Crss colum

Saturday, October 6, 2018

অলৌকিক তরবারি পর্ব - ১

           প্রথম পর্ব (ভীল গ্রাম)

অনেক আদিবাসী  ভীল কিশোর এর  মধ্যে যদি একটা গৌর বর্ণের কিশোর থাকে তবে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক।

কিন্তু এই জঙ্গলে ঘেরা আদিবাসী গ্রামে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা।সবাই সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আদিত্য কে দেখে আসছে।
এই গ্রামের তথা আশেপাশের দশটা গ্রামের সবেধন নীলমণি বৈদ‍্য বলতে একজন। সে হলো আদিত্য র  পিতা শ‍্যামজী ।
সেই কোন যুগে শ‍্যামজী ছোট্ট আদিত্য কে  কোলে করে এই সভ‍্যতা বিবর্জিত আদিবাসী ভীল অধ‍্যুসিত  গ্রামে এসেছিল। তারপর থেকে তিনি এই জঙ্গলে ঘেরা আদিবাসী ভীল জাতির  গ্রাম গুলির কাছে  ভগবানের মতো।রাত বিরাতে আপদে বিপদে তিনিই এই আদিবাসী ভীল  গ্রাম গুলির একমাত্র ভরসা।
আদিত্য অন‍্য সব আদিবাসী ভীল   বন্ধু র থেকে একটু আলাদা প্রকৃতির। স্বভাবে গম্ভীর।  হৈ চৈ করা একদম পছন্দ নয়।কিন্তু ভীষন শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান।
শ‍্যামজী সারাদিন মানুষের সেবায় লেগে থাকেন। সন্ধ্যায় প্রতিদিন প্রদীপের আলোয় আদিত্য কে নিয়ে পড়াতে বসেন। তার কাছেই আদিত্য ব‍্যাকরণ, গণিত ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে জ্ঞান অর্জন করেছে। পড়ালেখা য় আদিত্য খুবই মেধাবী।যে কোন পাঠ একবার বুঝিয়ে দিলে দ্বিতীয় বার বোঝাবার প্রয়োজন হয় না। আদিত্য র কাছে শ‍্যামজী একাধারে মা, বাবা,ও গুরু।
ছোট বেলায় আদিত্য মাঝে মধ্যে তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতো। কিন্তু শ‍্যামজী কখনো তার সরাসরি উত্তর দিতেন না। সেই থেকে আদিত্য এই সব কথা আর বলে না। ভাবে পিতা হয়তো বিশেষ কোনো কারণবশত নিরব থাকে। সময় হলে তিনি নিজের থেকেই সব বলবেন।
ভীল রা  জন্মগত খুব ভালো তীরন্দাজ। প্রতিটি ভীল কিশোর ছোট থেকেই তীর ধনুক নিয়ে শিকার অভ‍্যাস করে থাকে। আদিত্য ও এদের সাথে থাকতে থাকতে খুব ভালো তীরন্দাজ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে তার দক্ষতা অর্জন অন‍্যান‍্য ভীল কিশোর দের ঈর্ষা র বিষয়।
মাঝে মাঝে  লক্ষ্যভেদ এর পরীক্ষা হয় , ভীলেরা জন্মগত সহজাত তীরন্দাজ হওয়া স্বত্বেও আজ পর্যন্ত কোন ভীল আদিত্য কে হারাতে পারে নি।
একদিন সন্ধ্যায় আদিত্য বাড়ি ফিরে দেখলো পিতার সাথে একজন বসে আছে।শ‍্যামজী নিজেই আদিত্য কে বললেন ,‘ইনি পন্ডিত রঘুবর। এনাকে প্রণাম করো।ইনি এই বিশাল সুন্দর গড় রাজ‍্যের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্রশিক্ষক।আজ হতে আগামী এক বৎসর ইনি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন ।আগামী  কাল হতে ইনি তোমায় ও তোমার যে সব বন্ধু অসি চালনা শিক্ষা করতে ইচ্ছুক তাদের ইনি শিক্ষা প্রদান করবেন।’
পরের দিন সকাল হতেই শুরু হলো অসি শিক্ষা। প্রথম কয়েক দিন আদিত্য একাই একমাত্র শিক্ষার্থী। তারপর দেখতে দেখতে আদিত্য র সব বন্ধুরাও যোগ দিলো। কিছুদিন পর দেখা গেলো অসি চালানোয় আদিত্য র ধারেকাছে কেউ নেই। তার বিদ্যুৎ বেগে অসি চালানো র ফলে অন‍্যান‍্য শিক্ষার্থীদের অসি হাত থেকে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে।
এমনিতেই আদিত্য কে সব ভীল বন্ধু রা তাদের নেতা রূপে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখন তার এই অস্ত্র নৈপুণ্য তাকে বাকি সব বন্ধুদের চোখে ও গুরু রঘুবরের চোখে তাকে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিল।
দেখতে দেখতে দিন কাটছিলো।
যখন আদিত্য ঊনিশ বছর পেরিয়ে বিশ বছরে পদার্পণ করলো সেই দিন সকালে তার পিতা শ‍্যামজী তাকে নিজের ঘরে ডাকলেন।
আদিত্য পিতার ঘরে এসে দেখলো তার অস্ত্রগুরু রঘুবর  আগে থেকেই পিতার ঘরে উপস্থিত।
আদিত্য দুজনকেই প্রণাম করলো।শ‍্যামজী আদিত্য কে বসতে বললেন।
উভয়ের সামনে রাখা আসনে আদিত্য বসলো।
শ‍্যামজী বললেন ,  ‘পুত্র , আজ তোমার সব কিছুই জানার সময় হয়েছে।সব কথা জানিয়ে আমি আজ দায়মুক্ত হতে চাই।আজ তুমি এমন সত‍্য র মুখোমুখি হতে চলেছো যা তোমার ভবিষ‍্যত জীবন কে  পরিবর্তিত করে দেবে।
এখানে সবাই জানে যে তুমি আমার সন্তান। কিন্তু তা সত‍্য নয় । আমি শুধু তোমায় পুত্র রূপে লালন পালন করেছি।
আসলে তুমি এই বিরাট সুন্দর গড় রাজ‍্যের একমাত্র উত্তরাধিকারী। তোমার জন্মদাতা পিতা হলেন স্বর্গগত মহারাজ প্রতাপাদিত‍্য। তুমি আসলে এই রাজ‍্যের রাজপুত্র।’
আদিত্য সবটুকু শুনলো। তারপর অতি ধীর স্বরে বললো , ‘ পিতা , আমি জ্ঞান হওয়া থেকে আপনাকেই পিতা রূপে জানি। ভবিষ্যতে ও আপনি আমার পিতা রূপেই থাকবেন। কিন্তু আমি যদি রাজার সন্তান হয়ে থাকি তবে এই ভাবে এখানে কেন ?’
এবার গুরু রঘুবর বললেন ,‘ সেই কাহিনী আজ তোমায় শোনাবো বৎস।’
অনেক দিন আগের কথা …..
তোমার পিতা মহারাজ প্রতাপাদিত্য খুব ই প্রজাবৎসল ছিলেন। তিনি নিজেকে রাজা না ভেবে প্রজার সেবক রূপে ভাবতেন।প্রজারাও তাদের রাজা কে প্রাণ  ভরে ভালোবাসতেন। এই 'সুন্দর গড় '  রাজ‍্য কৃষিজ ও খনিজ সম্পদের অফুরন্ত ভান্ডার।তাই প্রতিবেশী রাজাদের লোভ এই স্বর্ণপ্রসু রাজ‍্যের উপর। মহারাজ প্রতাপাদিত্য বহু গুণে র অধীকারী হলেও তার একটি দোষ ছিলো। সেই দোষ টি হলো তিনি সবাইকে বিশ্বাস করতেন। তার এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বহু মানুষ নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করেছে। তবু তিনি মানুষ কে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু এই দোষের কারণে তাকে একদিন চরম মূল্য দিতে হয়।
তিনি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস যার উপর করতেন , তিনি হলেন তার বাল‍্যবন্ধু সেনাপতি দুর্জন সিং এর উপর। দুর্জন সিং খুব দক্ষ সেনানায়ক ছিলেন এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি ছিলেন হিংসা প্রবণ ও লোভী । তার অপরিসীম লোভ ছিল রাজ সিংহাসনের উপর। পার্শ্ববর্তী রাজ‍্য 'মালব গড়' এর  রাজা প্রবাল নারায়ণ এর অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এই ' সুন্দর গড়' এর খনিজ সম্পদের উপর। সুন্দর গড় এর সোনার খনি ও লৌহ খনির  আয় এই রাজ‍্যের প্রতিপত্তি র মূল। এই খনি দুটি র কতৃত্ব যার হাতে থাকবে সেই রাজ‍্য নিঃসন্দেহে বিশাল আর্থিক ক্ষমতা র অধিকারী হবে ।
সুন্দর গড় ও মালব গড় এর মাঝে ছিল এক বিশাল বনভূমি। এই বনভূমি তে উভয় রাজ‍্যের মানুষ শিকার করতো।
একদিন  'সুন্দর গড়' এর সেনাপতি দুর্জন সিং ও 'মালব গড়' এর রাজা প্রবাল নারায়ণ উভয়েই শিকার করতে গিয়ে সাক্ষাৎ  হলো।
উভয়ের উভয়কে চিনে নিতে বেশি ক্ষণ লাগলোনা।
তাদের মধ্যে গোপনে কি কথা হলো তা কাকপক্ষীও টের পেল না।
কয়েকদিন পর দেখা গেলো সেনাপতি দুর্জন বেশীরভাগ সৈন‍্যসামন্ত নিয়ে রাজ‍্যের উত্তর অংশে খনি অঞ্চলে চলেছে।কারণ হিসেবে রাজা প্রতাপাদিত্য জানলো যে কিছু খনি শ্রমিক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। সামান্য কিছু সৈন্য রাজধানী রক্ষার জন্য রইলো।
সেনাপতি দুর্জন সিং চলে যাওয়ার কয়েক দিন পর গুপ্তচর সন্দেশ বয়ে আনলো পার্শ্ববর্তী মালব গড়ের রাজা প্রবাল নারায়ণ সুন্দর গড় আক্রমণ করতে চলেছে। তৎক্ষণাৎ প্রতাপাদিত্য দূত পাঠালেন দুর্জন সিং এর কাছে অবিলম্বে সৈন্য বাহিনী নিয়ে রাজধানীতে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু দুর্জন সিং রাজধানীতে ফিরে এলেন না।
কয়েকদিন এর মধ্যেই প্রবাল নারায়ণ প্রত‍্যাশিত ভাবেই সুন্দর গড় আক্রমণ করলেন। মহারাজ প্রতাপাদিত্য অল্প সৈন্য  নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে মৃত্যু বরণ করলেন। সেই নিদারুণ ক্ষণে মহারানী পদ্মাবতী রাজবৈদ‍্য শ‍্যামজী কে প্রাসাদে আহ্বান করলেন। আমি( রঘুবর ) তখন ছিলাম প্রাসাদ রক্ষা করার দায়িত্বে। তুমি তখন দুই বছরের বালক মাত্র। তোমার মা তোমায় শ‍্যামজী র হাতে তুলে দিয়ে বললেন ,‘আমি এক গুরুদায়িত্ব আপনাদের হাতে তুলে দিতে চাই। মহারাজ এর যুদ্ধক্ষেত্রে স্বর্গ  লাভ হয়েছে সংবাদ এসেছে।যে কোনো মুহূর্তে শত্রুরা রাজধানীর অধিকার নেবে। মহারাজ এর মৃত্যু র পর আমার সংসারে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। তাই ঠিক করেছি হিমালয়ের পাদদেশে আমার কুলগুরু র আশ্রমে শেষ জীবন টা অতিবাহিত করবো। আমি চাই আপনারা দুজনেই আমার পুত্র আদিত্য র ভার নিন।’
শ‍্যামজী বললেন ‘কিন্তু  মহারানী ,পিতামাতাহীন , রাজ‍্যহীন রাজপুত্রকে আমরা কিভাবে উপযুক্ত করে তুলবো ?’
মহারানী বললেন "আপনারাই তাকে উপযুক্ত ভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে মানুষ করে তুলবেন।তাকে শাস্ত্র  ও শস্ত্র উভয়েই পারদর্শী করে তুলবেন।যাতে সাবালক হয়ে সে তার পিতৃরাজ‍্য পুনরুদ্ধার করে উঠতে পারে। আপনারা জানেন এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহারাজা র প্রপিতামহ আদিত‍্যদেব। আমিও তার নামানুসারে পুত্রের নামকরণ করেছি আদিত্য।  মহারাজ আদিত্য দেব তার গুরু এক যোগীরাজ এর কাছ থেকে দুটি মহামূল্যবান সামগ্রী লাভ করেছিলেন। সামগ্রী দুটি র একটি হলো অলৌকিক তরবারি ও দ্বিতীয় টি হলো আমার এই পরিহীত মায়া আংটি।এই মায়া আংটি  যার হাতে থাকবে সেই একমাত্র এই অলৌকিক তরবারি র মালিক হতে পারবে। এই অলৌকিক তরবারি তার মালিকের অসিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি করে। শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিতে অসিচালনা করতে পারে। এই দ্রুত বেগে অসি চালনা অস্ত্রটির উত্তাপ বৃদ্ধি করে । এই উত্তাপ বৃদ্ধি এক পর্যায়ে শত হস্ত পর্যন্ত সব কিছুই অগ্নিদগ্ধ করে। কিন্তু মায়া আংটি ঐ সময় অসি চালককে নীলাভ রশ্মি দিয়ে ঘিরে রাখে এবং এই নীলাভ রশ্মি তার মালিক কে সুশীতল করে অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
কিন্তু এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজ আদিত্য দেব এর মৃত্যুর পর তার গুরু সেই যোগীরাজ অলৌকিক তরবারি টি লুকিয়ে রাখেন। শুধু বলে যান  মায়া আংটি এই বংশের রাজরানী রা পরম্পরায় হস্তে ধারণ করবে।  যদি কখনো এই রাজবংশের বিপদ আসে, তবে এই বংশের উপযুক্ত সন্তান  যেন মায়া আংটি পরে একাকী হিমালয়ের পাদদেশে শক্তি ক্ষেত্রে পদার্পণ করে । সেখানেই সে পাবে অলৌকিক তরবারির সন্ধান।"এই বলে তিনি তার হস্ত থেকে মায়া আংটি টি খুলে নিয়েএকটি ছোট্ট হাতির দাঁতের কৌটায় রেখে, সেই কৌটোটি আমাদের হাতে দিলেন। তারপর তোমার মুখে চুমু খেয়ে তোমায় আমাদের হাতে তুলে দিলেন।
তারপর আমার (রঘুবর)নিরাপত্তায় শ‍্যামজী তোমায় নিয়ে এই দূরবর্তী অঞ্চলে নিয়ে আসে। এখানে তিনি তোমায় সকলের অলক্ষ্যে বড় করে তুলতে লাগলেন।
এদিকে রাজধানীর পতনের পর দুর্জন সিং রাজধানীতে সসৈন্যে এলেন।মালব গড়ের রাজা প্রবাল নারায়নের সঙ্গে একটি লোকদেখানো সন্ধি হলো। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী দুর্জন সিং রাজা হলেন।আর প্রবাল নারায়ন পেলেন খনির অর্ধেক অধিকার।
’এই বলে রঘুবর থামলেন।
শ‍্যামজী এবার একটি হাতির দাঁতের কৌটো আদিত্য র হাতে দিয়ে বললেন ,‘ এই সেই মায়া আংটি। এটা তুমি ডান হাতে ধারণ করো।’
আদিত্য কৌটো খুলতেই একটা নীল পাথর খোদিত স্বর্ণাঙ্গুরীয় ঝলমল করে উঠলো।
আদিত্য সেটা  ডান হাতের অনামিকায় ধারণ করলো।
ধারণ করা মাত্রই কেউ যেন তার  কানে বলে উঠলো ‘উত্তরপানে শক্তিক্ষেত্রে এসো।’
আদিত্য শ‍্যামজীর দিকে তাকিয়ে বলল ‘পিতা এই আংটি ধারণ করা মাত্র কেউ যেন আমার কানে বলল ,"উত্তর পানে শক্তিক্ষেত্রে এসো।’
শ‍্যামজী মৃদু হেসে বললো , ‘তোমার মা মহারানী পদ্মাবতী বলেছিলেন এই মায়া আংটি তোমায় যে কোন প্রকার রোগ ও প্রাকৃতিক বিপত্তি থেকে  রক্ষা করবে। এছাড়া প্রয়োজনে পরম সুহৃদের মতো পথনির্দেশ করবে।
অতএব পুত্র তুমি দ্বিধা করবে না । আগামী কাল প্রভাতেই তুমি  উত্তর পানে যাত্রা শুরু করো। ঈশ্বর তোমার সহায়ক হোন।’

পরদিন সকালে আদিত্য গুরুদেব রঘুবর ও পিতাকে প্রণাম করে   যাত্রা শুরু করলো।সাথে রইলো তীর ধনুক , তরবারি ও সামান্য কিছু খাদ্য।
পথ অনেক দূর। কিছু ক্ষণের মধ্যে ই চেনা পরিবেশ অপরিচিত হয়ে গেল। কানে শুধু অনুরণন হতে লাগলো ‘উত্তরে এসো, উত্তরে এসো।’


No comments:

Post a Comment