Crss colum

Friday, August 30, 2019

রক্ষক ৫

                (৭)

হিমালয়ের গোপন উপত্যকা।
সময় - ২০২৯ সাল।
সূর্যোদয় থেকেই ময়ূরী একটানা কেঁদে চলেছে।আজ আদিত্য র জন্মদিন।আজ আদিত্য এগারো  বছরে পড়বে।আজ ময়ূরীর আদিত্যকে ছেড়ে যাওয়ার দিন। 
আদিত্যর বাবা সুধন্য  কিছুদিন আগেই মারা গেছেন।ছেলেটা এখনো সব কথা জানে না। শুধু জানে বাবা আর কখনো দেশ থেকে ফিরবে না।
সুধন্য কয়েক দিন যাবৎ বলছিলো অনেক দিন বাড়ীর লোকজনদের সঙ্গে দেখা হয় নি। একবার দেখা করতে যাবে। বেশ কয়েকবার সুধন্য বাড়িতে যাওয়ার কথা বলায় ময়ূরী একপ্রকার বাধ্য হয়েই সুধন্যকে সকলের অগোচরে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। কথা ছিলো দশম দিনের মাথায় রাতের অন্ধকারে আবার সুধন্য কে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।সুধন্য কে বিবাহ করার পর ময়ূরীর সঙ্গে সুধন্যর এক মানসিক যোগসূত্র তৈরী হয়েছিল।সুধন্যর কথা মনে করলে বা সুধন্যর বিপদ অথবা খুশী র মূহুর্ত গুলো ময়ূরী তার তৃতীয় নয়ন স্বরূপ শূন্য মণি তে দেখতে পেতো। সুধন্য যাওয়ার অষ্টম দিন রাত্রে ময়ূরী ছেলে আদিত্য কে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে এমন সময় হঠাত ময়ূরীর তৃতীয় নয়ন স্বরূপ শূন্য মণিতে সুধন্য ভেসে উঠলো। সুধন্য ভেসে উঠলো বলার চেয়ে বলা ভালো সুধন্য সেই মূহূর্তে যা দেখছিলো তা ভেসে উঠলো।
একটা নির্জন রাস্তা।মনে হলো সুধন্য হেঁটে চলেছে।আলো আঁধারী ভরা সেই রাস্তায় সুধন্য একা হেঁটে চলেছে। আচমকা পিছন থেকে একটা তীব্র আলো। সেই সঙ্গে জোরালো হর্ণের আওয়াজ। ময়ূরী এটুকু দেখেই চীৎকার করে বললো "সুধন্য সরে যাও।"
কিন্তু তার কথা শেষ হবার আগেই আলোটা তীব্র বেগে এসে পড়লো সুধন্যর উপর। একটা জোরসে ব্রেক মারার শব্দ।তারপরেই অন্ধকার।
সেই রাতেই ময়ূরী উড়ে গিয়েছিল সুধন্যর বাড়ি।  সূর্যোদয়ের মূহুর্ত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলো সুধন্যর বাড়ির কাছেই।আড়াল থেকে দেখেছিলো সুধন্যর মৃতদেহ।সবার অগোচরে গুমরে গুমরে কেঁদে ছিলো। শশ্মানে চিতার আগুনে  ছাই হতে দেখেছিলো তার প্রিয় স্বামীকে।সুধন্যর বড়দা অরণ্য কাঁদছিলো আর বলছিলো "হতভাগা বিয়ে করে সংসার করেছিলো। কিন্তু একবারও তার পরিবারের ঠিকানা দিলো না।তারা হয়তো জানতেই পারবে না যে সুধন্য আর নেই।"
ময়ূরী এই সব শুনে একবার ভেবে ছিলো তক্ষুনি গিয়ে সব পরিচয় দেবে। কিন্তু না। শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়েছিলো এই ভেবে যে তার পৃথিবীতে আসার উদ্দেশ্য তাতে বিঘ্নিত হবে।
সেদিন অনেক রাত্রে তার বাড়িতে ফিরে আসে ময়ূরী। মাকে দেখতে পেয়ে ছোট্ট আদিত্য দৌড়ে এসে মাকে বলেছিলো "মা তুমি কোথায় গিয়েছিলে ? আমার খুব খিদে পেয়েছে।"
সেই রাতে ময়ূরী পুনরায় আদিত্য কে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলো। আদিত্য মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলেছিলো "মা , তুমি কাঁদছো কেন ? বাবা কবে আসবে ?"
ময়ূরী ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলো ,"তোমার বাবা দূর দেশে ঘুরতে গেছে।আর ফিরবে না।"
আদিত্য বলেছিলো "এটা বাবা অন্যায় করেছে।একা একা বেড়াতে গেছে। তুমি দেখো বাবা এলে আমি একটাও কথা বলবো না।"

এসব প্রায় এক বছর আগের কথা। আজ ময়ূরীর চলে যাওয়ার দিন। আদিত্য কে কয়েকদিন থেকেই বুঝিয়ে রেখেছে যে সে এবার বড়ো হয়েছে। এবার তার গুরুমহাশয়ের কাছে শিক্ষা নেওয়ার দিন শুরু। তাকে গুরু মহাশয়ের কাছে গিয়ে থাকতে হবে। প্রথমে ছোট্ট আদিত্য মাকে ছেড়ে যেতে রাজী হচ্ছিল না। শেষে মা ছেলের অনেক মান অভিমানের পর আদিত্য মাকে ছেড়ে যেতে রাজী হয়েছে।
ময়ূরী আদিত্যকে কোলে নিয়ে ঘরের সামনে খোলা উঠোনে অপেক্ষা করছিলো।এমন সময় আদিত্য দেখালো দূর হতে কি যেন উড়ে আসছে।
আরেকটু কাছে আসার পর বোঝা গেলো ওটা একটা যান। যানটি  উড়ে এসে ওদের বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় নামলো।যানটি গোলাকৃতি ।যানটি নামার পর একটি দরজার মতো অংশ দেখা গেলো। সেই অংশ দিয়ে এক সাদা জোব্বা পরিহিত বৃদ্ধ বের হয়ে এলেন।
বৃদ্ধ লোকটি ময়ূরী র সামনে এসে হাত জোড় করে নমস্কার করে বললেন "আমি তমোঘ্ন। আপনার পুত্রকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য নিতে এসেছি। উনি জন্ম গ্রহণ করার পূর্বে আমাকে তেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন।"
ময়ূরীর চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছিলো। ময়ূরী জাতিতে কঠিন হৃদয় মাতৃকা হলেও আসলে একজন মা।আর মায়ের কাছে সন্তান মানে শরীরের অংশ, হৃদয়ের টুকরো। তাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবেই। তবুও কর্তব্য আর ভবিষ্যতের চিন্তা তার মনটা শক্ত করে তুললো।
শান্ত স্বরে ময়ূরী বললো "আমি কি পুত্রের সঙ্গে একদম দেখা করতে পারবো না ।"
তমোঘ্ন উত্তর দিলো "নিশ্চয়ই পারবেন। তবে বছরে একবার। প্রতি বৎসর মাঘ মাসের পূর্ণিমা হতে চৈত্র মাসের পূর্ণিমা পর্যন্ত আপনি সন্তান কে নিজের কাছে রাখতে পারবেন। আমি  বা অন্য কোনো শিক্ষক আপনার পুত্র কে ঐ সময় আপনার কাছে পৌঁছে দেবে এবং নির্দিষ্ট দিনে আবার পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। 
মাতা , তবে আমায় অনুমতি দিন।"
ময়ূরী আদিত্য কে চুমু খেয়ে বললো "তুমি আজ থেকে ওনার কাছে থাকবে। ওনার প্রত্যেকটি আদেশ ,আমার আদেশ মনে করে শুনবে। নিজেকে উপযুক্ত করে তোলো। ভবিষ্যতে তোমাকে অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে।"
তারপর মা ও ছেলে অনেকক্ষণ গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। শেষে ময়ূরী নিজেকে অনেক কষ্টে  ছাড়িয়ে নিয়ে তমোঘ্ন কে বললো "আমি আগে চলে যাই । তারপর আপনি আমার পুত্রকে নিয়ে রওনা দেবেন।"
তমোঘ্ন বললেন "তবে তাই হোক।"
ময়ূরী ধীরে ধীরে কিছুটা উচ্চতায় নিজেকে তুলে নিয়ে আদিত্য র উদ্দেশ্যে বললো "পুত্র এখন থেকে মাকে ছেড়ে তোমার একলা চলা শুরু। ভালো থেকো। বিদায়।"
এই বলে ময়ূরী বহুদূরে উড়ে চলে গেলো।
তমোঘ্ন ও আদিত্য ময়ূরী আকাশে মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সেই দিকে তাকিয়ে রইলো।
অবশেষে তমোঘ্ন আদিত্যর হাত ধরে বললো "চলো বৎস ,এবারে আমরা যাত্রা শুরু করি"।


              (৮)

নিউ দিল্লী
সময় - ২০৩১ সাল
পৃথিবীর সব বিশিষ্ট বিজ্ঞানী , সামরিক উপদেষ্টা,ও সব রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণের  সম্মেলনের শেষ দিন।
সবার বক্তব্যের শেষে বিশিষ্ট মহাকাশ বিজ্ঞানী পদ্মনাভ বললেন " সব দেশ থেকে আগত বন্ধুরা,আজ পৃথিবীকে তথা প্রাণের অস্তিত্ব কে বাঁচাবার সঙ্কল্প নিয়ে আমরা একজোট হয়েছি।গত বছর জি ৮ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার পৃথিবীকে রক্ষা করার উপায়  বের করতে বিজ্ঞানী দের অনুরোধ করেছিলেন। কুড়ি জন শ্রেষ্ঠ মহাকাশ বিজ্ঞানী নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানী ও মানুষ জনের কাছে মতামত ও প্রস্তাব আহ্বান করেছিলাম। আপনারা শুনলে খুশি হবেন পৃথিবীকে বাঁচাবার উপায় সম্বলিত প্রায় দশ হাজার প্রস্তাব আমাদের কাছে ই-মেইল মারফত জমা হয়।এই সব প্রস্তাবকারী দের মধ্যে বড়ো মাপের বিজ্ঞানী হতে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সকলেই ছিলো। তাদের সকলের প্রস্তাব আমরা সকলেই বিচার বিবেচনা করে তার মধ্যে থেকে আমরা দুটি প্রস্তাব কে চূড়ান্ত করেছি।এখন সময় হয়েছে এই দুটির মধ্যে থেকে যে কোনো একটাকে বেছে নেওয়ার।
আমি দুটি প্রস্তাব আপনাদের কাছে সংক্ষেপে পড়ে শোনাচ্ছি।
প্রথম প্রস্তাব টি করেছেন বিখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী বর্তমানে নাসায় কর্মরত এডুইনা ফেলিক্স।
তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন একটি ছোটো মহাকাশচারী দল পৃথিবীর দিকে আগত গোলক  SE 690A37 ,যেটাকে মিডিয়া নাম দিয়েছে " শয়তানের চোখ" সেটির ওপর অবতরণ করে  ওটার মধ্যে ২০০ ফুট ড্রিল করে একটা ১৫০ মেগাটনের পরমাণু বোমা ফিট করে বিস্ফোরণ ঘটানো।কারণ  "শয়তানের চোখের "উপরিতলে কোনো বিস্ফোরণ ঘটালে ঐ তিরিশ কিমি ব্যাসার্ধ যুক্ত গোলোকের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা সকলেই এই প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করে দেখেছি এটি টেকনিক্যালি সঠিক। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের কাছে সময় খুব অল্প। এতো অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ নিয়ে ঐ ধরনের দূরন্ত গতিতে ছুটে আসা বস্তুর উপর ল্যান্ড করা এবং পাথরের ওপর ২০০ ফুট ড্রিলিং করার টেকনোলজি প্রস্তুত করা অসম্ভব। এই ধরনের পরিকল্পনা র জন্য কম পক্ষে কুড়ি বৎসর প্রয়োজন। অথচ আমাদের কাছে সময় রয়েছে মেরে কেটে দশ বছর। এই সময়ের মধ্যেই " শয়তানের চোখ" কে ধ্বংস করে দিতে হবে। পৃথিবীর খুব কাছে চলে এলে সেটা  ধ্বংস করা অসম্ভব এবং তখন ধ্বংস করলেও তার টুকরো গুলো পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে ধ্বংস লীলা চালাবে।
তাই এই প্রস্তাব টি আমরা বাতিল করেছি।


এবার আসি দ্বিতীয় প্রস্তাবের কথায়। এই প্রস্তাব টি করেছেন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র  রোহন।
রোহন পিওর ফিজিক্স নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি করছে ।
রোহনের প্রস্তাব অনুযায়ী পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রে ঢোকার চার লক্ষ কিলোমিটার আগে আমরা যদি  "শয়তানের চোখের "একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে একই সাথে ১০০ মেগাটন ক্ষমতার চারটি পরমাণু বোমা একই সময়ে একটি নির্দিষ্ট কোণ হতে বিস্ফোরণ ঘটাই তবে সেই বিস্ফোরণের ধাক্কায় ওটার গতিপথে পৃথিবীর সঙ্গে ছয় ডিগ্রি কোণ সৃষ্টি হবে। এবং বস্তুটি পৃথিবীর উপর না এসে সোজা শুক্র গ্রহের উপর পড়বে।রোহন রীতিমতো অঙ্ক কষে বিস্ফোরণের ফলে কতটা শক্তি উৎপাদন হবে এবং কিভাবে পৃথিবীর সঙ্গে কোণ সৃষ্টি হবে এই সবের একটা কম্পিউটারে ইলাস্ট্রেশন করে পাঠিয়েছেন। যারা সেই ইলাষ্ট্রেশন টি দেখতে আগ্রহী তারা আমাদের ইসরো ও নাসার ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখে নিতে পারেন। তবে একটি সাবধান বাণী রোহন দিয়েছে।সেটি হলো চারটি পরমাণু বোমা একই সঙ্গে বিস্ফোরিত হওয়া চাই ।নচেৎ "শয়তানের চোখের " গতিপথের কোনো পরিবর্তন হবে না। সামান্য আগুপিছু হলে এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে।

এই পরিকল্পনা টি বিভিন্ন দেশের সরকার  , স্পেস এজেন্সি ও সামরিক উপদেষ্টা মন্ডলীর সঙ্গে আলোচনা করে রূপদান করতে ব্রতী হয়েছি।
আমেরিকান সরকার ,ভারত সরকার, রাশিয়ার সরকার ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন আলাদা আলাদা ভাবে চারটি পরমাণু বিস্ফোরক বহনকারী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সক্ষম রকেট সরবরাহ করবে। সমগ্র কর্মকাণ্ড টি এই কুড়ি জনের  বিজ্ঞানী দল ও রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে পরিচালিত হবে।২০৪০ সালের জানুয়ারি মাসে এই কর্মসূচি রূপায়িত হবে। এই কর্মকান্ডের ব্যয়ভার সব দেশই বহন করবে।
এই কর্মকাণ্ডের নামকরণ করা হয়েছে  "মিশন লাইফ"


(বাকি অংশ পরের পর্বে।পরের পর্বের নোটিফিকেশন পেতে আমায় অনুসরণ করুন।)

Tuesday, August 27, 2019

রক্ষক ৪

                  (৬)
আরেসিবো মানমন্দির।
পুয়ের্তো রিকো।
সময় - ২০২৯ সাল।
[     তথ্যসূত্র -( উইকিপিডিয়া)  ইংরেজি ভাষায়: Arecibo Observatory) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকোর আরেসিবো শহরে অবস্থিত একটি বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র। ৩০৫ মিটার ব্যাসের এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি পৃথিবীর বৃহত্তম একক এন্টেনা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের (জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা) সহায়তায় ১৯৬০-এর দশক থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি এই মানমন্দিরটি পরিচালনা করে। এর অন্য নাম ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড আয়োনস্ফেয়ার সেন্টার বা NAIC, অর্থাৎ "জাতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও আয়নমণ্ডল গবেষণাকেন্দ্র"। অবশ্য NAIC একটি সংস্থার নাম যারা মানমন্দির এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্নেল ইউনিভার্সিটির সবগুলো দপ্তর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত।

এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শাখায় গবেষণা পরিচালিত হয়: বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবহবিজ্ঞান এবং সৌর পদার্থবিজ্ঞান। সৌর জগতের বস্তুগুলোকে রেডারের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করতে এটি ব্যবহার করা হয়। যেসব বিজ্ঞানী এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করতে চান তাদেরকে প্রথমে প্রস্তাব পেশ করতে হয়, সেই প্রস্তাব একটি স্বাধীন বোর্ডের বিচারে উপযুক্ত বিবেচিত হলে তিনি অনুমতি পান।  ]


উইলিয়ামের আজ মেজাজ ভালো নেই ।আসার সময় লরার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে।সামনেই ক্রিসমাস।লরার ইচ্ছা এবার ক্রিসমাসের ছুটিতে ওর বাবা মায়ের কাছে নিউ ইয়র্কে যাবার ।আর উইলিয়ামের ইচ্ছা ক্যালিফোর্নিয়া ঘুরতে যাওয়ার।সদ্য দুই বছর হলো বিয়ে হয়েছে দুজনের। এখনো ছেলে পুলে হয়নি।এই তো ঘোরাঘুরি করার সময়।তা না করে শ্বশুর শাশুড়ির কাছে গিয়ে ক্রিসমাসের ছুটিটা বরবাদ করার কোনো মানে হয় ? এদিকে লরার মনে কষ্ট দিয়ে জোর করে অন্য কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না।
কম্পিউটারের সামনে বসে উইলিয়াম এই সব চিন্তাই করছিলো। সামনে স্ক্রীনে সুদূর মহাকাশ থেকে বিভিন্ন ডাটা আপলোড হয়েই চলেছে। কম্পিউটার সেগুলো নিজে নিজেই অ্যানালাইসিস করে একপাশে রেজাল্ট শো করে অটোমেটিক সেভ করে নিচ্ছে। উইলিয়ামের কাজ নতুন কিছু দেখলে সেটা বিশ্লেষণ করে সকালে সুপারের কাছে রিপোর্ট পেশ করা। কিন্তু নতুন কিছু তো আর রোজ রোজ ঘটে না। দিনের পর দিন একই রিপোর্ট পেশ করতে হয়। বাইরের লোক মনে করেন কতই না রোমাঞ্চকর কাজ। আসলে ঐপুরোটাই বোরিং। দিনের পর দিন একই কাজ।বছর দুয়েক আগে অবশ্য উইলিয়াম একটা নতুন ধুমকেতু দেখতে পেয়েছিলো। সেটাও ছিল এমনই নাইট শিফট। উইলিয়াম ঘড়ি দেখলো । রাত খুব বেশী হয় নি।লরা নিশ্চিত এখনো ঘুমায় নি । কম্পিউটারে বসে নিশ্চিত লেখালেখি করছে।লরা একজন ফ্রী ল্যান্সার আর্টিকেল লেখক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মহাকাশ নিয়ে লেখালেখি করে। এই লেখালেখির সুত্রেই উইলিয়ামের সঙ্গে ইন্টারনেটে আলাপ। দুজনের কমন ইন্টারেস্ট এক হওয়ায় আলাপ গাঢ় হতে বেশী সময় লাগে নি। তারপর কিছুদিন একসাথে ঘোরাঘুরি শেষে বিয়ে। উইলিয়াম লরাকে খুব ভালোবাসে।লরার ইচ্ছে কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।লরার মনে দুঃখ যাতে না হয় এমন কোনো উপায় আছে কি ?
শেষ পর্যন্ত চিন্তা করে একটা উপায় বার করলো।
পকেট থেকে মোবাইল টা বার করে লরাকে ফোন লাগালো। ওদিকে রিং হচ্ছে। একটা পুরনো সিনেমার গান  "এভরিডে আই …" কলার টিউন হিসেবে বাজছে। সিনেমা টি টাইটানিক। গতবার যখন উইলিয়াম নিউইয়র্ক গিয়েছিল তখন একটা মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা টি দেখেছিলো। দারুন রোমান্টিক সিনেমা। খুব ভালো লেগেছিল।
রিং টা অনেকক্ষণ ধরে বাজার পর লরা ধরলো।   

ধরেই বললো "সরি সুইট হার্ট,একটু টয়লেটে ছিলাম।"
উইলিয়াম বললো ,"আচ্ছা ,এক কাজ করলে হয় না? 
ক্রীসমাসের ছুটিটা আমরা ক্যালিফোর্নিয়া কাটিয়ে নিউ ইয়ার টা নিউইয়র্কে তোমার বাবা মায়ের কাছে কাটাবো।"
লরা বললো "এটা দারুন হবে। তবে তাই করবো।"
এই কথা গুলো শুনতে শুনতে উইলিয়ামের চোখ গিয়ে পড়লো কম্পিউটারের স্ক্রিনে। সেখানে কিছু জটিল ডাটা ফুটে উঠেছে। কিছু অজানা তথ্য ভিড় করছে কম্পিউটারের স্ক্রিনে।
উইলিয়াম দ্রুত লরাকে বললো "সুইট হার্ট এখন রাখছি। কম্পিউটারে যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটি যদি আমার ভাবনা অনুযায়ী ঠিক হয় , তবে আমি বিখ্যাত হতে চলেছি। "
লরা বললো "কি দেখছো? "
উইলিয়াম বললো "এখনি বলবো না।আরো একটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর জানাবো। রাখলাম।"
মোবাইল টা বন্ধ করে উইলিয়াম মনোযোগ দিলো কম্পিউটারের স্ক্রিনে।আরো কিছুক্ষন বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ফোন লাগালো সুপারের কাছে।
সুপার ঘুমোচ্ছিলেন। রিং হতে ঘুম চোখে বিছানার পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে বললেন "হ্যালো "।
উল্টো দিক থেকে উইলিয়াম হড়বড় করে বলে উঠলো "স্যার একটা নতুন খবর আছে । একটা বিরাট মহাজাগতিক অবজেক্ট সোজা পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ আগে আমি সেটাকে ট্র্যাক করেছি। পৃথিবী মনে হয় ধ্বংস হয়ে যাবে।"
সুপার বললেন "কবে পৃথিবীতে এসে পড়বে মনে হয়? "
উইলিয়াম বললো "স্যার সঠিক তারিখ এখুনি বলতে পারছি না । তবে মোটামুটি বারো বছর পরে।"
সুপার একটু রেগে গিয়ে বললেন "বারো বছর বাদেই যদি পৃথিবী ধ্বংস হবে , তবে আমার কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে এখনি শোনাবার কি দরকার ছিলো ? যত্তসব"।
সুপার ফোনটা রেখে দিলেন।
উইলিয়াম একটু হতাশ হলো। স্যার ঠিক ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না।
যাই হোক উইলিয়াম একটা ডিটেইলস রিপোর্ট তৈরী তে মন দিলো।কাল সকালে সুপার এলে পুনরায় সব বুঝিয়ে এই রিপোর্ট টা দেখাতে হবে।


তিন মাস পরের কথা।

নিউইয়র্ক টাইমস কাগজের হেডলাইন ' ধ্বংসের পথে পৃথিবী'।
বিশেষ সংবাদদাতা : আজ আরেসিবো মানমন্দির কতৃপক্ষ একটি নিউজ  বুলেটিনে জানিয়েছেন যে তারা মধ্য মহাকাশে একটি অজানা বস্তু পিন্ডকে ট্র্যাক করেছেন এবং তার গতিপথ বিশ্লেষণ করে জেনেছেন যে সেটা সোজা পৃথিবীতে এসে আছড়ে পড়বে। পৃথিবীর সাথে ঐ অজানা বস্তু টির সংঘর্ষ হবে ২০৪২ সালের ২০ শে জানুয়ারি।ঐ অজানা বস্তু টি প্রথম আবিষ্কার করেন উইলিয়াম নামের এক তরুণ মহাকাশ বিজ্ঞানী।তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই বস্তু টি প্রায় ৩০ কিমি ব্যাস যুক্ত গোলোক।এই বিশাল গোলোক টি যদি পৃথিবীতে আছড়ে পরে তবে পুরো পৃথিবী নিশ্চিত ভাবে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।
আরেসিবো মানমন্দির কতৃপক্ষ তাদের রিপোর্টের একটি কপি সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। আগামী মাসে জি ৮ সম্মেলন আছে। আশা করা হচ্ছে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টি নিয়ে ঐ সম্মেলনে আলোচনা হবে।
নিউইয়র্কে র সাধারণ মানুষ অবশ্য এই ধরনের রিপোর্ট কে পাত্তা দিতে রাজী নয়।তারা এর চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে আগামী মাসে আসন্ন বেসবলের ওয়ার্ল্ড কাপ কে।
তাদের বক্তব্য এই ধরনের পৃথিবী ধ্বংসের খবর অনেকবার সামনে এসেছে। কিন্তু পৃথিবী বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই খবর টিও পরে জানা যাবে ভুল তথ্য ছিলো।

আরো এক মাস পরের কথা।
নিউইয়র্ক টাইমস :
পৃথিবী জুড়ে এক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে । সারা পৃথিবীর বিভিন্ন মানমন্দির কতৃপক্ষ ও স্পেস এজেন্সির মারফত নিশ্চিত জানা  গেছে সত্যি সত্যিই এই গোলোক আকৃতির বিরাট অবজেক্ট পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে চলেছে। এই টি পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর অংশে আছড়ে পড়বে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এটি আছড়ে পড়া মাত্রই সমগ্র আফ্রিকা , ইউরোপ ও অর্ধেক এশিয়া সংঘর্ষ জনিত কারণে সেই মূহূর্তে ই ধ্বংস হবে। তারপর বিরাট সুনামী আছড়ে পড়বে পৃথিবীর বাকি অংশে। সেই সঙ্গে হবে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে অনুভূত হবে কুড়ি রিখটার স্কেলে র ভয়াবহ ভূমিকম্প। এই সংঘর্ষ জনিত কারণে বিশাল ধূলিকণা ও বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাস মহাকাশে উত্থিত হবে এবং বলয়াকারে পৃথিবীকে আগামী দশ বছর ধরে ঘিরে রাখবে যার কারণে পরবর্তী  দশ বছর সূর্যের আলো পৃথিবীতে প্রবেশ করবে না।যার ফলে নিরানব্বই শতাংশ উদ্ভিদ সূর্যের আলোর অভাবে মারা যাবে।
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন তারা আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জি ৮ সম্মেলনে এই সমস্যার সমাধানে কথা বলবেন। উক্ত সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নির্বাচিত কিছু মহাকাশ বিজ্ঞানী ও সামরিক উপদেষ্টা সচিব কে  ডাকা হয়েছে।জি ৮ ভূক্ত সবচেয়ে নবীনতম সদস্য দেশ ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ইসরোর বিজ্ঞানী পদ্মনাভ ও চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ অরূপ রায় প্রধানমন্ত্রী র সঙ্গে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
বাকি দেশগুলো নির্দিষ্ট করে কিছু না জানালেও ধরে নেওয়া যায় তাদেরো বড়ো বড়ো বিজ্ঞানী ও সামরিক উপদেষ্টা এই সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করবেন।


Tuesday, August 20, 2019

রক্ষক ৩


                      (৫)
অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেকিং রুট।
নেপাল।
সময় - ২০১৬সাল।
সোলো ট্রেকিং বা একাকী ট্রেকিং করতে সুধন্যর বেশী ভালো লাগে।
গ্রুপ ট্রেকিং এর আগে অনেক করেছে। কিন্তু সোলো ট্রেকিংয়ের রোমাঞ্চ ই আলাদা। পরিচিত এক বন্ধু র কাছে সুধন্য প্রথম অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেকিংয়ের কথা শোনে। তারপর ইন্টারনেট ঘেঁটে ডিটেইলস নিয়ে যাত্রা শুরু।
সুধন্যর মতো বাউন্ডুলে স্বভাব তাদের বাড়ির আর কারো নেই।সুধন্যরা দুই ভাই।সুধন্য ছোটো।বড়দা অরণ্য ব্যবসা ছাড়া কিছুই বোঝে না। তবে হ্যাঁ সুধন্যকে খুবই ভালোবাসে।সুধন্য যখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় তখন সুধন্যর বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। সেই থেকেই সুধন্যর চেয়ে দশ বছরের বড় অরণ্য  পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরে। কিছুদিন পরেই সুধন্যর মা ও মারা যায়। সেই থেকে দাদা বৌদি সুধন্যকে বাবা মায়ের স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছে।সুধন্যর আবার বেড়াবার নেশা। কিছুদিন বাড়িতে থাকলেই বোরিং লাগে।ব্যস তারপর একদিন পাততাড়ি গুটিয়ে বেরিয়ে পড়া। ভ্রমণ ছাড়া আর একটা নেশা আছে।বই পড়া।সব ধরনের বই পড়লেও  সবচেয়ে ভালো লাগে ইতিহাস পড়তে।কতো রাজ রাজাদের কাহিনী , প্রাচীন কালের মানুষের কথা, পুঁথি পত্র , এই সবকিছু তাকে নস্টালজিক করে তোলে।ঐ সব প্রাচীন কাহিনী পড়ে আর মনে মনে ভাবে , যদি ঐ যুগে সে যেতে পারতো তবে কতই না রোমাঞ্চকর হতো।
সুধন্যর ঠাকুর্দার বাবা ছিলেন বিখ্যাত ইতিহাস বিদ।কতো পুঁথি পত্র ব্যাক্তিগত ভাবে সংগ্রহ করেছিলেন। ওনার মৃত্যুর আগে তার সব সংগ্রহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করে দেন। শুধু একটা পুঁথি ও তার অনুবাদ তিনি সিন্দুকে রেখে দিয়েছিলেন। সেই পুঁথি ও তার অনুবাদ এখনো তাদের পরিবারে আছে। দাদার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সুধন্য একবার পুঁথির অনুবাদ টি পড়ে দেখেছে।যতোসব আজগুবি কথা লেখা আছে। লেখা আছে পৃথিবীর জীব জগত নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে।আর ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারে এক অর্ধ মানব। সেই অর্ধ মানব নাকি তিন গুপ্ত কূপে অবগাহন করে সৃষ্টির তিন তত্ত্ব থেকে শক্তিশালী হয়ে এবং এক অপার্থিব অস্ত্রের অধিকারী হবে। তারপর সেই অর্ধমানব পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে।
যতো রাজ্যের আজগুবী কথা।সুধন্য এই সব লেখার এক বিন্দুও বিশ্বাস করে নি।
ওনার পরের প্রজন্ম অর্থাৎ সুধন্যর ঠাকুরদা ও সুধন্যর বাবা পড়াশোনার বদলে ব্যবসা করে অর্থ রোজগার করায় বেশি আগ্রহী ছিলেন।আজ তাদের দুজনের চেষ্টায় এক বিশাল জুয়েলারী কোম্পানি তৈরী হয়েছে। সারা ভারতে তাদের বিভিন্ন শাখা রয়েছে।সুধন্যর আবার পড়াশোনা ও ঘোরাঘুরি করার নেশা। সবচেয়ে ভালো লাগে পাহাড়।পাহাড়ী পথে একা একা হাঁটার মজাই আলাদা।
এই অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেকিং রুটের রোমাঞ্চকর পথের বর্ণনা শুনে মনে মনে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলো আসার জন্য।আজ এখানে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছে যেটুকু বন্ধুর মুখে শুনেছিলো সেটা অনেক কম । এখানে রোমাঞ্চ আরো বেশি।
 সরু পাহাড়ী রাস্তার একদিকে অতলস্পর্শী খাদ । অন্যদিকে খাড়া পাহাড় ।একটু পা ফসকালেই মৃত্যু। তার ওপর ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে। বিকাল হয়ে গেছে। সন্ধ্যার আগেই গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে।
সুধন্য একটু দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো।
ঘটনাটা ঘটলো তার পরেই। একটা আলগা পাথরের উপর পা পড়তেই পাথরটি নড়ে উঠলো।টাল সামলাতে না পেরে সুধন্য খাদের দিকে পড়ে গেলো। হাতের কাছে থাকা দুই একটা ঝোপঝাড় ধরে নিজের পড়ে যাওয়া রোখার চেষ্টা করলো। কিন্তু বিধি বাম। নিজেকে পতনের হাত থেকে রুখতে পারলো না। আজকে মৃত্যু নিশ্চিত। কয়েক সেকেন্ড পতনের পর সুধন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। তবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার আগের মূহূর্তে মনে হলো কেউ একজন উড়ে এসে তার শরীর কে লুফে নিলো।

চোখের পাতাটা খুব ভারী লাগছে। তবুও ধীরে ধীরে সুধন্য চোখ মেললো। একটা সুরেলা কন্ঠ বলে উঠলো "আপনি এখন একটু ঘুমোবার চেষ্টা করুন।"
তবুও সুধন্য চোখ খুললো। একটি আবছা মহিলা মূর্তি সুধন্যর দিকে তাকিয়ে আছে। ধীরে ধীরে দৃষ্টি পরিস্কার হয়ে এলো।সুধন্য দেখলো একটা কাঠের তৈরী বাড়ীতে সে রয়েছে।তার বিছানার পাশে এক সুন্দরী কম বয়সী মহিলা বসে রয়েছে। সেই মহিলা আবার বললো "আপনি একটু ঘুমোবার চেষ্টা করুন।"
সুধন্য বললো "আমি কোথায় ? আমার কি হয়েছে ?"
মহিলা উত্তর দিলো "আপনি  পাহাড়ের খাদে পড়ে গিয়েছিলেন। আমি আপনাকে তুলে আমার ঘরে নিয়ে এসেছি।"
সুধন্য বললো " আপনি কে ? এটা কোন জায়গা ?"
মহিলা বললো "আমি ময়ূরী । আপনি এখন মধ্য হিমালয়ের এক গোপন উপত্যকায় রয়েছেন। এখানে আমি ভিন্ন অন্য কোনো প্রাণী নেই।"
সুধন্য লক্ষ্য করলো ময়ূরীর কপালে ত্রিভুজের আকরের নীল বর্ণের কিছু একটা চকচক করছে।
সুধন্য বললো "তোমার কপালে ওটা কি চকচক করছে ?"
ময়ূরী উত্তর দিলো "ওটা শূন্য মণি। আমি তোমাদের মতো মানুষ প্রজাতির নই। আমি একজন মাতৃকা। আমাদের প্রজাতির সবার এই রূপ শূণ্য মণি আছে।এটার সাহায্যে আমরা উড়তে পারি। এবং যে কোনো মাধ্যমে এমনকি মহাশূন্যে ও বাতাসের সাহায্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারি । এছাড়া এই শূন্য মণি আমাদের যে কোনো প্রাণীর ভাষা বুঝতে ও বলতে সাহায্য করে। আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পূর্বে আমি আপনার ভাষা জানতাম না। কিন্তু আপনাকে স্পর্শ করা মাত্রই আমি আপনার ভাষা শিখে গেছি।
যাই হোক আপনার শরীর দূর্বল।এখন একটু ঘুমোবার চেষ্টা করুন। আমি আপনার জন্য কিছু খাদ্য যোগাড় করি। আমার কোনো খাদ্যের প্রয়োজন হয় না।" সুধন্য বুঝতে পারলো মহিলা টির একটু মাথা খারাপ আছে। তাই বেশি কথা না বলে চোখ বুজে ঘুমোবার চেষ্টা করতে লাগলো।

তিন মাস পরের কথা।

সুধন্যর শরীর এখন একটু ভালো। সকালে ও বিকালে ময়ূরীর হাত ধরে   এই নির্জন পাহাড়ী উপত্যকায় একটু হাঁটাহাঁটি করে। চারিদিকে তুষার ধবল শৃঙ্গ। মধ্যিখানে এই সুন্দর ছবির মতো সবুজ পাহাড়ী উপত্যকা। কতো নাম না জানা পাহাড়ী ফুলের গাছ। এতোদিনে সুধন্য বুঝতে পেরেছে ময়ূরী মিথ্যা কথা বলে নি। তাকে নিজের চোখে উড়তে দেখেছে । এমনকি  একদিন ময়ূরী সুধন্যকে কোলে নিয়ে উড়ে পুরো উপত্যকা টি ঘুরিয়ে দেখিয়েছে।সুধন্য ক্রমশ ময়ূরীর সেবা যত্নের ফলে সুস্থ হয়ে আসছে। হয়তো এবার ময়ূরীকে ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন আসছে। কিন্তু ময়ূরী কে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেই সুধন্যর মন খারাপ হয়ে যায়। হয়তো একেই ভালোবাসা বলে।
একদিন সুধন্য ময়ূরী কে বলেই ফেললো "আচ্ছা ময়ূরী আমরা বাকি জীবন একসাথে থাকতে পারি না ?"
ময়ূরী সলজ্জ ভাবে সুধন্যর দিকে তাকিয়ে বললো "আপনি যদি সবটুকু জেনে আমায় স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন তবে আমার কোনো আপত্তি নেই।"
সুধন্য উৎসাহ পেয়ে বললো "বলো তুমি কি জানাতে চাও ?"
ময়ূরী বললো "আমরা মানুষ নই। আমাদের জাতি মাতৃতান্ত্রিক। সেখানে পুরুষের কোনো স্থান নেই। আপনার আমার মিলনের ফলে যদি কোনো কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে তবে জন্মের পরেই আমাকে সেই কন্যা সমেত ফিরে যেতে হবে আমার বর্তমান বাসস্থান বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপায়। তবে সেক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস ছাড়া  এক মাসের জন্য কন্যা সহ আপনার কাছে এসে থাকতে পারবো।আর যদি পুত্র সন্তান হয় তবে তাকে জন্মের পরবর্তী এগারো বৎসর পালন করবো এবং আপনার সঙ্গে সংসার ধর্ম পালন করবো। তারপর আমি আমার বাসস্থানে ফিরে যাবো । বৎসরে একবার এক মাসের জন্য আপনার ও পুত্রের কাছে আসবো।
এছাড়া আরো একটি শর্ত আছে , আমি এই উপত্যকা ছেড়ে লোকালয়ে যাবো না। আপনাকে যদি আমার সঙ্গে সংসার করতে হয় তবে এখানেই থাকতে হবে। এবার আপনি ভেবে বলুন আপনি আমার শর্তে রাজি কিনা ?"
সুধন্য বললো "তোমার শর্তাবলী খুবই পীড়াদায়ক। কিন্তু আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অপূর্ণ। তবে আমার পরিবার আছে। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ কাল দেখা না হলে আমি কষ্ট পাবো।"
ময়ূরী বললো "আমি লোকালয়ে যাবো না বলেছি। কিন্তু আপনার যেতে কোনো বাধা নেই। আপনার বাড়ির লোকেদের জন্য মন খারাপ লাগলে আপনি যেতেই পারেন। আমি আপনাকে সবার অগোচরে উড়িয়ে আপনার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেবো। আপনার আমার বিবাহ হলে দুজনের মধ্যে এক মানসিক যোগসূত্র তৈরী হবে।ফলে আপনি যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হবেন বা পুনরায় আমার কাছে ফিরে আসার মনস্থির করবেন আমি এতো দূর থেকেও বুঝতে পারবো। এবং পুনরায় সকলের অগোচরে আবার এই স্বর্গীয় উপত্যকায় ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।
সুধন্য বললো "তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই।বলো কবে আমাদের বিবাহ হবে?"
ময়ূরী বললো "সেজন্য আমার গুরুমাতা কে আহ্বান করতে হবে। আগামী পূর্ণিমা র দিনে আমাদের বিবাহ হবে। আশা করি আপনি ততোদিনে পুরো সুস্থ হয়ে উঠবেন।


দুই বৎসর পর।

ময়ূরী র একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার কিছু দিন আগে থেকেই ময়ূরী র গুরুমাতা এসে ওদের সঙ্গে ছিলেন। সন্তানের জন্মে উনি ধাত্রী মায়ের ভূমিকা পালন করলেন।
সন্তান জন্মের একুশ দিনের  মাথায় উনি ময়ূরী ও সুধন্যের পুত্র সন্তানের নামকরণ করে ফিরে গেলেন।ফিরে যাওয়ার সময় ময়ূরী কে নির্দেশ দিলেন "তোমার পুত্রের এগারো বৎসর বয়স হলে তোমার কাছে ওর ভাবী শিক্ষাগুরু তমোঘ্ন আসবে। তার হাতে পুত্রের ভার তুলে দিয়ে তুমি ইউরোপায় ফিরে আসবে। পরবর্তী বছর গুলিতে কেবল এক মাসের জন্য সন্তানের কাছে আসতে পারবে।
আর তোমার পুত্রের নাম হবে আদিত্য।এ হবে আগামী পৃথিবীর রক্ষক।
(বাকি অংশ পরের পর্বে। পরবর্তী অংশের নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য আমায় অনুসরণ করুন।)

Monday, August 12, 2019

রক্ষক ২


                (৩)

ইউরোপা।
বৃহস্পতি গ্রহের একটি উপগ্রহ।বরফে মোড়া এই উপগ্রহের চুম্বকীয় উত্তর মেরু বিন্দুতে এক সুবিশাল ত্রিভুজের মতো পিরামিড আকৃতির স্বচ্ছ শুভ্র মার্বেল পাথরের তৈরী মন্দিরের অভ্যন্তরে এক গোলাকৃতি বিশাল কূপের সামনে এক প্রবীণা পদ্মাসনে  ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে রয়েছেন।এই পুরো উপগ্রহে প্রাণের চিহ্ন একমাত্র এখানেই রয়েছে। এই প্রাচীন মন্দিরে রয়েছে সৌর মন্ডলের এক গোপনতম সম্পদ । তমো গুণের কূপ।আর এই তমো গুণের কূপের রক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে জ্ঞানী জাতির দশ নারী।এরা মানুষের মতো দেখতে হলেও আসলে মানুষ নয়। বহু কোটি কোটি বছর আগে এই প্রজাতির লোক মানুষ ছিলো। কিন্তু কোটি কোটি বৎসরের বিবর্তনে এদের ডি এন এ পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এই প্রজাতি এখন নিজেদের মাতৃকা নামে পরিচয় দেয়। এরা অতি দীর্ঘ আয়ু সম্পন্ন। এদের ভ্রু মধ্যে অবস্থিত রয়েছে ত্রিভূজ আকৃতির এক নীল বর্ণের মণি।একে বলে শূন্য মণি। মাতৃকার গর্ভজাত নারী পুরুষ উভয়েই এই মণি সহকারে জন্ম নেয়। কিন্তু নারীদের মধ্যে এই মণি চিরস্থায়ী। সাধারণত মাতৃকা গণ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন না।  কিন্তু জগতের কল্যাণে অথবা কোনো মাতৃকার মৃত্যু হলে সংখ্যা পূর্ণ করার জন্য বিশেষ কারণে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যেহেতু তাদের মধ্যে কোনো পুরুষ নেই তাই তারা প্রয়োজনে পৃথিবীর মানুষের সাথে বিবাহ করেন। এক্ষেত্রে তারা এক বিশেষ রীতি অবলম্বন করেন। বিবাহিত জীবনে যদি কন্যা সন্তান হয় তবে জন্ম দানের পরেই সন্তান সহ ইউরোপা তে ফিরে আসেন এবং সেই কন্যা সন্তান নতুন মাতৃকা রূপে পরিচিত হয়। সন্তান যদি পুত্র হয় তবে জন্ম দানের এগারো বৎসর পর্যন্ত তাদের লালন পালন করেন এবং সংসার করেন । তারপর সেই সন্তান ও সংসার ছেড়ে পুনরায় ইউরোপায় ফিরে আসেন। মাতৃকা জাতি থেকে উৎপন্ন পুত্র সন্তানের কপালের নীল শূন্য মণি জন্মের ছয় মাসের মধ্যেই মিলিয়ে যায় । সেজন্য তারা মাতৃকা জাতির সব গুণ পায় না। তবে যদি সেই সন্তান তমো গুণের কূপে অবগাহন করতে পারে তবে পুনরায় চিরস্থায়ী ভাবে মাতৃকা জাতির সব গুণের অধিকারী হয় ।কোটি কোটি বৎসরের বিবর্তনের ফলে এরা খাদ্য , পানীয় ও বাতাসের  সাহায্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে।এরা অতি উষ্ণ ও অতি শীতল যে কোনো স্থানেই জীবিত থাকতে পারে। সর্বোপরি এরাই একমাত্র জীব যারা নিজেদের শরীরকে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবহীন করে যে কোনো মাধ্যমে উড়তে পারে। এজন্য তারা কাজে লাগায় তাদের কপালের ভ্রু মধ্যে অবস্থিত এক বিশেষ শূন্য মণি কে।


প্রবীণা মাতৃকা যিনি ধ্যান মগ্ন অবস্থায় পদ্মাসনে বসে ছিলেন তমো গুণের কূপের কাছে , হঠাৎ তার সামনে এক আলোর বিচ্ছুরণ হতে লাগলো। ধীরে ধীরে  সেই আলোর বৃত্ত হতে এক জ্যোতির্ময় পুরুষ আবির্ভূত হলেন।ইনি আমাদের পূর্ব পরিচিত সৌরমণ্ডলের রক্ষক।
রক্ষক প্রবীণা কে প্রণাম করে  বললেন "মাতা , বিশেষ প্রয়োজনে আবার আপনার কাছে এসেছি।"
প্রবীণা বললেন ,"পুত্র বেশ কয়েকদিন ধরে তোমার চিন্তা ই করছিলাম।"
রক্ষক আসলে এই প্রবীণার পুত্র সন্তান। বহুকাল পূর্বে জগতের কল্যাণে তিনি রক্ষককে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। উভয়ের বিধি নির্দিষ্ট কর্ম শেষ হওয়ায় উভয়েই নিজ নিজ স্থানে প্রত্যাগমন করেন।
রক্ষক বললেন "মাতা অচিরেই পৃথিবীতে এক মহাবিপদ উপস্থিত হবে। যার প্রভাবে পৃথিবীর সমগ্র জীব জগত ধ্বংস হতে পারে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ব্যাপী যে মহাচৈতন্য অবস্থান করছে তার কাছ হতে নির্দেশ এসেছে এই বিপদ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার। সেজন্য পুনরায় আমার জন্ম গ্রহণ করার প্রয়োজন। কিন্তু আমার তেজযুক্ত আত্মাকে গর্ভে ধারণ করতে পারে এমন নারী এই মুহূর্তে পৃথিবীতে নেই।তাই আপনার কাছে এসেছি সাহায্যের আবেদন নিয়ে। তাছাড়া বিধির বিধান হলো পৃথিবীকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন এক অর্ধমানব। মানুষ ও মাতৃকার মিলনে যে সন্তান সৃষ্টি হবে সেই হলো অর্ধমানব। "
প্রবীণা সব শুনলেন। তারপর বললেন " পুত্র , আমি বৃদ্ধ হয়েছি। তাই আমি তোমাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবো না। তবে আমার সঙ্গী অন্য মাতৃকাগণ কে আহ্বান করছি। আশা করি তাদের মধ্যে কেউ তোমাকে সাহায্য করতে রাজি হবে।"
এই বলে  প্রবীণা তার গলার রুদ্রাক্ষের মালাটি খুলে হাতে নিয়ে বললেন "সব মাতৃকাগণ  শোনো , এখনি সবাইকে আমার সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাকি নয় জন মাতৃকা ঐ স্থানে উপস্থিত হলো।
প্রবীণা সকলে উপস্থিত হওয়ার পর  সকলের সামনে সব কিছুই বলে সাহায্য করার অনুরোধ জানালেন।
 প্রায় সকলেই  হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না। বাকি সকল মাতৃকার মধ্যে কেউই সংসার করতে আগ্রহী নয়।
তখন প্রবীণা বললেন "বুঝতে পারছি তোমরা কেউ সংসার করতে আগ্রহী নও। কিন্তু মনে রেখো তোমাদের জীবনের উদ্দেশ্য বিশ্বের কল্যাণ সাধন। কিন্তু তোমাদের মধ্যে একজন আছে যে কিছুকাল আগে আমাদের মাতৃকা জাতির আদি নিবাস মূল গ্রহ 'মায়া' থেকে এখানে এসেছে। 'ময়ূরী' আমি তোমাকে বলছি। তুমি এই ভার নাও।"
ময়ূরী নামের সেই মাতৃকা বললো "গুরুমাতা , আপনি যখন আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তখন আমি অবশ্যই আপনার ইচ্ছার মর্যাদা রক্ষা করবো। কিন্তু  আমার একটা শর্ত আছে।যে পুরুষ কে আমি বিবাহ করবো তাকে অবশ্যই সৎ হতে হবে। এবং তার কাছে আমি আমার আসল পরিচয় ও উদ্দেশ্য গোপন করতে পারবো না।সব কিছু জানার পর যদি তিনি আমার সাথে সংসার স্থাপনে রাজী হন তবেই আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো।"
প্রবীণা বললেন " বেশ তাই হবে। তুমি যেমন ইচ্ছা করেছো তেমন পুরুষের সন্ধান আমি আমার যোগশক্তি বলে তোমাকে জানাবো। এখন ময়ূরী ভিন্ন সবাই নিজ নিজ কার্যে প্রত্যাবর্তন করো।"
সকলে চলে গেলে রক্ষক বললো " মাতা , এবার আমাকে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দিন । উপযুক্ত সময় হলে আমি আপনার কাছে নির্দেশ পাঠাবো। আপনি আমার ভাবী মাতাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করবেন।"
প্রবীণা বললেন "বেশ পুত্র তাই হবে "।
ধীরে ধীরে রক্ষক আলোক বৃত্ত সহ মিলিয়ে গেলেন।



              (৪)

মঙ্গল গ্রহের নিরক্ষরেখা র এক অজ্ঞাত স্থান।
সময় অনির্দিষ্ট।

স্পেস স্যুটের মতো ঘেরাটোপ যুক্ত পোশাক পরে এক জন দাঁড়িয়ে চারিদিক নিরীক্ষণ করছিলেন। রক্তিম মৃত্তিকার মধ্যে সূর্যের আলো আগুন ছড়াচ্ছিলো। দূরে এক বিশালাকার পাথরের গোলাকার বেদী। কালের নিয়মে আজ ভগ্নপ্রায়। একদিন এই বেদীর  চারিদিকে ভিড় জমাতো মঙ্গল গ্রহের সাধারণ মানুষ।আর ঐ পাথরের বেদী তে যুদ্ধের দেবতা মার্সের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আত্মরক্ষার কলাকৌশল প্রয়োগ করে দেখাতো বিভিন্ন প্রতিযোগীরা। যিনি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে এই সব নিরীক্ষণ করছিলেন তিনি এই গ্রহের সবচেয়ে সম্মানিত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এক যোদ্ধা তমোঘ্ন।সবাই বলে গুরু তমোঘ্ন।এক বিরাট ধ্বংস সাধনের ফলে মঙ্গলের সব জাতি ধ্বংস সাধন হয়েছে। শুধু গুরুদেব তমোঘ্নর জাতির পূর্বজদের দূরদর্শিতা তাদের প্রজন্মকে এখনো  টিকিয়ে রেখেছে। তাদের পূর্বপুরুষরা মাটির অনেক গভীরে বাসস্থান তৈরী করে বসবাস শুরু করেন ।জীবন ধারণের সব কিছুই সেখানে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরী করেন। বর্তমানে এই সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে আধুনিকতম সভ্যতার অধিকারী এই জনজাতি।এরা মার্সিয়ান জনজাতি । উপরের ধ্বংস লীলা তাদের কোনো রূপ ক্ষতিগ্রস্ত করে নি।এরা এখন খুবই সহজে এক গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে তাদের তৈরী উন্নত মহাকাশযানের সাহায্যে ভ্রমন করে। পৃথিবীর মানুষ যখন সভ্যতার আলো দেখেনি তখন এই জনজাতি মানুষ কে বিভিন্ন সারভাইভাল টেকনিক ও আত্মরক্ষার কলাকৌশল শিখিয়েছে। তারা আজো পৃথিবীতে মানুষের অগোচরে ভ্রমণ করে। হিমালয়ের এক গোপন উপত্যকায় তাদের এক গোপন শিবির রয়েছে। যেখানে তারা পৃথিবীর কিছু বেছে নেওয়া মানুষ কে অতি উন্নত অস্ত্র ও আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।ঐ শিবির কে এরা নাম দিয়েছেন 'পাঠশালা'।
গুরু তমোঘ্ন পাঠশালার মূল শিক্ষক। বর্তমানে পাঠশালার দায়িত্ব অন্য শিক্ষকদের দিয়ে নিজে এসেছেন তার প্রিয় জন্মভূমি মঙ্গলে । অনেকক্ষণ ধরে মঙ্গলের উপরিভাগে একাকী ভ্রমণ করে ফিরে চললেন তাদের মাটির নিচের শহরে। একটি পাথরের ঢিপির কাছে এসে  নিজের পোশাকের মধ্যে থাকা একটি বোতাম টিপতে ই মাটির খানিকটা অংশ ফাঁকা হয়ে গেলো। সেই ফাঁকা অংশে উঠে এলো একটি লিফট। লিফটের দরজা আপনা থেকেই খুলে গেলো। তমোঘ্ন প্রবেশ করতেই পুনরায় দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। লিফট নামতে শুরু করলো মাটির গভীরে। কয়েক কিলোমিটার নামার পর লিফট থেমে গেলো। তমোঘ্ন লিফট থেকে বেরিয়ে এলেন। সামনে মাটির নীচে এক বিরাট সভ্য জগত। লিফটের পাশেই এক পোশাক পরিবর্তনের কক্ষ।এক মার্সিয়ান সেখানে কর্মরত ছিলেন। তিনি তমোঘ্ন কে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানালেন। তার মাটির উপরে যাওয়ার পোশাক পরিবর্তনে সাহায্য করলেন।স্পেস স্যুটের মতো পোশাক ছেড়ে নিজের  বাদামী রঙের জোব্বার মতো পোশাক পড়লেন। কর্মচারী টি জানালো শহরের প্রশাসক তাকে স্মরণ করেছেন। তমোঘ্ন বেরিয়ে এসে তার ব্যক্তিগত যানে উঠে বসলেন।যানের মধ্যে থাকা স্বয়ংক্রিয় কন্ঠ জানতে চাইলো তিনি কোথায় যেতে চান ?
তমোঘ্ন বললো "আমাকে  প্রশাসকের ভবনে নিয়ে চলো।" 
নির্দেশ অনুযায়ী যানটি তাকে মাটির নীচের শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরিয়ে এক বিরাট ভবনের সামনে উপস্থিত করলো। তমোঘ্ন যান থেকে নেমে সেই ভবনে প্রবেশ করলেন।
বিরাট ভবনটিতে প্রচুর মার্সিয়ান কর্মরত। তাদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা উভয়েই আছে।
অবশেষে তমোঘ্ন এক বিশালাকার হলঘরে প্রবেশ করলেন।এটাই প্রশাসকের ঘর ।প্রশাসক একটি চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করছিলেন। তিনি একজন মহিলা। তমোঘ্ন প্রবেশ করতেই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে তমোঘ্ন কে সম্মান জানালেন।তারপর তাকে একটি চেয়ার নির্দেশ করে বসতে বললেন। তমোঘ্ন বসলে তিনিও বসলেন।
তারপর বললেন "গুরুদেব আপনি জানেন বহুকাল পূর্বে রক্ষক আমাদের জনজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন।আজ তিনি শরীরে না থাকলেও সুক্ষ্ণ শরীরে সৌরমণ্ডলের অ্যাস্টরয়েড বেল্টে অবস্থান করছেন। তিনি আমাদের সুপার কম্পিউটারে সরাসরি বিশেষ নির্দেশ প্রদান করেছেন যে তিনি অবিলম্বে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।
তমোঘ্ন বললেন "আমি অবিলম্বে তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমি কি আমার গ্রহান্তরে যাওয়ার যানে তার কাছে যাবো?"
মহিলা উত্তর দিলেন "তার প্রয়োজন নেই।ঐ দেখুন তিনি আবির্ভূত হচ্ছেন।"
সামনে একটি আলোক বৃত্ত তৈরী হলো। সেই আলোক বৃত্তে এক জ্যোতির্ময় পুরুষ আবির্ভূত হলেন।
তমোঘ্ন ও মহিলা প্রশাসক তাকে প্রণাম করলেন।
রক্ষক তমোঘ্ন কে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলেন "প্রিয় মার্সিয়ান গণ , বিশেষ সাহায্যের প্রয়োজনে তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছি।"
তমোঘ্ন বললো "আদেশ করুন প্রভু।"
রক্ষক খুশী হয়ে বললেন "অচিরেই বিরাট এক বিপদ পৃথিবীর উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসছে। তার হাত থেকে পৃথিবীর মানুষ কে বাঁচাতে আমি পুনরায় জন্মগ্রহণ করবো। বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপার মাতৃকা গণের কথা আপনারা   অবগত আছেন।এক মহান মাতৃকা আমায় গর্ভে ধারণ করতে সম্মত আছেন। কিন্তু রীতি অনুযায়ী তিনি আমাকে এগারো বৎসর বয়স পর্যন্ত লালন পালন করবেন। তারপর তমোঘ্ন আমাকে তোমায় লালন পালন করতে হবে। কালের নিয়মে আমি জন্ম গ্রহণ করা মাত্রই পূর্ব কথা সব বিস্মৃত হবো। তাই তোমাকে সব কথা বলে যেতে চাই।মহাচৈতন্য থেকে নির্দেশ এসেছে  তিনটি জ্ঞান কূপে যিনি অবগাহন করবেন এবং লুকিয়ে রাখা এক ভয়ঙ্কর ভয়াবহ অস্ত্রের যিনি অধিকারী হবেন তিনিই একমাত্র এই বিপদ থেকে পৃথিবীর মানব সভ্যতা তথা জীবজগৎ কে রক্ষা করতে পারবেন। তমোঘ্ন এই সৌর মন্ডলের একমাত্র তুমি জানো তিনটি গোপন কূপের অবস্থান এবং তাতে অবগাহনের উপায়। কারণ তুমি ঐ তিনটি গোপন কূপে অবগাহন করেছো। আমি তোমার শিষ্য রূপে উপযুক্ত সময়ে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ সাহায্য চাই। এছাড়া তোমাদের সভ্যতার তৈরী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভয়াবহ অস্ত্র 'পাশুপত' অস্ত্রের অবস্থান ও তার প্রয়োগ কৌশল এবং তাকে পাওয়ার উপায় সবই তুমি জানো। তুমি উপযুক্ত সময়ে এই সব কিছু অর্জন করতে আমাকে সাহায্য করবে।"

"   'পাশুপত' তোমাদের নিজস্ব সম্পত্তি।তাই তোমাদের প্রশাসকের অনুমতির প্রয়োজন।"এই কথা গুলো রক্ষক প্রশাসকের উদ্দেশ্যে বললেন।
প্রশাসক বললেন "অস্ত্রের সৃষ্টি করা হয়েছে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার জন্য । আমার পূর্ণ সমর্থন আছে আপনার হস্তে তুলে দিতে। তবে নিয়ম অনুযায়ী আপনার আগামী জন্মে আপনাকে উপযুক্ততা র প্রমাণ দিয়ে তবেই এই অস্ত্রের অধিকারী হতে হবে। এবং এক্ষেত্রে গুরুদেব তমোঘ্ন আপনাকে কোনো সহায়তা করতে পারবেন না।"
তমোঘ্ন বললেন "আপনি আপনার ভবিষ্যৎ গুরু হিসাবে আমাকে পছন্দ করেছেন এজন্য আমি সম্মানিত। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমি উপযুক্ত সময়ে উপস্থিত হয়ে আপনার ভার গ্রহণ করবো এবং পৃথিবীতে আমাদের স্থায়ী শিবির 'পাঠশালা'তে আপনার প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান করবো।"
তমোঘ্ন ও প্রশাসক রক্ষককে প্রণাম জানালেন।রক্ষক উভয়কেই আশীর্বাদ জানিয়ে মিলিয়ে গেলেন।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে।পরের পর্বের নোটিফিকেশন পেতে আমাকে অনুসরণ করুন।)