Crss colum

Tuesday, October 16, 2018

অলৌকিক তরবারি পর্ব - ২

দ্বিতীয় পর্ব (বিজয় গড় )

পথ আর ফুরায় না। আদিত্য এখন একা। পুরাতন পরিচিত বন্ধু গুলোর মুখ মনের মধ্যে ভেসে ওঠে। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে পিতার মুখ। এর আগে কখনো পিতাকে ছেড়ে এতদূরে আসেনি। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে পিতাই ছিল আদিত্য র একমাত্র আশ্রয়।
যত সময় যাচ্ছে জঙ্গল ততো ঘন হয়ে আসছে। এই জঙ্গল তাকে সূর্য ডোবার আগেই পেরিয়ে যেতে হবে। খিদে পেয়েছে , তৃষ্ণা ও পেয়েছে। সামনে কোন জলাশয় আছে কিনা আদিত্য জানে না। আদিত্য ভাবলো আরো কিছুক্ষন চলা যাক। সামনে কোন জলাশয় পেলে তবেই থামবে।
বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আদিত্য র মনে হলো দুরে যেন অনেকটা জঙ্গল ফাঁকা লাগছে। আদিত্য র মনে হলো সামনে নিশ্চয়ই কোন জলাশয় আছে তাই ঐখানে জঙ্গল ফাঁকা।
আরো কিছুক্ষন হাঁটার পর দেখলো বিশাল একটা জলাশয়। অন‍্য পাড় ভালো করে দেখা পর্যন্ত যাচ্ছে না। তবে দুরে মনে হয় একটা মন্দিরের চূড়া দেখা যাচ্ছে। মন্দির দেখা যাচ্ছে মানে নিশ্চিত মানুষ আছে।যাক এখন আগে পেটের আগুন নিভানো যাক।
আদিত্য তার ঝোলা থেকে খাবার বের করলো । চিঁড়ে ও কিছুটা গুড় আছে। আদিত্য সেটাই খুব তৃপ্তি করে খেলো। তারপর জলাশয়ে নেমে পেট ভরে জল খেলো। এবার ভাবলো কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়া যাক। তারপর মন্দির লক্ষ্য করে এগিয়ে যাওয়া যাবে।  ভূমি র উপর অস্ত্রশস্ত্র গুলো রেখে আদিত্য জলাশয়ে র পাশে ই ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল।
খানিকটা তন্দ্রা মতো এসেছে এমন সময় একটা ক্ষীণ নারী কন্ঠের আওয়াজ ভেসে এলো , "বাঁচাও ,বাঁচাও"।
আদিত্য তড়াক করে লাফিয়ে উঠে পড়লো। অস্ত্র শস্ত্র গুলো মাটি থেকে তুলে নিলো।
একবার পরিস্থিতি বুঝে নিলো।আওয়াজ ভেসে আসছে মন্দিরে র দিক থেকে। আদিত্য দ্রুত এগিয়ে চললো মন্দিরের দিকে।
মন্দিরের কাছে গিয়ে দূর থেকেই পরিস্থিতি বিচার করে নিলো। দুইটি নারী মন্দিরের চাতালে দাঁড়িয়ে   সাহায‍্যের জন্য চিৎকার করছে। তাদের আড়াল করে দাঁড়িয়ে চার জন সৈন্য  লড়াই করছে দস‍্যু দের সাথে। দস্যু রা সংখ‍্যায় প্রায় দশজন।
আদিত্য কর্তব্য স্থির করে নিলো। ধনুকে তীর যোজনা করে লক্ষ্য স্থির করে চালিয়ে দিলো। কেউ কিছুই বোঝার আগেই চার জন দস‍্যু আঘাত পেয়ে মাটি নিলো।
আচমকা পিছন থেকে আক্রান্ত হয়ে দস‍্যুরা হকচকিয়ে গেল। দুজন দস‍্যু আদিত্য কে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে আদিত্য কে একযোগে আক্রমণ করলো।
এবার শুরু হলো ভয়ঙ্কর তরবারি যুদ্ধ। একদিকে চারজন সৈন্য লড়ছে চার দস‍্যুর সাথে ,অন্য  প্রান্তে একা আদিত্য লড়ছে দুই জন দস‍্যুর সাথে।
ধন‍্য গুরু রঘুবরের শিক্ষা। কিছুক্ষণ পরেই দস‍্যুরা টের পেল যার সাথে তারা লড়ছে তার অসি চালনা অসাধারণ।অতি দ্রুত অসি চালনা কয়েক মুহূর্ত পরেই দুজন দস‍্যুর হাতের অসি ছিটকে ফেলে দিলো। দুজন দস‍্যুই আহত হয়ে ছুট লাগালো গভীর বনের দিকে। বাকি লড়াইয়ে রত দস‍্যুরা যখন দেখলো তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে তারাও তখন লড়াই ফেলে বনের মধ্যে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
যে চারজন সৈন্য লড়াই করছিল তাদের মধ্যে থেকে একজন বয়স্ক সৈন্য এগিয়ে এলো।
আদিত্য র কাছে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে বললো ,‘ ধন্যবাদ যুবক। আপনি যদি ঠিক সময়ে না এসে পড়তেন তবে বিপদ হতো।।আমি ‘বিজয়গড়ের’ সেনাধ‍্যক্ষ শূরসেন। আপনি আপনার পরিচয় দিন।’
আদিত্য বললো ‘আমি ‘সুন্দরগড়ের ’একজন নাগরিক। বিশেষ উদ্দেশ‍্য নিয়ে হিমালয় পাদদেশে চলেছি।’
শূরসেন বললো ,‘ এই জঙ্গল সামান্য কিছু দুরেই শেষ হয়েছে। তারপর ‘বিজয়গড়’ রাজ‍্য। এই স্থানে এক জাগ্রত শিব  মন্দির রয়েছে।আমাদের রাজকন‍্যা রত্নমালা এই শিব মন্দিরে পুজো দিতে এসেছেন। আমি অল্প কয়েকটি সৈন্য নিয়ে ওনার দেহরক্ষী হিসাবে এসেছি। এই স্থানে দস‍্যুর উপদ্রব আছে আগেই  রাজ দরবারে খবর এসেছিলো।আজ তা প্রত‍্যক্ষ করলাম। ভাগ্য ভালো তুমি এসেছিলে । না হলে হয়তো এতো অল্প সৈন্য নিয়ে ওদের সঙ্গে পেরে উঠতাম না। তুমি আমার সাথে রাজধানীতে চলো। আমাদের সাথে তিনটি রথ আছে একটি তে রাজকন্যা ও তার সঙ্গীনি অপর দুইটিতে আমরা বাকি সবাই উঠবো। ’
আদিত্য এতোক্ষণে মন্দিরের চাতালের দিকে তাকালো।দেখলো এক অপরূপ সৌন্দর্য তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। এই তবে রাজকন্যা রত্নমালা।
আদিত্য কিছুক্ষন রাজকন্যা র দিকে তাকিয়ে তারপর চোখ নামিয়ে নিল। তারপর শূরসেন এর দিকে তাকিয়ে বলল , আপনার প্রস্তাবে আমি সম্মত।
আদিত্য স্থান পেলো শূরসেন এর রথে।সবার আগে রইলো রাজকন্যা র রথ , তারপর শূরসেন এর রথ , তারপর সৈন্য দের রথ।
কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দৃশ্য পট পাল্টে যেতে লাগলো। আস্তে আস্তে জঙ্গল কমে আসছে। দুই একটা ঘরবাড়ি চোখে পড়ছে। আদিত্যর নজরে এলো রাজকন্যা তার রথে আগে আগে যেতে যেতেই বারবার পিছন ফিরে তার দিকে তাকাচ্ছে। আদিত্যর অস্বস্তি হচ্ছিল। অস্বস্তি কাটাতে সে শূরসেন এর গল্প জুড়ে দিলো।
শূরসেন কে আদিত্য প্রশ্ন করলো তিনি কখনো ‘সুন্দরগড়’ গিয়েছিল কিনা?
শূরসেন লোকটি খুব মিশুকে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই এমন মনে হচ্ছে যেন তাদের পরিচয় কতো দিনের।
শূরসেন বললো ‘  বহুদিন আগে একবার তিনি রাজদূত হয়ে সুন্দর গড়ে গিয়েছিলেন। তিনি যখন গিয়েছিলেন তখন রাজা ছিলেন মহারাজ প্রতাপাদিত্য। সুন্দর গড় ,মালবগড় ,ও বিজয় গড়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট রাজ্য হলো বিজয় গড়। তাই আমাদের মহারাজ চান যেন তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিবাদ না হয়।তাই তিনি শান্তি পূর্ণ সহাবস্থানের জন্য আমায়  বিজয় গড়ে দূত হিসেবে নিয়োগ করে ছিলেন। সুন্দর গড়ে আমি প্রায় এক বৎসর ছিলাম ।  মহারাজ প্রতাপাদিত্য ছিলেন উদার মনোভাবের । তিনি ও রানীমা  আমায় নিজের ভাইয়ের মতোই দেখতেন। মহারাজ যেখানেই যেতেন আমায়  সঙ্গে নিয়ে যেতেন। নতুন কিছু পদ রন্ধন হলেই রানীমা আমায় নিমন্ত্রণ করতেন।সত্যি বলতে কি মহারাজ আমায় নিজের ভাইয়ের চোখে দেখতেন।
কিন্তু কিছুদিনের জন্য আমি বিজয় গড়ে ফিরে এলাম পারিবারিক কারণে। এখানে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই খবর এলো মালব গড়ের রাজা প্রবাল নারায়ণ সুন্দর গড় আক্রমণ করেছিল। মহারাজ তাকে বাধা দিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।আর রানীমা ও রাজপুত্রের কোন খবর নেই।আর সুন্দর গড় এর নতুন রাজা হয়েছেন সেনাপতি দুর্জন সিং। এই   দুর্জন   সিং লোকটাকে মহারাজ বিশ্বাস করতেন। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে লোকটা আসলে লোভী বিশ্বাসঘাতক। এই লোকটি রাজা হওয়ার পর থেকেই সুন্দর গড়ের মানুষের দুর্দশা বেড়েছে।আর তার লোলুপ দৃষ্টি এবার এসে পড়েছে বিজয় গড়ের ওপর। যে কোন দিন বিজয় গড় আক্রান্ত হতে পারে। যদিও আমাদের মহারাজ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন। সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবুও মহারাজ বৃদ্ধ হয়েছেন। এখন দরকার তরুণ রক্তের। আর মহারাজের  সন্তান বলতে ঐ রত্নমালা।’
এই বলে শূরসেন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
ইতিমধ্যেই রথ বিজয়গড় নগরীতে প্রবেশ করেছে। রাজকন্যা র রথ পূর্বেই রাজবাড়ী তে পৌঁছে গেছে। শূরসেন আদিত্য কে নগর দেখানোর জন্য একটু ঘুরিয়ে তারপর যখন রাজবাড়ী তে পৌঁছলো তখন দেখলো স্বয়ং মহারাজ সূর্য সেন আদিত্য কে স্বাগত জানাতে প্রধান ফটকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

শূরসেন ও আদিত্য উভয়েই রথ থেকে নামার পর মহারাজ সূর্য সেন এগিয়ে এসে হাসি মুখে আদিত্য কে উদ্দেশ্য করে বললেন ,‘ হে বীর যোদ্ধা , সম্পূর্ণ বিজয় গড় আজ তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। তুমি যদি না সময়ে এসে পড়তে তবে যে কি হতো তা ভাবলেই ভয় লাগছে।রত্নমালা ও তার সঙ্গীনি আমায় সব বলেছে। তুমি এখন আমার আতিথ্য গ্রহণ করো।’
এই বলে সকলে মিলে রাজপ্রাসাদের অতিথি শালায় প্রবেশ করলো। মহারাজ বললেন ‘বলো যুবক , তোমার সম্পূর্ণ পরিচয় দাও।’
আদিত্য মনে মনে স্থির করলো রাজাকে এখনি আসল পরিচয় দেওয়া ঠিক হবে না।
আদিত্য তাই মহারাজ কে উদ্দেশ্য করে বললো ,‘ মহারাজ  আমি জাতিতে ক্ষত্রিয়। পালক  পিতার আদেশে আমি হিমালয় পাদদেশে শক্তি ক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি। সেখানে গিয়ে আমার উদ্দেশ্য পূরণ হলে আমি আবার ফিরে আসবো। ’’
মহারাজ বললেন ,‘ তোমার পিতা কে ?’
আদিত্য উত্তর দিলো , ‘ মহারাজ আমার যাত্রা যেন সফল হয় সেই আশীর্বাদ করুন। সঠিক সময়ে আমি আপনার কাছে ফিরে আসবো। তখন আমি সব কিছুই আপনার কাছে বিবৃত করবো।’
মহারাজ বললেন , ‘বেশ , তুমি কিছুদিন আমার অতিথি শালায় থেকে যাও। তোমার যাত্রার জন্য আমার অশ্বশালা থেকে একটা উত্তম জাতির অশ্ব নাও।’
আদিত্য বললো ‘ মহারাজ , আমি অশ্বারোহণ জানি না।’
তখন শূরসেন বললেন , ‘ মহারাজ আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি আদিত্য কে আমার গৃহে রেখে দেওয়ার জন্য। আমি ওকে এই কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তম অশ্বারোহী বানিয়ে দেব।   ’
মহারাজ বললেন , ‘ বেশ তোমার কাছেই আদিত্য থাক। তবে প্রতিদিন একবার রাজ দরবারে আশা চাই।’
আদিত্য ও শূরসেন মহারাজ এর কাছ থেকে বিদায় নিলো।
শূরসেনের গৃহ রাজপ্রাসাদে র চৌহদ্দির মধ্যেই।
শূরসেনে সন্তান হীন। তিনি আর তার স্ত্রী আদিত্য কে পেয়ে খুবই আনন্দিত হলেন। আদিত্য কে পেয়ে দুজনেই সন্তানহীনতার দুঃখ ভুলে গেলো।
এদিকে আদিত্য শূরসেনের মতো দক্ষ সেনানায়ক পেয়ে তার কাছে সৈন্য পরিচালনা ও অশ্বারোহণ শিখতে লাগলো। এবং কয়েকদিনের মধ্যেই উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষ দক্ষতা অর্জন করলো।
একদিন অপরাহ্ণ বেলায় আদিত্য রাজপ্রাসাদের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাগানের অদূরে এক শিব মন্দির। নির্জন পরিবেশ।এমন সময় এক মহিলা আদিত্য র কাছে এসে প্রণাম করলো। আদিত্য প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে বুঝতে পারলো ইনি সেই দিন রাজকন্যা র সঙ্গীনি হয়ে গিয়েছিলেন।
মহিলা আদিত্য কে বললেন , ‘ কুমার, রাজকন্যা রত্নমালা আপনার সাথে দেখা করতে চান।’
আদিত্য বললো ,‘ তিনি কোথায় ?’
মহিলা উত্তর দিলো , ‘ তিনি মন্দির প্রাঙ্গণে শিবের জন্য মালা গাঁথছেন।’
আদিত্য মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখলেন রাজকন্যা রত্নমালা কিছু শিউলি ফুল সংগ্রহ করে মালা গেঁথে রাখছেন।
আদিত্য রাজকন্যা র সামনে গেলে রাজকন্যা হাত জোড় করে আদিত্য কে প্রণাম জানালো।
তারপর রাজকন্যা ভ্রু কুঁচকে আদিত্য কে প্রশ্ন করলো , 'এতদিন কোথায় ছিলেন ?
আমি ভাবছিলাম আপনার সাথে বোধহয় আর কখনো দেখাই হবে না।'
আদিত্য বললো , 'আমি এই মুহূর্তে আপনাদের আশ্রিত। আদেশ করলেই চলে আসতাম।'
রাজকন্যা একটা অপরূপ হাসি ছড়িয়ে বললো ,‘ বেশ আমি যা বলবো আপনি তাই করবেন তো ?  আমি আদেশ করলাম যে কয়দিন আপনি এখানে থাকবেন প্রতিদিন অপরাহ্ন বেলায় এই মন্দিরে আমার কাছে হাজিরা দেবেন।অনথ্যায় ভীষণ শাস্তি।’
আদিত্য ও ছদ্মভীত হয়ে বললো ,‘তাই হবে দেবী।’
তারপর দুজনে ই হেসে উঠলো।
এরপর দুজনের প্রতি দিন নির্জনে শিব মন্দিরের প্রাঙ্গণে দেখা হয় । দুই জন যুবক যুবতীর দেখা হলে কি কথা হবে তা আমাদের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। স্বয়ং শিব ঠাকুর তাদের মেলামেশা র সাক্ষী থাকেন।
একমাস কোথা দিয়ে কেটে গেল তা কেউই টের পেলো না।
একদিন আদিত্য রত্নমালা কে বললো ,‘ দেবী , এবার আমায় যেতে হবে। আমার কর্তব্য আমায় ডাকছে।আমায় বিদায় দিন।’
রত্নমালা আক্ষেপ করে বললো ‘ এমন কোন কর্তব্য আছে যা আমার চেয়ে বড় ?’
আদিত্য তখন বাধ্য হয়ে তার সত্যি কারের পরিচয় হতে মায়া আংটি ও অলৌকিক তরবারি ইত্যাদি সব কিছুই বললো।
শেষে বললো ‘ আমি নিজেও এখনো জানি না কোথায় কোনদিকে আছে শক্তিক্ষেত্র ।’
তখন রত্নমালা বললো , ‘ আমি এই ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। আমার ধাই মা একজন সিদ্ধা যোগিনী। চলুন তার কাছে যাওয়া যাক। তিনি   নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন। এই বিশাল বাগানের এক প্রান্তে এক কুটিরে তিনি বসবাস করেন। ’
বিশাল বাগানের এক প্রান্ত দিয়ে এক ছোট্ট নদী বয়ে চলে গেছে। তার ধারে এক পর্ণ কুটির।’
রত্নমালা সেই কুটির এর কাছে গিয়ে ‘মা,মা’ বলে ডাকলো।
রত্নমালার ডাকে সাড়া দিয়ে কুটির এর ভিতর থেকে এক বৃদ্ধা বেরিয়ে এলেন।এসে একগাল হেসে রত্নমালা কে দেখে বললেন ‘ রত্না মা , এতদিন বাদে বুঝি মাকে মনে পড়লো ?’
রত্নমালা বললো ‘ না মা , রোজ আসলে তোমার সাধনার বিঘ্ন হবে তাই রোজ আসি না।’
এবার বৃদ্ধার চোখ পড়লো আদিত্য র উপর।এক ঝলক দেখে বললো ,‘ কি রাজপুত্র ? পথ খুঁজে পাচ্ছ না ? রত্না তোমায় এখানে এনে ভালো কাজ করেছে। আমি তোমায় পথের সন্ধান দেবো। তবে আজ নয় । তুমি কাল অপরাহ্ন বেলায় রত্না কে সাথে নিয়ে আমার কাছে আসবে।’

সেই মতো পরের দিন আদিত্য ও রত্নমালা যোগিনী র কুটিরে আসলে যোগিনী আদিত্য র হাতে এক টুকরো লাল কাপড়ের টুকরো দিয়ে বললো ,‘ এই কাপড়ের টুকরো টি আমি মন্ত্রপূত করে দিয়েছি। তুমি এটা হাতে ধরে ‘ওম নম শিবায়’ এই মন্ত্র টি তিন বার জপ করবে। তারপর কাপড়ের টুকরো টি যেদিকে লক্ষ্য  করে উড়তে থাকবে জানব সেই দিকেই আছে তোমার শক্তি ক্ষেত্র। আর এই চলার পথে কখনো যদি ভয়ঙ্কর কোন বিপদের সম্মুখীন হও তবে এই কাপড়ের টুকরো টি বুকে হৃদয়ের কাছে ধরে আমায় স্মরণ করবে , দেখবে আমি তোমার সাহায্যের জন্য সেখানে পৌঁছে যাবো। আগামী পরশু শুভ মূহুর্ত আছে। তুমি ঐ দিন  ভোরে যাত্রা শুরু করো।   ’
সেই রাতে চাঁদ মাথার উপর ওঠা পর্যন্ত আদিত্য ও  রত্নমালার মধ্যে কথা হলো। শেষে আদিত্য কথা দিলো অলৌকিক তরবারি সংগ্রহ করার পর আদিত্য সবার প্রথমে বিজয়গড় আসবে।আর মহারাজ এর কাছে নিজের প্রকৃত আত্মপরিচয় দিয়ে রত্নমালাকে চেয়ে নেবে।
আরো কত কি যে কথা হলো তার সাক্ষী রইলো গাছপালা , নিশাচর পাখি , রাতের গন্ধরাজ ফুলের সুবাস ,আর পূর্ণিমার ঝকঝকে চাঁদ।
পরের দিন আদিত্য সকলের কাছ হতে বিদায় নিলো। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেলো শূরসেনের স্ত্রী। তিনি আদিত্য কে পেয়ে পুত্র স্নেহের পরশ পেয়েছিলেন। আদিত্য তাকে এই কয়দিন ‘মা’ বলেই ডাকছিলো।আজ চলে যাওয়ার সময় তার কাছে ও আদিত্য কথা দিলো কার্যসিদ্ধি হওয়ার পর আদিত্য তার কাছে ফিরে আসবে।
মহারাজ সূর্য সেন বললেন  , “তুমি  আমার পুত্রের মতো । তুমি কার্যসিদ্ধি হলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার এখানে আসবে। যে কোন সময় দুষ্ট শক্তি এই রাজ্য আক্রমণ করতে পারে। তাই তোমার মতো বীর যোদ্ধা আমার প্রয়োজন।  ”
সকলের কাছে বিদায় নেওয়ার পর সেই রাতে রাজপ্রাসাদের বাগানে আবার দেখা হলো রাজকন্যা রত্নমালার সাথে। রাজকন্যা বললো ‘ কুমার , আমি আমার স্বপ্নের বীর যোদ্ধা কে খুঁজে পেয়েছি। সেই বীর হলে তুমি। আমি তোমার পথ চেয়ে বসে থাকবো। প্রতিদিন তোমার মঙ্গলের জন্য শিব পূজা করবো। তুমি যত শীঘ্র সম্ভব এখানে ফিরে এসো।'
ধীরে ধীরে ভোর হলো ।
প্রভাতে শূরসেন ও তার স্ত্রী কে প্রণাম করে আদিত্য রওনা দিলো। শূরসেনের স্ত্রী ঘোড়ার পিঠে ঝোলায় কিছু খাদ্য দিয়ে দিয়েছেন।
আদিত্য ঘোড়ার পিঠে উঠে ঘোড়া চালিয়ে দিলো।শূরসেন ও তার স্ত্রী সজল চোখে তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কিছু ক্ষণ ঘোড়া ছোটাবার পর আদিত্য আবার এক গভীর জঙ্গলে উপস্থিত হলো । এখানে আদিত্য এবার একা। (ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment