Crss colum

Tuesday, December 11, 2018

আটলান্টিসের পাথর (চতুর্থ পর্ব)

 বেশ কয়েকটি দিন কেটে গেলো পাশপোর্ট ও ভিসা ইত্যাদির চক্করে।
অর্জুনের বাবা অয়ন বাবুর এক বন্ধু স্বরাষ্ট্র দফতরের এক আমলা । অয়ন বাবু তাকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে ওদের দুজনের পাশপোর্ট ও ভিসা পাওয়ার জন্য দ্রুত বন্দোবস্ত করা যায়।তার চেষ্টায় সব কিছুই খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হলো। একটা ভালো ট্রাভেলস এজেন্সি র সন্ধান অর্জুন ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করলো। তাদের কোলকাতাতে একটা শাখা অফিস আছে। তাদের মধ্যমে যাওয়া টাই ঠিক হলো।মানস কৈলাস যাওয়ার অনেক গুলো পথ আছে। কিন্তু কাঠমান্ডু হয়ে লাসা সেখান থেকে জীপে কৈলাস ,এটাই সবচেয়ে সহজ রাস্তা। এই পথে কষ্ট অন্যান্য পথের চেয়ে অনেক কম। আর মাত্র সাত জনের গ্রুপ হলেই ট্রাভেল এজেন্সি যাওয়ার বন্দোবস্ত করে।
অবশেষে এক রবিবার দুই বন্ধু কাঠমান্ডু গামী প্লেনে চেপে বসলো।
কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে যখন প্লেন ল্যান্ড করলো তখন নেপালের ঘড়িতে বিকাল চারটে।
ট্রাভেল এজেন্সির একটা লোক হাতে সুমন ও অর্জুনের ইংরেজি তে নাম লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। দুজনে তার কাছে গিয়ে পরিচয় দিতে তিনি তাদের নিয়ে ট্যাক্সি ডেকে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। ভদ্রলোক বললেন তার নাম প্রেম দোরজি। তাদের পুরো ভ্রমণ পথ তিনি গাইড করবেন।
সুমন এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল যাওয়ার রাস্তার দৃশ্যাবলী দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। কিন্তু ট্যাক্সিতে বসা থেকে অর্জুন কেমন আনমনা হয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর অর্জুন সুমনের কানে কানে বললো ,"আমাদের মনে হয় কেউ ফলো করছে"।
সুমন বললো ,"কে ফলো করছে ?"
অর্জুন বললো "পেছনে তাকিয়ে দেখ একটা কালো রঙের ট্যাক্সি আমাদের ট্যাক্সিকে ফলো করছে"।
সুমন চেয়ে দেখলো সত্যিই একটা কালো  রঙের ট্যাক্সি তাদের ট্যাক্সির পেছনে পেছনে আসছে।
সুমন অর্জুনকে বললো "দূর, তোর যতো আজব ভাবনা। হয়তো ওরাও আমরা যে হোটেলে যাবো , সেই হোটেলেই উঠবে"।
অর্জুনদের হোটেল চলে এলো । রাস্তার পাশেই ।নাম 'হিমালয় কন্যা'।
ওদের পিছু আসা গাড়ী টা কিন্তু ওদের হোটেলে থামলো না। সোজা বেরিয়ে গেল।
সেই রাতে হোটেলে থেকে পরের দিন ওরা কাঠমান্ডু শহরটা ঘুরতে বেরোল। এটা ওদের প্যাকেজ ট্যুরের অঙ্গ। সঙ্গে প্রেম দোরজি গাইড হিসাবে আছে।
প্রেম বললো "কাঠমান্ডু শহরের নামকরণ হয়েছে কাষ্ঠমন্ডপ নামের দরবার স্কোয়ার এর এক মন্দির থেকে।
কাঠমান্ডু শহরের দ্রষ্টব্য স্থান অনেক। পুরো টা ভালো করে ঘুরতে কয়েক দিন লেগে যাবে। কিন্তু ওদের প্যাকেজ ট্যুরের মধ্যে রয়েছে কাঠমান্ডু ঘোরার জন্য মোটে একদিন।
যাইহোক ওরা বিখ্যাত পশুপতিনাথ মন্দির ,রাজপ্রাসাদ, সিংহ দরবার, দরবার স্কোয়ার এই গুলো বুড়িছোঁয়া গোছের ঘুরে এলো।
হোটেলে ফেরার পর ওদের রুমের দরজা খুলে দেখে আক্কেল গুড়ুম। সারা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ওদের জিনিস পত্র।
হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কিছু হলো না।তারা কিছুই বলতে পারলোনা। হোটেল ম্যানেজার বারবার ক্ষমা চাইলেন। দেখা গেল ওদের কোনো কিছুই খোয়া যায়নি। শুধু কেউ তন্নতন্ন করে বিশেষ কিছুর খোঁজে এসেছিলো।
যাই হোক সব কিছুই আবার গোছগাছ করা হলো।
কাঠমান্ডুতে আসান বাজার বলে একটা দারুন মার্কেট আছে। সেখান থেকে অর্জুন একটা  থার্মাল হিট সিকার  কিনেছে। সুমন অর্জুনকে বললো "এটা কি করবি" ?
অর্জুন বললো "দেখ না কাজে লাগবে"।

আর কোনো ঝামেলা হলো না।
পরের দিন সকাল নয়টায় ফের ফ্লাইটে করে লাসা র উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু।
নিষিদ্ধ নগরী বলে খ্যাত লাসা ।
লাসা শব্দটি র অর্থ 'দেবতাদের আবাস'।
প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের বাস এই শহরে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে 12000ফুট উচ্চতা য় এই শহর।
এখানে ওরা এক দিন থাকবে।
ওরা যে মানস সরোবর ও কৈলাসে যাবে সেখানে উচ্চতা ও শীতের প্রকোপ আরো বেশি।
জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য এখানে দুই থাকার ব্যবস্থা। ভালোই হলো।লাসা শহরটা খুব সুন্দর। চাইনিজ গভর্নমেন্ট খুব সুন্দর ভাবে এই শহরটাকে সাজিয়ে তুলেছে পর্যটকদের জন্য।
পরের দিন ওরা দেখতে গেল পোতালা প্রাসাদ।
1645সালে পঞ্চম দলাই লামা এটি তৈরি করেন । তেরটি তলা, এক হাজার কক্ষ,ও দুই লক্ষ মূর্তি র সমন্বয়ে  গঠিত বিরাট অট্টালিকা।
অর্জুন সুমন রা সকলের সঙ্গে প্রাসাদ দেখতে গেলো।

বিরাট প্রাসাদের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। অসংখ্য শিল্প কলা দেখতে দেখতে নিজের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া।
ঘুরতে ঘুরতে সুমন একবার দলটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আসলে একটা মূর্তি তাকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল।বুদ্ধ মূর্তি। সোনালী রঙের অসাধারণ স্বর্গীয় হাসি মুখে ধ্যান মগ্ন বোধীসত্ত্ব ।
হঠাৎ হুঁশ ফিরে পেয়ে দেখলো সে একা। এগোতে যেতেই একটা পিছন থেকে আঘাতে সুমন লুটিয়ে পড়লো। এদিকে অর্জুন এগিয়ে গিয়ে ছিলো। কিছুক্ষণ পর সুমন কে না দেখতে পেয়ে তাদের গাইড প্রেম কে বলে আগের দেখে আসা ঘর গুলোতে সুমন কে খুঁজতে গেল। কয়েকটি ঘর পেরিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ একটা ফাঁকা ঘরে সুমন কে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখলো।আর তার পাশে উবু হয়ে কালো জ্যাকেট পরা একটা লোক তার পোশাক সার্চ করছে।
অর্জুন পিছন থেকে আসছে বুঝতে পেরেই লোকটা দ্রুত দৌড়ে পালালো।
অর্জুন চিৎকার করে সাহায্য চাইলো। তার চিৎকারে আশপাশের বিভিন্ন ঘর থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমালো। এদিকে তার নিজের গ্রুপের লোকজন এসে পড়েছে।
মুখে চোখে জল ছিটানোর পর সুমনের জ্ঞান ফিরলো।সে বললো পিছন থেকে একটা আঘাত লাগার পর তার আর কিছুই মনে নেই।

হোটেলে ফিরে এসে অর্জুন বললো " মনে হচ্ছে কেউ একজন আমাদের এই অভিযানের উদ্দেশ্য জানে।"
"সে আমাদের কোলকাতা থেকেই ফলো করছে। কাঠমান্ডুতে হোটেলে হানা দিয়েছিল পুঁথির অনুবাদ হাতানোর জন্য । ওখানে না পেয়ে তোর ওপর হামলা চালিয়েছে এই ভেবে যে তুই অনুবাদটি সঙ্গে করে ঘুরছিস।
 "
সুমন বললো "কিন্তু অনুবাদ টা তো তোর কাছে রাখতে দিয়েছি। আমি নিজেও জানিনা তুই সেটা কোথায় রেখেছিস।"
অর্জুন বললো "সেটা আমি সঙ্গে করে আনিনি। ওটা আমাদের বাড়িতে সুরক্ষিত রয়েছে।ওটার একটা পিডিএফ করে আমার মোবাইল ফোনের বিশেষ ফোল্ডারে রেখে দিয়েছি।সেটার ব্যাক আপ আমার ইমেইল এ নেওয়া আছে। আমার ফোন বিশেষ পাশওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত।আর যদি  ফোনটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় তবুও আমি আমার ইমেইল এড্রেস থেকে ব্যাক আপ নিতে পারবো।বুঝলি ?"
এখন ঘুমো কাল ব্রেক ফাস্ট করে জীপে করে মানস সরোবরের দিকে যাত্রা শুরু হবে।জয় আমাদের হবেই।(ক্রমশ)




No comments:

Post a Comment