Crss colum

Monday, October 29, 2018

অলৌকিক তরবারি পর্ব ৩

(শক্তিক্ষেত্রে প্রবেশ)

জঙ্গল কাল শেষ হয়ে গেছে।আজ আদিত্য যে জায়গা দিয়ে এগিয়ে চলেছে সেখানে শুধুই পাহাড়ের সারি। বিশাল বিশাল তুষার ধবল শৃঙ্গ গুলো যেন এই অঞ্চলের প্রহরী। রক্তচক্ষু মেলে পাহারা দিচ্ছে অবাঞ্ছিত অতিথি দের আটকে রাখার জন্য।
পথ বলে কিছু নেই। শুধু মন্ত্র পূত কাপড়ের নির্দেশিত দিকে এগিয়ে চলা।খাদ্য যা ছিল তা কাল শেষ হয়ে গেছে। এখন ঝর্ণা র জল ছাড়া খাওয়ার জন্য কিছু ই নেই।
হঠাৎ আদিত্য র মনে হলো বহু বহু দূরে কি যেন একটা ঝিলিক দিয়ে উঠলো। এতো দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না।ঐ দিকেই আদিত্য চলেছে। বেশ অনেকটা সময় যাওয়ার পর মনে হলো ওটা একটা মন্দিরের স্বর্ণ কলস ।পড়ন্ত বিকালের রৌদ্র কলসের গায়ে এসে পড়ছে বলে চকচক করছে। আদিত্য দ্রুত ঘোড়া ছোটালো।যে করেই হোক সন্ধ্যা র আগে ঐ মন্দিরে পৌঁছতে হবে।
সূর্যাস্তের ঠিক আগে আদিত্য মন্দিরের দোর গোড়ায় পৌঁছে গেলো।
বিশাল বিরাটকায় মন্দির। সম্পূর্ণ কালো পাথরের তৈরী। মাথায় স্বর্ণ কলস। কিন্তু কেউ কোথাও নেই।এত নির্জনতা আর এই বিশাল মন্দির । আদিত্য বিস্মিত হলো। এই নির্জনে এই বিরাট স্থাপত্য তৈরী করলো কে ? আর কেন ?
যাইহোক আদিত্য ঠিক করলো রাতটুকু এই মন্দিরে কাটিয়ে দেবে।  সামনে কিছুটা খোলা জায়গায় কচি কচি ঘাস জন্মেছে। আদিত্য ঘোড়াটাকে ঐ ঘাস জমিতে ছেড়ে দিল ঘোড়াটার খিদে পেয়েছে। শিক্ষিত ঘোড়া। প্রভুকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। মনের আনন্দে ঘোড়াটি ঘাস খেতে লাগলো।
আদিত্য মন্দিরে প্রবেশ করলো। পরপর তিনটি বিশালাকৃতির ঘর ফেলে একবারে শেষ ঘরটিতে প্রবেশ করলো। সামনে উচুঁ বেদীর উপর শিব লিঙ্গ ।
শিব লিঙ্গের সামনে একটি তেলের  প্রদীপ জ্বলছে।আর শিব লিঙ্গের সামনে একটি পাত্রে কিছু ফল রাখা আছে।
আদিত্য একটু এগোতেই একটা গুরু গম্ভীর স্বর ভেসে এলো ,‘ শিব লিঙ্গের সামনে রাখা প্রসাদ গ্রহণ করো।আর রাত্রে এখানেই বিশ্রাম করো। এই মন্দির শক্তি ক্ষেত্রের প্রবেশ দ্বার।কাল তোমায় শক্তি ক্ষেত্রে প্রবেশের উপায় বাতলে দেবো।’
আদিত্য বুঝতে পারলো না কে তাকে নির্দেশ দিলো। যাইহোক আপাতত নির্দেশ পালন করে একটা ঘুম দেওয়া যাক। এই বলে আদিত্য ফলের পাত্র টি নিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লো।
পরের দিন খুব ভোরে আদিত্য র ঘুম ভাঙ্গলো।সবে একটু আলোর আভাস দেখা দিয়েছে। আদিত্য মন্দির থেকে বেরিয়ে তার ঘোড়ার কাছে গেল। শিক্ষিত ঘোড়া। প্রভুকে দেখে চিঁহি করে আওয়াজ করল। আদিত্য ঘোড়ার পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে বললো ‘ভালোই আছিস মনে হচ্ছে। আমি না ফেরা পর্যন্ত এই ক্ষুদ্র চারণক্ষেত্রেই অবস্থান কর।  ’
মন্দিরের পাশে ই একটা জলের কুন্ড। আদিত্য সেখানে মুখ  হাত ধুয়ে
আবার যখন আদিত্য মন্দিরে প্রবেশ করলো তখন  দেখলো মন্দির টি আক‌তিতে বিশাল ও নানাবিধ কারুকার্য সমন্বিত। এমন নির্জন পরিবেশে এমন বিশালাকৃতির মন্দির বড়ই বিস্ময়কর।  আদিত্য তন্ময় হয়ে মন্দিরের শোভা দেখছিলো। হঠাৎ কানে গেল কেউ যেন  তাকে উদ্দেশ্য করে ডাকছে। সেই গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর বলছে ‘ এসো বৎস ,এসো।’
আওয়াজ টা ভেসে আসছে শিবলিঙ্গের দিক থেকে।  মন্দিরের শেষ প্রান্তে এক বিশাল বেদীর উপর এক বিরাটাকৃতি শিবলিঙ্গ। কালো কষ্টিপাথরের তৈরী।তার পিছন দিক থেকে কন্ঠস্বর টি ভেসে আসছে।
আদিত্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো দেখা যাক কে তাকে আহ্বান করছে। নিচের থেকে শিবলিঙ্গের বেদীর  উপর ওঠানামা করার জন্য সোপান রয়েছে। আদিত্য সোপান বেয়ে শিবলিঙ্গের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না যে কে তাকে ডাকছে। সেই কন্ঠস্বর তখনো বলছে ‘ এদিকে এসো বৎস। এদিকে এসো ।’আদিত্য  শিবলিঙ্গের সামনে দিকে কিছুই না দেখতে পেয়ে লিঙ্গের পিছনের দিকে গেলো। শিবলিঙ্গের পিছনের দিকে রয়েছে এক গুপ্ত কক্ষ।যার সিঁড়ি ধাপে ধাপে নেমে গেছে গুপ্ত কক্ষের ভেতরে। ভেতর নিকষ কালো অন্ধকার। সেই কালো অন্ধকার থেকে আওয়াজ আসছে ‘এদিকে এসো বৎস,এদিকে এসো।’
আদিত্য ভাবতে লাগলো এই অন্ধকার কক্ষের ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে কিনা। এদিকে ওদিকে চেয়ে দেখতে চোখে পড়লো একটা মশাল গুপ্ত কক্ষের সিঁড়ি র পাশের দেয়ালে আটকানো রয়েছে।আর তার পাশেই এক কুলুঙ্গি তে রয়েছে আগুন জ্বালিয়ে নেওয়ার চকমকি পাথর  । আদিত্য মশালটা পেড়ে চকমকি পাথর ঠুকে সেটা জ্বালিয়ে নিলো। এবার চললো গুপ্ত কক্ষের ভিতর।
অনেকটা সিঁড়ি বেয়ে নামার পর একটা বিশাল কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করলো।
কক্ষের চারিদিকে মশালের আলোয় আলোকিত হতে আদিত্য চোখে যেটা পড়লো তা দেখে তার বুক হিম হয়ে গেলো। সেই কক্ষের একদিকে রয়েছে এক বিরাট ভীষণাকৃতির অজগর সাপ।
অজগর টি আদিত্য কে দেখতে পেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো। আদিত্য ইচ্ছা করলেই পিছিয়ে যেতে পারে। কিন্তু বিপদে পিছিয়ে যাওয়া তার স্বভাবে নেই। কক্ষের একপাশে  পাথরের দেওয়ালে একটা গর্ত দেখে তার মধ্যে মশাল টি গুঁজে দিলো।এর পর খোলা তরবারি উচিঁয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ভয়ংকর অজগরের অপেক্ষায়।
বিশাল অজগর ও মানুষের যুদ্ধ চললো বেশ কিছুক্ষণ ধরে।
অজগরটি চেষ্টা করছিলো আদিত্য কে পেঁচিয়ে ধরার। কিন্তু আদিত্য দ্রুত গতিতে পাশ কাটিয়ে বারেবারে অজগর টিকে ফাঁকি দিতে লাগলো। অবশেষে একবার মূহুর্তের জন্য সুযোগ পেয়ে আদিত্য তলোয়ারের এক কোপে অজগর টিকে দুই আধখানা করে দিলো।
কিন্তু একি কাণ্ড। অজগরের মৃতদেহ টি ধীরে ধীরে পুরো অদৃশ্য হয়ে গেলো।আর তার বদলে সেখানে দৃশ্যমান হলো এক দেবকান্তি পুরুষ।
আদিত্য সব ব্যাপার স্যাপার দেখে হতচকিত হয়ে গেল।
সেই দেবকান্তি পুরুষ বললো ,‘ আমি তোমার জন্য ই অপেক্ষা করছি এতকাল।’
আদিত্য বললো ‘আপনি কে ?’
সেই পুরুষটি উত্তর দিলো ‘ আমি শক্তিক্ষেত্রের প্রবেশ দ্বারের রক্ষক।  ঐ অজগরের শরীর হলো   আমার মায়াবী রূপ। আমাকে যে হারাতে পারে শুধুমাত্র তাকেই আমি শক্তিক্ষেত্রে প্রবেশের অধিকার দিই।শক্তিক্ষেত্র হলো এক অতি মায়াবী শক্তিশালী উন্নত জাতির নগরী। সেখানে যারা বাস করে তারা অতীব শক্তিধর।এসো তোমায় আমি সেই আশ্চর্য গোপন নগরীতে প্রবেশের পথ দেখিয়ে দিই। কিন্তু মনে রেখো যে পথ দিয়ে প্রবেশ করছো সেই পথে কিন্তু ফিরে আসতে পারবে না। ফেরার পথ তোমায় নিজেকে খুঁজে নিতে হবে।   ’
এই সব বলতে বলতে সেই আশ্চর্য পুরুষ টি আদিত্য কে নিয়ে গেলো কক্ষের এক প্রান্তে । সেখানে এক বিশাল প্রস্তর খন্ডের তৈরী দরজা। দরজাটি বন্ধ। পুরুষটি বললো ‘ শত হস্তির বল প্রয়োগ করলেও এই দরজা খুলবে না। এটা খোলে এক বিশেষ মন্ত্রের সাহায্যে।’
এই বলে তিনি বিড়বিড় করে একটি মন্ত্র বলে দরজার ওপর তিনটি টোকা মারলো।সাথে সাথেই বিশাল দরজা ঘরঘর আওয়াজ করে খুলে গেল। আদিত্য র নজরে এলো এক বিরাট আঁকা বাঁকা সুড়ঙ্গ। পুরুষ টি আদিত্য কে বললো ,‘এই পথ ধরে চলে যাও ।এর অপর প্রান্তে আছে তোমার আকাঙ্খিত নগরী শক্তিক্ষেত্র।’
আদিত্য বললো ‘ কিন্তু আপনি বলছেন যে আমি এই পথে ফিরবো না। সেক্ষেত্রে আমার বাহনের কি হবে?’
পুরুষ টি মৃদু হেসে উত্তর দিলো‘ চিন্তা করো না । তোমার বাহন আমার তত্ত্বাবধানে নিরাপদেই থাকবে। তুমি যখন শক্তি ক্ষেত্র ত্যাগ করবে তবে আমি ঠিকই জানতে পারবো। আমি তখন তোমার বাহন যোগবলে সেখানে পৌঁছে দেবো। তোমার মতো বীরশ্রেষ্ঠ র জন্য এটুকু তো আমার করা উচিত। এখন তুমি যাও।’
আদিত্য সেই অপরূপ দেবকান্তি পুরুষ কে প্রণাম করে সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করলো।
কিছুটা এগোনোর পর  ঘড়ঘড় শব্দ করে সুড়ঙ্গের মুখটা বন্ধ হয়ে গেল।এখন এই সুড়ঙ্গে আদিত্য একা। সুড়ঙ্গ টা কিন্তু অন্ধকার নয়। হালকা একটা আলো রয়েছে। তবে আদিত্য বুঝতে পারলো না কোথা হতে এই আলো আসছে। আদিত্য এগিয়ে চললো। আঁকা বাঁকা সুড়ঙ্গ পথে এগোতে এগোতে এক জায়গায় গিয়ে দেখলো সুড়ঙ্গ শেষ। সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে এক রাশ আলো এসে পড়েছে।
 কোথা হতে এতো আলো এসে পড়ছে  বোঝা যাচ্ছে না। শুধু একগাদা আলো এসে আলোর কুয়াশা সৃষ্টি করেছে। আদিত্য র মস্তিষ্কের মধ্যে কেউ যেন বলে দিলো যাও ‘ঐ কুয়াশার মধ্যে গিয়ে দাঁড়াও।’
আদিত্য ধীরে ধীরে অতি সন্তর্পনে ঐ আলোর তৈরী কুয়াশার মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালো।
প্রথমে কিছুই বুঝতে পারলো না।তার পর তার দৃষ্টি গিয়ে পড়লো হাতের মায়া আংটির ওপর। আংটিটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আংটি হতে এক নীলাভ রশ্মি বের হয়ে আদিত্য র চারপাশে ঘুরতে লাগলো।অতি দ্রুত নীলাভ রশ্মির ঘুর্ণন আদিত্য র চারিদিকে এক বলয়ের সৃষ্টি করলো।বলয় টি আদিত্য সমেত  উর্ধ্ব দিকে উঠতে লাগলো। আদিত্য একটা কম্পন অনুভব করলো।
কম্পন টি বাড়তে লাগলো। আদিত্য আলোর ঝলকানি আর অস্বাভাবিক কম্পন সহ্য করতে পারলো না ।
চোখ বুজে ফেললো।(ক্রমশ)
(পরের পর্বে শক্তিক্ষেত্র নগরীতে)

No comments:

Post a Comment