Crss colum

Tuesday, December 15, 2020

গরীব

যাচ্ছিলাম ক্লাবে একটু আড্ডা মারতে হঠাত বাবা এসে বললো ," খোকা একটা কথা ছিলো।"
আমি বাবার দিকে ঘুরে গিয়ে বললাম ," কি ব্যাপার ?"
বাবা একটু ইতস্তত করে বললো  , " তোর মায়ের ঘাড়ে টিউমারের ব্যাথাটা আবার বেড়েছে। অপারেশন টা করিয়ে নিলে ভালো হয়।"
আমি বললাম " দেখছি , কি করা যায়। তুমি সদরের দরজাটা বন্ধ করে দাও । আমি একটু ক্লাব থেকে ঘুরে আসছি।"
ক্লাবে এসেও ঠিক ভালো লাগছে না। কিছুক্ষন থেকেই ফিরে এলাম। রাতে শোওয়ার সময় মৌ বললো " কি ব্যাপার বলো তো? তোমাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। আমি বললাম," জানোই তো চটকলের চাকরি। যা মাইনে পাই তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।তাই মাঝে মাঝে ওভার টাইম করতে হয়। তার ওপর মায়ের টিউমারের যন্ত্রণাটা বেড়েছে। গতমাসেই ডাক্তার বাবু বলেছেন যতো শীঘ্র সম্ভব অপারেশন করাতে।যা টাকা কেটেকুটে হাতে পাই তাতে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি।পি এফ ফান্ড থেকে লোন হয়তো তুলতে পারি কিন্তু তাতে মাসের শেষে অনেকগুলো টাকা কেটে নেবে।কি করা যায় তাই ভাবছি।"
মৌ বললো "তোমার মামার কাছে একবার বলো না। তোমার মামার তো টাকার অভাব নেই।ইনকাম ট্যাক্স এর অতোবড় অফিসার। তাছাড়া তোমার মা তার একমাত্র দিদি।মামা ইচ্ছা করলেই মামণির অপারেশন করার টাকাটা দিয়ে দিতে পারেন। "
আমি বললাম " কিন্তু তুমি তো জানো গতবার বাড়ি মেরামত করার জন্য মামার কাছে দশ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম সেটা এই মাসে পুজোর বোনাস পেলে শোধ দেওয়ার কথা ছিল। বোনাসের টাকাটা খোকনের চিকিৎসার জন্য পুরো খরচ করে ফেলেছি।ফোনে মামীমা কে এখনি টাকাটা দিতে পারবোনা বলতেই মামীমা আমাকে অনেক কথা শোনালেন।এর উপরে মায়ের চিকিৎসা র জন্য নতুন করে টাকা চাইতে গেলে আমাকে আস্ত রাখবে না।"
মৌ বললো " তুমি একবার গিয়েই দেখো না। কালকে তোমার ছুটি ।কাল বিকালেই যাও।"
মামার বাড়ি পাশের গ্রামেই। বিরাট ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়ি। গেটে কলিং বেল টিপতেই  মামীমা দরজা খুলে দিলো। আমাকে দেখেই ঠোঁট বেঁকিয়ে বললো " ও তুই।তা কি মনে করে?"
আমি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে বললাম " না মানে একটা দরকার ছিলো তাই এসেছি।"
মামা দেখলাম সেজেগুজে কোথাও যাবে বলে বের হচ্ছে। আমি বললাম কোথাও যাচ্ছ? মামা কিছু উত্তর দিলো না।মামীমা বললো ,"  অমিতের শোওয়ার ঘরটায় একটা এসি লাগানো হবে।তোর মামা এসি কিনতে যাচ্ছেন। এখন নাকি ভালো ডিসকাউন্ট দিচ্ছে।" 
অমিত মামীমার ধর্ম ছেলে কাম বাড়ীর কাজের লোক। রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই।মামা মামী নিঃসন্তান। পাড়ার একজনের ছেলে এই অমিত।মামীমা তাকে ধর্মছেলে বানিয়েছে। এই বাড়ীতেই থাকে । নিজের বাড়িতে যায় না বললেই চলে।
মামা অমিতের সঙ্গে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল।মামীমা আমাকে প্রশ্ন করলো " চা খাবি নাকি? " আমি না বলতে মামীমা যেন একটু খুশিই হলো।
আমি এবার বললাম "  মামীমা মায়ের ঘাড়ের কাছে একটা  টিউমার হয়েছে। অপারেশন করাতে হবে। মামা যদি হাজার তিরিশের মতো টাকা ধার দেন তবে এই মাসেই মায়ের অপারেশন টা করাতে পারি।"
মামীমা চোখ বড়বড় করে বললেন " তুই বললি কি করে।তোর একটু লজ্জা করলো না? আগের টাকাটাই এখনো ফেরত দিলি না তার উপর আবার ধার চাইতে এসেছিস।অমন দু একটা টিউমার সবার থাকে। আমার বড়দির হাতে ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি একটা টিউমার আছে।দু একদিন ওষুধ খেলেই যন্ত্রণা গায়েব হয়ে যাবে। তাছাড়া তোর মামা এখন টাকা পাবে কোথায় ? এই তো কয়েকদিন ধরেই বলছি ছেলেটার ঘরে একটা এসি কিনে দাও।তোর মামা বলে টাকা নেই। শেষে এক বন্ধুর থেকে ধার করে এসিটা কিনে দিচ্ছে।বন্ধুর টাকাটা অবশ্য আমরা সামনের মাসেই দিয়ে দেবো। আমরা টাকা ধার নিলে অবশ্যই যে সময় বলবো ঠিক সেই সময়েই দিয়ে দেবো।তোর মতো কথার খেলাপ করি না। তোদের তো আবার গন্ডারের চামড়া।যতোই বলি শোধরাবি না।ওসব টাকা ফাকা ধার দিতে পারবোনা। বরং পারলে আমার দশ হাজার টাকা টা দিয়ে যা। ছেলেটা নাকি অনলাইনে একটা ভালো মোবাইল দেখেছে। সামনের মাসেই ওর জন্মদিন। তুই টাকাটা দিলে কিনে দিতাম।"
আমি বললাম " ঠিক আছে মামীমা। আজ উঠি। " এই বলে উঠে দাঁড়িয়ে সদর দরজার কাছে আসতেই মামীমা বললো " দরজাটা একটু ভেজিয়ে দিয়ে যা।আর ঠাকুরঝি কে বলবি  কয়েকদিন পেন কিলার খেলেই কমে যাবে।"
বাইরে বেরিয়ে এসে সাইকেলে উঠে পড়লাম। চোখটা একটু ছলছল করছিল।হাত দিয়ে চোখটা কচলে নিলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বললাম " আমি গরীব কিন্তু মামা মামী আরো গরীব ।প্রায় ভিখারির অবস্থা। ওনার ভালো করো।"
কালকেই অফিসে গিয়ে চল্লিশ হাজার টাকা পি এফ লোনের দরখাস্ত করে দেবো। তিরিশ হাজার মায়ের চিকিৎসার জন্য আর বাকিটা অমিতের জন্মদিনের মোবাইলের জন্য।

No comments:

Post a Comment