Crss colum

Monday, June 17, 2019

একদিন দুপুর বেলায়

দিদার নাক ডাকছে।রিকু এতক্ষণ মটকা মেরে শুয়ে ছিলো। দুপুর বেলা আবার ঘুম আসে নাকি ?
ঘুমোতে হয় সেই রাত্তিরে। অবশ্য রাত্তির পর্যন্ত জেগে থাকা রিকু র হয়ে ওঠে না। সন্ধ্যা বেলায় পড়তে বসলেই যত ঘুম চোখে নেমে আসে।
তা বলে দুপুর বেলা ঘুম ?
নৈব নৈব চ।
দুপুর বেলা হলো মজা করার সময়। মামার বাড়ির আম বাগান থেকে কাঁচা আম পেড়ে নুন আর গুঁড়ো লঙ্কা দিয়ে চাট করে খেতে যা মজা না। উঃ ভেবেই রিকুর জিভে জল চলে এলো। রিকু
আস্তে আস্তে উঠে বসলো। চেয়ে দেখলো দিদার নাক বেশ জোরে জোরেই ডাকছে।
রিকু বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে ঘরের বাইরে এলো । এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখলো অন্নদা মাসিকে চোখে পড়লো না।
অন্নদা মাসি এই বাড়িতে রান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করে।গোলগাল চেহারার অন্নদা মাসিকে রিকু একটু ভয় করে চলে।বেশ কয়েকবার অন্নদা মাসি র কাছে দুষ্টুমি করে কানমোলা খেয়েছে। অবশ্য দুষ্টুমি বলতে তেমন কিছু নয়। ছাদে আমসত্ত্ব শুকোতে দেওয়া ছিল।রিকু তার এক অংশ ছিঁড়ে খেয়ে দেখেছিল মিষ্টি হয়েছে কিনা। সেই সময় অন্নদা মাসি কি একটা কারণে ছাদে উঠেছিল। একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে রিকুর কি দূর্দশা টাই না করেছিল অন্নদা মাসি। খুব বকুনি আর তার সাথে কানমোলা। শুধু তাই নয় ।ফোন করে এই কথাটা আবার মাকে বলে দিয়েছিল।মা তো ফোন করে রিকুকে কত বকাবকি করলেন। এমনকি এটাও বললেন ,রিকু যদি তার দুষ্টুমি বন্ধ না করে তবে তিনি রিকুকে কোন বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেবেন।
আসলে রিকু মামার বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করে। মা , বাবা দুজনেই চাকুরী করে।মা একটা মেয়েদের স্কুলে পড়ায়।আর বাবা কলেজের প্রফেসর।দুজনেই বাইরে থাকলে রিকুকে দেখাশোনা করবে কে ?
প্রথম প্রথম কিছুদিন একজন গভর্ণেস ছিল। কিন্তু সে রিকুকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতো না । অধিকাংশ দিন কাজে আসতো না। শেষে একদিন মা তাকে রাগের মাথায় কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিলো।
তারপর কয়েকদিন স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে রিকুর জন্য একটা বোর্ডিং স্কুল ঠিক করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু।
সেই সময় মামা আর দিদা রিকুদের বাড়ি বেড়াতে এলো।সব শুনে মামাই মাকে প্রস্তাব দিলো রিকুকে মামার বাড়ি রেখে পড়াশোনা করানোর। মামার বাড়ির পাশের গ্রামে একটা ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে। মা নিজেও ঐ স্কুলে পড়াশোনা করেছে।  যাই হোক অনেক আলাপ আলোচনার পর রিকু শেষ পর্যন্ত মামার বাড়ি এসে রইলো। প্রথম প্রথম রিকুর মাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই রিকুর এই নতুন জায়গাটা ভালো লেগে গেল। এখানে কেউ বকাবকি করে না।দিদা তো খুবই ভালো।
কত্তো গল্প বলেন। সবচেয়ে ভালো লাগে দিদার বিয়ের গল্প।দিদার বৌভাতের দিনে নাকি বাড়িতে চোর ঢুকেছিল। সেই গল্পটা রিকুর শুনতে ভালো লাগে। অনেকবার শুনেছে। তবু আবার শুনতে ইচ্ছা করে। কিন্তু দিদা ইদানিং অর্ধেক বলেই নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে থাকে। তখন খুব রাগ হয়।

 মামা উকিল। সারাদিন নিজের ক্লায়েন্ট নিয়ে ব‍্যাস্ত থাকে।  কখনো সখনো রিকুর সাথে মুখোমুখি হলে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করেন , 'কিরে পড়াশোনা ঠিক মতো করছিস তো ?’ রিকু মামাকে দেখে ভয়ে ভয়ে ঘাড় নেড়ে হ‍্যাঁ বলে একছুট্টে দৌড়ে পালায়। মা বাবা মাসে একবার এসে রিকুকে দেখে যায়। যেদিন মা বাবা আসে সেইদিন রিকুর বড় শাস্তি। সারাদিন লক্ষী  ছেলে হয়ে থাকতে হয়। তবে সুখের কথা এই যে মা বাবা একদিনের বেশি থাকে না।  রিকু পড়াশোনায় খারাপ নয় । সকাল সন্ধ্যা দুজন টিউশন মাস্টার আসে। স্কুলে ও রিকুর রেজাল্ট ভালোই হয় । ক্লাসে প্রথম তিনজনের মধ্যে রিকুর র‍্যাংক থাকে।
কিন্তু ছুটির দিনে রিকুর যত হুল্লোড়।

আজ অন্নদা মাসী নেই দেখে পা টিপে টিপে নিচে নামলো।মামা দের পুরানো জমিদার আমলের বাড়ী। বাড়ীর পিছন দিকে বিরাট বাগান । বাগানে বিশাল বিশাল গাছ।বট ,অশথ্ব ,আম ,জাম, কাঁঠাল আরো কত নাম না জানা গাছ। খিড়কির পুকরের কাছে গিয়ে রিকু দেখলো বাগানে যাওয়ার দরজা খোলা।এই মওকা। নিশ্চয়ই অন্নদা মাসি দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছেন।রিকু এদিকে ওদিকে চেয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে একছুট্টে বাগানে।ঐ  যে পশ্চিম কোণে একটা আম গাছ আছে না, তাতে গাছ ভর্তি কাঁচা আম ধরেছে। একেবারে হাতের কাছে ঝুলছে। রিকু একটা গাছের কোটর থেকে নুন লঙ্কার প্যাকেট বার করে আনলো। কয়েকদিন আগে এখানে লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল।নুন লঙ্কার প্যাকেট হাতে নিয়ে পশ্চিম দিকের আম গাছের কাছে গিয়ে দুটো বড়ো বড়ো আম পাড়লো। একেবারে হাতের কাছেই ঝুলছিলো। তারপর একটা আম গাছের গোড়ায় বসে আম দুটোকে নুন লঙ্কা দিয়ে তারিয়ে তারিয়ে খেতে লাগলো। হঠাত রিকুর হুঁশ এলো আজ রবিবার।চারটের সময় প্রাইভেট মাস্টার আসবে। তখন সবাই তার খোঁজ করবে। মনে পড়া মাত্রই আধখাওয়া আম গুলো ছুঁড়ে ফেলে নুন লঙ্কা আবার গোপন জায়গায় রেখে বাড়ির দিকে দৌড় লাগালো। দরজার কাছে এসে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। নিশ্চয়ই অন্নদা মাসি  এসে বন্ধ করে দিয়েছে।সর্বনাশ যদি রিকু এখন সদর দরজা দিয়ে ঘরে ঢোকে তবে সবাই জানতে পেরে যাবে রিকু দুপুর বেলায় বাড়ীর বাইরে ছিল। কি করা যায়?
হঠাৎ মনে পড়লো ঐ কোণের দিকে পাঁচিলে একটা বড়ো ফাটল আছে। আসলে ফাটলটি নাকি পাঁচিল তৈরীর কিছুদিন বাদেই হয়েছিল। খিড়কির দিকে বলে কেউ আর সারায়  নি। ফাটলটি অবশ্য খুব বড়ো নয় । তবে রিকুর মতো ছোটো রোগা পটকা ছেলেরা আরামসে গলে ভিতরে ঢুকতে পারে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।রিকু পাঁচিলের ফাটলটা দিয়ে সুরুৎ করে ভেতরে চলে এলো।
ওমা ঢুকেই অবাক।একদম চোখ ছানাবড়া। মামার বাড়ি টা পুরোনো ঝরঝরে মার্কা। সেটা দেখেই অভ্যাস। কিন্তু আজ হঠাত মনে হচ্ছে বাড়িটা একটু চকচকে। দেখে ঠিক পুরানো মনে হচ্ছে না।তার ওপর অনেক লোকজন এদিকে ওদিকে কাজ করছে। রান্নাঘরের সামনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে।আজ সকাল পর্যন্ত রিকু হলফ করে বলতে পারে সেখানটা ফাঁকা দেখেছে। কিন্তু এখন দেখছে সেখানে  বিরাট প্যান্ডেল খাটিয়ে রান্না হচ্ছে। প্যান্ডেলের অন্য পাশে চেয়ার টেবিল পেতে খাবার ব্যবস্থা। অনেকেই সেখানে খাওয়া দাওয়া করছে। ওমা একটা নতুন কনে বৌ পায়েস পরিবেশন করছে। পায়েসের বাটিটা যে ধরে আছে তাকে চেনা মনে হচ্ছে।আরে ওটা তো দাদু। দাদুকে রিকু দেখেনি।তার জন্মের এক বছর আগেই মারা গেছেন। কিন্তু রিকু তার ফটো দেখেছে।রিকু একদম নিশ্চিত লোকটা দাদু। তবে ফটোর চেয়ে অনেক কম বয়সী লাগছে। আচ্ছা কনে বৌটা কে । ঘোমটা দেওয়া আছে বলে বুঝতে পারছে না। আচমকা ঘোমটা সরে যেতেই রিকু অবাক।আরে এতো দিদা। তবে এখনকার মতো বুড়ী নয়।একদম কমবয়সী । মায়ের চেয়েও কমবয়সী।গালের বাঁ দিকে লাল তিলটা পর্যন্ত আছে।রিকু নিশ্চিত ওটা দিদা।
একজন বয়স্ক মানুষ বললো “ বৌমা , তুমি এবার ঘরে যাও । বিশ্রাম নাও।”
দিদা ঘাড় হেলিয়ে মাথা নাড়লো।
একজন বয়স্ক মহিলা বললো ‘ চলো নতুন বৌ , তোমাকে ঘরে দিয়ে আসি।’
এদিকে সকলের খাওয়া দেখে রিকুর বেশ খিদে লাগছে। তাছাড়া কি সব উদ্ভট কান্ড হয়ে চলেছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।রিকু ভাবলো ‘আগে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। তারপর সবকিছু একবার ভালো করে ভেবে দেখতে হবে।’ রিকু দিদার ঘরের দিকে হাঁটা দিলো।দিদার খাটের তলায় এটা ওটা খাবার জিনিস রাখা থাকে। যখন খুব খিদে লাগে  বিস্কুট,গুড় আম, আমুল দুধ এইসবের যোগান ওখান থেকেই আসে।রিকু দিদার ঘরে যেতে যেতে দেখলো অনেক অচেনা মানুষ বাড়িতে ঘোরাঘুরি করছে।তারা কেউ অবশ্য রিকুর দিকে মনোযোগ দিলো না।
রিকু দিদার ঘরের সামনে গিয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না।ঘর ফাঁকা পেয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো।আরিব্বাস দিদার ঘরের পুরাতন খাটটির জায়গায় একই ডিজাইনের নতুন খাট। ঘরের ভেতরটা নতুন নতুন জিনিসে ভর্তি।
কেউ একজন আসছে মনে হতেই রিকু দিদার খাটের তলায় সেঁধিয়ে গেলো। খাটের তলায় চেনা বস্তু গুলোর একটাও দেখা পেলো না। তার বদলে একটা গামলায় চাপা দিয়ে রাখা একগাদা রসগোল্লা দেখতে পেয়ে রিকুর খুশী ডবল হয়ে গেলো।

রসগোল্লা খেতে রিকু খুব ভালোবাসে। কিন্তু মামার বাড়িতে রসগোল্লা এলে দুই পিসের বেশি জোটে না। এই সুযোগ ।রিকু মনের সুখে রসগোল্লা সাঁটাতে লাগলো। ইতিমধ্যে ঘরে দুই মহিলা প্রবেশ করলো ।রিকু খাটের তলা থেকে দুই জনের পা ও শাড়ির অংশ দেখতে পেলো। একজনের শাড়ি দেখে বুঝতে পারলো দিদা।অন্যজন সেই বয়স্ক মহিলা টি।
বয়স্ক মহিলা টি বললো‘ নতুন বৌ , তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও। আমি বরং বাইরের কাজকর্ম সামলাই।’
এই বলে মহিলাটি চলে গেলো।
দিদা খাটের ওপরে শুয়ে পড়লো। এই সুযোগে রিকু বাকি রসগোল্লা গুলোতে মনোযোগ দিলো।
এদিকে নতুন বৌ খাটের তলায় খুটখাট আওয়াজ পেয়ে খাট থেকে নিচে নেমে খাটের তলায় উবু হয়ে যেই উঁকি মেরেছে , অমনি রিকু হাতে নাতে পাকড়াও।রিকু তখন মুখে একসঙ্গে দুটি রসগোল্লা ভরেছে।আর একটা রসগোল্লা হাতে নিয়েছে।
দিদা রিকুকে দেখে চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “ এই কে তুই ? বেরিয়ে আয় । নাহলে লোক ডাকবো।”
রিকু ভয়ে ভয়ে উত্তর দিতে গেলো ‘ আমি রিকু।’ কিন্তু গাল ভর্তি  রসগোল্লা থাকায় মুখ দিয়ে বিদঘুটে আওয়াজ বেরোলো ।দিদা ভয়ে চিৎকার করলো  ‘ ও মানদা মাসি , তাড়াতাড়ি এসো , বাড়িতে চোর ঢুকেছে।’
দিদার চিৎকারে বাড়িতে হৈচৈ পড়ে গেলো। সবাইয়ের দৌড়াদৌড়ি র আওয়াজ আসতে লাগলো।
রিকু বুঝতে পারলো ব্যাপারটা সুবিধার নয় ।দিদা তাকে চিনতে পারছে না। বাড়ির সব লোকের মধ্যে দিদাই তাকে সবচেয়ে ভালোবাসে। অথচ সেই দিদাই তাকে চিনতে পারছে না।রিকুর মনে হলো তার দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া উচিত। যেমন ভাবা তেমন কাজ।রিকু খাটের তলা থেকে বেরিয়ে দিদাকে পাশ কাটিয়ে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে দুই জন লোক ‘ কোথায় চোর ?’বলতে বলতে উঠে আসছে।
রিকু তাদের দুই জনকে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে ভাঙ্গা পাঁচিলের দিকে দৌড়তে লাগলো। একবার পিছনে তাকিয়ে দেখলো অনেক জন ছুটে আসছে তাকে ধরবার জন্য।
পাঁচিলের সেই ফাটলের কাছে এসে সাঁৎ করে বাইরে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে তার চেনা একটা গাছের কোটরে লুকিয়ে পড়লো। বেশ কিছুক্ষণ পরে কারো আওয়াজ না পেয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখলো । না কেউ নেই।এই খাঁ খাঁ দুপুর বেলায় কেই বা আসবে ?
এই বার ধীরে ধীরে সদর দরজার দিকে চললো।একটু ভয় ভয় করতে লাগলো।একটু আগেই তার রসগোল্লা চুরির কথা নিশ্চয়ই সবাই জেনে গেছে।দিদা নিশ্চিত সবাইকে বলে দিয়েছে। হাতটা এখনো রসে চটচট করছে। বাগানের একটা পুকুর আছে। তাতে একটা বাঁধানো ঘাট রয়েছে।রিকু সেই ঘাটে নেমে ভালো করে হাত ধুয়ে নিলো। তারপর সদর দরজার দিকে হাঁটা দিল।সদর দরজার কাছে কাউকে দেখতে পেলো না।রিকু সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই মামার মুখোমুখি হলো। মামা বললো ‘ এই রিকু , দুপুর বেলায় কোথায় গিয়েছিলি ?’
রিকু কাঁচুমাচু মুখ করে  অম্লান বদনে মিথ্যে  বললো ‘ ঝন্টু দের বাড়ি। খেলতে।’
মামা বললো ‘ এখন এই দুপুরে খেলতে ? আমি একজায়গায় বেরোচ্ছি । সন্ধ্যায় ফিরলে বই খাতা নিয়ে আমার কাছে আসবি।  তোর পড়াশোনা র অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে তার পরীক্ষা নেবো।’
রিকু মাথা নেড়ে ঘরে ঢুকে পড়লো।
সোজা দিদার ঘরে ঢুকে দেখলো দিদা ঘুমিয়ে আছে। দিদার উপর খুব রাগ হলো। তাকে না চেনার ভান করে মারধর খাওয়াচ্ছিলো। রিকু রাগ দেখিয়ে দিদার পাশটায় মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো।
দিদার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।দিদা তার গায়ে হাত দিয়ে ডাকছে ‘ ও দাদুভাই , এই অবেলায় ঘুমোচ্ছো কেন। উঠে পড়ো । তোমার প্রাইভেট মাস্টার এসেছে।’
দিদার হাতটা রিকুর কপালে ঠেকতেই দিদা চমকে উঠলো ‘ একি তোমার তো গা গরম। সারা দুপুর টো টো করে ঘুরে বেড়াবে। আমাদের কথা একটুও শুনবে না।’
দিদা এবার হাঁক পাড়লো ‘ অন্নদা , অন্নদা।'
অন্নদা মাসি ঘরে এসে বললো ‘ আমাকে ডাকলেন বড়মা?’
দিদা রিকুর পাশটায় শুয়ে রিকুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো ‘ যা , দাদুভাইয়ের প্রাইভেট মাস্টার কে গিয়ে বল দাদুভাইয়ের খুব জ্বর।আজ পড়বে না। ’
অন্নদা মাসি চলে গেলে রিকু দিদাকে বললো ‘ আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো না। তুমি আমায় চিনতে পারলে না।’
দিদা বললো ‘ কখন ?’
রিকু বললো ‘ আজকেই তো।’
দিদা হেসে বললো ‘ তুমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছিলে। এমন কখনো হতে পারে যে আমি আমার দাদু ভাইকে চিনতে পারবো না ?’
দিদা বললো “জানো আজকের তারিখেই আমার বৌভাত হয়েছিল।আর সেই বৌভাতের দিন তোমার বয়সী একটা চোর ঘরে ঢুকে সব মিস্টি খেয়ে নিয়েছিলো।”
রিকু চোখ পিটপিট করে বললো ‘ চোরটা আমি ছিলুম।’
দিদা চকাস করে রিকুর গালে একটা চুমু দিয়ে বললো “ বালাই ষাট , তুমি কেন হবে দাদুভাই ? সেতো তোমার জন্মের আগের কথা। সেটা অন্য চোর ছিলো। তুমি এবার একটু ঘুমাও । আমি তোমার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।” (শেষ)

Monday, June 10, 2019

নতুন প্রভাত

সানাইয়ের সুরটা ভেসে আসছে। সামনাসামনি কোনো বিয়ে হচ্ছে বোধহয়। এতো করুণ সুর যে কেন প্রতিটি বিবাহের অনুষ্ঠানে বাজানো হয় তা অনিকেত এতোদিন বুঝতে পারতো না। কিন্তু আজ সে অনুভব করছে সানাইয়ের সুর এতো করুণ কেন। প্রতিটি বিবাহের অনুষ্ঠান যেমন নব দম্পতির জীবনে সুখ বয়ে আনে তেমনি অনেক কান্নার জন্ম দেয়। সে কান্না কখনো কন্যার বাবা মায়ের,যারা তাকে বুকে আগলে রেখে বড়ো করে তুলেছে তাদের। নতুবা তার মতো ভাগ্যহীন প্রেমিকদের।তিন মাস আগে থেকেই মল্লিকা নিজেকে তার জীবন থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলো। অনিকেত বুঝতে পারছিলো সব কিছুই। কিন্তু তার কিছুই করার ছিলো না।এক জন অর্ধ বেকার যুবকের পক্ষে সংসার করার বিলাসিতা শোভা পায় না। মল্লিকার দোষ নেই। সেই কলেজে ঢোকার প্রথম বছরেই আলাপ। তারপর বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। মল্লিকা অনেক দিন অপেক্ষা করেছিলো। কিন্তু আর পারলো না।ওর বাড়ী থেকে বিয়ের দেখাশোনা অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। মল্লিকা পড়াশোনার বাহানা দিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছিলো। কিন্তু বি এ ফাইনাল ইয়ারে পাশ করে যাওয়ার পর আর কোনোভাবেই বাড়ীর চাপ ঠেকাতে পারলো না। তবুও মল্লিকা শেষ চেষ্টা হিসাবে অনিকেত কে বলেছিলো তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু অনিকেত রাজী হয় নি।রাজী হবেই বা কি করে ? বাবার চটকলের চাকরি থেকে রিটায়ার্ড হতে আর এক বছর বাকি। মায়ের দুই চোখে ছানি পড়েছে।বাম চোখটায় তো আর কিছুই দেখতে পায় না। ঘরে বিবাহযোগ্যা বোন।এই অবস্থায় সামান্য টিউশনির টাকার উপরে ভরসা করে এতো বড়ো ঝুঁকি নেওয়া যায় না। চোখে জল নিয়ে মল্লিকা কাঁদতে কাঁদতে  চলে গিয়েছিল। সেদিন অনিকেত কাঁদে নি। পাথরের মতো চুপচাপ বসেছিল পার্কের এক কোণের বেঞ্চিতে।

আজকেও সেই বেঞ্চিতেই বসে আছে । কিন্তু আজ আর চোখের জল বাঁধ মানছে না। আজকে মল্লিকার বিয়ে।শুনেছে পাত্র নাকি সরকারি চাকুরে। বিশাল বড়োলোক।ভালোই ! মল্লিকা সুখেই থাকবে। নিজেকে আজ বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে অনিকেতের। নিজের জীবনটাকে মূল্যহীন মনে হচ্ছে। কি হবে এই জীবন রেখে । নিজেকে ধিক্কার দেয় অনিকেত। মনের কষ্ট চাপা দিতে সকাল বেলাতেই  ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলো অনিকেত। সারাদিন কিছু খায় নি। সন্ধ্যা হতে গঙ্গার ধারে এই পার্কের সেই নির্দিষ্ট বেঞ্চিতে বসেছিলো অনিকেত। এই বেঞ্চিতে বসে একসময় ঘন্টার পর ঘন্টা দুজনে গল্প করেছে। ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু আজ নিদারুণ বাস্তব অনিকেতকে বুঝিয়ে দিচ্ছে জীবন টা এতো সহজ নয়।
‘এই জীবনে যখন মল্লিকা কে পেলাম না , তখন এই জীবন রাখবো না।’নিজের মনে বিড়বিড় করে বললো অনিকেত।‘ মা গঙ্গা তুমি সাক্ষী, আমি সত্যিই ভালোবেসেছিলাম মল্লিকাকে। তোমার বুকেই আজ আশ্রয় নেবো। আমার শেষ ইচ্ছা  পরের জন্মে মল্লিকাকে যেন স্ত্রী হিসাবে পাই।’চাপা স্বরে বললো অনিকেত।

আচমকা পিঠে একটা চাপড় এসে পড়লো , সেই সঙ্গে একটা চেনা গলার স্বর “ কিরে তাহলে ঠিক করেই ফেললি যে আত্মহত্যা করবি?”

অনিকেত ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেই চমকে গেলো। পার্কের বড়ো বড়ো ল্যাম্পপোস্টের আলোতে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে অমৃত দাঁড়িয়ে।
অনিকেতের মুখ দিয়ে একটু গোঙানির মতো আওয়াজ বেরিয়ে এলো। কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে অনিকেত বললো ‘ তুই , তুই এখানে ?’
অমৃত নির্দ্বিধায়  বেঞ্চির পিছন দিক থেকে ঘুরে গিয়ে অনিকেতের  পাশে বসে বললো “ হ্যাঁ আমি ।তোর জন্য আসতেই হলো।”
অনিকেত বললো “ কিন্তু তুই তো মারা গেছিস । শশ্মানে তোর দেহ আমার চোখের সামনেই সৎকার হয়েছে।”
অমৃত বললো ‘ তাতে কি ? আমি কি শেষ হয়ে গেছি ? নাকি আমার ইচ্ছা , অনিচ্ছা,আশা আকাঙ্খার নিবৃত্তি হয়েছে ? গীতায় পড়িসনি যে আত্মা অমর।’
অনিকেত বললো ‘না সেটা জানতাম। কিন্তু এই প্রথম প্রমাণ পেলাম।’
অমৃত বললো ‘ তাহলে কি ঠিক করলি ? আত্মহত্যা করবি ? করবি কর । আমি বাধা দেবো না।একাই আছি । তুই আত্মহত্যা করলে দুই জন হবো।’
অনিকেত বললো “ আমার দুঃখ তুই বুঝতে পারবি না।”
অমৃত বললো “ কি বুঝতে পারবো না ? মল্লিকা কে তুই অনেক অনেক ভালোবাসিস ,এটা বুঝতে পারবো না ? মল্লিকা ছাড়া তোর জীবনে বাঁচার কোনো মানে হয় না ,এটা বুঝতে পারবো না ? আসলে তুই বুঝতে পারছিস না যে , এগিয়ে চলাই জীবন। কোনো একটি ঘটনা নিয়ে আঁকড়ে পড়ে থাকা জীবন নয়। সুখ , দুঃখ দুটোই জীবনে আসবে। কিন্তু সেই অনুভূতি গুলোকে পিছনে ফেলে আরো নতুন অনুভবের আশায় এগিয়ে যেতে হবে। মল্লিকা তোর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। কিন্তু সেটা আজ অতীত।সে নতুন সংসার জীবন পেতেছে। তোদের দুজনের উচিত পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে জীবন টাকে নতুন করে গড়ে তোলা। ”
অনিকেত বললো ‘ বলা সহজ। কিন্তু ওকে ভুলে থাকতে পারা আমার কাছে অসম্ভব।’
অমৃত বললো “ আচ্ছা যে মা বাবা তোকে এতোগুলো বছর ধরে মানুষ করলো ,তুই চলে গেলে তাদের কি হবে একবারো ভেবেছিস ?যে বোন সকাল সন্ধ্যা তোর এটা ওটা ফাই ফরমাশ খাটে ,যার সব শখ আবদার দাদার কাছে , তার কথা তুই ভুলে গেলি কি করে ?  তোর কি সব কর্তব্য বোধ প্রেমিকার ভালোবাসার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে ?  এতটা অমানুষ তুই হলি কিভাবে ?”
অমৃত বলে চললো “ জানিস তো আমার একটা বোন ছিল। বাবা মা অনেক আগেই মারা গিয়েছিল।  অনেক কম বয়স থেকেই আমার কাঁধে বোনের দায়িত্ব এসে পড়েছিলো। আমি সারাদিন কাজ করে , সংসার চালিয়ে ,সন্ধ্যায় নাইট কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিল নিজে বড়ো হবো । ভালো চাকরি করবো। খুব ভালো ঘরে বোনের বিয়ে দেবো। কিন্তু সেসব আর হলো না।এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে ফেরার সময় একটা বাস আচমকা আমার বুকের ওপর দিয়ে…….. ”।অমৃত থেমে যায়। অনিকেত দেখলো অমৃতের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। অনিকেত জানে অমৃতের এই শরীর , চোখের জল , কোনোটাই আসল নয়, বায়বীয়। কিন্তু তার অনুভূতি টি খাঁটি।
অমৃত পুনরায় বললো ,“ আমার জীবন টাতো আর নেই। কিন্তু তোর টাতো এখনো আছে।জানিস আমার মৃত্যুর সময় আমার শেষ চিন্তা কি ছিলো ?  ”
অনিকেত বললো  “কি ?”
অমৃত উত্তর দিলো “ দাদা হিসাবে কর্তব্য টুকু করতে পারলাম না।  আমার বোন এখন কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে লোকের বাড়ি কাজ করে। সমাজের লোলুপ হায়েনার দল থেকে নিজেকে কতোদিন লুকিয়ে রাখতে পারবে জানি না। তাকে রক্ষা করার এখন আর কেউ নেই।
তুই কি চাস তোর বোনের পরিণতি আমার বোনের মতো হোক?”
অনিকেতের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে এলো। অনেকক্ষণ ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো।
শেষে অনিকেত বললো “ তুই চুপ কর। আমি বুঝতে পারছি যে ,সব কিছুর থেকে কর্তব্য বড়ো। আমি নিজের কর্তব্যে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতে চাইছিলাম।আজ থেকে আমি কখনো নিজের কর্তব্য পালন থেকে বিচ্যুত হবো না। ”
অমৃত বললো “ যাক ভালো লাগছে এই ভেবে যে তুই জীবনের মহত্ত্ব বুঝতে পেরেছিস।আর একটা কথা , চাকরির আশায় বসে না থেকে ব্যবসা কর না। ছোটোখাটো ব্যবসা দিয়ে শুরু কর।যেমন মনে কর  অর্ডার নিয়ে মাল সাপ্লাই। আমরা ভাই-বোন ঘরে   চানাচুর ,ঝুড়িভাজা ,বাদাম ভাজা এই সব তৈরী করে বিভিন্ন দোকানে সাপ্লাই দিতাম। তুই তো আমার সরঞ্জাম গুলো নিয়ে ঐসব তৈরী করে  দোকানে দোকানে সাপ্লাই দে। আমার বোনের সঙ্গে পার্টনারশীপ করে নতুন করে ব্যবসা শুরু কর। তাতে আমার বোনের  ও তোর উভয়েরই মঙ্গল হবে।যাক চলি রে সকাল হয়ে আসছে।ঐ দেখ পূর্ব দিকের আকাশ ফর্সা হয়ে গেছে। আমার কথাটা মনে রাখিস …  ”
অমৃত ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।
অনিকেত পূর্ব দিকে আকাশে উদীয়মান সুর্যের দিকে তাকিয়ে রইলো।
সূর্যের আলো আজ তার মনের সব গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন আশা বহন করে আনছে।

Thursday, June 6, 2019

নাগদেবী

আচমকা বৃষ্টি নামতেই মিলন দৌড়তে শুরু করলো। কিন্তু দৌড়ে যাবেই বা কোথায়? মেঘটা অবশ্য অনেকক্ষণ ধরেই ধীরে ধীরে জমা হচ্ছিলো উত্তর পশ্চিম আকাশে। সন্ধ্যা হবো হবো। চারিদিকে দিগন্ত প্রসারিত উন্মুক্ত প্রান্তর। হঠাৎ চোখে পড়লো অনেকটা দূরে যেন একটা মন্দিরের কাঠামো দেখা যাচ্ছে।মিলন ঐ দিকে ছুট লাগালো।যখন মন্দিরের চাতালে গিয়ে দাঁড়ালো তখন রীতিমত সে হাঁপাচ্ছে। অনেক ক্ষণ কিছু খায় নি। আজকে রাতে খাবার জোটবার সম্ভাবনা নেই।

 সেই দুপুর বেলায় কাছে থাকা শেষ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে হোটেলে ভাত খেয়েছিলো।ভাতের বিল হয়েছিল তিরিশ টাকা। খুচরো না থাকায় হোটেল মালিক বাকি টাকা না দিয়ে একটা রাজ্য লটারির টিকিট ধরিয়ে দিয়েছিলো।হোটেল মালিক হোটেলের ব্যবসার সঙ্গে সাইড বিজনেস হিসাবে লটারির টিকিট বিক্রি করে।মিলন বুঝতে পারছিলো হোটেল মালিকের খুচরো না থাকার বাহানাটা পুরোপুরি মিথ্যে। তবু সব কিছুই সয়ে নেওয়ার অভ্যাস বশত সে প্রতিবাদ করলো না।
এখন সে কর্পদক শূন্য। এই কয়েকটা মাসের মধ্যেই জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা এসে গেছে।
ইতিমধ্যেই বৃষ্টি বেশ জোরেই পড়তে শুরু করেছে। মন্দিরের বাড়ানো চাতাল বৃষ্টির জল আটকাতে পারছে না। বৃষ্টির ছাঁট লেগে ভিজে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু মন্দিরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তবে কি কেউ ভিতরে আছে?
কিন্তু এই নির্জন প্রান্তরে পোড়ো মন্দিরে কেই বা আসবে? মিলন মনে মনে ভাবলো হয়তো বহুদিন দরজা খোলা না হওয়ায় দরজা জ্যাম লেগে আটকে গেছে।সেটাই স্বাভাবিক। এদিকে বৃষ্টি প্রবল বেগে পড়তে শুরু করেছে।কড়কড় শব্দে মেঘ ডাকছে।ক্ষণে ক্ষণে বজ্রপাত হচ্ছে।মনে হচ্ছে আজ বুঝি প্রলয় শুরু হয়েছে।এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে একটা পোড়ো মন্দিরের চাতালে দাঁড়িয়ে মিলন বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো "যদি মৃত্যু আসে আসুক। আমি বাঁচতে চাই না।আজ যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায় আমার কিছু আসে যায় না। আমার চেনা পৃথিবী কয়েকদিন আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকিটাও আজ ধ্বংস হোক।"
এমন সময় মন্দিরের ভিতর থেকে একটা নারী কন্ঠ ভেসে এলো "আপনি বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজছেন কেন ? মন্দিরের ভেতরে চলে আসুন।"
মিলন বুঝতে পারলো মন্দিরের ভেতরে কেউ আছে।তার গলার আওয়াজ শুনে সে বুঝতে পেরেছে  বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।মিলন বললো "দরজা তো বন্ধ। ভিতরে কিভাবে যাবো ?"
নারী কন্ঠ বললো "আর বন্ধ নেই। আপনি দরজায় ধাক্কা দিন।খুলে যাবে।"
মিলন এবার দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
নারী কন্ঠ বলে উঠলো "ভিতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে ছিটকিনি লাগিয়ে দিন। মন্দিরের কুলুঙ্গি তে একটা মাটির প্রদীপ আছে। আমি প্রদীপ জ্বেলে দিচ্ছি।"
মিলন সেই মতো ভিতরে ঢুকে দরজাটায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিল। ওদিকে ফস করে একটা দেশলাই জ্বালার আওয়াজ হলো।তারপরে একটা প্রদীপের ক্ষীণ আলোয় মন্দিরের ভিতরটা আলোকিত হয়ে উঠলো।
মিলন সবিস্ময়ে দেখলো ভেতরে একটা শিবলিঙ্গ রয়েছে।আর শিবলিঙ্গের অপর দিকে একটি অপরূপা সুন্দরী ষোড়শী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জীবনে এতো সুন্দরী নারী মিলন কখনো দেখেনি।মিলন অবাক চোখে হাঁ করে তাকিয়ে আছে দেখে মেয়েটি লজ্জা পেয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে নিলো।মিলন এবার যেন হুঁশ ফিরে পেয়ে নিজের চোখ অন্য দিকে সরিয়ে নিলো।মিলন চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো বেশ বহুকালের পুরাতন মন্দির । পূজার্চনা নিয়মিত হয় বলে মনে হয় না। শিবলিঙ্গের ওপরে কিছু সাদা ফুল রয়েছে। সামনে একটি রেকাবীতে কয়েকটি ফল রয়েছে। মনে হয় মেয়েটি এই ফুল ফল দিয়ে পূজো করেছে।
মেয়েটি বললো "আপনি   বসুন । নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়েছে। এই প্রসাদী ফল গুলো খান।"
মিলন বললো ‘ আপনিও খান।’
মেয়েটি স্বল্প হেসে বললো ‘না, আমি খাবো না। আমি একটা ব্রত পালন করছি। গত তিনদিন আমি উপবাস করে আছি।আজ আমার ব্রতের শেষ দিন। আপনি খেয়ে নিন। আমি জানতাম আপনি ক্ষুধার্ত অবস্থায় আসবেন।তাই এই ফল গুলো সংগ্রহ করে পূজার প্রসাদ হিসাবে আপনার জন্য রেখে দিয়েছি।’
মিলন অবাক হয়ে বললো ‘ আপনি জানতেন আমি আসবো ? কিভাবে জানলেন ?’
মেয়েটি উত্তর দিলো‘ স্বয়ং শিব আমার স্বপ্নে আপনার সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। এমনকি কখন কোন পরিস্থিতিতে আপনি এখানে আসবেন সেই সব কথা আমায় জানিয়েছেন।’
মিলন অনুভব করলো মেয়েটির মাথার ঠিক নেই।তাই উল্টোপাল্টা বকছে।মিলন একটু মজা করেই বললো ‘ শিব ঠাকুর আমার সম্পর্কে কি কি বলেছেন একটু শুনি। তার আগে আপনার পরিচয় দিন।’
মেয়েটি বললো "আমার নাম উলুপী।  আমি নাগ বংশোদ্ভূত কন্যা। আমাদের বংশের নিয়ম আছে যখন কন্যা সন্তান বিবাহযোগ্যা হয় তখন সে কোনো নির্জন  শিব মন্দিরে গিয়ে তিনদিন উপবাস থেকে শিবের আরাধনা করবে। তিনদিনের শেষ দিনে শিবের প্রসাদে তার বিধি নির্দিষ্ট স্বামী সেই মন্দিরে উপস্থিত হবে।তার আগে স্বয়ং শিব স্বপ্নের মধ্যে তার স্বামীর বিস্তারিত বিবরণ জানাবেন।"
এই পর্যন্ত শুনেই মিলন বুঝতে পারলো মেয়েটি র মাথা সত্যি সত্যি একদম ঠিক নেই। মিলনের পরিচিত এক বন্ধুর টাইটেল হলো 'নাগ।' সম্ভবতঃ মেয়েটির   বাড়ির টাইটেল “নাগ”।তাই নিজেকে ‘নাগ বংশদ্ভুত’ বলছে।
বাকি সবটুকুই মনগড়া কাহিনী। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এই মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে।আর নিজের মনের মধ্যে যতো আজগুবি চিন্তা ভর করেছে , সেগুলোকে সত্যি বলে ভাবছে।
কিন্তু এরপরেই মিলন কে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি বলে চললো ‘ আপনার নাম মিলন রায়। বাবার নাম সুবিমল রায়। আপনার বাবা মার একই সঙ্গে একটি পথ দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। আপনার বাবার কোটি টাকার সম্পত্তি আপনার আত্মীয় স্বজন জবর দখল  করেছে। আপনি বর্তমানে কর্পদক শূন্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গতকাল নিজের কাছে থাকা শেষ পঞ্চাশ টাকা খরচ করে ফেলেছেন। নিজের আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা করে হেরে গিয়েছেন। উচ্চ আদালতে আপিল করার টাকা আপনার কাছে নেই। আপনি নিজের শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করছেন। এই পরিস্থিতি থেকে আপনি উদ্ধার পেতে পারেন। যদি আপনি আমার সাথে বিবাহ করতে রাজী হন। সেক্ষেত্রে আমি আপনাকে আমার রূপান্তরিত করবো আমার মতো ইচ্ছাধারী নাগ পুরুষে। এখন বলুন আপনি কি প্রস্তুত ? নাকি আরো কোন জিজ্ঞাস্য আছে?    ’
মিলন ঘাবড়ে গিয়ে বললো ‘ বুঝতে পারছি না আপনি  এতো কিছু জানলেন কি করে ? একথা ঠিক আজ আমি অসহায়। কিন্তু আমি আমার সব কিছু ফেরত পেতে চাই। তার জন্য যে কোন পদক্ষেপ নিতে রাজি। কিন্তু আপনি নিজেকে ইচ্ছা ধারী নাগ বলছেন। এসব তো গল্প কাহিনী তে শোনা যায়। বাস্তবে এর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই। ধরে নিলাম আপনি ঠিক বলছেন। সেক্ষেত্রেও একটি প্রশ্ন উত্থাপন হয়। আপনি ইচ্ছা ধারী নাগ হলে আমার মতো মানুষের সাথে বিবাহ কেন করবেন ? অপর কোনো ইচ্ছা ধারী নাগ কে বিবাহ করলেই তো পারেন।  ’
উলুপী এক মূহুর্ত চুপ থেকে বললো “ মানুষ জাতির পাশাপাশি  আমাদের জাতির বিকাশ হয়েছে সৃষ্টির আদি কাল থেকেই। মহাভারতে আছে ভীম কে দূর্যোধন  বিষ প্রয়োগ করে নাগ লোকে ফেলে দিয়েছিল। এই নাগ লোক আমাদের বংশীয় ইচ্ছা ধারী নাগেদের আবাসস্থল। আমরা ইচ্ছা করলেই মানুষ রূপ ধারণ করতে পারি ।  মানুষের রূপ ধারণ করলে আমাদের চেনা খুব মুশকিল। শুধু একটা তফাৎ আছে আমাদের জিহ্বার সামনের অংশ মানুষ রূপ ধারণ করার পরেও দুই ভাগে বিভক্ত থাকে।এই দেখুন " এই বলে উলুপী নিজের জিভ বার করে দেখালো । মিলন সবিস্ময়ে দেখলো তার জিভের সামনের অংশ দুই ভাগে বিভক্ত।

উলুপী পুনরায় বলতে শুরু করলো
 "বর্তমানে খুব অল্প সংখ্যক ইচ্ছা ধারী নাগ জীবিত রয়েছে।এক মুনির অভিশাপে ইচ্ছা ধারী নাগ বংশে পুরুষ নাগ জন্ম নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাদের  বংশের সকল নারী ও অবশিষ্ট পুরুষ গণ বংশ রক্ষার জন্য হিমালয়ের মণিমহেশে শিবের আরাধনা করি। সেখানে আমাদের আরাধনায় তুষ্ট হয়ে এক অগ্নিশিখা প্রকট হয়। সেই অগ্নিশিখা থেকে দৈববাণী হয় ‘এই বংশোদ্ভূত নারী গণ বিবাহযোগ্যা হলে  কোনো নির্জন মন্দির বা স্থানে গিয়ে শিবের আরাধনা করবে। শিবের আশীর্বাদে  সেখানে এক মানুষ জাতির পুরুষ উপস্থিত হবে। সেই পুরুষ যদি  সব জেনে বিবাহে রাজি হয় তবে তাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ইচ্ছা ধারী নাগে রূপান্তরিত করা যাবে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই প্রথা চলে আসছে। ’   ”
মিলন বললো ‘ যতো সব গাঁজাখুরি গল্প। তুমি  বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাও।আর গিয়ে মাথার চিকিৎসা করাও। নিজেকে সাপ ভাবা বন্ধ করো। হয়তো কোন ভাবে তুমি আমার  সম্পর্কে সব কিছু জানতে পেরেছো।তার মানে এই নয় যে আমি তোমার যতো সব গাঁজাখুরি গল্প কথা বিশ্বাস করবো। বেশ তুমি যদি সাপ হও তবে সেই রূপ ধারণ করে আমায় প্রমাণ দাও।  ’
উলুপী উত্তর দিলো “ আমাদের নিয়ম আছে কোনো মানুষ যদি আমাদের সর্প রূপ ধারণ দেখে ফেলে তবে তার মৃত্যু ঘটাতে হবে। আপনি যদি আমার সাথে বিবাহবন্ধনে রাজি থাকেন তবে আমি আপনার সামনে সেই রূপ ধারণ করতে পারি। নতুবা সেই রূপ ধারণ যদি আপনি দেখেন তৎক্ষণাৎ আপনার মৃত্যু ঘটাবো।  ”
মিলন বললো ‘ তোমার মতো রূপসী র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যে কোনো যুবকের স্বপ্ন। কিন্তু আমি এখন পথের ভিখারি। আমার নিজের জীবন কিভাবে চলবে ঠিক নেই তার উপর তোমার দায়িত্ব ভার কিভাবে নেবো ? ’
উলুপী বললো “আমরা শ্রী যুক্ত জাতি। দৈব বলে বলীয়ান। আপনি আমার জাতির অন্তর্ভুক্ত হলেই আপনার দুঃখ ঘুচে যাবে। এখন বলুন আপনি রাজি ? ”
মিলন বললো ‘আমি তোমায় বিবাহ করতে ও তোমার জাতির অন্তর্ভুক্ত হতে প্রস্তুত।বলো আমায় কি করতে হবে। ’
উলুপী বললো “ মানুষের সমাজে আমি ও আমার পরিবার অন্য নামে পরিচিত।উলুপী আমার গুপ্ত নাম । আপনি আমাদের অন্তর্ভূক্ত হলে আপনার একটি গোপন নাম দেওয়া হবে। যখন আমাদের জাতির সবাই বিশেষ এক উৎসবে একত্রিত হবে , তখন আপনি তাদের মাঝে ঐ নামে পরিচিত হবেন।এখন আপনি  শিবলিঙ্গের মাথায় আপনার ডান হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করুন যে আপনি আমার  সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি এবং আমাদের এই গুপ্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত হতে ইচ্ছুক।”
মিলন শিবলিঙ্গের মাথায় ডান হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করলো।
মিলনের কথা শেষ হওয়া মাত্রই উলুপীর শরীর সরু হতে হতে এক সুদীর্ঘ সাপের শরীরে রূপান্তরিত হতে শুরু করলো। সেই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে মিলন উঠে পালাতে চেষ্টা করলো কিন্তু সেই সুবিশাল নাগিনী দরজা আগলিয়ে ফণা তুলে রয়েছে।তার কালচে শরীর থেকে প্রদীপের আলো ঠিকরে পড়ছে।তার ভয়ঙ্কর হিসহিস শব্দ মিলনের মনে ভয় সৃষ্টি করলো।সে এতক্ষণ বুঝতে পারেনি যে এই অপরূপ সৌন্দর্য যুক্ত মেয়েটি সত্যি সত্যি এক নাগিনী।সে ভেবেছিল এটা পুরোটাই একটা মজা। কিন্তু আর উপায় নেই।আজ তার মৃত্যু নিশ্চিত।ক্রমশ সেই নাগিনী দ্রুত এগিয়ে এসে মিলনের শরীর কে পেঁচিয়ে ধরতে লাগলো।মিলন গায়ের জোরে তার সঙ্গে পারলো না। মিলনের পুরো শরীরে প্যাঁচের পর প্যাঁচ দিয়ে ফণাটি ঠিক মিলনের মুখের সামনে আনলো। 
সেই ভয়ঙ্কর ফণা দেখে মিলনের মনে হচ্ছিল আজ তার রক্ষা নেই। মূহুর্তের জন্য সেই ফণা টুকু উলুপীর মুখের রূপ নিলো। উলুপী বললো “ আজ থেকে ১০৮  দিন পরে আমার পিতা আমার সঙ্গে বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে আপনার কাছে যাবে।  আর আপনি এই গোপন মন্ত্রটা মনে রাখবেন এই মন্ত্র টি তিনবার মনে মনে উচ্চারণ  করলে মানুষ থেকে নাগ রূপ অথবা নাগ থেকে মানুষ রূপ নিতে পারবেন। ”
এই বলে উলুপী পুনরায় সাপে রূপান্তরিত হলো। তারপর তীক্ষ্ণ বিষদাঁত দিয়ে মিলনের ভ্রু মধ্যে দংশন করলো। বিষের জ্বালায় মিলন ছটফট করতে লাগলো। পুরো শরীর নীল বর্ণ ধারণ করলো।উলুপী তার প্যাঁচ আলগা করে দরজার একটা ছোট ফাঁক দিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।মিলন অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সকাল হয়ে গেছে।মিলন নিজের শরীরে অদ্ভুত পরিবর্তন অনুভব করলো। শরীরে যেন হাতির মতো বল। মন্দিরের দরজা খুলে বাইরে চলে এলো। দেখলো সারারাত যে মন্দিরে ছিল সেটা একটা ভগ্নপ্রায় শিবের মন্দির। শিবের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে হাঁটতে শুরু করলো। অনেক ক্ষণ হাঁটার পর গতকাল দুপুরে যে হোটেলে খেয়ে ছিলো সেই হোটেলের কাছে চলে এলো।মিলন কে দেখেই  হোটেলের মালিক দৌড়ে এলো।এসেই উল্লাসিত স্বরে বললো ‘ দাদা কাল আপনাকে যে লটারির টিকিট টা দিয়েছিলাম , সেটিতে দ্বিতীয় পুরস্কার কুড়ি লক্ষ টাকা পড়েছে। আমার চেনা একজন বড়োলোক আছেন । আপনি চাইলে তিনি আপনার টিকিট টা এখুনি নগদ আঠারো লাখ টাকায় কিনে নেবেন। অবশ্য আপনি ব্যাঙ্ক মারফত ক্লেইম করতে পারেন । সেক্ষেত্রে টাকা পেতে পেতে তিনমাস লেগে যাবে। ’
মিলন বললো “ আপনি সেই লোকটির কাছে আমায় নিয়ে চলুন। টাকা টা আমার আজকেই দরকার।"
কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মিলন আঠারো লক্ষ টাকার মালিক হয়ে গেল।
এরপরের কিছুদিনের মধ্যেই মিলন হাইকোর্টে আপিল করলো। এবং মাত্র দুটি শুনানির পরেই হাইকোর্ট মিলনের পক্ষে রায় দিলো।
ঠিক ১০৮ দিনের মাথায় সকাল বেলায় এক মধ্য বয়সী ভদ্রলোক মিলনের সঙ্গে দেখা করতে এলো। ভদ্রলোক তার একমাত্র মেয়ে ঊর্মিলা র সাথে মিলনের বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন।মিলন ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলার সময় ভদ্রলোক হাই তুলতে লক্ষ্য করলো  ভদ্রলোকের জিহ্বা র ডগাটি দুই আধখানা।
মিলন বিবাহ প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো।
ঠিক হলো নাগপঞ্চমীর দিন বিবাহ হবে।
শুভ বিবাহ হৈ হৈ করে সম্পন্ন হলো। মধুচন্দ্রিমার রাতে সবাই চলে গেলে মিলন ফুলশয্যার ঘরে গেলো। দরজা বন্ধ করে দেখলো নতুন বৌ মাথায় ঘোমটা দিয়ে বিছানায় বসে আছে।
মিলন কাছে গিয়ে ঘোমটা ওঠাতেই  দেখলো বৌ এর মুখের বদলে এক সাপের ফণা।
মিলন একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে শুধু বললো“ তুমি তো দেখছি আগেই রূপ ধারণ করে বসে আছো। আমিও রূপ ধারণ করছি।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরে দুইটি ভয়াবহ সাপের হিস হিসানি শোনা যেতে লাগলো।(শেষ)