Crss colum

Thursday, June 6, 2019

নাগদেবী

আচমকা বৃষ্টি নামতেই মিলন দৌড়তে শুরু করলো। কিন্তু দৌড়ে যাবেই বা কোথায়? মেঘটা অবশ্য অনেকক্ষণ ধরেই ধীরে ধীরে জমা হচ্ছিলো উত্তর পশ্চিম আকাশে। সন্ধ্যা হবো হবো। চারিদিকে দিগন্ত প্রসারিত উন্মুক্ত প্রান্তর। হঠাৎ চোখে পড়লো অনেকটা দূরে যেন একটা মন্দিরের কাঠামো দেখা যাচ্ছে।মিলন ঐ দিকে ছুট লাগালো।যখন মন্দিরের চাতালে গিয়ে দাঁড়ালো তখন রীতিমত সে হাঁপাচ্ছে। অনেক ক্ষণ কিছু খায় নি। আজকে রাতে খাবার জোটবার সম্ভাবনা নেই।

 সেই দুপুর বেলায় কাছে থাকা শেষ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে হোটেলে ভাত খেয়েছিলো।ভাতের বিল হয়েছিল তিরিশ টাকা। খুচরো না থাকায় হোটেল মালিক বাকি টাকা না দিয়ে একটা রাজ্য লটারির টিকিট ধরিয়ে দিয়েছিলো।হোটেল মালিক হোটেলের ব্যবসার সঙ্গে সাইড বিজনেস হিসাবে লটারির টিকিট বিক্রি করে।মিলন বুঝতে পারছিলো হোটেল মালিকের খুচরো না থাকার বাহানাটা পুরোপুরি মিথ্যে। তবু সব কিছুই সয়ে নেওয়ার অভ্যাস বশত সে প্রতিবাদ করলো না।
এখন সে কর্পদক শূন্য। এই কয়েকটা মাসের মধ্যেই জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা এসে গেছে।
ইতিমধ্যেই বৃষ্টি বেশ জোরেই পড়তে শুরু করেছে। মন্দিরের বাড়ানো চাতাল বৃষ্টির জল আটকাতে পারছে না। বৃষ্টির ছাঁট লেগে ভিজে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু মন্দিরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তবে কি কেউ ভিতরে আছে?
কিন্তু এই নির্জন প্রান্তরে পোড়ো মন্দিরে কেই বা আসবে? মিলন মনে মনে ভাবলো হয়তো বহুদিন দরজা খোলা না হওয়ায় দরজা জ্যাম লেগে আটকে গেছে।সেটাই স্বাভাবিক। এদিকে বৃষ্টি প্রবল বেগে পড়তে শুরু করেছে।কড়কড় শব্দে মেঘ ডাকছে।ক্ষণে ক্ষণে বজ্রপাত হচ্ছে।মনে হচ্ছে আজ বুঝি প্রলয় শুরু হয়েছে।এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে একটা পোড়ো মন্দিরের চাতালে দাঁড়িয়ে মিলন বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো "যদি মৃত্যু আসে আসুক। আমি বাঁচতে চাই না।আজ যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায় আমার কিছু আসে যায় না। আমার চেনা পৃথিবী কয়েকদিন আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকিটাও আজ ধ্বংস হোক।"
এমন সময় মন্দিরের ভিতর থেকে একটা নারী কন্ঠ ভেসে এলো "আপনি বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজছেন কেন ? মন্দিরের ভেতরে চলে আসুন।"
মিলন বুঝতে পারলো মন্দিরের ভেতরে কেউ আছে।তার গলার আওয়াজ শুনে সে বুঝতে পেরেছে  বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।মিলন বললো "দরজা তো বন্ধ। ভিতরে কিভাবে যাবো ?"
নারী কন্ঠ বললো "আর বন্ধ নেই। আপনি দরজায় ধাক্কা দিন।খুলে যাবে।"
মিলন এবার দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
নারী কন্ঠ বলে উঠলো "ভিতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে ছিটকিনি লাগিয়ে দিন। মন্দিরের কুলুঙ্গি তে একটা মাটির প্রদীপ আছে। আমি প্রদীপ জ্বেলে দিচ্ছি।"
মিলন সেই মতো ভিতরে ঢুকে দরজাটায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিল। ওদিকে ফস করে একটা দেশলাই জ্বালার আওয়াজ হলো।তারপরে একটা প্রদীপের ক্ষীণ আলোয় মন্দিরের ভিতরটা আলোকিত হয়ে উঠলো।
মিলন সবিস্ময়ে দেখলো ভেতরে একটা শিবলিঙ্গ রয়েছে।আর শিবলিঙ্গের অপর দিকে একটি অপরূপা সুন্দরী ষোড়শী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জীবনে এতো সুন্দরী নারী মিলন কখনো দেখেনি।মিলন অবাক চোখে হাঁ করে তাকিয়ে আছে দেখে মেয়েটি লজ্জা পেয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে নিলো।মিলন এবার যেন হুঁশ ফিরে পেয়ে নিজের চোখ অন্য দিকে সরিয়ে নিলো।মিলন চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো বেশ বহুকালের পুরাতন মন্দির । পূজার্চনা নিয়মিত হয় বলে মনে হয় না। শিবলিঙ্গের ওপরে কিছু সাদা ফুল রয়েছে। সামনে একটি রেকাবীতে কয়েকটি ফল রয়েছে। মনে হয় মেয়েটি এই ফুল ফল দিয়ে পূজো করেছে।
মেয়েটি বললো "আপনি   বসুন । নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়েছে। এই প্রসাদী ফল গুলো খান।"
মিলন বললো ‘ আপনিও খান।’
মেয়েটি স্বল্প হেসে বললো ‘না, আমি খাবো না। আমি একটা ব্রত পালন করছি। গত তিনদিন আমি উপবাস করে আছি।আজ আমার ব্রতের শেষ দিন। আপনি খেয়ে নিন। আমি জানতাম আপনি ক্ষুধার্ত অবস্থায় আসবেন।তাই এই ফল গুলো সংগ্রহ করে পূজার প্রসাদ হিসাবে আপনার জন্য রেখে দিয়েছি।’
মিলন অবাক হয়ে বললো ‘ আপনি জানতেন আমি আসবো ? কিভাবে জানলেন ?’
মেয়েটি উত্তর দিলো‘ স্বয়ং শিব আমার স্বপ্নে আপনার সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। এমনকি কখন কোন পরিস্থিতিতে আপনি এখানে আসবেন সেই সব কথা আমায় জানিয়েছেন।’
মিলন অনুভব করলো মেয়েটির মাথার ঠিক নেই।তাই উল্টোপাল্টা বকছে।মিলন একটু মজা করেই বললো ‘ শিব ঠাকুর আমার সম্পর্কে কি কি বলেছেন একটু শুনি। তার আগে আপনার পরিচয় দিন।’
মেয়েটি বললো "আমার নাম উলুপী।  আমি নাগ বংশোদ্ভূত কন্যা। আমাদের বংশের নিয়ম আছে যখন কন্যা সন্তান বিবাহযোগ্যা হয় তখন সে কোনো নির্জন  শিব মন্দিরে গিয়ে তিনদিন উপবাস থেকে শিবের আরাধনা করবে। তিনদিনের শেষ দিনে শিবের প্রসাদে তার বিধি নির্দিষ্ট স্বামী সেই মন্দিরে উপস্থিত হবে।তার আগে স্বয়ং শিব স্বপ্নের মধ্যে তার স্বামীর বিস্তারিত বিবরণ জানাবেন।"
এই পর্যন্ত শুনেই মিলন বুঝতে পারলো মেয়েটি র মাথা সত্যি সত্যি একদম ঠিক নেই। মিলনের পরিচিত এক বন্ধুর টাইটেল হলো 'নাগ।' সম্ভবতঃ মেয়েটির   বাড়ির টাইটেল “নাগ”।তাই নিজেকে ‘নাগ বংশদ্ভুত’ বলছে।
বাকি সবটুকুই মনগড়া কাহিনী। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এই মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে।আর নিজের মনের মধ্যে যতো আজগুবি চিন্তা ভর করেছে , সেগুলোকে সত্যি বলে ভাবছে।
কিন্তু এরপরেই মিলন কে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি বলে চললো ‘ আপনার নাম মিলন রায়। বাবার নাম সুবিমল রায়। আপনার বাবা মার একই সঙ্গে একটি পথ দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। আপনার বাবার কোটি টাকার সম্পত্তি আপনার আত্মীয় স্বজন জবর দখল  করেছে। আপনি বর্তমানে কর্পদক শূন্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গতকাল নিজের কাছে থাকা শেষ পঞ্চাশ টাকা খরচ করে ফেলেছেন। নিজের আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা করে হেরে গিয়েছেন। উচ্চ আদালতে আপিল করার টাকা আপনার কাছে নেই। আপনি নিজের শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করছেন। এই পরিস্থিতি থেকে আপনি উদ্ধার পেতে পারেন। যদি আপনি আমার সাথে বিবাহ করতে রাজী হন। সেক্ষেত্রে আমি আপনাকে আমার রূপান্তরিত করবো আমার মতো ইচ্ছাধারী নাগ পুরুষে। এখন বলুন আপনি কি প্রস্তুত ? নাকি আরো কোন জিজ্ঞাস্য আছে?    ’
মিলন ঘাবড়ে গিয়ে বললো ‘ বুঝতে পারছি না আপনি  এতো কিছু জানলেন কি করে ? একথা ঠিক আজ আমি অসহায়। কিন্তু আমি আমার সব কিছু ফেরত পেতে চাই। তার জন্য যে কোন পদক্ষেপ নিতে রাজি। কিন্তু আপনি নিজেকে ইচ্ছা ধারী নাগ বলছেন। এসব তো গল্প কাহিনী তে শোনা যায়। বাস্তবে এর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই। ধরে নিলাম আপনি ঠিক বলছেন। সেক্ষেত্রেও একটি প্রশ্ন উত্থাপন হয়। আপনি ইচ্ছা ধারী নাগ হলে আমার মতো মানুষের সাথে বিবাহ কেন করবেন ? অপর কোনো ইচ্ছা ধারী নাগ কে বিবাহ করলেই তো পারেন।  ’
উলুপী এক মূহুর্ত চুপ থেকে বললো “ মানুষ জাতির পাশাপাশি  আমাদের জাতির বিকাশ হয়েছে সৃষ্টির আদি কাল থেকেই। মহাভারতে আছে ভীম কে দূর্যোধন  বিষ প্রয়োগ করে নাগ লোকে ফেলে দিয়েছিল। এই নাগ লোক আমাদের বংশীয় ইচ্ছা ধারী নাগেদের আবাসস্থল। আমরা ইচ্ছা করলেই মানুষ রূপ ধারণ করতে পারি ।  মানুষের রূপ ধারণ করলে আমাদের চেনা খুব মুশকিল। শুধু একটা তফাৎ আছে আমাদের জিহ্বার সামনের অংশ মানুষ রূপ ধারণ করার পরেও দুই ভাগে বিভক্ত থাকে।এই দেখুন " এই বলে উলুপী নিজের জিভ বার করে দেখালো । মিলন সবিস্ময়ে দেখলো তার জিভের সামনের অংশ দুই ভাগে বিভক্ত।

উলুপী পুনরায় বলতে শুরু করলো
 "বর্তমানে খুব অল্প সংখ্যক ইচ্ছা ধারী নাগ জীবিত রয়েছে।এক মুনির অভিশাপে ইচ্ছা ধারী নাগ বংশে পুরুষ নাগ জন্ম নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাদের  বংশের সকল নারী ও অবশিষ্ট পুরুষ গণ বংশ রক্ষার জন্য হিমালয়ের মণিমহেশে শিবের আরাধনা করি। সেখানে আমাদের আরাধনায় তুষ্ট হয়ে এক অগ্নিশিখা প্রকট হয়। সেই অগ্নিশিখা থেকে দৈববাণী হয় ‘এই বংশোদ্ভূত নারী গণ বিবাহযোগ্যা হলে  কোনো নির্জন মন্দির বা স্থানে গিয়ে শিবের আরাধনা করবে। শিবের আশীর্বাদে  সেখানে এক মানুষ জাতির পুরুষ উপস্থিত হবে। সেই পুরুষ যদি  সব জেনে বিবাহে রাজি হয় তবে তাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ইচ্ছা ধারী নাগে রূপান্তরিত করা যাবে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই প্রথা চলে আসছে। ’   ”
মিলন বললো ‘ যতো সব গাঁজাখুরি গল্প। তুমি  বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাও।আর গিয়ে মাথার চিকিৎসা করাও। নিজেকে সাপ ভাবা বন্ধ করো। হয়তো কোন ভাবে তুমি আমার  সম্পর্কে সব কিছু জানতে পেরেছো।তার মানে এই নয় যে আমি তোমার যতো সব গাঁজাখুরি গল্প কথা বিশ্বাস করবো। বেশ তুমি যদি সাপ হও তবে সেই রূপ ধারণ করে আমায় প্রমাণ দাও।  ’
উলুপী উত্তর দিলো “ আমাদের নিয়ম আছে কোনো মানুষ যদি আমাদের সর্প রূপ ধারণ দেখে ফেলে তবে তার মৃত্যু ঘটাতে হবে। আপনি যদি আমার সাথে বিবাহবন্ধনে রাজি থাকেন তবে আমি আপনার সামনে সেই রূপ ধারণ করতে পারি। নতুবা সেই রূপ ধারণ যদি আপনি দেখেন তৎক্ষণাৎ আপনার মৃত্যু ঘটাবো।  ”
মিলন বললো ‘ তোমার মতো রূপসী র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যে কোনো যুবকের স্বপ্ন। কিন্তু আমি এখন পথের ভিখারি। আমার নিজের জীবন কিভাবে চলবে ঠিক নেই তার উপর তোমার দায়িত্ব ভার কিভাবে নেবো ? ’
উলুপী বললো “আমরা শ্রী যুক্ত জাতি। দৈব বলে বলীয়ান। আপনি আমার জাতির অন্তর্ভুক্ত হলেই আপনার দুঃখ ঘুচে যাবে। এখন বলুন আপনি রাজি ? ”
মিলন বললো ‘আমি তোমায় বিবাহ করতে ও তোমার জাতির অন্তর্ভুক্ত হতে প্রস্তুত।বলো আমায় কি করতে হবে। ’
উলুপী বললো “ মানুষের সমাজে আমি ও আমার পরিবার অন্য নামে পরিচিত।উলুপী আমার গুপ্ত নাম । আপনি আমাদের অন্তর্ভূক্ত হলে আপনার একটি গোপন নাম দেওয়া হবে। যখন আমাদের জাতির সবাই বিশেষ এক উৎসবে একত্রিত হবে , তখন আপনি তাদের মাঝে ঐ নামে পরিচিত হবেন।এখন আপনি  শিবলিঙ্গের মাথায় আপনার ডান হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করুন যে আপনি আমার  সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি এবং আমাদের এই গুপ্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত হতে ইচ্ছুক।”
মিলন শিবলিঙ্গের মাথায় ডান হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করলো।
মিলনের কথা শেষ হওয়া মাত্রই উলুপীর শরীর সরু হতে হতে এক সুদীর্ঘ সাপের শরীরে রূপান্তরিত হতে শুরু করলো। সেই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে মিলন উঠে পালাতে চেষ্টা করলো কিন্তু সেই সুবিশাল নাগিনী দরজা আগলিয়ে ফণা তুলে রয়েছে।তার কালচে শরীর থেকে প্রদীপের আলো ঠিকরে পড়ছে।তার ভয়ঙ্কর হিসহিস শব্দ মিলনের মনে ভয় সৃষ্টি করলো।সে এতক্ষণ বুঝতে পারেনি যে এই অপরূপ সৌন্দর্য যুক্ত মেয়েটি সত্যি সত্যি এক নাগিনী।সে ভেবেছিল এটা পুরোটাই একটা মজা। কিন্তু আর উপায় নেই।আজ তার মৃত্যু নিশ্চিত।ক্রমশ সেই নাগিনী দ্রুত এগিয়ে এসে মিলনের শরীর কে পেঁচিয়ে ধরতে লাগলো।মিলন গায়ের জোরে তার সঙ্গে পারলো না। মিলনের পুরো শরীরে প্যাঁচের পর প্যাঁচ দিয়ে ফণাটি ঠিক মিলনের মুখের সামনে আনলো। 
সেই ভয়ঙ্কর ফণা দেখে মিলনের মনে হচ্ছিল আজ তার রক্ষা নেই। মূহুর্তের জন্য সেই ফণা টুকু উলুপীর মুখের রূপ নিলো। উলুপী বললো “ আজ থেকে ১০৮  দিন পরে আমার পিতা আমার সঙ্গে বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে আপনার কাছে যাবে।  আর আপনি এই গোপন মন্ত্রটা মনে রাখবেন এই মন্ত্র টি তিনবার মনে মনে উচ্চারণ  করলে মানুষ থেকে নাগ রূপ অথবা নাগ থেকে মানুষ রূপ নিতে পারবেন। ”
এই বলে উলুপী পুনরায় সাপে রূপান্তরিত হলো। তারপর তীক্ষ্ণ বিষদাঁত দিয়ে মিলনের ভ্রু মধ্যে দংশন করলো। বিষের জ্বালায় মিলন ছটফট করতে লাগলো। পুরো শরীর নীল বর্ণ ধারণ করলো।উলুপী তার প্যাঁচ আলগা করে দরজার একটা ছোট ফাঁক দিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।মিলন অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সকাল হয়ে গেছে।মিলন নিজের শরীরে অদ্ভুত পরিবর্তন অনুভব করলো। শরীরে যেন হাতির মতো বল। মন্দিরের দরজা খুলে বাইরে চলে এলো। দেখলো সারারাত যে মন্দিরে ছিল সেটা একটা ভগ্নপ্রায় শিবের মন্দির। শিবের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে হাঁটতে শুরু করলো। অনেক ক্ষণ হাঁটার পর গতকাল দুপুরে যে হোটেলে খেয়ে ছিলো সেই হোটেলের কাছে চলে এলো।মিলন কে দেখেই  হোটেলের মালিক দৌড়ে এলো।এসেই উল্লাসিত স্বরে বললো ‘ দাদা কাল আপনাকে যে লটারির টিকিট টা দিয়েছিলাম , সেটিতে দ্বিতীয় পুরস্কার কুড়ি লক্ষ টাকা পড়েছে। আমার চেনা একজন বড়োলোক আছেন । আপনি চাইলে তিনি আপনার টিকিট টা এখুনি নগদ আঠারো লাখ টাকায় কিনে নেবেন। অবশ্য আপনি ব্যাঙ্ক মারফত ক্লেইম করতে পারেন । সেক্ষেত্রে টাকা পেতে পেতে তিনমাস লেগে যাবে। ’
মিলন বললো “ আপনি সেই লোকটির কাছে আমায় নিয়ে চলুন। টাকা টা আমার আজকেই দরকার।"
কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মিলন আঠারো লক্ষ টাকার মালিক হয়ে গেল।
এরপরের কিছুদিনের মধ্যেই মিলন হাইকোর্টে আপিল করলো। এবং মাত্র দুটি শুনানির পরেই হাইকোর্ট মিলনের পক্ষে রায় দিলো।
ঠিক ১০৮ দিনের মাথায় সকাল বেলায় এক মধ্য বয়সী ভদ্রলোক মিলনের সঙ্গে দেখা করতে এলো। ভদ্রলোক তার একমাত্র মেয়ে ঊর্মিলা র সাথে মিলনের বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন।মিলন ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলার সময় ভদ্রলোক হাই তুলতে লক্ষ্য করলো  ভদ্রলোকের জিহ্বা র ডগাটি দুই আধখানা।
মিলন বিবাহ প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো।
ঠিক হলো নাগপঞ্চমীর দিন বিবাহ হবে।
শুভ বিবাহ হৈ হৈ করে সম্পন্ন হলো। মধুচন্দ্রিমার রাতে সবাই চলে গেলে মিলন ফুলশয্যার ঘরে গেলো। দরজা বন্ধ করে দেখলো নতুন বৌ মাথায় ঘোমটা দিয়ে বিছানায় বসে আছে।
মিলন কাছে গিয়ে ঘোমটা ওঠাতেই  দেখলো বৌ এর মুখের বদলে এক সাপের ফণা।
মিলন একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে শুধু বললো“ তুমি তো দেখছি আগেই রূপ ধারণ করে বসে আছো। আমিও রূপ ধারণ করছি।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরে দুইটি ভয়াবহ সাপের হিস হিসানি শোনা যেতে লাগলো।(শেষ)

No comments:

Post a Comment