'তখন ইংরেজ আমল.’এই টুকু বলে দাদু থামলেন . বংশীকে ঈশারা করে জলের জগটা দেখালেন . জলের জগটা আনতে তা থেকে ঢক্ ঢক্ করে খানিকটা জল খেলেন আমরা চার জন হাঁ করে দাদুর দিকে তাকিয়ে আছি . আমি. রনি ,নিশা ও সানি .আমরা সবাই মামাতো পিসতুতো ভাইবোন . সকলেই সম্পর্কে দাদুর নাতি নাতনি . এছাড়া ঘরে আমাদের বাড়ীর পুরানো কাজের লোক বংশী রয়েছে . কালী পূজা ও ভাই ফোঁটা উপলক্ষে বাড়ীতে এক উতসব চলছে. আর আমরা সব ভাইবোন একজোট হয়েছি. সন্ধ্যাবেলায় এটা ওটা দুষ্টুমি করতে করতে বোরিং হয়ে গিয়ে শেষে নিশাই বললো ‘কেউ ভূতের গল্প শোনালে হেব্বি হয় .’ আমি তক্ষুণি রাজী হয়ে গেলাম. রনি ও সানিও রাজি . কিন্তু মুশকিল হলো এই যে আমরা সবাই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া আধুনিক ছেলেমেয়ে. .ভূতের গল্প আমরা কেউই জানি না . তখন নিশাই যুক্তি দিলো চল দাদুর কাছে গিয়ে ভূতের গল্প শোনাতে বলি . তখন সবাই দাদুর ঘরে হৈ হৈ করে গিয়ে উতপাত শুরু করলাম . .কিছুক্ষণের মধ্যেই দাদুর প্রাণ ওষ্ঠাগত করে ছাড়লাম . শেষে দাদু বললেন ‘আচ্ছা তোদের ভূতের গল্প শোনাচ্ছি . তবে এটি গল্প নয় সত্যি ঘটনা . আমার বাবার জীবনে ঘটেছিল.’
দাদু জল খেয়ে পুনরায় শুরু করলেন . দাদু বললেন ‘বাবা যেমন ভাবে আমায় বলেছিলেন ,সেই ভাবে বাবার মতো করেই কাহিনীটা বলছি.’
দাদু জল খেয়ে পুনরায় শুরু করলেন . দাদু বললেন ‘বাবা যেমন ভাবে আমায় বলেছিলেন ,সেই ভাবে বাবার মতো করেই কাহিনীটা বলছি.’
তখন ইংরেজ আমল. আমি তখন সদ্য যুবক . বি এ পাশ করার পর কাজ জুটল কোলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং এ. কেরানী গিরির চাকরি . প্রধানত টেবিলে বসে কলম পেষা আর মাঝে মাঝে কাজের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো . একদিন আমি কাজ করছি এমন সময় জোনাথন সাহেবের খাস বেয়ারা আবদুল এসে আমায় সেলাম দিলো . আমি মুখ তুলে তাকালে সে বললো 'সাহেব আপনাকে বুলাইতেছেন .'
আমি টেবিল ছেড়ে উঠে সাহেবের কামরার সামনে গিয়ে টোকা মেরে বললাম ‘মে আই কাম ইন.’ সাহেব উত্তর দিলো ‘কামিং ,কামিং.’
আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে সাহেব বলে উঠলো ‘আরে বাবু টুমাকেই আমার দরকার. একবার বিশেষ প্রয়োজনে টুমায় মেদিনীপুর যেতে হোবে. দরকারে কয়েকদিন টুমায় ওখানে থাকতে হোতে পারে .’
সেই মতো পরের দিন সকালে বাক্স পেঁটরা গুছিয়ে রওনা দিলাম . মেদিনীপুর পৌঁছে ডিস্ট্রিক্ট মেজিষ্টেটের অফিসে হাজিরা দিলাম . ওখানকার বড় বাবু বা হেড ক্লার্ক অবনীবাবু আমায় কাজ বুঝিয়ে দিলেন . আমি বুঝতে পারলাম কাজ সম্পূর্ণ হতে দিন কুড়ি লাগবে . অতএব অবনী বাবুকেই বললাম কয়েকদিনের জন্য একটা মাথা গোঁজার আস্তানা সংগ্রহ করে দিতে . তখন মেদিনীপুর শহরে এত হোটেল ছিলো না . দু একটি যাও বা ছিলো তাতে নেটিভ ইণ্ডিয়ান দের থাকবার অধিকার ছিলো না . সাধারণ লোকে থাকবার প্রয়োজনে কারো বাড়ি ভাড়া নিতো . তো অবনী বাবুকে আমি তেমনি একটি ভাড়া বাড়ী দেখে দিতে অনুরোধ করলাম .
অবনীবাবু বললেন ‘আজ রাতটা আপনি আমার বাড়ীতেই থাকুন . কাল আপনাকে একটা বাড়ী দেখে দোবো.’সেই মতো আমি অবনী বাবুর বাড়ীতে গেলাম . ওনার বাড়ীতে ওনার স্ত্রী ও কন্যা থাকে . ওনার স্ত্রী আমার পরিচয় পেয়ে ভারি আদর যত্ন করলেন.ওনার কন্যা কিশোরী.বয়স ষোল বা সতেরো হবে .ভারি সুন্দর ব্যবহার .অল্পক্ষণেই আমার সাথে আলাপ জমে গেলো. নাম জানলাম শোভনা . যাই হোক সেই রাতটি খুবই ভালো ভাবে কেটে গেলো. পরের দিন রবিবার. অফিস ছুটি . সকালে জলখাবার খেয়ে আমি আর অবনী বাবু ভাড়া বাডি খুঁজতে বেরোলাম . এদিক ওদিক ঘোরা ফেরার পর শহরের এক সাইডে চমতকার একটি বাড়ী পেলাম . দুটি পরস্পর সংলগ্ন ঘর . একটি ঘরের মধ্যে দিয়ে অপর ঘরে যেতে হয় . সামনে একটু বারান্দা .সেখানে স্টোভে রান্না করা চলবে. ভেতরের ঘরে একটি তক্তপোষ . একটা চেয়ার ও একটা টেবিল আছে . ভেতরের ঘরের পিছন দিকে একটা বড় জানালা . জানালা খুলে দিলে ফুরফুরে হাওয়া আসছে . জানালা দিয়ে দেখলাম পিছনে একটা সাহেবী কেতার বাংলো টাইপের বাড়ী. আমি যেদিকটা দেখতে পাচ্ছি সেটা বাড়ীর পিছনের দিক . আমার ঘর ও সাহেব বাংলোর মধ্যে বেশ বড় বাগান . বাগানে একটা বসার কাঠের তৈরী দুজনে বসার মতো বেন্চী . গাছ থেকে একটা কাঠের দোলনা ঝুলছে . বেশ বুঝতে পারলাম সাহেব খুবই সৌখিন স্বভাবের . অবনী বাবুর কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম ওটা হগ সাহেবের বাংলো . সাহেব একাই থাকে চাকর বাকর নিয়ে . কয়েক বছর আগে স্ত্রী গত হয়েছেন . তারপর সাহেব আর বিয়ে করেননি .
যাইহোক সব দেখে শুনে ঘরটি আমার ভারী পছন্দ হলো . দরদস্তুর করে বাড়ীর মালিকের সাথে ভাড়া ঠিক হলো ছয় টাকা . চার টাকা অগ্রিম দিতে হবে . বাড়ীর মালিক অবনী বাবুর আত্মীয় . অবনী বাবু মধ্যস্থতা করলেন বলে এতো কমে হলো . আমি ঠিক করেছিলাম দুবেলা স্টোভে যা হোক কিছু রান্না করে নেবো . কিন্তু অবনী বাবুর স্ত্রী শুনলেন না. প্রায় জোর করলেন যাতে দুবেলাই তার ওখানে খাওয়া দাওয়া করি . শেষে অনেক কষ্টে তাকে প্রতিদিন দুপুরে খাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা পাই . সেইমতো সব কিছু গুছিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ভাড়া বাড়ীর দখল নিলাম . আজ রাতের খাবার অবনী বাবুর স্ত্রী টিফিন বক্সে দিয়ে দিয়েছেন . অবিলম্বে রাতের খাবার খেয়ে নিদ্রা দেবীর আরাধনা শুরু করে দিলাম . মাঝ রাতের দিকে ঘুমটা একটু পাতলা হতে মনে হলো পিছনের বাগানে কোনো মহিলা যেন গান গাইছে . ঘুমের ঝোঁক থাকায় উঠে দেখলাম না . আবার ঘুমিয়ে পড়লাম . পরদিন থেকে পুনরায় অফিস .দুপুরে খেতে যেতাম অবনী বাবুর বাড়ীতে . এখনকার মতো তখন এতো কড়াকড়ি ছিলো না .খেয়েদেয়ে পুনরায় তিনটে নাগাদ অফিসে আসতাম . দুপুরে অবনী বাবুর স্ত্রী খুবই আদর যত্ন করতেন . তার পিছনে অবশ্য একটা গূঢ় উদ্দেশ্য ছিলো .ঘরে অনূঢ়া কন্যা.আর সামনে আমার মতো অবিবাহিত সরকারী কর্মচারী. অবনী বাবুর স্ত্রীর এই আদর যত্ন বিফলে যায় নি .আমার বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই আমার ও শোভনার শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল.
কিন্তু সে অন্য ঘটনা .মূল কাহিনীতে ফিরে আসি .
আমি টেবিল ছেড়ে উঠে সাহেবের কামরার সামনে গিয়ে টোকা মেরে বললাম ‘মে আই কাম ইন.’ সাহেব উত্তর দিলো ‘কামিং ,কামিং.’
আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে সাহেব বলে উঠলো ‘আরে বাবু টুমাকেই আমার দরকার. একবার বিশেষ প্রয়োজনে টুমায় মেদিনীপুর যেতে হোবে. দরকারে কয়েকদিন টুমায় ওখানে থাকতে হোতে পারে .’
সেই মতো পরের দিন সকালে বাক্স পেঁটরা গুছিয়ে রওনা দিলাম . মেদিনীপুর পৌঁছে ডিস্ট্রিক্ট মেজিষ্টেটের অফিসে হাজিরা দিলাম . ওখানকার বড় বাবু বা হেড ক্লার্ক অবনীবাবু আমায় কাজ বুঝিয়ে দিলেন . আমি বুঝতে পারলাম কাজ সম্পূর্ণ হতে দিন কুড়ি লাগবে . অতএব অবনী বাবুকেই বললাম কয়েকদিনের জন্য একটা মাথা গোঁজার আস্তানা সংগ্রহ করে দিতে . তখন মেদিনীপুর শহরে এত হোটেল ছিলো না . দু একটি যাও বা ছিলো তাতে নেটিভ ইণ্ডিয়ান দের থাকবার অধিকার ছিলো না . সাধারণ লোকে থাকবার প্রয়োজনে কারো বাড়ি ভাড়া নিতো . তো অবনী বাবুকে আমি তেমনি একটি ভাড়া বাড়ী দেখে দিতে অনুরোধ করলাম .
অবনীবাবু বললেন ‘আজ রাতটা আপনি আমার বাড়ীতেই থাকুন . কাল আপনাকে একটা বাড়ী দেখে দোবো.’সেই মতো আমি অবনী বাবুর বাড়ীতে গেলাম . ওনার বাড়ীতে ওনার স্ত্রী ও কন্যা থাকে . ওনার স্ত্রী আমার পরিচয় পেয়ে ভারি আদর যত্ন করলেন.ওনার কন্যা কিশোরী.বয়স ষোল বা সতেরো হবে .ভারি সুন্দর ব্যবহার .অল্পক্ষণেই আমার সাথে আলাপ জমে গেলো. নাম জানলাম শোভনা . যাই হোক সেই রাতটি খুবই ভালো ভাবে কেটে গেলো. পরের দিন রবিবার. অফিস ছুটি . সকালে জলখাবার খেয়ে আমি আর অবনী বাবু ভাড়া বাডি খুঁজতে বেরোলাম . এদিক ওদিক ঘোরা ফেরার পর শহরের এক সাইডে চমতকার একটি বাড়ী পেলাম . দুটি পরস্পর সংলগ্ন ঘর . একটি ঘরের মধ্যে দিয়ে অপর ঘরে যেতে হয় . সামনে একটু বারান্দা .সেখানে স্টোভে রান্না করা চলবে. ভেতরের ঘরে একটি তক্তপোষ . একটা চেয়ার ও একটা টেবিল আছে . ভেতরের ঘরের পিছন দিকে একটা বড় জানালা . জানালা খুলে দিলে ফুরফুরে হাওয়া আসছে . জানালা দিয়ে দেখলাম পিছনে একটা সাহেবী কেতার বাংলো টাইপের বাড়ী. আমি যেদিকটা দেখতে পাচ্ছি সেটা বাড়ীর পিছনের দিক . আমার ঘর ও সাহেব বাংলোর মধ্যে বেশ বড় বাগান . বাগানে একটা বসার কাঠের তৈরী দুজনে বসার মতো বেন্চী . গাছ থেকে একটা কাঠের দোলনা ঝুলছে . বেশ বুঝতে পারলাম সাহেব খুবই সৌখিন স্বভাবের . অবনী বাবুর কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম ওটা হগ সাহেবের বাংলো . সাহেব একাই থাকে চাকর বাকর নিয়ে . কয়েক বছর আগে স্ত্রী গত হয়েছেন . তারপর সাহেব আর বিয়ে করেননি .
যাইহোক সব দেখে শুনে ঘরটি আমার ভারী পছন্দ হলো . দরদস্তুর করে বাড়ীর মালিকের সাথে ভাড়া ঠিক হলো ছয় টাকা . চার টাকা অগ্রিম দিতে হবে . বাড়ীর মালিক অবনী বাবুর আত্মীয় . অবনী বাবু মধ্যস্থতা করলেন বলে এতো কমে হলো . আমি ঠিক করেছিলাম দুবেলা স্টোভে যা হোক কিছু রান্না করে নেবো . কিন্তু অবনী বাবুর স্ত্রী শুনলেন না. প্রায় জোর করলেন যাতে দুবেলাই তার ওখানে খাওয়া দাওয়া করি . শেষে অনেক কষ্টে তাকে প্রতিদিন দুপুরে খাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা পাই . সেইমতো সব কিছু গুছিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ভাড়া বাড়ীর দখল নিলাম . আজ রাতের খাবার অবনী বাবুর স্ত্রী টিফিন বক্সে দিয়ে দিয়েছেন . অবিলম্বে রাতের খাবার খেয়ে নিদ্রা দেবীর আরাধনা শুরু করে দিলাম . মাঝ রাতের দিকে ঘুমটা একটু পাতলা হতে মনে হলো পিছনের বাগানে কোনো মহিলা যেন গান গাইছে . ঘুমের ঝোঁক থাকায় উঠে দেখলাম না . আবার ঘুমিয়ে পড়লাম . পরদিন থেকে পুনরায় অফিস .দুপুরে খেতে যেতাম অবনী বাবুর বাড়ীতে . এখনকার মতো তখন এতো কড়াকড়ি ছিলো না .খেয়েদেয়ে পুনরায় তিনটে নাগাদ অফিসে আসতাম . দুপুরে অবনী বাবুর স্ত্রী খুবই আদর যত্ন করতেন . তার পিছনে অবশ্য একটা গূঢ় উদ্দেশ্য ছিলো .ঘরে অনূঢ়া কন্যা.আর সামনে আমার মতো অবিবাহিত সরকারী কর্মচারী. অবনী বাবুর স্ত্রীর এই আদর যত্ন বিফলে যায় নি .আমার বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই আমার ও শোভনার শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল.
কিন্তু সে অন্য ঘটনা .মূল কাহিনীতে ফিরে আসি .
আমি প্রতিদিন সকালে কিছু জলখাবার খেয়ে অফিস যেতাম. দুপুরে অবনী বাবুর বাড়ী খেয়ে পুনরায় অফিসে যেতাম .বিকাল পাঁচটা নাগাদ অফিস থেকে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতের জন্য স্টোভে রান্না বসিয়ে দিতাম .ভাত ,আলুভাতে আর ঘি .তোফা খাওয়া .তখন এতো রুটি খাওয়ার চল ছিলো না .তারপর একটু বই পড়তাম.ঘর থেকে আসার সময় কিছু নভেল এনেছিলাম . সময় কাটাবার জন্য.তারপর রাত নটা বাজলে খেয়ে দেয়ে ঘুম . প্রথম দিন রাতে একটা সুরেলা গলা শুনতে পেয়েছিলাম . কিন্তু ঘুমের ঝোঁক থাকায় জানালা খুলে দেখিনি . দিন তিনেক পর গরম বেশী থাকায় পিছনে মাথার কাছে জানালা খুলে শুয়েছিলাম . বেশ ফুরফুরে হাওয়া আসছে . শুক্ল পক্ষের রাত . আকাশে চাঁদের আলো . জানালা দিয়ে হগ সাহেবের বাগানটা ছবির মতো দেখা যাচ্ছে . আমি এটা ওটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছি . হঠাত ঘুমটা ভেঙে গেলো একটা গানের সুরে .ইংরেজি গান . কোন মহিলা যেন দুঃখের সাথে গাইছেন .ধড়ফড় করে উঠে বসলাম .জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পেলাম পিছনে হগ সাহেবের বাগানে গাছ থেকে খাটানো দোলনায় বসে এক মেম সাহেব গান করছেন . আমার নতুন নিউ মার্কেট থেকে কেনা সুইস হাত ঘড়িটায় টেবিল ল্যাম্পের আলোয় দেখলাম রাত একটা . আমি সেই মায়াবী দৃশ্যের দিকে চেয়ে রইলাম . কয়েক মিনিট পর হগ সাহেবের বাংলোর পিছনের দরজা খুলে গেলো .এক জন লোক বেরিয়ে এলো . বুঝলাম ইনিই হগ সাহেব . সাহেব এসে মেম সাহেবের পাশে দোলনায় বসলেন . দুজনের একান্ত ব্যাক্তিগত দৃশ্য দেখা উচিত নয় ভেবে শুয়ে পড়লাম . জানালা দিয়ে কথোপকথন ভেসে আসছিল .হঠাত্ মনে পড়ে গেলো অবনী বাবু বলছিলেন সাহেব একা থাকেন .স্ত্রী মারা গেছেন .ভাবলাম অবনী বাবু ঠিক জানেন না তাই ভুল খবর দিয়েছেন . ভাবলাম পরের দিন অবনী বাবুর ভুলটা ভেঙে দোব . কিন্তু কাজের চাপে এই কথাটা বলতে ভুলে গেলাম .
হগ সাহেব ছিলেন পুর্ত বিভাগের বড় কর্তা .আম দিন দুয়েক পর একটা বিশেষ রিপোর্ট আনতে হগ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম . তখন কার ইংরেজ বড় কর্তারা অধস্তন বাঙালী কর্মীদের সাথে ভালোই ব্যবহার করতেন . আমি হগ সাহেবের কাছে কাজের সূত্রে যেতে উনি আমার সাথে ভালোই ব্যবহার করলেন .একথা সেকথা বলবার ফাঁকে আমায় প্রশ্ন করলেন ' কোথায় আছি ? ' আমি উত্তর দিলাম ‘সাহেব ,আপনার বাংলোর পিছন দিকে বাগানের পাশে যে বাড়ীটা আছে ,তাতেই উঠেছি .’ সাহেব শুনে খুশী হয়ে বললেন ‘তাহলে টো ভালোই হলো ,তুমি রবিবার সকালে হামার সাথে দেখা করো .দুজনে একসাথে চা পান করা যাবে .’ আমি ও রাজী হয়ে গেলাম .
সেই মতো রবিবার সকালে সেজে গুঁজে সাহেবের বাংলোয় গেলাম .সাহেব দারুণ খাতির যত্ন করলেন . চাকর চা ও কেক দিয়ে গেলো .সাহেব বললো ,‘এই কেক ঘরে বানানো .তুমি খেয়ে দেখো .আমার স্ত্রী এই চাকরটি কে নিজে এই কেক বানানো শিখিয়েছেন . ’ আমি বললাম ‘ সার ,মেম সাহেবের গানের গলা ভারি সুন্দর .তার সাথে আলাপ করলে খুবই খুশী হতাম .’ আমার এই কথায় সাহেব যেনো চমকে গেলেন .তারপর খানিকটা চুপ করে থেকে বললেন ,‘আমার স্ত্রীর গান তুমি কোথায় শুনেছো ?’ আমি উত্তর দিলাম ‘কেন সার বাগানে ,উনি দোলনায় বসে গান করছিলেন .’ সাহেব কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দিলেন ‘ তুমি ভুল দেখেছো .আমার স্ত্রী দুই বছর হলো মারা গেছেন .তারপরে আমি আর বিবাহ করি নাই. রাতে আমি একাই থাকি .চাকরটি রান্না করে আমার খাওয়া হয়ে গেলে বাড়ী চলে যায় .’ আমি সাহেবের সাথে তর্ক করলাম না .এমন অমায়িক সাহেব .এত সুন্দর ব্যবহার .কিন্তু সেই তিনি এমন অম্লান বদনে এমন মিথ্যা কথা বললেন . বেশ আমিও কোলকাতার ভবানীপুরের ছেলে .এর রহস্য আমি ভেদ করে ছাড়বো .মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করে সাহেবের থেকে বিদায় নিলাম পরের রবিবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে . সেই দিন দুপুরে অবনী বাবুর বাড়ীতে দুপুরে খেতে গিয়ে অবনী বাবুকে সব খুলে বললাম . আমাকে অবাক করে অবনী বাবুও বললেন আমি ভুল দেখেছি. আমারো জেদ চেপে গেলো . কয়েকদিন তক্কে তক্কে রইলাম . কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না .এদিকে আমার বাড়ী ফেরার সময় হয়ে আসছে .এই ব্যাপারটা ছাড়াও মন অন্যদিকেও ব্যাস্ত আছে .অবনী বাবুর মেয়ে শোভনার ও আমার অনুরাগ পর্ব বেশ এগিয়েছে .ঠিক করেছি বাড়ী ফিরে মা বাবাকে বলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো .
যেদিন বাড়ী ফিরবো ঠিক করেছি সেই দিনটা রবিবার .তার আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় আমার জিনিসপত্র সবই গোছগাছ করে নিয়েছি . পরেরদিন সকালে খালি বিছানা পত্র গুছিয়ে অবনী বাবুর বাড়ী সকলের সাথে বিশেষত শোভনার সাথে দেখা করে বেলা এগারোটার রেলের গাড়ী চেপে কোলকাতায় ফিরবো . আজ রাতে শুয়ে আর ঘুম আসছে না . কেবলই শোভনার ঢলঢল মিষ্টি মুখটা মনে পড়ছে . এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না.
ঘুমটা ভেঙে গেলো একটা গানের শব্দে . চোখ রগড়ে টেবিল লেম্পের আলোটায় দেখলাম রাত তিনটে .জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলাম পূর্ণিমার আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত .দেখলাম দোলনায় মেম সাহেব ও হগ সাহেব দোল খাচ্ছে .মেম সাহেব হাল্কা সুরে একটা খুব শ্রুতি মধুর ইংরেজী গান শোনাচ্ছেন . মনের মধ্যে সেদিনের প্রতিজ্ঞার কথা মনে পড়ে গেলো .আজ একটা হেস্তনেস্ত করবো. যা থাকে কপালে .সাহেবের মিথ্যা কথা হাতেনাতে ধরে প্রমাণ করে দেবো . সেই মতো চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ীর পিছন দিকে গিয়ে সাহেবদের দিকে সন্তর্পণে এগোতে লাগলাম .
যখন সাহেব ও মেম সাহেবের কাছ থেকে দশ হাত দূরে তখন একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম ‘“ সাহেব তোমার মিথ্যা কথা ধরা পড়ে গেছে আমার কাছে .”’ আমার কথা শুনে দুজনেই পিছন ফিরে চাইলেন .তারপরের মুহূর্তে যে ঘটনাটা ঘটলো তার জন্য আমি তৈরী ছিলাম না . আমার চোখের সামনে পরিস্কার পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় মেম সাহেব ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলেন . আমি এমন আশ্চর্য্য ঘটনাটা দেখে ভয়ে শিহরিত হয়ে গেলাম . মাথা ঘুরে ট লে পড়েই যাচ্ছিলাম .কিন্তু দেখলাম হগ সাহেব আমায় ধরে নিলেন . আমার হাত ধরে উনি নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন .একটা চেয়ারে বসিয়ে কফি করে আনলেন .এক কাপ আমায় দিয়ে আরেকটি কাপ নিজে নিয়ে সামনে আরেকটি চেয়ারে বসলেন .
হগ সাহেব বললেন “ বাবু তুমি আজ যাকে দেখলে উনি আমার স্ত্রী রোজি . আমি তখন নতুন চাকরি নিয়ে লণ্ডন ছেড়ে এদেশে এসেছি .রোজি ছিলো এক পাদ্রীর মেয়ে .অপূর্ব গান গাইতে পারতেন.এক বন্ধুর বাড়ীতে রোজির সাথে পরিচয়.তারপরে প্রেম ও বিবাহ .আমাদের কোনো সন্তানাদি হয় নি .রোজি প্রতিদিন আমায় গান শোনাতো . দুই বছর আগে টাইফয়েড হয়ে রোজি মারা যায় .তারপর আমার একাকি জীবন শুরু হয় .একদিন রাতে বাগান থেকে গানের শব্দ শুনে গিয়ে দেখি রোজি দোলনায় বসে গান গাইছে .তুমি বিশ্বাস করো বাবু ,আমি ভয় পাইনি.উল্টে আমার খুবই আনন্দ হয় .সেই শুরু .তারপরে মাঝে মাঝেই রোজি আমায় গান শুনিয়ে ডাকে. আমি গেলে আমার সাথে কথা বলে . তোমায় বাবু অনুরোধ করছি তুমি এই কথা কাউকে বোলো না .”
পরের দিন আমি কোলকাতায় চলে এসেছিলাম .তারপরে শোভনার সাথে বিবাহ সূত্রে অনেক বার মেদিনীপুর গিয়েছি .কিছুদিন বাদেই শুনেছি হগ সাহেব মারা গেছেন .
আজ আর হগ সাহেবের বাংলো নেই.সেখানে এখন স্টেডিয়াম তৈরী হয়েছে .স্টেডিয়ামের পাহারাদার দের মুখে শোনা যায় ,কোনো কোনো পূর্ণিমার রাতে সেখানে অলৌকিক ভাবে একটা গাছ দেখা যায় .সেই গাছ থেকে একটি দোলনা ঝুলতে দেখা যায়.আর তাতে বসে থাকে এক সাহেব ও মেম সাহেব .মেম সাহেব গান করেন আর সাহেব শোনেন .
হগ সাহেব ছিলেন পুর্ত বিভাগের বড় কর্তা .আম দিন দুয়েক পর একটা বিশেষ রিপোর্ট আনতে হগ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম . তখন কার ইংরেজ বড় কর্তারা অধস্তন বাঙালী কর্মীদের সাথে ভালোই ব্যবহার করতেন . আমি হগ সাহেবের কাছে কাজের সূত্রে যেতে উনি আমার সাথে ভালোই ব্যবহার করলেন .একথা সেকথা বলবার ফাঁকে আমায় প্রশ্ন করলেন ' কোথায় আছি ? ' আমি উত্তর দিলাম ‘সাহেব ,আপনার বাংলোর পিছন দিকে বাগানের পাশে যে বাড়ীটা আছে ,তাতেই উঠেছি .’ সাহেব শুনে খুশী হয়ে বললেন ‘তাহলে টো ভালোই হলো ,তুমি রবিবার সকালে হামার সাথে দেখা করো .দুজনে একসাথে চা পান করা যাবে .’ আমি ও রাজী হয়ে গেলাম .
সেই মতো রবিবার সকালে সেজে গুঁজে সাহেবের বাংলোয় গেলাম .সাহেব দারুণ খাতির যত্ন করলেন . চাকর চা ও কেক দিয়ে গেলো .সাহেব বললো ,‘এই কেক ঘরে বানানো .তুমি খেয়ে দেখো .আমার স্ত্রী এই চাকরটি কে নিজে এই কেক বানানো শিখিয়েছেন . ’ আমি বললাম ‘ সার ,মেম সাহেবের গানের গলা ভারি সুন্দর .তার সাথে আলাপ করলে খুবই খুশী হতাম .’ আমার এই কথায় সাহেব যেনো চমকে গেলেন .তারপর খানিকটা চুপ করে থেকে বললেন ,‘আমার স্ত্রীর গান তুমি কোথায় শুনেছো ?’ আমি উত্তর দিলাম ‘কেন সার বাগানে ,উনি দোলনায় বসে গান করছিলেন .’ সাহেব কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দিলেন ‘ তুমি ভুল দেখেছো .আমার স্ত্রী দুই বছর হলো মারা গেছেন .তারপরে আমি আর বিবাহ করি নাই. রাতে আমি একাই থাকি .চাকরটি রান্না করে আমার খাওয়া হয়ে গেলে বাড়ী চলে যায় .’ আমি সাহেবের সাথে তর্ক করলাম না .এমন অমায়িক সাহেব .এত সুন্দর ব্যবহার .কিন্তু সেই তিনি এমন অম্লান বদনে এমন মিথ্যা কথা বললেন . বেশ আমিও কোলকাতার ভবানীপুরের ছেলে .এর রহস্য আমি ভেদ করে ছাড়বো .মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করে সাহেবের থেকে বিদায় নিলাম পরের রবিবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে . সেই দিন দুপুরে অবনী বাবুর বাড়ীতে দুপুরে খেতে গিয়ে অবনী বাবুকে সব খুলে বললাম . আমাকে অবাক করে অবনী বাবুও বললেন আমি ভুল দেখেছি. আমারো জেদ চেপে গেলো . কয়েকদিন তক্কে তক্কে রইলাম . কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না .এদিকে আমার বাড়ী ফেরার সময় হয়ে আসছে .এই ব্যাপারটা ছাড়াও মন অন্যদিকেও ব্যাস্ত আছে .অবনী বাবুর মেয়ে শোভনার ও আমার অনুরাগ পর্ব বেশ এগিয়েছে .ঠিক করেছি বাড়ী ফিরে মা বাবাকে বলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো .
যেদিন বাড়ী ফিরবো ঠিক করেছি সেই দিনটা রবিবার .তার আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় আমার জিনিসপত্র সবই গোছগাছ করে নিয়েছি . পরেরদিন সকালে খালি বিছানা পত্র গুছিয়ে অবনী বাবুর বাড়ী সকলের সাথে বিশেষত শোভনার সাথে দেখা করে বেলা এগারোটার রেলের গাড়ী চেপে কোলকাতায় ফিরবো . আজ রাতে শুয়ে আর ঘুম আসছে না . কেবলই শোভনার ঢলঢল মিষ্টি মুখটা মনে পড়ছে . এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না.
ঘুমটা ভেঙে গেলো একটা গানের শব্দে . চোখ রগড়ে টেবিল লেম্পের আলোটায় দেখলাম রাত তিনটে .জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলাম পূর্ণিমার আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত .দেখলাম দোলনায় মেম সাহেব ও হগ সাহেব দোল খাচ্ছে .মেম সাহেব হাল্কা সুরে একটা খুব শ্রুতি মধুর ইংরেজী গান শোনাচ্ছেন . মনের মধ্যে সেদিনের প্রতিজ্ঞার কথা মনে পড়ে গেলো .আজ একটা হেস্তনেস্ত করবো. যা থাকে কপালে .সাহেবের মিথ্যা কথা হাতেনাতে ধরে প্রমাণ করে দেবো . সেই মতো চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ীর পিছন দিকে গিয়ে সাহেবদের দিকে সন্তর্পণে এগোতে লাগলাম .
যখন সাহেব ও মেম সাহেবের কাছ থেকে দশ হাত দূরে তখন একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম ‘“ সাহেব তোমার মিথ্যা কথা ধরা পড়ে গেছে আমার কাছে .”’ আমার কথা শুনে দুজনেই পিছন ফিরে চাইলেন .তারপরের মুহূর্তে যে ঘটনাটা ঘটলো তার জন্য আমি তৈরী ছিলাম না . আমার চোখের সামনে পরিস্কার পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় মেম সাহেব ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলেন . আমি এমন আশ্চর্য্য ঘটনাটা দেখে ভয়ে শিহরিত হয়ে গেলাম . মাথা ঘুরে ট লে পড়েই যাচ্ছিলাম .কিন্তু দেখলাম হগ সাহেব আমায় ধরে নিলেন . আমার হাত ধরে উনি নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন .একটা চেয়ারে বসিয়ে কফি করে আনলেন .এক কাপ আমায় দিয়ে আরেকটি কাপ নিজে নিয়ে সামনে আরেকটি চেয়ারে বসলেন .
হগ সাহেব বললেন “ বাবু তুমি আজ যাকে দেখলে উনি আমার স্ত্রী রোজি . আমি তখন নতুন চাকরি নিয়ে লণ্ডন ছেড়ে এদেশে এসেছি .রোজি ছিলো এক পাদ্রীর মেয়ে .অপূর্ব গান গাইতে পারতেন.এক বন্ধুর বাড়ীতে রোজির সাথে পরিচয়.তারপরে প্রেম ও বিবাহ .আমাদের কোনো সন্তানাদি হয় নি .রোজি প্রতিদিন আমায় গান শোনাতো . দুই বছর আগে টাইফয়েড হয়ে রোজি মারা যায় .তারপর আমার একাকি জীবন শুরু হয় .একদিন রাতে বাগান থেকে গানের শব্দ শুনে গিয়ে দেখি রোজি দোলনায় বসে গান গাইছে .তুমি বিশ্বাস করো বাবু ,আমি ভয় পাইনি.উল্টে আমার খুবই আনন্দ হয় .সেই শুরু .তারপরে মাঝে মাঝেই রোজি আমায় গান শুনিয়ে ডাকে. আমি গেলে আমার সাথে কথা বলে . তোমায় বাবু অনুরোধ করছি তুমি এই কথা কাউকে বোলো না .”
পরের দিন আমি কোলকাতায় চলে এসেছিলাম .তারপরে শোভনার সাথে বিবাহ সূত্রে অনেক বার মেদিনীপুর গিয়েছি .কিছুদিন বাদেই শুনেছি হগ সাহেব মারা গেছেন .
আজ আর হগ সাহেবের বাংলো নেই.সেখানে এখন স্টেডিয়াম তৈরী হয়েছে .স্টেডিয়ামের পাহারাদার দের মুখে শোনা যায় ,কোনো কোনো পূর্ণিমার রাতে সেখানে অলৌকিক ভাবে একটা গাছ দেখা যায় .সেই গাছ থেকে একটি দোলনা ঝুলতে দেখা যায়.আর তাতে বসে থাকে এক সাহেব ও মেম সাহেব .মেম সাহেব গান করেন আর সাহেব শোনেন .
No comments:
Post a Comment