Crss colum

Friday, January 24, 2020

রক্ষক ১১

রক্ষক ১১


বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আদিত্য দেখতে পেল একটা সরু স্রোতস্বিনী জলধারা তিরতির করে বয়ে চলেছে। গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন "এটাই আমাদের প্রত্যাশিত ঝর্ণার কাছে নিয়ে যাবে।চলো এই জলরাশি ধরে এগিয়ে যাওয়া যাক।"
পাহাড়ি উপত্যকার এদিকে ওদিকে বাঁক খেয়ে এগিয়ে চলেছে সেই জলধারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের কানে এলো জল পড়ার শব্দ। আরো কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর আদিত্য দেখতে পেল উপর থেকে একটি ঝর্না ঝরে পড়ছে। এতক্ষণ যে জলধারার উৎস অভিমুখে তারা এগিয়ে আসছিল ঝর্ণাটিই সেই জলধারা টি সৃষ্টি করেছে। ঝর্ণাটি অনেক উঁচু থেকে ঝরে পড়ছে। কিন্তু তা সরাসরি উপর থেকে সমতলে পড়ছে না। তিনটি সিঁড়ির মতো ধাপ সৃষ্টি করে নিচে ঝরে পড়ছে। আর মধ্যেকার ধাপের জলধারার পাশেই একটি অন্ধকার গুহামুখ দেখা যাচ্ছে। গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " ওই গুহা মুখটি আমাদের গন্তব্য স্থল। ওই গুহার ভিতরে রয়েছে সত্ত্বগুণের কূপ। চলো ওখানে যাওয়া যাক।"
দুজনে ধীরে ধীরে পিছল পাথর বেয়ে গুহা মুখের কাছে পৌঁছাল। গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " আদিত্য এবার তোমাকে একাকী যেতে হবে।"
আদিত্য গুরুদেব কে প্রণাম করলে গুরুদেব তাকে "জয়ী হও" বলে আশীর্বাদ করলেন।
গুরুদেবের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে আদিত্য সেই অন্ধকার গুহায় প্রবেশ করলো। কিছুদুর যাওয়ার পর অন্ধকারে চোখ সয়ে গেলে আদিত্য বুঝতে পারল বাইরে থেকে যতটা অন্ধকার মনে হচ্ছিল ততটা অন্ধকার নয়। বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে আলো এসে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাবটি অনেকটাই কেটে গেছে।
আরো কিছুটা যাওয়ার পর আদিত্য দেখতে পেল সামনে একটি খাড়াই দেওয়াল। সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোন পথ নেই। কিন্তু এমনটি তো হওয়ার নয়। আদিত্য ভাবলো নিশ্চয়ই কোন উপায় আছে। আদিত্য ভালো করে দেওয়াল টি পর্যবেক্ষণ করলো। দেওয়ালের ঠিক মাঝখানে একটা গর্ত রয়েছে। আদিত্যর মনে হলো এটা যেন  কোনো তালার গর্ত। কোন কিছু এই গর্তে প্রবেশ করালে পথের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আদিত্য সঙ্গে এমন কিছুই ছিল না যেটা ওই গর্তে সে প্রবেশ করাতে পারে। আদিত্য মনে মনে স্থির করলো সে রজোগুণের কূপে স্নান করে যে অষ্টসিদ্ধি লাভ করেছে তার সাহায্য নেবে। অষ্টসিদ্ধির অন্যতম সিদ্ধি প্রাপ্তি। প্রাপ্তি সিদ্ধি হলে যে কোন বস্তু ইচ্ছা মাত্র লাভ করা যায়। আদিত্য রজোগুণের কুপের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে একটি লাঠি পেতে চাইলো। চাওয়ামাত্রই তার হাতে একটি  সরু ‌লাঠি চলে এলো।
আদিত্য লাঠির অগ্রভাগ ওই পাথরের দেওয়ালের গর্তে প্রবেশ করালো। আর লাঠির অগ্রভাগ পাথরের দেওয়ালে গর্তে প্রবেশ করা মাত্রই এক পাশে একটি গোলাকার পাথর আচমকা স্থান পরিবর্তন করা মাত্রই একটি নতুন গুহা মুখ উন্মোচিত হলো। আদিত্য লাঠিটা গর্ত থেকে বের করে নিল। তৎক্ষণাৎ পাথরটি আবার সরে গিয়ে গুহা মুখটি বন্ধ করে দিল।
আদিত্য বুঝতে পারল এই লাঠি টি ওই গর্তে পুনরায় প্রবেশ করালে এবং ওই অবস্থায় রেখে দিলে তবে আবার গুহা মুখটি পুনরায় উন্মোচিত হবে।
আদিত্য তাই করলো। এবারে গুহামুখ টি উন্মোচিত হওয়ার পর লাঠিটা আর সরিয়ে নিলো না।
নতুন গুহা মুখ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আদিত্য চমকে গেলো। একটি সুড়ঙ্গ আকারের পথ। কিন্তু এই পথে এতো সুন্দর রঙের খেলা আদিত্য আগে কখনো দেখেনি। লাল নীল সবুজ হলুদ ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের উজ্জ্বল পাথর সুড়ঙ্গের  ভিতরের দেওয়ালে আটকানো রয়েছে। কোথাও থেকে হালকা আলো প্রবেশ করে সেই সব রঙিন পাথরের টুকরো র উপর পড়ে চারিদিকে অজস্র রঙের রোশনাই তৈরী হয়েছে।
পথটা অনেকটা লম্বা। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আদিত্য একটা পাথরের দেওয়ালের সামনে এসে থামলো। পথ এখানেই শেষ। আচমকা একটি নারী কন্ঠ বলে উঠলো "কে তুমি ? কি তোমার উদ্দেশ্য? পরিচয় দাও। নয়তো এই স্থানে প্রবেশ করার অপরাধে তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।"
আদিত্য উত্তর দিলো ‘ আমি গুরুদেব তমোঘ্ন র শিষ্য আদিত্য।আমি এসেছি সত্ত্ব গুণের কূপের সন্ধানে। আপনি কে ?’
নারী কন্ঠ বললো ‘ আমি ব্রাহ্মী শক্তি। এই স্থানের রক্ষাকারী শক্তি। তুমি ফিরে যাও।  ’
আদিত্য বললো "ফিরে যেতে আমি আসিনি।হয় নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করবো অথবা মৃত্যু বরণ করবো।"
পুনরায় নারী কন্ঠ বললো ‘ পরবর্তী অংশে প্রবেশ করলে তোমাকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। যদি তুমি নিজের যোগ্যতা র প্রমাণ না দিতে পারো তবে অনধিকার প্রবেশ করার জন্য মৃত্যু নিশ্চিত। এখনো বলছি যাও ফিরে যাও।’
আদিত্য বললো “না কিছুতেই না। ফিরে আমি যাবো না।”
নারী কন্ঠ কয়েক মূহুর্ত নিরব থেকে ভয়াবহ শিহরণ কারী হাসি হেসে বললো ‘ বেশ তবে তোমার যোগ্যতা প্রমাণ করে পরের অংশে প্রবেশ করার রাস্তা খুঁজে নাও। মনে রাখবে এর পরবর্তী সকল ক্ষেত্রেই দৈবী মায়ার রাজত্ব। দৈবী মায়ার প্রভাবে তুমি বাস্তব ও অবাস্তব এর মধ্যে ফারাক করতে পারবে না। প্রতিটি পদক্ষেপ তোমাকে যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে বুঝে ফেলতে হবে।নচেত মৃত্যু নিশ্চিত।’
 
কণ্ঠটি নিরব হয়ে গেল।

আদিত্য ভালো করে চেয়ে দেখল কিন্তু এমন কিছুই দেখতে পেল না যার সাহায্যে পাথরের দেয়াল টি উন্মুক্ত হয়ে পথ করে দেবে। আদিত্য কোন উপায় না পেয়ে ওই স্থানেই ধ্যানমগ্ন হল।
বহুক্ষণ বাদে নিজের অন্তরের ভেতর গুরুদেব তমোঘ্ন র কণ্ঠস্বর শুনতে পেল।
গুরুদেব কাকে বলছেন "  এই জগতে সবকিছুই মায়া। এই দুনিয়ায় মায়ার  রাজত্ব। যাকে তুমি নিরেট পাথরের দেওয়াল ভাবছো সেটা কি আদৌ নিরেট?
না ‌
সবকিছুই অতি সূক্ষ্ম পরমাণু দিয়ে গঠিত। আর পরমাণুর বৃহৎ অংশ ফাঁকা বা শূন্য।

রজোগুণের কুপে অবগাহন করে যে অষ্টসিদ্ধি লাভ করেছ তার প্রথম সিদ্ধি অনিমা। এই অনিমা সিদ্ধি সাহায্যে নিজের শরীর কে  অনু পরমানুর ন্যায় আকারে রূপান্তরিত করতে পারবে। দেখবে পথ খুঁজে পাবে।"

আদিত্য র ধ্যান ভঙ্গ হলো। আদিত্য একেবারে পাথরের দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। তারপর রজোগুণের কুপের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে নিজের শরীরকে সূক্ষ্ম রূপে রূপান্তরিত করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলো।
ধীরে ধীরে আদিত্য ছোট হতে লাগলো। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ,আরো ক্ষুদ্র, আরো ক্ষুদ্র হতে হতে একেবারে অনুর সমান হয়ে গেল। যে পাথরের দেয়াল টিকে সে নিরেট পারাপারের অগম্য ভাবছিল এখন দেখলে সেটি আদৌ নিরেট নয় । তাতে অনেক ফাটল চোখে পড়ছে। আদিত্য নিজেকে আরো ক্ষুদ্র করল। এবার সে একটি পরমাণুর চেয়েও ছোট হয়ে গেছে। ফাটল গুলি আরো বড় হয়ে তার শরীরকে প্রবেশযোগ্য করে তুলেছে। আদিত্য একটি ফাটলের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চললো। ছোট হওয়ার কারণে তার গতি অতি মন্থর হয়ে গেছে।
কতটা সময় ধরে আদিত্য এগিয়ে চলেছে তা সে নিজেও জানেনা। সেই সব ঈষৎ অন্ধকার আঁকাবাঁকা পথ গুলি দিয়ে  যেতে যেতে এক সময় সাদা আলোর বন্যা য়  তার চোখ ঝলসে গেল। আদিত্য বুঝতে পারল সে পাথরের দেওয়াল অতিক্রম করেছে।
সে পুনরায় তার ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের আকার প্রাপ্ত হলো।
আদিত্য দেখলো সে একটি সাদা পটভূমির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
তার আগে পিছে উপর নিচে সব জায়গায় শুধুই সাদা আর  সাদা। এমনকি সে কিসের উপর দাঁড়িয়ে আছে সেটাও বুঝতে পারছে না। সে এটাও বুঝতে পারছিলো না সে সমতল না বক্র না ডিম্বাকার না গোলাকার কোন স্থানে আছে। যেদিকেই তাকাচ্ছেন দুধসাদা বর্ণ ছাড়া কোন কিছুই চোখে পড়ছে না।

একটি পুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো ‘বাস্তবতা হীন এই মায়াবী জগতে তোমাকে স্বাগত। ’

আদিত্য বলল ‘ এ আমি কোথায় আছি? ’

কণ্ঠস্বর টি উত্তর দিল “তুমি জাগতিক সৃষ্টির প্রথম ধাপ পুরুষ বা স্পেসের উপর আছো। এই জগত আসলে মায়া মাত্র। যাকে তুমি ভ্রম বশত বাস্তব ভেবে চলেছো তা আসলে কাল্পনিক। এমনকি তোমার শরীর পর্যন্ত কাল্পনিক। এই জগতে শুধুই চৈতন্য বর্তমান। চৈতন্য বা কনশাসনেস একক সত্বা মাত্র। সেই একক চৈতন্য ইচ্ছা করেন তিনি বহুতে বিভক্ত হবেন। এই ইচ্ছা ই জগত সৃষ্টির কারণ স্বরূপ। এই রূপ ইচ্ছার উদয় হওয়া মাত্রই তিনি নিজেকে তিন ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ পুরুষ বা স্পেস। দ্বিতীয় ভাগ প্রকৃতি বা এনার্জি। তৃতীয় ভাগ সময় বা স্পেসটাইম। পুরুষ বা স্পেস নিষ্ক্রিয় আধার স্বরূপ। সেই বিশ্ব চৈতন্যের ইচ্ছায় আধার স্বরূপ পুরুষের উপর প্রকৃতি এবং সময় মিলিতভাবে এই কাল্পনিক জগৎ সৃষ্টি করে। তারপর সেই সৃষ্টির উপর মহাবিশ্ব চৈতন্য নিজের একটি অংশকে বহু ভাগে বিভক্ত করে প্রাণের বীজ রোপন করেন। তখন থেকেই সময়ের  একমূখী যাত্রা পথের শুরু। প্রকৃত অর্থে এই জগত সংকেত বা কোডের দ্বারা গঠিত। এই জগতের মূল উৎস সংকেত বা সোর্স কোড গুলি বীজ আকারে (link রূপে)  প্রতিটি গ্যালাক্সি র তিনটি ক্ষেত্রে লুকিয়ে রাখা রয়েছে। কোন যোগ্য কনশাসনেস বা বিভক্তিকৃত চৈতন্য ওইসব লুকিয়ে রাখা সোর্স কোড আত্মস্থ করে মূল বিশ্ব চৈতন্যের সঙ্গে নিজেকে লিংক আপ করতে বা জুড়তে পারে। সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি বা বিভক্তি কৃত চৈতন্য নিজেকে মূল বিশ্ব চৈতন্যের এডমিন পাওয়ার রূপে এই মায়া জগতে র পক্ষে সকল ক্ষতিকর সংকেত গুলি ধ্বংস করে জগত কে টিকিয়ে রাখার সহায়ক হয়। তুমি রজোগুণের কুপের বা প্রথম সোর্স কোডের সঙ্গে নিজেকে লিংক আপ করে  নিজের যোগ্যতা র প্রমাণ দিয়েছো। বর্তমানে তুমি দ্বিতীয় সোর্স কোডের অর্থাৎ সত্ত্বগুণের কুপের খুব নিকটবর্তী রয়েছো। স্পেস বা স্থানের উপর কর্তৃত্ব পেতে হলে তোমাকে তাকে জয় করতে হবে। ব্যর্থ হলে জগতের নিরাপত্তার স্বার্থে তোমাকে অবলুপ্ত করে দেওয়া হবে।  ”
আদিত্য বলল ‘আমি প্রস্তুত। বলুন আমায় কি করতে হবে । ’
কণ্ঠস্বর  টি বললো। ‘‘’ওই যে   সামান্য দূরে তোমার সামনে একটি ফুলের মালা ভেসে আছে সেটি তোমাকে সংগ্রহ করে গলায় ধারণ করতে হবে।  ’
আদিত্য দেখলো সামনে সামান্য দূরে একটা সুন্দর সাদা ফুলের মালা ভেসে আছে। খুব সহজেই সেটা সংগ্রহ করা যায়। এই অতি সামান্য পরীক্ষায় সে একটু অবাক হয়ে গেল। সে দ্রুত মালার দিকে এগিয়ে চলল। অনেকটা হেঁটে গেলেও মালাটি একটুও কাছে এলো না। প্রথমে যতটা দূরত্বে ছিল ঠিক ততটা দূরত্বেই রয়েছে। আদিত্য আরো জোরে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু তার আর মালার মধ্যে দূরত্ব এতোটুকু কমলো না। সে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না কিভাবে এই দূরত্ব কমাবে। নিরুপায় হয়ে আদিত্য মালার দিকে দৌড়োতে শুরু করলো। কিন্তু কি আশ্চর্য। উভয়ের দূরত্ব যেমন ছিল তেমনি রয়েছে।
নিরুপায় হয়ে আদিত্য এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়ালো। আদিত্য চোখ বুজে গুরুদেবের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে মনে মনে তার সাহায্য চাইলো। কিছুক্ষণ পরে তার মনে হলো যেন গুরুদেব তমোঘ্ন বলছেন“ এই জগতে সবকিছুই কাল্পনিক । স্পেস এনার্জি ও টাইম এই তিনটি জগতের মৌলিক সত্য। বাকি সবকিছুই এই তিনটির সংমিশ্রণ মাত্র। এনার্জি ও টাইমের উপর ক্রিয়া-কলাপ এর সাহায্যে কতৃত্ব পাওয়া সম্ভব হলেও স্পেস কে কখনোই জয় করা যায় না। কারণ স্পেস বা পুরুষ নিষ্ক্রিয়। বাহ্যিক কোন গুণাবলী স্পেসের উপর কোন প্রভাব তৈরি করেনা। আসলে স্পেস কখনো সীমাহীন বা অনন্ত আবার কখনো সীমা যুক্ত। স্পেস সীমাহীন হবে নাকি সীমা যুক্ত হবে তা আমাদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। ”
গুরুদেবের কথা আর শোনা গেল না।
আদিত্য ভাবতে লাগলো গুরুদেব তাকে কি ইঙ্গিত করেছেন। বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর তার মনে হল সে বুঝতে পেরেছে গুরুদেব তাকে কি বলতে চেয়েছে। আরেকটা বুঝতে পারল বাহ্যিক কোন ক্রিয়া কলাপ  দিয়ে যেমন হাঁটা দৌড়ানো ইত্যাদি দিয়ে সে কখনো তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। কারণ স্পেস অনন্ত সীমাহীন। বরং তার দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তাহলে ই সে ওই মালা টির কাছে পৌঁছাতে পারবে।
আদিত্য সৃষ্টির আদি বীজ ওঙ্কার ধ্বনি দিয়ে চোখ বুজে মালাটির দিকে তিনটি পদক্ষেপ এগিয়ে গেল। প্রতি পদক্ষেপে সে মনে করলো যে স্পেস এখানে সীমা যুক্ত। তিনটি পদক্ষেপের পর চোখ খুলে দেখতে পেল তার হাতের নাগালের মধ্যেই মালাটি অবস্থান করছে। মালাটি  গলায় পরে নেওয়ামাত্রই তার উপর স্বচ্ছ শুভ্র জলের ধারা বর্ষিত হতে লাগলো।
সেই কণ্ঠস্বর টি বলে উঠলো ‘ ধন্য। তুমি এখন হতে পুরুষ বা স্পেসের উপর কর্তৃত্ব পেলে। যে স্বচ্ছ অমৃতময় জলধারা দিয়ে স্নান করলে সেটি সত্ত্বগুণ সম্পন্ন সুরধনী  বা গঙ্গা। যাও এবার নিজের জগতে ফিরে যাও। আমি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা। আমার আশীর্বাদে তুমি একদিন জগতের রক্ষক রূপে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করবে। ’

ব্রহ্মার কথা শেষহওয়া মাত্রই সমস্ত সাদা রঙের ভেতর ছোট ছোট কালো বিন্দুর উৎপত্তি হলো। ক্রমশ সেই কালো বিন্দুগুলি বড় হতে শুরু করল । তারপর বড় হতে হতে কালো বিন্দুগুলি একে অপরের সঙ্গে জুড়ে চারিদিক কালো করে তুলল। আদিত্য এই অদ্ভুত ব্যাপার দেখে মুহূর্তের জন্য চোখ বুজে ফেললো। চোখ খুলে দেখতে পেল সে সেই ঝর্ণার সামনে প্রথম  গুহাটির  কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার সামনে গুরুদেব তমোঘ্ন একটি পাথরের উপর বসে ধ্যানমগ্ন রয়েছে।
আদিত্য গুরুদেবের কাছে গিয়ে তার পায়ে নিজের মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলে গুরুদেব তমোঘ্ন চোখ মেলে তাকালেন। তারপর আদিত্যকে আশীর্বাদ করে বললেন "জানি তুমি সফল হয়েছো। কিন্তু কঠিনতম পরীক্ষাগুলি বাকি আছে। আশা করি সেই গুলিতেও সাফল্য লাভ করে এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে সামর্থ্য হবে। হাতে সময় খুব অল্প রয়েছে।"
(চলবে)