Crss colum

Monday, October 29, 2018

অলৌকিক তরবারি পর্ব ৩

(শক্তিক্ষেত্রে প্রবেশ)

জঙ্গল কাল শেষ হয়ে গেছে।আজ আদিত্য যে জায়গা দিয়ে এগিয়ে চলেছে সেখানে শুধুই পাহাড়ের সারি। বিশাল বিশাল তুষার ধবল শৃঙ্গ গুলো যেন এই অঞ্চলের প্রহরী। রক্তচক্ষু মেলে পাহারা দিচ্ছে অবাঞ্ছিত অতিথি দের আটকে রাখার জন্য।
পথ বলে কিছু নেই। শুধু মন্ত্র পূত কাপড়ের নির্দেশিত দিকে এগিয়ে চলা।খাদ্য যা ছিল তা কাল শেষ হয়ে গেছে। এখন ঝর্ণা র জল ছাড়া খাওয়ার জন্য কিছু ই নেই।
হঠাৎ আদিত্য র মনে হলো বহু বহু দূরে কি যেন একটা ঝিলিক দিয়ে উঠলো। এতো দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না।ঐ দিকেই আদিত্য চলেছে। বেশ অনেকটা সময় যাওয়ার পর মনে হলো ওটা একটা মন্দিরের স্বর্ণ কলস ।পড়ন্ত বিকালের রৌদ্র কলসের গায়ে এসে পড়ছে বলে চকচক করছে। আদিত্য দ্রুত ঘোড়া ছোটালো।যে করেই হোক সন্ধ্যা র আগে ঐ মন্দিরে পৌঁছতে হবে।
সূর্যাস্তের ঠিক আগে আদিত্য মন্দিরের দোর গোড়ায় পৌঁছে গেলো।
বিশাল বিরাটকায় মন্দির। সম্পূর্ণ কালো পাথরের তৈরী। মাথায় স্বর্ণ কলস। কিন্তু কেউ কোথাও নেই।এত নির্জনতা আর এই বিশাল মন্দির । আদিত্য বিস্মিত হলো। এই নির্জনে এই বিরাট স্থাপত্য তৈরী করলো কে ? আর কেন ?
যাইহোক আদিত্য ঠিক করলো রাতটুকু এই মন্দিরে কাটিয়ে দেবে।  সামনে কিছুটা খোলা জায়গায় কচি কচি ঘাস জন্মেছে। আদিত্য ঘোড়াটাকে ঐ ঘাস জমিতে ছেড়ে দিল ঘোড়াটার খিদে পেয়েছে। শিক্ষিত ঘোড়া। প্রভুকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। মনের আনন্দে ঘোড়াটি ঘাস খেতে লাগলো।
আদিত্য মন্দিরে প্রবেশ করলো। পরপর তিনটি বিশালাকৃতির ঘর ফেলে একবারে শেষ ঘরটিতে প্রবেশ করলো। সামনে উচুঁ বেদীর উপর শিব লিঙ্গ ।
শিব লিঙ্গের সামনে একটি তেলের  প্রদীপ জ্বলছে।আর শিব লিঙ্গের সামনে একটি পাত্রে কিছু ফল রাখা আছে।
আদিত্য একটু এগোতেই একটা গুরু গম্ভীর স্বর ভেসে এলো ,‘ শিব লিঙ্গের সামনে রাখা প্রসাদ গ্রহণ করো।আর রাত্রে এখানেই বিশ্রাম করো। এই মন্দির শক্তি ক্ষেত্রের প্রবেশ দ্বার।কাল তোমায় শক্তি ক্ষেত্রে প্রবেশের উপায় বাতলে দেবো।’
আদিত্য বুঝতে পারলো না কে তাকে নির্দেশ দিলো। যাইহোক আপাতত নির্দেশ পালন করে একটা ঘুম দেওয়া যাক। এই বলে আদিত্য ফলের পাত্র টি নিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লো।
পরের দিন খুব ভোরে আদিত্য র ঘুম ভাঙ্গলো।সবে একটু আলোর আভাস দেখা দিয়েছে। আদিত্য মন্দির থেকে বেরিয়ে তার ঘোড়ার কাছে গেল। শিক্ষিত ঘোড়া। প্রভুকে দেখে চিঁহি করে আওয়াজ করল। আদিত্য ঘোড়ার পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে বললো ‘ভালোই আছিস মনে হচ্ছে। আমি না ফেরা পর্যন্ত এই ক্ষুদ্র চারণক্ষেত্রেই অবস্থান কর।  ’
মন্দিরের পাশে ই একটা জলের কুন্ড। আদিত্য সেখানে মুখ  হাত ধুয়ে
আবার যখন আদিত্য মন্দিরে প্রবেশ করলো তখন  দেখলো মন্দির টি আক‌তিতে বিশাল ও নানাবিধ কারুকার্য সমন্বিত। এমন নির্জন পরিবেশে এমন বিশালাকৃতির মন্দির বড়ই বিস্ময়কর।  আদিত্য তন্ময় হয়ে মন্দিরের শোভা দেখছিলো। হঠাৎ কানে গেল কেউ যেন  তাকে উদ্দেশ্য করে ডাকছে। সেই গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর বলছে ‘ এসো বৎস ,এসো।’
আওয়াজ টা ভেসে আসছে শিবলিঙ্গের দিক থেকে।  মন্দিরের শেষ প্রান্তে এক বিশাল বেদীর উপর এক বিরাটাকৃতি শিবলিঙ্গ। কালো কষ্টিপাথরের তৈরী।তার পিছন দিক থেকে কন্ঠস্বর টি ভেসে আসছে।
আদিত্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো দেখা যাক কে তাকে আহ্বান করছে। নিচের থেকে শিবলিঙ্গের বেদীর  উপর ওঠানামা করার জন্য সোপান রয়েছে। আদিত্য সোপান বেয়ে শিবলিঙ্গের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না যে কে তাকে ডাকছে। সেই কন্ঠস্বর তখনো বলছে ‘ এদিকে এসো বৎস। এদিকে এসো ।’আদিত্য  শিবলিঙ্গের সামনে দিকে কিছুই না দেখতে পেয়ে লিঙ্গের পিছনের দিকে গেলো। শিবলিঙ্গের পিছনের দিকে রয়েছে এক গুপ্ত কক্ষ।যার সিঁড়ি ধাপে ধাপে নেমে গেছে গুপ্ত কক্ষের ভেতরে। ভেতর নিকষ কালো অন্ধকার। সেই কালো অন্ধকার থেকে আওয়াজ আসছে ‘এদিকে এসো বৎস,এদিকে এসো।’
আদিত্য ভাবতে লাগলো এই অন্ধকার কক্ষের ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে কিনা। এদিকে ওদিকে চেয়ে দেখতে চোখে পড়লো একটা মশাল গুপ্ত কক্ষের সিঁড়ি র পাশের দেয়ালে আটকানো রয়েছে।আর তার পাশেই এক কুলুঙ্গি তে রয়েছে আগুন জ্বালিয়ে নেওয়ার চকমকি পাথর  । আদিত্য মশালটা পেড়ে চকমকি পাথর ঠুকে সেটা জ্বালিয়ে নিলো। এবার চললো গুপ্ত কক্ষের ভিতর।
অনেকটা সিঁড়ি বেয়ে নামার পর একটা বিশাল কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করলো।
কক্ষের চারিদিকে মশালের আলোয় আলোকিত হতে আদিত্য চোখে যেটা পড়লো তা দেখে তার বুক হিম হয়ে গেলো। সেই কক্ষের একদিকে রয়েছে এক বিরাট ভীষণাকৃতির অজগর সাপ।
অজগর টি আদিত্য কে দেখতে পেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো। আদিত্য ইচ্ছা করলেই পিছিয়ে যেতে পারে। কিন্তু বিপদে পিছিয়ে যাওয়া তার স্বভাবে নেই। কক্ষের একপাশে  পাথরের দেওয়ালে একটা গর্ত দেখে তার মধ্যে মশাল টি গুঁজে দিলো।এর পর খোলা তরবারি উচিঁয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ভয়ংকর অজগরের অপেক্ষায়।
বিশাল অজগর ও মানুষের যুদ্ধ চললো বেশ কিছুক্ষণ ধরে।
অজগরটি চেষ্টা করছিলো আদিত্য কে পেঁচিয়ে ধরার। কিন্তু আদিত্য দ্রুত গতিতে পাশ কাটিয়ে বারেবারে অজগর টিকে ফাঁকি দিতে লাগলো। অবশেষে একবার মূহুর্তের জন্য সুযোগ পেয়ে আদিত্য তলোয়ারের এক কোপে অজগর টিকে দুই আধখানা করে দিলো।
কিন্তু একি কাণ্ড। অজগরের মৃতদেহ টি ধীরে ধীরে পুরো অদৃশ্য হয়ে গেলো।আর তার বদলে সেখানে দৃশ্যমান হলো এক দেবকান্তি পুরুষ।
আদিত্য সব ব্যাপার স্যাপার দেখে হতচকিত হয়ে গেল।
সেই দেবকান্তি পুরুষ বললো ,‘ আমি তোমার জন্য ই অপেক্ষা করছি এতকাল।’
আদিত্য বললো ‘আপনি কে ?’
সেই পুরুষটি উত্তর দিলো ‘ আমি শক্তিক্ষেত্রের প্রবেশ দ্বারের রক্ষক।  ঐ অজগরের শরীর হলো   আমার মায়াবী রূপ। আমাকে যে হারাতে পারে শুধুমাত্র তাকেই আমি শক্তিক্ষেত্রে প্রবেশের অধিকার দিই।শক্তিক্ষেত্র হলো এক অতি মায়াবী শক্তিশালী উন্নত জাতির নগরী। সেখানে যারা বাস করে তারা অতীব শক্তিধর।এসো তোমায় আমি সেই আশ্চর্য গোপন নগরীতে প্রবেশের পথ দেখিয়ে দিই। কিন্তু মনে রেখো যে পথ দিয়ে প্রবেশ করছো সেই পথে কিন্তু ফিরে আসতে পারবে না। ফেরার পথ তোমায় নিজেকে খুঁজে নিতে হবে।   ’
এই সব বলতে বলতে সেই আশ্চর্য পুরুষ টি আদিত্য কে নিয়ে গেলো কক্ষের এক প্রান্তে । সেখানে এক বিশাল প্রস্তর খন্ডের তৈরী দরজা। দরজাটি বন্ধ। পুরুষটি বললো ‘ শত হস্তির বল প্রয়োগ করলেও এই দরজা খুলবে না। এটা খোলে এক বিশেষ মন্ত্রের সাহায্যে।’
এই বলে তিনি বিড়বিড় করে একটি মন্ত্র বলে দরজার ওপর তিনটি টোকা মারলো।সাথে সাথেই বিশাল দরজা ঘরঘর আওয়াজ করে খুলে গেল। আদিত্য র নজরে এলো এক বিরাট আঁকা বাঁকা সুড়ঙ্গ। পুরুষ টি আদিত্য কে বললো ,‘এই পথ ধরে চলে যাও ।এর অপর প্রান্তে আছে তোমার আকাঙ্খিত নগরী শক্তিক্ষেত্র।’
আদিত্য বললো ‘ কিন্তু আপনি বলছেন যে আমি এই পথে ফিরবো না। সেক্ষেত্রে আমার বাহনের কি হবে?’
পুরুষ টি মৃদু হেসে উত্তর দিলো‘ চিন্তা করো না । তোমার বাহন আমার তত্ত্বাবধানে নিরাপদেই থাকবে। তুমি যখন শক্তি ক্ষেত্র ত্যাগ করবে তবে আমি ঠিকই জানতে পারবো। আমি তখন তোমার বাহন যোগবলে সেখানে পৌঁছে দেবো। তোমার মতো বীরশ্রেষ্ঠ র জন্য এটুকু তো আমার করা উচিত। এখন তুমি যাও।’
আদিত্য সেই অপরূপ দেবকান্তি পুরুষ কে প্রণাম করে সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করলো।
কিছুটা এগোনোর পর  ঘড়ঘড় শব্দ করে সুড়ঙ্গের মুখটা বন্ধ হয়ে গেল।এখন এই সুড়ঙ্গে আদিত্য একা। সুড়ঙ্গ টা কিন্তু অন্ধকার নয়। হালকা একটা আলো রয়েছে। তবে আদিত্য বুঝতে পারলো না কোথা হতে এই আলো আসছে। আদিত্য এগিয়ে চললো। আঁকা বাঁকা সুড়ঙ্গ পথে এগোতে এগোতে এক জায়গায় গিয়ে দেখলো সুড়ঙ্গ শেষ। সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে এক রাশ আলো এসে পড়েছে।
 কোথা হতে এতো আলো এসে পড়ছে  বোঝা যাচ্ছে না। শুধু একগাদা আলো এসে আলোর কুয়াশা সৃষ্টি করেছে। আদিত্য র মস্তিষ্কের মধ্যে কেউ যেন বলে দিলো যাও ‘ঐ কুয়াশার মধ্যে গিয়ে দাঁড়াও।’
আদিত্য ধীরে ধীরে অতি সন্তর্পনে ঐ আলোর তৈরী কুয়াশার মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালো।
প্রথমে কিছুই বুঝতে পারলো না।তার পর তার দৃষ্টি গিয়ে পড়লো হাতের মায়া আংটির ওপর। আংটিটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আংটি হতে এক নীলাভ রশ্মি বের হয়ে আদিত্য র চারপাশে ঘুরতে লাগলো।অতি দ্রুত নীলাভ রশ্মির ঘুর্ণন আদিত্য র চারিদিকে এক বলয়ের সৃষ্টি করলো।বলয় টি আদিত্য সমেত  উর্ধ্ব দিকে উঠতে লাগলো। আদিত্য একটা কম্পন অনুভব করলো।
কম্পন টি বাড়তে লাগলো। আদিত্য আলোর ঝলকানি আর অস্বাভাবিক কম্পন সহ্য করতে পারলো না ।
চোখ বুজে ফেললো।(ক্রমশ)
(পরের পর্বে শক্তিক্ষেত্র নগরীতে)

Tuesday, October 16, 2018

অলৌকিক তরবারি পর্ব - ২

দ্বিতীয় পর্ব (বিজয় গড় )

পথ আর ফুরায় না। আদিত্য এখন একা। পুরাতন পরিচিত বন্ধু গুলোর মুখ মনের মধ্যে ভেসে ওঠে। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে পিতার মুখ। এর আগে কখনো পিতাকে ছেড়ে এতদূরে আসেনি। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে পিতাই ছিল আদিত্য র একমাত্র আশ্রয়।
যত সময় যাচ্ছে জঙ্গল ততো ঘন হয়ে আসছে। এই জঙ্গল তাকে সূর্য ডোবার আগেই পেরিয়ে যেতে হবে। খিদে পেয়েছে , তৃষ্ণা ও পেয়েছে। সামনে কোন জলাশয় আছে কিনা আদিত্য জানে না। আদিত্য ভাবলো আরো কিছুক্ষন চলা যাক। সামনে কোন জলাশয় পেলে তবেই থামবে।
বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আদিত্য র মনে হলো দুরে যেন অনেকটা জঙ্গল ফাঁকা লাগছে। আদিত্য র মনে হলো সামনে নিশ্চয়ই কোন জলাশয় আছে তাই ঐখানে জঙ্গল ফাঁকা।
আরো কিছুক্ষন হাঁটার পর দেখলো বিশাল একটা জলাশয়। অন‍্য পাড় ভালো করে দেখা পর্যন্ত যাচ্ছে না। তবে দুরে মনে হয় একটা মন্দিরের চূড়া দেখা যাচ্ছে। মন্দির দেখা যাচ্ছে মানে নিশ্চিত মানুষ আছে।যাক এখন আগে পেটের আগুন নিভানো যাক।
আদিত্য তার ঝোলা থেকে খাবার বের করলো । চিঁড়ে ও কিছুটা গুড় আছে। আদিত্য সেটাই খুব তৃপ্তি করে খেলো। তারপর জলাশয়ে নেমে পেট ভরে জল খেলো। এবার ভাবলো কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়া যাক। তারপর মন্দির লক্ষ্য করে এগিয়ে যাওয়া যাবে।  ভূমি র উপর অস্ত্রশস্ত্র গুলো রেখে আদিত্য জলাশয়ে র পাশে ই ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল।
খানিকটা তন্দ্রা মতো এসেছে এমন সময় একটা ক্ষীণ নারী কন্ঠের আওয়াজ ভেসে এলো , "বাঁচাও ,বাঁচাও"।
আদিত্য তড়াক করে লাফিয়ে উঠে পড়লো। অস্ত্র শস্ত্র গুলো মাটি থেকে তুলে নিলো।
একবার পরিস্থিতি বুঝে নিলো।আওয়াজ ভেসে আসছে মন্দিরে র দিক থেকে। আদিত্য দ্রুত এগিয়ে চললো মন্দিরের দিকে।
মন্দিরের কাছে গিয়ে দূর থেকেই পরিস্থিতি বিচার করে নিলো। দুইটি নারী মন্দিরের চাতালে দাঁড়িয়ে   সাহায‍্যের জন্য চিৎকার করছে। তাদের আড়াল করে দাঁড়িয়ে চার জন সৈন্য  লড়াই করছে দস‍্যু দের সাথে। দস্যু রা সংখ‍্যায় প্রায় দশজন।
আদিত্য কর্তব্য স্থির করে নিলো। ধনুকে তীর যোজনা করে লক্ষ্য স্থির করে চালিয়ে দিলো। কেউ কিছুই বোঝার আগেই চার জন দস‍্যু আঘাত পেয়ে মাটি নিলো।
আচমকা পিছন থেকে আক্রান্ত হয়ে দস‍্যুরা হকচকিয়ে গেল। দুজন দস‍্যু আদিত্য কে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে আদিত্য কে একযোগে আক্রমণ করলো।
এবার শুরু হলো ভয়ঙ্কর তরবারি যুদ্ধ। একদিকে চারজন সৈন্য লড়ছে চার দস‍্যুর সাথে ,অন্য  প্রান্তে একা আদিত্য লড়ছে দুই জন দস‍্যুর সাথে।
ধন‍্য গুরু রঘুবরের শিক্ষা। কিছুক্ষণ পরেই দস‍্যুরা টের পেল যার সাথে তারা লড়ছে তার অসি চালনা অসাধারণ।অতি দ্রুত অসি চালনা কয়েক মুহূর্ত পরেই দুজন দস‍্যুর হাতের অসি ছিটকে ফেলে দিলো। দুজন দস‍্যুই আহত হয়ে ছুট লাগালো গভীর বনের দিকে। বাকি লড়াইয়ে রত দস‍্যুরা যখন দেখলো তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে তারাও তখন লড়াই ফেলে বনের মধ্যে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
যে চারজন সৈন্য লড়াই করছিল তাদের মধ্যে থেকে একজন বয়স্ক সৈন্য এগিয়ে এলো।
আদিত্য র কাছে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে বললো ,‘ ধন্যবাদ যুবক। আপনি যদি ঠিক সময়ে না এসে পড়তেন তবে বিপদ হতো।।আমি ‘বিজয়গড়ের’ সেনাধ‍্যক্ষ শূরসেন। আপনি আপনার পরিচয় দিন।’
আদিত্য বললো ‘আমি ‘সুন্দরগড়ের ’একজন নাগরিক। বিশেষ উদ্দেশ‍্য নিয়ে হিমালয় পাদদেশে চলেছি।’
শূরসেন বললো ,‘ এই জঙ্গল সামান্য কিছু দুরেই শেষ হয়েছে। তারপর ‘বিজয়গড়’ রাজ‍্য। এই স্থানে এক জাগ্রত শিব  মন্দির রয়েছে।আমাদের রাজকন‍্যা রত্নমালা এই শিব মন্দিরে পুজো দিতে এসেছেন। আমি অল্প কয়েকটি সৈন্য নিয়ে ওনার দেহরক্ষী হিসাবে এসেছি। এই স্থানে দস‍্যুর উপদ্রব আছে আগেই  রাজ দরবারে খবর এসেছিলো।আজ তা প্রত‍্যক্ষ করলাম। ভাগ্য ভালো তুমি এসেছিলে । না হলে হয়তো এতো অল্প সৈন্য নিয়ে ওদের সঙ্গে পেরে উঠতাম না। তুমি আমার সাথে রাজধানীতে চলো। আমাদের সাথে তিনটি রথ আছে একটি তে রাজকন্যা ও তার সঙ্গীনি অপর দুইটিতে আমরা বাকি সবাই উঠবো। ’
আদিত্য এতোক্ষণে মন্দিরের চাতালের দিকে তাকালো।দেখলো এক অপরূপ সৌন্দর্য তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। এই তবে রাজকন্যা রত্নমালা।
আদিত্য কিছুক্ষন রাজকন্যা র দিকে তাকিয়ে তারপর চোখ নামিয়ে নিল। তারপর শূরসেন এর দিকে তাকিয়ে বলল , আপনার প্রস্তাবে আমি সম্মত।
আদিত্য স্থান পেলো শূরসেন এর রথে।সবার আগে রইলো রাজকন্যা র রথ , তারপর শূরসেন এর রথ , তারপর সৈন্য দের রথ।
কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দৃশ্য পট পাল্টে যেতে লাগলো। আস্তে আস্তে জঙ্গল কমে আসছে। দুই একটা ঘরবাড়ি চোখে পড়ছে। আদিত্যর নজরে এলো রাজকন্যা তার রথে আগে আগে যেতে যেতেই বারবার পিছন ফিরে তার দিকে তাকাচ্ছে। আদিত্যর অস্বস্তি হচ্ছিল। অস্বস্তি কাটাতে সে শূরসেন এর গল্প জুড়ে দিলো।
শূরসেন কে আদিত্য প্রশ্ন করলো তিনি কখনো ‘সুন্দরগড়’ গিয়েছিল কিনা?
শূরসেন লোকটি খুব মিশুকে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই এমন মনে হচ্ছে যেন তাদের পরিচয় কতো দিনের।
শূরসেন বললো ‘  বহুদিন আগে একবার তিনি রাজদূত হয়ে সুন্দর গড়ে গিয়েছিলেন। তিনি যখন গিয়েছিলেন তখন রাজা ছিলেন মহারাজ প্রতাপাদিত্য। সুন্দর গড় ,মালবগড় ,ও বিজয় গড়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট রাজ্য হলো বিজয় গড়। তাই আমাদের মহারাজ চান যেন তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিবাদ না হয়।তাই তিনি শান্তি পূর্ণ সহাবস্থানের জন্য আমায়  বিজয় গড়ে দূত হিসেবে নিয়োগ করে ছিলেন। সুন্দর গড়ে আমি প্রায় এক বৎসর ছিলাম ।  মহারাজ প্রতাপাদিত্য ছিলেন উদার মনোভাবের । তিনি ও রানীমা  আমায় নিজের ভাইয়ের মতোই দেখতেন। মহারাজ যেখানেই যেতেন আমায়  সঙ্গে নিয়ে যেতেন। নতুন কিছু পদ রন্ধন হলেই রানীমা আমায় নিমন্ত্রণ করতেন।সত্যি বলতে কি মহারাজ আমায় নিজের ভাইয়ের চোখে দেখতেন।
কিন্তু কিছুদিনের জন্য আমি বিজয় গড়ে ফিরে এলাম পারিবারিক কারণে। এখানে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই খবর এলো মালব গড়ের রাজা প্রবাল নারায়ণ সুন্দর গড় আক্রমণ করেছিল। মহারাজ তাকে বাধা দিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।আর রানীমা ও রাজপুত্রের কোন খবর নেই।আর সুন্দর গড় এর নতুন রাজা হয়েছেন সেনাপতি দুর্জন সিং। এই   দুর্জন   সিং লোকটাকে মহারাজ বিশ্বাস করতেন। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে লোকটা আসলে লোভী বিশ্বাসঘাতক। এই লোকটি রাজা হওয়ার পর থেকেই সুন্দর গড়ের মানুষের দুর্দশা বেড়েছে।আর তার লোলুপ দৃষ্টি এবার এসে পড়েছে বিজয় গড়ের ওপর। যে কোন দিন বিজয় গড় আক্রান্ত হতে পারে। যদিও আমাদের মহারাজ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন। সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবুও মহারাজ বৃদ্ধ হয়েছেন। এখন দরকার তরুণ রক্তের। আর মহারাজের  সন্তান বলতে ঐ রত্নমালা।’
এই বলে শূরসেন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
ইতিমধ্যেই রথ বিজয়গড় নগরীতে প্রবেশ করেছে। রাজকন্যা র রথ পূর্বেই রাজবাড়ী তে পৌঁছে গেছে। শূরসেন আদিত্য কে নগর দেখানোর জন্য একটু ঘুরিয়ে তারপর যখন রাজবাড়ী তে পৌঁছলো তখন দেখলো স্বয়ং মহারাজ সূর্য সেন আদিত্য কে স্বাগত জানাতে প্রধান ফটকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

শূরসেন ও আদিত্য উভয়েই রথ থেকে নামার পর মহারাজ সূর্য সেন এগিয়ে এসে হাসি মুখে আদিত্য কে উদ্দেশ্য করে বললেন ,‘ হে বীর যোদ্ধা , সম্পূর্ণ বিজয় গড় আজ তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। তুমি যদি না সময়ে এসে পড়তে তবে যে কি হতো তা ভাবলেই ভয় লাগছে।রত্নমালা ও তার সঙ্গীনি আমায় সব বলেছে। তুমি এখন আমার আতিথ্য গ্রহণ করো।’
এই বলে সকলে মিলে রাজপ্রাসাদের অতিথি শালায় প্রবেশ করলো। মহারাজ বললেন ‘বলো যুবক , তোমার সম্পূর্ণ পরিচয় দাও।’
আদিত্য মনে মনে স্থির করলো রাজাকে এখনি আসল পরিচয় দেওয়া ঠিক হবে না।
আদিত্য তাই মহারাজ কে উদ্দেশ্য করে বললো ,‘ মহারাজ  আমি জাতিতে ক্ষত্রিয়। পালক  পিতার আদেশে আমি হিমালয় পাদদেশে শক্তি ক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি। সেখানে গিয়ে আমার উদ্দেশ্য পূরণ হলে আমি আবার ফিরে আসবো। ’’
মহারাজ বললেন ,‘ তোমার পিতা কে ?’
আদিত্য উত্তর দিলো , ‘ মহারাজ আমার যাত্রা যেন সফল হয় সেই আশীর্বাদ করুন। সঠিক সময়ে আমি আপনার কাছে ফিরে আসবো। তখন আমি সব কিছুই আপনার কাছে বিবৃত করবো।’
মহারাজ বললেন , ‘বেশ , তুমি কিছুদিন আমার অতিথি শালায় থেকে যাও। তোমার যাত্রার জন্য আমার অশ্বশালা থেকে একটা উত্তম জাতির অশ্ব নাও।’
আদিত্য বললো ‘ মহারাজ , আমি অশ্বারোহণ জানি না।’
তখন শূরসেন বললেন , ‘ মহারাজ আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি আদিত্য কে আমার গৃহে রেখে দেওয়ার জন্য। আমি ওকে এই কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তম অশ্বারোহী বানিয়ে দেব।   ’
মহারাজ বললেন , ‘ বেশ তোমার কাছেই আদিত্য থাক। তবে প্রতিদিন একবার রাজ দরবারে আশা চাই।’
আদিত্য ও শূরসেন মহারাজ এর কাছ থেকে বিদায় নিলো।
শূরসেনের গৃহ রাজপ্রাসাদে র চৌহদ্দির মধ্যেই।
শূরসেনে সন্তান হীন। তিনি আর তার স্ত্রী আদিত্য কে পেয়ে খুবই আনন্দিত হলেন। আদিত্য কে পেয়ে দুজনেই সন্তানহীনতার দুঃখ ভুলে গেলো।
এদিকে আদিত্য শূরসেনের মতো দক্ষ সেনানায়ক পেয়ে তার কাছে সৈন্য পরিচালনা ও অশ্বারোহণ শিখতে লাগলো। এবং কয়েকদিনের মধ্যেই উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষ দক্ষতা অর্জন করলো।
একদিন অপরাহ্ণ বেলায় আদিত্য রাজপ্রাসাদের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাগানের অদূরে এক শিব মন্দির। নির্জন পরিবেশ।এমন সময় এক মহিলা আদিত্য র কাছে এসে প্রণাম করলো। আদিত্য প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে বুঝতে পারলো ইনি সেই দিন রাজকন্যা র সঙ্গীনি হয়ে গিয়েছিলেন।
মহিলা আদিত্য কে বললেন , ‘ কুমার, রাজকন্যা রত্নমালা আপনার সাথে দেখা করতে চান।’
আদিত্য বললো ,‘ তিনি কোথায় ?’
মহিলা উত্তর দিলো , ‘ তিনি মন্দির প্রাঙ্গণে শিবের জন্য মালা গাঁথছেন।’
আদিত্য মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখলেন রাজকন্যা রত্নমালা কিছু শিউলি ফুল সংগ্রহ করে মালা গেঁথে রাখছেন।
আদিত্য রাজকন্যা র সামনে গেলে রাজকন্যা হাত জোড় করে আদিত্য কে প্রণাম জানালো।
তারপর রাজকন্যা ভ্রু কুঁচকে আদিত্য কে প্রশ্ন করলো , 'এতদিন কোথায় ছিলেন ?
আমি ভাবছিলাম আপনার সাথে বোধহয় আর কখনো দেখাই হবে না।'
আদিত্য বললো , 'আমি এই মুহূর্তে আপনাদের আশ্রিত। আদেশ করলেই চলে আসতাম।'
রাজকন্যা একটা অপরূপ হাসি ছড়িয়ে বললো ,‘ বেশ আমি যা বলবো আপনি তাই করবেন তো ?  আমি আদেশ করলাম যে কয়দিন আপনি এখানে থাকবেন প্রতিদিন অপরাহ্ন বেলায় এই মন্দিরে আমার কাছে হাজিরা দেবেন।অনথ্যায় ভীষণ শাস্তি।’
আদিত্য ও ছদ্মভীত হয়ে বললো ,‘তাই হবে দেবী।’
তারপর দুজনে ই হেসে উঠলো।
এরপর দুজনের প্রতি দিন নির্জনে শিব মন্দিরের প্রাঙ্গণে দেখা হয় । দুই জন যুবক যুবতীর দেখা হলে কি কথা হবে তা আমাদের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। স্বয়ং শিব ঠাকুর তাদের মেলামেশা র সাক্ষী থাকেন।
একমাস কোথা দিয়ে কেটে গেল তা কেউই টের পেলো না।
একদিন আদিত্য রত্নমালা কে বললো ,‘ দেবী , এবার আমায় যেতে হবে। আমার কর্তব্য আমায় ডাকছে।আমায় বিদায় দিন।’
রত্নমালা আক্ষেপ করে বললো ‘ এমন কোন কর্তব্য আছে যা আমার চেয়ে বড় ?’
আদিত্য তখন বাধ্য হয়ে তার সত্যি কারের পরিচয় হতে মায়া আংটি ও অলৌকিক তরবারি ইত্যাদি সব কিছুই বললো।
শেষে বললো ‘ আমি নিজেও এখনো জানি না কোথায় কোনদিকে আছে শক্তিক্ষেত্র ।’
তখন রত্নমালা বললো , ‘ আমি এই ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। আমার ধাই মা একজন সিদ্ধা যোগিনী। চলুন তার কাছে যাওয়া যাক। তিনি   নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন। এই বিশাল বাগানের এক প্রান্তে এক কুটিরে তিনি বসবাস করেন। ’
বিশাল বাগানের এক প্রান্ত দিয়ে এক ছোট্ট নদী বয়ে চলে গেছে। তার ধারে এক পর্ণ কুটির।’
রত্নমালা সেই কুটির এর কাছে গিয়ে ‘মা,মা’ বলে ডাকলো।
রত্নমালার ডাকে সাড়া দিয়ে কুটির এর ভিতর থেকে এক বৃদ্ধা বেরিয়ে এলেন।এসে একগাল হেসে রত্নমালা কে দেখে বললেন ‘ রত্না মা , এতদিন বাদে বুঝি মাকে মনে পড়লো ?’
রত্নমালা বললো ‘ না মা , রোজ আসলে তোমার সাধনার বিঘ্ন হবে তাই রোজ আসি না।’
এবার বৃদ্ধার চোখ পড়লো আদিত্য র উপর।এক ঝলক দেখে বললো ,‘ কি রাজপুত্র ? পথ খুঁজে পাচ্ছ না ? রত্না তোমায় এখানে এনে ভালো কাজ করেছে। আমি তোমায় পথের সন্ধান দেবো। তবে আজ নয় । তুমি কাল অপরাহ্ন বেলায় রত্না কে সাথে নিয়ে আমার কাছে আসবে।’

সেই মতো পরের দিন আদিত্য ও রত্নমালা যোগিনী র কুটিরে আসলে যোগিনী আদিত্য র হাতে এক টুকরো লাল কাপড়ের টুকরো দিয়ে বললো ,‘ এই কাপড়ের টুকরো টি আমি মন্ত্রপূত করে দিয়েছি। তুমি এটা হাতে ধরে ‘ওম নম শিবায়’ এই মন্ত্র টি তিন বার জপ করবে। তারপর কাপড়ের টুকরো টি যেদিকে লক্ষ্য  করে উড়তে থাকবে জানব সেই দিকেই আছে তোমার শক্তি ক্ষেত্র। আর এই চলার পথে কখনো যদি ভয়ঙ্কর কোন বিপদের সম্মুখীন হও তবে এই কাপড়ের টুকরো টি বুকে হৃদয়ের কাছে ধরে আমায় স্মরণ করবে , দেখবে আমি তোমার সাহায্যের জন্য সেখানে পৌঁছে যাবো। আগামী পরশু শুভ মূহুর্ত আছে। তুমি ঐ দিন  ভোরে যাত্রা শুরু করো।   ’
সেই রাতে চাঁদ মাথার উপর ওঠা পর্যন্ত আদিত্য ও  রত্নমালার মধ্যে কথা হলো। শেষে আদিত্য কথা দিলো অলৌকিক তরবারি সংগ্রহ করার পর আদিত্য সবার প্রথমে বিজয়গড় আসবে।আর মহারাজ এর কাছে নিজের প্রকৃত আত্মপরিচয় দিয়ে রত্নমালাকে চেয়ে নেবে।
আরো কত কি যে কথা হলো তার সাক্ষী রইলো গাছপালা , নিশাচর পাখি , রাতের গন্ধরাজ ফুলের সুবাস ,আর পূর্ণিমার ঝকঝকে চাঁদ।
পরের দিন আদিত্য সকলের কাছ হতে বিদায় নিলো। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেলো শূরসেনের স্ত্রী। তিনি আদিত্য কে পেয়ে পুত্র স্নেহের পরশ পেয়েছিলেন। আদিত্য তাকে এই কয়দিন ‘মা’ বলেই ডাকছিলো।আজ চলে যাওয়ার সময় তার কাছে ও আদিত্য কথা দিলো কার্যসিদ্ধি হওয়ার পর আদিত্য তার কাছে ফিরে আসবে।
মহারাজ সূর্য সেন বললেন  , “তুমি  আমার পুত্রের মতো । তুমি কার্যসিদ্ধি হলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার এখানে আসবে। যে কোন সময় দুষ্ট শক্তি এই রাজ্য আক্রমণ করতে পারে। তাই তোমার মতো বীর যোদ্ধা আমার প্রয়োজন।  ”
সকলের কাছে বিদায় নেওয়ার পর সেই রাতে রাজপ্রাসাদের বাগানে আবার দেখা হলো রাজকন্যা রত্নমালার সাথে। রাজকন্যা বললো ‘ কুমার , আমি আমার স্বপ্নের বীর যোদ্ধা কে খুঁজে পেয়েছি। সেই বীর হলে তুমি। আমি তোমার পথ চেয়ে বসে থাকবো। প্রতিদিন তোমার মঙ্গলের জন্য শিব পূজা করবো। তুমি যত শীঘ্র সম্ভব এখানে ফিরে এসো।'
ধীরে ধীরে ভোর হলো ।
প্রভাতে শূরসেন ও তার স্ত্রী কে প্রণাম করে আদিত্য রওনা দিলো। শূরসেনের স্ত্রী ঘোড়ার পিঠে ঝোলায় কিছু খাদ্য দিয়ে দিয়েছেন।
আদিত্য ঘোড়ার পিঠে উঠে ঘোড়া চালিয়ে দিলো।শূরসেন ও তার স্ত্রী সজল চোখে তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কিছু ক্ষণ ঘোড়া ছোটাবার পর আদিত্য আবার এক গভীর জঙ্গলে উপস্থিত হলো । এখানে আদিত্য এবার একা। (ক্রমশ)

Saturday, October 6, 2018

অলৌকিক তরবারি পর্ব - ১

           প্রথম পর্ব (ভীল গ্রাম)

অনেক আদিবাসী  ভীল কিশোর এর  মধ্যে যদি একটা গৌর বর্ণের কিশোর থাকে তবে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক।

কিন্তু এই জঙ্গলে ঘেরা আদিবাসী গ্রামে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা।সবাই সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আদিত্য কে দেখে আসছে।
এই গ্রামের তথা আশেপাশের দশটা গ্রামের সবেধন নীলমণি বৈদ‍্য বলতে একজন। সে হলো আদিত্য র  পিতা শ‍্যামজী ।
সেই কোন যুগে শ‍্যামজী ছোট্ট আদিত্য কে  কোলে করে এই সভ‍্যতা বিবর্জিত আদিবাসী ভীল অধ‍্যুসিত  গ্রামে এসেছিল। তারপর থেকে তিনি এই জঙ্গলে ঘেরা আদিবাসী ভীল জাতির  গ্রাম গুলির কাছে  ভগবানের মতো।রাত বিরাতে আপদে বিপদে তিনিই এই আদিবাসী ভীল  গ্রাম গুলির একমাত্র ভরসা।
আদিত্য অন‍্য সব আদিবাসী ভীল   বন্ধু র থেকে একটু আলাদা প্রকৃতির। স্বভাবে গম্ভীর।  হৈ চৈ করা একদম পছন্দ নয়।কিন্তু ভীষন শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান।
শ‍্যামজী সারাদিন মানুষের সেবায় লেগে থাকেন। সন্ধ্যায় প্রতিদিন প্রদীপের আলোয় আদিত্য কে নিয়ে পড়াতে বসেন। তার কাছেই আদিত্য ব‍্যাকরণ, গণিত ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে জ্ঞান অর্জন করেছে। পড়ালেখা য় আদিত্য খুবই মেধাবী।যে কোন পাঠ একবার বুঝিয়ে দিলে দ্বিতীয় বার বোঝাবার প্রয়োজন হয় না। আদিত্য র কাছে শ‍্যামজী একাধারে মা, বাবা,ও গুরু।
ছোট বেলায় আদিত্য মাঝে মধ্যে তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতো। কিন্তু শ‍্যামজী কখনো তার সরাসরি উত্তর দিতেন না। সেই থেকে আদিত্য এই সব কথা আর বলে না। ভাবে পিতা হয়তো বিশেষ কোনো কারণবশত নিরব থাকে। সময় হলে তিনি নিজের থেকেই সব বলবেন।
ভীল রা  জন্মগত খুব ভালো তীরন্দাজ। প্রতিটি ভীল কিশোর ছোট থেকেই তীর ধনুক নিয়ে শিকার অভ‍্যাস করে থাকে। আদিত্য ও এদের সাথে থাকতে থাকতে খুব ভালো তীরন্দাজ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে তার দক্ষতা অর্জন অন‍্যান‍্য ভীল কিশোর দের ঈর্ষা র বিষয়।
মাঝে মাঝে  লক্ষ্যভেদ এর পরীক্ষা হয় , ভীলেরা জন্মগত সহজাত তীরন্দাজ হওয়া স্বত্বেও আজ পর্যন্ত কোন ভীল আদিত্য কে হারাতে পারে নি।
একদিন সন্ধ্যায় আদিত্য বাড়ি ফিরে দেখলো পিতার সাথে একজন বসে আছে।শ‍্যামজী নিজেই আদিত্য কে বললেন ,‘ইনি পন্ডিত রঘুবর। এনাকে প্রণাম করো।ইনি এই বিশাল সুন্দর গড় রাজ‍্যের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্রশিক্ষক।আজ হতে আগামী এক বৎসর ইনি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন ।আগামী  কাল হতে ইনি তোমায় ও তোমার যে সব বন্ধু অসি চালনা শিক্ষা করতে ইচ্ছুক তাদের ইনি শিক্ষা প্রদান করবেন।’
পরের দিন সকাল হতেই শুরু হলো অসি শিক্ষা। প্রথম কয়েক দিন আদিত্য একাই একমাত্র শিক্ষার্থী। তারপর দেখতে দেখতে আদিত্য র সব বন্ধুরাও যোগ দিলো। কিছুদিন পর দেখা গেলো অসি চালানোয় আদিত্য র ধারেকাছে কেউ নেই। তার বিদ্যুৎ বেগে অসি চালানো র ফলে অন‍্যান‍্য শিক্ষার্থীদের অসি হাত থেকে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে।
এমনিতেই আদিত্য কে সব ভীল বন্ধু রা তাদের নেতা রূপে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখন তার এই অস্ত্র নৈপুণ্য তাকে বাকি সব বন্ধুদের চোখে ও গুরু রঘুবরের চোখে তাকে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিল।
দেখতে দেখতে দিন কাটছিলো।
যখন আদিত্য ঊনিশ বছর পেরিয়ে বিশ বছরে পদার্পণ করলো সেই দিন সকালে তার পিতা শ‍্যামজী তাকে নিজের ঘরে ডাকলেন।
আদিত্য পিতার ঘরে এসে দেখলো তার অস্ত্রগুরু রঘুবর  আগে থেকেই পিতার ঘরে উপস্থিত।
আদিত্য দুজনকেই প্রণাম করলো।শ‍্যামজী আদিত্য কে বসতে বললেন।
উভয়ের সামনে রাখা আসনে আদিত্য বসলো।
শ‍্যামজী বললেন ,  ‘পুত্র , আজ তোমার সব কিছুই জানার সময় হয়েছে।সব কথা জানিয়ে আমি আজ দায়মুক্ত হতে চাই।আজ তুমি এমন সত‍্য র মুখোমুখি হতে চলেছো যা তোমার ভবিষ‍্যত জীবন কে  পরিবর্তিত করে দেবে।
এখানে সবাই জানে যে তুমি আমার সন্তান। কিন্তু তা সত‍্য নয় । আমি শুধু তোমায় পুত্র রূপে লালন পালন করেছি।
আসলে তুমি এই বিরাট সুন্দর গড় রাজ‍্যের একমাত্র উত্তরাধিকারী। তোমার জন্মদাতা পিতা হলেন স্বর্গগত মহারাজ প্রতাপাদিত‍্য। তুমি আসলে এই রাজ‍্যের রাজপুত্র।’
আদিত্য সবটুকু শুনলো। তারপর অতি ধীর স্বরে বললো , ‘ পিতা , আমি জ্ঞান হওয়া থেকে আপনাকেই পিতা রূপে জানি। ভবিষ্যতে ও আপনি আমার পিতা রূপেই থাকবেন। কিন্তু আমি যদি রাজার সন্তান হয়ে থাকি তবে এই ভাবে এখানে কেন ?’
এবার গুরু রঘুবর বললেন ,‘ সেই কাহিনী আজ তোমায় শোনাবো বৎস।’
অনেক দিন আগের কথা …..
তোমার পিতা মহারাজ প্রতাপাদিত্য খুব ই প্রজাবৎসল ছিলেন। তিনি নিজেকে রাজা না ভেবে প্রজার সেবক রূপে ভাবতেন।প্রজারাও তাদের রাজা কে প্রাণ  ভরে ভালোবাসতেন। এই 'সুন্দর গড় '  রাজ‍্য কৃষিজ ও খনিজ সম্পদের অফুরন্ত ভান্ডার।তাই প্রতিবেশী রাজাদের লোভ এই স্বর্ণপ্রসু রাজ‍্যের উপর। মহারাজ প্রতাপাদিত্য বহু গুণে র অধীকারী হলেও তার একটি দোষ ছিলো। সেই দোষ টি হলো তিনি সবাইকে বিশ্বাস করতেন। তার এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বহু মানুষ নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করেছে। তবু তিনি মানুষ কে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু এই দোষের কারণে তাকে একদিন চরম মূল্য দিতে হয়।
তিনি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস যার উপর করতেন , তিনি হলেন তার বাল‍্যবন্ধু সেনাপতি দুর্জন সিং এর উপর। দুর্জন সিং খুব দক্ষ সেনানায়ক ছিলেন এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি ছিলেন হিংসা প্রবণ ও লোভী । তার অপরিসীম লোভ ছিল রাজ সিংহাসনের উপর। পার্শ্ববর্তী রাজ‍্য 'মালব গড়' এর  রাজা প্রবাল নারায়ণ এর অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এই ' সুন্দর গড়' এর খনিজ সম্পদের উপর। সুন্দর গড় এর সোনার খনি ও লৌহ খনির  আয় এই রাজ‍্যের প্রতিপত্তি র মূল। এই খনি দুটি র কতৃত্ব যার হাতে থাকবে সেই রাজ‍্য নিঃসন্দেহে বিশাল আর্থিক ক্ষমতা র অধিকারী হবে ।
সুন্দর গড় ও মালব গড় এর মাঝে ছিল এক বিশাল বনভূমি। এই বনভূমি তে উভয় রাজ‍্যের মানুষ শিকার করতো।
একদিন  'সুন্দর গড়' এর সেনাপতি দুর্জন সিং ও 'মালব গড়' এর রাজা প্রবাল নারায়ণ উভয়েই শিকার করতে গিয়ে সাক্ষাৎ  হলো।
উভয়ের উভয়কে চিনে নিতে বেশি ক্ষণ লাগলোনা।
তাদের মধ্যে গোপনে কি কথা হলো তা কাকপক্ষীও টের পেল না।
কয়েকদিন পর দেখা গেলো সেনাপতি দুর্জন বেশীরভাগ সৈন‍্যসামন্ত নিয়ে রাজ‍্যের উত্তর অংশে খনি অঞ্চলে চলেছে।কারণ হিসেবে রাজা প্রতাপাদিত্য জানলো যে কিছু খনি শ্রমিক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। সামান্য কিছু সৈন্য রাজধানী রক্ষার জন্য রইলো।
সেনাপতি দুর্জন সিং চলে যাওয়ার কয়েক দিন পর গুপ্তচর সন্দেশ বয়ে আনলো পার্শ্ববর্তী মালব গড়ের রাজা প্রবাল নারায়ণ সুন্দর গড় আক্রমণ করতে চলেছে। তৎক্ষণাৎ প্রতাপাদিত্য দূত পাঠালেন দুর্জন সিং এর কাছে অবিলম্বে সৈন্য বাহিনী নিয়ে রাজধানীতে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু দুর্জন সিং রাজধানীতে ফিরে এলেন না।
কয়েকদিন এর মধ্যেই প্রবাল নারায়ণ প্রত‍্যাশিত ভাবেই সুন্দর গড় আক্রমণ করলেন। মহারাজ প্রতাপাদিত্য অল্প সৈন্য  নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে মৃত্যু বরণ করলেন। সেই নিদারুণ ক্ষণে মহারানী পদ্মাবতী রাজবৈদ‍্য শ‍্যামজী কে প্রাসাদে আহ্বান করলেন। আমি( রঘুবর ) তখন ছিলাম প্রাসাদ রক্ষা করার দায়িত্বে। তুমি তখন দুই বছরের বালক মাত্র। তোমার মা তোমায় শ‍্যামজী র হাতে তুলে দিয়ে বললেন ,‘আমি এক গুরুদায়িত্ব আপনাদের হাতে তুলে দিতে চাই। মহারাজ এর যুদ্ধক্ষেত্রে স্বর্গ  লাভ হয়েছে সংবাদ এসেছে।যে কোনো মুহূর্তে শত্রুরা রাজধানীর অধিকার নেবে। মহারাজ এর মৃত্যু র পর আমার সংসারে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। তাই ঠিক করেছি হিমালয়ের পাদদেশে আমার কুলগুরু র আশ্রমে শেষ জীবন টা অতিবাহিত করবো। আমি চাই আপনারা দুজনেই আমার পুত্র আদিত্য র ভার নিন।’
শ‍্যামজী বললেন ‘কিন্তু  মহারানী ,পিতামাতাহীন , রাজ‍্যহীন রাজপুত্রকে আমরা কিভাবে উপযুক্ত করে তুলবো ?’
মহারানী বললেন "আপনারাই তাকে উপযুক্ত ভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে মানুষ করে তুলবেন।তাকে শাস্ত্র  ও শস্ত্র উভয়েই পারদর্শী করে তুলবেন।যাতে সাবালক হয়ে সে তার পিতৃরাজ‍্য পুনরুদ্ধার করে উঠতে পারে। আপনারা জানেন এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহারাজা র প্রপিতামহ আদিত‍্যদেব। আমিও তার নামানুসারে পুত্রের নামকরণ করেছি আদিত্য।  মহারাজ আদিত্য দেব তার গুরু এক যোগীরাজ এর কাছ থেকে দুটি মহামূল্যবান সামগ্রী লাভ করেছিলেন। সামগ্রী দুটি র একটি হলো অলৌকিক তরবারি ও দ্বিতীয় টি হলো আমার এই পরিহীত মায়া আংটি।এই মায়া আংটি  যার হাতে থাকবে সেই একমাত্র এই অলৌকিক তরবারি র মালিক হতে পারবে। এই অলৌকিক তরবারি তার মালিকের অসিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি করে। শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিতে অসিচালনা করতে পারে। এই দ্রুত বেগে অসি চালনা অস্ত্রটির উত্তাপ বৃদ্ধি করে । এই উত্তাপ বৃদ্ধি এক পর্যায়ে শত হস্ত পর্যন্ত সব কিছুই অগ্নিদগ্ধ করে। কিন্তু মায়া আংটি ঐ সময় অসি চালককে নীলাভ রশ্মি দিয়ে ঘিরে রাখে এবং এই নীলাভ রশ্মি তার মালিক কে সুশীতল করে অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
কিন্তু এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজ আদিত্য দেব এর মৃত্যুর পর তার গুরু সেই যোগীরাজ অলৌকিক তরবারি টি লুকিয়ে রাখেন। শুধু বলে যান  মায়া আংটি এই বংশের রাজরানী রা পরম্পরায় হস্তে ধারণ করবে।  যদি কখনো এই রাজবংশের বিপদ আসে, তবে এই বংশের উপযুক্ত সন্তান  যেন মায়া আংটি পরে একাকী হিমালয়ের পাদদেশে শক্তি ক্ষেত্রে পদার্পণ করে । সেখানেই সে পাবে অলৌকিক তরবারির সন্ধান।"এই বলে তিনি তার হস্ত থেকে মায়া আংটি টি খুলে নিয়েএকটি ছোট্ট হাতির দাঁতের কৌটায় রেখে, সেই কৌটোটি আমাদের হাতে দিলেন। তারপর তোমার মুখে চুমু খেয়ে তোমায় আমাদের হাতে তুলে দিলেন।
তারপর আমার (রঘুবর)নিরাপত্তায় শ‍্যামজী তোমায় নিয়ে এই দূরবর্তী অঞ্চলে নিয়ে আসে। এখানে তিনি তোমায় সকলের অলক্ষ্যে বড় করে তুলতে লাগলেন।
এদিকে রাজধানীর পতনের পর দুর্জন সিং রাজধানীতে সসৈন্যে এলেন।মালব গড়ের রাজা প্রবাল নারায়নের সঙ্গে একটি লোকদেখানো সন্ধি হলো। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী দুর্জন সিং রাজা হলেন।আর প্রবাল নারায়ন পেলেন খনির অর্ধেক অধিকার।
’এই বলে রঘুবর থামলেন।
শ‍্যামজী এবার একটি হাতির দাঁতের কৌটো আদিত্য র হাতে দিয়ে বললেন ,‘ এই সেই মায়া আংটি। এটা তুমি ডান হাতে ধারণ করো।’
আদিত্য কৌটো খুলতেই একটা নীল পাথর খোদিত স্বর্ণাঙ্গুরীয় ঝলমল করে উঠলো।
আদিত্য সেটা  ডান হাতের অনামিকায় ধারণ করলো।
ধারণ করা মাত্রই কেউ যেন তার  কানে বলে উঠলো ‘উত্তরপানে শক্তিক্ষেত্রে এসো।’
আদিত্য শ‍্যামজীর দিকে তাকিয়ে বলল ‘পিতা এই আংটি ধারণ করা মাত্র কেউ যেন আমার কানে বলল ,"উত্তর পানে শক্তিক্ষেত্রে এসো।’
শ‍্যামজী মৃদু হেসে বললো , ‘তোমার মা মহারানী পদ্মাবতী বলেছিলেন এই মায়া আংটি তোমায় যে কোন প্রকার রোগ ও প্রাকৃতিক বিপত্তি থেকে  রক্ষা করবে। এছাড়া প্রয়োজনে পরম সুহৃদের মতো পথনির্দেশ করবে।
অতএব পুত্র তুমি দ্বিধা করবে না । আগামী কাল প্রভাতেই তুমি  উত্তর পানে যাত্রা শুরু করো। ঈশ্বর তোমার সহায়ক হোন।’

পরদিন সকালে আদিত্য গুরুদেব রঘুবর ও পিতাকে প্রণাম করে   যাত্রা শুরু করলো।সাথে রইলো তীর ধনুক , তরবারি ও সামান্য কিছু খাদ্য।
পথ অনেক দূর। কিছু ক্ষণের মধ্যে ই চেনা পরিবেশ অপরিচিত হয়ে গেল। কানে শুধু অনুরণন হতে লাগলো ‘উত্তরে এসো, উত্তরে এসো।’