Crss colum

Wednesday, December 23, 2020

রক্ষক ১৪





স্বপ্নপুরী।
এক অজানা ব্রহ্মান্ডের এক রহস্যময় রাজ্য।
প্রাচীর ঘেরা বিরাট শহরটির মধ্যে ঢুকে আদিত্য অবাক হয়ে গেল। এত সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহর হতে পারে তা আদিত্যর কল্পনার বাইরে ছিল। শহরের বিভিন্ন দিকে পাথর বাঁধানো চওড়া রাস্তা চলে গেছে। চারিদিকে সবুজ গাছপালা। শহরের বাড়িঘর গুলি একটু ছাড়া ছাড়া। প্রতিটি বাড়ির সামনে ছোট ছোট বাগান তাতে অসংখ্য রকমারি ফুল ফুটে আছে। পাথর বাঁধানো রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য বড় বড় গাছ। সেই গাছগুলোতে রংবেরঙের পাখির বাসা। এতো অপরূপ সুন্দর শহর আদিত্য আগে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ে না।
যে রাখাল ছেলেটির সঙ্গে আদিত্য এসেছে তাকে প্রশ্ন করে জানতে পারলো তার নাম আনন্দ। আনন্দ কথা বলতে ভালোবাসে। শহরে প্রবেশ করা থেকেই আনন্দ এটা ওটা বলেই চলেছে।
আনন্দ বললো , "  আমাদের শহরে সকলেই সুখী। খাওয়া পরার কোনো অভাব নেই। কোন ঝামেলা গন্ডগোল নেই। এইযে পাহাড়ঘেরা উপত্যাকা দেখছো এই টুকুই আমাদের রাজ্য। আর এই স্বপ্নপুরী শহরটি এই রাজ্যের রাজধানী । উপত্যকায় প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়। রাজ্যের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য পাশাপাশি রাজ্যগুলিতে বিক্রয় করা হয়। তবে আমাদের রাজ্যের প্রধান আয় আসে সূক্ষ্ম ও মহার্ঘ বস্ত্র থেকে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই হস্তচালিত তাঁত রয়েছে। প্রতিটি নাগরিক বস্ত্র বয়ন করতে জানে। আর সেই বস্ত্র রাজপরিবার মারফত সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশে বণিকগণ বিক্রয় করে। তা থেকে প্রচুর লভ্যাংশ রাজ্যের নাগরিকগণ পেয়ে থাকে। সেজন্য আমাদের রাজ্যে কোন গরীব নেই। পাহাড় ঘেরা আমাদের রাজ্যে কোন বহিঃস্থ শত্রু প্রবেশ করতে পারে না ‌। আমাদের রাজ্যের প্রবেশ করার একটি মাত্র পথ রয়েছে। আর সেটি হল রাজ্যের পূর্ব দিকে বয়ে চলা সুরভী নদী। নদীপথে আমাদের রাজ্যে নৌসেনার কড়া পাহারা রয়েছে। যার কারণে আমাদের রাজ্য অন্যান্য শত্রু র  থেকে নিরাপদ।"
হঠাৎ আদিত্য শহরের মাঝখানে এক বিরাট মিনার দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করল ," আনন্দ ওটা কিসের মিনার? ওটা কি কোন মন্দির?"
আনন্দ উত্তর দিল " ওটা সুরক্ষা মিনার। ওটা বহু বছর আগে আমাদের রাজার এক পূর্বপুরুষ নির্মাণ করেছিলেন। ওই মিনার আমাদের সুরক্ষা প্রদান করে।"
আদিত্য কিছুই বুঝতে না পেরে বলল " তোমার কথার অর্থ বোধগম্য হচ্ছে না। একটু পরিষ্কার করে খুলে বলো।"
আনন্দে এমনিতেই কথা বলতে ভালোবাসে। সুতরাং আদিত্য প্রশ্ন করায় সে বলে চলল ," বহু বহু বছর আগে এই রাজ্যে একবার আকাশ হতে বিশাল বিশাল পাখিরা আক্রমণ করতে লাগলো। রাস্তাঘাটে , চাষের জমিতে, হাটে বাজারে আচমকাই মানুষের উপর আক্রমণ হতে থাকলো। কেউ কিছু বোঝার আগেই আকাশ হতে বিরাট পাখিগুলো ছোঁ মেরে নেমে এসে মানুষজনকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতো। হঠাৎ একদিন একজন সাধু এলো এই রাজ্যে।সাধু রাজার সঙ্গে দেখা করে বললেন , " আমার কথা মতো কাজ করলে আমি এই রাজ্য কে এই সব ভয়ঙ্কর পাখির হাত থেকে বাঁচাতে পারি।"
রাজামশাই করজোড়ে নমস্কার করে বললেন , " দয়া করে আপনি আমার প্রজাদের রক্ষা করুন। তার আগে বলুন এই সব ভয়ঙ্কর বিশাল বিশাল দৈত্যের  মতো পাখির দল আসছে কোথা থেকে ?"
সাধু বললেন , " এই রাজ্যের পরেই এক ভয়াবহ উপত্যকা রয়েছে । সেখানে  একটি বহু প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির রয়েছে। সেই মন্দিরের পাহারায় নিযুক্ত রয়েছে এই সব ভয়ঙ্কর বিশাল পাখির দল। কোন প্রাণী যদি এই বিষ্ণু মন্দিরের কাছাকাছি উপস্থিত হওয়া মাত্রই এদের খাদ্য হয়।  এই প্রাচীন বিষ্ণুমন্দিরে কেবলমাত্র সৎ জীবনে কখনো পাপ কার্য করেনি এমন মানুষ প্রবেশ করতে পারে। এই বিষ্ণু মন্দিরের সিংহ দরজার উপর ভবিষ্যৎ বাণী লেখা রয়েছে   । সেই ভবিষ্যত বাণীতে বলা হয়েছে এই মন্দিরের রক্ষক বিশালাকায় পাখিরা যদি কোন নিষ্পাপ মানুষকে হত্যা করে তবে তারা খাদ্যাভাবে ভুগবে। কিছুদিন আগে এক কিশোর ওই জঙ্গলে হারিয়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত সেই কিশোর পাহারাদার পাখির দ্বারা নিহত হয়। কিশোরটি নিষ্পাপ হওয়ার জন্য পাহারাদার পাখি গুলি খাদ্যাভাবে ভুগতে থাকে।ওই জঙ্গলে হঠাৎ পশু পাখির সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমে এসেছে। সেজন্য ওই পাখিগুলি আপনার রাজ্যে খাদ্যের কারণে হানা দিচ্ছে  ।    প্রাচীনকাল থেকেই এই বিষ্ণুমন্দির লুকিয়ে রাখা হয়েছে এক অতি পবিত্র কালো  পাথর। ওই পবিত্র কালো পাথরের মধ্যে আছে এক রহস্যময় অলৌকিক শক্তি। সেই পবিত্র কালো পাথরে কে রাজরক্ত দিয়ে অভিষিক্ত করলে সেটা যে কোন বিপদ থেকে সেই রাজ্যকে যে কোন বিপদ থেকে রক্ষা করবে। এখন আপনাকে সেই পবিত্র কালো পাথর কে সংগ্রহ করে আনতে হবে। তারপর একটা অতি সুউচ্চ মিনার তৈরী করে তার উপর সেই কালো পাথর স্থাপন করতে হবে। তবেই আপনার রাজ্য সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।"
মহারাজা তখন বললেন " আমি কিভাবে ঐ সব ভয়ঙ্কর বিশাল পাখিদের চোখ এড়িয়ে বিষ্ণুমন্দির পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি ?"
সাধু মহারাজ বললেন "  আমাকে একটি তামার পাত্রে কিছুটা উৎকৃষ্ট মধু দিন। সেই মধুকে আমি মন্ত্রপূত করে দেবো। বিষ্ণু মন্দিরের কাছাকাছি গিয়ে    ঐ মধু পান করবেন তাহলে আপনি ঐ মধুর মিষ্টতা যতক্ষণ জিভে অনুভব করবেন ততক্ষণের জন্য অদৃশ্য হয়ে যাবেন। পাখিরা আপনাকে দেখতে পাবে না। একবার বিষ্ণু মন্দিরের সদর দরজা পেরিয়ে গেলে পাখিরা আপনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। তারপর ফেরার সময় পবিত্র কালো পাথর টা আপনার সঙ্গে থাকলে পাখিরা আপনার ক্ষতি করবে না।"
সুতরাং সাধুর কথামতো কাজ করে মহারাজা সেই পবিত্র কালো পাথর সংগ্রহ করে রাজরক্ত দিয়ে অভিষিক্ত করে ঐ সুউচ্চ  মিনারের মাথায় স্থাপন করেন। পাথরটি মিনারের মাথায় স্থাপন করা মাত্রই এক বিশাল হীরেতে রূপান্তরিত হয় । সেই রূপান্তরিত হীরে থেকে চোখ ঝলসানো আলো ঠিকরে বেরোতে লাগলো।
সাধু  বললেন " যতদিন এই রাজ্যে রাজা থাকবে ততদিন এই হীরের  কারণে রাজ্যের শত্রুদের চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই স্বপ্নপুরী রাজা বিহীন হয় তবে এই পাথর পুনরায় তার হীরের রূপ থেকে কালো পূর্ববর্তী রূপে রূপান্তরিত হবে এবং মন্ত্রগুণে পুনরায় বিষ্ণু মন্দিরে  পৌঁছে যাবে। তারপর এই রাজ্যের পরবর্তী রাজা যিনি হবেন তাকে   ঐ পাথর পুনরায় সংগ্রহ করে রাজরক্তে অভিষিক্ত করে মিনারের মাথায় স্থাপন করতে হবে। এবং যতদিন এই কাজ না সম্পন্ন হবে ততদিন প্রজাগণ বিপদের মধ্যে থাকবে।"

সবটুকু শোনার পর আদিত্য বললো " বুঝতে পারছি রাজা না থাকায় তোমাদের এতো বিপদ। আমি কি তোমাদের সাহায্য করতে পারি ?"
এমন সময় হৈচৈ এর শব্দে দুজনেই পিছনে ফিরে তাকাতে দেখতে পেলো এক বিরাটাকায় পাখি একটা ছোট্ট বাচ্ছা ছেলেকে নখের সাহায্যে ধরে উড়ে পালাবার উপক্রম করছে। ছেলেটির একটা পা ধরে তার মা টেনে রেখেছে। পাখিটা ক্রমাগত তার মাকে ঠোক্কর মারার চেষ্টা করছে। এই সব দেখে আশেপাশের লোকজন হৈচৈ করছে।। আদিত্য দ্রুত সেদিকে দৌড়ে গেল।
আদিত্য দৌড়ে গিয়েই  এক বিরাট লাফ দিয়ে পাখিটার পিঠে চড়ে বসলো। তারপর শক্ত হাতে পাখিটার গলা আঁকড়ে চাপ দিতে লাগল। পাখিটার প্রায় দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। আচমকা শিকারের সময় এমন উপদ্রব এসে যাওয়াতে পাখিটা ছেলেটিকে ছেড়ে আদিত্য কে পিঠে নিয়েই আকাশে উড়ে গেল। আদিত্য কিন্তু তার হাতের চাপে একটুও ঢিল দিলো না বরং সে তার হাতের চাপ বাড়িয়ে চললো। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাখিটা দমবন্ধ অবস্থায় মারা গেলো।আকাশ হতে পাখিটা নিচে পড়তে লাগলো। কিন্তু আদিত্য নিচে পড়লো না। বরং সে বাতাসে ভাসতে লাগলো। আসলে সে তমো গুণের কূপে প্রবেশ করা মাত্রই মাতৃকা জাতির সহজাত সব শক্তি লাভ করেছে। তার মধ্যে আকাশে ওড়ার ক্ষমতা অন্যতম।
কিছুক্ষন ভেসে থাকার পর আদিত্য ধীরে ধীরে আকাশ হতে নেমে এলো।
ইতিমধ্যে কিছু রাজকর্মচারী ঘটনাটা প্রত্যক্ষ করেছিল। আদিত্য নামতেই তারা আদিত্য কে ঘিরে ধরলো। তাদের মধ্যে একজন বয়স্ক সৈনিক বললো " আপনাকে এখনি রাজপ্রাসাদে যেতে হবে।"
আদিত্য বললো " বেশ তো চলুন, যাওয়া যাক।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিত্যকে নিয়ে একটা ছোটোখাটো জটলা রাজপ্রাসাদের দিকে চললো। সেই ভিড়ে আদিত্য র পুরাতন বন্ধু আনন্দ ছিল। রাজপ্রাসাদের ভিতরে শুধুমাত্র আদিত্য ও আনন্দ প্রবেশ করলো।
রাজা না থাকায় অষ্টাদশী কিশোরী রাজকুমারী অবন্তিকা মহামন্ত্রী বৃদ্ধ যোগদেবের সাহায্যে রাজত্ব চালাচ্ছিলো।
উভয়েই মন্ত্রণাকক্ষে বসে রাজ্যের বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় একজন রক্ষী এসে যোগদেবের কানে কানে আদিত্যর পাখি নিধনের ঘটনা জানালো। সেই সঙ্গে এটাও জানালো যে সেই যুবককে তারা সঙ্গে নিয়ে এসেছে। যোগদেব রক্ষীকে আদেশ করলেন " এখনি সেই যুবককে আমাদের কাছে নিয়ে এসো।"
আদিত্য ও আনন্দ রক্ষী পরিবৃত হয়ে মন্ত্রণাকক্ষে প্রবেশ করলো। দেখলো এক বৃদ্ধ ও অপরূপা সুন্দরী এক কিশোরী দাঁড়িয়ে রয়েছে। আনন্দ আদিত্য র কানে কানে বললো , " বৃদ্ধ টি মন্ত্রী যোগদেব আর কুমারী কন্যাটি হলেন রাজকুমারী অবন্তিকা।"
অবন্তিকা কে দেখামাত্র আদিত্য র শরীরে একটা হিল্লোল বয়ে গেল। এতো সৌন্দর্য কি কোনো মানবীর হতে পারে?
কারো কারো প্রথম  দর্শনেই প্রেম সৃষ্টি হয়। আদিত্য র তাই হলো।( চলবে)


Tuesday, December 15, 2020

গরীব

যাচ্ছিলাম ক্লাবে একটু আড্ডা মারতে হঠাত বাবা এসে বললো ," খোকা একটা কথা ছিলো।"
আমি বাবার দিকে ঘুরে গিয়ে বললাম ," কি ব্যাপার ?"
বাবা একটু ইতস্তত করে বললো  , " তোর মায়ের ঘাড়ে টিউমারের ব্যাথাটা আবার বেড়েছে। অপারেশন টা করিয়ে নিলে ভালো হয়।"
আমি বললাম " দেখছি , কি করা যায়। তুমি সদরের দরজাটা বন্ধ করে দাও । আমি একটু ক্লাব থেকে ঘুরে আসছি।"
ক্লাবে এসেও ঠিক ভালো লাগছে না। কিছুক্ষন থেকেই ফিরে এলাম। রাতে শোওয়ার সময় মৌ বললো " কি ব্যাপার বলো তো? তোমাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। আমি বললাম," জানোই তো চটকলের চাকরি। যা মাইনে পাই তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।তাই মাঝে মাঝে ওভার টাইম করতে হয়। তার ওপর মায়ের টিউমারের যন্ত্রণাটা বেড়েছে। গতমাসেই ডাক্তার বাবু বলেছেন যতো শীঘ্র সম্ভব অপারেশন করাতে।যা টাকা কেটেকুটে হাতে পাই তাতে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি।পি এফ ফান্ড থেকে লোন হয়তো তুলতে পারি কিন্তু তাতে মাসের শেষে অনেকগুলো টাকা কেটে নেবে।কি করা যায় তাই ভাবছি।"
মৌ বললো "তোমার মামার কাছে একবার বলো না। তোমার মামার তো টাকার অভাব নেই।ইনকাম ট্যাক্স এর অতোবড় অফিসার। তাছাড়া তোমার মা তার একমাত্র দিদি।মামা ইচ্ছা করলেই মামণির অপারেশন করার টাকাটা দিয়ে দিতে পারেন। "
আমি বললাম " কিন্তু তুমি তো জানো গতবার বাড়ি মেরামত করার জন্য মামার কাছে দশ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম সেটা এই মাসে পুজোর বোনাস পেলে শোধ দেওয়ার কথা ছিল। বোনাসের টাকাটা খোকনের চিকিৎসার জন্য পুরো খরচ করে ফেলেছি।ফোনে মামীমা কে এখনি টাকাটা দিতে পারবোনা বলতেই মামীমা আমাকে অনেক কথা শোনালেন।এর উপরে মায়ের চিকিৎসা র জন্য নতুন করে টাকা চাইতে গেলে আমাকে আস্ত রাখবে না।"
মৌ বললো " তুমি একবার গিয়েই দেখো না। কালকে তোমার ছুটি ।কাল বিকালেই যাও।"
মামার বাড়ি পাশের গ্রামেই। বিরাট ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়ি। গেটে কলিং বেল টিপতেই  মামীমা দরজা খুলে দিলো। আমাকে দেখেই ঠোঁট বেঁকিয়ে বললো " ও তুই।তা কি মনে করে?"
আমি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে বললাম " না মানে একটা দরকার ছিলো তাই এসেছি।"
মামা দেখলাম সেজেগুজে কোথাও যাবে বলে বের হচ্ছে। আমি বললাম কোথাও যাচ্ছ? মামা কিছু উত্তর দিলো না।মামীমা বললো ,"  অমিতের শোওয়ার ঘরটায় একটা এসি লাগানো হবে।তোর মামা এসি কিনতে যাচ্ছেন। এখন নাকি ভালো ডিসকাউন্ট দিচ্ছে।" 
অমিত মামীমার ধর্ম ছেলে কাম বাড়ীর কাজের লোক। রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই।মামা মামী নিঃসন্তান। পাড়ার একজনের ছেলে এই অমিত।মামীমা তাকে ধর্মছেলে বানিয়েছে। এই বাড়ীতেই থাকে । নিজের বাড়িতে যায় না বললেই চলে।
মামা অমিতের সঙ্গে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল।মামীমা আমাকে প্রশ্ন করলো " চা খাবি নাকি? " আমি না বলতে মামীমা যেন একটু খুশিই হলো।
আমি এবার বললাম "  মামীমা মায়ের ঘাড়ের কাছে একটা  টিউমার হয়েছে। অপারেশন করাতে হবে। মামা যদি হাজার তিরিশের মতো টাকা ধার দেন তবে এই মাসেই মায়ের অপারেশন টা করাতে পারি।"
মামীমা চোখ বড়বড় করে বললেন " তুই বললি কি করে।তোর একটু লজ্জা করলো না? আগের টাকাটাই এখনো ফেরত দিলি না তার উপর আবার ধার চাইতে এসেছিস।অমন দু একটা টিউমার সবার থাকে। আমার বড়দির হাতে ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি একটা টিউমার আছে।দু একদিন ওষুধ খেলেই যন্ত্রণা গায়েব হয়ে যাবে। তাছাড়া তোর মামা এখন টাকা পাবে কোথায় ? এই তো কয়েকদিন ধরেই বলছি ছেলেটার ঘরে একটা এসি কিনে দাও।তোর মামা বলে টাকা নেই। শেষে এক বন্ধুর থেকে ধার করে এসিটা কিনে দিচ্ছে।বন্ধুর টাকাটা অবশ্য আমরা সামনের মাসেই দিয়ে দেবো। আমরা টাকা ধার নিলে অবশ্যই যে সময় বলবো ঠিক সেই সময়েই দিয়ে দেবো।তোর মতো কথার খেলাপ করি না। তোদের তো আবার গন্ডারের চামড়া।যতোই বলি শোধরাবি না।ওসব টাকা ফাকা ধার দিতে পারবোনা। বরং পারলে আমার দশ হাজার টাকা টা দিয়ে যা। ছেলেটা নাকি অনলাইনে একটা ভালো মোবাইল দেখেছে। সামনের মাসেই ওর জন্মদিন। তুই টাকাটা দিলে কিনে দিতাম।"
আমি বললাম " ঠিক আছে মামীমা। আজ উঠি। " এই বলে উঠে দাঁড়িয়ে সদর দরজার কাছে আসতেই মামীমা বললো " দরজাটা একটু ভেজিয়ে দিয়ে যা।আর ঠাকুরঝি কে বলবি  কয়েকদিন পেন কিলার খেলেই কমে যাবে।"
বাইরে বেরিয়ে এসে সাইকেলে উঠে পড়লাম। চোখটা একটু ছলছল করছিল।হাত দিয়ে চোখটা কচলে নিলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বললাম " আমি গরীব কিন্তু মামা মামী আরো গরীব ।প্রায় ভিখারির অবস্থা। ওনার ভালো করো।"
কালকেই অফিসে গিয়ে চল্লিশ হাজার টাকা পি এফ লোনের দরখাস্ত করে দেবো। তিরিশ হাজার মায়ের চিকিৎসার জন্য আর বাকিটা অমিতের জন্মদিনের মোবাইলের জন্য।