Crss colum

Monday, December 24, 2018

অমৃত ঝর্না র সন্ধানে

অরূপ নগরের রাজা ভীষণ অসুস্থ। রাজ্যের সব কবিরাজ বৈদ্যরা জবাব দিয়ে গেছে।
পাত্র , মিত্র, কোটাল , মন্ত্রী সবাই চিন্তিত রাজার অসুখ নিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তা রাজকন্যা মেঘবতী র।
মেঘবতী র পিতা মহারাজা মেঘবর্মণ এর কিছু দিন আগে পর্যন্ত কোনো অসুখের লেশ মাত্র ছিলো না। কয়েক মাস আগে রাজসভায় খবর আসে এক মহাতান্ত্রিকের আবির্ভাব হয়েছে। সেই মহা তান্ত্রিকের উপদ্রবে রাজ্যের নিরীহ প্রজাকুল আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
এই তান্ত্রিক নাকি প্রতি আমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে একটি করে শিশুকে নরবলি দিচ্ছে।
মহারাজা মেঘবর্মণ সিদ্ধান্ত নিলেন যে এই অন্যায় কোনো ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।
রাজা অবিলম্বে তার সৈন্য দের আদেশ দিলেন সেই তান্ত্রিক কে বন্দী করে তার সামনে হাজির করার।
যথারীতি সৈন্যরা তান্ত্রিক কে রজ্জু দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে রাজদরবারে হাজির করলো।
অতঃপর তান্ত্রিকের বিচার শুরু হলো।যত  সন্তান হীন পিতা মাতার দল তান্ত্রিকের বিচার চেয়ে রাজদরবারে সাক্ষী দিলো।
অবশেষে মহারাজ মেঘবর্মণ ঐ তান্ত্রিক কে অপরাধী ঘোষণা করে প্রাণদন্ডের আদেশ দিলেন।
তান্ত্রিক এতক্ষণ নীরব ছিলেন। এবার মহারাজ যখন শাস্তি ঘোষণা করলেন তখন সে তার নীরবতা ভেঙে বললো , "মহারাজ , আমি কিছু বলতে চাই।"
মহারাজ বললো ," বেশ আপনি আপনার যা  বক্তব্য আছে তা বলুন ।  "
তখন তান্ত্রিক বললো , "একথা সত্য যে শিশু হত্যা র মতো অপরাধ আমার হাতে হয়েছে। কিন্তু আমি এই কাজ রাজ্যের উন্নতি সাধনের জন্য বিশেষ তান্ত্রিক ক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে সংঘটিত করেছি। নরহত্যা র মতো অপরাধে আমি অপরাধী। আপনি আমার বিচার করে যে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন তাতে আমি বিন্দুমাত্র ভীত নই। আমার উচিত হয় নি এই ধরনের কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া। কিন্তু রাজ্যের বাকি প্রজাবর্গ সহিত স্বয়ং মহারাজের সুস্থতা কামনায় এই তান্ত্রিক ক্রিয়া আমি শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন আমার মৃত্যুতে এই  অসমাপ্ত তান্ত্রিক ক্রিয়া সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া প্রদান  করবে। আপনি রাজ্যের প্রধান হিসেবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। কোনো ঔষধ আপনাকে সুস্থ করে তুলতে পারবে না।  মৃত্যু আপনার নিশ্চিত। আমার মৃত্যুর পরবর্তী ছয়টি পূর্ণিমা পর্যন্ত আপনার আয়ু।

এখন আপনি ভেবে দেখুন আমার প্রাণদণ্ড কার্যকর করবেন কিনা ?

কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর মহারাজ মেঘবর্মণ বললেন ,"বুঝতে পারছি আপনি ভ্রম বশত এই ধরনের তান্ত্রিক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু আপনি নরহত্যা র অপরাধ করেছেন। সেজন্য শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে।আর আমার জীবন আমার কাছে বেশি মূল্যবান নয়। সবচেয়ে মূল্যবান আমার প্রজাবর্গ। তাদের হিতের জন্য যদি আমার মৃত্যু হয় তবে তা শ্রেয়।"

তখন তান্ত্রিক বললেন , "ধন্য আপনি। নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আপনি আপনার কর্তব্যে অবিচল। সেজন্য আমি মৃত্যুর আগে আপনার বাঁচার উপায় বলে যাবো।
এই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনাকে অমৃত ঝর্না র জল পান করতে হবে। সেই অমৃত ঝর্না র জল যে কোন রোগ হরণ করে। একবার সেই জল পান করলে কখনো অসুস্থ হবে না। কিন্তু সেই অমৃত ঝর্না র জল সংগ্রহ করা সহজ নয়।
প্রথমে আপনাকে যেতে হবে দক্ষিণ দিকে। সেদিকে রয়েছে সমুদ্র। সমুদ্রের মাঝখানে অসংখ্য দ্বীপের মধ্যে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে রামধনু দ্বীপ। এই দ্বীপটির অধিবাসী মানুষ ভক্ষণ কারী ভয়াবহ রাক্ষসের দল। ঐ দ্বীপের রাজপ্রাসাদের ভিতরে রয়েছে এক সরোবর। সেই সরোবরের জলে রয়েছে আশ্চর্য গুণ। কেউ যে কোন স্থানে যাওয়ার মনস্থির করে অবগাহন করলে তৎক্ষনাৎ সেই আকাঙ্খিত স্থানে  অবস্থিত কোনো সরোবরে নিজেকে দেখতে পাবে।
এখন যে কোনো উপায়ে ঐ সরোবরের কাছে পৌঁছে  অমৃত ঝর্না র কাছে পৌঁছবার মানস নিয়ে অবগাহন করতে হবে। তৎক্ষনাৎ নিজেকে অমৃত ঝর্না র কাছে আবিষ্কার করবে। এবার ঐ অমৃত ঝর্না র জল পাত্রে ভরে নিতে হবে। ঐ অমৃত ঝর্ণার দ্বীপে কোনো মানুষ বসবাস করে না।ঐ দ্বীপের অধিবাসী পক্ষীরাজ ঘোড়ার দল। এই পক্ষীরাজ ঘোড়ার দল মানুষের ভাষায় কথা বলে। কোনো ভাবে তাদের বশ করে  নিজের রাজ্যে ফিরতে হবে।
আর এই সব কিছুই করতে হবে আমার মৃত্যুর পরবর্তী ছয়টি পূর্ণিমা র চন্দ্রোদয়ের মধ্যে।কারণ ঐ টুকু সময় আপনার বাকী থাকা আয়ু।"

মহারাজ মেঘবর্মণ বললেন ,"আপনাকে ধন্যবাদ । মৃত্যু মুখে দাঁড়িয়ে আপনি আমার ও রাজ্যের হিতের জন্য চিন্তা করছেন এজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।"

অতঃপর তান্ত্রিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। সেই দিন সন্ধ্যা থেকে আচমকা মহারাজ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হলেন।বৈদ্য কবিরাজ একে একে জবাব দিয়ে গেলো।
রাজ্যের সব বীর যুবকদের আহ্বান জানানো হলো অমৃত ঝর্ণার জল সংগ্রহ করে আনার জন্য।
কিন্তু পথের বিবরণ শুনে কেউ রাজী হলো না।
সবচেয়ে চিন্তায় পড়লো রাজকন্যা মেঘবতী। পিতা তার কাছে সবকিছু।মাতার ছোট্ট বেলায় মৃত্যু হয়েছে। পিতা তাকে উভয়ের স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছেন। পুত্রসন্তান নেই বলে কখনো দুঃখ করেন নি। বরং কন্যা কে পুত্রের ন্যায় মানুষ করেছেন।সব অস্ত্র শিক্ষায় পারদর্শী করে তুলেছেন। সেই পিতা আজ মৃত্যু শয্যায়।
রাজকন্যা ভাবলেন , তাকে পিতা পুত্রের ন্যায় শিক্ষা প্রদান করেছেন।আজ যখন রাজ্যের যুবক গণ পিতার জন্য অমৃত ঝর্ণার জল সংগ্রহ করতে যেতে উদ্যোগী নয় , তখন মেঘবতী নিজেই পিতার জন্য সেই অমৃত ঝর্ণার জল আনতে যাবে।

এদিকে আরো একজন অমৃত ঝর্না র জল সংগ্রহ করতে যাবে ঠিক করলো।সে হলো রাজ্যের সেনাপতি র পুত্র  মাণিক্য দেব।
যখন সব যুবকদের রাজসভায় আহ্বান করা হয়েছিল তখন মাণিক্য সেখানে উপস্থিত ছিল না।সে রাজ্যের অন্য প্রান্তে শিকারে গিয়েছিল। দীর্ঘ কয়েক মাস যাবত সেখানে থাকা কালীন কোনো খবর পায় নি।
বাড়িতে ফিরে যখন মাণিক্য মহারাজা র অসুখ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সব শুনলো তখনই সে ঠিক করলো সে মহারাজের সুস্থতা র জন্য অমৃত ঝর্না র সন্ধানে যাবে। ছোট বেলা থেকেই অমৃত ডানপিটে ও বেপরোয়া স্বভাবের। দুঃসাহসী কাজে তার ঝোঁক।মাণিক্য ঠিক করলো পরের দিন পূর্ণিমার রাতে সে সবার অগোচরে রওনা দেবে। বাড়িতে জানানো ঠিক হবে না।

এদিকে মেঘবতী ও ঠিক করলো  পূর্ণিমা র রাতে মহারাজের অগোচরে অমৃত ঝর্না র সন্ধানে রওনা দেবে। শুধু রাজ্যের বৃদ্ধ মহামন্ত্রী শুকদেব কে রাজকন্যা তার গোপন অভিযানের কথা জানিয়ে রাখলেন। তিনি ও রাজকন্যা কে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু রাজকন্যার জেদের কাছে শেষ পর্যন্ত তাকে হার মানতেই হলো।

পরের দিন পূর্ণিমা র রাত । আকাশে মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকোচুরি খেলা খেলছে।মাণিক্য ঘোড়াশাল থেকে  ঘোড়া নিয়ে ধীরে ধীরে গৃহ হতে বের হলো। ঘোড়ার খুরের আওয়াজে কারো নিদ্রা ভঙ্গ যাতে না হয় সেজন্য অনেকটা পথ ঘোড়াকে নিয়ে হেঁটে চললো।যখন নিরাপদ মনে হলো তখন ঘোড়ায় আরোহণ করে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চললো।
রাজধানী থেকে একটি পথ সোজা দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। বহু বণিক ঐ পথে বাণিজ্য করতে যায়। তবে তারা দলবেঁধে যায়। পথে হিংস্র জন্তু ও দস্যুদের ভয় ।মাণিক্য ঐ পথেই চললো।
ইতিমধ্যেই চাঁদ উঠেছে।অনেকটা পথ  চাঁদের আলোয় পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।
মাণিক্য লক্ষ্য করলো সামনে অনেক টা দূরে  এক ঘোড়সওয়ার যাচ্ছে।মাণিক্য ঠিক করলো ঐ ঘোড়সওয়ারের সঙ্গ নেওয়া যাক।সে আরো দ্রুততর ঘোড়া ছোটালো।
ঐ ঘোড়সওয়ার আর কেউ নয় সে হলো রাজকন্যা মেঘবতী।
মেঘবতী পুরুষ বেশ ধারণ করে ঘোড়া নিয়ে বেরিয়েছে। নিজের মাথার লম্বা চুল লুকানোর জন্য মাথায় পাগড়ি পরেছে।
মাণিক্য দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে মেঘবতী র কাছে পৌঁছে তাকে প্রশ্ন করলো ,"কে তুমি? কোথায় যাবে ?"
মেঘবতী উত্তর দিলো "আমি পথিক । ভ্রমণে বেরিয়েছি। দক্ষিণ দিকে সমুদ্র তীরে যাবো। আমার নাম মন্মথ। তুমি কে?"
মাণিক্য উত্তর দিলো "আমি মাণিক্য। আমিও ভ্রমণে বেরিয়েছি। তোমার মতোই সমুদ্র তীরে যাবো।চলো একসাথে যাওয়া যাক।"
এরপর দুজনে একসাথে চলতে লাগলো।
মাণিক্য বললো "মন্মথ তোমার গলার স্বর নারীদের মতো কোমল। এই ভ্রমণ পথে অনেক অজানা বিপদ আছে জানো তো। প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণ করতে হবে। তুমি অস্ত্র ধারণ করতে জানো তো?"
মেঘবতী বললো"আমার গলার স্বর কোমল বলে ভেবোনা যে আমি অস্ত্র ধারণে অক্ষম। সময় এলে দেখতে পাবে আমার অস্ত্র চালানোর দক্ষতা।"
দুজনে একসাথে চলতে চলতে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো।

পথে এক জায়গায় ওরা দুজনে থামলো। সামনে এক খরস্রোতা নদী। ঘোড়া নিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। দুজনে নদীর পাড় বরাবর হাঁটতে লাগলো পেরিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত জায়গার সন্ধানে।

এক জায়গায় এসে দেখলো  জলের স্রোত একটু কম। দুজনে ঠিক করলো এইখান দিয়ে নদী পেরিয়ে যাওয়া ঠিক হবে।
কিন্তু ওরা জানতোই না সেখানে এক ভয়ঙ্কর  এক রাক্ষস ও রাক্ষসী থাকতো। তারা দুজনেই বৃদ্ধ  হয়ে গিয়েছিল। দৌড়ে গিয়ে শিকার ধরার ক্ষমতা তাদের ছিল না।তারা দুজনেই একটি করে মন্ত্রপূত  কবচের অধিকারী ছিলো না।ঐ কবচ গলায় পরে থাকলে তারা অদৃশ্য হয়ে যেতো।যেসব পথিক ঐ পথ দিয়ে যেতো তারা অদৃশ্য হওয়ার সুযোগ নিয়ে সেই সব পথিকদের ধরে খেয়ে নিতো।
এদিকে মাণিক্য ও মেঘবতী র ঘোড়ার আওয়াজে  রাক্ষস ও  রাক্ষসী দুজনের ঘুম ভেঙে গেল।আর ঘুম ভাঙলেই তাদের খিদে পায়। এদিকে মাণিক্য ও মেঘবতী র খুব খিদে পেয়েছিল। নদীর ধারে ই ছিলো একটি আম গাছ। সুন্দর রসালো পাকা আমে ভরা।মাণিক্য বললো ,"এসো মন্মথ আম গাছে উঠে আগে আম খাওয়া যাক। তারপর নদী পেরিয়ে যাওয়া যাবে।"
মেঘবতী বললো "আমি গাছে উঠতে জানি না। তুমি গাছে উঠে আম পেড়ে নিয়ে এসো। "
মাণিক্য বললো "সত্যি তুমি নারী দের মতো কোমল স্বভাবের। ঠিক আছে আমি গাছে উঠে আম পেড়ে নিয়ে আসছি।"
এই বলে দুজন ঘোড়া দুটিকে একটি অন্য গাছের সঙ্গে বেঁধে দিলো। ঘোড়া দুটো কচি কচি ঘাস খেতে লাগল।মাণিক্য আম গাছে উঠে আম সংগ্রহ করতে লাগলো।
এদিকে দুজন রাক্ষস রাক্ষসী অদৃশ্য হওয়ার কবচ গলায় পরে খাবারের সন্ধানে বের হলো। সামনে পড়লো মাণিক্য ও মেঘবতী র ঘোড়া। প্রথমেই মেঘবতী র ঘোড়াটি কে তাদের ধারালো নখ ও দাঁতের সাহায্যে হত্যা করলো। এদিকে মাণিক্যর ঘোড়া অন্য সাথীর মৃত্যু দেখে ভয় পেয়ে চিঁহিঁ চিঁহিঁ করে চিৎকার জুড়ে দিলো। ঘোড়ার আওয়াজে সচকিত হয়ে মেঘবতী এগিয়ে গিয়ে দেখলো ভয়াবহ দৃশ্য। কোনো অদৃশ্য শক্তি ঘোড়াকে হত্যা করে ভক্ষণ রত। মেঘবতী সেই অদৃশ্য শক্তির উদ্দেশ্যে বললো, "তোমরা যেই হও সাহস থাকলে দৃশ্যমান হয়ে আমার সাথে লড়াই করো। " 
রাক্ষস ও রাক্ষসী দুজন দেখলো একজন মাত্র মানুষ।তারা দুজন তখন তাদের অদৃশ্য হওয়ার কবচ দুটো গলা থেকে খুলে এক জায়গায় রেখে বললো ,"বেশ এই আমাদের অদৃশ্য হওয়ার কবচ খুলে রেখে দিলাম। অনেক দিন মানুষের মাংস খাওয়া হয় নি।আজ মানুষের মাংস খাবো।
ইতিমধ্যেই বিপদ বুঝতে পেরে মাণিক্য গাছ থেকে নেমে এসে মেঘবতী র পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাকে দেখে রাক্ষস টা বললো "দুটো মানুষ। আজকের ভোজন দারুন উপাদেয় হবে।"
অতঃপর যুদ্ধ শুরু হলো।মাণিক্য ও মেঘবতী দুজনেই অস্ত্র চালানোয় নিপুণ। এদিকে রাক্ষস ও রাক্ষুসী মানুষের দ্বিগুণ আকৃতি সম্পন্ন ভীষণ বলশালী। কিন্তু অস্ত্র নৈপুণ্য ও কুশলতার র কাছে বল  হার মানলো।রাক্ষস ও রাক্ষুসী উভয়ের মৃত্যু হলো। এদিকে মেঘবতী র লড়াই করতে করতে কখন পাগড়ী মাথা থেকে খুলে পরে গেছে। লম্বা একরাশ ঘন কালো চুল বলে দিচ্ছে মেঘবতী একজন নারী।
মাণিক্য মেঘবতী র লম্বা চুল দেখে মুচকি হেসে বললো "আমি ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম যে তুমি একজন নারী। এখন তোমার আসল পরিচয় দাও।"
মেঘবতী একটু লজ্জিত হয়ে বললো ,"আমি অরূপ নগরের রাজকন্যা মেঘবতী। পিতার জন্য অমৃত ঝর্না র জল সংগ্রহ করতে চলেছি। কিন্তু তুমিও কোন সাধারণ পথিক নয়।এমন অস্ত্র নৈপুণ্য কোনো যোদ্ধা ছাড়া অন্য কারো হওয়ার কথা নয়।"
মাণিক্য বললো ,"আমি অরূপ নগরের সেনাপতি র পুত্র। আমিও মহারাজের জন্য অমৃত ঝর্না র জল সংগ্রহ করতে বেরিয়েছি।"

উভয় উভয়ের কথা শুনে হেসে উঠলো।রাক্ষস রাক্ষসী র কবচ দুটো তারা সংগ্রহ করে রাখলো। কখন কি প্রয়োজন হবে তা তো আগে থেকে বলা যায় না।

 যাইহোক এখন একটাই ঘোড়া। দুজনে একটা ঘোড়ায় চড়ে ই যাত্রা শুরু করলো। সামনে মেঘবতী তার পিছনে মাণিক্য বসলো।
কতো পথ জঙ্গল পাহাড় পেরিয়ে গেলো। কতো কথা হলো দুজনের।মাণিক্য শোনালো তার শিকারের গল্প , যুদ্ধে র গল্প।আর মেঘবতী শোনালো তার রাজপ্রাসাদে র কাহিনী, তার পিতার স্নেহের গল্প, তার সখীদের কাহিনী। দুজনের বন্ধুত্বটা আরো গাঢ় হলো।

এই ভাবে একদিন তারা পৌঁছে গেলো সমূদ্রের তীরে। জনহীন সমূদ্র তীর ।ঐ সমূদ্রের মাঝখানে কোনো জায়গায় আছে সেই রামধনু দ্বীপ। কিন্তু কয়েকটি দিন থেকেও তারা বুঝতে পারলো না কিভাবে সেখানে পৌঁছে যাবে।

এদিকে হয়েছে কি সমূদ্রের তীরে ছিল বিশাল বিশাল বৃক্ষ‌। সেই রকম একটা বিশাল বৃক্ষে থাকতো এক ঈগল দম্পতি। এই ঈগল দুইটি ছিল এলাকার সব পাখিদের রাজা।তারা অন্য সব পাখিদের ভাষা বুঝতো ও তাদের ভাষায় কথা বলতে পারতো। সেই সাথে তারা মানুষের ভাষাও বুঝতো ও কথা বলতে পারতো। তারা তাদের বাচ্ছা দুটো ঈগল কে বাসায় রেখে প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে যেতো।
এখন হয়েছে কি ঈগল দম্পতি খাবারের সন্ধানে বের হয়েছে। একটা অজগর সাপ কাছেই থাকতো। অজগর সাপ টার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো ঈগলের বাচ্ছাদুটিকে খাওয়ার। কিন্তু ভয়ে সাহস পায় না। কিন্তু আজ সাহস করে গাছে চড়তে লাগলো। ঈগলের বাচ্ছা দুটি অজগর সাপটিকে গাছে চড়তে দেখে ভয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।মাণিক্য তাদের চেঁচামেচি তে আকৃষ্ট হয়ে কাছে গিয়ে দেখলো একটা অজগর সাপ গাছ বেয়ে উপরে উঠছে।আর ওপরে থাকা ঈগলের বাচ্ছা দুটি সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে।

মাণিক্য তক্ষুনি তরবারি বের করে অজগর সাপটিকে দ্বিখণ্ডিত করে মেরে ফেললো।
সন্ধ্যায় ঈগল দম্পতি বাসায় ফিরে এলো।এসে বাচ্ছাদের মুখে পুরো কাহিনী শুনলো। ঈগল দম্পতি ঠিক করলো এই দুজন ভালো মানুষ কে ধন্যবাদ জানানোর প্রয়োজন।
তারা দুজন মাণিক্য ও মেঘবতী র কাছে গিয়ে উড়ে বসলো।মাণিক্য ও মেঘবতী বিশালাকার দুটো ঈগলকে উড়ে এসে বসতে দেখে ঘাবড়ে গেলো।
ঈগল দুটি মানুষের ভাষায় তাদের বললো ,"ভয় পেয়োনা। তোমরা দুজনে আমার সন্তান দের রক্ষা করে অনেক উপকার করেছো।এর প্রতিদানে  আমরা তোমাদের কিছু উপকার করতে ইচ্ছুক।বলো আমি তোমাদের  কি উপকার করতে পারি ?"
মাণিক্য বললো ,"আমরা যা করেছি তা আমাদের কর্তব্য মনে করেই করেছি। আপনারা যদি সত্যিই আমাদের সাহায্য করতে চান তবে আমাদের সমূদ্রের মাঝখানে রামধনু দ্বীপে পৌঁছে দিন।"
পুরুষ ঈগল টি বললো ,"বেশ কাল সকালে আমরা তোমাদের দুজনকেই পিঠে করে রামধনু দ্বীপে পৌঁছে দেবো। কিন্তু মনে রাখবে সেখানকার অধিবাসীরা ভয়ঙ্কর রাক্ষস।তারা তোমাদের দেখতে পেলেই খেয়ে নেবে।"
মাণিক্য বললো ,"তারা আমাদের দেখতে পাবে না। আমাদের কাছে অদৃশ্য হওয়ার কবচ আছে।"

পরের দিন সকালে মাণিক্য ও মেঘবতী ঈগলের পিঠে চড়ে রামধনু দ্বীপের দিকে যাত্রা করলো। কতো দ্বীপ তারা পেরিয়ে গেলো। কোনো দ্বীপে দৈত্য আকৃতির মানুষ। কোথাও আবার খর্বাকৃতি মানুষ। কোথাও আবার কোনো জনপ্রাণী নেই। কোথাও আবার ভয়ঙ্কর জীবজন্তুর আবাস। এমনি করে তারা রামধনু দ্বীপের কাছে চলে এলো। দ্বীপটির নাম রামধনু।কারণ এখানকার মাটি বিভিন্ন রঙের।উপর থেকেই মনে হচ্ছে একমুঠো করে বিভিন্ন রঙ পুরো দ্বীপের গায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।


ঈগল দুটি তাদের দ্বীপের এক প্রান্তে নামিয়ে দিলো। রাজা ঈগলটি বললো ,"একটি গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ কথা তোমরা শুনে রাখো। এই রাক্ষসদের প্রাণভোমরা মন্ত্রবলে একটি পায়রার জীবনের সাথে জড়িত করে রাখা হয়েছে। পায়রার প্রতি ফোঁটা রক্ত হাজার রাক্ষসের প্রাণ। তাই ঐ পায়রার মৃত্যু রক্তপাত না ঘটিয়ে যদি করা যায় তাহলে সব রাক্ষস মারা পড়বে ।আর যদি একফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে তবে নতুন হাজার টি রাক্ষস জন্ম হবে।

আর ঐ পায়রা টি রয়েছে ওদের মহারানী র ঘরে খাঁচায় বন্দী। আমি পাখিদের রাজা।তাই আমি এই গোপন বিষয়গুলো জানি।"
 ওরা ঈগল দুটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্বীপের মধ্যভাগের দিকে যাত্রা শুরু করলো।
বিরাট প্রাচীর দিয়ে ঘেরা রাক্ষস নগরী। প্রাচীরের গায়ে বিরাট সিংহদ্বার।আর সেই সিংহদ্বার পাহারা দিচ্ছে যতো ভয়ানক রাক্ষসের দল।মাণিক্য ও মেঘবতী সেই রাক্ষস দুটির কাছ থেকে সংগ্রহ করা  অদৃশ্য হওয়ার কবচ দুটি গলায় পরে নিলো।

রাক্ষস নগরীর ভিতরে প্রবেশ করে মাণিক্য ও মেঘবতী অবাক হয়ে গেল।কি বিশাল বিশাল প্রাসাদ।কি সুন্দর বাগান। রাস্তাঘাট কি সুন্দর পাথর দিয়ে তৈরি। সুন্দর সুসজ্জিত চারিদিক।এক জায়গায় দেখলো অনেক মানুষ একটা ঘেরা জায়গায় বন্দী।ঘেরা জায়গাটা একটি ভয়ঙ্কর রাক্ষস পাহারা দিচ্ছে।মাণিক্য বললো ,"রাজকন্যা এই লোকগুলো কে বন্দী করে রাখা হয়েছে খাওয়ার জন্য। আমরা এই লোকগুলো কে এই ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারিনা।যে করেই হোক এদের মুক্তি দিতে হবে।"
মেঘবতী বললো,"আমি আপনার সাথে একমত। কিন্তু কি উপায়ে এটা করা সম্ভব ?"
মাণিক্য বললো আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা এসেছে।
আমি অদৃশ্য ভাবে রাজপ্রাসাদের ভিতরে রানীর ঘরে যাবো। সেখান থেকে ঐ রাক্ষসদের প্রাণভোমরা পায়রা টিকে সংগ্রহ করে মেরে ফেলবো। তাহলে রাক্ষস কুল ধ্বংস হবে। এদিকে তুমি যখন সুযোগ পাবে তখনি এই পাহারাদার রাক্ষস টিকে ফাঁকি দিয়ে সব মানুষ গুলো কে নিয়ে   রাজপ্রাসাদের ভিতরের সরোবরের কাছে নিয়ে যাবে। সেখানে সবাই কে নিজের নিজের বাড়িতে যাওয়ার মনস্থির করে অবগাহন করতে বলবে। ইতিমধ্যে আমি আশা করি কার্যোদ্ধার করে তোমার সাথে যোগ দিতে পারবো।"

এই বলে মাণিক্য, মেঘবতী কে শুভকামনা জানিয়ে নিজের  গন্তব্যে এগিয়ে চললো।
এদিকে মেঘবতী অনেকক্ষণ ধরে অদৃশ্য হয়ে পাহারায় থাকা রাক্ষস টিকে নজরে রাখলো।
কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলো পাহারাদার রাক্ষসটা একটা বিরাট গাছের ছাওয়ায় রোদ্দুর থেকে বাঁচতে গিয়ে বসলো।আর বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝিমুতে লাগলো। শেষে শুয়ে পরে নাক ডাকাতে লাগলো।
মেঘবতী দেখলো এই সুযোগ। সে চুপিচুপি ঘেরা জায়গায় এলো। বিরাট দরজা। কোনো মানুষের একার পক্ষে সেই দরজা খোলা প্রায় অসম্ভব।
মেঘবতী তার সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে দরজাটা খোলার চেষ্টা করতে লাগলো। বেশ কিছু ক্ষণ বাদে একটা মানুষ গলে ভিতরে যাওয়ার মতো ফাঁক তৈরী হলো।ঐ ফাঁক দিয়ে মেঘবতী ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতরে প্রবেশ করে নিজেকে অদৃশ্য হওয়ার কবচ টি গলা থেকে খুলে আত্মপ্রকাশ করতে সেখানকার মানুষ জন হকচকিয়ে গেল।
মেঘবতী তাদের বললো ,"ভয় নেই। আমি তোমাদের বাঁচাতে এসেছি।"

একজন বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বললো "এই রাক্ষস পুরীতে তুমি কিভাবে এলে?আর আমাদের বাঁচাবে কিভাবে ?"
মেঘবতী তাদের আশ্বস্ত করে বললো,  "আপনাদের পাহারায় থাকা রাক্ষস টি এখন ঘুমোচ্ছে। এই সুযোগে সবাই মিলে দরজা খুলে  পালিয়ে যেতে হবে।সামনেই রাজপ্রাসাদের সরোবর। এই সরোবরের এক আশ্চর্য গুণ আছে।যে কেউ এই সরোবরের জলে নেমে কোনো জায়গায় যাওয়ার মনস্থির করে ডুব দেয় তবে সেই স্থানের নিকটবর্তী কোনো সরোবরে পৌঁছে যাবে। এখন সব রাক্ষস দুপুরের ঘুম দিতে ব্যাস্ত। এই সময় পালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। বিলম্ব না করে চুপচাপ সকলে আমার সাথে চলুন।"

তারপর সকলের প্রচেষ্টায় দরজাটা সামান্য ফাঁক করে সকলে বেরিয়ে পড়লো। রাক্ষসটা তখনো নাক ডাকাচ্ছে।সকলে দৌড় দিল সরোবরের   দিকে। আশেপাশে কোন রাক্ষস নেই।সকলে একে একে সরোবরে নেমে নিজের নিজের বাড়িতে যাওয়ার মনস্থির করে ডুব দিতে লাগলো। বেশ কয়েকজন তখনো বাকি এমন সময় একটা হট্টগোল ভেসে এলো।
মেঘবতী দেখলো মাণিক্য একটা পায়রা হাতে নিয়ে দৌড়ে আসছে।আর তাকে তাড়া করে আসছে এক বিশাল রাক্ষস বাহিনী। মেঘবতী বাকি সবাই কে তাড়াতাড়ি সরোবরে নেমে ডুব দিতে বললো।নিজে খোলা তরবারি নিয়ে একা দাঁড়িয়ে রইলো মাণিক্য কে সাহায্য করবার জন্য।
সব বন্দী মানুষ নিজের নিজের ঘরে ফিরে গেছে দেখে মেঘবতী নিশ্চিন্ত হলো। নিজের প্রাণের ভয় সে করে না।মাণিক্য কে ছেড়ে সে একা যাবে না।
মাণিক্য দৌড়ে এসে হাঁফাতে লাগলো। হাঁফিয়ে হাঁফিয়ে বললো ,"পায়রাটা নিয়েছি এমন সময় রাক্ষস গুলো টের পেয়ে গেলো। অদৃশ্য হওয়ার কবচটা গলা থেকে খুলে পরে গেছে বুঝতে পারিনি। তাড়াতাড়ি দৌড়ে পালিয়ে এসেছি। পায়রা টিকে মেরে ফেলার সময় পাই নি।
মেঘবতী বললো "ঐ রাক্ষস গুলো আসছে। তাড়াতাড়ি পায়রা টিকে শ্বাস রূদ্ধ করে মেরে ফেলো।"
তৎক্ষনাৎ মাণিক্য পায়রাটার গলা মুচড়ে শ্বাস রূদ্ধ করে মেরে ফেললো। সাথেই যেখানে যতো রাক্ষস ছিল শ্বাস রূদ্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে মারা গেলো।

রাক্ষসকুল ধ্বংস হলো।

এরপর  মাণিক্য ও মেঘবতী  হাত ধরাধরি করে সরোবরের জলে নেমে অমৃত ঝর্ণার কাছে পৌঁছবার মনস্থির করে ডুব দিলো।

জল থেকে মাথা তুলে তারা আশ্চর্য হয়ে গেলো।

সামনে বিরাট এক পাহাড় শীর্ষ থেকে জলধারা ঝর্ণা হয়ে পড়ছে। সূর্যের আলোয় ঝর্ণা র জল চকমক করছে।
এই তবে সেই অমৃত ঝর্না। জলধারা জমে একটা ছোট জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে। সেই জলাশয়ে মেঘবতী ও মাণিক্য এসে পৌঁছেছে।

মাণিক্য ও মেঘবতী প্রাণভরে সেই ঝর্ণার জল পান করলো। এই জল যে কোন রোগ হরণ করে। একবার এই জল পান করলে সারাজীবন কখনো অসুস্থ হবে না।
মাণিক্য তার পোশাকের ভিতর হতে একটি ছোট পাত্র বের করে ঝর্ণার জল ভরে নিল। এবার পাত্রের মুখ ভালো করে বন্ধ করে পুনরায় পোশাকের ভিতরে ঢুকিয়ে রাখলো। মেঘবতী ও পোশাকের ভিতরে একটা ছোট পাত্র এনেছিলো।সেও নিজের পাত্রে জল ভরে ,পাত্র বন্ধ করে নিজের পোশাকের ভিতরে রেখে দিলো।

এবার ঘরে ফেরার পালা। দুজনে হাত ধরাধরি করে ঘুরে দেখতে লাগলো। এটা একটা দ্বীপ। চারিদিকে ফুল ফলের গাছে ভরা। দুজনে দ্বীপের অভ্যন্তরে এক পাল পক্ষীরাজ ঘোড়াকে ঘুরে বেড়াতে দেখলো। কিন্তু ওরা ঘোড়ার কাছে গেলেই ঘোড়াগুলি দৌড়ে পালায় নয়তো উড়ে পালায়। কয়েকটি দিন কেটে গেলো। একটা ঘোড়াকেও বশ করা গেলো না।
কিন্তু একদিন ভাগ্য তাদের সহায় হলো। একটা শিশু পক্ষীরাজ ঘোড়া উড়তে গিয়ে হাওয়ার বেগ সামলাতে না পেরে ওদের সামনে ধপাস করে পড়ে গিয়ে আহত হলো। মেঘবতী ও মাণিক্য দৌড়ে গিয়ে আহত ঘোড়াটি কে সুশ্রূষা করতে লাগলো।মাণিক্য একটা পাতায় করে অমৃত ঝর্ণার জল নিয়ে এলো। মেঘবতী সেই জল আহত পক্ষীরাজ ঘোড়াটিকে পান করিয়ে দিলো।অতি অল্প সময়ের মধ্যে আহত ঘোড়াটি সুস্থ সবল হয়ে গেল। ইতিমধ্যে ঘোড়াটির মাতা পিতা সন্তানের সন্ধানে হাজির হয়েছে।
পিতা পক্ষীরাজ ঘোড়াটি ওদের দুজনের উদ্দেশ্যে বললো ,"কয়েক দিন হলো তোমরা এই দ্বীপে কোনো আশ্চর্য উপায়ে উপস্থিত হয়েছো। আমরা মানুষ দের বিশ্বাস করি না। মানুষরা সুযোগ পেলেই আমাদের বন্দী করার চেষ্টা করে। কিন্তু তোমরা আমার সন্তান কে সেবা করলে। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। তোমরা ভালো মানুষ। আমি কিভাবে তোমাদের এই ঋণ শোধ করবো।
মেঘবতী বললো ,"আমার পিতা অরূপ নগরের  রাজা । তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। আমরা দুজন তার সুস্থতা র জন্য এই অমৃত ঝর্ণা র জল সংগ্রহ করতে এসেছি। পিতার অসুস্থতার পর হতে ছয়টি চন্দ্রোদয়ের মধ্যে পিতাকে এই অমৃত ঝর্না র জল পান করাতে হবে। নয়তো পিতার মৃত্যু হবে। আগামী কাল সেই ষষ্ঠ চন্দ্রোদয়ের দিন। আপনি যদি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করে আমাদের গৃহে পৌঁছে দেন তবে আমরা দুজন আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।"

পক্ষীরাজ ঘোড়াটি বললো "তোমাদের সেবাপরায়ণতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তোমরা দুজনে আমার পিঠে উঠে বস। কাল চন্দ্র উদয়ের পূর্বেই আমি তোমাদের গৃহে পৌঁছে দেবো।"
অতঃপর দুজনে পক্ষীরাজ ঘোড়ার পিঠে চড়ে অরূপ নগরের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলো।

এদিকে আজ ষষ্ঠ চন্দ্র উদয়ের দিন।আজ মহারাজা র শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। মহারাজ কেবল মেঘবতী কে দেখতে চাইছে। মহামন্ত্রী শুকদেব খালি মহারাজা কে এটা ওটা কথায় ভুলিয়ে রেখেছে। দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল।সকলে অপেক্ষা করছে।এমন সময় হৈচৈ। বহু দূর থেকে দেখা যাচ্ছে একটা বিশাল পাখি উড়ে আসছে। কাছে আসতে সকলে দেখলো এক পক্ষীরাজ ঘোড়ার পিঠে চড়ে রাজকন্যা মেঘবতী ও সেনাপতি পুত্র মাণিক্য আসছে।মাণিক্য নিরুদ্দেশ হয়েছিল সকলেই জানতো। কিন্তু সে যে রাজকন্যা র সাথে অমৃত ঝর্না র সন্ধানে গিয়েছে সেটা কেউ আন্দাজ করতে পারে নি।
পক্ষীরাজ ঘোড়াটি   ওদের দুজনকে রাজপ্রাসাদের সামনে নামিয়ে দিয়ে বিদায় নিলো।
ওরা দুজনে দ্রুত রাজপ্রাসাদের ভিতরে গিয়ে মহারাজ কে অমৃত ঝর্না র জল পান করালো। এই জলের এমন গুণ যে মানুষ টি কিছু ক্ষণ আগে উঠে বসতে পারছিলো না , সেই মানুষটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে উঠে হাঁটা চলা শুরু করলো।
মহারাজ সুস্থ হলো।
মহারাজ মেয়ের কাছে তাদের দুজনের অমৃত ঝর্না র জল সংগ্রহ করার জন্য যে যে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে সব শুনলেন।
তারপর একটা শুভ দিন দেখে সেনাপতি র সাথে কথা বলে মাণিক্য ও মেঘবতী র বিবাহ দিলেন।
সুখে দিন কাটতে লাগলো। একদিন কালের নিয়মে মহারাজের মৃত্যু হলো।
মেঘবতী ও মাণিক্য রাজা রানী হলো।


আমার গল্প ফুরালো
নটে গাছটি মুড়ালো
কেন রে নটে মুড়ালি?
চাষী কেন জল দেয়নি……..


 


No comments:

Post a Comment