১৯৪৫সালের জুলাই মাসে পটাসডামের ঘোষণা পত্র অনুযায়ী ১৫ই আগষ্ট জাপান আত্মসমর্পণের জন্য রাজী হলো। এবং সেই অনুযায়ী ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করলো।
আত্মসমর্পণের শর্তাবলী অনুযায়ী জেনারেল ডগলাস ম্যাক আর্থার জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এর উদ্দেশ্যে টোকিওতে আন্তর্জাতিক মিলিটারী ট্রাইব্যুনাল গঠন করলো।
ন্যুরেমবার্গের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধীদের জন্য তৈরি আদালতে র থেকে এই আদালতে র ব্যাতিক্রম হলো এখানে রাষ্ট্র প্রধান বা জাপ সম্রাট কে বিচার প্রক্রিয়ার থেকে নিস্কৃতি দেওয়া হয়েছিল।
এই আদালতে বিভিন্ন দেশের বিচারক মন্ডলীর সাথে ভারতের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিচারপতি ডাঃ রাধা বিনোদ পাল।
আজ ও জাপানী রা অত্যন্ত শ্রদ্ধা র সহিত তার নাম স্মরণ করে থাকেন ।
কেন জানেন ?
অন্যান্য বিচারক মন্ডলীর সাথে তার রায়ে ভিন্ন মত প্রকাশের জন্য।
আইন শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিল।
ন্যুরেমবার্গের অভিযুক্ত জার্মানদের মতো জাপানী দের বিরুদ্ধে ও শান্তি ভঙ্গ ও যুদ্ধের চক্রান্ত, যুদ্ধাপরাধের ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ অনুষ্ঠানে র মতো নানা বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছিল।
কয়েক মাস বিচার চলার পর জেনারেল তোজো ও তার ছয় সঙ্গী র ফাঁসি র আদেশ দেওয়া হয়েছিল। যা ২২ শে ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে কার্যকর হয়।
এই মামলায় ডাঃ রাধা বিনোদ পাল সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে তার রায় দেন।
বিচারপতি মিঃ পাল বিশুদ্ধ আইনের প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন ,এক জাতি কর্তৃক অন্য জাতির উপর সামরিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভূত্ব আন্তর্জাতিক জগতে অপরাধ বলে বিবেচিত ছিল কিনা ?
দ্বিতীয়ত, অভিযোগে বর্ণিত যে সময়ে এই সমস্ত যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল , সেই সময়ে আন্তর্জাতিক আইনে এগুলি অপরাধ জনক ছিল কিনা ? যদি না হয়ে থাকে তবে পরবর্তী কালে আইন প্রণয়ন করে ঐ সব যুদ্ধ কে অপরাধ জনক বলিয়া অভিযুক্ত করা যায় কিনা ?
কিংবা আগ্রাসী বলে বর্ণিত কোন রাষ্ট্রের কোন ব্যাক্তিকে সরকারী ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করার জন্য অপরাধী বলা যায় কিনা ?
ডাঃ পাল বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন অতীতে বৃহৎ রাষ্ট্র গুলো যে কাজ করেছে , জাপান তার চেয়ে বেশী কিছু করে নি।
চুক্তি ও সন্ধির শর্তাবলী ভঙ্গ,অন্য দেশকে রক্ষার নামে নিজের তাঁবে আনা, অর্থনৈতিক প্রভূত্বস্থাপন , যুদ্ধবন্দী নারী ও শিশুদের উপর অত্যাচার ও বর্বরতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়েছে(এগুলি এখনো হয়ে চলেছে )।
জাপান ও সোভিয়েত রাশিয়া বন্ধু থাকা কালীন কমিউনিস্ট রাশিয়া র ডিক্টেটর ষ্ট্যালিন মিত্র শক্তি র সাথে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণার চুক্তি করে।যা একই প্রকার অপরাধ।
ডাঃ পাল তার রায়ে লেখেন ,পার্ল হারবার আক্রমণের আগে জাপানী রাষ্ট্র দূত নমূরা চীন ও অন্যান্য প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি পূর্ণ আলোচনা দ্বারা মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছিল। এবং ঐ একই সময়ে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের পক্ষ থেকে ই যুদ্ধের তোড়জোড় চলছিলো।
বিচারপতি ডাঃ রাধা বিনোদ পাল তার সুদীর্ঘ রায়ে যুক্তিসহকারে আন্তর্জাতিক মিলিটারী ট্রাইব্যুনাল এ অভিযুক্ত সব জাপানী নেতাকে নির্দোষ বলে সাব্যস্ত করেন ও মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু এটা ছিল মাইনরিটি বা একক রায়। মেজরিটি বিচারক মন্ডলীর রায়ে আসামীরা দোষী সাব্যস্ত হন। এবং বিভিন্ন প্রকার দন্ডে দন্ডিত হন।
ডাঃ রাধা বিনোদ পাল মন্তব্য করেছেন যা আজও যুগোপযোগী , “বিজয়ী পক্ষ কখনো বিজিতকে ন্যায় বিচার দিতে পারে না। কারণ আদালত যদি রাজনীতির মধ্যে শিকড় গেড়ে বসে , তবে ন্যায় বিচারের যতই মুখোস পরানো হোক না কেন, 'তখন ন্যায় বিচার শুধুই বলশালী পক্ষের স্বার্থ সিদ্ধির ব্যাপারে পরিণত হয় মাত্র।’ ”
No comments:
Post a Comment