Crss colum

Tuesday, February 20, 2018

GOD exists? ঈশ্বরের অস্তিত্ব কি আছে ?

ঈশ্বরের অস্তিত্ব কি আছে ?
_________________
GOD exist? ঈশ্বরের অস্তিত্ব কি আছে ?
ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে না নেই এটা এক অতি বিতর্কিত বিষয়। কেউ বলে ঈশ্বর আছেন আবার কেউ বলেন ঈশ্বর নেই।
কোনটি সত্য ?
আজ আমরা সেটি যুক্তি তর্কের আলোকে ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিচার করে দেখবো।
আমরা অনেকেই ঈশ্বর মানি। কিন্তু কখনো নিজেরাই তলিয়ে অনুসন্ধান করে দেখি না আমাদের চিন্তা ধারা সঠিক কিনা।
ঈশ্বর সম্পর্কে যে ধারণা আপনার মনে আছে তা কি আদৌ আপনার ?
আপনি কি ঈশ্বর সম্পর্কে এই ধারণা বোধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ?

না।
যখন একটি শিশু জন্ম গ্রহণ করে তখন সে শুধুই একটি মানুষ।  তার কাছে ঈশ্বরের কোন আলাদা মূল্য নেই।  বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথেই এসব  ধারণা আপনার মধ্যে প্রবেশ করানো হয়েছে। আপনার মা , বাবা, পরিচিত লোকজন , পন্ডিত ,মৌলভী , পাদ্রী ইত‍্যাদী মানুষ জন তিল তিল করে আপনার মনে ধীরে ধীরে ঈশ্বর সম্পর্কে একটি ধারণা বোধ তৈরি করেছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে আপনার অজান্তেই।
অর্থাৎ যে ধর্ম  ও যার মান‍্যতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে আপনি লড়াই ঝগড়া করেন এমনকি অন‍্যকে মারতে পর্যন্ত তৈরী থাকেন , সেটা আদৌ আপনার নয় । সেই ধর্ম আপনি নিয়ে জন্ম নেন নি। আপনি তো পৃথিবীর অজস্র প্রাণীদের মতো শুধুই একটি মানব শিশু রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

আপনি ঈশ্বর কে এই জন্য মানেন ,কোন একজন বহুবছর আগে ঈশ্বর কে দেখেছিলেন অথবা কোন বিশেষ বইতে ঈশ্বরের কথা লেখা আছে।
আমি একথা বলবো না ঈশ্বর নেই।
কিন্তু আমি একথা বলবো আপনি সমস্ত ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছেন। যদি কখনো কোন মানুষ ঈশ্বরের দর্শন করে থাকেন তবে তা আপনি ও করতে পারেন। যে ক্ষমতা ওনার মধ্যে ছিল , সেই একই ক্ষমতা আপনার মধ্যে ও আছে। কারণ আপনি ও একজন মানুষ।
সত্যি কে কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না। সত্যি কে শুধুমাত্র জানার ইচ্ছা রাখতে হয়।
আপনি যদি মানেন ঈশ্বর আছে , তবে সেটা বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভূল।কারণ আপনি ঈশ্বর কে দেখেননি।
আবার বিজ্ঞান যদি আপনাকে বলে ঈশ্বর নেই , তবে সেটাও ভূল।কারণ বিজ্ঞান এখনো পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি যার  সাহায্যে বলা যায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।

তাহলে আসল সত্য কি?
আসুন একটু সবকিছু আগাগোড়া বিশ্লেষণ করে দেখি।

ঈশ্বর আছে না নেই এই সত্য যদি আপনি জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে  সন্ধানী বনুন। ধর্ম ও বিজ্ঞান উভয় দিক থেকেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।
ঈশ্বরের কথা ভাবলেই আপনার চোখের সামনে এক মহা শক্তিশালী কোন কিছুর কথা মনে হয়।যে আমাদের ভালো কাজের পুরস্কার দেয় ও খারাপ কাজের শাস্তি প্রদান করে।
কিন্তু আমাদের এই ধারণা আমাদের নিজেদের তৈরী নয়।অন‍্যের ধারণা দ্বারা প্রভাবিত।
যখন আমরা জন্ম নিই এবং বড় হতে থাকি তখন আমরা মানুষের দ্বারা সৃষ্ট নয় এমন অনেক কিছুর সাথেই পরিচিত হই।যেমন গাছপালা, পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, জীবজন্তু, আকাশ ইত‍্যাদী। আমরা ভাবি যেহেতু এগুলো কোন মানুষ সৃষ্টি করে নি , তাহলে যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন তিনি নিশ্চয়ই খুব শক্তিশালী । তিনি ঈশ্বর। তাকে আমরা গড,কৃষ্ণ, আল্লাহ,জিহোভা এইসব নাম প্রদান করে থাকি। যখন আমরা তার ছবির কল্পনা করি তখন তাকে আমরা নিজেদের রূপ প্রদান করি। এই কারণেই দেখা যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এক এক প্রজাতির মানুষ তাদের নিজেদের মতো ঈশ্বরের রূপ দিয়েছেন। আফ্রিকার নিগ্রো দের ঈশ্বর তাদের মতো ই দেখতে। আবার শেতাঙ্গ দের ঈশ্বর শেতাঙ্গ হয়। আবার ভারতীয় দের ঈশ্বরের মুখ ভারতীয় হয় , চাইনিজ হয় না। চাইনিজ দের ঈশ্বর চাইনিজ হয়।
আমার তো মনে হয় ঈশ্বর আমাদের রূপ দিয়েছেন কিনা জানিনা, তবে ঈশ্বর কে আমরা আমাদের রূপ দিয়েছি।
দুনিয়া য় কিছু ধর্ম আছে যারা ঈশ্বর মানে না। আবার কিছু ধর্ম আছে যারা  ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে। কিছু ধর্ম ঈশ্বরের রূপ কল্পনা করে, কিছু বলে ঈশ্বর নিরাকার।
কোনটি ঠিক আর কোনটা বেঠিক একথা ভাবতে ভাবতে মাথা গুলিয়ে যায়।
আমার তো মনে হয় সবকটি ধর্ম অর্ধসত্য অথবা মিথ্যা ধারণা সৃষ্টি করছে ।
এবার আসি স্বর্গ ও নরকের কথায়।
আপনি পরীক্ষা য় ভালো রেজাল্ট করলে আপনার মা বাবা খুশি হন, পুরস্কার দেন। আবার রেজাল্ট খারাপ হলে আপনি বকা খান কখনো কখনো মার খান। আপনি মার খেতে ভয় পান তাই আপনি চেষ্টা করেন যাতে পরীক্ষা র রেজাল্ট খারাপ না হয়।
এই ধারণা অনেকটা স্বর্গ নরকের ধারণা র সঙ্গে মিল খায়।
আমাদের ধর্ম গুলো আমাদের শেখায় ঈশ্বর আমাদের দিকে সর্বক্ষণ দৃষ্টি দিয়ে আছে। আমরা খারাপ কাজ করলে আমাদের মৃত্যুর পর নরকে পাঠানো হবে। যেটা খুবই ভয়ঙ্কর স্থান। আবার ভালো কাজ করলে আমাদের স্বর্গে পাঠানো হবে , যেটা অতি মনোরম আনন্দময় স্থান।
আগে আমরা অতি বৃষ্টি হলে ভাবতাম ঈশ্বর আমাদের উপর নারাজ হয়েছেন , আবার খরা বা শুখা হলে ও ভাবতাম ঈশ্বর আমাদের উপর নারাজ হয়েছেন।
আজ বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে  আমরা বুঝতে পারছি জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক নেই।
প্রায় সব ধর্ম মনে করে ঈশ্বর এই পৃথিবীর তথা বিশ্বের সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি ধর্মে ঈশ্বরের এই সৃষ্টি আলাদা আলাদা  বর্ণনা দেয়।
কিন্তু আজ বিজ্ঞান আমাদের জানায় যে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে 1400 কোটি বৎসর আগে বিগ ব্যাং এর প্রভাবে।
কেউ কেউ বলে বিগ ব্যাং কখনো ঘটেনি।কারণ এই ঘটনার কোন প্রমাণ নেই।
কিন্তু এই কথা ভূল। আসলে বিগ ব্যাং এর প্রমাণ 'কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব‍্যাকগ্রাউন্ডের’ রূপে উপস্থিত আছে।
বিজ্ঞান একথা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারে বিগ ব্যাং অবশ্যই ঘটেছে। কিন্তু আজো বিজ্ঞান বলতে পারে নি বিগ ব্যাং কেন ঘটেছিল।
বিজ্ঞান বলে যে বিগ ব্যাং এর আগে কিছু ই ছিলো না ।আর এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটা বালির কণার থেকেও ছোট ছিলো।
যাকে বলা হয় সিংগুলারিটি। যেটা বিরাট স্পেসে বিন্দুমাত্র।
এবং সেটা একদিন বিস্ফারিত হয়ে এই বিরাট ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি করেছে। যেটা আবার বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ও অসম্ভব। এটা পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মেও অসম্ভব।
থার্মোডাইনামিক্স এর সুত্র বলে ‘something comes nothing’। তাহলে বিগ ব্যাং কিভাবে হলো।বিগ ব্যাং কে কি কেউ তৈরী করলো যাকে আমরা ঈশ্বর বলি।এর জবাব আপাতত বিজ্ঞানের কাছেও নেই। তবে বিজ্ঞানে আস্থাশীল রা বলে বিজ্ঞান একদিন এর ব‍্যাখ‍্যা দেবে।আর ঈশ্বরে আস্থাশীল রা বলে ঈশ্বর বিগ ব্যাং সৃষ্টি করেছেন।
ঈশ্বরে বিশ্বাসী লোকজন বলে প্রাকৃতিক জটিলতা ঈশ্বরের প্রমাণ। পৃথিবীর আকার গুরুত্ব আকর্ষণ একদম সঠিক তাই পৃথিবীর চারিদিকে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দ্বারা তৈরী বায়ুমণ্ডল দেখা যায়। পৃথিবীর আকার যদি ছোট হতো তবে মঙ্গল গ্রহের মতো বাযু়ূমন্ডল  উবে যেত। আবার পৃথিবীর আকার যদি বৃহস্পতির মতো বড়ো হতো তবে হাইড্রোজেন বেড়ে যেত। পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম নেওয়া অসম্ভব হতো। কেবলমাত্র পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যার সূর্য হতে সঠিক দূরত্ব, সঠিক আকার , সঠিক গুরুত্ব আকর্ষণ পৃথিবীর মানব , গাছপালা,ও অন্যান্য জীবনের জন্য সঠিক গ‍্যাসের মিশ্রিত বায়ুমণ্ডল তৈরী করেছে।
সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ও সঠিক । এই সঠিক দূরত্বে র কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা -30° থেকে 120° র মধ্যে ওঠানামা করে।
যদি পৃথিবীর দূরত্ব সূর্যের থেকে আরো কিছু বেশি হতো তবে পৃথিবী থান্ডায় জমে যেত।আর দূরত্ব যদি আরো কিছু কম হতো তবে প্রচন্ড উত্তাপে  সব কিছু জ্বলে যেতো। উভয় ক্ষেত্রেই পৃথিবীতে জীবন সৃষ্টি হতো না।
পৃথিবী প্রতিদিন সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে সূর্যের চারদিকে ঘোরে।ঘোরার সময় নিজের চারিদিকে পাক খেয়ে ভূ পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বজায় রাখে।
পৃথিবীর গুরুত্ব আকর্ষণের কারণে চাঁদের দূরত্ব পৃথিবী হতে সঠিক। সেজন্য পৃথিবীর  মহাসাগর গুলিতে চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার ভাটা হয়। এজন্য সমুদ্রের জল এক জায়গায় থেমে থাকে না। আবার জলের নড়াচড়া র কারণে মহাদেশ গুলির ওপর উঠে যায় না।আর জোয়ার ভাটা সমুদ্রের ইকো সিষ্টেম বজায় রাখে। এই গ্রহে উপযুক্ত পরিমাণ জল মজুত আছে যা জীবন সৃষ্টির পক্ষে জরুরী।
এই সব কেবল মাত্র একটা সংযোগ হতে পারে না। এই সব কেউ বানিয়েছে।
কিন্তু বিজ্ঞান মনে করে এইসব কেবলমাত্র এক সংযোগের ফল।
পৃথিবী কেবলমাত্র এমন গ্রহ নয় যাতে এই সংযোগ ঘটেছে।
আমরা বর্তমানে স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে বেশ কিছু গ্রহ আবিষ্কার  করেছি যাতে জীবন ধারণের উপযুক্ত  পরিবেশ আছে। এমনকি জল আছে। বিজ্ঞান এখনো সেই সব গ্রহে যেতে পারে নি , কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে সেই সব গ্রহে যাবার আশা রাখে।
বাইবেল ও কোরান শরীফ এর মতে সব মানুষ ও জানোয়ার একই সাথে সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু আজ আমরা জানি তা নয় । চার্লস ডারউইনের সিদ্ধান্ত কে আপনি মানেন বা না মানেন, একথা তো ঠিক মানুষের জন্মের বহু আগে ডাইনোসর সৃষ্টি হয়েছিল। এবং সময়ের সাথে সাথেই তা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনো ডাইনোসরের জীবাশ্ম বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়।
এখন একটা প্রশ্ন কোন ধর্মীয় বইতে (বাইবেল, কোরআন,গীতা )তার  উল্লেখ নেই কেন। যেখানে ঐ বই গুলো পুরো সৃষ্টির রহস্য র বর্ণনা দেয়। সেক্ষেত্রে ডাইনোসরের ব‍্যাপারটা এই আশমানি কিতাব গুলিতে কিছু না উল্লেখ করাটা এক বিশাল ব্লান্ডার।এর একটাই ব‍্যাখ‍্যা হয় । ধর্ম গুলো দাবি করে এই বইগুলো স্বয়ং ঈশ্বর প্রেরিত বা ঈশ্বর সৃষ্ট। কিন্তু আসলে তা নয় এগুলো সম্পূর্ণ ভাবে মানুষ সৃষ্ট ।আর যখন এগুলো সৃষ্ট হয়েছিল তখন ডারউইন তত্ত্ব ও ডাইনোসর ইত‍্যাদীর কথা মানুষ জানতো না।
প্রশ্ন এটাও যে ঈশ্বর সবাইকে দর্শন কেন দেয় না। ইতিহাস বলে যে ঈশ্বর নাকি কেবল নির্দিষ্ট কিছু লোক কেই দর্শন দিয়েছেন। কিন্তু এমন ভেদ ভাব কেন এই প্রশ্ন কি কখনো মনের মধ্যে উঠিয়েছেন ?
তিনি যদি চান যে সব মানুষ তার দেখানো পথে চলুক তবে তার তো উচিত সবাইকে সরাসরি দর্শন দিয়ে বা কোন পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিয়ে মানুষ কে তার পথে চলতে বাধ্য করা।
আধুনিক যুগে অনেকেই আমাদের মস্তিষ্কে র জটিলতা  ও ডি এন এ কে ঈশ্বরের সঙ্কেত বলে মানেন।
কম্পিউটারে সঙ্কেত যেমন 0 ও 1 এই ক্রমে বর্তমান তেমনি আমাদের DNA তে চারটি কেমিক্যাল A,T,G,C এক বিশেষ ক্রমে উপস্থিত হয়ে থাকে।
কোষ কেমন ভাবে কাজ করবে তা নির্ভর করে ঐ কেমিক্যাল গুলো কোন ক্রমে উপস্থিত আছে তার উপর।
মানুষের নিরানব্বই শতাংশ  ডি এন এ প্রায় একই রকমের হয় । তবে আমরা প্রত‍্যেকে একে অপরের থেকে আলাদা হই মাত্র এক শতাংশ আলাদা ডি এন এর জন্য।
মানব চেতনা,নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স ও আত্মার ব‍্যাপারে বিজ্ঞান এখনো কিছু নিশ্চিত করে বলতে পারে নি।
বিজ্ঞান বলে যে এই ব্রহ্মাণ্ড পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী চলে। কিন্তু যারা ঈশ্বর মানেন তারা বলেন এই নিয়ম বানালো কে? কেনই বা সব কিছু এই নিয়ম মেনেই চলে ? কেনই বা কোন কিছুই আলোর গতিবেগ কে অতিক্রম করতে পারে না?
বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান অনেক উন্নতি সাধন করেছে।এমন অনেক কিছুই বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যেগুলো কিছুদিন আগে পর্যন্ত ঈশ্বরের চমৎকার হিসেবে দেখা হতো।
এখনো অনেক অজানা রয়েছে যার উত্তর বিজ্ঞান এখনো দিতে পারে নি।
কিন্তু তার মানে এই যে এসব ঈশ্বরের শক্তি তে হচ্ছে ?
না ।
এর মানে এই যে বিজ্ঞান এখনো এতটা বিকশিত হয় নি যে ঐ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
যদি ঈশ্বর এই দুনিয়ায় বর্তমান আছেন তবে তিনি নরসংহার কে শেষ করে দেয় না কেন ?
কেনই বা ঈশ্বর শিশু হত‍্যা বন্ধ করতে পারেন না ?
ঈশ্বর কোথায় থাকেন যখন তার বানানো লোকজন তার নাম নিয়ে অন‍্য জনদের নির্মম ভাবে হত‍্যা করেন ।
সেই সময় ঈশ্বর কোথায় ছিলেন যখন অ‍্যাটম বম্ব ফেলা হয়েছিল। তিনি কোথায় যখন সিরিয়া র মানুষ প্রাণ হাতে করে ঘোরাঘুরি করছে।
আপনাদের মধ্যে কেউ বলবেন যে আজ যাদের সাথে অন‍্যায় হচ্ছে তারা তাদের কর্মফল ভোগ করছেন। কিন্তু বলুন তো ছোট্ট শিশু রা যাদের বয়স তিন বা চার তারা কি পাপ করেছে ?
এখন হয়তো আপনি বলবেন এগুলো তাদের পূর্ব জন্মের পাপের ফল।
তবে কি জানবো আমাদের ঈশ্বর এতটা শক্তি শালী নয় যে আপনার পাপের ফল আপনাকে এই জন্মেই দিতে পারে।
আমাদের ধর্ম আমাদের ঈশ্বর সব জায়গাতেই উপস্থিত। এমনকি আমাদের ভিতরে। তবে আমরা তাকে মন্দির, মসজিদ, চার্চ,গুরুদ্বারে সব জায়গাতেই খুঁজে বেড়াই কেন ?
মানুষ এক হিংস্র প্রাণী।একে সামলানো সহজ নয়। তাই মানুষের মধ্যে কিছু উন্নত বুদ্ধি র লোক ধর্মের সৃষ্টি করেছিল যাতে ধর্মের নামে মানুষের হিংসা কে বশে রাখা সম্ভব হয়।
এবং আমার মনে হয় তারা এই কাজে বেশীরভাগ টুকু সফল।
এই জন্য সব ধর্মের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলা হয়েছে।
এই ভাবে দেখলে আজকেও ঈশ্বর আমাদের খুবই প্রয়োজন।
এখন আমি আমাদের পুরনো প্রশ্ন তে ফেরত আসি । ঈশ্বরের অস্তিত্ব কি আছে ?
আমার উত্তর জানি না।
ঈশ্বর আছে কিনা এ প্রশ্ন যুগ যুগ ধরে মানুষ তুলবে , উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবে । কোন কিছুই অন্ধের মতো বিশ্বাস করে নেওয়া উচিত নয়। বরং তাকে বিশ্বাস করার আগে বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধি মানের কাজ। এই লেখার উদ্দেশ্য কোন ধর্ম বা জাতি বা সম্প্রদায়কে ছোট করা নয়। বরং সব কিছু নিংড়ে প্রকৃত সত্য উন্মোচিত করা।

Wednesday, February 14, 2018

জীবনের দেনা পাওনা।

        শ্রদ্ধাঞ্জলি
___________________
জীবনের দেনা পাওনা।
সুরধনীর তীরে এসে বসলে মনটা কেমন হালকা হয়ে যায়।কলকল রব করে বয়ে চলা জলস্রোত, মিষ্টি বাতাসের স্পর্শের স্নিগ্ধতা কেমন যেন এলোমেলো করে দেয় সবকিছু।
আজকের আমি পরিপূর্ণ। মনে পড়ে যায় ,একদিন যে আমি সকলের স্নেহ বা দয়ার পাত্র ছিলাম আজ সেই আমি সকলের কাছেই সফল বলে পরিচিত।
কেউ কখনো জানতে চায়নি এই চোখ ধাঁধানো সফলতার জন্য কতটা মূল্য আমায় দিতে হয়েছে। কখনো নিজেই অন্তরে অন্তরে তূল‍্যমূল‍্য বিচার করে দেখি কতটা হারিয়েছি ,আর কতটা পেয়েছি। হিসাব মেলাতে পারিনা।জানি হিসাব কখনো মিলবে না।মহাকাল যেমন অনেক কিছু কেড়ে নেয় আবার সময় হলে আপনার পাওয়ার ঝুলি  উপচে পড়ে। স্মৃতি গুলো ভিড় করে আসে মনে ….।

রাতের বেলা খেতে বসেছি, আমি ও দাদা একসাথে।মা খাবার বেড়ে  দিচ্ছেন। গরীবের সংসার। প্রতিদিন যে খাবার জুটবেই এমন নিশ্চয়তা ছিল না।
যাই হোক মা খেতে দিয়েছেন।ডাল ও রুটি।  তখন তাই মনে হতো অমৃত। সবে দু এক গ্রাস মুখে দিয়েছি।মা আচমকা প্রশ্ন করলো , “তুই কি ঐ মেয়েটার সাথে সম্পর্ক ত‍্যাগ করবি ?”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম , “কোন মেয়েটা বলতো ?”
মা বললো, “পুস্প।”
আমি বললাম , “মা আমি তোমাকে আগেও বলেছি , আবার বলেছি, পুস্পর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।ওর সাথে আমার শুধুই শিক্ষক ও ছাত্রীর সম্পর্ক।”
মা বললেন, “তুই ওদের বাড়ি ছেড়ে দে।”
আমি বললাম, “তুমি জানো এখানে আমার পড়াশোনা র অসুবিধা। তাছাড়া যদি আমি  ওদের বাড়ি ছেড়ে দিই তাহলে তোমার অন‍্যায়  দাবি কে মান‍্যতা দেওয়া হয়। আমি হলপ করে বলছি পুস্পর সাথে এখনো আমার কোন সম্পর্ক তৈরি হয় নি।তবে ভবিষ্যতে যদি তৈরী ও হয় তার মধ্যে আমি খারাপ কিছু দেখি না। আমি ওদের বাড়ি ছেড়ে আসবো না।”
আমার কথা শুনে মায়ের মুখটা থমথমে হয়ে গেল। এরপর মা যেটা করলো , আমি সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।জানি না পৃথিবীর কোন মা তার সন্তানের সাথে এমন আচরণ করেছে কিনা। মা আমার খবারের থালাটি টেনে সরিয়ে নিয়ে বললো, “ঐ মেয়েটার সাথে সম্পর্ক রাখলে আমার এখানে খাওয়া বন্ধ। নিজের ব‍্যবস্থা নিজেই করে নাও।”

আমি কয়েকটা মূহুর্ত স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।  
তারপর সোজা উঠে চলে এলাম আমার ঘরে। দাদা পিছন পিছন এসে আমায় বললো , “শোন, মায়ের কথায় কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মায়ের রাগ হয়তো দেখবি কালকের মধ্যেই গলে জল হয়ে যাবে।”
আমি বললাম , “না দাদা, মা যখন বলেছে , নিজের ব‍্যবস্থা নিজেই করে নিতে , তবে আমি তাই করবো। তুমি শুধু এটুকু দেখো মায়ের যেন কোন অযত্ন না হয়।আর হ‍্যাঁ , যে কোন ব‍্যাপারে আমি যেমন তোমার পাশে ছিলাম, তেমনি থাকবো।”
তারপরে ও দাদা কয়েকবার আমায় বোঝাতে এসেছিল কিন্তু আমি আর ওদের বোঝা হতে চাই নি।

ঘটনা র সুত্রপাত, প্রায় একবছর আগে।
বাবার মৃত্যুর পর আমি মা ও দাদা দেশ ছেড়ে চলে এলাম। দেশে র আত্মীয়-স্বজন এমন পরিস্থিতি তৈরী করলো যে ভিটে মাটি সব কিছু ছেড়ে চলে এলাম এই মফস্বলে।টালির চালের এক কামরা ভাড়া বাড়ি । আট ফুট বাই দশ ফুট ঘর। তার ভাড়া মাসে পঞ্চাশ টাকা। দাদার অল্প রোজগারে তিনজনে খেয়ে ঐ টুকু টাকা ভাড়া জোটাতে হিমসিম খাওয়ার জোগাড়। তবু ঐ ছোট্ট ঘরটিতে ই কোনো রকমে দিন গুজরান হতে লাগলো আমাদের।
দেশ থেকে আসার সময় আমি এনেছিলাম একটা পায়জামা, একটা জামা আর একটা হাওয়াই চটি।
দাদারো সম্বল একই রকমের। সীমিত পোশাক দুজনে ভাগাভাগি করে পড়তাম। আমার ছিলো পড়াশোনা র ইচ্ছা। পড়াশোনায় আমি চিরকালই মেধাবী ছিলাম।গরীব বলে স্কুল ফি লাগতো না। বইপত্র প্রায় কিছুই ছিলো না।এর ওর থেকে চেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
মদ মাতালে পাড়া। অশিক্ষিত জন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের বসবাস। শিক্ষা দীক্ষা র চর্চা প্রায় নেই বললেই চলে।
পড়াশোনার  খুবই অসুবিধা হতো। আমাদের ভাড়া বাড়ীর পাশেই অসীমাদি। খুবই ভালো বাসতেন আমায়। পড়াশোনা খুব পছন্দ করতেন। একদিন উনি আমাদের বাড়িতে এসে পরামর্শ দিলেন কয়েকটি বাড়ীর পরে ঈশ্বরদার সাথে কথা বলতে। ঈশ্বর দার বাড়ীর ভাড়াটিয়া উঠে গিয়েছে। ওদের ঐ ঘরটি আমাদের বর্তমান ভাড়া বাড়ীর থেকে বড়। তাছাড়া আলাদা একটা বাথরুম।আর রান্না বান্না করার জন্য একফালি বারান্দা।
দাদা বললো, “ভাড়া নিশ্চয়ই অনেক হবে।”
অসীমাদি বললেন, “ একবার কথা বলেই দেখো না।”
কয়েকদিন পর এক সন্ধ্যায় দাদা আমায় পাঠালো কথা বলার জন্য। বৃষ্টি হচ্ছিল।ছাতা মাথায়  টুকটুক করে গিয়ে কড়া নারলাম ঈশ্বরদার বাড়িতে।
দরজা খুলে দিল পুষ্প। বললাম , “বাবা বাড়িতে আছেন ?”
পুষ্প পিছনদিকে মুখ করে ডাকলো , “বাবা, তোমায় একজন ডাকছেন।”
আমি যদিও পুষ্পকে নাম ধরে চিনতাম। কিন্তু ও আমায় চিনতো না।এটাই স্বাভাবিক। একটা গরীব , রোগাটে প‍্যাংলা ছেলেকে না চেনাই স্বাভাবিক।
সকলের অবজ্ঞা আমার কাছে খুব স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। পুষ্প র বাবা দরজার কাছে এসে আমায় দেখে বললেন , “আপনি ?”
আমি বললাম  “আমরা পাশেই ভাড়া থাকি। শুনলাম আপনার একটি খালি ঘর আছে , যদি ভাড়া দেন।


পুষ্প র বাবা ছাপোষা মানুষ।আমায় ঘরে নিয়ে গিয়ে চা খাওয়ালেন।যে ঘরটি ভাড়া দেবেন সেটা হ‍্যারিকেন নিয়ে গিয়ে আমায় দেখালেন। দেখলাম বড়সড় ঘর। বুঝলাম বেশ ভালই ভাড়া হবে। উনি ঘর দেখিয়ে বললেন ,  “আপনার পছন্দ হয়েছে ?”
আমি বললাম , “আমায় তুমি বলুন। আমি আপনার থেকে কতো ছোট। আপনার ঘর তো পছন্দ । কিন্তু এর ভাড়া তো আমরা দিতে পারবো না।”
ঈশ্বর বাবু বললেন , “দেখুন ভাড়া বড় কথা নয়। সারাদিন কাজের সুত্রে আমায় ঘরের বাইরে থাকতে হয়। আমি চাই একটি ভদ্র শিক্ষিত পরিবার এখানে ভাড়া থাকুক। আপনারা ব্রাহ্মণ। আপনাদের মতো শিক্ষিত পরিবার যদি এখানে থাকে তবে আমি নিশ্চিতভাবে কাজকর্ম করতে পারবো। ঐখানে যে ভাড়া দেন আমাকে তাই দেবেন।”
পরের মাসেই চলে এলাম পুষ্পদের বাড়ী।
ঈশ্বর বাবুর  ছোট সংসার। স্ত্রী ও দুই মেয়ে  । পুষ্প ও সবিতা।
সবিতার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।আর পুষ্পর তখন ক্লাস এইট। চেহারায় একটু নারীসুলভ ভাব এলেও মনের দিক থেকে এখনো শিশু।
আমার দাদা একটি ছোট খাটো কারখানায় কাজ করতো।আর আমি কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি।
নিজের পড়াশোনার খরচ টিউশনি করে যোগাড় করতাম। এই অঞ্চলে শিক্ষিত লোক প্রায় ছিলো না বললেই চলে। ভালো প্রাইভেট টিউটর এর অভাব ছিলো। সেই শূন্যতা আমি আসার পর দূর  হয়ে গেল। ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলে মেয়েরা আমার কাছে ভর্তি হতে লাগলো। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে কয়েকটি ব‍্যাচ পড়াতাম।
বেশ দিন কাটছিলো।
বাড়িতে ছোট বলতে দুজন। আমি আর পুষ্প। দাদা প্রতিদিন ফেরার সময়  হাতে করে দুটি লজেন্স নিয়ে আসতো। একটা আমার, একটা পুষ্পর। পুষ্প র লজেন্স টি হয় পুষ্পর হাতে, নয়তো পুষ্পর মায়ের হাতে দিয়ে দিতাম।  
একদিন দাদা এসে আমার হাতে লজেন্স দিয়েছে । আমি এদিকে ওদিকে পুষ্পকে খূঁজে দেখতে না পেয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘পুষ্পকে দেখলে ?’
মা বললো 'আমাদের বাথরুমে কাপড় কাচছে।’
গিয়ে দেখি তার দুই হাতে সাবান। বললাম 'এই নে তোর লজেন্স।’
পুষ্প বললো , 'আমার দু হাতে সাবান। তুমি মুখে দিয়ে দাও।’
আমি তখন লজেন্স টি খুলে ওর মুখে দিয়ে দিলাম । দাদাও ঐখানে  দাঁড়িয়ে ছিল।মা ঘর থেকে এই ঘটনা টা দেখতে পেয়েছিলো।
মা ছিলো তখনকার দিনের গ্রাম‍্য মহিলা। এই অতি সাধারণ ঘটনা টা তার মনে কি ধারণা সৃষ্টি করলো বলা মুশকিল। স্বামী মারা যাওয়ার পর এই দুই ছেলেই সম্বল। সন্তানের প্রতি মায়ের অধিকার বোধ কোথাও যেন ধাক্কা খেল। মা ভাবলো পুষ্পর প্রেমের জালে আমি জড়িয়ে পড়েছি।
ক্রমাগত সন্দেহ, অবিশ্বাস মাকে ক্রমশ অসুস্থ করে তুললো। মাঝে মাঝেই মা অজ্ঞান হয়ে যেতে লাগলো। সারাদিন সেই এক চিন্তা, ছেলে বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। শেষে এত অশান্তি দেখে দাদা একদিন আমায় ডেকে বললো, 'ভাই ,মা দিনকে দিন আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আরো অশান্তি শুরু করেছে। তারচেয়ে চল , আমরা পুরানো বাড়িতে ভাড়া চলে যাই।’
আমি বললাম, 'দাদা ওখানে একটুখানি জায়গা,তার ওপর পড়াশোনার পরিবেশ নেই। আমি যাবো না । আমি এখানেই থেকে পড়াশোনা করবো। তুমি যদি চাও তো মাকে নিয়ে ওখানে যেতে পার।’
সেইমতো দাদা মাকে নিয়ে ঐবাড়িতে উঠে গেল। আমি প্রতিদিন দুইবেলা ঐ বাড়িতে খেতে যেতাম।
কিন্তু তাতেও মায়ের চিন্তা দুর হয়নি। অবশেষে এক দিন দুপুরে মা খেতে না দিয়ে আমায় তাড়িয়ে দিল।

নিজের ঘরে এসে কাঁদতে লাগলাম। তারপর ভাবলাম না মায়ের এই অন‍্যায় অযৌক্তিক দাবি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। নিজের ব‍্যবস্থা নিজেই করবো।

শুরু হলো জীবন সংগ্রাম। কোন দিন খাওয়া জোটে। কোনদিন জোটে না। সকাল বিকাল বেশ কতগুলো ব‍্যাচ ছাত্র ছাত্রী পড়াই। কিন্তু বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী ছিল গরীব দুঃস্থ পরিবার হতে। নিজেরাই ঠিক মতো খেতে পায় না,আমায় মাস মাইনে দেবে কি করে ?
ইতিমধ্যে একটা ব‍্যাপার ঘটে গেছে।পুস্প মাঝে মাঝে আমার কাছে পড়াশোনার অসুবিধা হলে  পড়াশোনা দেখে নিতো। কারণ ওর প্রাইভেট টিউটর রোজ আসতো না। শেষে একদিন ওর বাবা বিরক্ত হয়ে আমায় বললো, তুমি ই বরং আমার মেয়েটার পড়াশোনার ভার নাও। তার বদলে তুমি আমার যে ঘরটিতে ভাড়া আছো তার ভাড়া দিতে হবে না।
আমার সব ছাত্র ছাত্রী রা ছিল গরীব ঘর থেকে। অধিকাংশ ই মাসমাইনে দিতে পারতো না।সে কারণে রোজ খাবার জোটার নিশ্চয়তা ছিল না। কোন কোন সময় ছাত্রছাত্রী রা তাদের ঘর থেকেই কিছু খাবার আমার জন্য নিয়ে আসতো।
একদিন সকালে সবাই পড়াশোনা করে চলে যাবার পর একা বিছানায় বসে আছি, হঠাৎ খুব কান্না পেল। ভাবতে লাগলাম , পৃথিবীর যত দু্ঃখ আমাকে গ্রাস করেছে। এই জীবনে কিছু মাত্র সুখের সন্ধান পেলাম না। কখন যে চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই টস্ টস্ করে জল ঝর়ছিলো  জানি না। ইতিমধ্যে পুস্প কখন ঘরে ঢুকে আমায় কাঁদতে দেখে ওর মাকে ডেকে এনেছে। ছোটমা আমার কাছে এসে আমার মাথাটা বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলল, 'তুমি কাঁদছো কেন? আমি তো তোমার মায়ের মতো। তোমার এখন সময় টা খারাপ যাচ্ছে।এটি সাময়িক। আবার দেখবে তোমার মা তোমায় কাছে টেনে নেবে।আর আজ থেকে তুমি রান্না করে খাবে না। আমাদের সাথেই খাবে। যখন তোমার অবস্থা ভালো হবে , তখন তুমি আমায় টাকা ফেরত দিও। আমি নিশ্চয়ই নেব।’
এরপর..
পুস্পদের বাড়ি তেই খাওয়া দাওয়া করতাম।পুস্প রোজ আমার কাছে পড়তে আসতো।এমনি আসা যাওয়ার মাঝে কখন যেন দুটি মন এক হয়ে গেল।এক অসহ্য ছটফটানি ছিল পরস্পরের সান্নিধ্যে থাকার।
ওদিকে দাদার বিয়ে ঠিক হলো। মা আর দাদা একটা ঘরেই ওপরে ও নিচে বিছানা করে শুত। এখন দাদার বিয়ে ঠিক হওয়ায় মা ঠিক করলো আমার কাছে এসে থাকবে। আমি মাকে ডেকে পরিস্কার বললাম , 'ভালো করে শুনে নাও, এই ঘরটা আমি পুস্পকে পড়াই বলে বিনামূল্যে থাকতে পাই। আর ভবিষ্যতে ঐ পুস্পকেই বিয়ে করবো। সুতরাং সব জেনে বুঝে যদি আমার কাছে থাকতে চাও তো , থাকতে পারো।’
মা এখন দেখলাম এই শর্তেই রাজী হলো।
দেখতে দেখতে দাদার বিয়ে হলো। বৌদি ঘরে এলো। সংসার আবার গড়গড়িয়ে চলতে লাগল। কিন্তু তখন কি জানতাম অদূর ভবিষ্যতে আমার জীবনে কি ভয়ঙ্কর কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে।
বৌদির সাথে আমার সম্পর্ক ছিল ছোট ভাইয়ের মতো। কিন্তু বৌদি আমার ও পুস্পর সম্পর্ক টা মেনে নিতে পারে নি। মুখে কিছু বলতো না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা প‍্যাঁচ কষতে লাগলো। আসলে বৌদির ইচ্ছা ছিলো তার আইবুড়ো বোনটিকে আমার ঘাড়ে চাপানোর। সেই উদ্দেশ্যে বৌদি ধীরে ধীরে বাড়ির সকলের কানে একটু একটু বিষ ঢালতে লাগল।মা ইতিমধ্যে পুস্পকে পছন্দ করছে তাই মায়ের কাছে সুবিধা করতে পারেনি। তাই বৌদি তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য টার্গেট করলো ঈশ্বর বাবুকে। ঠিক কি কি বৌদি ঈশ্বর বাবুকে বলেছিল তা আজো জানি না। ঈশ্বর বাবু আমার ও পুস্পর সম্পর্কের কথা জানতেন। একপ্রকার মেনেও নিয়েছিলেন।
কিন্তু যেখানে মানুষের ভাবনা শেষ হয় , সেখান হতে ঈশ্বরের ভাবনা শুরু হয়।
ইতিমধ্যে পুস্প মাধ‍্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। হঠাৎ একদিন আমার কাছে এসে বললো , 'কয়েকদিন থাকবো না। দিদির বাড়ি যাবো।’
আমি বললাম , 'যাও।দেখো সেখানে সুখের সাগরে ভেসে আমার মতো দীনজন কে ভুলে যেও না।’
পুস্প হাসলো।পুস্পর হাসিটা ভারি মিষ্টি। হাসলে গালে খুব সুন্দর টোল পড়ে।পুস্প হেসে বলল , 'যাও, তোমার সবটাতেই ইয়ার্কি।’
আমি কি ছাই জানতাম এই হাসিই আমার দেখা পুস্পর শেষ হাসি।
পুস্প যাওয়ার পর বেশ কয়েকটি দিন কেটে গেলো।পুস্প এলো না। কয়েকটি সপ্তাহ কেটে গেল পুস্প এলো না। একদিন অধৈর্য হয়ে ছোটমাকে প্রশ্ন করলাম , ‘পুস্প কবে ফিরবে ?’
ছোটমা গম্ভীর হয়ে জবাব দিলো, 'সে আর ফিরবে না।সে তোমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চায় না।’
আমি বললাম, 'আমি বিশ্বাস করি না।’
এরপর পুস্পর সন্ধানে এদুয়ার ওদুয়ার দৌড়াদৌড়ি। কিন্তু কোনো লাভ হলো না।ওর দিদির বাড়িতে একদিন গেলাম। না পুস্প সেখানেও নেই।
শেষে এক বন্ধুর পরামর্শে থানায় অভিযোগ করলাম যে পুস্পর সাথে আমার প্রেম আছে তাই পুস্পর বাবা ঈশ্বর বাবু পুস্পকে কোথাও জোর করে আটকে রেখেছেন। শেষে পুলিশের মধ‍্যস্থতায় স্থির হলো ঈশ্বর বাবু পুস্পকে থানায় নিয়ে আসবে। সেখানে পুস্প বলবে আমায় আদৌ ভালোবাসে কিনা।
সেইমতো এক রবিবার পুস্পর বাবা পুস্পকে নিয়ে থানায় এলো।সাথে একগাদা লোকজন। আমি বললাম ‘এতো লোকজনের কি প্রয়োজন? এটা একটা মেয়ের পার্সোনাল ব‍্যাপার। শুধু আমি, ঈশ্বর বাবু,থানার তরফে একজন আর পুস্প থাকলেই হবে।’
কিন্তু ঈশ্বর বাবু  সকলের সামনেই পুস্পকে কথা বলতে বাধ্য করলেন। এতটা সময়ের মধ্যেই পুস্প একবারের জন্যেও আমার চোখের দিকে তাকায় নি। মাটির দিকে চেয়ে কোনরকমে অস্ফুট স্বরে বলল , “আগে ভালো বাসতাম। এখন বাসি না।”
আমি বললাম ‘আর কিছু শোনার আমার প্রয়োজন নেই।’
পুস্পকে ওর লোকেরা যখন নিয়ে চলে যাচ্ছে , তখন ঈশ্বর বাবু বললেন, 'তাহলে পুস্পর লেখা চিঠিপত্র আর ছবিগুলো ফেরত দাও’।পুস্প তখন একটু পা বাড়িয়েছে। এই কথাটা শোনা মাত্রই ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর বাবার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, “তুমি যা চেয়েছিলে তা বলেছি। আর কোন কিছু তুমি চাইবে না।”
তারপর আমার দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে বলল “এই শোন, তুমি যদি আমায় ভালবাসো তবে একটা কিছু ফেরত দেবে না।”
এই আমার  পুস্পর সাথে শেষ দেখা। ঈশ্বর বাবুকেও বেশি দিন পুস্পকে আটকে রাখতে হয় নি।
কয়েকদিন পরে খবর পেয়েছিলাম এক রাতে হতভাগীটা বিষ ভেবে অমৃত খেয়ে অমৃতলোকে নিজের স্থান করে নিয়েছে।
আর আমাকে তার প্রেমের চিরঋণী করে গেছে।
একে একে সবাই চলে গেছে। মা, দাদা, বৌদি ...সবাই। আমি হতভাগা পড়ে আছি স্মৃতির সম্বল বুকে নিয়ে।
জানিনা আরো কত দিন এ বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে।
     (শেষ)।

Thursday, February 1, 2018

বাংলা কল্পবিজ্ঞান - মহাশূন্যের পথিক (প্রথম,মধ‍্যম ও অন্তিম পর্ব একত্রে )

বাংলা কল্পবিজ্ঞান - মহাশূন্যের পথিক (প্রথম,মধ‍্যম ও অন্তিম পর্ব একত্রে)

কল্প বিজ্ঞানের গল্প - মহাশূন্যের পথিক -প্রথমে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। আমি স্লিপিং চেম্বারের বাইরে আসতে , একটা যান্ত্রিক গলায় শুনতে পেলাম “ওয়েলকাম , কমান্ডার রাহুল বসু।”
যার কাছ থেকে আওয়াজ টি এলো , লেখকএবারে সে এগিয়ে এলো । অবশ্য এগিয়ে এলো ঠিকই, কিন্তু হেঁটে নয়, বরং অ‍্যান্টিগ্র‍্যাভিটি রশ্মির সাহায্যে উড়ে।
সে মানুষ নয় ।সে এই 'নিউটন 2350’ মহাকাশ যানের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মচারী ,এক রোবট।নাম 'আইনষ্টাইন’ ওরফে 'আই’।
'আই’  এগিয়ে এসে আমায় রিপোর্ট করলো “এভরিথিং ওকে। মহাকাশযান 'নিউটন 2350’ এখনো অতি আলোক গতিতে লক্ষ্যবস্তু 'নোভা’র দিকে এগিয়ে চলেছে। লক্ষ্য বস্তু এখনো 0.5 আলোকবর্ষ দূরে। অবিলম্বে মহাকাশযানের গতি কমিয়ে  আলোর নব্বই শতাংশ গতিতে আনা উচিত।”
আমি বললাম “ধন্যবাদ তোমায় ‘আই’। এবারে অটোমেটিক কন্ট্রোল থেকে ম‍্যানুয়াল কন্ট্রোল নেব । তবে সবার আগে তুমি জানাও  ক‍্যাপটেন রোশনি তার স্লিপিং চেম্বার থেকে উঠেছেন কিনা।”
এবারে ‘আই’ পুনরায় বলল , “ক‍্যাপটেন রোশনির ঘুম ভেঙেছে। তিনি অতি শীঘ্রই আপনার সাথে যোগ দেবেন।”
এই সব কথা বলতে বলতে দেখি ক‍্যাপটেন রোশনি  আমার দিকে এগিয়ে আসছে। টানা ছয় মাস ঘুমোবার পর তাকে আগের চেয়ে বেশি ফ্রেশ ও সুন্দরী লাগছে। মহাকাশযান সৌর জগৎ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরই আমরা ‘অতি আলোক গতি’ সেট করে দিয়ে , পূর্ব নির্ধারিত ব‍্যাবস্থা অনুযায়ী স্লিপিং চেম্বারে ঘুমোতে চলে গিয়েছিলাম।
কারণ আমাদের লক্ষ্য বস্তু 'নোভা’ গ্রহ 432 আলোকবর্ষ দূরে ছিলো।
ক‍্যাপটেন রোশনি কাছে এসে বললো “সুপ্রভাত, কমান্ডার রাহুল।”
আমি ও প্রত্যুত্তরে বললাম “ওয়েলকাম”।
যদিও দুজনেই জানি এই মহাশূন্যে , কোন দিন বা রাত নেই। তবুও পৃথিবীর অভ‍্যাস মতো দেখা হলে সাদর সম্ভাষণ জানানো।
রোশনি বললো , “কমান্ডার , বর্তমান পরিস্থিতি কি যদি একটু বলেন , ভালো হয়।”
আমি বললাম “সব কিছু পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে।আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা 'ছয় মাস ঘুমোবার পর তোমায় আরো সুন্দর লাগছে’ ।”
রোশনি হেসে ফেললো। আসলে ও জানে আমি যতই ইয়ার্কি করি , আসলে কাজের ব‍্যাপারে আমি খুবই সিরিয়াস।
এই মিশনটি  শুধু আমাদের জন্য নয় মানবজাতির পক্ষে ও  গুরুত্বপূর্ণ।
বেশ কয়েক বছর আগে এই 'পোলারিস ৯১৩’  সৌরমণ্ডলের একটি গ্রহ থেকে একটি বার্তা আমাদের বিজ্ঞানী রা পাচ্ছিল।  বিজ্ঞানী রা বার্তাটি ডিকোডিং করার পর অ‍্যানালিসিস করে দেখা যায় এটি অতি উন্নত বুদ্ধিমান কোন জীবের তৈরী। বার্তা টি তে   জানানো হয়েছে  “এটি  ‘নভেরীয়’ নামে এক জাতির পক্ষ থেকে  ব্রহ্মাণ্ডের অন্যান্য উন্নত জীবদের উদ্দেশ্য প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের জানানো হচ্ছে তারা যেন তাদের প্রতিনিধি যত শীঘ্র সম্ভব তাদের গ্রহে প্রেরণ করে। বর্তমানে নভেরীয় জাতি তাদের জ্ঞান ভান্ডার অন‍্য বুদ্ধি মান প্রাণীদের সাথে ভাগ করে নিতে আগ্রহী। যদি উন্নত জীবজগৎ গুলি তাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে চায় তবে অবিলম্বে তাদের কাছে আসা একান্ত জরুরী।”
বার্তাটি এখানেই শেষ হয় নি ।এর পরের অংশ জুড়ে  রয়েছে বিজ্ঞানের কচকচি।  এতদিনে মানুষ অনেক উন্নত হলেও ‘অতি আলোক গতি’ করায়ত্ত করতে পারে নি । সেই কারণে   বহু দূরের আলোকবর্ষে প্রাণ আছে একথা নিশ্চিত রূপে প্রমাণ পেলেও  যোগাযোগ করে উঠতে পারে নি ।
এই বার্তা টি থেকে বিজ্ঞানীরা প্রথম বার 'অতি আলোক গতি’   কিভাবে লাভ করা যায় তার সুত্র খুঁজে পেল।
অবশেষে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী দের সমবেত চেষ্টায় ‘অতি আলোক গতি’  লাভ করলো।
তার পর এই বর্হিঃমহাকাশে এই অভিযান।যার পোশাকি নাম 'নিউটন ২৩৫০’।নভেরীয় জাতি র পক্ষ থেকে বার্তা এসে ছিল তাই ঐ সৌরমণ্ডলের পঞ্চম গ্রহ টি র নাম রাখা হয়েছে 'নোভা’। বার্তা টি নোভা থেকে ই এসেছিল।
এই মহাকাশ কর্মসূচি তে  অংশ নেওয়ার জন্য  সব নভশ্চর দের কাছ থেকেই ঐচ্ছিক আবেদন পত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। ঐচ্ছিক কারণ , এই মিশনটি বহু দূরের উদ্দেশ্যে  । এবং এই যুগে আর কখনো ফিরে আসা যাবে না । কারণ মহাকাশযান ‘অতি আলোক গতিতে’ যাবার জন্য আইনষ্টাইনের ‘জেনারেল রিলেটিভিটি’সুত্র অনুযায়ী সেখানকার সময় ধীর গতিতে চলবে। এবং মহাকাশচারী দের সাপেক্ষে পৃথিবীর সময় অতি দ্রুত চলবে ।ফলে মহাকাশচারী দের সময় যদি মাত্র এক বছর বৃদ্ধি পায় তবে পৃথিবীতে কয়েক শো বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাবে।
রাহুল ও রোশনি একই অ‍্যাকাডেমি তে নভশ্চর হওয়ার ট্রেনিং নিয়ে ছিলো। যদিও রোশনি রাহুলের চেয়ে এক বছরের জুনিয়র ছিলো।
অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় রোশনি রাহুলের কাছে বেশী আকর্ষণীয় ছিলো। রোশনি র সৌন্দর্য ,ব‍্যাক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা,সব কিছুই রাহুলের কাছে ভালো লাগতো।
রাহুল নিজে সব শিক্ষার্থী দের মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিলো। অন্যান্য কম বয়সী মহিলা শিক্ষার্থী রা রাহুলের সান্নিধ্য পেতে আগ্রহী থাকলে​ও রাহুল খুব বেশী তাদের পাত্তা দিতো না।
কিন্তু যখন রোশনি এই মহাকাশ অ‍্যাকাডেমী তে ট্রেনিং এর জন্য এলো তখন যেন  মহাদেবের ধ‍্যান ভঙ্গ হলো।
যে রাহুল মহিলা দের পাত্তা দিতো না ,সে নিজের কাজের ফাঁকে সময় পেলেই রোশনি র মন পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলো।
কিন্তু বিধি বাম।
রোশনি একদিন মিষ্টি মিষ্টি কথায় রাহুল কে বুঝিয়ে দিলো ,সে এই মহাকাশ অ‍্যাকাডেমিতে মহাকাশচারী হওয়ার উদ্দেশ্যে এসেছে।আর রাহুল নিজে ও সেই উদ্দেশ্যে এসেছে। সুতরাং তাদের দুজনের ই উচিত এই সব সেন্টিমেন্ট কে পাত্তা না দিয়ে নিজের শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হওয়া।
এরপর থেকে রাহুল বুঝে যায় এ বড়ো কঠিন ঠাঁই।
মন থেকে রোশনি র আশা ত‍্যাগ না করলেও,আর কখনো রোশনি কে ডিস্টার্ব করে নি রাহুল।
এক সময় মহাকাশ অ‍্যাকাডেমি তে সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে  একের পর এক মহাকাশ অভিযানে অংশ গ্রহণ । এবং এই মুহূর্তে রাহুল একমাত্র মহাকাশচারী , যে প্রত‍্যেকটি অভিযানে একশো শতাংশ সফল।
রোশনি মহাকাশে প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে দীর্ঘ দিন গবেষণা করেছে।তার গবেষণা বিজ্ঞানী মহলে উচ্চ প্রশংসা পেয়েছে।
প্রথমে ঠিক হয়ে ছিলো  এই নোভা গ্রহের অভিযান মানুষ বিহীন রকেটের সাহায্যে হবে ।
পরে মত পাল্টে ঠিক হয় , পুরো অভিযান টা আংশিক ভাবে যন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে । এবং অভিযানে র  শুরু ও শেষ  অংশ টুকু মনুষ্যচালিত হবে  ।
এই প্রথম বার মানুষ 'অতি আলোক গতি'তে অভিযান চালাবে। বিজ্ঞানী রা চিন্তায়​ ছিলেন মানুষের মস্তিষ্ক আদৌ এই গতি সহ্য করতে পারবে কিনা। অবশেষে তারা একটি উপায় বার করলো।
অভিযানে র মধ‍্যবর্তী অংশ , যখন ‘অতি আলোক গতি'তে মহাকাশ যান ছুটবে , সেই সময় মহাকাশ যানের নিয়ন্ত্রণ রোবট করবে । এবং ঐ সময় মহাকাশচারী​দের রকেটের অভ‍্যন্তরে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হবে। তাতে এই গতি র তীব্র এফেক্ট যেমন কম অনুভূত হবে , তেমনি দীর্ঘ যাত্রার রসদ বাঁচবে।
কিছু দিন আগেই এক প্রাণী বিজ্ঞানী যে কোন প্রাণীকে দীর্ঘ কাল ঘুম পাড়িয়ে রাখার উপায় আবিষ্কার করেছেন।এই ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণীটির মেটাবোলিজম প্রায় শূন‍্যে নেমে যায় । এবং প্রাণী টির বয়স বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
অতঃপর রোশনি ও রাহুল দুজনের নাম একই সাথে এই অভিযানে র সাথে যুক্ত হওয়া।
এখনো পর্যন্ত সবকিছুই নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে।
রাহুল পৃথিবীর কমান্ড সেন্টারের উদ্দেশ্যে একটা ভিডিও বার্তা ছেড়ে দিলো । বার্তা য় দুজনের বর্তমান অবস্থা থেকে সবকিছুর বিবরণ ছিলো।
যদিও এই বার্তা যদি আলোর বেগেও যায় , তবু 432 বছর পরে পৃথিবীতে পৌঁছবে।আদৌ জানা নেই তাদের সেই বার্তা গ্রহণ করার জন্য পৃথীবিতে কেউ অপেক্ষা করবে কিনা।
নোভা গ্রহটি যত কাছে আসছে মহাকাশ যানের গতিবেগ তত কম করা হচ্ছে। মহাকাশ যান এখন ম‍্যানুয়াল কন্ট্রোলে চলছে। মহাকাশ যানের গতিবেগ এখন  আলোর তিরিশ শতাংশ। লক্ষ্য বস্তু নোভা গ্রহের দূরত্ব মাত্র আশী লক্ষ কিলোমিটার দূরে। প্রতি মূহুর্তে দূরত্ব কমছে।
অকস্মাৎ রোশনি বলে উঠলো , “রাহুল দেখতো , একটা চকচকে কিছু আমাদের যানের দিকে এগিয়ে আসছে।”
রাহুল প্রথমে ব‍্যাপারটা লক্ষ করে নি।
রোশনি বলার পর মহাকাশ যানের বিশাল স্ক্রীনে র দিকে তাকিয়ে দেখলো দূরে ছোট মতো একটা কিছু দ্রুত মহাকাশ যান লক্ষ করে এগিয়ে আসছে। এখনি যানের গতিপথ না পাল্টে ফেললে মহাকাশ যান চুরমার হয়ে যাবে।
রাহুল দ্রুত কন্ট্রোল প্যানেলে নির্দেশ পাঠালো গতিপথ পরিবর্তন করার জন্য।
কিন্তু প্রত্যুত্তরে কন্ট্রোল প্যানেল থেকে মেসেজ এলো 'কমান্ড ডিনায়েড’।
রাহুল রোশনি কে বললো , “গতিপথ পরিবর্তন করতে পারছি না । তুমি একবার চেষ্টা করো।”
রোশনি ও চেষ্টা করলো গতিপথ পরিবর্তন করতে। কিন্তু ফল কিছুই হলো না। মহাকাশ যান একই গতিতে ঐ আজব চকচকে বস্তু টির দিকে এগিয়ে চলেছে। কম্পিউটার বলছে আর কুড়ি মিনিট পর ঐ চকচকে বস্তু টির সাথে মহাকাশ যানের ধাক্কা নিশ্চিত।
রাহুল প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেল।
লক্ষ্য বস্তু র এতো কাছে এসে এই পরিণতি।
রাহুল বুঝে উঠতে পারছিলো না ,কি করা উচিত।
হঠাৎ রোশনি রাহুলের দিকে ফিরে বললো , “রাহুল শান্ত হও। জানি মৃত্যু নিশ্চিত। তবু ও  আমরা দুজন অভিযাত্রী। মৃত্যু র আগের মূহূর্ত পর্যন্ত আমাদের উচিত সবকিছুর রেকর্ড রাখা। এবং সেই রেকর্ড পৃথিবীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা।যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অভিযাত্রীরা সেই সব বিপদের মোকাবিলা করতে পারে।
আরো একটা কথা রাহুল , যেটা তুমি এতদিন শুনতে চাইলেও , আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি।আজ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সেই কথাটি তোমার কাছে প্রকাশ করছি। তোমার সান্নিধ্যে থাকতে থাকতে কবে যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি জানি না।আই লাভ ইউ।”
কথা গুলো শুনতে শুনতে রাহুলের মুখে খুশি ও দুঃখের মিশ্রিত ভাব ফুটে উঠলো।
রাহুল বললো , “আজ আমার জীবন সার্থক মনে হচ্ছে। মৃত্যুর সময় তোমার পাশে থাকতে পারবো। তোমার কাছে একটা শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করছি। তুমি না বলো না।তোমায় প্রথম ও শেষ বারের মতো একটা চুম্বন করতে চাই ।”
এই কথা শেষ হওয়ার পর দু'জনের ওষ্ঠ মিশে গেলো।
কিন্তু না কর্তব্য আগে । মূহুর্ত পরে  বিচ্ছিন্ন হয়ে  নিজের নিজের আসনে বসে সব কিছুই রেকর্ড করতে ও একই সাথে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ করতে লাগলো।
যে বস্তু টি এগিয়ে আসছে সেটা এখন অনেক কাছে চলে এসেছে।
প্রায় এক কিলোমিটার ব‍্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি গোলক।
রাহুল গোলক টির উদ্দেশ্যে লেসার বিম ছুঁড়ে মারলো। লেসার গোলক টিকে এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে গেল।এ কেমন বস্তু ? তবে কি এটা কঠিন নয়। রাহুল মহাকাশ যানের যাবতীয় অস্ত্র গোলকটি কে লক্ষ্য করে ছুঁড়তে লাগলো। কিন্তু কোন অস্ত্র গোলকটি র কিছু মাত্র ক্ষতি করতে পারলো না। মহাকাশযানটির পথ পরিবর্তন করার পুনরায় চেষ্টা করলো। না কিছুতেই কিছু হবার নয়। মহাকাশ যানটি যেন কোন অদৃশ্য শক্তির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।আর কয়েক মূহুর্তের অপেক্ষা । তারপর মহাকাশ যানটি আছড়ে পড়বে গোলকটি র অভ‍্যন্তরে।
(মহাশূন্যে র পথিক - প্রথম পর্ব সমাপ্ত)
আর কয়েকটা মূহুর্ত। তারপর সব শেষ। মহাকাশ যান “নিউটন 2350”এই অজানা অচেনা মহাকাশে এক আশ্চর্য চকচকে গোলকের আঘাতে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
রোশনি সজল চোখে রাহুলের দিকে তাকালো।যতই নিজেকে দৃঢ় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করুক, আসলে সে একজন মেয়ে।তাই আবেগ অনুভূতি গুলি পুরো পুরি চেপে রাখতে পারেনি।
রাহুল বললো, “দুঃখ পেয়োনা ।এ আমাদের গর্বের মূহুর্ত। বিজ্ঞানের সাধনায় জীবন উৎসর্গ করছি আমরা। এই কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মহাকাশযানটির  অগ্রভাগ গোলকটি কে স্পর্শ করলো।

এরপর …….


যেমন করে এক টুকরো পাথর জলের মধ্যে ডুবে যায় তেমনি মহাকাশযান  ‘নিউটন2350’ গোলকটি র অভ‍্যন্তরে ঢুকে গেলো।
কোন ক্ষতি হলো না। গোলকটি র অভ‍্যন্তরে  ঠিক মধ‍্যস্থলে মহাকাশ যানটি স্থিতিশীল হয়ে গেল।
রাহুল ও রোশনি দুজনেই অবাক হয়ে গেলো।এ কেমন আশ্চর্য রহস্য। মহাকাশ যান ‘নিউটন 2350’ এর গণকযন্ত্র বলছে  এই মুহূর্তে যানটির গতিবেগ শূন্য।অথচ মহাকাশ যানের জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে গোলকটি র  চতুর্দিকে র মহাকাশের পটভূমি অতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে।এর অর্থ একটাই । গোলকটি গতিশীল। এবং মহাকাশযানটি কোনো অজানা কারণে গোলকটি র অভ‍্যন্তরে স্থির হয়ে আছে।
যদিও মহাকাশ যানটি র পরমাণু চালিত ইঞ্জিনটি চালু আছে। ইতিমধ্যে 'আই’ একটা জরুরী  ইনফরমেশন দিলো। গোলকটি র অভ‍্যন্তরে পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল আছে যা কিনা অক্সিজেন সমৃদ্ধ ও মানুষের বসবাস এর জন্য উপযুক্ত।
রাহুল রোশনি কে বললো ,”তুমি যানের ভিতরে থাকো। আমি একবার যানের বাইরে যাচ্ছি।  রোশনি বললো , “না , তোমার একা মহাকাশ যানের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। আমার মনে হয় তোমার সঙ্গে আমার যাওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে 'আই’ কেও নিয়ে যাওয়া উচিত।কারণ কখন কি বিপদ আসবে,তা জানি না।  'আই’ সঙ্গে থাকলে যে কোন বিপদের মোকাবিলা করা সহজ হবে ।”
রাহুল রোশনি র যুক্তি এড়িয়ে যেতে পারলো না।
যদিও 'আই’  এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী গোলকটি র ভিতরের আবহাওয়া মানুষের পক্ষে অনুকূল, তবুও সাবধানতা হিসাবে স্পেস শুট পরে নিলো।
রোশনি ও রাহুল 'আই’ এর সাথে মহাকাশ যান  ‘নিউটন2350’এর বাইরে এলো।
সবাই বাইরে আসার পর ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনা।
যে মূহুর্তে সবাই মহাকাশ যানের বাইরে এলো , মহাকাশযানটি র কম্পিউটার চালিত স্বনিয়ন্ত্রিত  দরজাটি ভিতর হতে  বন্ধ হয়ে গেলো। মহাকাশ যানটি এখন দূর নিয়ন্ত্রিত ব‍্যবস্থা দ্বারা মহাকাশ চারীদের সাথে যুক্ত।আর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে , 'আই’ এর অধীনে।
কিন্তু সবাই কে আশ্চর্য করে মহাকাশ যানটি হঠাৎ গতিশীল হলো। রাহুল বিপদের সংকেত বুঝতে পেরে , 'আই’ কে বললো , “'আই’ মহাকাশ যানটির হঠাৎ গতি বেড়ে যাচ্ছে কেন ? এখনি ওটাকে থামানোর ব‍্যবস্থা করো।”
'আই’ উত্তর দিলো , “কমান্ডার , আমি কিছু ই করছি না, আমি  থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা  করছি। কিন্তু ভিতরে র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আমার কমান্ড রিসিভ করছে না । আমার সন্দেহ হচ্ছে কোন শক্তি আমাদের মহাকাশ যানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। এবং তারা আমার কমান্ড রিসিভ করার যন্ত্র টি বন্ধ করে দিয়েছে।”
এরপর সকলের চোখের সামনে মহাকাশ যানটি গোলকটি র বাইরে ছিটকে গেলো।
পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার শেষ সম্ভাবনা টুকুও রইলো না।



একটা গোলকের ভিতরে তিনজন। দুটি জীবিত প্রাণী,আর একটি অতীব বুদ্ধিমান রোবট। কোন এক অজানা লক্ষ্য বস্তু র দিকে গোলকটি ছুটে চলেছে।সময় যেন থমকে গেছে। অভিযাত্রী যা বিস্ময়ে চেয়ে রইলো বাহির পানে। রাহুল স্পেস শ‍্যুটের হেলমেট খুলে ফেললো। না , বাইরের বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস প্রশ্বাসের কোন কষ্ট হচ্ছে না। রাহুলের দেখাদেখি রোশনি ও  হেলমেট খুলে ফেললো।
এরপর শুধুই অপেক্ষা । অপেক্ষা গন্তব্যে পৌঁছবার।
কতক্ষন বা কতদিন গোলকটি তাদের নিয়ে চললো অজানা র উদ্দেশ্যে জানা নেই। সময়ের হিসাব নেই। নেই ক্ষুধা ,তৃষ্ণা ,ঘুম বোধ। শুধু ই এগিয়ে চলা ।
'আই’ বললো , “নক্ষত্রের পজিশন দেখে অনুমান করছি , আমরা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র স্থলের দিকে এগিয়ে চলেছি।”
রোশনি 'আই’কে জিজ্ঞেস করলো “বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র স্থলে কি আছে ?”
'আই’ উত্তর দিলো “বিজ্ঞানী রা এখনো জানেন না। তবে কিছু বিজ্ঞানী বলেন কেন্দ্রীয় অংশ পুরো ফাঁকা, আবার কেউ বলেন বিশ্বের কেন্দ্র স্থলে এক বিশাল ব্ল‍্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর আছে। আমি এপর্যন্ত যেটুকু তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং সেগুলো অ‍্যানালিসিস করে নিশ্চিত হয়েছি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে এক কোটি কোটি আলোকবর্ষ ব‍্যাপী কৃষ্ণ গহ্বর বিদ‍্যমান রয়েছে। আমার সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত কিনা আপনারা কিছু ক্ষণের মধ্যে ই বুঝতে পারবেন। এই মূহুর্তে গোলকটি অতি আলোক গতি'তে ছুটে চলেছে। আমরা সময়কে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছি।কারণ সময় আলোকের গতি সম্পন্ন।আর আমরা আলোর চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশি গতিতে এগিয়ে চলেছি।
ঐ দেখুন আমার অনুমান সঠিক। দূরে দেখুন কৃষ্ণ গহ্বর দেখা যাচ্ছে। যদিও ঐ কৃষ্ণ গহ্বর টি প্রায় একশো আলোকবর্ষ দূরে আছে ।”

দেখতে দেখতে কৃষ্ণ গহ্বর টি গোলকটি র আরো কাছে চলে এলো।
আর কয়েকটা মূহুর্ত পর গোলকটি সোজা কৃষ্ণ গহ্বরের মধ্যে ঝাঁপ দেবে।যেখান থেকে আলোও ফিরতে পারে না।(মহাশূন্যের পথিক - মধ‍্যম পর্ব শেষ)

বাংলা অনলাইন কল্প বিজ্ঞান - মহাশূন্যের পথিক (অন্তিম পর্ব ) - ঐ কৃষ্ণ গহ্বর দেখা যায়।সব কিছু সেই রাক্ষস অবিরত গিলে চলেছে।  রাহুল ও রোশনি অবাক বিস্ময়ে সেই অনন্ত অনন্ত ব‍্যাপি বিশ্বের কেন্দ্র স্থলে অবস্থিত কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর কয়েকটা মূহুর্ত । হঠাৎ 'আই’ বলে উঠলো “কমান্ডার, একটা ব‍্যাপার লক্ষ্য করুন। আমরা যে গোলকের মধ্যে অবস্থান করছি সেটা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।”
রাহুল ও রোশনি দুজনেই লক্ষ্য করলো তাদের ঘিরে থাকা বুদবুদ টি বা গোলকটি ক্রমেই ছোট হচ্ছে। দেখতে দেখতে বিরাট গোলকটি ছোট হয়ে হয়ে শুধু ই তাদের ঘিরে থাকা ছোট্ট গোলকে পরিণত হলো। এরপর সেই গোলকটি সোজা মরণ ঝাঁপ দিলো কৃষ্ণ গহ্বরের অভ‍্যন্তরে।

বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী কৃষ্ণ গহ্বরের আকর্ষণের মধ্যে পড়া মাত্রই তাদের একটি বিন্দু মাত্র হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু চরম আশ্চর্য এই যে ,সেসব কিছুই হলো না ।  গোলকটি তাদের রক্ষা কবচ হয়ে দিব‍্যি এগিয়ে চলেছে কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্রের দিকে।এ এক অত‍্যাশ্চর্য ঘটনা। রাহুল , রোশনি, 'আই’, তিনজনেই নিজেরা আলোচনা করে বুঝতে পারছিলো না কিভাবে এই ঘটনা সম্ভব ? তবে কি আরো বিস্ময়কর কোন কিছু অপেক্ষা করছে তাদের জন্য ।
কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে সময় ,আলো সব কিছুই আটকা পড়ে যায়।তাই কত সময় ধরে তারা এগিয়ে চলেছে তারা নিজেরাই জানেনা।
তাদের মনে হতে লাগলো অনন্ত অনন্ত কাল ধরে তারা এগিয়ে চলেছে ।
তাদের বুদবুদের পাশ দিয়ে হু হু করে এগিয়ে চলেছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় ম‍্যাটার । মনে হচ্ছে এক ক্ষুধার্ত রাক্ষস অবিরত গিলে চলেছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
দূরে যেন মনে হচ্ছে একটি বিন্দু তে গিয়ে সব কিছুই মিশে যাচ্ছে।ঐ টি কি কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্র ?
ক্রমেই বিন্দুটি এগিয়ে আসছে।
বুদবুদ টি কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্র সেই বিন্দুটি র কাছে গিয়ে স্থির হয়ে গেল ।

ঘন কালো অন্ধকারে র মধ্যে একটি অতীব উজ্জ্বল আলোর কণা।


কৃষ্ণ গহ্বর প্রতি মূহুর্তে যে কোটি কোটি নক্ষত্রের সময় পরিমাণ ম‍্যাটার গিলে চলেছে তা এতটা পথ আসতে আসতে বিশুদ্ধ এনার্জি তে পরিণত হয়ে  এই বিন্দুতে মিলিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু বড়ই আশ্চর্য রাহুল, রোশনি, 'আই’, সকলেই বুদবুদের মধ্যে নিরাপদ ভাবে কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্রে আসতে পেরেছে।
“স্বাগতম”
হঠাৎ রাহুল ও রোশনি, 'আই’  এই  কথা টি শুনতে পেলো।
না ঠিক শুনতে পায়নি। বরং বলা চলে মস্তিষ্কের মধ্যে এই সম্ভাষণ টি অনুভব করলো।
পৃথিবীর কোন ভাষায় এই সম্ভাষণ টি করা হয় নি।  
আসলে তারা নিজেদের আপন ভাষাতেই এই কথা টি অনুভব করলো। 'আই’ কথাটি অনুভব করলো কম্পিউটারের ভাষায়।
রাহুল বললো , “কে আপনি ?”

উত্তর এলো , “আমি বিন্দু।”

রোশনি বললো, “দয়া করে বুঝিয়ে বলুন আপনি কে ?”
উত্তর এলো, “ তোমাদের  ভাষায় সিংগুলারিটি।”
রাহুল বললো, “আমরা এখানে জীবিত অবস্থায় কি ভাবে ও কেন এসেছি ?”
বিন্দু হতে উত্তর এলো , “তোমরা আমার ইচ্ছায় এখানে এসেছো। এই ভয়ানক স্থানে (space - এ) কোনো কিছুই জীবিত অবস্থায় থাকতে পারে না। এখানে কেবলমাত্র আমি একক সত্ত্বা নিয়ে উপস্থিত থাকি। আমি -ই সব কিছুর স্রষ্টা। এই জগতের সব কিছুই আমার প্রত‍্যক্ষ বা পরোক্ষ ইচ্ছায় পরিচালিত হয়। তোমরা কোথায় থেকে এসেছো এবং কি উদ্দেশ্যে এসেছো ,তার আমি জানি। যেখানে তোমাদের প্রেরণ করা হচ্ছিল , সেখানে পৌঁছতে পারলে তোমাদের বিপদ হতো। তোমরা যে নভেরীয় জাতির সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে চেয়েছিলে , তারা জন্মগত ভাবেই বড় কুটীল প্রকৃতির।ছলনার আশ্রয় নিয়ে তারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব প্রাণীদের আমন্ত্রণ করে তাদের বন্দী করে এক বৃহৎ সংগ্রহশালা তৈরি করতে চায় ।
সেই উদ্দেশ্যে তোমাদের আমন্ত্রণ জানানো।”
এই ব্রহ্মান্ডের সব ঘটনা আমি জানি, কিন্তু বিশেষ উদ্দেশ্য ভিন্ন কখনো কোন  ব‍্যাপারে আমি সরাসরি অংশগ্রহণ করি না।”

রোশনি বললো, “তবে আমাদের কেন রক্ষা করলেন  ?”
পুনরায় উত্তর অনুভব হলো, “এই সৃষ্টি র রচনা থেকেই আমি সৃষ্টি র প্রতিটি সম্ভাবনা (probability) কে   উপযুক্ত ভাবে বিচার করে  তবেই বাস্তবায়ন করি। আমি তোমাদের জন্য নির্ধারিত সম্ভাবনা কে বাতিল করে আরো উপযুক্ত বিকল্প ভবিষ্যৎ রচনা করেছি ।
 ।
তোমরা যে সামান্য ক্ষণ আমার নিকটে রয়েছো , সেই টুকু সময়ের মধ্যেই তোমাদের নির্দিষ্ট সময় মানের কোটি কোটি বৎসর অতীত হয়ে গেছে। তোমাদের জানা পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
আমি তোমাদের গ্রহকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার জন্য তোমাদের এখানে নিয়ে এসেছি।
এই কাজে তোমাদের সহায়তা করার জন্য তোমাদের ই সৃষ্ট এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন  'আই’ সহায়ক হবে। আমি তার জ্ঞান ভান্ডার এ আরো প্রয়োজনীয় সংযোজন(software upgrade)করেছি। এছাড়া  তোমাদের পৃথিবীর একটি বিশেষ স্থানে পৃথিবীর সব প্রাণী , উদ্ভিদ,  ইত‍্যাদীর বীজ(DNA) ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত করে রেখেছি ।তার সকল তথ্য ও তার বিকশিত করার পদ্ধতি তোমাদের এই 'আই’ এর বুদ্ধিমত্তায় সংযোজিত করেছি। এই সংরক্ষিত বীজের মধ্যে কিছু বিশেষ মানুষ এর বীজ (DNA) রয়েছে। তোমাদের সন্তান ও ঐ সব বীজ হতে উদ্ভব মানব সন্তানের দ্বারা নতুন পৃথিবীর মানব জাতি গড়ে উঠবে।
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো কি উদ্দেশ্যে তোমাদের রক্ষা করেছি।”

রাহুল বললো, “আপনি কি ঈশ্বর ?”

উত্তর অনুভব হলো, “আমি ই ওংকার।।
এই যা কিছু দেখতে , শুনতে, অনুভব করতে পারছো তা আমি।
আমি ই এই জগৎ। দৃশ্য অদৃশ্য সব কিছুই আমার শরীর। আমি ছাড়া আর কিছুরই অস্তিত্ব নেই। আমি একা। নিজেকে বহুতে বিভক্ত করেছি। এ সবই করেছি নিজের লীলা হিসেবে। মানবজাতির ইতিহাসে প্রথম দিন হতে যে যে ধর্মের উদ্ভব হয়েছে তার মূল আরাধ্য হিসেবে আমাকেই অর্চনা করেছে।
কেউ সাকার আবার কেউ নিরাকার হিসেবে আমার অর্চনা করেছে। আমি ই কখনো কৃষ্ণ, কখনো কালি, কখনো গড, কখনো আল্লাহ, কখনো জিহোবা, এইসব রূপে পূজিত হয়েছি। আসলে আমি এক ও অভিন্ন। আমি অতি সূক্ষ্ম, আবার অতি বিরাট। আমি আকার যুক্ত, আবার আমি নিরাকার। এই জগতে র সব কিছুই আমার আকার , কারণ আমি ছাড়া দ্বিতীয় কিছুরই অস্তিত্ব নেই। আবার আমি নিরাকার বটে কারণ ঐ আকার যুক্ত সব কিছুই প্রকৃত আমি নই।
আমি আসলে বিশুদ্ধ শক্তি (Energy)। নিরাকার রূপে আমি নিস্ক্রিয়।তাই সৃষ্টি র প্রয়োজনে আমি আকার যুক্ত হয়ে সক্রিয় হই।
হে নতুন পৃথিবীর রূপকার, তোমরা যাও তোমাদের লালিত বিশ্বে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দাও। বিভেদের শিক্ষা র বদলে এক হয়ে থাকার জ্ঞান সকল কে প্রদান কর।”

আস্তে আস্তে গোলকটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র স্থল থেকে দূরে যেতে লাগলো  ।অতি দ্রুত কৃষ্ণ গহ্বরের বাইরে চলে এলো তারা। তারপর দ্রুত বেগে এগিয়ে চললো তাদের পরিচিত জগতে র উদ্দেশ্যে। যেখানে অপেক্ষা করে আছে তাদের পৃথিবী, নতুন অঙ্কুরোদগমের জন্য।(শেষ)