Crss colum

Thursday, May 2, 2019

অদ্ভুতুড়ে

"দেখুন আপনি অনেকদিন ধরে ঘোরাচ্ছেন। আপনাকে আর সময় দিয়ে সময় ও পয়সা দুটোই বরবাদ করতে রাজি নই।" বেশ রেগেমেগেই কথা গুলো বললো টুসকি।
রতন বাবু একটু পরিস্থিতি টা সমঝে নিয়ে উত্তর দিলো ," আমি বুঝতে পারছি আমি আপনাদের আশানুরূপ বাড়ি দেখাতে পারছি না। কিন্তু কি করবো বলুন আপনাদের এই এ্যাতো কম বাজেটে জমি সহ বাড়ি নিউ টাউনের মতো জায়গায় পাওয়া মুশকিল।"
টুসকি বললো "তাহলে পারবেন না বলে দিলেই পারেন। আমরা আপনার পিছনে টাকা পয়সার ছাদ্দ না করে অন্য দালাল ধরি।"
রতনবাবু এই কথায় একটু কুঁকড়ে গেলেন। যতই হোক এই বাড়ি কেনাবেচার ব্যবসায় পনেরো বছর আছেন। তিনি পছন্দ অনুযায়ী বাড়ি দেখাতে পারবেন না আর অন্য কেউ পারবে এই ব্যাপারটা রীতিমতো অপমানজনক।
রতনবাবু এবার একটু সাহস করে বলেই ফেললেন , "বাড়ি একটি আছে এবং তা আপনাদের বাজেটের মধ্যেই হবে। দেখলে পছন্দও হবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু …"

"কিন্তু কি?" ঝাঁঝিয়ে উঠলো টুসকি।
রতনবাবু আরো কাঁচুমাচু মুখ করে বললেন "বাড়িটার একটু ভুতুড়ে বদনাম আছে।"
টুসকি বললো , "ও এবারে ভূতের বাড়ি গছিয়ে দেবেন ?"
রতনবাবু কুন্ঠিত বোধ করে বললেন , "মানে , আপনি জোরাজুরি করছেন বলে ঐ বাড়িটার কথা বললাম।"
টুসকি একটু শান্ত হয়ে বললো , "ঠিক আছে, রবিবার ও বাড়ি থাকবে।ঐ দিন বাড়ি দেখতে যাবো।সব ব্যবস্থা করে রাখবেন। এখন আসুন।"

টুসকি ও মিলনের প্রেম করে বিয়ে।মিলন কম্পিউটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। একটা মাল্টিন্যাশনাল ফার্মে চাকরী করে। টুসকি সদ্য ডাক্তারী পাশ করে একটা প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে যুক্ত হয়েছে।ঐ হাসপাতালে একবার কম্পিউটার সিস্টেমে ভাইরাস এফেক্টেড হওয়ায় মিলন এসেছিলো তা সারিয়ে তোলার জন্য। তখনই আলাপ। তারপর প্রেম।এক বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর এই ছয় মাস হলো বিয়ে হয়েছে। দুজনে আপাতত সল্টলেকে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে আছে। মিলনের বাবা মা থাকে মেদিনীপুর টাউনে। ওখানে ওদের নিজস্ব বাড়ি ।আর টুসকি র বাড়ি তারকেশ্বরে।
দুজনের কর্মক্ষেত্র যেহেতু কলকাতায় তাই এখানে থাকা। কিন্তু সল্টলেকের মতো জায়গায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকার যে বিপুল খরচ তা থেকে রক্ষা পেতে এই বাড়ি কেনার চিন্তা ভাবনা।
টুসকির আবার ফ্ল্যাট বাড়ি পছন্দ নয়। একটুখানি জমির ওপর নিজস্ব বাড়ি , ছোট্ট মতো বাগান। তাতে দু একটা ফল ও ফুলের গাছ ।
দুজনের জমানো টাকা একত্রিত করে যা হয়েছে তাতে নিউ টাউন এলাকায় বাড়ি কেনার কথা ভাবা একরকম মূর্খামি।
তবুও হাল ছেড়ে না দিয়ে দালাল ধরা।
যাইহোক, রবিবার দিন দুপুরে টুসকি ,মিলন আর  রতন বাবু একটি ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি দেখতে গেলো।
বাড়ির মালিক আগে থেকেই জানতেন ওরা আসবে।তাই বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছিলেন।ওরা এলে ওদের নিয়ে তালা খুলে বাড়িতে ঢুকলেন। এই বাড়িতে উনি সাধারণত দিনের বেলায় ছাড়া আসেন না। বাড়িটা শখ করে ওনার বাবা কিনেছিলেন। কিন্তু ভোগ করতে পারেন নি। বাড়ি কেনার পর প্রথম দিন উনি দুজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রাতে বাড়ি কেনার আনন্দ সেলিব্রেট করতে আসেন। ওনার একটু পানীয়ের নেশা ছিল। সেই রাতে ঠিক কি হয়েছে বলা মুশকিল। তবে বাড়ির মালিকের সেই রাতে হার্ট এ্যাটাক হয়।পরের দিন তিনি হাসপাতালে মারা যান। পুলিশ দুই বন্ধু কে অনেক জেরা করে জানতে পারে তারা রাতে অনেক ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছিলো। কিন্তু অনেক অনুসন্ধান চালিয়েও পুলিশ এই রহস্যের সুরাহা করতে পারেনি।
সেই থেকে বাড়িটা দীর্ঘদিন খালি অবস্থায় তালা চাবি দিয়ে পড়েছিল। মাঝখানে একবার এক সিরিয়াল পার্টি শুটিং করার জন্য ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু তারাও দুই রাতের বেশি টিকতে পারে নি।
বাড়িটার ক্রমশ বদনাম হওয়ায় কেউ বাড়িটার কাছে ঘেঁষতে ভয় পায়। বর্তমান মালিক টাকার প্রয়োজনে কুড়ি বছর আগের কেনা মূল্যেই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে চাইছে। কিন্তু একটিও ক্রেতা জোটেনি।
 এতদিন বাদে টুসকি ও মিলন বাড়িটা দেখতে আসবে শুনে লোক লাগিয়ে বাড়িটি পরিস্কার করিয়েছে।তাও দিনের বেলায় যে কাজ এক জন মজুর দিয়ে হয়ে যেতো , সেই কাজের জন্যে চারজন মজুর লাগাতে হয়েছে।ভয়ে একলা কেউ কাজ করতে রাজি হয়নি।
বাড়ির মালিক মানত করেছে যদি বাড়িটি বিক্রি হয় তবে তারাপীঠে গিয়ে পুজো দিয়ে আসবে।

বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি। চারিদিকে উচুঁ পাঁচিল দেওয়া।গেট খুলে ঢুকলেই নুড়ি পাথর ফেলা রাস্তা একদম সদর দরজা পর্যন্ত। রাস্তার দুধারে বেশ কয়েকটি বড়ো বড়ো আম ,জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলের গাছ। সদর দরজা খুলে ঢুকলে বেশ খানিকটা ডাইনিং স্পেস।তলা উপর মিলে ছয়টি শোওয়ার ঘর।
বাড়িটা এককথায় অসাধারণ। বাড়িটা তৈরি করেছিলেন একজন রিটায়ার্ড প্রফেসর। উনি ,ওনার স্ত্রী ও একজন বিহারী চাকর তিনজনে থাকতেন এই বাড়িতে। প্রফেসর শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন কিন্তু ওনার স্ত্রী র দজ্জাল মহিলা হিসাবে বদনাম ছিল। পাড়ার কেউই ওদের সঙ্গে মিশতো না। একদিন আচমকা ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকে তিনজনেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। প্রফেসর ও তার স্ত্রী বোধহয় একসাথে  বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।আর তাদের বাঁচাতে এসে চাকরটিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর প্রফেসরের আমেরিকা প্রবাসী ছেলে  বাড়িটা বিক্রি করে দেয়। এই সব ইতিহাস রতন বাবু আসার পথে ট্যাক্সিতেই বলেছেন।
যাইহোক বাড়িটা টুসকি ও মিলনের বেশ পছন্দ হয়ে গেল। দামটাও সাধ্যের মধ্যে থাকায় দিন তিনেকের মধ্যেই তারা রেজিস্ট্রি করে বাড়িটার মালিক হয়ে গেল।
দিন সাতেক পরে এক রবিবার সকালে তারা দুজন লটবহর নিয়ে বাড়ির দখল নিলো।
কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী অবশ্য ভূতের ভয় দেখিয়ে ওদের নিরস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিলো। কিন্তু এই বিষয়ে দুজনের বক্তব্য একই।

"দেখাই যাক না ভূতে কি করতে পারে।"

বাড়িতে প্রবেশের আগেই অবশ্য মিলন লোকজন পাঠিয়ে বাড়িতে কি সব লাগালো।টুসকি জিজ্ঞেস করায় মিলন রহস্যময় হাসি হেসে উত্তর দিলো "ভূত তাড়ানোর যন্ত্র বসিয়েছি।"
গৃহপ্রবেশের পর দিন তিনেক ওরা সতর্ক রইলো। কিন্তু কিছুই ঘটলো না।দুজনেই বেশ একটা স্বস্তি অনুভব করলো।
প্রথম ঘটনা ঘটলো চতুর্থ দিন রাত্রে।সবে কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে ঠিক তখনই নিচের তলা থেকে দুমদাম আওয়াজ।দুজনেই ধড়ফড় করে উঠে পড়লো। বিছানা থেকে নেমে দুজনে ওপর তলা থেকে নিচে নেমে আলো জ্বেলে ভালো করে দেখলো । না কোথাও কোনো কিছু নেই।সব একদম স্বাভাবিক। পুনরায় দোতলায় শোওয়ার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করবে এমন সময় আবার দুমদাম আওয়াজ শুরু। আবার নিচে নেমে দেখলো সব একদম ঠিকঠাক রয়েছে।
মিলন মুচকি হেসে একটু জোরেই বললো "এসব করে কোনো লাভ হবে না। এই বাড়ি আমরা কিনেছি।আর কোনো অবস্থায়ই আমরা এই বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি না।আর এরপর আওয়াজ করলে এমন হাল করে দেবো যে পালাবার পথ পাবে না। সাবধান করে দিলুম।"
আবার দুজনে ওপরে এসে শুয়েছে অমনি আওয়াজ শুরু।
মিলন আর নিচে নামলো না। বিছানার পাশে থাকা একটা সুইচ টিপে দিয়ে সব কটি ঘরে ফিট করা ব্লুটুথ স্পিকার গুলো অন করে দিলো। তারপর মোবাইলে স্পীকার গুলো কে কানেক্ট করে হনুমান চাল্লিশা  চালিয়ে দিলো। প্রতিটি ঘরে তারস্বরে শুরু হলো "জয় হনুমান, জ্ঞান গুণ সাগর ….."
তারপর সব চুপচাপ। রাতে আর কোনো উতপাত হলো না।
শুধু সেই রাতে চিলে কোঠার ঘরে এক গোপন মিটিং বসলো।
মিটিং এর মধ্যমণি এই বাড়ি যার হাতে তৈরি সেই প্রফেসর। সঙ্গে  তার স্ত্রী ও চাকর। এছাড়া আরো একজন আছে ।সে হলো এক কঙ্কাল। বহুকাল আগে নাকি এই জমিতে তাকে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। কঙ্কাল টি অবশ্য কথা বার্তা বলে না। বলতে পারে না এমন নয় । তবে সে কথা বলা পছন্দ করে না। চুপচাপ থাকে। প্রফেসরের স্ত্রী কে খুব ভয় করে। অবশ্য প্রফেসরের স্ত্রী কে স্বয়ং প্রফেসর পর্যন্ত ভয় করে। বেঁচে থাকতেই খুব দজ্জাল মহিলা ছিলেন। এখন মৃত্যুর পর তার দজ্জালপনা আরো বেড়েছে।
যাই হোক মিটিং এর আলোচ্য বিষয় একটাই। বাড়িটার পুনরায় দখল নিতে হবে। ফাঁকা ঘরগুলো থেকে তখনো হনুমান চল্লিশার আওয়াজ ভেসে আসছে। আপাতত চারজন ভৌতিক প্রাণী নিজেদের ঘর ছাড়া হয়ে এই চিলেকোঠার ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।এমন অপদস্থ এর আগে হতে হয় নি।
মিটিং এ ঠিক হলো প্রথমে ওদের ভয় দেখাবে বিহারী চাকরটি। তাতে কাজ না হলে কঙ্কাল টি । তারপর প্রফেসরের স্ত্রী। এতেই যদি কাজ হয় তো ভালো না হলে স্বয়ং প্রফেসর আসরে নামবে।

প্ল্যান মাফিক কাজ শুরু হলো।

 সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মিলন বাড়ি ফেরে।আসার সময় টুসকি কে ওর হসপিটাল থেকে পিক আপ করে নেয়। সাধারণত রাতের খাবার ওরা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে চলে আসে। দুজন লোকের জন্য সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর রান্না করা পোষায় না।
বাড়ির সামনে এসে বাইক থামাতে টুসকি বাইক থেকে নেমে ব্যাগ থেকে চাবি বের করে গেটের তালা খুললো।
গেট খুলে ভিতরে ঢুকে পুনরায় গেট বন্ধ করে তালা দিয়ে দিলো।
এরপর বাড়ির সদর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই এক হাড় হিম করা শীতল অনুভূতি দুজনকেই শিহরণ জাগালো। বাড়িতে মিলন কম্পিউটারাইজড অটোমেটিক আলো লাগিয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে গেলেই বাড়ির সব আলো আপনাআপনি জ্বলে যায়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওদের চোখে পড়লো একজন চাকরবাকর জাতীয় লোক উবু হয়ে বসে ওদের দিকে পিছন ফিরে ঘর মুছছে। ওদের প্রবেশের আওয়াজে সে পিছন না ফিরে মুন্ডুটাকে একশো আশি ডিগ্রি বাঁকিয়ে কটমট করে লাল চোখে তাকিয়ে রইলো।একটু ভয় পেলেও মিলন নিজেকে সামলে নিয়ে চাকর টাকে বললো ,"আমাদের দিকে তাকিয়ে কি হবে? বরং ঘরটা ভালো করে ঘরটা  মুছে দাও। না হলে আবার হনুমান চল্লিশা চালিয়ে দেবো।"
টুসকি ও ততোক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে।সে আরো একটু মেজাজ দেখিয়ে বললো ,"ঐ সিঁড়ির তলাটা ভালো করে মুছবে।  নোংরামী আমার একটুও পছন্দ নয়।আর এই খাবারের প্যাকেট টা ধর।একটু বাদে গরম করে আমাদের ঘরে নিয়ে এসো।বুঝেছো?"
চাকর টি অসহায়ের মতো হাত বাড়িয়ে খাবারের প্যাকেট টা নিলো।এমন অপমান এর আগে হয়নি।
তার এই টেকনিকে এর আগে কতো সাহসী ঘায়েল হয়ে গেছে। কিন্তু এই দুজনের ওপর কোনো প্রভাব পড়লো না।
একটু বাদে সে খাবার গরম করে নিয়ে এসে ওদের দুজনের ঘরে টোকা মারলো।
ভিতর থেকে টুসকি বললো ,"ভিতরে এসো ।" চাকর টি ভিতরে এসে খাবারের থালা দুটি টেবিলে রাখলো।
মিলন দাবার ছক সাজিয়ে বসেছে।এটাই তার নেশা।একা একাই দুজনের চাল চালছে।আর টুসকি সোফায় বসে কোলে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে।
চাকর টি চলে যাচ্ছিলো।টুসকি বললো,"এই দাঁড়াও। তোমার নাম কি?"
চাকরটা খোনা গলায় ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো "বুধুয়া ,মালকিন।"
টুসকি বললো "এবার থেকে রোজ আমাদের খাবার গরম করে এনে দেবে।আর রবিবার আমাদের দুজনের ছুটি।ঐ দিন সকাল থেকেই আমার কাজে সাহায্য করবে। বুঝতে পেরেছো?"
বুধুয়া বললো "জী মালকিন।"

সেই রাতে পুনরায় মিটিং বসলো চিলেকোঠার ঘরে।বুধুয়া কেঁদে বলে উঠলো "ইতনা দিন ম্যায় নে আপলোগোকা নোকর থা,লেকিন ইয়ে ডরানে কো চক্কর মে ম্যায় উন লোগোকা নোকর বন গয়া।আজসে ম্যায় আপলোগোকা সাথ নেহি হুঁ।"
মিটিং এ ঠিক হলো এবার ভয় দেখাবে কঙ্কাল টি।
পরের দিন রাতে একটি খটখট আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলো মিলনের।
যেন ঘরের বাইরে বারান্দায় কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে। দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই দেখলো একটা কঙ্কাল বারান্দার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত হাঁটছে। কঙ্কালের পায়ের খটখট আওয়াজে চারিদিক গমগম করছে।
মিলন খানিকটা চেয়ে সোজা কঙ্কাল টার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো "সারাদিন কাজকর্ম করে একটু যে শান্তিতে ঘুমাবো তার উপায় নেই ‌। তোমার যখন এতই হাঁটার শখ তবে বাড়ির কম্পাউন্ডে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করো।আর যাই হোক তোমায় দেখলে চোর ডাকাত এই বাড়ির চৌহদ্দি মারাবে না।যাও এখান থেকে।"
ইতিমধ্যে টুসকি উঠে এসে মিলনের পাশে দাঁড়িয়েছে।সে কঙ্কাল টাকে বললো "না যেও না।একটু দাঁড়াও।মিলন তুমি যে বলছিলে না তোমার পিঠের হাড় খয়ে যাচ্ছে।যার কারণে যন্ত্রণা হচ্ছে। এই হাড়টা খয়ে যাচ্ছে।"
এই বলে কঙ্কাল টির একটা হাড় ইঙ্গিত করলো। তারপর কঙ্কাল টির চারপাশে ঘুরে ঘুরে একের পর এক হাড় খুঁটিয়ে দেখে তাদের নাম গুলো মিলনকে বোঝাতে লাগলো। কঙ্কাল টি এমন অসস্তিকর অবস্থায় আগে পড়েনি।সবাই তাকে দেখে ভয়ে হার্ট এ্যাটাক করেছে।আর এরা ভয় তো পেলোই না উল্টে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখলো।
দুই দিন নতুন কিছু ঘটলো না।বুধুয়া এখন বাধ্য চাকরের মতো সব কাজ করছে।কাজে ভুল হলে বকাবকিও খাচ্ছে।
রবিবার সকালে ঘুম থেকে দুজনেই একটু দেরীতে ওঠে। মিলন বাজারে গেলে  টুসকি রান্না ঘরে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিলো।
এমন সময় এক মধ্য বয়সী মহিলা রান্না ঘরের দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো।টুসকি ঘরের ইতিহাস জানতো। বুঝতে পারলো ইনি প্রফেসরের সেই দজ্জাল স্ত্রী। মহিলা খসখসে গলায় বললো "তোরা দুজনে আমাদের শান্তি বিঘ্নিত করছিস।এখান থেকে চলে যা । নাহলে ভালো হবে না।"
টুসকি বললো "আমরা কোথাও যাবো না। এই ঘর আমরা অনেক কষ্ট করে কিনেছি। আপনি সন্ধ্যা বেলায় আপনার স্বামী কে নিয়ে আসুন । তখন কথা হবে। এখন যান এখান থেকে।আমায় কাজ করতে দিন।"
মিলন বাজার থেকে বাড়ি ফিরলে টুসকি তাকে সব খুলে বললো।মিলন বললো "তুমি ঠিকই বলেছ।এর একটা ফায়সালা হওয়া দরকার।আসুক ওরা।"

সন্ধ্যায় মিলন   সোফার সামনের টেবিলে দাবার ছক নিয়ে বসেছে।টুসকি ড্রেসিং টেবিলের সামনে আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধছে।
ঘরে দুটি মূর্তির আবির্ভাব হলো। একজন বয়স্ক লোক ।আর দ্বিতীয় জন টুসকির দেখা সেই মহিলা।
দুজনেই বুঝতে পারলো এনারাই সেই প্রফেসর ও তার স্ত্রী।
মিলন প্রফেসর কে বললো "বসুন" ।
প্রফেসর মিলনের উল্টো দিকের সোফায় বসে বললো "দাবা খেলার নেশা আমারো ছিল।ভালোই খেলতাম।"
মিলন বললো "তাহলে একদান খেলা হয়ে যাক।"
মহিলা টি সোফায় বসলে টুসকি তার পাশে বসে আদুরে গলায় বললো "মাসিমা একটু আমার চুল বেঁধে দেবেন।"
প্রফেসর ও তার স্ত্রী দুজনেই এসেছিলো একটা হেস্তনেস্ত করার মনোভাব নিয়ে। কিন্তু টুসকি ও মিলনের ব্যবহারে তাদের রাগ গলে জল হয়ে গেল।
প্রফেসর দাবার একটা চাল দিয়ে বললো "এই ঘর আমি খুব শখ করে বানিয়েছিলাম। এই ঘর ছেড়ে চলে যেতে আমি পারবো না।"
মিলন পাল্টা চাল চেলে বললো "আমি তো আপনাদের চলে যেতে বলছি না। আমাদের দুজনের জন্য দুটি ঘর প্রয়োজন। বাকি ঘর গুলো তো খালি। ওগুলো তে আপনারা থাকুন। তবে হ্যাঁ বাড়িতে থাকতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে।"
প্রফেসর বললেন "কি নিয়মকানুন ?"
মিলন বললো "আপনারা দুজনেই থাকবেন আমাদের অভিভাবকের মতো।সকলে মিলে বাড়ি ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে।আর বাড়িতে আমাদের কোনো আত্মীয় এলে ভয় দেখানো চলবে না। প্রতি রবিবার আমার সঙ্গে দাবা খেলতে হবে। সর্বোপরি বেশীরভাগ সময় আমরা কাজের জন্য বাইরে থাকি। সেই সময় আপনারা  ঘরের দায়িত্বে থাকবেন। বলুন রাজি?"
প্রফেসর হাসি মুখে বললো "রাজি। সেই সঙ্গে কিস্তি"।
টুসকি বললো "মাসিমা আপনি আমার সঙ্গে যদি রোজ একটু সময় গল্প সল্প করতে আসেন তবে বোরিং নেস কেটে যাবে। আসবেন তো?
প্রফেসরের স্ত্রী বললো "হ্যাঁ মা নিশ্চয়ই আসবো। এই বাড়িতে তোমরা আমাদের ছেলে বৌমার মতো থাকবে।আজ থেকে তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। তোমার ছেলে পুলে হলে তাকে সামলাবার দায়িত্ব আমরা নেবো। কথা দিলাম। এখন যাই।"
দুজনে যেমন আচমকা এসেছিলো তেমন আচমকা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
টুসকি হাঁক দিলো ,"বুধুয়া , এই বুধুয়া খাবার দিয়ে যা।"