Crss colum

Sunday, November 17, 2019

আরশোলা

ছাদের একদম কিনারায়  তিন্নি দাঁড়িয়ে আছে। এই সুযোগ। মুন্নি র প্রেতাত্মা প্রতিশোধের স্পৃহা য় পাগল। রাহুল কে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তিন্নি।এই সুযোগ, শুধু একটা ধাক্কা দেওয়া। কিন্তু তিন্নির দিকে হাওয়ায় ভেসে এগিয়ে যেতেই তিন্নি আচমকা পিছন ফিরে মুন্নির প্রেতাত্মার দিকে তাকিয়ে বললো " ও তুই ? আত্মহত্যা করার পরেও এখানে ঘুরঘুর করছিস ? লজ্জা করে না ?"
মুন্নি খানিকটা হতচকিত হয়ে উত্তর দিলো " তুই আমার জীবন থেকে রাহুল কে কেড়ে নিয়েছিস । তোকে আজ ছাড়বো না।"
তিন্নি বললো " বাজে বকিস না। রাহুল তোকে নয় আমাকে ভালোবাসে।"
মুন্নি আরো একটু তিন্নির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো " ওসব জানি না।আজ তোর শেষ দিন। আমার মতো ছাদ থেকে পড়ে আজ তোর মৃত্যু হবে। আমি এখন অশরীরী আত্মা ।তুই আমাকে আটকাতে পারবি না।"
তিন্নি বললো " তাই বুঝি ? তোর যম আমার পকেটে আছে।এই নে।"
এই বলে তিন্নি তার জিন্সের প্যান্টের পকেট থেকে কি একটা বের করে মুন্নির প্রেতাত্মার দিকে ছুঁড়ে দিলো।
মুন্নির প্রেতাত্মা জিনিসটার দিকে তাকিয়ে " বাবাগো ,মাগো ,বাঁচাও ,বাঁচাও " এই সব চিৎকার করতে করতে দৌড়ে গিয়ে ছাদের এক কিনারায় গিয়ে মিলিয়ে গেলো।

তিন্নি একগাল হেসে মুন্নির প্রেতাত্মার দিকে ছুঁড়ে দেওয়া প্লাস্টিকের তৈরি আরশোলা টি তুলে পকেটে রেখে দিলো।

ভূত হয়ে গেলেও মুন্নির এখনো জীবিত থাকার সময়ের আরশোলার উপরের ভয় কাটেনি।

Saturday, November 16, 2019

আয়না

ঘরের মধ্যে ঢুকে বিরাট মানুষ প্রমাণ বড়সড় আয়নাটাকে দেখে চমকে গেলো বিভাস।দুই বছর আগে বিদেশে কাজে যাওয়ার সময় এই আয়নাটা ছিলো না। ঘন্টা দুয়েক আগে বিভাস বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরেছে। দোতলায় এই ঘরটিতে ঢুকে বেশ চমকে গেছে। অনিতা রান্নাঘরে ব্যস্ত। কৌতুহল বশত আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো বিভাস। পরিস্কার নিজেকে দেখা যাচ্ছে। পকেট থেকে একটা ছোট্ট চিরুনি বার করে চুল আঁচড়াতে লাগলো। আয়নাটা কিন্তু বেশ। হঠাৎ বিভাসকে চমকে দিয়ে আয়নার প্রতিচ্ছবি টি চিরুনি টা পকেটে রেখে অন্য পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করে বিভাসের দিকে তাক করে তিনটি গুলি ছুঁড়লো। আয়ানা কে পাতলা পর্দার মতো ভেদ করে গুলিগুলো বিভাসের বুকে লাগলো। বিভাস চিরুনি হাতেই লুটিয়ে পড়লো। আয়নার ভিতরে থাকা প্রতিচ্ছবি বিভাস আয়নাটা ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো। গুলির আওয়াজে অনিতা দৌড়ে এসে দেখলো বিভাস পড়ে আছে ,আর তার পাশে অবিকল দ্বিতীয় বিভাস দাঁড়িয়ে আছে। অনিতা ভ্রু কুঁচকে দ্বিতীয় বিভাসকে প্রশ্ন করলো "কাজ হয়েছে ?"
দ্বিতীয় বিভাস বললো "একদম পারফেক্ট।একটু সাহায্য করো তো।"
তারপর দুজনে ধরাধরি করে বিভাসের মৃতদেহটি আয়নার মধ্যে দিয়ে উল্টোদিকে ছুঁড়ে দিলো।
প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে আসা অনিতার গত দুই বছরের প্রেমিক বিভাস বললো " আর আমাদের কোনো বাধা রইলো না। এখন শুধু এই দুই ইউনিভার্সের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা কারী আয়নার মতো দেখতে পোর্টাল টি বন্ধ করে দিলেই নিশ্চিন্ত।"
বিভাস নিজের পকেট থেকে একটা রিমোট বার করে একটা স্যুইচ টিপতেই আয়নাটা সম্পূর্ণ উবে গেলো।পড়ে রইলো শুধু সাদা দেওয়ালের শূন্যতা।

Tuesday, November 12, 2019

রক্ষক ১০

                  (১৪)

বজ্র ড্রাগনের দেশ।

হিমালয়ের কোলে এই দেশটিকে বলা হয় প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড ‌। বলা হয়ে থাকে এটি এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে সুখী দেশ। সহজ সরল এই দেশের মানুষরা। জনসংখ্যার অধিকাংশ লোকই হল বৌদ্ধধর্মে র। এই দেশের সত্তর শতাংশ জমি সুন্দর সবুজ ঘন জঙ্গলে ঢাকা। দেশটির নাম ভুটান।

উত্তর দিকে জনপ্রাণী হীন এক অঞ্চল। আদিত্য গুরুদেব তমোঘ্ন র সাথে এগিয়ে চলেছে লামডিং এর সন্ধানে। আশেপাশে একশো কিলোমিটারের মধ্যে কোন জনবসতি নেই। চারিদিকে বিশাল বিশাল উঁচু পর্বতশ্রেণী। প্রতিটি পর্বতের মাথায় সাদা বরফের পুরু আস্তরণ। সেই ধূধূ করা শীতল মরুভূমির  ন্যায় প্রান্তরে দুইটি মানুষ চলেছে এক লুকানো গুম্ফার সন্ধানে। নাম লামডিং। জনশ্রুতি আছে যে এই লামডিং গুম্ফা তৈরি করেছে অশরীরী কিছু অপদেবতা। এই গুম্ফায় যদি কোন মানুষ বা অন্য কোন জীব প্রবেশ করে তবে তার মৃত্যু নিশ্চিত। তারচেয়েও বড় ব্যাপার এই গুম্ফাকে খুঁজে বার করা সহজ নয়। প্রথমে খুঁজে পেতে হবে তর্জনী পাহাড়। সেই তর্জনী পাহাড়ের তর্জনী যেদিকে নির্দেশ করবে সেই পথেই লুকানো রয়েছে লামডিং গুম্ফা।
আদিত্য গুরুদেব কে বললো "গুরুদেব , আপনি সত্ত্বগুণের কূপ সম্পর্কে কিছু উপদেশ দিন। কিছুক্ষণ আগে আপনি বলছিলেন যে প্রথমে আমাদের তর্জনী পাহাড় খুঁজে বার করতে হবে। কি এই তর্জনী পাহাড় ? কেনইবা এটি খুঁজে বার করতে হবে ? সত্ত্বগুণের কূপের সাথে এর সম্পর্ক কি? দয়া করে আমার কৌতুহল নিরসন করুন।"
তমোঘ্ন বললেন " এই পথে আরও কিছুটা যাওয়ার পর দেখতে পাবে এক মুষ্টিবদ্ধ হাতের মত শৃঙ্গযুক্ত অনুচ্চ পাহাড়। সেই পাহাড়ের মাথায় কম উচ্চতার কারণে বরফ জমে না। এছাড়া কম উচ্চতা হওয়ারজন্য সেই পাহাড়ের এর কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত তাকে দূর হতে শনাক্ত করা যায় না। পাহাড়ের চূড়া টি দেখতে অনেকটা যেন মুষ্টিবদ্ধ হাত। আর একটি তর্জনীর মত পাথরের টুকরো যেন মুষ্টিবদ্ধ হাত থেকে একটি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করে আছে। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য সেই তর্জনী পাহাড় খুঁজে বার করা। তারপর সেই তর্জনী পাহাড়ের তর্জনীর নির্দেশিত দিকে এগিয়ে চলতে হবে। যেতে যেতে আমরা একটি ঝর্ণার সন্ধান পাবো। সেই ঝর্ণার কাছেই লুকানো আছে লামডিং গুম্ফা। আর এই লামডিং গুম্ফার মধ্যেই রয়েছে সত্ত্বগুণের কূপ। এই গুম্ফায় প্রবেশ করামাত্র এখানকার রক্ষণ কারী শক্তি মানুষের জ্ঞানের , সত্যনিষ্ঠা র ও দৃঢ়তার পরীক্ষা নেন। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনা তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এখানকার রক্ষণ কারী শক্তির নাম ব্রাহ্মী শক্তি। পূর্বে  রজোগুণের কূপে অবগাহন করার আগে যে দেবী তোমাকে বাধা প্রদান করছিল তিনি ছিলেন নারায়নী শক্তি। আর তমোগুণের কুপের রক্ষাকারী শক্তি হল গৌরী। প্রতিটি শক্তির কাজ হল তিন গুণকে অযোগ্য অধিকারীর হাত থেকে রক্ষা করা। সৃষ্টির প্রারম্ভে বিশ্ব চৈতন্য  নিজের নির্গুণ অবস্থা থেকে সগুণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি করার জন্য নিজের সত্তাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন, যার এক ভাগ পুরুষ ও অন্য ভাগ প্রকৃতি। বিজ্ঞানের ভাষায় বিশ্ব চৈতন্যের পুরুষ রূপ হল স্পেস বা স্থান। আর প্রকৃতির রূপ হল এনার্জি। রজোগুণের কূপ আসলে ম্যাটার বা পদার্থের প্রতীক। তাই রজোগুণের কূপে অবগাহন করে তুমি সমগ্র পদার্থের উপর অধিকার পেয়েছো। রজোগুণের কূপ থেকে তুমি যে অষ্টসিদ্ধি পেয়েছ তার সম্পর্কে বিস্তারিত বলছি ।

অষ্ট সিদ্ধি

1. অণিমা, 2. মহিমা, 3. লঘিমা, 4. গরিমা, 5. প্রাপ্তি, 6. প্রাকাম্য, 7. ঈশিতা, 8. বশিতা

এই আট প্রকার সিদ্ধির বৈশিষ্ট গুলো হলোঃ-

1. অনিমা :-  ইচ্ছা করলেই অনুর মত ক্ষুদ্র আকার ধারন করতে পারেন অথবা নিজেকে শূণ্য রুপে পরিণত করতে পারেন...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "অনিমা"...!!

2. মহিমা :- তিনি ইচ্ছামতো নিজের আকার বাড়াতে পারতেন এবং যে কোনও জড়রুপ ধারণ করতে পারেন...!! এই ধরনের সিদ্ধি অর্জনকে বলে "মহিমা"...!!

3. লঘিমা :- তিনি ইচ্ছামতো দেহের ওজন হালকা করে জলের উপর হেঁটে যেতে বা শূন্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "লঘিমা"...!!

4. গরিমা:- তিনি নিজের ওজন ইচ্ছেমত বৃদ্ধি করতে পারেন...!! এই সিদ্ধি অর্জনকে বলে "গরিমা"...!!

5. প্রাপ্তি :- তিনি যে কোনও স্থান থেকে যা ইচ্ছা, তাই প্ৰাপ্ত করতে পারেন...!! অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞানও নিজের মুষ্টিবদ্ধ করতে পারেন...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "প্ৰাপ্তি"...!!

6. প্রাকাম্য :- কোনও বাসনা চরিতাৰ্থ করতে এবং কখনও নিরাশ না হওয়ার জন্য যে সিদ্ধি অর্জন করতে হয় তাকে বলে "প্রাকাম্য"...!!

7. ঈশিতা :- তিনি কোনও স্থানে কিছু অদ্ভুত জিনিষ সৃষ্টি করতে পারেন বা ইচ্ছানুসারে কোন জিনিস ধ্বংসও করতে পারেন...!! সৃষ্টির নবকিছু আর্বিভাব ও ধ্বংস তাঁর ক্ষমতার আওতায়...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "ঈশিতা"...!!

8. বশিতা :- তিনি জড় উপাদান গুলোকে ইচ্ছা অনুসারে নিয়ন্ত্ৰণ করতে পারেন...!! সৃষ্টির প্রতিটি জীবকে নিজের বশীভূত করতে পারেন মুহূর্তের মধ্যেই...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "বশিতা"...!!

সুতরাং বুঝতেই পারছ রজোগুণের কূপ তোমাকে জড়জগতের উপর বা ম্যাটারের উপর প্রভুত্ব দিয়েছে। তবে এখানে একটি শর্ত আছে। সাধক যেমন অষ্টসিদ্ধি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন তুমি তেমনি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে না কেবলমাত্র জগতের কল্যাণে তুমি এই অষ্টসিদ্ধি ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে।

এবারে তোমাকে সত্ত্বগুণের কূপে অবগাহন করে পুরুষ বা স্পেসের বা স্থানের উপর অধিকার কায়েম করতে হবে। স্পেসের উপর অধিকার পেলে তুমি যে কোন স্থানে অনায়াসে পৌঁছতে পারবে। সেই সঙ্গে ইচ্ছামত অন্য প্রাণী অথবা বস্তুকে অন্যস্থানে পাঠিয়ে দিতে পারবে। পরবর্তীকালে তমোগুণের কূপে অবগাহন করে তুমি সময়ের ওপর কর্তৃত্ব পাবে যার সাহায্যে প্রয়োজনমতো যেকোনো সময় রেখায়  (স্পেস -টাইমে) গমন করতে পারবে।

এবারে তোমাকে তমোগুণের কূপ সম্পর্কে কিছু কথা বলি। তমোগুণের কূপ আসলে শক্তির (এনার্জি) প্রতীক। এনার্জি বা শক্তি দুই ধরনের। প্রথমত যে শক্তি আমরা সাধারণত দেখতে পাই । এইগুলো শুভশক্তি। দ্বিতীয়তঃ রয়েছে পরাশক্তি বা ডার্ক এনার্জি। এই ডার্ক এনার্জি খুব ভয়ঙ্কর।একে সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে জগতের মঙ্গল হবে কিন্তু এর অপপ্রয়োগের ফলে জগত ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে পারে। তাই তমোগুণের কূপে তোমাকে সর্বোচ্চ পরীক্ষার সামনে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।"

ওই দেখো আমরা তর্জনী পাহাড়ের সামনে এসে গেছি।ওইযে তর্জনীর মত একটি পাথর একটি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করছে। ওই দিকেই রয়েছে লামডিং গুম্ফা। জনপ্রাণীহীন  সেই গুম্ফায় বহু রহস্য অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য। চলো, আরেকটু পা চালিয়ে। 

(ক্রমশ)(অষ্ট সিদ্ধি সম্পর্কিত তথ্যাবলী অন্য জায়গা থেকে সংগৃহীত করা)


Tuesday, November 5, 2019

রক্ষক ৯


(১৩)
সহ্যাদ্রি পর্বতমালা।
সহ্যাদ্রি পর্বতমালা সাধারণত পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা নামে পরিচিত। বিশাল বিশাল পর্বতশ্রেণী ভারতের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে একদম দক্ষিণতম বিন্দু পর্যন্ত প্রসারিত। 
পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা র এক নামহীন পাহাড়ী উপত্যকায় দুই জন মানুষ এগিয়ে চলেছেন। ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই অংশে মানুষের  পদক্ষেপ পড়ে না বললেই চলে। কদাচিৎ দুই একটা  দূরবর্তী আদিবাসী সম্প্রদায়ের  মানুষ এখানে শিকারের খোঁজে এসে পড়ে। তবে  তারা যদি বুঝতে পারে তারা ডাইনি বুড়ির আস্তানার কাছে এসে পড়েছে তবে তারা তৎক্ষণাৎ ফিরে যায়। আদিবাসী গ্রামের  মানুষ গুলো ডাইনি বুড়িকে যমের মতো ভয় করে।বংশ পরম্পরায় তারা শুনে এসেছে ঐ দূরের উপত্যকায় কোনো অজানা স্থানে রয়েছে ডাইনি গুহা । সেখানে যেতে নেই। সেখানে যারা যায় তারা আর কখনো ফিরে আসে না।সবাই এড়িয়ে চলে এই রহস্যময় অঞ্চলকে।
আজ সেই নির্জন ঘন হিংস্র শ্বাপদ সঙ্কুল  জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে দুই জন মানুষ। একজন গুরুদেব তমোঘ্ন আর দ্বিতীয় জন আদিত্য।  
সেই নির্জন পথে যেতে যেতে আদিত্যের মনে একটা প্রশ্নের উদয় হলো। সে গুদে কে প্রশ্ন করলো " গুরুদেব, আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে আমরা কেন প্রথমে রজোগুণের কূপের উদ্দেশ্যে চলেছি ?"
একটুও না থেমে গুরুদেব তমোঘ্ন আদিত্যকে উত্তর দিলো " তুমি উপযুক্ত প্রশ্নই করেছো। পৃথিবীতে দুইটি কূপ রয়েছে। সত্ত্বগুণের ও রজোগুণের। কিন্তু অবগাহন করতে হলে প্রথমে রজোগুণের কূপে যাওয়াটাই উচিত। কারণ রজোগুণ আসলে সত্ত্বগুণ ও তমোগুণের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। উভয় গুনের শক্তির  মধ্যে সাম্যতা আনে। মানুষ যদি অতিরিক্ত সাত্বিক প্রকৃতির হয় সেটি যেমন ক্ষতিকর তেমনি অতিরিক্ত তামসিক প্রকৃতির মানুষ ক্ষতিকর। তুমি যদি প্রথমেই সত্ত্বগুণের কূপে অবগাহন করো তবে তুমি অতিরিক্ত সাত্বিক প্রকৃতির হবে। সে ক্ষেত্রে তুমি ঈশ্বর সাধনা ভিন্ন অন্য যেকোনো কাজকে অবহেলা করবে। এবং যে কারণে তোমার জন্মগ্রহণ করা তা থেকে কর্তব্য চ্যুত হবে। তাই প্রথমেই রজোগুণের কূপে অবগাহন করা উচিত। রজোগুণের কূপে অবগাহন করা মাত্র তুমি চিরকালের জন্য নীরোগ হবে। তোমার উপস্থিত বুদ্ধি প্রখর হবে। শুধু বুদ্ধি সাহায্যেই তুমি যেকোনো যুদ্ধে প্রতিপক্ষ থেকে এক কদম এগিয়ে থাকবে। এছাড়া রজোগুণের কূপে অবগাহন করার পর তুমি একটি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হবে।  তুমি অষ্টসিদ্ধি র যাবতীয় গুন লাভ করবে কেবলমাত্র জগত কল্যাণের হেতু। অর্থাৎ যোগী যেমন সাধনার দ্বারা অষ্ট সিদ্ধি লাভ করে নিজের এবং জগতের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে তুমি তেমনি ব্যবহার করতে পারবে না। তবে জগতের প্রয়োজনে তুমি অষ্ট সিদ্ধির  যাবতীয় গুন লাভ করবে। এছাড়া রজোগুণের কূপ তোমাকে একটি বিশেষ অস্ত্রের অধিকারী করবে। এই অস্ত্র হল অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আলোক তরঙ্গ অস্ত্র বা লেজার বিম। তুমি নিজের চোখ থেকে যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে লেজার বিম নিক্ষেপ করতে পারবে।
ওই যে কাছেই পাহাড় টা দেখতে পাচ্ছ ওখানেই  আমাদের গন্তব্য স্থল। ওখানে রয়েছে একটি গুহা। আদিবাসী সমাজে এটা ডাইনি গুহা নামে পরিচিত। কেন এই গুহার নাম ডাইনি গুহা হল সেটা গুহায় প্রবেশ করলেই বুঝতে পারবে। গুহায় প্রবেশ করা মাত্রই গুহার অধিষ্ঠাত্রী দেবী প্রবেশকারী কে সাবধান করে । সাধারণ আদিবাসী জনগণ ব্যাপারটি বুঝতে না পেরে এটিকে কোন ডাইনির ক্রিয়াকলাপ ভেবে ভুল করে ।আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই অঞ্চল এবংওই গুহাকে এড়িয়ে চলে। তার অবশ্য সম্যক কারণ আছে। সেটাও গুহায় প্রবেশ করামাত্র বুঝতে পারবে।শুধু যোগ্য ব্যক্তি এই গুহায় প্রবেশ করতে পারে। অযোগ্যরা মৃত্যুমুখে পতিত হয় ।চলো , পা চালিয়ে চলো কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবো।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনে এক বিশাল পাহাড়ের সামনে উপস্থিত হলো। পার শুরুর দিকে ঢালটা খুব একটা খাড়াই নয়। গুরুদেব  আদিত্যকে নিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করলেন। অল্প কিছুক্ষণ ওঠার পর তারা একটি গুহা মুখের সামনে এসে পৌছলেন। গুহার ওপরে একটা পাথরের উপর একটি ত্রিভুজ চিহ্ন খোদাই করা আছে। ত্রিভুজের মধ্যে একটি বিন্দু চিহ্ন।
গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " এই ত্রিভুজ চিহ্ন টি যে দেখতে পাচ্ছ এটি র তিনটি কোণ তিনটি কূপের প্রতীক। তিনটি বাহু তিনটি গুণের প্রতীক। এবং মধ্যবর্তী বিন্দুটি পাশুপত অস্ত্রের প্রতীক। "
আদিত্য প্রশ্ন করল " গুরুদেব আপনি কি করে এই কূপের সন্ধান পেলেন ?"
গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " আমি নিজে এই তিনটি কূপে অবগাহন করেছি। কিন্তু চেষ্টা করেও পাশুপত অস্ত্র লাভ করতে পারিনি। সেজন্য আমি তোমায় তিনটি কূপে অবগাহন করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারি কিন্তু পাশুপত অস্ত্র তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় পেতে হবে। আমাকে আমার গুরু এই তিনটি কূপের সন্ধান দিয়েছিলেন। যুগ যুগ ধরে পাঠশালার শিক্ষার্থীরা অশুভ বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। গুরু পরম্পরা য় আমরা এই তিনটি কূপের অবস্থানের কথা জানি।আমরা আমাদের উপযুক্ত ও যোগ্য শিক্ষার্থীকে এই বিষয়ে অবগত করি এবং তাদের এই তিনটি কূপে অবগাহন করতে সাহায্য করি । যাতে তারা ভবিষ্যতে যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। পাঠশালার  প্রধান হওয়ার যোগ্যতাই হলো ,এই তিনটি কূপে অবগাহন করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা।
এখন শোনো মনে রাখবে রজোগুণ স্থিতাবস্থা বজায় রাখে। রজোগুণ হলো সত্ত্বগুণ ও তমোগুণের মধ্যবর্তী অবস্থা। উভয় গুনের ভালো অংশটুকু  দিয়ে রজোগুণ  তৈরি হয়েছে। এই গুণ পেতে হলে তোমাকে সবকিছুর মধ্যে মধ্যবর্তী কোন কিছুকে পছন্দ করতে হবে।"
এরপর গুরুদেব তমোঘ্ন একটা মন্ত্র জপ করলে তার হাতে উদয় হলো এক আশ্চর্য তরবারি। সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠলো সেই তরবারি। সেই তরবারি টা আদিত্যর হাতে তুলে দিয়ে গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " এটি গুরু পরম্পরায় চলে আসা মন্ত্রপূতঃ তরবারি। এর একটি বিশেষ গুণ আছে। এই তরবারি যতক্ষণ তোমার হাতে থাকবে ততক্ষণ তুমি ক্লান্ত হবে না। আমার কাজ তোমাকে শুধুই পথনির্দেশ করা।এখন এই গুহার মধ্যে প্রবেশ করে তোমাকে সেই কুপের সন্ধান ও তাতে অবগাহন নিজেকেই করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা বলে ভিতর তোমাকে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। আর এই কাজের জন্য এই পরম্পরাগত তরবারি তোমার বিশেষ প্রয়োজন হবে। এখন যাও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দাও।"
আদিত্য ভক্তিভরে গুরুদেব কে প্রণাম করে তার আশীর্বাদ নিল তারপর তরবারি গ্রহণ করে সেই গুহায় প্রবেশ করলো।
বেশ বড়সড় গুহা । গুহামুখ চওড়া হলেও খানিকটা দূর গিয়ে সরু হয়ে গিয়েছে। ভিতরে অন্ধকার কি আছে দেখা যাচ্ছে না। খোলা তরবারি হাতে নিয়ে আদিত্য এগিয়ে চলেছে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর আদিত্য পিছন ফিরে দেখল গুরুদেব কে দেখা যাচ্ছে না। আদিত্য এগিয়ে চললো। অনেকক্ষণ যাওয়ার পর আদিত্য দেখতে পেলো সরু হয়ে যাওয়া গুহাটি পুনরায় চওড়া হতে শুরু করেছে। আরো কয়েক মিনিট হাঁটার পর আদিত্য একটা বিশাল হল ঘরের মতো জায়গায় এলো। হল ঘরটিতে অনেক উঁচু থেকে সূর্যের আলো ফাটল দিয়ে আসছে। আলোর তীব্রতা বলে দিচ্ছে সূর্য এখন মধ্যগগনে। সেই আলোয় দেখা যাচ্ছে সামনে একটা অতলস্পর্শী খাদ। একটা বিশাল পাথরের টুকরো খাদের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত সেতুর মতো পড়ে আছে। আদিত্য বুঝতে পারল তাকে ওই পাথরের সেতু দিয়ে ওপারে যেতে হবে ওপারে আরো একটি গুহামুখ দেখা যাচ্ছে। আর সেই সেতুর ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে আছে একটি বিশাল সিংহ। আদিত্যকে এগিয়ে যেতে হলে ওই সিংহটির মুকাবিলা করেই যেতে হবে। আদিত্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই একটা নারী কন্ঠস্বর বলে উঠলো " ফিরে যাও। যেখান থেকে এসেছো সেখানে ফিরে যাও। না হলে তোমার মৃত্যু নিশ্চিত।"
আদিত্য চমকে গিয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। নারী কণ্ঠস্বর আবার বলে উঠলো " ফিরে যাও।"
আদিত্য কাউকে না দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো " ফিরে যাওয়ার জন্য আমি আসিনি। তুমি কে সামনে এসো।"
নারী কন্ঠ বলল " আমি এই গুহার অধিষ্ঠাত্রী দেবী।"
আদিত্য বলল " আপনি আমার প্রণাম নেবেন। এই সৌরমণ্ডল কে বাঁচাবার জন্য আমার তিনটি জ্ঞান কূপে অবগাহন করা প্রয়োজন। আপনি আমার কাজে সহায় হোন।"
নারীকণ্ঠ পুনরায় শোনা গেল " তার আগে তুমি তোমার যোগ্যতা প্রমাণ করো। সামনে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত সিংহ কে এড়িয়ে অথবা হত্যা করে সামনে এগিয়ে যাও। সামনে তোমার জন্য আরো পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।"
এদিকে আদিত্যর গলার স্বর ঘুমন্ত সিংহ কে জাগিয়ে তুলেছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে সিংহটি এখন ক্ষুধার্ত। আর সামনে তার খাদ্যরূপে উপস্থিত একটি মানুষ। নাম আদিত্য। সিংহটি ধীরে ধীরে আদিত্য দিকে এগিয়ে আসছে। আদিত্য খোলা তরবারি বাগিয়ে নিয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সিংহটি একটা হাই তুলে আদিত্যর মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। দুই শত্রু পরস্পরের দিকে চোখ রেখে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর সিংহটি লাফ দেয়ার উপক্রম করলো। আদিত্য তার তরবারি টা শক্ত হাতে ধরে সিংহের দিকে চোখ করে সামান্য নিচু হয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে সিংহের লাফ দেয়ার জন্য অপেক্ষায় রইলো। সিংহটি আদিত্য র উদ্দেশ্যে লাফ  দেয়া মাত্রই আদিত্য এক দৌড়ে খানিকটা এগিয়ে সিংহের বুকে শূন্যেই তার তরবারিটা গুঁজে দিলো। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সাইডে লাফিয়ে সরে গেলো। তরবারি টা সিংহের বুকে গোঁজা মাত্রই সিংহটি র মৃত্যু হয়েছিল। সিংহটি পাথরের চাতালে ধপাস করে পড়লো। আদিত্য কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে সিংহের কাছে গিয়ে তার বুকের পাঁজরের ভেতর থেকে তরবারি টা বের করে নিলো। তারপর পাথরের সেতু দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। সামনে আরো একটি গুহামুখ। সেখান দিয়ে খানিকটা এগোবার পর আবার একটি হলঘর। এখানে একটি পাথরের চাতালের উপর সুন্দর সুন্দর সোনালী ধাতুর থালায় বিভিন্ন রকমের ফল সাজানো আছে। কোন থালায় আম, কোনোটিতে জাম, কোনোটিতে কলা, কোনোটিতে নারিকেল, কোনটিতে আপেল , কোনটিতে আঙ্গুর ইত্যাদি। সেই নারী কন্ঠ বলে উঠলো " তুমি যে উদ্দেশ্যেই আমার গুহায় আসো না কেন তুমি আমার অতিথি। আর অতিথি সৎকার আমার পরম কর্তব্য। ওইযে রাশি রাশিফল মূল দেখছো ওর মধ্যে একটি মাত্র তোমার খাদ্য। বাকিগুলি বিষাক্ত। ওই ফল গুলির মধ্যে নিজের জন্য খাদ্য ও পানীয়ের অভাব মিটে যাবে এমন কিছু পছন্দ করো। তুমি তোমার বুদ্ধি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার পরিচয় দাও।"
আদিত্য সব ফলগুলির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর সে নারিকেল টি বেছে নিয়ে  তরবারি দিয়ে সেটি ছাড়িয়ে তার জল পান করলো। এবং শাঁস টি খেলো। নারী কন্ঠ বলে উঠলো " সাধু ,সত্যিই তুমি সাহস ও বুদ্ধিতে অতুলনীয়। এগিয়ে যাও সামনে আরেকটি গুহামুখ আছে। সেই গুহামুখ দিয়ে গেলে তুমি তিনটি কূপ দেখতে পাবে। তার মধ্যে সঠিক কূপটি বেছে নিয়ে অবগাহন করতে হবে। মনে রাখবে ভুল কূপে অবগাহন করা মাত্রই তুমি মৃত্যুমুখে পতিত হবে। তোমার জয় প্রার্থনা করি।"
আদিত্য বললো "ধন্যবাদ দেবী।"
আদিত্য সামনের গুহা মুখ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে একটা খোলা প্রান্তরে গিয়ে পড়লো। সামনে তিনটি  গোলাকার কূপ  রয়েছে। দেখে বুঝা যাচ্ছে বেশি গভীর নয়। তিনটিতেই জল রয়েছে। একদম বামদিকে যেটি রয়েছে তার জলের রং হলুদ। মধ্যে যেটি রয়েছে তার রং লাল। ডান দিকে যেটা রয়েছে তার জলের রং বেগুনি। তিনটি জলাশয়ে নামবার জন্য পাথরের সিঁড়ি রয়েছে।
আদিত্য এবার চিন্তায় পড়ে গেল। দেবী বলেছেন সঠিক কূপটি বেছে নিতে হবে। তিনটির মধ্যে কোনটি সঠিক বেছে নেওয়া মুশকিল। মনে পড়লো গুরুদেব বলেছেন রজোগুণ হল সত্ত্বগুণ ও তমোগুণের মধ্যবর্তী অবস্থা। মনে পড়ল শিক্ষাগ্রহণের  সময় সে শিখেছিলো সূর্যের আলোয় লুকিয়ে আছে সাতটি রং। সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রং বেগুনি আর সবচেয়ে দীর্ঘতম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রং লাল। মধ্যবর্তী তরঙ্গদৈর্ঘ্য হলুদ রঙের। যেহেতু রজোগুণ বাকি দুই গুণের মধ্যবর্তী অবস্থা তাই এক্ষেত্রে আদিত্য স্থির করলো সে হলুদ রঙের জল যুক্ত কূপে অবগাহন করবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।
আদিত্য হলুদ বর্ণের কূপে পাথরের সিঁড়ি বেয়ে নামলো। খুব একটা গভীর নয়। জলের গভীরতা কোমর পর্যন্ত। সে মনে মনে গুরুদেব কে প্রণাম করে জলে স্নান করলো। স্নান করে মাথা তোলা মাত্র মনে হল শরীরের সব দুর্বলতা দূর হয়ে গেছে। শরীরটাকে অনেক হালকা ও ঝরঝরে লাগছে। 
সেই নারী কন্ঠে বলে উঠলো "ধন্য তুমি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো। আশীর্বাদ করি তুমি তোমার কাজে সফল হও।"

আদিত্য যে পথে এসেছিল সেই পথে পুনরায় বাইরে এলো। দেখলো গুরুদেব একটি পাথরের ওপর বসে ধ্যানমগ্ন। আদিত্য এসে তার পদস্পর্শ করে প্রণাম করলো। গুরুদেবের ধ্যানভঙ্গ হলো। তিনি হেসে বললেন "প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলো। এখনো অনেক গুলি বাকি। চলো যাওয়া যাক হাতে সময় বেশী নেই। (চলবে)

Friday, November 1, 2019

রক্ষক ৮


                     (১২)

সময় ২০৩৯ সাল।
পাঠশালা।
হিমালয়ের গোপন উপত্যকা।

গত পরশু থেকে প্রবল তুষার ঝড় শুরু হয়েছে। চারিদিকে সাদা রঙের বরফে আচ্ছন্ন। সেই প্রবল তুষার ঝড় ও সেই সঙ্গে ক্রমশ বেড়ে চলা শৈত্যপ্রবাহে পাঠশালার বাইরে কোথাও কোনো জনপ্রাণী নেই।

 সূর্যোদয় হওয়ার কিছু পরেই আদিত্য কে গুরুদেব তমোঘ্ন ডেকে পাঠালেন ‌। যদিও সূর্যোদয় বলতে সূর্য উঠেছে তা নয়।এই তুষারপাতের মধ্যে সূর্য ওঠা অসম্ভব। পূর্ব দিক আলোর ছটায় সাদা রঙের হওয়াকেই পাঠশালার সকলে সূর্যোদয় ধরে নিয়ে  দৈনন্দিন কাজকর্ম শুরু করা হয়।

'পাঠশালা' নামের এই শিক্ষায়তনটি বিশালাকায় ও বহু কক্ষবিশিষ্ট। তার মধ্যে কোন কক্ষে গুরুদেব তমোঘ্ন থাকেন সেটা আদিত্য জানতোই না।

এক শিক্ষক আদিত্য কে ডেকে নিয়ে পথ দেখিয়ে গুরুদেব তমোঘ্ন র কক্ষের সামনে পৌঁছে দিলেন।

আদিত্য দেখলো সে এক বিশালাকায় কারুকার্য খচিত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। শিক্ষকটি আগেই চলে গেছে। একটু ইতস্তত করে দরজায় ধাক্কা দিলো।অতবড় দরজাটা আদিত্যর সামান্য ধাক্কা দেওয়াতেই খুলে গেলো।

আদিত্য গুরুদেব তমোঘ্ন র ঘরে প্রবেশ করলো। বিরাট লম্বা হলঘরের মতো ঘর। চারিদিকে থরে থরে আলমারিতে ভর্তি। বেশীরভাগ আলমারিতে বই পত্র ও বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথি সংরক্ষিত রয়েছে। কয়েকটা আলমারিতে অস্ত্র শস্ত্র রয়েছে। তার মধ্যে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র আদিত্যর অজানা। আদিত্য এদিক-ওদিক তাকিয়ে অনেক অজানা রহস্যময় বস্তু দেখতে পেলো। একটা পাকানো দড়ি দেখতে পেলো। যেটা আপনাআপনি গুটিয়ে যাচ্ছে আবার কিছুক্ষণ বাদে খুলে যাচ্ছে। একটা ছোট কলসি চোখে পড়লো।যার মুখ দিয়ে গল গল করে নীলাভ ধোঁয়া বেরিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগল একটা খুব সুন্দর রহস্যময় ফুলের গাছ। গাছটিতে একটিমাত্র রামধনুর মতো সাত রংয়ের পাপড়িযুক্ত ফুল ফুটে আছে। সবচেয়ে আশ্চর্য গাছের লম্বা লম্বা পাতা গুলো তার দিকে ইশারা করে কাছে ডাকছে। অনেকটা মানুষ যেমন হাতের ইশারায় অন্য মানুষকে কাছে ডাকে ঠিক তেমনি। আদিত্য আজব আকর্ষণে সেই গাছটির দিকে এগিয়ে গেলো। গাছটির কাছে যাওয়ার আগেই একটি চেনা কণ্ঠস্বর তাকে বাধা দিয়ে বললো "খবরদার গাছটিকে ছোঁবে না।"

আদিত্য চমকে গিয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো গুরুদেব তমোঘ্ন ঠিক তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন।

গুরুদেব আবার বললেন "গাছটিকে ছুঁলেই তুমি ভয়ংকর বিপদে পড়বে। এটি  সম্মোহনী গাছ। সারা পৃথিবীতে এই একটিমাত্র সম্মোহনী গাছ অবশিষ্ট আছে। এই গাছকে ছোঁয়া মাত্র গাছের গায়ে অবস্থিত অতি সূক্ষ্ম রোঁয়া থেকে তীব্র বিষাক্ত রাসায়নিক তোমার ত্বকের মধ্য দিয়ে রক্তে পৌঁছে যাবে। তুমি তৎক্ষণাৎ জীবন্ত পুতুলের মত হয়ে যাবে। কোনরকম নড়াচড়া করতে পারবেনা । এমনকি তোমার কোন রকম নড়াচড়া করার ইচ্ছা পর্যন্ত থাকবে না। তারপর গাছটি তার সূক্ষ্ম রোঁয়া গুলি দিয়ে তোমার শরীরের যাবতীয় রক্ত চুষে নেবে।"

গুরুদেবের কথা শুনে আদিত্য তৎক্ষণাৎ সভয়ে পিছিয়ে এলো।

আদিত্য এরপর গুরুদেব কে প্রণাম করলো। তারপর একটু দোনা মোনা করে প্রশ্ন করলো "গুরুদেব এই পাকানো দড়ি ও কলসির রহস্য বড়ো জানতে ইচ্ছা করে।"

গুরুদেব তমোঘ্ন বলল "ওই যে দড়িটা দেখছো ওটা একটা ভয়ঙ্কর শস্ত্র। ওই দড়ি কেউ ছিঁড়তে পারে না। এমনকি কোনো অস্ত্রের সাহায্যে ওটি কাটা যায় না। ওটি কারোর দিকে ছুঁড়ে দিলে সে দড়িতে আপনা থেকেই আবদ্ধ হয়ে যায়। একটা বিশেষ মন্ত্র দ্বারা এই দড়িকে নিজের বশে রাখা যায়। নয়তো এই দড়ি তার স্বভাব বশতঃ যেকোনো জীবন্ত বস্তুকে বা প্রাণীকে আবদ্ধ করে।

আর ওই যে কলসিটা থেকে নীলাভ ধোঁয়া বেরিয়ে আছে ওইটার মধ্যে পৃথিবীর যাবতীয় লুকানো গুপ্তধন রয়েছে। একটি বিশেষ মন্ত্র আছে। এই মন্ত্রটি পাঠ করে যদি কেউ ওই কলসির মধ্যে হাত দেয় তবে পৃথিবীর যেকোনো একটি লুকানো গুপ্তধনের কিছু অংশ অবশ্যই হাতে পাবে।"

তমোঘ্ন এবার আদিত্য কে তার পিছনে পিছনে আসতে বললেন। গুরুদেব তমোঘ্ন তার ঘরের একটি বিশেষ বইয়ের আলমারির কাছে গিয়ে  আলমারি খুলে দুটি বইয়ের স্থান পরিবর্তন করলেন। সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি বইয়ের আলমারি স্থান  পরিবর্তন করলো। একটা গুপ্ত দরজা প্রকাশ হলো। আদিত্য দেখল ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে । গুরুদেব তমোঘ্ন আদিত্যকে আহ্বান করলেন "এসো যাওয়া যাক ।" 

গুপ্ত দরজার মধ্যে দিয়ে আদিত্য গুরুদেব তমোঘ্নর সাথে এক নতুন কক্ষে উপস্থিত হলো।

এই কক্ষে কোনো আসবাবপত্র নেই। কক্ষের মেঝেতে এক সুন্দর আশ্চর্য নকশা করা গালিচা বিছানো। কক্ষের এক পাশে একটি সুন্দর কারুকার্যখচিত দরজা আছে। গুরুদেব তমোঘ্ন আদিত্যকে বসতে ইশারা করলেন। আদিত্য বসলে তিনিও তার সামনে বসলেন।

গুরুদেব তমোঘ্ন বলতে শুরু করলেন " প্রিয় আদিত্য, 

                     আজ তোমাকে তোমার জীবনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানাবো। তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র। তুমি অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী। তোমার ন্যায়  কুশলী যোদ্ধা এই মুহূর্তে পৃথিবী তথা সৌরমন্ডলে বিরল। এত অল্প দিনে তুমি এতকিছু শিখতে পেরেছো শুধু তাই নয় সব  রকম বিদ্যাতেই তুমি নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছো। আমি তোমার বর্তমান জন্মের প্রায় সব তথ্যই জানি। সেই সঙ্গে তুমি পূর্ব জন্মে কি ছিলে এবং কেনইবা জন্মগ্রহণ করেছো সেই সব জানি।

সৃষ্টির আদিকাল থেকে এই সৌরমণ্ডলের একজন অভিভাবক আছেন। তিনি কখনো প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষভাবে এই সৌরমণ্ডলের অস্তিত্ব যাতে বজায় থাকে এবং এর প্রাণীকুলের অস্তিত্ব যাতে রক্ষা পায় সেজন্য প্রতিনিয়ত সচেষ্ট থাকেন। এই অভিভাবক রক্ষক নামে পরিচিত। যদিও বহুকাল আগেই তার দেহের বিনাশ হয়েছিলো তবু তিনি সুক্ষ্ম দেহে এই সৌরমণ্ডলের এক বিশেষ স্থানে অবস্থান করছিলেন। 

 কিছুকাল আগে তিনি জানতে পারেন বর্তমান পৃথিবীর জীবিত প্রাণীকুল এক ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছে।এক বিশালাকায় গ্রহাণু পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে চলেছে।  রক্ষক এই বিষয়ে জানতে পেরে পুনরায় পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করেন।

তুমি হলে সেই রক্ষক। তোমার মা একজন মাতৃকা । পিতা ছিলেন মানুষ। তোমার মধ্যে একাধারে মাতৃকা জাতির গুণ রয়েছে তেমনি আবার মানুষের মতোই আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে।

বৎস, আজ পৃথিবী এক ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। এক বিশাল গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। সেই গ্রহাণু যদি পৃথিবীতে আছড়ে পরে তবে তৎক্ষণাৎ পৃথিবীর সব প্রাণীকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমার মধ্যে সেই শক্তি বর্তমান আছে যার সাহায্যে তুমি পৃথিবীর আপামর প্রাণীকূলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারো। পূর্ব জন্মে তুমি ছিলে এই সৌরমন্ডলে রক্ষক। বর্তমান জন্মেও তুমি পুনরায় এই সৌরমণ্ডলের রক্ষকে পরিবর্তিত হবে। সেজন্য তোমায় শক্তি অর্জন করতে হবে। এই পৃথিবীতে দুইটি জ্ঞান কূপ রয়েছে। একটি রজোগুণের কূপ অন্যটি সত্ত্বগুণের কূপ। এই দুইটি কূপে অবগাহন করার পর তুমি তৃতীয় তমোগুণের কূপে অবগাহন করার অধিকার লাভ করবে। দ্বিতীয় কূপটি রয়েছে পৃথিবীর বাহিরে বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা যেখানে তোমার মা অবস্থান করছেন। সেখানেও তোমায় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। তিনটি কূপে অবগাহন করার পর তোমাকে এক ভয়াবহ অস্ত্র "পাশুপত " এর অধিকার লাভ করতে হবে। এই পাশুপত অস্ত্র বিনা কিছুতেই ওই বিরাট গ্রহাণুকে ধ্বংস করা যাবে না। আমি তোমায় তিনটি কূপে অবগাহন করতে সাহায্য করবো কিন্তু পাশুপত অস্ত্র সম্পূর্ণ নিজের বিদ্যা বুদ্ধি ও কৌশলের দ্বারা তোমায় লাভ করতে হবে।"

গুরুদেব তমোঘ্ন চুপ করলেন।

আদিত্য বলল " গুরুদেব আমি আপনার চরণ স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করছি আমার জীবন সকলের কল্যাণের জন্য উৎসর্গ করলাম। আপনি আমায় পথ দেখান আমি নিশ্চিত আমি এই সৌর মন্ডল তথা পৃথিবীকে আগত বিপদ ও ভবিষ্যতের যাবতীয় বিপদ থেকে রক্ষা করবো।"

গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " বেশ ,সময় নষ্ট করে লাভ নেই। এমনিতেই সময় আমাদের হাতে খুব অল্পই আছে। তুমি প্রস্তুত তো?"

আদিত্য বললো "আমি প্রস্তুত।"

গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন "এসো আমার সঙ্গে।"

গুরুদেব তমোঘ্ন সেই গোপন কক্ষের যে কারুকার্যখচিত দরজাটি রয়েছে তার সামনে এলেন।

গুরুদেব তমোঘ্ন আদিত্য কে উদ্দেশ্য করে বললেন" এই যে দরজাটি দেখছো এটি আসলে একটি টাইম পোর্টাল। এটি আসলে এক জটিল যন্ত্রের প্রবেশদ্বার। এই যন্ত্রের সাহায্যে এই সৌরমন্ডলের যেকোনো স্থানে ইচ্ছা করা মাত্র নিমেষের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় এবং সেখান হতে পুনরায় এখানে ফেরা যায়। "

গুরুদেব তমোঘ্ন আদিত্যর হাতে একটি আংটি পরিয়ে দিয়ে বললেন " এই আংটি টি এই যন্ত্রটির সুইচের মতো। আংটির  উপর যে লাল রঙের পাথরটি আছে সেটিতে চুম্বন করে তুমি যে স্থানে যাওয়ার কথা ভাববে সেখানেই তৎক্ষণাৎ পৌঁছে যাবে। এখন চলো তোমাকে নিয়ে প্রথমে রজোগুণের কুপে পৌঁছাবো। যন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করার পর তুমি ও আমি একইসাথে নিজের নিজের আংটির পাথর চুম্বন করবো। যেহেতু আমি সেই কূপের অবস্থান জানি তাই আমি সেই স্থানের কথা চিন্তা করবো। তুমি কেবল ভাবতে থাকবে 'আমার ইচ্ছাই তোমার ইচ্ছা।'"

গুরুদেব তমোঘ্ন হাতের ধাক্কা দিয়ে সেই কারুকার্যখচিত দরজাটি খুলে ফেললেন। ভিতরে নিকষ কালো অন্ধকার ।

গুরুদেব তমোঘ্ন ও আদিত্য সেই কাল অন্ধকারাচ্ছন্ন যন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করলেন। গুরুদেব তমোঘ্ন আদিত্য কে আদেশ করলেন " এবারে আংটিতে চুম্বন করো।"

দুজনে তাদের নিজের নিজের আংটিতে চুম্বন করলো। (চলবে)

Tuesday, October 22, 2019

প্রহেলিকা

                       


"কস্তুরী মৃগের নাম শুনেছো ? " সুবিমল বাবু অর্ণব কে প্রশ্ন করলেন।

অর্ণব বললো "শুনেছি। কিন্তু কেন বলুন তো ?"

সুবিমল বাবু বললেন  " কস্তুরী মৃগ তার গন্ধের উৎস বুঝতে পারে না। এদিকে ওদিকে সুগন্ধের তাড়নায় দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। শেষে এই গন্ধ তার  কাল হয়। তার নাভির মধ্যে থাকা তীব্র সুগন্ধি তার মৃত্যুর কারণ হয়। অপরাধী অনেকটা এই কস্তুরী মৃগের মতো হয়।অপরাধ করলে সেটা গোপন করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু মনের মধ্যে থাকা ভয় তাকে দিয়ে এমন কিছু  ভুল করিয়ে দেয় , যেটা তাকে ধরিয়ে দেয়।"

অর্ণব বললো "কিন্তু মনে করুন যদি সে পেশাদার অপরাধী হয় এবং তার ভুল করার সম্ভাবনা খুবই কম , তাহলে ?"

সুবিমল বাবু বললেন "সেক্ষেত্রে কাজটা কঠিন হয়ে যায় কিন্তু আমার দীর্ঘদিনের পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি অতি বড় পেশাদার অপরাধীও কোনো না কোনো ভুল করে বসে ।আর সেই ভুল তাকে ধরিয়ে দেয়।"

কথা হচ্ছিলো অপরাধীদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে।


সুবিমল বাবু একজন রিটায়ার্ড আই পি এস অফিসার। দীর্ঘ দিন কোলকাতা পুলিশের সি আই ডি তে কাজ করেছেন। কিছুদিন সি বি আই তেও ছিলেন। রিটায়ার্ড হওয়ার পর ভবানীপুরের নিজের পৈতৃক বাসভবনের নিচের তলায়  একটি প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলেছেন। নাম দিয়েছেন " কুয়াশা"।

অর্ণব  পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। এক কথায় কম্পিউটারের বিশেষজ্ঞ বলা চলে। মূলত ফ্রীল্যান্সিং করে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কম্পিউটারের সিকিউরিটি প্রদান করে। তাদের সিস্টেম হ্যাকিং থেকে রক্ষা করে। আর ফাঁক তাল পেলেই সুবিমল বাবুর এই "কুয়াশার"বিভিন্ন তদন্তের কাজে অংশ গ্রহণ করে।

অবশ্য সবটুকু যে গোয়েন্দা গিরি কে ভালোবেসে করে তা নয়। যদিও সুবিমল বাবু কিছুদিন আগে অর্ণব কে কুয়াশার তিরিশ শতাংশ পার্টনারশিপ দিয়েছেন। তবুও আসল কারণ অন্য। অর্ণব  আসলে এখানে আসে পূজা কে ইমপ্রেস করার জন্য। পূজা সুবিমল বাবুর একমাত্র মেয়ে। ছোটোবেলা থেকেই ডাকাবুকো। সুবিমল বাবু তাকে ছেলেদের মতো করেই মানুষ করেছেন। ক্যারাটে শিখিয়েছেন। এখন বাপ মেয়েতে  মিলে এই গোয়েন্দা এজেন্সি টা খুলে বসেছেন। অর্ণব সেই কলেজ লাইফ থেকে মনে মনে পূজার প্রেমে পড়ে আছে। কিন্তু পূজার কাছে আজ পর্যন্ত বলার সাহস পায় নি। যতবার নিজের মনের কথা পূজাকে বলবে বলে ঠিক করেছে ততবারই পূজার কাছে গিয়ে এটা ওটা আলতু ফালতু বলে  ফেরত এসেছে। 

পূজা যে অর্ণবের ভালোবাসা বোঝে না তা নয়। পূজাও মনে মনে অর্ণবকে ভালোবাসে। কিন্তু মুখ ফুটে তা কখনো প্রকাশ করে নি। পূজা চায় অর্ণব একবার সাহস করে তাকে তার মনের ভালোবাসা প্রকাশ করুক তারপর সেও জানাবে।

অর্ণব প্রায় রোজই একবার আসে ভবানীপুরের এই " কুয়াশায়"। পূজার বাবা সুবিমল বাবু তার বিরাট কর্মকান্ডের কালেকশন থেকে দারুন দারুন কাহিনী শোনান।

কুয়াশা শুরু করার  পর প্রথম দিকে খুব কম কাজকর্ম আসতো। বেশীরভাগ আসতো বিভিন্ন ব্যাবসায়িক তদন্ত। কোনো কোম্পানি নতুন কি প্রোডাক্ট লঞ্চ করছে, অথবা ম্যানেজমেন্ট নতুন কি সেলস প্রোমোশনের নীতি অবলম্বন করছে সেই সব সম্পকৃত। পরস্পর প্রতিযোগী কোম্পানি গুলো এই ধরনের তদন্ত করাতো।সুবিমল বাবুর ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী পূজা আর অর্ণব এই কাজগুলো কমপ্লিট করতো। কখনো কখনো সুবিমল বাবু  নিজেও তদন্তের কাজে অংশ গ্রহণ করতেন। তারপরের দিকে বিবাহ ঘটিত তদন্ত আসতে লাগলো। কখনো বিবাহের আগে পাত্র অথবা পাত্রীর ক্যারেক্টার কেমন সেই সম্পকৃত তথ্য যাচাই। আবার কখনো কোনো দম্পতির বিবাহিত জীবনে অন্য কারো উপস্থিতি আছে কিনা সেই সম্পকৃত তদন্ত। এই তদন্ত গুলো স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজন করাতো।


এই সব বোরিং কাজ কর্মের মধ্যে দুই একটি ভালো কাজ এসেছে।যেমন   এক বিখ্যাত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সেলস প্রমোশনিং সম্পকৃত তথ্য গুলো প্রতিযোগী কোম্পানি জেনে যাচ্ছিলো । এই কাজে  "কুয়াশার" পুরো টিম অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে প্রমাণ করতে পেরেছিলো যে মালিকের মহিলা পি এ র কাছ থেকে তথ্য পাচার হচ্ছিলো।


কুয়াশার অফিস ঘরটা বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো।  বেশ বড়সড় অফিস ঘর। চারিদিকে সুদৃশ্য ক্যাবিনেট। তাতে বিভিন্ন কেসের ফাইল রাখা আছে। একদিকে সুবিমল বাবুর বসার গদি আঁটা চেয়ার। সামনে একটা সেগুন কাঠের টেবিল। টেবিলের উপর কতগুলো ফাইল রয়েছে। টেবিলের একদিকে একটি আধুনিক কম্পিউটার। টেবিলের উল্টোদিকে দুইটি বসবার চেয়ার। ক্লায়েন্টেরা এসে এই চেয়ারগুলিতেই বসে। এছাড়া সুবিমলবাবুর টেবিলের ডানদিকে একটি সেক্রেটারী বসার টেবিল রয়েছে। সেখানে দুই জন পাশাপাশি বসার জায়গা। পূজা ও অর্ণব এখানেই বসে।

অর্ণব সকাল নয়টা নাগাদ  কুয়াশায় এসে দেখলো অফিস ঘরে কেউ নেই। অন্য দিন পূজা অফিসে চলে এসে অর্ণবের আসার জন্য অপেক্ষা করে। অর্ণব এলে দুজনে কফি খেতে খেতে এটা ওটা গল্প হয়।  আজ বাড়ির চাকর রঘুদা দরজা খুলে দিয়ে বললো "দিদিমণি একটু বাইরে গেছেন। আপনি এলে বসতে বলেছে।এখনি চলে আসবেন।"

অর্ণব বললো "কর্তাবাবু কোথায় ?"

রঘুদা বললো " কর্তাবাবু ব্রেকফাস্ট করছেন। আপনি বসুন , উনি এখনি আসবেন। আমি আপনাকে কফি দিয়ে যাচ্ছি।"

অর্ণব এসি টা চালিয়ে তার জন্য বরাদ্দ চেয়ারে আরাম করে বসলো।রঘু একটু পরেই চা দিয়ে গেলো। একটু বাদেই সুবিমল বাবু ভিতরের দিকের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপরেই এটা ওটা কথার ফাঁকে কস্তুরী মৃগের কথা।

এমন সময় সদরের দিকের দরজা হাট করে খুলে পূজা প্রবেশ করলো। একটা সাদা লেগিংসের উপর সবুজ রঙের কুর্তি তে অপূর্ব সুন্দর লাগছে। অর্ণব তো হাঁ করে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর একটু লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

পূজা নিজের চেয়ারে ধপ করে বসে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করলো "তুমি কতক্ষণ ?"

অর্ণব আমতা আমতা করে বলল "এই তো কিছুক্ষন আগে এসেছি।এসেই শুনলাম তুমি কাজে  গেছো।"

পূজা হেসে বললো "না তেমনি কিছু নয়। আসলে কয়েকটা  বইয়ের দরকার ছিলো। তাই কলেজ স্ট্রীটের এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম। কয়েকটি বইয়ের লিস্ট দিয়ে কিনে রাখতে বলেছিলাম। টাকা দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কয়েকটি বই পেলাম বাকিগুলোর জন্য আবার অন্য দিন যেতে হবে।"


পূজার কথাগুলো শেষ হওয়া মাত্রই সামনের সদর দরজা দিয়ে এক মধ্যবয়সী পুরুষ প্রবেশ করলেন। ভদ্রলোকের গায়ের রং ফর্সা।বয়স আন্দাজ পঞ্চান্ন ছাপান্ন হবে। মাথার সামনের অনেকটা জুড়ে টাক পড়েছে। ভদ্রলোক ঢুকেই ধপ করে সুবিমল বাবুর টেবিলের সামনে একটা চেয়ারে বসে পড়লেন।

তাকে দেখেই পূজা বলে উঠলো " আরে প্রকাশ কাকু যে।তা  অনেকদিন পর কি মনে করে ?

প্রকাশ বাবু বললেন "একটা জরুরী দরকারে তোমার বাবার কাছে দৌড়ে এসেছি। একটা খুন হয়েছে শেক্সপীয়ার সরণীর এক হোটেলে।  হোটেলটির নাম 'কুইন' । তোমার বাবার এখনই যাওয়া প্রয়োজন । খুব হাইপ্রোফাইল লোক। ঘটনাটার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছিনা। তাই কমিশনার সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ করে সোজা তোমার বাবার কাছে চলে এলাম। তুমি তো জানোই এসব বিষয়ে তোমার বাবার মাথা খুব ভালো খেলে। নাও এখন চলো সবাই মিলে যেতে যেতে কথা বলা যাবে। আমি সঙ্গে করে পুলিশের গাড়ি এনেছি।"

প্রকাশ গুপ্ত হল কলকাতা পুলিশের এক অতি উচ্চপদস্থ কর্মচারী। আগে সুবিমল বাবুর অধীনে  কাজ করতেন। এই বাড়িতে বহুদিন আগে থেকেই তার যাতায়াত আছে। পূজা ও অর্ণবকে বহুদিন থেকে চেনেন। তাদের এই 'কুয়াশা' গোয়েন্দা এজেন্সির সাহায্য বেশ কয়েকবার উনি নিয়েছেন। খুব জটিল কোন কেস এলে উনি সুবিমল বাবুর সঙ্গে পরামর্শ করতে দৌড়ে আসেন।


পথে যেতে যেতে প্রকাশ বাবু সব কথা বলতে লাগলেন।


যিনি খুন হয়েছেন তিনি এইচ এ এল (HAL) এর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। উত্তর কলকাতার আহিরীটোলায় তার নিজস্ব বাড়ি। ভদ্রলোকের নাম শুভময় সেন। বয়স 55 থেকে 60 এর মধ্যে। কাজের সূত্রে ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে কলকাতা এসেছেন কয়েকদিনের জন্য। বাড়িতে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটির এবং বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী এক জটিল রোগে শয্যাশায়ী। বড় ছেলের চাঁদনী মার্কেটে ইলেকট্রনিক্স এর দোকান আছে। ছোট ছেলে সৈন্যবাহিনীতে চাকরি করে।সেও পূজার ছুটি উপলক্ষে তিন দিন আগে বাড়ি এসেছে ।গতকাল ছিল বিজয়া দশমী। সন্ধ্যা নাগাদ শুভময় বাবু একটা ছোট ব্রিফকেস সাথে নিয়ে চলে আসেন শেক্সপিয়ার সরণির এই হোটেলে। আসার সময় বাড়িতে বলে আসেন  একটা জরুরী কাজে কলকাতার বাইরে যাচ্ছেন। সেটা যে মিথ্যে কথা ছিল সেটা এখন সবাই বুঝতেই পারছেন। হোটেল ম্যানেজারের কথা অনুযায়ী "রাত আটটা নাগাদ ওই ভদ্রলোক এই হোটেলে আসেন। নিজের পরিচয় পত্র দেখিয়ে এক রাতের জন্য একটি ঘর ভাড়া করতে চান। তারপর টাকা মিটিয়ে সই সাবুদ করেন। হোটেলের এক বেয়ারা তাকে দোতলার একটি ঘরে নিয়ে যায়। বেয়ারাটি তাকে প্রশ্ন করে রাতের খাবার এনে দেবে কিনা? তার উত্তরে শুভময় বাবু বলেন তিনি রাতের খাবার খেয়ে এসেছেন, তবে তার সঙ্গে একজন দেখা করতে আসবে । যিনি আসবেন তাকে যেন সোজা এই ঘরে নিয়ে আসা হয়। বেয়ারা টি মাথা নেড়ে চলে আসে । 

কিছুক্ষণ বাদে কারেন্ট চলে যায়। রিসেপশনে সেই সময় একজন মহিলা ডিউটি করছিল। সেই মহিলা টর্চ লাইট দেখিয়ে বেয়ারাকে সঙ্গে করে জেনারেটর চালাবার ব্যবস্থা করে। কারেন্ট ফিরে আসে  কিছুক্ষণের মধ্যেই। আবার রাত্রি নটা পনেরো নাগাদ কারেন্ট চলে যায়। পুনরায় জেনারেটর চালানোর কিছুক্ষণ পরেই কারেন্ট চলে আসে। রাত্রি সাড়ে নয়টা নাগাদ এক জন পাঞ্জাবী লোক হোটেলের রিসেপশনে এসে তার খোঁজ করে। লোকটি রাতের বেলাতেও কালো চশমা পড়ে ছিলো। মুখে চাপ দাড়ি, মাথায় পাগড়ি। উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। তাকে হোটেলের বেয়ারা ঐ ভদ্রলোকের ঘরে নিয়ে যায়। কিন্তু অনেক বার দরজায় ঠকঠক করার পরেও দরজা খোলেন নি। শেষে জোরে জোরে ডাকাডাকি করলেও তিনি ভিতর থেকে কোনো সাড়া দেননি। তখন হোটেলের বেয়ারা ম্যানেজার কে ডেকে আনে। ইতিমধ্যে গন্ডগোলের আভাস পেয়ে পাঞ্জাবী ভদ্রলোক টি পালিয়ে যায়। হোটেলের ম্যানেজার ভদ্রলোকের নাম ধরে বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে।ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না। তখন হোটেল ম্যানেজার ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখে ভদ্রলোক ঘরের মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন । তার শরীরের ভঙ্গী বলে দিচ্ছিলো তিনি মৃত। 

তবু তিনি স্থানীয় একজন ডাক্তার বাবু কে ডেকে আনেন। ডাক্তার বাবু ভদ্রলোকের হাতের নাড়ী টিপে ও বুকে স্টেথোস্কোপ দিয়ে দেখে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এরপর হোটেল ম্যানেজার পুলিশে খবর দেন।

শেক্সপিয়ার সরণী থানার পুলিশ ভদ্রলোকের মানিব্যাগ থেকে তার পরিচয় পত্র পেয়ে ব্যপারটির গুরুত্ব বুঝে লালবাজার কে রিপোর্ট করে।

লালবাজার থেকে আপাতত এই অধমের উপর তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কমিশনার সাহেব নিজে আজ সকালে ফোন করে জানিয়েছেন যে আমি যেন প্রয়োজন মনে করলে আপনার সাহায্য নিই। 

এইসব বলতে বলতে নির্দিষ্ট হোটেলটি এসে গেল।সুবিমল বাবু গাড়ি থেকে নামতে নামতে প্রকাশবাবুকে কে জিজ্ঞাসা করলেন " মৃতদেহটি কি এখনো  হোটেলেই আছে ?"

প্রকাশ বাবু উত্তর দিলেন " হ্যাঁ । স্থানীয় থানার ওসি বলছিলেন মৃতদেহ পোস্টমর্টেম এর জন্য পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু আমি আপনাদের দেখাবার জন্য মানা করেছি।"

সুপ্রকাশবাবু বললেন " ভালোই করেছেন"।

হোটেলটি মধ্যম মানে। হোটেলটি তিনতলা।  সাধারণত বিদেশি ভ্রমণপিপাসু ট্যুরিস্টরা এইধরনের মধ্যম মানের হোটেলে থাকতে পছন্দ করেন। অবশ্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ী ও পেশাগত লোকেরা এসে এইসব হোটেলে থাকেন। ঢুকেই প্রথমে রিসেপশন।  বেশ সাজানো গোছানো রিসেপশন রুমটি। সামনে একটা গোল টেবিল। টেবিলের পিছন দিকে একটি চেয়ারে একটি মহিলা বসে আছেন। তার সামনে কম্পিউটার। রিসেপশন রুমের এক পাশে দুটি সোফা আগন্তুকদের বসার জন্য। রিসেপশন এর পাশ দিয়ে একটি সিঁড়ি উঠে গেছে। সিঁড়িতে উঠে একটি লম্বা বারান্দা। বারান্দার দুইপাশে অতিথিদের থাকার ঘরগুলি। প্রত্যেকটি ঘরের দরজায় ঘরের নাম্বার লেখা একটি পিতলের প্লেট ।

প্রকাশ বাবু সবাইকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ফার্স্ট ফ্লোর এ উঠে বারান্দার একদম শেষ প্রান্তে  কোণের দিকে সাত নম্বর রুমটিতে ঢুকলেন। রুমের দরজার সামনে দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। প্রকাশ বাবু কে দেখেই তারা স্যালুট ঠুকলেন। এই ঘরটি বারান্দার একদম শেষ প্রান্তে। বাইরে রাস্তা থেকে এই ঘরটি দেখা যায়।

ঘরে প্রবেশ করতে দেখা গেল মেঝের ওপর এক মধ্যবয়সী লোকের মৃতদেহ পড়ে আছে। লোকটির পরনে সাদা হাফ হাতা জামা। কালো রঙের প্যান্ট। জামাটি প্যান্টের ভেতর ইন করে পরা আছে। কোমরে বেল্ট আছে। ভদ্রলোকের ডান হাতের অনামিকায় একটি সোনার আংটি । তাতে মিনে করে এস অক্ষর টি লেখা আছে। ঘরের মধ্যে কোথাও কোনো জিনিস অগোছালো অবস্থায় নেই। 

ঘরের পরিবেশ দেখে কোনো রকম বলপ্রয়োগের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না।ভদ্রলোকের স্মার্টফোনটি রুমের একপাশে বিছানার উপর পড়ে আছে। ঘরটিতে দুটি জানালা। কোন জানালাতেই রড লাগানো নেই। সাইডে খোলা মোটা কাঁচের পাল্লা লাগানো । বিছানাটি রাস্তার দিকের জানালার সঙ্গে সেট করা আছে। অর্থাৎ কেউ শুয়ে জানালা দিয়ে উঁকি মারলেই রাস্তার দৃশ্য দেখতে পাবে। ঘরটি বেশ বড়োসড়ো। দরজা দিয়ে ঢুকলে সামনেই অনেকটা জায়গা জুড়ে মেঝে যেখানে ভদ্রলোকের লাশটি পড়ে আছে। তারপরে বিছানা । বিছানার পাশেই জানালাটি। দরজা দিয়ে ঢুকে বামদিকের কোনে একটি ড্রেসিং টেবিল। ড্রেসিং টেবিলের পাশে আরেকটি জানালা। এটিতেও কোন রড লাগানো নেই। সাইডে খোলা কাঁচের মোটা পাল্লা। সুবিমল  বাবু এই সাইডে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলেন এটি একটি সরু গলি সংলগ্ন। জানালার পাশে ই লোহার পাইপ লাইন নিচে পর্যন্ত নেমে গেছে। সুবিমল বাবু আন্দাজ করলেন খুনী এই পাইপ লাইন ধরে ঘরে প্রবেশ করতে অথবা বেরিয়ে যেতে পারে। ডেসিং টেবিল টা ভালো করে দেখলেন কিন্তু সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেখতে পেলেন না। ঘরের দরজার এক পাশে একটি ছোট স্টিলের আলমারি। আলমারিতে কোন চাবি লাগানো নেই। সুবিমল বাবু আলমারিটার দরজা খুলে দেখতে লাগলেন। এটা ওটা হাতড়াবার পর কিছুই না পেয়ে প্রকাশ বাবু কে প্রশ্ন করলেন " শুভময় সেন যে ব্রিফকেস টি নিয়ে এসেছিলেন সেটি কি পুলিশ নিয়ে গেছে ?" 

প্রকাশ বাবু বললেন " আপনারা আসার আগে পুলিশ সাবধানে ঘরের তল্লাশি নিয়েছে। ব্রিফকেস টি পাওয়া যায়নি।"


সুবিমল বাবু আবার প্রশ্ন করলেন "এই রুমটির পাশাপাশি ঘরে যারা ছিলেন তারা কেউ কোনো শব্দ শুনতে পেয়েছেন কি ?

প্রকাশ বাবু উত্তরে বললেন" পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে সকলেই বলেছেন তারা কোনো শব্দ শুনতে পায় নি।"

সুবিমল বাবু এবার মন দিয়ে লাশটি দেখতে শুরু করলেন। লাশটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। মৃতদেহটির ঠিক ঘাড়ের কাছে একটি কালো স্পট। যেন কেউ ঘাড়ে আঘাত করেছে। ভালো করে খুঁটিয়ে দেখার পর তিনি বিছানার কাছে উঠে এসে পকেট থেকে একটি প্লাস্টিকের গ্লাভস বার করে হাতে পড়ে সাবধানে শুভময় সেনের স্মার্টফোনটি তুলে নিলেন। সেটা বন্ধ ছিল। চালু করতে গিয়ে দেখলেন পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা আছে। তিনি প্রকাশ বাবুর অনুমতি নিয়ে অর্ণবকে এই স্মার্টফোনটি দিয়ে বললেন তুমি  এর লক খুলে যাবতীয় ইমেল ও হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের এবং ফোনের কল লিস্টের ডিটেলস বার করে কালকের মধ্যেই আমায় দেবে। প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের সাহায্য নেবে। এর জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা আশা করি প্রকাশ বাবু করে দেবেন।

প্রকাশ বাবু মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলেন।

তারপর তিনি পূজাকে বললেন "তুমি আজকেই  HAL এর অফিস থেকে খবর নিয়ে জানাবে শুভময় সেন HAL এর কোন প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এবং তিনি ওই প্রোজেক্টের কতটা তথ্য জানতেন।"

 হঠাত কি একটা চোখে পড়ায় তিনি বিছানার পায়ার এক কোণ থেকে সেটা নিচু হয়ে তুলে নিলেন। একটা ময়লা দশ টাকার নোট। পকেট থেকে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট বার করে তাতে সাবধানে ঐ টাকাটি রেখে প্রকাশ বাবুর হাতে দিয়ে বললেন "প্রকাশ এই টা একটু ফারেনসিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে। এই টাকার উপরে কার কার হাতের ছাপ আছে সেটা পরীক্ষা করে দেখতে বলবে। এখানে যা যা দেখার  আপাতত দেখে নিয়েছি। এখন তুমি মৃতদেহটি পোস্টমর্টেম এর জন্য চালান করে দিতে পারো। সেইসঙ্গে ফরেনসিক বিভাগ কে দিয়ে এই ঘরে কার কার হাতের ছাপ আছে তা পরীক্ষা করাবে। সেই সঙ্গে জানালার পাশের পাইপ লাইনের উপর থেকে হাতের ছাপ সংগ্রহ করবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা পুলিশকে এই হোটেলের সব কর্মচারী দের বয়ান নিয়েছে?যদি নিয়ে থাকে তবে তার এক কপি আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। সেই সঙ্গে এই এলাকার যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তার একটা কপি আমার কাছে পাঠাবে।"

প্রকাশ বাবু সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন।


হোটেল থেকে বেরিয়ে সুবিমল বাবু প্রকাশ বাবু কে বললেন একবার শুভময় সেনের বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন। হতে পারে তিনি পারিবারিক ঝগড়ার কারণে খুন হয়েছেন।

প্রকাশ বাবু মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বললেন "চলুন তবে যাওয়া যাক। বুঝলে পূজা তোমার বাবাকে এই জন্যই এতো শ্রদ্ধা করি।যে কোনো ঘটনার সব দিক খুঁটিয়ে দেখে তবে সিদ্ধান্ত নেন।"


আহিরীটোলায়  শুভময় সেনদের বাড়িটি  শরিকী। বড়সড় দোতলা বাড়ি। একপাশে শুভময় বাবুর ভাই থাকেন। তিনি স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক। তার দুই টি মেয়ে। মেয়ে দুটির বিয়ে হয়ে গেছে। এখন স্বামী স্ত্রী দুজনে থাকেন।শুভময়বাবু ও তার ভাইয়ের মধ্যে সদ্ভাব রয়েছে।

পুলিশের জীপ  গাড়ি বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই যে ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন তাকে দেখতে অনেকটা শুভময় সেনের মতো। সকলে জীপ গাড়ি থেকে নামতেই তিনি হাতজোড় করে  বললেন " নমস্কার , আমি সুদীপ সেন। মৃত শুভময় সেনের ছোট ভাই। আসুন, ভিতরে আসুন। বুঝতেই তো পারছেন ঘটনাটা শুনে সকলে খুব আপসেট হয়ে গেছে।"

প্রকাশ বাবু ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন " আপনাদের অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু জানেন তো পুলিশের কিছু রুটিন চেক আপ আছে।"

সুদীপ সেন বললেন " সে তো নিশ্চয়ই। তবে জানেন তো এখন সবার মনের অবস্থা ভালো নয়।"

সুবিমল বাবু বললেন "আমরা সামান্য কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবো।"


ঘরে প্রবেশ করেই প্রথমে  একটি ছোট্ট বারান্দা । সেখানে একটি বুলেট গাড়ি দাঁড় করানো আছে। তারপর একটি বসার ঘর। সেখানে অনেক আত্মীয় স্বজনদের ভিড়। মৃত্যুর খবর পেয়ে সবাই সহানুভূতি প্রকাশ করতে এসেছেন। সুদীপ বাবু সবাইকে নিয়ে সেই ঘর পেরিয়ে ভেতরের দিকে অন্য একটি ঘরে বসালেন। বেশ সাজানো গোছানো ঘর। একদিকে একটি বইয়ের দেওয়াল আলমারি। তাতে অনেক নামিদামি লেখকের  বই সাজানো আছে। ঘরের একপাশে একটি স্টিলের খাট। খাটে সুদৃশ্য পরিপাটি করে সাজানো বিছানা । কয়েকটি বসবার চেয়ার। সুবিমল বাবু ও প্রকাশ বাবু দুজনে দুটি চেয়ার দখল করলেন। অর্ণব ও পূজা খাটের একপাশে বসলো। সুদীপবাবু একপাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। একটি কম বয়সী বউ সকলের জন্য ট্রেতে করে চা ও বিস্কুট নিয়ে এলো। সুদীপবাবু পরিচয় করালেন "এ হলো আমার বড় বৌমা মনিকা। বাড়ির সব কাজ এই করে। শুনেছেন নিশ্চয়ই বৌদি শয্যাশায়ী। পুরো সংসারের দায়িত্ব এই সামলায়।" 

বৌটি সবাইকে চা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

সুবিমল বাবু সুদীপ বাবুকে প্রশ্ন করলেন "আপনার সঙ্গে আপনার ভাইয়ের সম্পর্ক কেমন?"

সুদীপবাবু বললেন দাদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। তবে দাদা ইদানিং খুব  চিন্তায় ছিলেন। আসলে বৌদির জন্য প্রতি মাসে অনেক টাকা লাগে। বৌদির চিকিৎসার জন্য দাদার বেশ কিছু দেনা হয়ে গেছে। এছাড়া বাড়িটা মেরামত করার খুব প্রয়োজন। সেজন্য অনেক টাকা লাগবে। চাঁদনী মার্কেটে আমাদের যৌথ ভাবে চারটি দোকান আছে। তার একটিতে বড় খোকা মানে আমার বড় ভাইপো অজয় ব্যবসা করে। বাকি তিনটি দোকান বন্ধ আছে। কিছুদিন আগে দাদা আমাকে প্রস্তাব করে যে ওই তিনটি দোকান বিক্রি করে টাকা কড়ি যা পাওয়া যাবে দুই ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আমি  রাজি হইনি। সেজন্য দাদার সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এছাড়া কখনো দাদার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয় নি।"

সুবিমল বাবু পুনরায় প্রশ্ন করলেন "কালকে রাত্রি আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত আপনি কোথায় ছিলেন ?"

সুদীপবাবু বললেন "আমি বাড়িতেই ছিলাম। ঐ সময় আমার   ভাইপো অজয় ও বৌমা আমার ঘরে এসেছিলো বিজয়া দশমীর প্রণাম করতে।"

সুবিমল বাবু বললেন "আপনার বৌদির কি অসুখ হয়েছে?"

সুদীপবাবু উত্তর দিলেন " বৌদি একপ্রকার নার্ভের অসুখ থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেছে। তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। তার জন্য সারাক্ষণ দুইটি নার্স থাকে। একজন দিনের বেলা, অন্যজন রাতের বেলা। বৌদির চিকিৎসা ও দেখাশোনার জন্য মাসে প্রায় 50-60 হাজার টাকা খরচা হয়। ডাক্তার বাবু আশ্বাস দিয়েছেন যে ওনার একটা অপারেশন করালে উনি অনেকটা সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু সেই অপারেশনের জন্য প্রায় 10 লক্ষ টাকা প্রয়োজন। সেজন্যই দাদা দোকান গুলি বিক্রি করতে চাইছিলেন। আমি রাজি হইনি কারণ আমার  দুইটি মেয়ে। দুইজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে । আমার বড় মেয়ে ও জামাই আর্থিক দিক থেকে দুর্বল। আমি চাইছিলাম তিনটি দোকান না বিক্রি করে দুটি বিক্রি করা হোক। একটি দোকান আমার বড় জামাই কে ব্যবসার জন্য দেওয়া হোক। দাদা রাজি হয়নি।"

সুবিমল বাবু বললেন "আপনার ছোট ভাইপো কি ঘরে আছে? তাকে একবার ডেকে দিন।"

সুদীপবাবু "নিশ্চয়ই" বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

কয়েক মিনিট বাদে একটি লম্বা-চওড়া সুস্বাস্থ্যবান একটি  যুবক ঘরে ঢুকলো। সুবিমল বাবু বললেন "বসুন। আপনি নিশ্চয়ই শুভময় বাবুর ছোট ছেলে বিজয়?"

যুবকটি বললো "হ্যাঁ।"

সুবিমল বাবু বললেন "আপনি আর্মির কোন বিভাগে কাজ করেন ?"

বিজয় উত্তর দিল "আমি প্যারা এস এফ বিভাগে কাজ করি?"

সুবিমল বাবু পুনরায় প্রশ্ন করল "কাল রাত্রি আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত আপনি কোথায় ছিলেন ?"

বিজয় উত্তর দিলো "  আমি কাল সন্ধ্যায় এসপ্ল্যানেড এর বিগ বাজারের শোরুম থেকে কিছু জিনিস কিনতে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরেছি রাত দশটা নাগাদ।"

সুবিমাল বাবু প্রশ্ন করলেন "  কি কি কিনলেন?"

বিজয় বললো " কিছুই পছন্দ হয়নি। ঘুরে ঘুরে চলে এসেছি ।"

সুবিমল বাবু বললেন " কত দিনের ছুটি নিয়ে এসেছেন?" 

বিজয় বললো "ভাইফোঁটার পরের দিন ডিউটি জয়েন করবো।"

সুবিমল বাবু বললেন "এই কদিনের মধ্যে যদি কোন কাজে কলকাতার বাইরে যান তবে অবশ্যই পুলিশকে জানিয়ে যাবেন।"

এরপর সুবিমল বাবু প্রকাশ বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন " চলুন আজকের মত ওঠা যাক।"


দুইদিন পরের কথা। সন্ধ্যা হয় হয়।দুর্গা পুজোর পরে এই সময় ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে। হয়তো জানান দিতে থাকে যে আর কিছুদিনের মধ্যেই শীতকাল পড়ে যাবে। ক্রমশ দিন ছোট রাত বড় হয়ে যাবে।

সেইদিন সন্ধ্যাবেলায় কুয়াশার অফিস ঘরে পূজা ও অর্ণব বসে কম্পিউটারে টুকটাক কাজ করছিল। কাজ তো নয়, আসলে আড্ডা। এমন সময় অফিসের ল্যান্ড ফোনটা তার নীরবতা ভেঙে বেজে উঠলো। পূজা গিয়ে ফোনটা ধরলো ।ওপাশ থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর বলে উঠলো "হ্যালো, সুবিমল বাবু আছেন?"

পূজা বললো" না বাবা বাড়ি নেই।"

ওপাশের কণ্ঠস্বর বলে উঠলো "কে পূজা মা আমি প্রকাশ কাকু বলছি। আসলে তোমার বাবাকে একটু প্রয়োজন ছিল । সেদিনের সেই মার্ডার কেসটার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসেছে।"

পূজা বললো " রিপোর্টে কি এসেছে কাকাবাবু ?"

প্রকাশ বাবু বললেন " ঘাড়ে জোরালো আঘাত লেগে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়েছে। তোমার বাবাকে বলবে তিনি যেন শেক্সপিয়ার সরণি থানায় এসে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের কপি টা একবার দেখে যান। আমার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া আছে যে উনি এলে ওনাকে তদন্তের ব্যাপারে পূর্ণ সাহায্য করার জন্য। "

পূজা বললো " বাবাকে এখনই মোবাইলে কল করে দিচ্ছি,  উনি আসার সময় শেক্সপিয়ার সরণি থানা হয়ে আসবেন।"

প্রকাশ বাবু বললেন "তদন্তের কাজে কতটা এগোলে?"

পূজা বললো " বাবার কতদূর এগিয়েছে জানি না । তবে আমি শুভময় সেন এর ব্যাপারে ব্যাঙ্গালোরে খোঁজ নিয়েছি ।  উনার কাজকর্মের ডিটেল অফিশিয়াল রিপোর্টটা কালকের মধ্যেই হয়তো পেয়ে যাবো। কাল সকালে আপনি একবার আসুন না।"

প্রকাশ বাবু বললেন " ঠিক আছে আমি কাল সকালে তোমাদের অফিসে যাবো। এখন রাখছি।"

ফোনটা রেখে পূজা আবার চেয়ারে এসে বসলো । অর্ণব হা করে চেয়েছিল পূজার দিকে। 

পূজা - "কি দেখছ ?"

অর্ণব - "তোমাকে। ফোনে কি কথা হলো?"

পূজা - "বাবা যেটা সন্দেহ করেছিল সেটাই হয়েছে। ঘাড়ে জোরালো আঘাত লেগে শুভময় সেনের মৃত্যু হয়েছে। তোমার কাজের অগ্রগতি কেমন?"

অর্ণব - " ভালোই। শুভময় সেনের ফোনের লক খুলে ডিটেলস পেয়ে গেছি।"

পূজা - " কি পেলে। "

অর্ণব - "হোয়াটসঅ্যাপে কিছু পাওয়া যায়নি। তবে উনার কাছে বিদেশ থেকে কিছু ফোন এসেছে। সবকটি নাম্বার পাকিস্তানের। আর বিশেষ কিছু সন্দেহজনক ইমেইল পাওয়া গেছে। ইমেইল গুলোতে  এ এম সি এ বা AMCA সম্পর্কে ডিটেইলস তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমি আগামী কাল স্যারকে ফোন সম্পর্কিত বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবো।"

পূজা বললো " বাবাকে একটা ফোন করে দিই প্রকাশ কাকুর কাছে পাওয়া পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এর ব্যাপারে।"

অর্ণব বলল "তুমি ফোন করো আমি এখন উঠি।"

পূজা বললো "কাল সকালে আসছো তো?"

অর্ণব বলল "নিশ্চয়ই।"


পরেরদিন সকাল সাড়ে নটা নাগাদ প্রকাশ বাবু কুয়াশায় ঢুকে দেখলেন সুবিমল বাবু তার চেয়ারে বসে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন। সামনের টেবিলে সদ্য শেষ করা একটি চায়ের কাপ। পূজা একটা চেয়ারে বসে মোবাইলের হেডফোনে গান শুনছে আর অর্ণব কম্পিউটারে কিছু লিখছে ।প্রকাশ বাবু কে দেখেই পূজা হৈ হৈ করে উঠলো "কাকু এসে গেছেন।"

প্রকাশ বাবু পূজাকে বললেন " তোমাদের চাকুর টাকে এক কাপ চা করে আনতে বলতো।"

পূজা ভিতরের দিকে একটা হাঁক দিলো " রঘুদা চার কাপ চা নিয়ে এসো।"

কিছুক্ষণের মধ্যেই রঘু চায়ের ট্রে হাতে ঘরে ঢুকলো। সবাইকে চা দিয়ে আবার চলে গেল।

গরম চায়ে সশব্দে একটা চুমুক দিয়ে প্রকাশ বাবু সুবিমল বাবুর উদ্দেশ্যে বললেন "তারপর দাদা কিছু সুরাহা হলো? কমিশনার সাহেব তো তাড়া লাগাচ্ছেন। ওদিকে কাগজওয়ালারা জ্বালিয়ে খাচ্ছে।"

সে কথার উত্তর না দিয়ে সুবিমল বাবু বললেন " তোমাকে যে কাজগুলোর ভার দিয়েছিলাম সেগুলোর  কি খবর ? ফরেনসিক বিভাগ হাতের ছাপ খুঁজে পেয়েছে?"

প্রকাশ বাবু বললেন "সেগুলো বলতেই তো আসা। আপনার খুঁজে পাওয়া টাকা তে দুটি আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গেছে । তার মধ্যে একটি আঙ্গুলের ছাপ জানালার ধারে পাইপলাইনের গায়ে পাওয়া গেছে।"

সুবিমল বাবু বললেন " তার মানে আমার সন্দেহ সত্যি। সেদিন লোডশেডিংয়ের সুযোগ নিয়ে খুনি সবার চোখ এড়িয়ে শুভময় সেনের রুমে প্রবেশ করে । খুনটা করার পরে আবার লোডশেডিংয়ের সুযোগ নিয়েই পাইপলাইন ধরে হোটেলের পাশের গলিতে নেমে যায় ।   গলিটা অন্ধকার লোক জনহীন।

অন্য আঙ্গুলের ছাপটি সম্ভবত কোনো দোকানদার বা আগের ব্যবহারকারীর।  কালকে বাড়ি ফেরার সময় তোমার কথা অনুযায়ী থানায় গিয়ে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ও দেখলাম খুনটা হয়েছে রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নটার ভিতরে। এখন প্রশ্ন খুন টা হল কেন? এবং খুনি কে ?"

সুবিমল বাবু পূজার দিকে কে প্রশ্ন করলো "তোমাকে যে শুভময় সেনের কর্মস্থল থেকে ডিটেলস রিপোর্ট নিতে বলেছিলাম সেটা নিয়েছো কি ?" 

পূজা বলল " HAL এর এক অফিসিয়াল রিপোর্ট কাল আমার ইমেইলে এসেছে।

শুভময় সেন  HAL এর গোপন প্রজেক্টে কাজ করছিলেন। HAL প্রধানত বিভিন্ন সামরিক বিমান তৈরি করে থাকে। HAL এখন পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ মিডিয়াম ওয়েট ফাইটার জেট তৈরি করছে। এই বিমানটির নাম দেওয়া হয়েছে AMCA বা এমকা। এই বিমান তৈরি হলে ভারত প্রতিবেশী শত্রু দেশগুলির থেকে  সামরিক শক্তিতে অনেক এগিয়ে যাবে। শুভময় সেন এই প্রোজেক্টের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তার কাছে এই প্রোজেক্টের 60% তথ্য ছিল।"


এবারে সুবিমল বাবু অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললেন "তোমাকে যে বলেছিলাম শুভময় সেনের ফোনটা থেকে যাবতীয় ইমেইল ও কল লিস্ট সেইসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করার তার ফাইনাল রিপোর্ট তুমি আমাকে এখনো দাওনি।"

অর্ণব বললো "আসলে আপনি কয়দিন খুব ব্যস্ত ছিলেন সেইজন্য রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে আমি নিজে ও কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের সহযোগিতায় শুভময় সেনের ফোনটা পরীক্ষা করেছি। সেখানে কিছু সাসপিশাস ইমেল পেয়েছি। ওইসব ইমেইলে শুভময় সেনকে  AMCA সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দেওয়ার বিনিময়ে এক কোটি টাকা অফার করা হয়েছে। যেসব ইমেইল এড্রেস থেকে এই অফার করা হয়েছে সেগুলি আমরা ভালোভাবে চেক করেছি । ওই সব আইপি অ্যাড্রেস গুলো পাকিস্তানের। ফোন পরীক্ষা করে একথা পরিস্কার যে শুভময় সেন ওদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। তিনি ওদের কোন প্রতিনিধির হাতে AMCA সম্পর্কিত তথ্য তুলে দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছিলেন।

কিন্তু মজার ব্যাপার এই যে আরো একটি দেশ থেকে শুভময় সেনের কাছে একটা হুমকি ইমেল আসে। সেই দেশটি হলো চীন। সেই হুমকি মেলে বলা হয় যে শুভময় সেন যদি অন্য কোনো এজেন্সিকে গোপন তথ্য শেয়ার করেন তবে তাকে জীবিত রাখা হবে না।"


সুবিমল বাবু বললেন " তাহলে একথা পরিস্কার যে শুভময় সেন দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশের পঞ্চম প্রজন্মের মাল্টিরোল এয়ারক্রাফট এমকা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য বিদেশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছিলেন। আর সেজন্যই তিনি এতো গোপনীয়তার সঙ্গে ওই হোটেলে গিয়েছিলেন। সম্ভবত যে পাঞ্জাবি ভদ্রলোক ওই হোটেলে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তিনি কোন বিদেশি এজেন্সির গুপ্তচর। তবে তিনি কোন তথ্য হাতে পেয়েছিলেন বলে মনে হয় না। কারণ শুভময় সেন তার হাতে কিছু তুলে দেওয়ার আগেই খুন হন। ফোনের ইমেইল থেকে একথা পরিস্কার যে দুটি পরস্পর প্রতিযোগী বিদেশি গুপ্তচর এজেন্সি এই কাজে লিপ্ত ছিল। সম্ভবত অন্য এজেন্সির কোন গুপ্তচর তাকে খুন করে।

হোটেলে লোডশেডিংয়ের সুযোগে কোন খুনি শুভময় সেনের ঘরে প্রবেশ করে তাকে খুন করে । সেই সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার ব্রিফকেস নিয়ে পালিয়ে যায়। সম্ভবত ব্রিফকেসে এমকা সম্পর্কিত তথ্যাবলী ছিল।"


প্রকাশ বাবু এতক্ষন নীরবে সবকিছু শুনছিলেন। এবারে তিনি বললেন " আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা সাধারণ খুন নয়। দেশের স্বার্থ এখানে জড়িত। আপনি তাহলে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে আমাকে দিন। এই রিপোর্ট আমি অফিশিয়ালি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠিয়ে দেবো। এরপর তারা যেটা ভালো মনে হয় করবে।"

সুবিমল বাবু বললেন  "ঠিক আছে তাই হবে। আপনি এক কাজ করুন ওই পাঞ্জাবি ভদ্রলোকের চেহারার বর্ণনা দিয়ে একটা হুলিয়া জারি করুন। ওই ভদ্রলোককে ধরা গেলে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাল সকালের মধ্যে আপনার কাছে রিপোর্ট পৌঁছে যাবে।"


পরের দিন যথারীতি কুয়াশার তরফ থেকে একটা অফিসিয়াল রিপোর্ট প্রকাশ বাবুর মাধ্যমে কলকাতা পুলিশে জমা পড়লো।


দুই দিন বাদে পূজা অর্ণব কুয়াশার অফিস ঘরে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো। রঘুদা কফি ও চিকেন পকোড়া দিয়ে গেছে। সেটা খেতে খেতে দুজনের এটা ওটা বিষয়ে আলোচনা করছিল। আলোচনার মধ্যে হঠাৎ এই খুনটার প্রসঙ্গ চলে এলো। এমন সময় সুবিমল বাবু অফিস ঘরে এলেন ।

পূজা অর্নবের কথার মাঝে সুবিমল বাবু বললেন "তোমাদের কি মনে হয় ব্যাপারটা আদৌ সমাধান হয়েছে ?"

অর্ণব বলল " এই ব্যাপারে অফিশিয়াল রিপোর্ট তো আমরা দিয়ে দিয়েছি ।"

সুবিমল বাবু বললেন "সেটা ঠিক । কিন্তু আদৌ কি সব প্রশ্নের সমাধান হয়েছে ?

প্রথম প্রশ্ন খুন টা করলো কে ?

দ্বিতীয় প্রশ্ন দশ টাকার নোটে কার হাতের ছাপ ?


তৃতীয় প্রশ্ন খুনিকে দেখেও শুভময় সেন বাঁচবার জন্য চেষ্টা করলেন না কেন ?

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে একথা জানা গেছে শুভময় সেনের ঘাড়ে আচমকা আঘাত করার জন্য তার মৃত্যু হয়েছে। হোটেলে যে ঘরে তার মৃত্যু হয়েছিল সেখানকার পরিস্থিতি দেখে একবারও মনে হয়নি যে খুনীর সঙ্গে শুভময় সেনের বাঁচার লড়াই হয়েছে। বরং স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলে দিচ্ছিল যে শুভময় সেন খুনি কে চিনতেন। "

পূজা বললো "কিন্তু আমরা কলকাতা পুলিশকে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি।"

সুবিমল বাবু বললেন " রিপোর্ট আমরা একটা দিয়েছি একথা ঠিক। কিন্তু সেটাই যে ফাইনাল রিপোর্ট সে কথা আমরা উল্লেখ করিনি। বরং তাতে উল্লেখ করা আছে যে তদন্ত এখনো চলছে। আমরা শুধু আমাদের অগ্রগতির রিপোর্ট দিয়েছি।"

সুবিমল বাবু পুনরায় অর্ণব কে বললেন "কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে কি ?"

 অর্ণব বললো " হোটেলটিতে কোন সিসিটিভি ছিল না । তবে ওই এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় কলকাতা পুলিশের সিসিটিভি আছে। সেগুলির ফুটেজ আমি সংগ্রহ করেছি।"

সুবিমল বাবু বললেন "সেই দিন রাত আটটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যেকার সিসিটিভি ফুটেজ চালাও । আমি একবার নিজে দেখতে চাই।"

 

সুবিমল বাবুর ডেক্সটপে সিসিটিভি ফুটেজ চালানো হলো। দেখা গেল সিসিটিভি র উল্টো দিক থেকে  একটি ট্যাক্সি এসে হোটেলের সামনে এসে থামল। ট্যাক্সি থেকে শুভময় সেন নেমে হোটেলে প্রবেশ করলেন। সুবিমল বাবু বারবার ওই অংশটা দেখতে লাগলেন।

পূজা বলল " বারবার একই অংশ দেখে কি লাভ ? "

সুবিমল বাবু বললেন " তোমাদের চোখ থাকলে তোমরাও বুঝতে পারতে কেন এই অংশ বারবার দেখছি। ভালো করে লক্ষ্য করো সিসিটিভি ফুটেজে অনেকটা অংশ দেখা যাচ্ছে। ওই দেখো হোটেলের সামনের দরজা আর রাস্তার উল্টোদিকে একটা পান দোকান দেখা যাচ্ছে। এবারে লক্ষ্য করে দেখো শুভময় সেনের ট্যাক্সির ঠিক পিছনে পিছনে একটা বুলেট গাড়ি এসে পান দোকানের সামনে থামলো। বুলেট গাড়িটিতে একটা স্বাস্থ্যবান যুবক বসে আছে। যুবকটি একদৃষ্টে শুভময় সেনের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। শুভময় সেন হোটেলে প্রবেশ করার পর যুবকটি হোটেলটির দিকেই তাকিয়ে আছে। আরো কিছুক্ষণ পর যুবকটি পান দোকান থেকে সিগারেট  কিনলো। দোকানদার টাকা কেটে নিয়ে বাকি টাকা ফেরত দিলো। যুবকটি সিগারেট খেতে খেতে হোটেলটির দিকেই তাকিয়ে আছে। অনেকটা দূরত্ব হওয়ায় যুবকটির মুখ ভালো বোঝা যাচ্ছে না। আমার সন্দেহ হচ্ছে শুভময় সেনের খুনের পিছনে এই যুবকটি রয়েছে। "

পূজা বললো " বুঝলাম কিন্তু যুবকটিকে খুঁজে পাবো কি করে?"

সুবিমল বাবু বললেন "যুবকটি কে সেটা খুঁজে বার করতে হলে আমাদের সকলের অ্যালিবাই খুঁটিয়ে দেখতে হবে । কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না । পূজা তুমি এক কাজ করো তুমি শুভময় সেনের দুই ছেলে ও ভাইকে কালীপুজোর আগেই কুয়াশায় ডেকে পাঠাও।  ওদের আরো কিছু জেরা করা প্রয়োজন। আর অর্ণব তুমি একটা বিশেষ সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করার জন্য আমার চিঠি নিয়ে লালবাজারে গিয়ে প্রকাশ বাবুর সঙ্গে দেখা করো।"

ব্যস্ততায় কয়েকটা দিন কেটে গেল। পূজা শুভময় সেনের ভাই ও ছেলেদের ফোন করে কুয়াশায় একসঙ্গে আসতে বললো। শুভময় সেনের ভাই সুদীপ সেন  ফোনেই উত্তরে জানালেন তিনি এবং তার ছোট ভাইপো বিজয় যে কোন দিন আসতে পারেন কিন্তু তার বড় ভাইপো অজয় এইসময় দোকানদারি নিয়ে খুব ব্যস্ত।সামনেই দিওয়ালি তাই ইলেকট্রনিক্স এর দোকানের বিক্রি বাটার সিজন। তবে কালীপুজোর দুইদিন আগে  রবিবারের রাত্রি নটা নাগাদ তারা তিনজনের একসঙ্গে বাসায় আসতে পারেন।

পূজা বললো "ঠিক আছে তাই আসবেন।"

 রবিবার ওরা তিনজনে এলো রাত্রি সাড়ে নয়টা নাগাদ।

সুদীপ সেন প্রবেশ করেই দেরির জন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চেয়ে নিলো।

সুবিমল বাবু বললেন " দেখুন আপনারা ব্যস্ত মানুষ। দেরি তো হতেই পারে। আমি আপনাদের বেশিক্ষণ আটকে রাখবো না।"

সুবিমল বাবু একটি ড্রয়ার থেকে তিনটি নাম লেখা খাম  ও তিনটি পেন বার করে টেবিলে রেখে বললেন "এই তিনটি খামে আপনাদের তিনজনের নাম লেখা আছে। আপনারা তিনজন নিজের নিজের নাম লেখা খাম গুলি নিয়ে নিজেদের পেশা ও কন্টাক্ট নাম্বার সহ ,শুভময় সেন খুন হবার দিন রাত্রি আটটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত আপনারা কোথায় ছিলেন ও কি করছিলেন সংক্ষেপে লিখে ফেলুন।"

শুভময় সেনের বড় ছেলে অজয় বললো " আপনি কি আমাদের সন্দেহ করেন ? আপনার কি ধারণা আমরা, এই জঘন্য কাজে লিপ্ত ?"

সুবিমল বাবু হেসে বললেন " দেখুন গোয়েন্দা হিসেবে আমার কাজ সব দিক খতিয়ে দেখা। আমি একবারও বলছি না আপনারা এই কাজে যুক্ত। কিন্তু আমাকেও নিশ্চিত হতে হবে যে শুভময় সেন পারিবারিক কারণে খুন হননি। তাছাড়া আপনারা যদি নির্দোষ হন তবে তদন্তের স্বার্থে আমার সঙ্গে সহযোগিতা করবেন এই কামনা করি।"

শুভময় সেনের ভাই সুদীপ সেন বললেন " সে তো নিশ্চয়ই। আমি চাই আমার দাদার হত্যাকারী যেন শাস্তি পায় সেজন্য যে কোন রকম সহযোগিতা করতে আমি এবং আমার ভাইপোরা প্রস্তুত।"

এরপর আর কথা না বাড়িয়ে তিনজনে নিজেদের নিজেদের নাম লেখা খাম গুলি নিয়ে সুবিমল বাবুর নির্দেশমতো নিজেদের বয়ান লিখে দিলো।

লেখা শেষ হলে সুবিমল বাবু তিনজনকে পুনরায় নিজের নিজের নাম লেখা খামের ভেতর কাগজগুলি রেখে দিতে বললো।

এরপর তারা বিদায় নিলেন।

তিনজনে চলে যাওয়ার পর সুবিমল সেন অর্ণব কে ডেকে বললেন " তুমি হাতে গ্লাভস পরে তিনটি খাম এই বড় ফাইলটাতে তুলে রাখো। আমি প্রকাশ বাবুকে ফোন করে দিচ্ছি।তুমি কাল সকালে এই ফাইলটা নিয়ে প্রকাশ বাবুর হাতে দেবে। এই তিনটি খামে তিনজনের হাতের ছাপ রয়েছে। আমার ইনস্ট্রাকশন মতো প্রকাশ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দ্বারা এই তিনজনের হাতের ছাপের সঙ্গে খুনের জায়গায় পাওয়া হাতের ছাপ গুলি মিলিয়ে দেখবেন।

পরেরদিন অর্ণব একটু সকাল সকাল কুয়াশায় এলো। এসে দেখলো সুবিমল বাবু ফোনে কথা বলছেন।

সুবিমল বাবু বলছেন "হ্যাঁ আমি এখনই অর্ণবকে ফাইলটা দিয়ে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি। তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো হাতের ছাপ গুলি মিলিয়ে দেখে আমাকে জানাও। আর তোমাকে যে বিশেষ একটি সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করতে বলেছিলাম সেটা অর্ণব এর হাতে পাঠিয়ে দিয়ো। এখন রাখছি ।  পরে কথা হবে।"

সুবিমল বাবু ফোনে কথা বলতে বলতেই অর্ণবকে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন। এবারে ফোন রেখে ড্রয়ার থেকে ফাইল টা বার করে অর্ণব কে বললেন  "প্রকাশ বাবুর সঙ্গে আমার কথা হয়ে গেছে। তুমি এই ফাইলটা ওনাকে দিয়ে ওনার কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজের ডিভিডিটা আনবে।"

অর্ণব সুবিমল বাবুর হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে লালবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

 

লালবাজারে প্রকাশ বাবু র চেম্বারে প্রবেশ করে অর্ণব দেখলো তুমি টিফিন করছেন। অর্ণবকে প্রবেশ করতে দেখে প্রকাশ বাবু একগাল হেসে বললেন " এসো এসো । বসো। বলো কি খাবে ? টিফিন করে এসেছো ?"

অর্ণব মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।

প্রকাশ বাবু বললেন "ঠিক আছে এক কাপ চা অন্তত  খাও।"

এই বলে তিনি ঘন্টা বাজিয়ে বেয়ারাকে ডেকে বললেন " দু'কাপ চা দিয়ে যাও।"

বেয়ারা চা দিয়ে গেলো। দুজনে দুটো কাপ নিয়ে  চা খেতে খেতে কথা বলতে লাগলেন।

প্রকাশ বাবু বললেন " তোমার স্যারের জবাব নেই। এই কেস টায় জাতীয় সুরক্ষা জড়িত এ কথা তোমাদের সাহায্য ছাড়া বোঝা মুশকিল ছিলো। তোমাদের প্রাথমিক রিপোর্ট আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা এটি সিরিয়াসলি নিয়েছেন।  সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা খুব শীঘ্রই এখানে আসছেন।"

অর্ণব বলল " স্যার একটা সিসিটিভি ফুটেজ আপনাকে দিতে বলেছেন।"

প্রকাশ বাবু বললেন " সে না হয় দিচ্ছি। কিন্তু এই সিসিটিভি ফুটেজ টা তোমার স্যারের কি কাজে লাগবে বুঝতে পারছি না।"

অর্ণব বলল " স্যারের সব কাজকর্মের অর্থ আমিও বুঝতে পারিনা। তবে অন্তিমে বোঝা যায় স্যার অকারণে কোনো কাজ করেন না।"

আরো কিছুক্ষণ এটা-ওটা গল্প করে অর্ণব প্রকাশ বাবু র কাছ থেকে ডিভিডিটা নিয়ে কুয়াশায় ফিরলো।

সুবিমল বাবুকে ডিভিডিটা দিলে সুবিমল বাবু সেটা আলমারিতে রেখে দিয়ে বললেন

 " পরে দেখে নেবো।"


দেখতে দেখতে কালীপুজো এসে গেল। অর্ণবের বাজি ফাটানো তে খুব ভয়। পূজা আবার বাজি ফাটাতে খুব ভালোবাসে। একগাদা বাজি কিনে এনেছে‌।

পূজা আগের দিন থেকেই অর্ণবকে বলে রেখেছে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে যেন কুয়াশায় চলে আসে। সুতরাং অর্ণবকে আসতেই হলো। যদিও সে এগুলো পছন্দ করে না। তবু পূজার চোখে ভীতু প্রমাণিত হওয়ার চেয়ে চুপচাপ বাজি ফাটানোতে অংশগ্রহণ করাই ভালো। পূজা দের বাড়িটা তিনতলা। একতলায় কুয়াশা , গাড়ির গ্যারেজ, স্টোররুম ইত্যাদি। দোতলায়  সুবিমল বাবুর থাকার ঘর ও রান্নাঘর , খাবার ঘর ইত্যাদি। তিনতলায় পূজা থাকে। পাশেই ঠাকুর ঘর। পূজা দের বাড়ির ছাদ টা বিশাল বড়ো।

সন্ধ্যা থেকেই সেই বিশাল ছাদে পূজা ও তার কয়েকজন বান্ধবী , সেইসঙ্গে অর্ণব সবাই মিলে বিভিন্ন বাজি পোড়ানোতে ব্যস্ত। পূজার এত সাহস সে রকেট গুলো হাতে করে ছাড়তে লাগলো। অর্ণব একবার মিনমিন করে তাকে বারণ করলো। কিন্তু সে কি শোনার মেয়ে ?

এক ধমকে অর্ণবকে চুপ করিয়ে দিলো। তারপর যথারীতি সকলে মিলে হই হই করে বাজি পোড়ানো চলতে থাকলো। অর্ণব কিছুক্ষণ ছাদে থাকার পর পূজাকে বললো "আমি একবার নিচে যাচ্ছি।"

পূজা বললো " যাও আমার ঘরে গিয়ে বস। আমি একটু বাদে যাচ্ছি।"

অর্ণব নিচে পূজার ঘরে চলে এলো। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো ঘর। এক পাশে সাদা ধবধবে বিছানার চাদর পাতা বিছানা। দেওয়ালে বড়োসড়ো এলইডি টিভি। পাশের দিকে একটা ডেক্সটপ কম্পিউটার। অর্ণব কম্পিউটার টেবিলে বসে কম্পিউটার চালু করে অনলাইনে 'উরি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' সিনেমাটি দেখতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ দেখার পরেই সিনেমাটিতে এতই মশগুল হয়ে গেল যে ঘরে আর কেউ প্রবেশ করেছে সেটা টের পেল না। সুবিমল বাবু কোন একটা কাজে পূজার ঘরে এসেছিলেন । এসে দেখলেন অর্ণব কম্পিউটারে বসে উরি সিনেমাটি দেখছে। কিছুক্ষণ তিনিও দাঁড়িয়ে সিনেমাটি দেখলেন। তারপর অর্ণবকে চমকে দিয়ে প্রশ্ন করলেন "আচ্ছা এটা কি কোনো যুদ্ধের সিনেমা ?"

অর্ণব আচমকা পিছন দিক থেকে শব্দ আসায় চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলেন সুবিমল বাবু দাঁড়িয়ে আছেন।

একটু ইতস্তত করে সুবিমল বাবুর দিকে তাকিয়ে অর্ণব বললো "আসলে স্যার আমার বাজি পোড়াতে ভালো লাগেনা। ধোঁয়াতে শ্বাসকষ্ট হয়। সেজন্য এখানে বসে কম্পিউটারে সিনেমা দেখছি।"

সুবিমল বাবু আবার প্রশ্ন করলেন " এটা কি যুদ্ধের সিনেমা।"

অর্ণব বলল "এটা একটা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি সিনেমা । ভারতের প্যারা এস এফ কমান্ডো বাহিনী পাকিস্থানে ঢুকে টেররিস্ট ক্যাম্প ধ্বংস করে দিয়েছিলো সেই ঘটনা।"

সুবিমল বাবু বললেন " আচ্ছা এই প্যারা এস এফ কমান্ডো বাহিনী সম্পর্কে তুমি কি কি তথ্য জানো ?"

অর্ণব বলল " ভারতীয় সৈন্য বাহিনীর সেরা জওয়ানদের নিয়ে এই বিশেষ কমান্ডো বাহিনী তৈরি করা হয়। সবচেয়ে উন্নত অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সজ্জিত এই বাহিনী। বিভিন্ন মিলিটারি মিশনে এরা অংশগ্রহণ করে। শুধু দেশের মধ্যে নয় প্রয়োজনে দেশের বাইরে বিদেশেও এরা বিভিন্ন কমান্ডো মিশনে এরা যায়। অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও এরা প্রয়োজনে খালি হাতে শত্রু বিনাশ করতে পারে। অতি উন্নত মার্শাল আর্ট ট্রেনিং এরা নিয়ে থাকে। এই বাহিনীর সিলেকশন প্রসেস এতই কঠিন যে প্রতি 10 হাজার জনের মধ্যে একজন সিলেক্টেড হয়ে থাকে।"

সবকিছু শুনে সুবিমল বাবু শুধু বললেন "হুম। অনেক কিছুই আমার জানা ছিল না। তোমার কথায় আমি এক নতুন দিক দেখতে পাচ্ছি। সম্ভাবনাটা একবার দেখা দিয়েছিল কিন্তু আমি অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। এখন দেখছি আমি ঠিক পথেই চলেছি।"

কালীপুজোর পরের দিন সন্ধ্যাবেলা প্রকাশ বাবু এলেন। হাতে একটি খাম। খামটা পূজার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন " এক কাপ কফি খাওয়াও তো। আর এই খামটা রেখে দাও। বাবা কে দেবে । এতে উনি যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিপোর্ট দেখতে চেয়েছিলেন সেটা আছে।"

পূজা খামটা নিয়ে সুবিমল বাবুর টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিয়ে প্রকাশ বাবু কে বললো "আপনি বসুন আমি এখনই কফি তৈরি করে আনছি। বাবা একটু বাজারে গেছেন। এক্ষুনি ফিরবেন।"

পূজা কফি আনার জন্য ভিতরে চলে গেল।

প্রকাশ বাবু অর্ণবকে বললেন " আর কতদিন আইবুড়ো কার্তিক সেজে ঘুরবে ? এবারে বিয়ে থা করো। আমরা পেট পুরে যেন খেতে পাই।"

অর্ণব সলজ্জ ভাবে হেসে বললো " আমি তো রাজি। আমার মা-বাবাও রাজি। এখন অপরপক্ষ রাজি হলেই আপনি খাওয়ার নিমন্ত্রণ পাবেন।"

প্রকাশ বাবু বললেন " তো ভায়া , সাহস করে বলে ফেলো। জানো তো বীরভোগ্যা বসুন্ধরা।"

এই সময় সুবিমল বাবু ঘরে প্রবেশ করলেন। প্রকাশ বাবুর শেষ কথাটি উনি শুনতে পেয়েছিলেন । তাই জিজ্ঞাসা করলেন " কিসের বীরত্বের কথা হচ্ছে শুনি ?"

প্রকাশ বাবু একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন। খানিকটা ইতস্তত করে বললেন " না এমনি। এই অর্ণব এর সঙ্গে একটু মিলিটারি দের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।"

ইতিমধ্যে পূজা কফির মগ ও অনেকগুলি কফি কাপ নিয়ে ঘরে এল। তারপর সবাইকে কফি পরিবেশন করল। 

পূজা সুবিমল বাবুকে প্রশ্ন করলো " বাবা, এতক্ষণ কোথায় ছিলে ?"

সুবিমল বাবু বললো  "আমি একটু পান খেতে গিয়েছিলাম।"

পূজা অবাক হয়ে বললো "কিন্তু তুমিতো পান খাওনা।"

সুবিমল বাবু বললো "হ্যাঁ এমনিতে খাইনা । তবে আজ পান খেতে গিয়েছিলাম।"

পূজা বলল "কোথায়?"

 সুবিমল বাবু উত্তর দিল " যে হোটেলে শুভময় সেন খুন হয়েছিল ঠিক তার সামনে একটা পান দোকান আছে ।  সেখানে গিয়েছিলাম।"

পূজা বলল "ওখানে কেন?"

সুবিমল বাবু বললেন " আসলে অনেক কিছুই আমাদের চোখে এড়িয়ে যায় । তেমনি এড়িয়ে যাওয়া একটি বিষয় পরীক্ষা করে দেখলাম।"

পূজা বলল "কি জানি বাবা তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারিনা  । যাই হোক প্রকাশ কাকু তোমার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর রিপোর্ট এনেছে  । আমি তোমার ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি।"

সুবিমল বাবু তখন তার চেয়ারে বসে ড্রয়ার থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর রিপোর্ট টা বের করে পড়তে শুরু করলেন।

প্রকাশ বাবু বললেন "অত ব্যস্ত কেন ভায়া?"

সুবিমল বাবু বললেন " ব্যস্ত তো হতেই হবে। যা করার তা পরশুর মধ্যেই করতে হবে। না হলে পাখি ফুড়ুৎ।"

প্রকাশ বাবু বললেন "তার মানে?"

সুবিমল বাবু বললেন "তার মানে কিছুই নয় ,তোমাকে কাল সন্ধ্যা বেলা একবার পুনরায় আসতে হবে ।"

এরপর সুবিমল বাবু উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কোন একজনকে ফোন করলেন। তারপর তার কথা শোনা গেল ।তিনি বলছেন " আপনি কাল সন্ধ্যার সময় একা একবার  কুয়াশায় আসতে পারবেন?"

উল্টোদিক থেকে কি বলা হলো সেটা কেউ শুনতে পেল না।

আবার একবার সুবিমল বাবুর কন্ঠস্বর ভেসে এলো " বুঝতে পারছি কাল ভাইফোঁটা। তবু বিশেষ প্রয়োজন একবার অবশ্যই আসুন।"

ওপাশের মানুষটি বোধ হয় সম্মতি জানালো।

সুবিমল বাবু "ধন্যবাদ । কাল আপনার জন্য অপেক্ষা করবো "এই কথা বলে ফোন কেটে দিলেন।

প্রকাশ বাবু বললেন "কাকে ফোন করলে?"

পরিমল বাবু বললেন "সেটা কাল সন্ধ্যে সাতটার সময় এলেই দেখতে পাবে।"


পরেরদিন সন্ধ্যা সাতটা বাজার বেশ কিছুক্ষণ আগেই অর্ণব কুয়াশায় চলে এলো। প্রকাশ বাবু এলেন ঠিক সন্ধে সাতটায়। সুবিমল বাবু ও পূজা আগে থেকেই কুয়াশার অফিস ঘরে বসেছিল।

প্রকাশ বাবু ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন করলো "কই হে , তোমার লোক এসেছে?"

সুবিমল বাবু উত্তর দিলো , "তুমি যখন এসেছ তখন সেও আসবে।"

আরো দশ মিনিট বাদে কুয়াশার দরজার কলিং বেল বেজে উঠল । পূজা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। ঘরে  শুভময় সেনের ছোট ছেলে বিজয় প্রবেশ করলো।

সকলের মনে একটা প্রশ্ন চিড়বিড়িয়ে উঠলো তবে কি….

সুবিমল বাবু বললেন " বসুন বিজয় বাবু। আপনার বাবার মৃত্যু তদন্ত এখন অন্তিম পর্যায়ে। আপনি তো বোধহয় কাল ফিরে যাবেন। আমি চাই ফিরে যাওয়ার আগে আপনি জেনে যান কে আপনার বাবাকে খুন করলো।"

বিজয় একটা চেয়ারে বসলো। তার মুখের ভাব ভঙ্গি বলে দিচ্ছিল যে তাকে এইভাবে একা ডাকায় সে একটু অস্বস্তি বোধ করছে।


সুবিমল বাবু শুরু করলেন "আজ ভাই ফোঁটা। গত বিজয়া দশমীর দিন শুভময় সেন শেক্সপিয়ার সরণির এক হোটেলে খুন হন। পরেরদিন পুলিশের অনুরোধে আমরা তদন্ত করতে যাই। সেখানে তখনো মৃতদেহ রাখা ছিল। যে ঘরটিতে শুভময় সেন খুন হন সেটি দোতলার একেবারে কোণের ঘর ।

ঘরটিতে ঢুকে আমি লক্ষ্য করি ঘরটি খুব সুন্দর পরিপাটি অবস্থায় রয়েছে। কোথাও আততায়ীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি বা সংঘর্ষের চিহ্ন নেই। ঘরটিতে দুটি জানালা। একটি জানালা রাস্তার দিকে র দেওয়ালে। অন্য  জানালাটি হোটেলের পাশে এক অন্ধকার সরু গলির দিকে। দুটি জানালাতে কোন রড জাতীয় অবস্ট্রাকশন নেই। দুটি জানালাতে ই মোটা কাঁচের স্লাইড পাল্লা লাগানো। প্রতিটি স্লাইড পাল্লাই পাশের দিকে খোলা যায়। তার মানে জানালা খোলা থাকলে জানালা দিয়ে যে কোন মানুষ ঘরটিতে ঢুকতে ও বেরোতে পারে। আরো লক্ষ্য করলাম গলির দিকে যে জানালাটি রয়েছে তার পাশ দিয়ে একটি পাইপলাইন নিচে পর্যন্ত নেমে গেছে। শুভময় সেনের মৃতদেহটি উপুড় হয়ে পড়েছিলো। মৃতদেহটি খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে দেখলাম তার ঘাড়ের কাছে একটা কালো স্পট। যেন কেউ জোরালো আঘাত করেছে। পরে অবশ্য পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আমার সন্দেহটাই সত্যি প্রমাণিত হয়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী ঘাড়ে জোরালো আঘাত লেগে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সময় রাত্রি সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যে। ওই ঘরটিতে একটি 10 টাকার নোট খুঁজে পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয় 10 টাকার নোটটি হয় , শুভময় বাবুর নয়তো আততায়ী র। ফরেনসিক পরীক্ষায় দশ টাকার নোট দিতে দুটি হাতের আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যায়। কিন্তু কোন আঙ্গুলের ছাপ শুভময় সেনের হাতের আঙ্গুলের ছাপ এর সঙ্গে মেলেনা। তার মানে দশ টাকার নোট টি আততায়ী বা আততায়ীদের। এক্ষেত্রে এক বা একাধিক আততায়ীর সম্ভাবনা উঠে আসে।  কিন্তু পাইপলাইনের পাশে একটি মাত্র হাতের ছাপ পাওয়া যায়। 

 পাশাপাশি থাকা অন্যান্য রুম গুলিতে যেসব অতিথিরা ছিল তাদের বয়ান থেকে পাওয়া যায় তারা খুনের ব্যাপারটি টের পায়নি। কোন চিৎকার বা আর্তনাদ শুনতে পায়নি।

যেহেতু পাশাপাশি কেউ কোনো আর্তনাদ বা চিৎকার শুনতে পায়নি এবং ঘরটি খুব সুন্দর পরিপাটি অবস্থায় সাজানো ছিল তা থেকে একটা ধারণা প্রমাণিত হয় আততায়ী শুভময় সেনের পরিচিত । এবং শুভময় সেন তার কাছ থেকে কোনো রকম বিপদের আশঙ্কা করেননি।

শুভময় সেন যখন হোটেলে আসে তার সঙ্গে একটা ব্রিফকেস ছিল কিন্তু পরে সেই ব্রিফকেস টি পাওয়া যায়নি। সুতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে ওই ব্রিফকেসে এমন কিছু ছিল যার জন্য শুভময় সেনকে খুন হতে হয়েছে।

পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ আমার নির্দেশ অনুযায়ী জানালার ধারে র পাইপলাইন থেকে হাতের ছাপ সংগ্রহ করে। ওই হাতের ছাপ এর সঙ্গে ঘরের ভিতরে পাওয়া 10 টাকার নোটের একটি হাতের ছাপের মিল পাওয়া যায়।সম্ভবত টাকায় থাকা অন্য হাতের ছাপটি আমার বিশ্বাস দোকানদারের।

শুভময় সেনের ফোনটি পরীক্ষা করে জানা যায় তিনি বেশ কিছুদিন ধরে দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত আছেন। তিনি হ্যালের এক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ভারতের পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ মাল্টিরোল ফাইটার প্লেন  এমকা (AMCA)সম্পর্কিত অনেক তথ্য জানতেন।

এদিকে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি বহু টাকা খরচ করেছিলেন। সেজন্য বোধ হয় তিনি কিছুটা ঋণী হয়ে ছিলেন। ঋণ মেটানোর জন্য তিনি প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন তাদের চাঁদনী মার্কেটে পারিবারিক দোকানগুলি বিক্রি করে দেওয়ার ।

কিন্তু সে ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার ভাই সুদীপ সেন।

ইতিমধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দুটি বিদেশি এজেন্সি। আমাদের সন্দেহ অনুযায়ী একটি হলো পাকিস্তানের অন্যটি চীন দেশের।

তারা প্রচুর টাকার বিনিময়ে এমকা সম্পর্কিত তথ্য কিনতে চায়। শুভময় সেন টাকার বিনিময়ে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতায় রাজি হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে চীন দেশের গোয়েন্দা এজেন্সি টি থেকে হুমকি ইমেইল আসে শুভময় সেনের কাছে।সেই হুমকি ইমেইলে বলা হয় যদি শুভময় সেন অন্য কোন এজেন্সির কাছে তথ্য বিক্রি করেন তবে তাকে জীবিত রাখা হবে না।

প্রাথমিকভাবে আমাদের সন্দেহ হয় এই ধরনের কোন এজেন্সি শুভময় সেনের খুনের সঙ্গে জড়িত। আপাতত পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই বিষয়ে তদন্ত করছে।

আমি এবার অন্য ভাবে এই খুনের বিষয়টি ভাবতে চেষ্টা করি।

আমার মনে হয় যে এই খুনের সঙ্গে তার চেনা কেউ জড়িত।সেইজন্য শুভময় সেন আততায়ীর হাত থেকে বাঁচবার কোন চেষ্টা করেনি।

আমি ওই জায়গার রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করি। সেখানে দেখতে পাই শুভময় সেনের গাড়িকে অনুসরণ করে একটি বুলেট গাড়ি  এসে হোটেলের সামনের এসে থামে।

যখন শুভময়  সেনের বাড়িতে তদন্ত করতে যাই সেখানে একটি বুলেট গাড়ি দাঁড় করানো ছিলো মনে পড়ে যায়। আমি আপনাদের সকলের বয়ান গুলি যাচাই করানোর জন্য ডেকে পাঠাই। সেখানে আপনাদের খুনের সময় কোথায় ছিলেন লিখতে বলি।পরে পড়ে দেখি শুভময় সেনের ভাই সুদীপ সেন ও আপনার বড় ভাই অজয় এর বয়ান মিলে যায়। উভয়েই দাবি করে এ সময় তারা একসঙ্গে বাড়িতেই ছিলেন। শুধু আপনি বলেন আপনি এসপ্ল্যানেডের  বিগ বাজারে গিয়েছিলেন এবং কিছু না কিনেই বাড়ি চলে আসেন। আপনারা যে কাগজে লিখেছিলেন সেই কাগজ থেকে আপনাদের হাতের ছাপ নিয়ে শুভময় সেনের খুনের স্থানে যে হাতের ছাপ পাওয়া যায় তার সাথে মিলিয়ে দেখি। দেখা যায় আপনার হাতের ছাপ আততায়ীর হাতের ছাপের সঙ্গে মিলে গেছে।

এরপর আমি যে হোটেলে শুভময় সেন খুন হন তার সামনের পান দোকানে তদন্তের কাজে যাই। পান দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারি হোটেলের দোতলায় কোন রাস্তার দিকের ঘরে কোন অতিথি এলে পরিষ্কার বুঝতে পারা যায়। এছাড়া হোটেলের পাশের গলিটা একটা কানা গলি। সেখানে কোন মানুষ চলাচল করে না। কেবলমাত্র হোটেলের কর্মচারীরা নিজেদের প্রয়োজনে ওই গলিটা ব্যবহার করে। এবং সন্ধ্যার পর ওই গলিটা খুব নির্জন হয়ে যায়।

আমি  এসপ্ল্যানেড এর বিগ বাজার থেকে  সবকটি সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করি। কিন্তু যে সময় আপনি উল্লেখ করেছিলেন ওই সময়ের কোন সিসিটিভি ফুটেজেই আপনার উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কয়েকদিন আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্যারা এস এফ কমান্ডো দের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করি। এই বিষয়ে আমার সহযোগী অর্ণব এর কাছে ঋণী।তার কাছে জানতে পারি বিভিন্ন মিলিটারি কমান্ডো অপারেশন ভারতের প্যারা এস এফ বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়। তারা যেমন বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহারে দক্ষ তেমনি খালি হাতে লড়াইয়ে দক্ষ। পাহাড়ে চড়া, পাঁচিল টপকানো ,বিভিন্ন অবস্ট্রাকশন এড়িয়ে যাওয়ার ট্রেনিং তারা নিয়ে থাকে। আপনি এক্ষেত্রে খালি হাতে আঘাত করে আপনার বাবাকে খুন করেছেন। এবং পাইপলাইন বেয়ে নিচে নেমে গেছেন।এর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আপনার আছে।

এইসব বিভিন্ন প্রমাণ নির্দেশ করছে বিজয় বাবু আপনি আপনার বাবাকে খুন করেছেন।এ কথা আদালতে প্রমাণ করতে আমাদের অসুবিধা হবে না।

কিন্তু আমি স্বীকার করছি এই খুনের মোটিভ কিছু খুঁজে পাইনি।

আমি চাই আপনি নিজেই সব কিছু স্বীকার করুন।"


বিজয় এতক্ষণ মাথা নিচু করে চুপ করে সবকিছু শুনছিলো।

এবারে সে বললো " আমি স্বীকার করছি আমি আমার বাবাকে মেরে ফেলেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি এজন্য দুঃখিত হলেও অনুতপ্ত নয়।

আমি জানতাম আমার বাবা একজন মহৎ বিজ্ঞানী। তিনি ভারতের এক গোপন প্রজেক্টে যুক্ত ছিলেন। এই প্রজেক্ট সম্পন্ন হলে ভারতবর্ষ তার শত্রুদের থেকে এক কদম এগিয়ে যাবে।

পুজোর শুরুর সময় আমি বাড়ি ফিরে আসি। একদিন বাবার ঘরে প্রবেশ করার সময় শুনতে পাই বাবা ইংরাজিতে ফোনে কাউকে বলছে "আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি তবে এজন্য আপনাকে এক কোটি টাকা দিতে হবে।"

আমি দরজার আড়াল থেকে চুপ করে সব কথা শুনতে থাকি।

বাবা বললেন "আমি আপনাকে এমকা সম্পর্কিত সব তথ্য তুলে দেব।  দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আমি কমপক্ষে এক কোটি টাকা নেবো । আমার কাছে অন্য দেশ থেকেও অফার আছে। ওই পরিমাণ টাকা  দিতে আপনি রাজি থাকলে এখনই জানান নয়তো অন্য দল রাজি আছে।"

বাবার কথা শুনে আমি বুঝতে পারলাম বাবা তার প্রজেক্ট এর যাবতীয় তথ্য বিনিময় করে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

আমার মনে হলো এটা অন্যায় ।যে কোনো মূল্যে বাবাকে এই কাজ থেকে বিরত করতে হবে। আমি দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারি এবং প্রয়োজনে প্রাণ নিতে পারি। আমি বাবার গতিবিধির ওপর নজর রাখতে শুরু করলাম।দশমীর দিন সন্ধ্যাবেলা দেখলাম বাবা একটা ব্রিফকেস নিয়ে বেরোলেন। বেরোবার সময় বললেন তিনি একটি জরুরী কাজে কলকাতার বাইরে যাচ্ছেন। আমি বুলেট গাড়িটা নিয়ে তার ট্যাক্সি কে অনুসরণ করলাম। দেখলাম তিনি শেক্সপিয়ার সরণির একটি হোটেলে এসে উঠলেন। আমি পান দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম তিনি হোটেলের বেয়ারার সঙ্গে দোতলায় রাস্তার ধারের একেবারে কোণের ঘরটিতে উঠলেন। রাস্তার দিকে কাঁচের জানালা দিয়ে পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল তিনি কোন ঘরে আছেন। আমি পান দোকান থেকে একটি সিগারেট কিনে খেতে খেতে কি করবো ভাবছিলাম। পানওয়ালা কুড়ি টাকা থেকে সিগারেটের দাম 10 টাকা ফেরত দিলে অন্যমনস্কভাবে যে পকেটে রুমাল থাকে সেই পকেটে রেখে দিলাম। আচমকা সুযোগ চলে এলো। লোডশেডিং হয়ে গেল। বুলেট টাকে আগেই পান দোকানের ধারে সাইড করে রেখে দিয়েছিলাম। লোডশেডিং এর সুযোগে আমি হোটেলে সকলের চোখে ঢুকে পরলাম।রিসেপশনিস্ট বোধহয় ওই সময় জেনারেটর চালাতে গিয়ে ছিল।আমি দোতলায় উঠে সোজা কোণের দিকে যে ঘরটিতে বাবা উঠেছে সেই ঘরটিতে নক করলাম। কোনো বেয়ারা এসেছে মনে করে বাবা দরজা খুলে দিয়ে ভালো করে না তাকিয়ে  ভিতরে আসতে বললেন। আমি ঘরে ঢুকে লক করে দিলাম। বাবা আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন। বললেন "তুমি এখানে কেন?"

আমি বললাম "আপনি এখানে কেন?"

বাবা বললেন "সেই কৈফিয়ৎ আমি তোমাকে দেব না।"

আমি বললাম "আমি জানি আপনি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চলেছেন।"

বাবা বললেন "বেশি দেশ নিয়ে আবেগপ্রবণতা দেখিও না। এই দেশ আমায় কি দিয়েছে? তাছাড়া তোমার মায়ের চিকিৎসার জন্য আমার অনেক টাকা প্রয়োজন। তুমি এখান থেকে চলে যাও।"

আমি বললাম " আমি একজন সৈনিক। দেশের স্বার্থ রক্ষা করা আমার কর্তব্য।তার জন্য প্রয়োজন হলে আমি দেশের বাইরে যেমন লড়াই করতে পারে তেমনি প্রয়োজনে দেশের ভিতরেও দেশের শত্রুদের সঙ্গে লড়তে পারি। আপনি দেশের সঙ্গে শত্রুতা করেছেন। দেশের শত্রু মানে আমার শত্রু । আপনি আপনার ব্রিফকেস টি আমায় দিয়ে দিন।"

এই বলে আমি বাবার ব্রিফকেসটির দিকে এগিয়ে গেলাম। বাবা ব্রিফকেসে র সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন "আমার মৃত্যু না ঘটিয়ে তুমি এই ঘর থেকে এই ব্রিফকেস টি নিয়ে যেতে পারবেনা।"


এই কথায় আমার মাথায় খুন চেপে গেল। আমার কাছে দেশের চেয়ে বড় কিছু নয়। প্রতিটি প্যারা এস এফ দেশের জন্য বলি প্রদত্ত। প্রয়োজনে আমরা যেমন নিজের জীবন বলি দিতে প্রস্তুত তেমনি প্রয়োজনে যে কোনো পারিবারিক সম্পর্ক বলি দিতে প্রস্তুত।

আমি স্থির করলাম কোনভাবেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিদেশের কাছে পাচার হওয়া রুখতেই হবে।

এই কাজে বাবা যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে বাবাকেও দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

যেমন ভাবা তেমনি কাজ।কমান্ডো ট্রেনিং এর সময় আমাদের খালি হাতে শত্রু বিনাশ শেখানো হয়। আমি সজোরে বাবার ঘাড়ে আঘাত করলাম। বাবা মুখ থুবড়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন । আমি তার নাকের কাছে আঙ্গুল দিয়ে দেখলাম তার নিঃশ্বাস বন্ধ। বুঝতে পারলাম আমার আঘাতে তার তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়েছে। 

এবারে চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে এই ঘর থেকে সকলের চোখ এড়িয়ে বেরোনো যায়।   গলির দিকের জানালাটা আমি আগেই লক্ষ্য করেছিলাম। জানালাটি খুলে জানালার পাশ দিয়ে একটি পাইপলাইন নিচে পর্যন্ত নেমে গেছে সেটা দেখতে পেলাম। এমন সময় আমার কাজের সুবিধা করে দিয়ে লোডশেডিং হয়ে গেলো। আমি পকেট থেকে রুমাল বের করে ব্রিফকেসের হাতলটি রুমাল দিয়ে আমার প্যান্টের  বেল্টের সঙ্গে বেঁধে নিলাম। রুমালটা বের করার সময় কোথায় 10 টাকার নোটটি বাইরে পড়ে গেছিল। তাড়াহুড়োয় আমি বুঝতে পারিনি। জানালা তে কোন রড ছিলনা। জানালা খুলে লোডশেডিং এর সুবিধা নিয়ে আমি পাইপ বেয়ে নিচে নেমে এলাম।

নিচে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই কারেন্ট চলে এলো। আমি আমার বুলেট এর কাছে গিয়ে স্টার্ট দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

আমি জানি আইন হাতে তুলে নিয়ে আমি ঠিক করিনি। কিন্তু দেশের স্বার্থে আমি যা করেছি তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নই।"

সুবিমল বাবু বললেন " ব্রিফকেস টি কোথায় ?"

উত্তরে বিজয় বললো " সেটি আমার কাছে আছে। এবং তাতে থাকা কাগজপত্র অক্ষত আছে।"

সুবিমল বাবু বললেন "আপনি কালকে ফিরে যাচ্ছেন। যাওয়ার আগে ব্রিফকেস টি আমার অফিসে জমা দিয়ে যাবেন কাগজপত্র সমেত।"


বিজয় অবাক হয়ে বললো " তারমানে ? আপনারা আমাকে গ্রেফতার করবেন না?"


সুবিমল বাবু বললেন "আপনারা আছেন বলেই আমরা সাধারণ নাগরিকরা শান্তিতে আছি। তাছাড়া আপনি একজন সৈনিক হিসাবে আপনার ডিউটি করেছেন। আপনি বাধা না দিলে হয়তো এতক্ষণে দেশের গুপ্ত তথ্য বিদেশে পাচার হয়ে যেত। পুলিশ যেমন বিদেশি এজেন্সির কোন আততায়ীর  সন্ধান করছে তেমনি করতে থাকবে।

কি প্রকাশ ? তুমিও আমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত তো ?"

প্রকাশ বাবু বললেন "সম্পূর্ণরূপে একমত। দেশের প্রতি অনুগত এমন একজন দেশপ্রেমিককে বাঁচাবার জন্য  বেশ কিছু প্রমাণ লোপাট করার দরকার হলে, তাই করবো। বিজয় বাবু আপনি নিশ্চিন্তে দেশের কাজে যোগ দিন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে আপনার বাবার বিশ্বাসঘাতকতা জানিয়ে কোনো অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির কাছ থেকে একটি পার্সেল পৌঁছে যাবে। সেই পার্সেলে  আপনার বাবার ব্রিফকেস থেকে পাওয়া সব কাগজপত্র প্রমাণ হিসাবে থাকবে।

পুলিশ ও সিবিআই এই ঘটনায় বিদেশী গুপ্তচর দের যোগসুত্র খুঁজতে থাকবে। সেটার প্রয়োজন আছে।"

বিজয় বললো "তাহলে আজ আমি আসি?"

সুবিমল বাবু বললেন "এসো।"


বিজয় চলে গেলে সুবিমল বাবু বললেন " জানিনা আমি ঠিক করলাম না ভুল করলাম। তবে আমার মন বলছে আমি ঠিক কাজ করেছি।"

প্রকাশ বাবু সুবিমল বাবুর কাছে এসে হাল্কা করে পিঠে চাপড় মেরে বললেন " আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"(শেষ)







Saturday, September 28, 2019

মৃত্যুর সঙ্গে কিছুক্ষণ

বিরাট সেতুটির অপর প্রান্ত দেখা যাচ্ছিল না। বেশি চওড়া সেতু নয়। খুব জোর দুই জন মানুষ পাশাপাশি হেঁটে যেতে পারে। লম্বা লম্বা পাকানো দড়ি দিয়ে তৈরি সেতু। হাওয়ায় একটু দুলছে। দুটো পাহাড়ের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই দড়ির তৈরী সেতুটা। অনেক উঁচুতে বলে চারিদিকে হালকা মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে।ভারি সুন্দর মনোরম দৃশ্য। অনেক নিচে একটা পাহাড়ি নদী বয়ে চলেছে।
অনন্ত সেতুটার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো ওপারে যাবে কিনা।সে কি করে এখানে এলো ঠিক মনে পড়ছে না। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় শুয়ে ছিলো মনে পড়ছে। ঘুম আসছিলো না। বুকের ডান দিকে হালকা চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছিল। তারপর আর কিছু মনে নেই। হঠাৎ দেখলো সে এই বিশাল দীর্ঘ সেতুটার সামনে একা দাঁড়িয়ে।এতো সুন্দর জায়গায় আগে কখনো আসেনি। চারিদিকে পাহাড়ী বুনো ফুলের মেলা বসেছে। খুব সুন্দর একটা ভারি মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে। কিন্তু বডড ফাঁকা লাগছে। কেউ কোত্থাও নেই। এমনিতেই মিনতিকে ছাড়া সে কোথাও যায় না। কিন্তু এখন মিনতিকেও চোখে পড়ছে না।সবাই গেলো কোথায় ?
সেতুটির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো ওপারে যাবে কিনা।

এমন সময় পিছন থেকে একটি খুব সুন্দর দেখতে আট নয় বছরের বাচ্ছা মেয়ে র কন্ঠস্বর ভেসে এলো "আমাকে একটু ওপারে নিয়ে যাবে গো ?"

অনন্ত বললো "কে তুমি ?"

মেয়েটি  বললো "আমি ? আমি নিয়তি। আমাকে একটু ওপারে নিয়ে চলো না।"

অনন্ত দেখলো  মেয়েটি অন্ধ। তার খুব মায়া হলো। এগিয়ে এসে মেয়েটির দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে মেয়েটি দুই একবার হাতড়ে অবশেষে অনন্তর হাতটা শক্ত করে ধরলো।

অনন্ত বললো "ওপারে কি আছে ?"

নিয়তি বললো "ওপারে আমার বাড়ী।"

অনন্ত বললো "আচ্ছা এই জায়গাটার নাম কি ? আর আমি কিভাবে এখানে এলাম ?"

নিয়তি  হেসে বললো "তুমি কেমন মানুষ গো ? এই জায়গাটি চিনতে পারছো না ? ঐ যে নদীটি দেখতে পাচ্ছো অনেক নীচে দিয়ে বয়ে চলেছে ওটা বৈতরণী নদী। একদিন সবাইকেই ঐ নদী পেরিয়ে ওপারে যেতে হয়। আমিই সবাইকে এই বিরাট সেতু দিয়ে নদী পেরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করি।"

অনন্ত ভয় পেয়ে বললো "তার মানে আমার কি মৃত্যু হয়েছে? সত্যি করে বলতো তুমি কে?"

নিয়তি বললো "তোমার এখনো মৃত্যু হয় নি। তবে মৃত্যু হতে চলেছে। তুমি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছো।
আর আমার অপর নাম মৃত্যু ।"
অনন্ত বললো "আমায় ছেড়ে দাও । আমার অনেক কাজ বাকি আছে।"
অনন্ত হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু ঐটুকু ছোট্ট মেয়ের হাতে কি জোর। বেশ কয়েকবার ঝাঁকুনি দিয়েও অনন্ত হাত ছাড়িয়ে নিতে পারলোনা।

অবশেষে হার মেনে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো "আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমার সঙ্গে যেতে চাই না। আমি এখনি মরতে চাই না।"
নিয়তি বললো "কেন ভয় কি ? এটাই তো সকলের আসল গন্তব্য।সব জীবিত প্রাণীই তো মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।মরণ তো জীবের স্বাভাবিক গতি।"
অনন্ত বললো "আমার অনেক দায়িত্ব পালন করার আছে। আমার একমাত্র মেয়েটি খুব ছোট্ট। ঠিক তোমার বয়সী। আমার স্ত্রী মিনতি অসুস্থ। তার সাহায্য করার কেউ নেই। তোমার পায়ে পড়ি , তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।"

নিয়তি বললো "এই জগতে কেউ কারো নয়। তুমি যাদের কথা চিন্তা করে বাঁচতে চাইছো , একদিন হয়তো তারাই তোমার কথা মনে রাখবে না। তুমি পূর্বে বহুবার জন্ম গ্রহণ করেছো আবার বহুবার মৃত্যু বরণ করেছো। প্রতি জন্মেই বহু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলে।আজ সে সব অতীত। তুমি মিথ্যা ভ্রম বশত এসব চিন্তা করছো। কোনো কিছুই তোমার জন্য আটকা পড়ে থাকবে না। সবই মহাকালের আপন নিয়মে হতে থাকবে।যার যেটুকু পাওয়ার আছে সে শত চেষ্টা করলেও তার অধিক পাবে না।"

অনন্ত বললো "ওগো আমি যে পিতা। আমি আমার কর্তব্য ছেড়ে এভাবে যেতে পারি না। তুমি যদি জোর করে আমাকে নিয়ে যাও তবে আমার আত্মা শান্তি পাবে না। আমাকে আমার কর্তব্য পালন করতে দাও।"
নিয়তি বললো " এই জগতে সব কিছুই পরিবর্তনশীল। তুমি তোমার পরিবারের কথা চিন্তা করে মৃত্যুর হাত ছেড়ে দিতে চাইছো। কিন্তু মৃত্যু সকল জীবের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। মৃত্যু আছে বলেই জীবন এতো মহান। এই জীবন কে ভালো কাজে ব্যবহার করা উচিত।অথচ দেখো সবাই লোভ , লালসা চরিতার্থ করতেই ব্যস্ত।আজ যে সম্পর্কগুলোর জন্য পাপকাজ করছো একদিন সেই সম্পর্ক গুলো আর মধুর থাকবে না। সেই দিন পড়ে থাকবে শুধুই কর্ম।যে কর্ম তুমি ইহজীবনে করেছো সেই কর্মই তোমার শমন রূপে তোমার সামনে উপস্থিত হবে । সেই দিন তুমি কেবল একা তোমার কর্মফল ভোগ করবে।
সেজন্য তোমাকে বলছি তুমি বিন্দুমাত্র পিছুটান অনুভব না করে এগিয়ে চলো।ঐ তোমার গন্তব্য দেখা যাচ্ছে। আমি তোমার সহায়ক মাত্র। তোমার কর্ম ভালো তাই আমি মৃত্যু তোমার কন্যা সম রূপ ধারণ করে তোমাকে নিতে এসেছি।
যাদের কর্ম ভালো নয় তাদের কাছে আমি আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে আসি। ঐ দূরে তোমার কর্মফল তোমার জন্য খুব সুন্দর এক জগৎ তৈরী করেছে।চলো তোমার সুন্দর কর্মফল ভোগ করবে চলো।কর্মফল ভোগ সম্পূর্ণ হলে পুনরায় নতুন কোনো গর্ভে নতুন কর্ম করার জন্য জন্ম লাভ করবে।"

অনন্ত চিৎকার করে বললো "চাই না ,চাই না তোমার স্বর্গসুখ। আমি আমার ছোট্ট মেয়েটির কাছে ফিরে যেতে চাই। আমার স্ত্রী র কাছে যেতে চাই। আমার হাত ছেড়ে দাও দয়া করে।"

এমন সময় দূর থেকে একটা বাচ্ছা মেয়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো "বাবা ,ও বাবা কথা বলো না।এতো ঘুমোলে হবে ?আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে তো? তুমি বলেছিলে ছুটির দিন বেড়াতে নিয়ে যাবে , আইসক্রিম খাওয়াবে।ওঠো না ,ওঠো না।
ও মা দেখো না বাবা এখনো ঘুমাচ্ছে। কত্তো ডাকছি, কিছুতেই উঠছে না।"

অনন্ত কেঁদে উঠলো ,"ও গো মৃত্যু , আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে যেতে দাও। আমি তোমার সঙ্গে এখনি যেতে চাই না। আমার অনেক কাজ বাকি আছে। যেদিন সব কর্তব্য শেষ হবে সেইদিন তুমি এসো। আমি হাসি মুখে তোমার সঙ্গে যাবো।
আজ আমাকে ছেড়ে দাও।"
মৃত্যু উচ্চৈঃস্বরে হেসে বললো "যদি না ছাড়ি তুমি কি করবে ? লড়াইয়ে আমাকে হারাবার ক্ষমতা কারো নেই।"

অনন্ত বললো "জানি তুমি আমার চেয়ে শক্তিশালী। কিন্তু আমি একজন পিতা। কন্যার জন্য আমি যে কোনো শক্তির সঙ্গে ই লড়তে পারি। যতক্ষণ আমার অস্তিত্ব আছে ততোক্ষণ তোমার সঙ্গে লড়বো। কিছুতেই যাবো না তোমার সঙ্গে। আমি আর এক পাও এগোবো না। তোমার পা জড়িয়ে ধরে এই  এখানে বসলাম।দেখি তোমার কতো শক্তি । আমার কর্তব্য বড়ো না তুমি বড়ো আজ তার পরীক্ষা হয়ে যাক।"

এই বলে অনন্ত মৃত্যুর পা দুটো ধরে সেতুর ওপরেই বসে পড়লো। সুন্দর আলতা পড়া দুটি রাঙা চরণ। সেই পা দুটো চোখের ফোঁটা ফোঁটা জলে ভিজিয়ে দিতে দিতে বলে চললো "আমাকে ছেড়ে দাও মা। আমার স্বর্গ চাই না। আমার পরিবারের সদস্যদের মুখের হাসি আমার কাছে স্বর্গের সমান।"

ওদিক থেকে আরো উচ্চৈঃস্বরে স্পষ্টভাবে ভেসে আসছে একটা কচি গলার আওয়াজ "বাবা , ও বাবা , কথা বলো।দেখো মাও কাঁদছে। তুমি কথা বলো।"

মৃত্যু এর আগে কখনো এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। মৃত্যুর মন বড়ই কঠিন কঠোর।সে জন্মান্ধ।কারণ বিধাতা কখনো চায় নি সে তার শিকারের মুখের দিকে চেয়ে তাদের কষ্ট চোখে দেখে দয়া করে। কিন্তু বিধাতা তার চোখ না দিলেও কান দিয়েছে।আজ ছোট্ট একটি মেয়ের কচি কচি গলার স্বর তার মনে সব কিছুই তছনছ করে দিচ্ছে। তার কঠোরতা , তার নির্মমতা , এই সব কিছুই গলিয়ে দিচ্ছে।

আর সইতে পারলো না । শেষে অনন্তর হাত ধরে তুললো ।
মৃত্যু অনন্তর চোখের জল মুছে দিয়ে বললো "বাবা তুমি কেঁদোনা।আজ আমি তোমাদের বাবা মেয়ের ভালোবাসার কাছে পরাজিত। আমার এই পরাজয় খুশীর। তুমি যাও বাবা তোমার মেয়ের কাছে। যেদিন তোমার মেয়ের প্রতি কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে সেইদিন এই মেয়েকে ডেকো। আমি তৎক্ষণাৎ পৌঁছে যাবো তোমার স্নেহের টানে। যাও বাবা যাও। আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম। তুমি ফিরে যাও তোমার মেয়ের কাছে।"
মৃত্যু অনন্তর হাত ছেড়ে দিতেই অনন্ত ভক্তিভরে সেই কন্যা স্বরূপ মৃত্যুর দুটি আলতা পড়া রাঙা চরণে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম করলো। তারপর বললো "আসি মা।"
মৃত্যু বললো "এসো"।

ধীরে ধীরে চোখ মেলে চাইলো অনন্ত।দেখলো সে বিছানায় শুয়ে আছে।
স্ত্রী মিনতি বিছানার একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।আর মেয়ে তার বুকের ওপরে শুয়ে কেঁদে চলেছে। অনন্ত আস্তে আস্তে উঠে বসলো। মেয়ে বাবাকে উঠে বসতে দেখে বললো " মা দেখো বাবা উঠে বসেছে"।
মিনতি বললো " ওগো তোমার কি হয়েছিল ? আমি খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।"

অনন্ত বললো "তেমন কিছু নয়।   স্বপ্ন  দেখছিলাম।এক অতি আপনজন এসেছিলেন স্বপ্নে। আমি তাকে অনেক দিন বাদে আসতে বলেছি।সে সম্মত হয়ে চলে গেছে। "
তারপর অনন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো "চল মা তোকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে আসি।"(শেষ)।