোলনা ঝুলতে দেখা যায়.আর তাতে বসে  থাকে এক সাহেব ও মেম সাহেব .মেম সাহেব গান করেন আর সাহেব শোনেন .

Friday, March 17, 2017

বাংলা গল্প: স্বপ্নের সিঁঁড়ি.

বাংলা গল্প: স্বপ্নের সিঁঁড়ি.: ব্যাঙ্কে ঢোকার মুখে মেসেজটা এলো.পকেট থেকে চশমা বার করে কাঁচটা মুছে চোখে লাগিয়ে মেসেজটা পড়লো .মেসেজের অর্থ বোঝার পর থরথর করে কাঁপতে লাগলো ...

Thursday, March 16, 2017

বাংলা গল্প: দাবানল.

বাংলা গল্প: দাবানল.: (এই লেখা গল্পটি সম্পূর্ণভাবে কল্পিত .কোথাও যদি বাস্তবের সাথে কোন মিল থাকে তা কাকতালীয় ) দাবানল -- ভবেশ মিত্র এলাকায় ভবাদা বলেই পরিচিত . আ...

বাংলা গল্প: ফাঁদ

বাংলা গল্প: ফাঁদ: বিপাশা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে .আশেপাশে অনেক মানুষের ভিড়ে তাকে কেউ খেয়াল করছে না  .সকলে পুজো মন্ডপে আনন্দ করতে ব্যাস্ত .এই শরত পল্লী পুজো মন্ড...

বাংলা গল্প: রহস্যময় কালচক্র (দ্বিতীয় ,তৃতীয় ও অন্তিম পর্ব )

বাংলা গল্প: রহস্যময় কালচক্র (দ্বিতীয় ,তৃতীয় ও অন্তিম পর্ব ): ঘুটঘুটে অন্ধকার.আস্তে আস্তে মৈনাকের চোখ সয়ে এলো .দেখলো সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানটা  ঘাসজমি . হঠাত্ সামনে মনে হলো ঘাসগুলো একটু নড়ছে .মৈনাক...

বাংলা গল্প: রহস্যময় কালচক্র (প্রথম পর্ব)

বাংলা গল্প: রহস্যময় কালচক্র (প্রথম পর্ব): মৈনাক ভালো করে চারদিকটা তাকাল.শুধু পাথরের টুকরো ,ছোটো ,বড় .একটু দূরে পাহাড়ের সারি দেখা যাচ্ছে .প্রতিটি পাহাড় শৃঙ্গ বরফ ঢাকা .সন্ধ্যা হয়ে আ...

বাংলা গল্প: মাঝ রাতের আতঙ্ক .

বাংলা গল্প: মাঝ রাতের আতঙ্ক .: মাঝ রাতের আতঙ্ক  ---- ভূতেশ বাবু অনেক কিছু বিশ্বাস করেন কিন্তু ভূত বা ভগবান কোনোটাই বিশ্বাস করেন না . জীবনে অনেক দুঃখ কষ্টে পড়েছেন কিন্তু ...

স্বপ্নের সিঁঁড়ি.

  • ব্যাঙ্কে ঢোকার মুখে মেসেজটা এলো.পকেট থেকে চশমা বার করে কাঁচটা মুছে চোখে লাগিয়ে মেসেজটা পড়লো .মেসেজের অর্থ বোঝার পর থরথর করে কাঁপতে লাগলো .রাহুল ব্যাঙ্কের সিঁড়িতেই বসে পড়লো .একজন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল .হঠাত্ রাহুলকে বসেল পড়তে দেখে কাছে এসে বললো ‘কাকাবাবু আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে ?’রাহুল তার দিকে চেয়ে দেখলো সুমনের বয়সী একটি ছেলে . রাহুল চট করে মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে তার দিকে চেয়ে উত্তর দিলো ‘আমি ঠিক আছি .তুমি যাও .’ছেলেটি অবাক চোখে তাকিয়ে উপরে উঠে গেলো.রাহুল আবার মোবাইলটা বার করে মেসেজ টা পড়লো.রাহুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক কোটি দশ হাজার পাঁচশো টাকা জমা পড়েছে . রাহুল আশ্চর্য্য হয়ে গেলো .এত টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা দিলো কে ? ছোটো বেলা থেকেই তাদের কষ্টের জীবন.বাবা চটকলের ক্লার্কের কাজ করতো .বাবা যখন মারা যায় রাহুল তখন সবে বি এসসি পাশ করেছে .এম এসসি ভর্তির আবেদন করেছে.উচ্চশিক্ষা করা আর হলো না .সবাই চটকলের বড় সাহেবকে ধরে বাবার পোস্টে কাজে লাগিয়ে দিলো.সংসারটা তো চালাতে হবে.বছর দুয়েকের মধ্যে মিনতির সাথে বিয়ে তার তিন বছরের মধ্যে সুমন ও রেখার জন্ম .তারপর কত ঝড়ঝাপ্টা গেছে .কতবার মিল বন্ধ হয়েছে.কোনোরকমে সংসার চলেছে .বিয়ের পরেই মিনতিকে নিয়ে রাহুল একবার দীঘা গিয়েছিল.তিনদিন ছিলো .কতো মজা হয়েছিল.রাহুলের মনে আছে সেবার সে মিনতির সাথে কম্পিটিশন করে ফুচকা খেয়েছিলো .রাহুল আটান্নটা ফুচকা খেয়ে মিনতিকে হারিয়ে দিয়েছিলো .তারপর সারারাত হোটেলের ঘরে পেটব্যাথায় ছটফট করেছিলো .মিনতি ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল. আজো সেই সব স্মৃতি রাহুলের মনে ভিড় করে আসে .তারপর থেকে এতগুলি বছর কেটে গেল কোথাও যাওয়া হয় নি .গত মাসে রাহুল রিটায়ার্ড হয়েছে. সামনের মাসে রেখার বিয়ে ঠিক হয়েছে.মিলে পি এফের ফর্ম ফিলাপ করেছিল . রাহুলেরর বন্ধু হরিপদ মেন অফিসের ক্লার্ক .সে বলেছিল ‘তোর চিন্তা নেই দিন কুড়ির মধ্যে টাকা তোর ব্যাঙ্কে ঢুকে যাবে .’ আজ জমানো টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা তুলতে এসেছে. বিয়ের ঘর বুক করতে হবে.পাড়াতেই একটা বাড়ী আছে ,সব অনুষ্ঠানে ভাড়া দেয় .ওটার মালিকের সাথে কথা হয়েছে .বারো চেয়েছিল. শেষে দশে রাজি হয়েছে.আজকেই এডভান্স করে দিতে হবে.তাই সকাল সকাল ব্যাঙ্কে এসেছে .ঢোকার মুখে এই মেসেজ.রাহুল আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ব্যাঙ্কে ঢুকলো.পাশবই খুলে দেখলো এগারো হাজার টাকা আছে .অনেক ভেবে দশ হাজার টাকা তুললো . কিসের টাকা তার নামে জমা হয়েছে না জেনে তোলা ঠিক হবে না .ব্যাঙ্কের কাউন্টার থেকে টাকা আর পাশবইটা হাতে নিয়ে দেখলো তাতেও ব্যালান্স অত টাকাই লেখা আছে . বাইরে এসে একটা রিকশা  নিলো .রিকশায় বসে রাহুল ভাবতে লাগলো এত টাকা তাকে দিলো কে ? পি এফ থেকে এত টাকা পাবার কথা নয় খুব জোর পাঁচ লাখ পাবে .রেখার বিয়ে দিতে এক লাখ লাগবে .ছেলেটি রেখার সাথে একই স্কুলে চাকরী করে .প্রেমের বিয়ে তাই ওরা কিছু চায় নি .কিন্তু মেয়েকে তো সাজিয়ে দিতে হবে .সুমন একটা বেসরকারী চাকরিতে ঢুকেছে . এখনই হাজার দশেক দিচ্ছে .রাহুল ভেবে রেখেছে রেখার বিয়ের পর যা বাঁচবে তা দিয়ে একটা টোটো কিনবে .বাকী টাকা ফিক্সড করে দেবে . এখন হাতে অনেক টাকা  .যদি এই টাকার প্রকৃত মালিক সেই হয় তবে অনেক কিছু করার আছে .মেয়েটার বিয়েটা জমকালো ভাবে দেওয়া যাবে .মিনতির খুব শখ একবার পুরী  যাবে.এতদিন পয়সার অভাবে যাওয়া হয় নি .এবারে শুধু পুরী নয় পুরো উত্তর ভারত বেড়িয়ে আসবে . টোটো কেনার দরকার নেই.মনে মনে হিসাব করলো তিরিশ লাখ টাকা এম আই এসে রাখলে  মাসে চব্বিশ হাজার টাকা সুদ পাবে .তাতে রাজার হালে চলে যাবে .বাকি টাকা চারভাগে ফিক্সড করে দেবে.তার ,মিনতির ,সুমন ও রেখার সমান ভাগ . রাহুলের মনে হলো কোনো দানি ব্যাক্তি গোপনে বিভিন্ন জনকে তার সম্পচত্তি দান  করে দিচ্ছে .সে খুব ভাগ্যবান .এতদিন রাহুল নিজের ভাগ্যকে দোষ দিয়ে এসেছে .আজ মনে হচ্ছে ভাগ্য তাকে শেষ পর্যন্ত ঠকায়নি .বাড়ীর কাছে চলে এসেছে ঠিক তখন ফোনটা এলো .জোরালো আওয়াজে চিন্তার সুত্রটা কেটে গেলো .ফোনটা ধরতে ওপার থেকে একটা গম্ভীর কনঠস্বর বললো ‘আমি একটু রাহুল চক্রবর্তীর সাথে কথা বলতে চাই .’ রাহুল বললো ‘আমি রাহুল চক্রবর্তী কথা বলছি .’এবার ওপারের লোকটি খুব মোলায়েম ভাবে বললো ‘আমি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নন্দী বাবু বলছি  ,আমাদের এক কর্মচারী ভুল করে আপনার

অ্যাকাউন্টে এক কোটি দশ হাজার পাঁচশো টাকা ট্রান্সফার করে ফেলেছে .আসলে আপনার অ্যাকাউন্টে পাঁচ লাখ চল্লিশ হাজার টাকা ট্রান্সফার হওয়ার কথা .আগের টাকা অন্য জনের অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার কথা .একটু আগে ভুলটা ধরা পড়েছে .ইতিমধ্যেই আপনি আপনার পাশবই আপ টু ডেট করে নিয়ে গেছেন .আমরা আন্তরিক দুঃখিতো  .আপনি একবার ব্যাঙ্কে আসুন আমরা একটা সংশোধনী চিঠি তৈরী করেছি তাতে আপনার সই লাগবে .’রাহুল ফোনটা রেখে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো তারপর রিকশাওলাকে বললো ‘রিকশা ঘোরা .একবার ব্যাঙ্কে যাবো .’

Sunday, March 12, 2017

মাঝ রাতের আতঙ্ক .

মাঝ রাতের আতঙ্ক  ---- ভূতেশ বাবু অনেক কিছু বিশ্বাস করেন কিন্তু ভূত বা ভগবান কোনোটাই বিশ্বাস করেন না . জীবনে অনেক দুঃখ কষ্টে পড়েছেন কিন্তু কখনো ভগবানের নাম নেননি . আসলে খুব ছোটোবেলায় উনি খেলতে খেলতে মায়ের একটা সোনার চেন হারিয়ে ফেলেছিলেন . মা সোনার চেন টা  টেবিলে খুলে স্নান করতে গিয়েছিল .সেই সুযোগে ছোটো ভূতেশ চেনটা নিয়ে খেলছিলো .খেলতে খেলতে ছোটো ভূতেশ  চেনটা হারিয়ে ফেলে .তারপর কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি .খুঁজে না পেয়ে মায়ের মারের ভয়ে সরল বিশ্বাসে ঠাকুর ঘরে প্রণাম ও কেঁদে ভাসানো .কিন্তু ঠাকুর এমনই পাষাণ  ছোটো ভূতেশ অতক্ষণ কাঁদা সত্ত্বেও হারিয়ে যাওয়া জিনিসটা ফেরত দিলো না .তারপর যা হয় .বাবা , মা দুজনের হাতে উত্তম মাধ্যম ঠেঙানি . সেই থেকে ভূতেশবাবু ভগবানে আর কখনো বিশ্বাস করেন নি .ছোটোবেলার সেই অবিশ্বাস বয়স বাড়ার সাথে আরো পাকা হয়েছে .সেই সাথে ভূত প্রেত ইত্যাদি সবকিছু তেই বিশ্বাস চলে গেছে . এখন ভূতেশ বাবুর বয়স পঁয়ষট্টি .একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করতেন .অবসর নেবার পর  কিছুদিন ঘরে বসে ছিলেন .কিন্তু যারা কাজ পাগল মানুষ তাদের ঘরে মন টিকবে কেনো  ?তাই আবার চাকরির চেষ্টা .শেষে এক বন্ধুর সুপারিশে মাছের ভেড়ির পাহারাদারের চাকরি . এই অঞ্চলে প্রচুর মাছের ভেড়ি আছে . পাহারার ব্যবস্থা না থাকলে মাছ চুরি হয় .তাছাড়া অনেক সময় শত্রুতা করে জলে বিষ মিশিয়ে মাছ মেরে দেয় .তাই সব ভেড়ির মালিক পাহারার ব্যবস্থা রাখে . ভূতেশ বাবুকে নিয়ে দুজন পাহারাদার .ভূতেশবাবু দিনের বেলা আর রামরতন বলে একজন বিহারী রাতের বেলা থাকে .   বারো ঘণ্টা করে ডিউটি .কাজে লাগার পর দিন গুলো ভালোই কাটছিলো ভূতেশবাবুর .বিরাট জায়গা নিয়ে মাছের ভেড়ি .চার চৌকো আকৃতির .একদিকের পাড় থেকে খানিকটা সেতুর মতো পাড় ভেড়ির মাঝামাঝি পর্যন্ত এগিয়ে গেছে .যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা তাঁবু খাটানো .সারাদিন ভূতেশবাবুর তাঁবুর মধ্যেই কেটে যায় . তাঁবু থেকে বেরোলেই পুরো ভেড়ির চারপাশ টা নজরে আসে .ভূতেশবাবু আসার সময় পাড়ার লাইব্রেরি থেকে কিছু গল্পের বই নিয়ে আসেন .দুপুরে তাঁবুর ভেতরে স্টোভে দুটো চালডাল ফুটিয়ে নেন .খেয়েদেয় একটা চমতকার ভাতঘুম দেন .ঘুম থেকে উঠে একটু ঘোরা ঘুরি অথবা গল্পের বই পড়া .সন্ধ্যা সাতটা বাজলে রামরতন আসে .তাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ি চলে আসেন .মাঝেমাঝে রামরতনের সাথে দু চারটে কথাবার্তা হয় .ভূতেশবাবু একদিন রামরতন কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি চলে যাওয়ার পর রামরতন কি করে ? রামরতন তার ভোজপুরি হিন্দিতে বলেছিল “ ইখানে বাবু রাতে ভূত পিরেতের আড্ডা .হামি খেয়ে লিয়ে এক ছিলিম গাঁজা খেয়ে শুয়ে পড়ি .একদম সুবা নিকলতা হুঁ .” শুনে ভূতেশবাবু মনে মনে খুব হেসে ছিলেন.শালা ভূত না গাঁজার নেশায় উল্টো পাল্টা দেখা .

কিছু দিন বাদে রামরতন দেশে গেলো .ভেড়ির মালিক ভূতেশবাবুকে রাতে পাহারা দিতে বললেন .সেইমতো ভূতেশবাবু রাতে আসতে লাগলেন .কয়েকদিন কেটে গেলো .

তারপর এলো সেই দিন .সেদিনটা ছিলো পূর্ণিমা .আকাশে ভরা চাঁদের আলো .চারিদিকে জ্যোতস্না . অন্যদিনের মতো আজ সন্ধ্যার কিছু পরেই ঘর থেকে আনা খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিলেন .মাঝ রাত্রে প্রসাবের বেগ লাগায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো . উঠে তাঁবুর বাইরে এসে প্রসাব করে চারিদিকে দেখতে লাগলেন .সঙ্গে টর্চ আছে .এদিকে ওদিকে আলো ফেলতে ফেলতে হঠাত্ লক্ষ্য করলেন তার সামনে দিকে ঠিক ভেড়ি অপর পাড়ে কেউ একজন দাঁড়িয়ে. টর্চের আলোয় মনে হলো মহিলা. ভূতেশবাবু একটা জোরালো হাঁক দিলেন  “কে ?” কোনো জবাব এলো না .আশেপাশে তাকাতে ভূতেশবাবুর শরীর হিম হয়ে গেলো .ঠিক সামনের পাড়ের মহিলাটির মতো অন্য দুই পাড়ে দুই মহিলা দাঁড়িয়ে আছে .ভূতেশবাবুর শরীর দর দর করে ঘামতে লাগলো . হঠাত্ সামনের মহিলাটি জলের কাছে এলো . তারপরে ভূতেশবাবু কে অবাক করে দিয়ে জলের উপর দিয়ে ভূতেশবাবুর দিকে হেঁটে আসতে লাগলো .সাথে সাথে পাশের দুই পাড়ের মহিলা দুটি ও জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে লাগলো .ভূতেশবাবু টর্চের আলোয় পরিস্কার দেখতে পাচ্ছেন তিনদিক থেকে তিনটি ঘোমটা পড়া মহিলা তার দিকে জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসছে .ভয়ে ভূতেশবাবুর শরীর থর থর করে কাঁপতে লাগলো .মুখ দিয়ে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো .হাতের টর্চ পড়ে গেলো .তিনি ঘুরে পিছন ফিরে দৌড়োবার উপক্রম করলেন .কিন্তু  পারলেন না .ঠিক দশহাত দূরে একজন ঘোমটা পড়া মহিলা দাঁড়িয়ে আছে .

পরের দিন সকালে ভেড়ির এক কর্মী ভূতেশবাবুর অজ্ঞান দেহ আবিষ্কার করলো .না এরপর ভূতেশবাবু আর কোনোদিন ভূতে অবিশ্বাস করেননি. (শেষ). 

রহস্যময় কালচক্র (দ্বিতীয় ,তৃতীয় ও অন্তিম পর্ব )

ঘুটঘুটে অন্ধকার.আস্তে আস্তে মৈনাকের চোখ সয়ে এলো .দেখলো সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানটা  ঘাসজমি . হঠাত্ সামনে মনে হলো ঘাসগুলো একটু নড়ছে .মৈনাক চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো . দেখলো একটা মোটা মত লোক টলতে টলতে আসছে .মৈনাক একটু খুশিই হলো .লোকটা যখন  কুড়ি ফুট দূরে আধো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে পড়ল তার দিকে চেয়ে হঠাত্ মৈনাকের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলো . ওটা  সে লোক ভাবছিল কিন্তু ওটা একটা মোটা ভাল্লুক . ভাল্লুকটা আর একটু কাছে এগিয়ে আসতে মৈনাকের মনে হলো ওর শরীরের চারপাশে এক অদৃশ্য বলয় রয়েছে . এবারে ভাল্লুকের ধারালো চকচকে দাঁত ও নখ গুলো চোখে পড়লো .মৈনাক কাঠের পুতুলের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো .কিন্তু ভাল্লুকটা একেবারে ওর গায়ের কাছ দিয়ে চলে গেলো যেন ওখানে একজন কেউ দাঁড়িয়ে ছিলো  তার নজরেই আসেনি. মৈনাকের মনে পড়লো কালচক্র দিয়ে আসার আগে সন্ন্যাসী বলেছিলো কালচক্র তোমায় সর্বদা রক্ষা করবে.এখন মৈনাক বুঝতে পারলো সন্ন্যাসীর কথাটা সত্যি .কালচক্র তার চারদিকে অদৃশ্য বলয় গড়ে তোলায় ভাল্লুকটা তার উপস্থিতি টের পায় নি .বেশ কিছুক্ষণ পর আকাশ ফরসা হয়ে এলো.মৈনাক এতক্ষণ ঘাসজমি তেই বসে ছিলো.অন্ধকারে কোথায় বা যাবে ? এবারে আলো ফোটবার পর চলতে আরম্ভ করলো একটু পরেই ঘাসজমি শেষ হয়ে গেল তারপরে একটা উঁচু নিচু উপত্যকা .মধ্যিখান দিয়ে পায়ে চলা পথ .মৈনাক হাঁটতে লাগলো. খুব সুন্দর মনোরম প্রকৃতি .মৈনাক হাতঘড়িতে দেখলো সকাল ছটা বাজে . আধা ঘণ্টা হাঁটার পর দেখতে পেল বহু দূরে একটা মানুষ উবু হয়ে কি যেন করছে .মৈনাক দ্রুত পা চালালো .কিছুক্ষণ পর লোকটার কাছে পৌঁছে গেলো .দেখল লোকটা একটি খুরপি জাতীয় যন্ত্র নিয়ে একটি ছোট গাছের গোড়া সমেত তোলার চেষ্টা করছে.মৈনাক তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো .ততক্ষণে তার গাছটি তোলা হয়ে গেছে .মৈনাক প্রশ্ন করলো এটি কোন জায়গা ?এখন কত সাল ?আপনি কে ?মৈনাক হড়বড় করে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো.লোকটি কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো.তারপরে তাকে ইশারা করে পেছনে আসতে বললো . তারা পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগিয়ে চললো .লোকটি মাঝপথে কোন কথা বললো না . মৈনাক ও চুপচাপ রইলো.দুজনে একটি কটেজ টাইপের বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালো. বাড়ীটা কাঠ বা সিমেন্ট বা অন্য চেনা কোন বাড়ী বানানোর মেটিরিয়াল দিয়ে তৈরী নয় .অচেনা কিছু দিয়ে তৈরী . বাড়ীর ভেতরে  আসবাব পত্র খুব কম . চার পাঁচটি ঘর .বেশিরভাগ ঘর বন্ধ .লোকটা মৈনাককে একটি ঘরের ভিতর নিয়ে গেলো. এখানে একটি শোবার খাট ও একটি বসবার জন্য চেয়ার আছে .দুটোই মনে হলো প্লাস্টিক জাতীয় স্বচ্ছ মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরী .লোকটা মৈনাককে বসবার ইশারা করল.মৈনাক চেয়ারে বসলে লোকটা খাটে বসলো .এবারে লোকটা কথা বললো কথাটা বাংলা হলেও যেন মনে হয় এই ভাষা লোকটার নিজের ভাষা নয় .লোকটা বলল ‘আপনি যে ভাষায় কথা বললেন তা খুবই প্রাচীন ভাষা .এখন আর  কেউ এই ভাষায় কথা বলে না তাই আমি খুবই অবাক হয়ে গেছি . আমি একজন শিক্ষক .আমার নাম সুজিত 1050 . আপনার নাম কি ? মৈনাক উত্তর করলো ‘মৈনাক রায় ‘. মৈনাক প্রশ্ন করলো  আপনার নামের পর 1050 সংখ্যাটি র অর্থ কি ? বর্তমানে কোন সময়ে আমি অবস্থান করছি ? সুজিত উত্তরে বলল ,এখন 605 বিশ্বাব্দ . আমাদের জানা রেকর্ড অনুযায়ী 2000 সাল থেকে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ,হিংসা ইত্যাদি বাড়তে থাকে  যা 2020 সালে চরমে পৌঁছায়.এবং সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী এক ভয়ংকর যুদ্ধ শুরু হয় .এবং পরিণামে 2030 নাগাদ পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োগ হয় .যার ফলে সেই সময়ের জনসংখ্যার পঁচানব্বই শতাংশ ধ্বংস হয় .জীবনধারণের উপযোগী ভূমির নব্বই শতাংশ তেজস্ক্রিয় হয় .সামান্য কিছু মানুষ বেঁচে যায় .তারপরে পুনরায় সকলে মিলে এক সমগ্র পৃথিবীব্যাপী একটাই শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলে .এই ঘটনা পৃথিবী ধ্বংসের একশো বত্সর পরে হয়.এই সময় ঠিক হয় বিশ্ব ধ্বংসকে শুরু ধরে একনতুন সময় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে .যার নাম দেওয়া হয় বিশ্বাব্দ .অর্থাত্ 605 বিশ্বাব্দ মানে তোমার 2635 সাল .আর তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো ,এখন আর ধর্ম  ,উপাধি , ইত্যাদি মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টিকারী কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই .মানুষের জন্ম থেকে কুড়ি বত্সর বয়স পর্যন্ত শুধু নাম ধরে ডাকা হয়.সঙ্গে জোড়া হয় 1000 সংখ্যা .তার অর্থ শিক্ষার্থী .এরপর তার কর্ম অনুযায়ী নামের সাথে সংখ্যা জোড়া হয় .আমি শিক্ষক তাই আমার সংখ্যা 1030 .বুঝতে পেরেছো? তুমি এখানে এইসময়ে কি ভাবে এলে ?তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি সময়যাত্রী .মৈনাক বললো ,আমি এক আশ্চর্য্য কালচক্রের সাহায্যে এখানে এসেছি .আমি 2016 সাল থেকে এসেছি . আমি একজন কলেজ ছাত্র .আপনি কোন বিষয়ের শিক্ষক . সুজিত বললো এখন আগেকার মতো শিক্ষণ পদ্ধতি  নেই .আগে তোমরা সব শিক্ষার্থী এক জায়গায় জড় হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে ,এবং মান অনুযায়ী তাকে বিদ্যালয় ,উচ্চ বিদ্যালয় ,মহা বিদ্যালয় ,ও বিশ্ব বিদ্যালয় বলা হতো .কিন্তু এখন শিক্ষার্থী আপনার নিজের জায়গায় থাকে আর শিক্ষক তার নিজের জায়গায় .বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে গোটা বিশ্বের সব পড়ুয়া  একসঙ্গে শিক্ষা লাভ করে .আমি ইতিহাস ও বিজ্ঞানের শিক্ষক . ভাষা সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তন হয় .বর্তমানে আপনার পরিচিত ভাষায় কেউ কথা বলে না .আজ থেকে তিনশো বছর  আগে সব মানুষ যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে এক নতুন ভাষাকে বেছে নেয় যা প্রাচীন ইংরেজি ,চাইনিজ, ও হিন্দি ভাষার মিলিত রূপ .আমরা যারা প্রাচীন ভাষা চর্চা করি একমাত্র তারাই তোমার বাংলা বুঝতে পারবো.এখন তোমার নিশ্চয় ক্ষিদে পেয়েছে.তুমি আগে খাও .এই বলে সে ঘরের এক জায়গার একটা সুইচ টিপতে  ঘরে র দেওয়ালে একটি চারকোণা খোপ দেখা গেলো .তাতে অনেক ছোট ছোট পাত্র রাখা .তার মধ্যে থেকে একটা  নিয়ে মৈনাককে দিলো .মৈনাক দেখল পাত্রে সবুজ শেওলা জাতীয় একরকম খাবার আছে .  মৈনাক খেয়ে দেখলো বেশ সুস্বাদু .এত অল্প খাবারেই পেট ভরে গেলো .সুজিত বললো ,’আজকাল চাষবাস হয় না .শুধু এই পাহাড়ী অন্চলে কিছু গাছপালা হয় যা থেকে ঔষধ তৈরী হয়.সকল খাদ্যই আসে সমুদ্র থেকে.আমরা যারা পাহাড়ী অন্চলে থাকি তারা সারা বত্সরের খাবার মজুত করে রাখি .এখন পৃথিবীর মাটি বসবাসের উপযোগী নেই তাই পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ সমুদ্রে কৃত্রিম দ্বীপ গড়ে রয়েছে .সেখানেই কৃত্রিমভাবে এই জলজ উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ শেওলার চাষ হয় .এই খাবার একবার খেলে এক সপ্তাহ ক্ষিদে পাবে না বা খাবার প্রয়োজন পড়বে না . এখন আমার সাথে চলো তোমার ব্যাপারে প্রথমে আমায় প্রশাসনিক ভবনে রিপোর্ট করতে হবে .তারপরে তাদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবো .মৈনাক ও সুজিত  ঘরের বাইরে এলো .মৈনাকের পরনে জিন্সের পেন্ট ও সুতীর শার্ট ও সোয়েটার  .সুজিতের পরনে সিন্থেটিক জাতীয় পোশাক  কিন্তু অনেক পকেট যুক্ত . মৈনাক প্রশ্ন করলো সুজিতকে  ,’আপনার এই পাতলা পোশাকে ঠাণ্ডা লাগছে না ?’সুজিত উত্তর দিল ‘এই পোষাক তৈরী হয় জলের তলার এক প্রকার স্পন্জ থেকে .এটি চরমতম ঠাণ্ডা ও গরমে পরবার উপযোগী .এখন চলো যাওয়া যাক .’সুজিত পকেট থেকে একটি টিভির রিমোট কন্ট্রোলের মতো সুইচ বার করে টিপতেই বাড়ীর ছাদের ওপর হতে একটি ভাসমান গাড়ী নিশ্বব্দে নেমে এল. গাড়ীটি গোল .গাড়ীটা পুরো মাটিতে ঠেকলো না মাটির এক ফুট উঁচুতে ভেসে রইলো.গাড়িতে চালক ছাড়া  চারজন বসবার ব্যবস্থা আছে . মৈনাক ও সুজিত গাড়িতে বসলো . সুজিত চালকের আসনে বসলো .সামনে কন্ট্রোল পেনেল .স্ক্রীনে অনেক তথ্য দেখা যাচ্ছে.সুজিত মৈনাককে বললো ,’প্রশাসনিক ভবন এখান থেকে 100 কিমি দূরত্বে .যেতে দশ  মিনিট লাগবে .’ মৈনাক বলল ‘আপনারা দূরত্ব বোঝাতে আমাদের মতো একক ব্যবহার করেন ?সুজিত হেসে বলল ‘আমরা আপনাদের ভবিষ্যতের মানুষ.আমাদের যাবতীয় শিক্ষা আপনাদের কাছ থেকেই অর্জন করেছি .’ কিছুক্ষণ যাবার পর অল্প কিছু পাহাড়ের কোলে ঘরবাড়ী নজরে এলো.তার মধ্যে একটি বেশ বড় বাড়ীর সামনে তাদের গাড়ী এসে দাঁড়ালো. দুজনে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলো .এবারে মৈনাক বেশ কিছু লোক দেখতে পেল সকলে অবাক চোখে মৈনাকের পোশাকের দিকেই চেয়ে আছে.সুজিত মৈনাককে নিয়ে একটি ঘরে গেলো .সেখানে এক জন মধ্যবয়স্ক লোক টেবিলের সামনে কাজ করছিল.তাদের দুজনকে দেখে বিশেষ করে মৈনাককে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তারপর তাদের বসতে বললো.দুজনে বসবার পর সুজিত লোকটার সাথে কথা বলতে লাগলো.মৈনাক তাদের ভাষা একবর্ণ ও বুঝতে পারছিল না তবে কিছু শব্দ চেনা লাগছিলো .লোকটা কথা বলবার সময় বারবার মৈনাকের দিকে তাকাচ্ছিল .এবারে লোকটা  একটা টেবিলের ওপরের সুইচ টিপতেই টেবিলের কিছুটা অংশ কম্পিউটারের মতো হয়ে গেলো এবং তাতে এক মহিলার ছবি ভেসে উঠল. লোকটি তাকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কি সব বললো .কম্পিউটারের স্ক্রীনটা আপনা থেকেই ঘুরে ঘুরে মৈনাক ও সুজিতকে দেখতে  লাগলো .তারপর মহিলা সুজিতকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলো .অবশেষে মহিলা টি মৈনাকের দিকে মুখ করে পরিস্কার বাংলায় বললো ‘হে অতীতের অতিথি আমার নমস্কার নেবেন .আমি তানিয়া 6501 .আমি বিজ্ঞান , ইতিহাস ,ও চিকিত্সা বিভাগের মুখ্য প্রশাসক .আমি আপনাকে আমাদের মূল রাজধানী ‘ ফিনিক্স’ দেখার আমন্ত্রণ জানালাম . আপনার সাথে আপনার বন্ধু সুজিতকে ও আমন্ত্রণ জানালাম .আপনারা এখনই রওনা দিলে চার ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন .ধন্যবাদ.’ এরপর তারা বাইরে এলো.এতক্ষণ যে লোকটার সাথে সুজিত কথা বলছিলো সুজিত বললো তার নাম ‘নিলয় 1975 .’ নিলয় বাইরে এসে একটা বড় গাড়ীর ব্যবস্থা করল.তাতে  চালক ছাড়া দশ জনের বসার ব্যবস্থা .এই গাড়ী টিও গোল পুরোটা স্বচ্ছ কাঁচ জাতীয় প্লাস্টিকে ঘেরা .এবারে চালকের আসনে অন্যজন .পিছনের আসনে সুজিত ,মৈনাক.আর তাদের দুপাশে আরো ছয়জন রক্ষী সহ নিলয় বসলো .গাড়ী সোজা উপরে উঠলো তারপর সোজা দক্ষিণ দিকে রওনা দিলো .দুই পাশে রক্ষী দের দিকে চেয়ে মৈনাক ভাবতে লাগলো সে এদের অতিথি নাকি বন্দী ???মৈনাক  চুপচাপ বসেছিল. গাড়ী হু হু করে এগিয়ে যাচ্ছে .হঠাত্ মৈনাক  সুজিতকে প্রশ্ন করল ‘আমরা যেখানে যাচ্ছি সেটি কোথায় ?’ সুজিত উত্তর দিলো ‘আমরা এখন রাজধানী শহর ফিনিক্স এ যাচ্ছি . এটি ভারত মহাসাগরের উপর অবস্থিত একটি কৃত্রিম দ্বীপ .এটির জনসংখ্যা দশ লক্ষ . বিশ্বধ্বংসের আগে টেকনোলজির খুব দ্রুত উন্নতি হয় .বিশেষ করে প্লাস্টিক টেকনোলজি .এইসময়ে মানুষ পরিবেশে নির্দিষ্ট সময় পরে মিশে যাবার মতো অথচ খুব শক্ত ও অত্যধিক হালকা প্লাস্টিক আবিষ্কার করে .পরমাণু যুদ্ধের পর  পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গা বসবাসের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয় .বিশ্বধ্বংসের একশো বছর পর অবশিষ্ট  মানুষ যখন জোট বাঁধলো তখন তারা একটি নতুন রাজধানী স্হাপন করার কথা ভাবলো .যেহেতু পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য তাই স্বাভাবিকভাবেই জলে বসবাসের কথা চিন্তা করে .তারা বিরাট বিরাট প্লাস্টিকের ব্লক তৈরী করে যেগুলি জলে ভাসে .এরকম অনেক ব্লক সংযুক্ত করে সমুদ্রে এক ভাসমান দ্বীপ তৈরী করে . প্রায় একশো বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে থাকা এই দ্বীপ স্বয়ং সম্পূর্ণ . সমুদ্রের ঢেউ থেকে উত্পন্ন বিদ্যুতের সাহায্য আলোকিত .খাদ্যের জন্য  সমুদ্রের বিশাল অংশজুড়ে চৌবাচ্ছা তৈরী করে তাতে জলজ শেওলার চাষ করা হয় . সমুদ্রের জল শোধন করে পানীয় হিসাবে  মিষ্টি জল তৈরী করা হয় . এছাড়া এখানে  রয়েছে শিল্প ,কলা ,ইতিহাস ,বিজ্ঞান ,প্রভৃতি চর্চার জন্য বিশেষ কেন্দ্র . বর্তমানে  এই ধরণের স্বয়ংসম্পূর্ণ  দ্বীপ প্রায় সব মহাসাগরেই রয়েছে .তাদের মধ্যে ‘ ফিনিক্স’ সবথেকে বড় . সমগ্র বিশ্বের প্রায় কুড়ি হাজার স্বয়ংসম্পূর্ণ দ্বীপ ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড়ী অন্চলের মানুষ নিয়ে মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি.’  মৈনাক একটা প্রশ্ন করলো ‘আপনি বলেছিলেন পরমাণু যুদ্ধের পর পাঁচ শতাংশ মানুষ বেঁচে গিয়েছিলো  তাহলে  তো আরো জনসংখ্যা হবার কথা !’ সুজিত একটু ম্লান হেসে উত্তর দিলো ‘তোমার হিসাব ঠিকই .বিশ্বধ্বংসের পরেও প্রায় তিরিশ কোটির বেশী মানুষ বেঁচে গিয়েছিল . কিন্তু তার পরের দূর্ভিক্ষ  ও মহামারীতে বহু লোক মারা যায় .যারা বেঁচে যায় তাদেরও আরো অনেক বত্সর তেজস্ক্রিয়তা জনিত রোগ ভোগ করতে হয়.সবথেকে বড় ব্যাপার এই যে মানুষের জন্মহার বিপদজনক ভাবে কমে যায় .সেই সব কারণে আজ জনসংখ্যা এত কম .’এর মধ্যেই তাদের যান ভূভাগ ছেড়ে মহাসাগরের উপর দিয়ে এগিয়ে চলেছে .কিছুক্ষণের মধ্যেই বহুদূরে সাগরের মধ্যে একটা কিছু দেখা গেলো .যত কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো ততই একটি দ্বীপের চেহারা স্পষ্ট হতে লাগলো . আস্তে আস্তে বাড়ী ঘর লোকজন সব স্পষ্ট হতে লাগলো .সুজিত বললো ‘ এই আমাদের রাজধানী ফিনিক্স .গাড়ী গিয়ে নামলো এক বিশাল বাড়ীর ছাদে .নামতেই মৈনাক দেখলো সেই মহিলা যার নাম তানিয়া , তিনি আরো কয়েকজন লোকের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন. তানিয়া এগিয়ে এসে মৈনাকের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো ‘সুস্বাগতম’ .তারা সকলে লিফটের সাহায্যে নিচে বাড়ীর একটি মধ্যবর্তী তলায় নামলো . একটি সুন্দর সুসজ্জিত ঘরে তাদের দুজনকে নিয়ে এসে তানিয়া বললো ‘আপনারা আপাতত বিশ্রাম করুন . কিছুক্ষণ পরে আপনাদের ইতিহাস ঘরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে .’ তানিয়া চলে যাবার পর মৈনাক সুজিতকে প্রশ্ন করলো ‘কি ব্যাপার ?ঠিক বুঝতে পারলাম না .’  .সুজিত উত্তর দিলো ‘ইতিহাস ঘর একটা তথ্যের ভাণ্ডার .পৃথিবীর মানুষ সৃষ্টি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সব তথ্য সেখানে রাখা আছে.’বেশ কিছুক্ষণ বাদে একজন তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলো ইতিহাস ঘরে .চারিদিকে অনেক যন্ত্রপাতি .বিশাল মনিটর .তিনজন বয়স্ক লোক তাদের অপেক্ষায় বসে ছিলো.তাদের একজনকে সুজিত চেনে বলল.বিখ্যাত ইতিহাসবিদ.তারা মৈনাকদের যথেষ্ট বিনয়ের সাথে বসতে বলল .প্রথমে একজন সুজিতকে প্রশ্ন করলো তার সাথে মৈনাকের দেখা হলো কিভাবে ?সুজিত সবকিছু যা যা ঘটেছিল সবই বলল.সে পাহাড়ে ঔষধী গাছ খুঁজতে গিয়েছিল.সেখানে মৈনাকের সাথে দেখা .মৈনাকের মুখে প্রাচীন ভাষা শুনে সে অবাক হয়ে যায় .সে মৈনাককে নিজের বাড়ী নিয়ে যায় .সেখানে মৈনাকের কাছ থেকে সব জানতে পারে .তারপর উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এখানে আসার আমন্ত্রণ জানায় .এবং আজ সকালে তারা ফিনিক্সে পৌঁছায়.এবারে সেই বিখ্যাত ইতিহাসবিদ মৈনাককে বললো ‘তুমি কোন  সময়ের এবং কোন দেশের লোক ?’মৈনাক বললো ‘আমি 2016 সাল থেকে এই সময়ে এসেছি. আমি ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ নামের অঙ্গরাজ্যের লোক .’    মৈনাক যখন এইসব বলছিলো সামনের মনিটরে ভারতবর্ষের মানচিত্র এবং তাতে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান দেখাচ্ছিল . এরপর বহু সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল .বিশেষ করে তারা কালচক্রের সম্পর্কে খুঁটিয়ে জানতে চাইছিল .  বিশেষ করে কোন মন্ত্রের সাহায্য নিয়েছিল মৈনাক তা জানতে চাইছিল .মৈনাকের সন্দেহ হওয়ায় এই ব্যাপারটা চেপে গেল শুধু বললো সন্ন্যাসীর নিষেধ আছে . এর পর তারা মৈনাককে একটি অজানা মেশিনের ভিতর শুইয়ে দিল সম্পূর্ণ পরীক্ষা করার জন্য .কিন্তু তারা  অনেক চেষ্টা করেও কোন ছবি তুলতে পারলো না .শেষে বললো আপনাকে ঘিরে এক অজানা  অদৃশ্য রশ্মির বলয় রয়েছে . যা আমাদের সব কিছুকে বাধা দিচ্ছে .আপনারা এখন যান আমরা আপনাদের কাছে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করবো .পুনরায় আপনাদের প্রয়োজন মতো ডেকে পাঠাবো .দুজনে ঘরে চলে এলো.মৈনাক চুপচাপ ছিলো .সুজিত বললো ‘এদের মতলব কি বলতো ? তোমার সেই কালচক্রের ব্যাপারে এরা খুব আগ্রহী মনে হলো .কিন্তু কেন ?তুমি আমার বন্ধু তাই তোমায় একটা পরামর্শ দিচ্ছি ,তুমি এদের ঐ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলো না .’ মৈনাক কোনো উত্তর করলো না . কয়েক দিন তারা ফিনিক্সের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে লাগলো .একদিন তারা গাড়ী চেপে  খাদ্যের জন্য যে জলজ শেওলার চাষ হয় তা দেখতে গেল.বিশাল বিশাল অগভীর চৌবাচ্ছা .সমুদ্রের জলে ভর্তি .তিনটি স্তরে চাষ হয় .প্রথমে সমুদ্রের জলকে চাষের উপযোগী করার জন্য উপকারী ব্যেকটেরিয়া ছড়ানো হয় .কয়েকদিন পর তাতে এক বিশেষ রাসায়নিক দেওয়া হয় যাতে শেওলার দ্রুত বৃদ্ধি হয় .এরপর দ্বিতীয় স্তরে শেওলা ছড়ানো হয়.এই ছড়ানো বা রোপণের বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয় .প্রথমে অল্প একটু জলে শেওলা দেওয়া হয় .একদিন পর সেই শেওলা ভর্তি জল পুরো জল সমগ্র চৌবাচ্ছায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় .তৃতীয় স্তরে এই জলজ শেওলাকে মানুষের খাদ্যের উপযোগী করার জন্য বিভিন্ন খাদ্যগুণ যোগ করা হয় .অবশেষে এই শেওলাকে সংরক্ষণ করে বিভিন্ন মানুষের বসতিতে রপ্তানি করা হয় . এই জলজ শেওলার চাষের অনুমতি সামান্য কয়েকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দ্বীপের আছে.বাকিরা সম্পূর্ণভাবে আমদানি করা খাদ্যের উপর নির্ভরশীল. অনেকটা সময় কাটিয়ে মৈনাকরা ফিরে এলো .যাওয়া আসার সময় মৈনাক গভীর মনোযোগের সাথে এই উড়ুক্কু গাড়ী চালানোর পদ্ধতি লক্ষ্য করছিল.বেশ কয়েকবার দেখার পরে পুরো চালানোর পদ্ধতি মৈনাক বুঝে গেলো .কিছুটা আবার সুজিতের কাছে যেন জানার আগ্রহে প্রশ্ন করছে ,এইভাব দেখিয়ে প্রশ্ন করে জেনে নিলো .মৈনাকের মনে কি আছে তা একমাত্র মৈনাক -ই জানে.       আরো একদিন কেটে গেল.সকালে মৈনাক একটু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করছিল এমন সময় একজন এসে খবর দিল আজ তাদের আবার ইতিহাস ঘরে ডাকা হয়েছে. কিছুক্ষণ বাদে মৈনাক গিয়ে দেখলো আগের তিনজন ইতিহাসবিদ ও আরো একজন আজ উপস্থিত .আজ সুজিত আসেনি .নতুন ব্যাক্তি নিজেই পরিচয় দিলেন যে তিনি রিচার্ড .একজন বিজ্ঞানী . রিচার্ড বললো ‘আমরা আপনার দেওয়া সব তথ্য বিশ্লেষণ করে জেনেছি আপনার দেওয়া তথ্য পঁচাশি শতাংশ নির্ভুল .বাকি পনেরো শতাংশ সম্পর্কে আমরা হয়তো সঠিক জানি না . এখন একটা বিশেষ ব্যাপারে আপনার সহযোগিতা ও দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আপনাকে আজ এখানে ডেকেছি .আশা করি আপনি আমাদের হতাশ ও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবেন না .’ রিচার্ডের ঠাণ্ডা আওয়াজ মৈনাকের বুকে হালকা কাঁপন ধরাল. মৈনাক আস্তে আস্তে বলল ‘বলুন আমি আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি ?’ রিচার্ড কোনো ভণিতা না করে বললো ‘আজ আমাদের জনপদগুলি দেখছেন পৃথিবীর মাটি ছেড়ে মহাসাগরে আশ্রয় নিয়েছে .আজ কয়েকশো বত্সর নিরলস প্রচেষ্টার ফলে আমরা স্বাবলম্বী স্বনির্ভরশীল হয়েছি. কিন্তু ভয়ংকর পরমাণু যুদ্ধের ফলে পৃথিবীর মাটি আজো জীবনধারণের অনুপযুক্ত ও বিপদজনক .এতদিন মানুষের জন্মহার খুব কমে গিয়েছিল.বেশ কয়েক শতাব্দী জন্মহার মৃত্যুহারের থেকেও কম ছিলো .যার জন্য জনসংখ্যা কমতে কমতে পঁয়ত্রিশ কোটি থেকে মাত্র দুই কোটিতে নেমে আসে .আমাদের বিজ্ঞানীরা এর কারণ খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে পরমাণু যুদ্ধের ফলে মানব শরীরে এক বিশেষ জিনের বিকৃতি ঘটে .যা জন্ম দেওয়ার পক্রিয়াকে আভ্যন্তরীণ ভাবে বাধা দেয় .খুশীর কথা এই যে আজ থেকে পন্চাশ বত্সর আগে এক বিজ্ঞানী এই জিনকে রোধ করার ঔষধ আবিষ্কার করে.  আজ যার ফলে পুনরায় মানুষের জন্মহার বাড়ছে.’ জন্মহার বাড়ার সঙ্গে অন্য একটি সমস্যার আমরা সম্মুখীন হয়েছি .এতদিন আমাদের কাছে যে সীমিত সম্পদ ছিলো আমরা তা পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগিয়ে এই দুইকোটি মানুষের জীবনধারণের ব্যবস্থা করছিলাম .কিন্তু এখন প্রতিদিন চাহিদার বৃদ্ধি হচ্ছে এবং সম্পদের ঘাটতি হচ্ছে . এই সমস্যা নিয়ে আমাদের প্রশাসনিক মন্ডলি খুবই চিন্তিত ছিলো .এমন সময়ে আপনি অতীত পৃথিবী থেকে হাজির হলেন .আপনার সম্পর্কে সব তথ্য আমরা বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি আপনি প্রকৃতই অতীতের অতিথি. আমরা চাই আপনি কালচক্রের সব রহস্যভেদ করতে আমাদের সাহায্য করুন.আপনি বলছেন এক সন্ন্যাসী আপনাকে কালচক্রের সাহায্যে এই ভবিষ্যতের পৃথিবীতে পাঠিয়েছে .তাহলে তিনি নিশ্চয় আপনার পুনরায় অতীতে ফেরত যাবার কোনো উপায় আপনাকে বলে দিয়েছেন.আমরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আপনাদের থেকে এগিয়ে থাকলেও এখনো ‘ সময়ভ্রমণ’ এর রহস্য আবিষ্কার করতে পারিনি . আমরা চাই আপনি ঐ রহস্যময় কালচক্রের আহ্বান করুন. আমরা কালচক্রের পরীক্ষা করার পর আপনি আপনার সময়ে ফেরত যেতে পারেন .’  মৈনাক এতক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে ওনার কথা শুনছিলো .এবারে বললো ‘আপনারা আমাকে কয়েকদিন সময় দিন এই সম্পর্কে ভাবার জন্য.তারপরে আমি আমার মতামত জানাবো .রিচার্ড বললো ‘আমি আপনাকে তিনদিন সময় দিলাম .তিনদিন পর আপনাকে পুনরায় ডাকা হবে .আশা করি আপনার সিদ্ধান্ত আমাদের অনুকূল হবে.নতুবা আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো’. মৈনাক নিজের ঘরে চলে এলো.এসে দেখলো সুজিত ঘুমিয়ে পড়েছে.সে নিজের বিছানায় চুপচাপ শুয়ে পড়লো.পুরো দিনটা কোথাও বেরোল না .বিকালে সুজিত কোথায় যেন গেলো.অনেক রাতে ফিরে এলো.রাতে আর কোনও কথা হলো না .সারা রাত  মৈনাক ঘুমোতে পারলো না .বিছানায় ছটফট করলো.একবার মৈনাকের মনে হলো সুজিতও জেগে আছে .ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়লো.ঘুমিয়ে পড়ার আগে মনে মনে ভাবলো যেভাবেই হোক এদের খপ্পর থেকে পালাতে হবে .                    সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন বেশ বেলা হয়ে গেছে .সুজিত বাথরুমে .মৈনাক পাশের বাথরুমে গেলো . বেরিয়ে এসে দেখলো সুজিত জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে.মৈনাকের আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকালো. মৈনাক দেখলো সুজিতের চোখে জল .মৈনাক বললো ‘কি হলো তোমার চোখে জল ?’ সুজিত ধরা ধরা গলায় উত্তর দিলো ‘বন্ধু তোমার খুব বিপদ .তুমি যে কোন ভাবে এখান থেকে পালাও’.মৈনাক প্রশ্ন করলো ‘কেন কি হয়েছে ?’ সুজিত উত্তর না দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মৈনাকের একেবারে কাছে এসে ফিসফিস করে বললো ‘কাল আমাকে তানিয়া ডেকে পাঠিয়ে ছিলো.সেখানে রিচার্ড নামে আরো একজন ছিলো .ওরা যে কোন ভাবে কালচক্রের দখল চায়.  কালচক্রের সাহায্যে অতীতে গিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত্ অনুকূল করার জন্য যে কোন রকম কাজ করার জন্য ওরা প্রস্তুত’ .মৈনাক বললো  ‘ঠিকমত বুঝতে পারলাম না’.সুজিত বুঝিয়ে বললো ‘মনে করো বর্তমানে কেউ একজন তানিয়ার শত্রু ও প্রতিপক্ষ .তানিয়া চায় কালচক্রের সাহায্যে বিনাশক দল পাঠিয়ে তাকে শৈশবেই বিনাশ করতে . তারপর মনে কর অতীতের বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী হস্তগত করতে .এখন ওরা আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে যে কোনও ভাবে আমি যদি এই ব্যাপারে সাহায্য করি তবে আমায় চুরির ভাগ দেবে .মৈনাক তুমি বিশ্বাস করো আমি একজন শিক্ষক .আমার পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের মতো আমি সততার পথে  জ্ঞানের  পথেই চলতে চাই . তুমি আমার বন্ধু .তোমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারবো না’  . মৈনাক বলল ‘কাল আমাকে ডেকে তিনদিনের সময় দেওয়া হয়েছে .বলেছে এই তিনদিনের মধ্যে আমি যেন কালচক্র ওদের হাতে পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য তুলে দিই . নাহলে ওরা কঠোর ব্যবস্থা নেবার হুমকি দিয়েছে . আমি এখান থেকে পালাতে চাই , তুমি আমায় সাহায্য করো’  . সুজিত বললো ‘পালাতে হলে প্রথমেই একটি গাড়ীর দখল নিতে হবে .আমরা দুই প্রকার গাড়িতে ঘোরাফেরা করি . একটি দূরভ্রমণের জন্য .এগুলি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় . এগুলো এই দ্বীপের সীমার বাইরে যেতে পারে .দ্বিতীয় প্রকার গাড়ী কেবল এই দ্বীপের মধ্যে যাতায়াতের জন্য .এগুলি সমুদ্রের এক কি.মি.র মধ্যে এলেই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রকের দ্বারা স্বয়ংক্রিয় ভাবে মাটিতে নেমে আসে .যাতে সমুদ্রের জলে না পড়ে যায় .দুই প্রকার গাড়ী  বাইরে থেকে প্রায় একই প্রকার  দেখতে.কেবল ভিতরে গিয়ে চালু করলে দূর ভ্রমণে র গাড়িতে ‘স্বনিয়ন্ত্রন’ ও সাধারণ গাড়িতে  ‘কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ’ এর চিহ্ন ফুটে ওঠে. আপনাকে পালাতে হলে দূর ভ্রমণের গাড়িতে পালাতে হবে .আজ বিকালে আমাদের এখানে এক উতসব আছে . রক্ষীর সংখ্যা খুব কম থাকবে  . আমি যে কোনও ভাবে আমাদের ঘরের বাইরের দুজন রক্ষী অন্যমনস্ক করবো.আপনি সেই সুযোগে লিফটে উপরে উঠে ছাদে  দাঁড়িয়ে থাকা যে কোনো একটি গাড়ী দখল করে পালিয়ে যাবেন’  . সেই কথামতো বিকালে রক্ষীর সংখ্যা একটু কম হতেই সুজিত হঠাত্ পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো.প্রথমে মৈনাক মনে করছিল এটা সত্যি .কিন্তু সুজিত যখন চোখের ইশারা করে রক্ষীদের ডাকতে বললো ,তখন বুঝতে পারলো এটি মৈনাককে পালাতে সুযোগ করে দেবার জন্য অভিনয়. রক্ষীরা এসে সুজিতকে চিকিত্সার জন্য নিয়ে গেলো .এই সুযোগে মৈনাক দেখলো লিফট ফাঁকা .মৈনাক লিফটে  উঠে ওপরে যাবার বোতাম টিপে দিলো . ছাদে উঠে দেখতে পেল দুটি গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে .একজন রক্ষী অন্যদিকে মুখ করে পাহারা দিচ্ছে . মৈনাক কিছু না ভেবেই সামনের গাড়ীটায় উঠে পড়ে চালু করে দিলো.আকাশে ওঠার পর মৈনাক লক্ষ্য করলো গাড়ীর মনিটরে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের চিহ্ন রয়েছে .তারমানে মৈনাক এই গাড়ী করে এই দ্বীপের বাইরে যেতে পারবে না . কিন্তু মৈনাক ঠিক করলো সে কিছুতেই ওদের হাতে ধরা দেবে না .এদিকে মৈনাকের গাড়ী আকাশে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ষীরা টের পেয়েছে মৈনাক পালিয়েছে .তারা অপর গাড়ীটা করে মৈনাককে ধাওয়া করলো .’ মৈনাক দ্রুত এগিয়ে চললো . পিছনের গাড়ীটাও এগিয়ে আসছে . হঠাত্ মৈনাকের গাড়ী নিচের দিকে  নামতে লাগলো .মৈনাক বুঝলো সামনেই সমুদ্র ,তাই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের সাহায্যে গাড়ী নেমে যাচ্ছে . সন্ধ্যে হয় হয়. মৈনাক গাড়ী থামতেই নেমে সামনের দিকে দৌড়তে শুরু করলো .পিছনের গাড়ীটাও ততক্ষণে নেমে পড়েছে . রক্ষীরা বেরিয়ে মৈনাককে ধরবার জন্য আসতে লাগলো .মৈনাকের সামনে ফাঁকা জায়গা ,তারপর দূরে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে .মৈনাক দৌড়তে দৌড়তে ‘ওম নম শিবায়্’ জপ করতে লাগলো .দ্বীপ ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে .এবারে মৈনাককে গভীর সমুদ্রে গিয়ে পড়তে হবে . মৈনাক জপ থামায় নি .সমুদ্র যখন একেবারে কাছে ঠিক তখন দ্বীপের সীমার দুই হাত দূরে কালচক্র আবির্ভুত হলো .মৈ দেখলো উর্ধ্বদিকে তিনটি মেষ রাশির চিহ্ন একত্রিত হলো .আর মাঝের ফাঁকা অংশ অসচ্ছ হলো . মৈনাক মনে মনে  369 সংখ্যা জপ করতে করতে কালচক্রের মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশের মধ্যে দিয়ে লাফ দিলো .                        মৈনাক তাকিয়ে দেখলো সে একটা পাহাড়ী রাস্তার মধ্যে শুয়ে আছে . রাস্তাটি দূরে একটা গ্রামের মধ্যে গেছে. উল্টোদিকে কিছু লোক এগিয়ে আসছে .  কাছে আসতে দেখলো ভিড়ের মধ্যে তার চার বন্ধুই আছে .প্রবাল দূর থেকে মৈনাককে দেখে চিনতে পেরে  চেঁচিয়ে উঠলো ‘ঐ যে মৈনাক’ .সবাই হৈ হৈ করে  এগিয়ে এসে মৈনাককে ঘিরে ধরলো .প্রবাল বললো ,’তুই কাল হারিয়ে গিয়েছিলিস .কাল সারা রাত তোর জন্য চিন্তা করেছি .আজ সকালে সোটাং গ্রাম থেকে লোকজন নিয়ে তোকে খুঁজতে গিয়েছিলাম .না পেয়ে ফিরে আসার পথে তোকে দেখতে পেলাম .তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলিস  ?’ মৈনাক বুঝতে পারলো ভবিষ্যতে তার বেশ কয়েক দিন কেটে গেলেও বর্তমানে তার মাত্র একদিন কেটেছ. প্রবালের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু বললো ‘এখন বাড়ী চল. পরে বলবো’  . (শেষ )