Crss colum

Saturday, September 28, 2019

মৃত্যুর সঙ্গে কিছুক্ষণ

বিরাট সেতুটির অপর প্রান্ত দেখা যাচ্ছিল না। বেশি চওড়া সেতু নয়। খুব জোর দুই জন মানুষ পাশাপাশি হেঁটে যেতে পারে। লম্বা লম্বা পাকানো দড়ি দিয়ে তৈরি সেতু। হাওয়ায় একটু দুলছে। দুটো পাহাড়ের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই দড়ির তৈরী সেতুটা। অনেক উঁচুতে বলে চারিদিকে হালকা মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে।ভারি সুন্দর মনোরম দৃশ্য। অনেক নিচে একটা পাহাড়ি নদী বয়ে চলেছে।
অনন্ত সেতুটার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো ওপারে যাবে কিনা।সে কি করে এখানে এলো ঠিক মনে পড়ছে না। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় শুয়ে ছিলো মনে পড়ছে। ঘুম আসছিলো না। বুকের ডান দিকে হালকা চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছিল। তারপর আর কিছু মনে নেই। হঠাৎ দেখলো সে এই বিশাল দীর্ঘ সেতুটার সামনে একা দাঁড়িয়ে।এতো সুন্দর জায়গায় আগে কখনো আসেনি। চারিদিকে পাহাড়ী বুনো ফুলের মেলা বসেছে। খুব সুন্দর একটা ভারি মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে। কিন্তু বডড ফাঁকা লাগছে। কেউ কোত্থাও নেই। এমনিতেই মিনতিকে ছাড়া সে কোথাও যায় না। কিন্তু এখন মিনতিকেও চোখে পড়ছে না।সবাই গেলো কোথায় ?
সেতুটির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো ওপারে যাবে কিনা।

এমন সময় পিছন থেকে একটি খুব সুন্দর দেখতে আট নয় বছরের বাচ্ছা মেয়ে র কন্ঠস্বর ভেসে এলো "আমাকে একটু ওপারে নিয়ে যাবে গো ?"

অনন্ত বললো "কে তুমি ?"

মেয়েটি  বললো "আমি ? আমি নিয়তি। আমাকে একটু ওপারে নিয়ে চলো না।"

অনন্ত দেখলো  মেয়েটি অন্ধ। তার খুব মায়া হলো। এগিয়ে এসে মেয়েটির দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে মেয়েটি দুই একবার হাতড়ে অবশেষে অনন্তর হাতটা শক্ত করে ধরলো।

অনন্ত বললো "ওপারে কি আছে ?"

নিয়তি বললো "ওপারে আমার বাড়ী।"

অনন্ত বললো "আচ্ছা এই জায়গাটার নাম কি ? আর আমি কিভাবে এখানে এলাম ?"

নিয়তি  হেসে বললো "তুমি কেমন মানুষ গো ? এই জায়গাটি চিনতে পারছো না ? ঐ যে নদীটি দেখতে পাচ্ছো অনেক নীচে দিয়ে বয়ে চলেছে ওটা বৈতরণী নদী। একদিন সবাইকেই ঐ নদী পেরিয়ে ওপারে যেতে হয়। আমিই সবাইকে এই বিরাট সেতু দিয়ে নদী পেরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করি।"

অনন্ত ভয় পেয়ে বললো "তার মানে আমার কি মৃত্যু হয়েছে? সত্যি করে বলতো তুমি কে?"

নিয়তি বললো "তোমার এখনো মৃত্যু হয় নি। তবে মৃত্যু হতে চলেছে। তুমি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছো।
আর আমার অপর নাম মৃত্যু ।"
অনন্ত বললো "আমায় ছেড়ে দাও । আমার অনেক কাজ বাকি আছে।"
অনন্ত হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু ঐটুকু ছোট্ট মেয়ের হাতে কি জোর। বেশ কয়েকবার ঝাঁকুনি দিয়েও অনন্ত হাত ছাড়িয়ে নিতে পারলোনা।

অবশেষে হার মেনে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো "আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমার সঙ্গে যেতে চাই না। আমি এখনি মরতে চাই না।"
নিয়তি বললো "কেন ভয় কি ? এটাই তো সকলের আসল গন্তব্য।সব জীবিত প্রাণীই তো মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।মরণ তো জীবের স্বাভাবিক গতি।"
অনন্ত বললো "আমার অনেক দায়িত্ব পালন করার আছে। আমার একমাত্র মেয়েটি খুব ছোট্ট। ঠিক তোমার বয়সী। আমার স্ত্রী মিনতি অসুস্থ। তার সাহায্য করার কেউ নেই। তোমার পায়ে পড়ি , তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।"

নিয়তি বললো "এই জগতে কেউ কারো নয়। তুমি যাদের কথা চিন্তা করে বাঁচতে চাইছো , একদিন হয়তো তারাই তোমার কথা মনে রাখবে না। তুমি পূর্বে বহুবার জন্ম গ্রহণ করেছো আবার বহুবার মৃত্যু বরণ করেছো। প্রতি জন্মেই বহু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলে।আজ সে সব অতীত। তুমি মিথ্যা ভ্রম বশত এসব চিন্তা করছো। কোনো কিছুই তোমার জন্য আটকা পড়ে থাকবে না। সবই মহাকালের আপন নিয়মে হতে থাকবে।যার যেটুকু পাওয়ার আছে সে শত চেষ্টা করলেও তার অধিক পাবে না।"

অনন্ত বললো "ওগো আমি যে পিতা। আমি আমার কর্তব্য ছেড়ে এভাবে যেতে পারি না। তুমি যদি জোর করে আমাকে নিয়ে যাও তবে আমার আত্মা শান্তি পাবে না। আমাকে আমার কর্তব্য পালন করতে দাও।"
নিয়তি বললো " এই জগতে সব কিছুই পরিবর্তনশীল। তুমি তোমার পরিবারের কথা চিন্তা করে মৃত্যুর হাত ছেড়ে দিতে চাইছো। কিন্তু মৃত্যু সকল জীবের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। মৃত্যু আছে বলেই জীবন এতো মহান। এই জীবন কে ভালো কাজে ব্যবহার করা উচিত।অথচ দেখো সবাই লোভ , লালসা চরিতার্থ করতেই ব্যস্ত।আজ যে সম্পর্কগুলোর জন্য পাপকাজ করছো একদিন সেই সম্পর্ক গুলো আর মধুর থাকবে না। সেই দিন পড়ে থাকবে শুধুই কর্ম।যে কর্ম তুমি ইহজীবনে করেছো সেই কর্মই তোমার শমন রূপে তোমার সামনে উপস্থিত হবে । সেই দিন তুমি কেবল একা তোমার কর্মফল ভোগ করবে।
সেজন্য তোমাকে বলছি তুমি বিন্দুমাত্র পিছুটান অনুভব না করে এগিয়ে চলো।ঐ তোমার গন্তব্য দেখা যাচ্ছে। আমি তোমার সহায়ক মাত্র। তোমার কর্ম ভালো তাই আমি মৃত্যু তোমার কন্যা সম রূপ ধারণ করে তোমাকে নিতে এসেছি।
যাদের কর্ম ভালো নয় তাদের কাছে আমি আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে আসি। ঐ দূরে তোমার কর্মফল তোমার জন্য খুব সুন্দর এক জগৎ তৈরী করেছে।চলো তোমার সুন্দর কর্মফল ভোগ করবে চলো।কর্মফল ভোগ সম্পূর্ণ হলে পুনরায় নতুন কোনো গর্ভে নতুন কর্ম করার জন্য জন্ম লাভ করবে।"

অনন্ত চিৎকার করে বললো "চাই না ,চাই না তোমার স্বর্গসুখ। আমি আমার ছোট্ট মেয়েটির কাছে ফিরে যেতে চাই। আমার স্ত্রী র কাছে যেতে চাই। আমার হাত ছেড়ে দাও দয়া করে।"

এমন সময় দূর থেকে একটা বাচ্ছা মেয়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো "বাবা ,ও বাবা কথা বলো না।এতো ঘুমোলে হবে ?আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে তো? তুমি বলেছিলে ছুটির দিন বেড়াতে নিয়ে যাবে , আইসক্রিম খাওয়াবে।ওঠো না ,ওঠো না।
ও মা দেখো না বাবা এখনো ঘুমাচ্ছে। কত্তো ডাকছি, কিছুতেই উঠছে না।"

অনন্ত কেঁদে উঠলো ,"ও গো মৃত্যু , আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে যেতে দাও। আমি তোমার সঙ্গে এখনি যেতে চাই না। আমার অনেক কাজ বাকি আছে। যেদিন সব কর্তব্য শেষ হবে সেইদিন তুমি এসো। আমি হাসি মুখে তোমার সঙ্গে যাবো।
আজ আমাকে ছেড়ে দাও।"
মৃত্যু উচ্চৈঃস্বরে হেসে বললো "যদি না ছাড়ি তুমি কি করবে ? লড়াইয়ে আমাকে হারাবার ক্ষমতা কারো নেই।"

অনন্ত বললো "জানি তুমি আমার চেয়ে শক্তিশালী। কিন্তু আমি একজন পিতা। কন্যার জন্য আমি যে কোনো শক্তির সঙ্গে ই লড়তে পারি। যতক্ষণ আমার অস্তিত্ব আছে ততোক্ষণ তোমার সঙ্গে লড়বো। কিছুতেই যাবো না তোমার সঙ্গে। আমি আর এক পাও এগোবো না। তোমার পা জড়িয়ে ধরে এই  এখানে বসলাম।দেখি তোমার কতো শক্তি । আমার কর্তব্য বড়ো না তুমি বড়ো আজ তার পরীক্ষা হয়ে যাক।"

এই বলে অনন্ত মৃত্যুর পা দুটো ধরে সেতুর ওপরেই বসে পড়লো। সুন্দর আলতা পড়া দুটি রাঙা চরণ। সেই পা দুটো চোখের ফোঁটা ফোঁটা জলে ভিজিয়ে দিতে দিতে বলে চললো "আমাকে ছেড়ে দাও মা। আমার স্বর্গ চাই না। আমার পরিবারের সদস্যদের মুখের হাসি আমার কাছে স্বর্গের সমান।"

ওদিক থেকে আরো উচ্চৈঃস্বরে স্পষ্টভাবে ভেসে আসছে একটা কচি গলার আওয়াজ "বাবা , ও বাবা , কথা বলো।দেখো মাও কাঁদছে। তুমি কথা বলো।"

মৃত্যু এর আগে কখনো এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। মৃত্যুর মন বড়ই কঠিন কঠোর।সে জন্মান্ধ।কারণ বিধাতা কখনো চায় নি সে তার শিকারের মুখের দিকে চেয়ে তাদের কষ্ট চোখে দেখে দয়া করে। কিন্তু বিধাতা তার চোখ না দিলেও কান দিয়েছে।আজ ছোট্ট একটি মেয়ের কচি কচি গলার স্বর তার মনে সব কিছুই তছনছ করে দিচ্ছে। তার কঠোরতা , তার নির্মমতা , এই সব কিছুই গলিয়ে দিচ্ছে।

আর সইতে পারলো না । শেষে অনন্তর হাত ধরে তুললো ।
মৃত্যু অনন্তর চোখের জল মুছে দিয়ে বললো "বাবা তুমি কেঁদোনা।আজ আমি তোমাদের বাবা মেয়ের ভালোবাসার কাছে পরাজিত। আমার এই পরাজয় খুশীর। তুমি যাও বাবা তোমার মেয়ের কাছে। যেদিন তোমার মেয়ের প্রতি কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে সেইদিন এই মেয়েকে ডেকো। আমি তৎক্ষণাৎ পৌঁছে যাবো তোমার স্নেহের টানে। যাও বাবা যাও। আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম। তুমি ফিরে যাও তোমার মেয়ের কাছে।"
মৃত্যু অনন্তর হাত ছেড়ে দিতেই অনন্ত ভক্তিভরে সেই কন্যা স্বরূপ মৃত্যুর দুটি আলতা পড়া রাঙা চরণে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম করলো। তারপর বললো "আসি মা।"
মৃত্যু বললো "এসো"।

ধীরে ধীরে চোখ মেলে চাইলো অনন্ত।দেখলো সে বিছানায় শুয়ে আছে।
স্ত্রী মিনতি বিছানার একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।আর মেয়ে তার বুকের ওপরে শুয়ে কেঁদে চলেছে। অনন্ত আস্তে আস্তে উঠে বসলো। মেয়ে বাবাকে উঠে বসতে দেখে বললো " মা দেখো বাবা উঠে বসেছে"।
মিনতি বললো " ওগো তোমার কি হয়েছিল ? আমি খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।"

অনন্ত বললো "তেমন কিছু নয়।   স্বপ্ন  দেখছিলাম।এক অতি আপনজন এসেছিলেন স্বপ্নে। আমি তাকে অনেক দিন বাদে আসতে বলেছি।সে সম্মত হয়ে চলে গেছে। "
তারপর অনন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো "চল মা তোকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে আসি।"(শেষ)।

Wednesday, September 11, 2019

রক্ষক ৭

                    (১১)
সিনহারাজা ফরেস্ট ,শ্রীলঙ্কা।
সময় - ২০৩৮ সাল।

থিরুপালী  তার গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে। আসলে বুনো শুয়োরটার পিছনে ধাওয়া করতে করতে একটা জেদ চেপে গেছে। গ্রামের সব যুবকদের মধ্যে তার শিকারের দক্ষতা বেশী একথা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করে। তার ছোঁড়া তীরে বুনো শুয়োরটা আহত হয়েছে এটা নিশ্চিত। মাটিতে পড়া ফোঁটা ফোঁটা রক্ত এই ব্যাপারে স্বাক্ষী দিচ্ছে।আরো কিছুটা ঝোপঝাড় ভেঙে এগিয়ে গিয়ে দেখলো বুনো শুয়োরটা একটা বিরাট গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ঝিমোচ্ছে। তার পিঠে এখনো থিরুপালীর  ছোঁড়া তীর গেঁথে আছে।থিরুপালীকে এগিয়ে আসতে দেখেই বুনো শুয়োরটা তীর বেগে সামনের টিলার একটা গুহায় এক ছুট্টে ঢুকে পড়লো। এইবার থিরুপালী একটু বেকায়দায় পড়লো। থিরুপালী এই দিকে আগে কখনো শিকারে আসেনি।এই দিকটাকে সবাই বলে  ' রাক্ষস বন'। গ্রামের বুড়োরা বলে এদিকেই কোথাও রয়েছে রাক্ষস গুহা।
এই গুহাটা সেই গুহা নয়তো ?
বিশাল গুহা মুখের মধ্যে দিয়ে  থিরুপালী এক প্রকার ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ভিতরে ঢুকলো।মনে মনে বুদ্ধের নাম জপ করতে লাগলো।এক অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠছে।
গুহাটা বাইরে থেকে যতটা বড়ো লাগছিলো , ভিতরে ঢুকে দেখলো আরো বড়ো। গুহার ভিতরে খুব বেশী অন্ধকার নেই। অনেক অনেক উঁচুতে একটা ফোকর দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ছে গুহার মধ্যে থাকা একটা জলের চৌবাচ্চায়। সেখান থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে গুহার ভেতরে এক মায়াবী মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
থিরুপালী গুহার ভেতরে ঢুকে প্রথমে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলো না। তারপর ক্রমশ চোখ অল্প আলোয় সয়ে এলে সব কিছুই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো।
গুহার ভেতরে অনেকটা প্রশস্ত হলঘরের মতো জায়গা। মধ্যিখানে একটা জলের চৌবাচ্চা।থিরুপালী জলের চৌবাচ্চার একদিকে দাঁড়িয়ে ছিলো।তার অপর দিকে একটা বিরাট বড়ো পাথরের সিংহাসন। সিংহাসন টা এতোটাই বড়ো যে তার বসবার স্থানে থিরুপালীরা তিন ভাই ও বাবা মা সমেত সেখানে শুয়ে পড়তে পারে।
সিংহাসনে এক ভীতিকর বিরাট কুৎসিত চেহারার মূর্তি  পদ্মাসনে বসে আছে। এতো বড় নিস্পন্দ মূর্তি দেখে থিরুপালীর ভয় করছিলো।শুয়োর টাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাওয়াই মঙ্গল।
থিরুপালী দেখলো বিশাল পাথরের সিংহাসনে র পাদদেশে বুনো শুয়ারটি নেতিয়ে পড়ে আছে। থিরুপালীর ভয় লাগছিলো। তাড়াতাড়ি শুয়োর টাকে শেষ করে দিয়ে সূর্যের আলো থাকতে থাকতে ঘরে ফিরতে হবে।থিরুপালী দ্রুত তার কাছে গিয়ে তীর ধনুক টা মাটিতে নামিয়ে রেখে কোমরে গোঁজা ছুরি টা বের করে শুয়োর টাকে বাগিয়ে ধরে তার গলায় পোঁচের পর পোঁচ মারতে লাগলো।শুয়োরটা যন্ত্রণায় ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে তারস্বরে চিৎকার করতে লাগলো। থিরুপালী একমনে তার কাজ করছিলো। কিন্তু তার মনে হলো পিছনে কিছু একটা নড়ে উঠলো। চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখলো সিংহাসনে বসা ভয়াবহ বিরাট মূর্তি টা উঠে দাঁড়িয়েছে। মূর্তি টা তার বিশাল হাত বাড়িয়ে থিরুপালীর কোমর টা জড়িয়ে ধরলো। ঠিক যে ভাবে কেউ বিড়াল ছানা কে ঘাড়টা ধরে তুলে ধরে তেমনি বিশাল বড়ো মূর্তি টা থিরুপালীকে চাগিয়ে তার মুখের কাছে তুলে আনলো।এক মূহুর্ত থিরুপালীর দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বিরাট বড়ো হাঁ করে থিরুপালীকে মুখে পুরে কয়েকবার চিবিয়ে গিলে ফেললো।
বহুকাল সাধনার পর সে ক্ষুধার্ত হয়েছিল।আজ জেগে উঠতেই দেখলো খাদ্য আপনা থেকেই তার কাছে এসে পৌঁছেছে। এটা তার সাধনার ফল।
এতকাল সাধনায় সে অনেক অভাবনীয় ক্ষমতা লাভ করেছে।আজ যে কোনো জায়গায় সে নিমেষে পৌঁছে যেতে পারে।যে কোন রূপ ধারণ করতে পারে।যে কোনো ভোগ্য বস্তু অনায়াসেই পেতে পারে। তবে যে সঙ্কল্প নিয়ে সে এই গুহায় হাজার হাজার বছর আগে সাধনায়  বসেছিলো তা আংশিক ভাবে সফল হয়েছে।
মূর্তি টি মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে গুহার বাইরে এলো।
বহুকাল বাদে সূর্যের মুখ দেখলো সে।

সে হলো রাক্ষস বংশের শেষ রাক্ষস  "ত্রিকাল"। মানব জাতির আক্রমণে রাক্ষস বংশ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সামান্য কিছু জন কোনোক্রমে টিকে যায়। কিন্তু সেই সামান্য কিছু জন রাক্ষস কালক্রমে মানব জাতির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অবলুপ্ত হয়। শেষ পর্যন্ত একজন মাত্র টিকে থাকে ।সে হলো "ত্রিকাল"।ত্রিকাল মানবজাতির অবলুপ্তি কামনা করে এই গুহায় সাধনায় বসে। কঠোর সাধনায় শেষ পর্যন্ত বিশ্বচৈতন্য তার অন্তরাকাশে জ্যোতি আকারে উপস্থিত হয়।

সেই জ্যোতি থেকে এক গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর তার অন্তকর্ণে বলে ওঠে

"তোমার সাধনায় আমি তুষ্ট। কিন্তু তুমি যে উদ্দেশ্যে সাধনা করেছো সেই ইচ্ছা আমি সরাসরি পূর্ণ করতে পারি না। তোমার বংশের পূর্বপুরুষের কৃতকর্মের পরিণামে তোমার বংশ লোপ পেয়েছে। মানবজাতি যদি অনুরূপ কর্ম করে তবে কালের নিয়মে তারাও অবলুপ্ত হবে। কিন্তু এই ক্ষণে আমি তাদের ধ্বংস সাধন করবো না। তবে তুমি তোমার ইচ্ছা পূরণের একটি সূযোগ পাবে। কিছু কাল পরে মানবজাতি এক ভয়াবহ সমস্যা র সম্মুখীন হবে। সেই সমস্যা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে এক রক্ষকের জন্ম হবে। সেই রক্ষকের  প্রয়োজন হবে এক ভয়ঙ্কর ক্ষমতাশালী অস্ত্রের।তার নাম পাশুপত। আমি তোমাকে অতীব ক্ষমতার অধিকারী করলাম। আমার আশীর্বাদে তুমি যে কোন রূপ ধারণ করতে পারবে।যে কোনো অস্ত্র তুমি ইচ্ছা করা মাত্রই তোমার হস্তে আবির্ভূত হবে। তুমি ইচ্ছা মাত্র যে কোনো স্থানে গমন করতে পারবে। রক্ষক পাশুপত যেখানে লুকিয়ে রাখা আছে সেখানে পৌঁছানো মাত্রই তুমি তা জানতে পারবে। তুমি যদি রক্ষককে বাধাদান করে সফল হও তবে মানবজাতি পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হবে।"
তারপর থেকে ত্রিকাল  এতোদিন ধরে সাধনায় লিপ্ত থেকে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু আজ তার সাধনা ভঙ্গ হওয়ায় বুঝতে পারলো তার প্রতিশোধের সময় আসন্ন।আর অল্প কিছুদিন পরেই তার ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে।
ত্রিকাল গুহার বাইরে এসে দেখলো সব কিছুই ছোট হয়ে গেছে। গাছপালা ও অনেক ছোটোখাটো। এখন তাকে কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকতে হবে। তাই প্রথমে নিজের আকৃতি একটু আগেই খাদ্য হওয়া মানুষটির মতো করে নিলো। তারপর ঐ মানুষটির মতোই রূপ ধারণ করে নিলো।
এবার তাকে কেউ রাক্ষস বলে চিনতে পারবে না।

এখন শুধু অপেক্ষা সঠিক সময়ের।

                     (১২)

পাঠশালায় আরো একটি বিশেষ দিন।

গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন
"প্রিয় শিক্ষার্থীগণ,
                             আজ তোমাদের বলবো তিনটি বিশেষ জ্ঞান কূপ সম্পর্কে। সৃষ্টির তিনটি আদি জ্ঞান হলো সত্ত্ব ,রজঃ ও তমো। গুরু পরম্পরায় প্রচলিত আছে যে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছিল এই তিনটি গুণ কে আশ্রয় করে। সৃষ্টির প্রতিটি প্রাণে এই তিনটি গুণ বর্তমান। কিন্তু গুণগুলো সব প্রাণীতে সমান অংশে নেই। কোনো প্রাণীর মধ্যে হয়তো সত্ত্ব গুণের আধিক্য আবার কোথাও রজঃ গুণের। আবার কোনো প্রাণীর মধ্যে  তমো গুণ বেশি আছে। সেজন্য সব প্রাণীর স্বভাব এক নয়। এমনকি একই প্রজাতির প্রাণীর মধ্যেও ভিন্ন স্বভাবের হয়। এছাড়া একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে ভিন্ন আচার ব্যবহার দেখা যায়।
এসবই হয় তিনটি গুণ সমান অংশে না থাকার জন্য। যদি তিনটি গুণ সমান অংশে কারো মধ্যে থাকে তবে সে সৃষ্টির গোপন ও গুপ্ত শক্তি গুলো পাওয়ার অধিকারী হয়। এবং সেই ব্যক্তি পক্ষপাতশূন্য এবং কল্যাণকারী হয়।
এছাড়া সৃষ্টির সব জ্ঞান তার কাছে সহজলভ্য হয়।
দুই ভাবে এই তিনটি গুণের অসাম্য দূর  হয়।
প্রথমত সাধনার দ্বারা।যোগ সাধনার দ্বারা শরীরের তিনটি গুণের অসাম্য দূর হয়।

আরো একটি পদ্ধতি আছে। কিন্তু সেটা খুবই গোপন এবং ভীষণ কঠিন। এই বিশ্বে তিনটি গুণ দিয়ে তৈরী তিনটি গোপন কূপ রয়েছে।ঐ তিনটি কূপে যদি কেউ অবগাহন করে তবে তার শরীরের তিনটি গুণের অসাম্য চিরতরে দূর হয়ে যায়। কিন্তু এই তিনটি কূপের স্নান সহজেই করা যায় না। প্রতিটি কূপ নিজস্ব রক্ষাকবচ যুক্ত। এই রক্ষাকবচ সৃষ্টি হয়েছে সাধারণের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং কেবলমাত্র প্রকৃত যোগ্যতার মানুষের জন্য।
প্রথম দুটি কূপ পৃথিবীতে রয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ও সবচেয়ে শক্তিশালী কূপটি রয়েছে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপায়।

এই তিনটি জ্ঞান কূপে অবগাহন করলে সেই ব্যক্তি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র "পাশুপত "পাওয়ার যোগ্য হয়। কিন্তু সেজন্য আরো ভয়ানক পরীক্ষা দিয়ে তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়।আর এই পাশুপত রয়েছে আমাদের মার্সিয়ান জাতির অধীনে। বহুকাল পূর্বে মার্সিয়ান জাতির এক মহান জ্ঞানী তার সাধনার পূর্ণ বিকাশের পর তার অর্জিত জ্ঞান দ্বারা বিশ্বচৈতন্যর নির্দেশে এই পাশুপত ও তার রক্ষাকবচ তৈরী করেন।পাশুপতের প্রকৃত স্বরূপ কেউই জানে না।সেটি কেমন দেখতে ,কি ভাবে ব্যবহার করতে হয়, তার ক্ষমতা কতটা এগুলো কেউ জানে না।কারণ আজ পর্যন্ত তার রক্ষাকবচ ভেদ করতে সকলেই ব্যার্থ হয়েছে।
তবে  সেই জ্ঞানী পুরুষ ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন যে যখন এই সৌরমণ্ডলে বিরাট কোনো বিপদ উপস্থিত হবে তখন এই রক্ষাকবচ ভেদন করবার উপযুক্ত ব্যাক্তি  জন্ম গ্রহণ করবেন।"

গুরুদেব তমোঘ্ন একটু সময় চুপ করে রইলেন। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্যে বললেন "আমি আশা করি যখন উপযুক্ত সময় উপস্থিত হবে তোমাদের মধ্যে কেউ একজন নিজেকে উপযুক্ত প্রমাণ করে তিনটি জ্ঞান কূপ অবগাহন ও পাশুপত অর্জন করবে।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে ।)

Tuesday, September 10, 2019

রক্ষক ৬

              (৯)
স্থান - নিউইয়র্ক, রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতর।
সাল -  ২০৩২ 
রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব  এমিলি স্মিথ  
সাংবাদিক সম্মেলনের  নিউইয়র্ক টাইমস কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে "মিশন লাইফ " এর বিস্তারিত জানালেন।
এমিলি বললেন"   প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল  'মিশন লাইফ ' কে সম্পূর্ণ ভাবে পৃথিবী থেকে পরিচালনা করা হবে। কিন্তু পুরো কর্মকাণ্ড টি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র থেকে ও চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে সংঘটিত হবে। এক্ষেত্রে পৃথিবী থেকে কম্যুনিকেশন করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাবে। এই দেরি টুকু আমাদের পক্ষে ঘাতক হতে পারে। সেজন্য বিজ্ঞানী দের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করা হয়েছে একটি মহাকাশ যানে করে চার জন মহাকাশচারীদের একটা টিম লক্ষ্যবস্তুর যতটা সম্ভব কাছে গিয়ে পুরো অপারেশন টি পরিচালনা করবেন। এই চারজন মহাকাশচারী দের মধ্যে আমেরিকার দুই জন , রাশিয়ার একজন ও ভারতীয় একজন থাকবেন। আমেরিকান দুইজনের নাম যথাক্রমে ফিলিপ গর্ডন ও লুসিয়া টোরি। রাশিয়ার একজন হলেন সের্গেই গ্রিগেরোভিচ এবং ভারতের একজন হলেন নেহা চৌধুরী। চারজনের মধ্যে নেতৃত্ব দেবেন ফিলিপ গর্ডন।
২০৩৬ সালের জানুয়ারি মাসে ওদের   মহাকাশ যান 'শয়তানের চোখের ' উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে।
                    (১০)

পাঠশালা।
হিমালয়ের এক গোপন উপত্যকা।
সময় - ২০৩৪ সাল।
আদিত্য আরো কয়েকজন সমবয়সী ছেলের সঙ্গে মার্শাল আর্টের মধ্য পর্যায়ে শিক্ষা লাভ করছে। গুরুদেব তমোঘ্ন নিজে দাঁড়িয়ে আদিত্যর শিক্ষা তদারকি করছিলেন। সাধারণত উনি উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা করেন। কিন্তু ইদানিং সবাই একটু অবাক হয়ে যাচ্ছে যে গুরু তমোঘ্ন মধ্য পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিজে তদারকি করছেন।
আদিত্য ইতিমধ্যেই মার্শাল আর্টের সব বিভাগে দক্ষ হয়ে উঠেছে।খালি হাতে লড়াইয়ে তার জুড়ি কেউই নেই।এবারে শুরু হয়েছে অস্ত্র শিক্ষা।
প্রথমে লাঠি দিয়ে শুরু। তারপর ধীরে ধীরে তরবারি ও অন্যান্য অস্ত্র।
পাঠশালায় নিয়মের খুবই কড়াকড়ি।
শিক্ষার্থীদের ভোর বেলায় উঠতে হয়। সূর্যোদয় থেকে  টানা তিন ঘণ্টা শারীরিক কসরত। তারপর বিভিন্ন পাঠ নেওয়া। মূলত অঙ্ক , বিজ্ঞান,ও  বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা।


দুপুরে খাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস করতে হয়।এই ক্লাসটা সব শিক্ষার্থী দের খুব প্রিয়।কারণ এই ক্লাসে এই সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে রহস্যময় ও সবচেয়ে বিপদজনক শক্তি গুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ধারণা তৈরী করা হয়। সেই সঙ্গে এটাও জানানো হয় 'পাঠশালা ' র শিক্ষক সম্প্রদায় ও শিক্ষার্থীরা কিভাবে পৃথিবীর মানব সভ্যতা কে সেই সব বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। একদিন গুরু তমোঘ্ন এলেন মধ্য পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীতে।
গুরু তমোঘ্ন যে এই শ্রেণীতে শিক্ষা দিতে আসবে একথা কেউ ভাবতেও পারেনি। উনি শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করতেই সকলে একসাথে উঠে দাঁড়িয়ে প্রণাম জানালো। উনি সবাইকে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতে বললেন।
গুরু তমোঘ্ন বলতে শুরু করলেন "  প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
                আজ তোমাদের আমি বিশেষ এক বিষয়ে  জ্ঞান প্রদান করবো। এই সৌরমণ্ডলের দুইটি গ্রহে ও একটি উপগ্রহে বুদ্ধিমান জীবিত প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। একটি হলো এই পৃথিবী। দ্বিতীয় গ্রহ টি হলো মঙ্গল। এছাড়া বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপা তে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। পৃথিবী ও মঙ্গলে সরাসরি প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল। কিন্তু ইউরোপায় সরাসরি প্রাণের উদ্ভব হয় নি। এই 'মিল্কীওয়ে গ্যালাক্সি' র  কেন্দ্রের কাছাকাছি যেখানে বহু নক্ষত্রের সমাবেশ রয়েছে সেখানে রয়েছে এক বিশেষ রহস্যময় কুয়াশা দিয়ে ঢাকা এক গ্রহ ।এই রহস্যময় গ্রহটির নাম ' মায়া' । 'মায়া ' গ্রহটি দুটি যুগ্ম নক্ষত্র কে ঘিরে আবর্তন করে । ঐ দুইটি যুগ্ম নক্ষত্রের নাম হলো "শ্রী " ও
 " শ্রীপতি " । এই " মায়া "  নামের রহস্যময় গ্রহে খুবই উন্নত প্রজাতির জীব বসবাস করেন। তাদের বলা হয় মাতৃকা।এরা সকলেই নারী। প্রচন্ড মানসিক ক্ষমতা সম্পন্ন এই মাতৃকা জাতি। বলা হয়ে থাকে এই প্রজাতির সব  মাতৃকার উদ্ভব হয় মায়া গ্রহের ভূগর্ভস্থ এক রহস্যময় মন্দিরে সর্বদা জ্বলন্ত এক নীল বর্ণের জ্যোতি যুক্ত গোলক থেকে।তাই মাতৃকা জাতির সব নারীদের ভ্রু মধ্যে অবস্থান করছে ত্রিভূজাকার এক নীলাভ মণি।একে বলা হয় শূন্য মণি। এই শূন্য মণি ওদের তৃতীয় নয়ন স্বরূপ।  বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন কিছু মাতৃকার শূন্য মণি তাদের অতীত ও ভবিষ্যৎ দর্শন করায়। এছাড়া সব মাতৃকাই তাদের শূন্য মণির সাহায্যে খাদ্য , পানীয় ও বাতাসের সাহায্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে।এরা অতি উষ্ণ ও অতি শীতল যে কোনো স্থানেই জীবিত থাকতে পারে। সর্বোপরি এরাই একমাত্র জীব যারা নিজেদের শরীরকে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবহীন করে যে কোনো মাধ্যমে উড়তে পারে। এজন্য তারা কাজে লাগায় তাদের কপালের ভ্রু মধ্যে অবস্থিত   শূন্য মণি কে।
 এই মাতৃকা গণের মধ্যে বিশেষ কিছু জন বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপায় অবস্থান করেন।তারা সেখানে সৃষ্টির এক গোপন সম্পদ পাহারা দেন।মাতৃকা গণ বিবাহ করেন না। তবে বিশেষ কিছু কারণ ঘটলে তারা বিবাহে রাজী হন।তারা স্বামী হিসাবে পৃথিবীর কোনো পুরুষ কে বেছে নেন। এই জন্যই বলা হয় মাতৃকা জাতির সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বহু পুরাতন।এই বিবাহের ফলে যদি কোনো নারী সন্তান হয় তবে সে নতুন মাতৃকা রূপে পরিগণিত হয়। কিন্তু যদি পুরুষ সন্তান হয় তবে সে মাতৃকা ও মানব জাতি উভয়ের গুণ সম্পন্ন হয়।সে পুরোপুরি মানুষ হয় না আবার পুরোপুরি মাতৃকা হয় না। তাদের অর্ধমানব বলে।তারা ভীষণ শক্তি সম্পন্ন অসাধারণ গুণাবলী র অধিকারী হয়। অতীতের বহু মানুষ যারা মহামানব রূপে পরিগণিত হন তাদের মধ্যে অনেকেই অর্ধমানব ছিলেন।
যুগ যুগ ধরে এই অর্ধমানব গণ পৃথিবীকে রক্ষা করেছেন এবং পৃথিবীর ইতিহাসে বিরাট বদল এনেছেন।
এবার তোমাদের বলি 'মায়া' গ্রহের কথা। সবচেয়ে রহস্যময় গ্রহ হলো 'মায়া'।বলা হয় যে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আসল রহস্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে এই 'মায়া' গ্রহে।মাতৃকা জাতি এই মায়া গ্রহের সেই লুকিয়ে থাকা জ্ঞান কে রক্ষা করে চলেছে। একমাত্র কোনো উপযুক্ত অধিকারী যার মধ্যে মাতৃকার বৈশিষ্ট্য বর্তমান তেমন কেউ এই জ্ঞান লাভ করতে পারেন।
হয়তো ভবিষ্যতে তোমাদের মধ্যে কেউ আছে যে উপযুক্ত হয়ে 'মায়া'র আসল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবে।
পরবর্তী কোনো দিন তোমাদের এই সৌরমণ্ডলের তিন জ্ঞান কূপ ও সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র 'পাশুপত' নিয়ে ধারণা প্রদান করবো।
( বাকি অংশ পর্বে।পরের পর্বের নোটিফিকেশন পেতে আমায় অনুসরণ করুন।)