Crss colum

Monday, June 17, 2019

একদিন দুপুর বেলায়

দিদার নাক ডাকছে।রিকু এতক্ষণ মটকা মেরে শুয়ে ছিলো। দুপুর বেলা আবার ঘুম আসে নাকি ?
ঘুমোতে হয় সেই রাত্তিরে। অবশ্য রাত্তির পর্যন্ত জেগে থাকা রিকু র হয়ে ওঠে না। সন্ধ্যা বেলায় পড়তে বসলেই যত ঘুম চোখে নেমে আসে।
তা বলে দুপুর বেলা ঘুম ?
নৈব নৈব চ।
দুপুর বেলা হলো মজা করার সময়। মামার বাড়ির আম বাগান থেকে কাঁচা আম পেড়ে নুন আর গুঁড়ো লঙ্কা দিয়ে চাট করে খেতে যা মজা না। উঃ ভেবেই রিকুর জিভে জল চলে এলো। রিকু
আস্তে আস্তে উঠে বসলো। চেয়ে দেখলো দিদার নাক বেশ জোরে জোরেই ডাকছে।
রিকু বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে ঘরের বাইরে এলো । এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখলো অন্নদা মাসিকে চোখে পড়লো না।
অন্নদা মাসি এই বাড়িতে রান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করে।গোলগাল চেহারার অন্নদা মাসিকে রিকু একটু ভয় করে চলে।বেশ কয়েকবার অন্নদা মাসি র কাছে দুষ্টুমি করে কানমোলা খেয়েছে। অবশ্য দুষ্টুমি বলতে তেমন কিছু নয়। ছাদে আমসত্ত্ব শুকোতে দেওয়া ছিল।রিকু তার এক অংশ ছিঁড়ে খেয়ে দেখেছিল মিষ্টি হয়েছে কিনা। সেই সময় অন্নদা মাসি কি একটা কারণে ছাদে উঠেছিল। একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে রিকুর কি দূর্দশা টাই না করেছিল অন্নদা মাসি। খুব বকুনি আর তার সাথে কানমোলা। শুধু তাই নয় ।ফোন করে এই কথাটা আবার মাকে বলে দিয়েছিল।মা তো ফোন করে রিকুকে কত বকাবকি করলেন। এমনকি এটাও বললেন ,রিকু যদি তার দুষ্টুমি বন্ধ না করে তবে তিনি রিকুকে কোন বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেবেন।
আসলে রিকু মামার বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করে। মা , বাবা দুজনেই চাকুরী করে।মা একটা মেয়েদের স্কুলে পড়ায়।আর বাবা কলেজের প্রফেসর।দুজনেই বাইরে থাকলে রিকুকে দেখাশোনা করবে কে ?
প্রথম প্রথম কিছুদিন একজন গভর্ণেস ছিল। কিন্তু সে রিকুকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতো না । অধিকাংশ দিন কাজে আসতো না। শেষে একদিন মা তাকে রাগের মাথায় কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিলো।
তারপর কয়েকদিন স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে রিকুর জন্য একটা বোর্ডিং স্কুল ঠিক করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু।
সেই সময় মামা আর দিদা রিকুদের বাড়ি বেড়াতে এলো।সব শুনে মামাই মাকে প্রস্তাব দিলো রিকুকে মামার বাড়ি রেখে পড়াশোনা করানোর। মামার বাড়ির পাশের গ্রামে একটা ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে। মা নিজেও ঐ স্কুলে পড়াশোনা করেছে।  যাই হোক অনেক আলাপ আলোচনার পর রিকু শেষ পর্যন্ত মামার বাড়ি এসে রইলো। প্রথম প্রথম রিকুর মাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই রিকুর এই নতুন জায়গাটা ভালো লেগে গেল। এখানে কেউ বকাবকি করে না।দিদা তো খুবই ভালো।
কত্তো গল্প বলেন। সবচেয়ে ভালো লাগে দিদার বিয়ের গল্প।দিদার বৌভাতের দিনে নাকি বাড়িতে চোর ঢুকেছিল। সেই গল্পটা রিকুর শুনতে ভালো লাগে। অনেকবার শুনেছে। তবু আবার শুনতে ইচ্ছা করে। কিন্তু দিদা ইদানিং অর্ধেক বলেই নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে থাকে। তখন খুব রাগ হয়।

 মামা উকিল। সারাদিন নিজের ক্লায়েন্ট নিয়ে ব‍্যাস্ত থাকে।  কখনো সখনো রিকুর সাথে মুখোমুখি হলে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করেন , 'কিরে পড়াশোনা ঠিক মতো করছিস তো ?’ রিকু মামাকে দেখে ভয়ে ভয়ে ঘাড় নেড়ে হ‍্যাঁ বলে একছুট্টে দৌড়ে পালায়। মা বাবা মাসে একবার এসে রিকুকে দেখে যায়। যেদিন মা বাবা আসে সেইদিন রিকুর বড় শাস্তি। সারাদিন লক্ষী  ছেলে হয়ে থাকতে হয়। তবে সুখের কথা এই যে মা বাবা একদিনের বেশি থাকে না।  রিকু পড়াশোনায় খারাপ নয় । সকাল সন্ধ্যা দুজন টিউশন মাস্টার আসে। স্কুলে ও রিকুর রেজাল্ট ভালোই হয় । ক্লাসে প্রথম তিনজনের মধ্যে রিকুর র‍্যাংক থাকে।
কিন্তু ছুটির দিনে রিকুর যত হুল্লোড়।

আজ অন্নদা মাসী নেই দেখে পা টিপে টিপে নিচে নামলো।মামা দের পুরানো জমিদার আমলের বাড়ী। বাড়ীর পিছন দিকে বিরাট বাগান । বাগানে বিশাল বিশাল গাছ।বট ,অশথ্ব ,আম ,জাম, কাঁঠাল আরো কত নাম না জানা গাছ। খিড়কির পুকরের কাছে গিয়ে রিকু দেখলো বাগানে যাওয়ার দরজা খোলা।এই মওকা। নিশ্চয়ই অন্নদা মাসি দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছেন।রিকু এদিকে ওদিকে চেয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে একছুট্টে বাগানে।ঐ  যে পশ্চিম কোণে একটা আম গাছ আছে না, তাতে গাছ ভর্তি কাঁচা আম ধরেছে। একেবারে হাতের কাছে ঝুলছে। রিকু একটা গাছের কোটর থেকে নুন লঙ্কার প্যাকেট বার করে আনলো। কয়েকদিন আগে এখানে লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল।নুন লঙ্কার প্যাকেট হাতে নিয়ে পশ্চিম দিকের আম গাছের কাছে গিয়ে দুটো বড়ো বড়ো আম পাড়লো। একেবারে হাতের কাছেই ঝুলছিলো। তারপর একটা আম গাছের গোড়ায় বসে আম দুটোকে নুন লঙ্কা দিয়ে তারিয়ে তারিয়ে খেতে লাগলো। হঠাত রিকুর হুঁশ এলো আজ রবিবার।চারটের সময় প্রাইভেট মাস্টার আসবে। তখন সবাই তার খোঁজ করবে। মনে পড়া মাত্রই আধখাওয়া আম গুলো ছুঁড়ে ফেলে নুন লঙ্কা আবার গোপন জায়গায় রেখে বাড়ির দিকে দৌড় লাগালো। দরজার কাছে এসে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। নিশ্চয়ই অন্নদা মাসি  এসে বন্ধ করে দিয়েছে।সর্বনাশ যদি রিকু এখন সদর দরজা দিয়ে ঘরে ঢোকে তবে সবাই জানতে পেরে যাবে রিকু দুপুর বেলায় বাড়ীর বাইরে ছিল। কি করা যায়?
হঠাৎ মনে পড়লো ঐ কোণের দিকে পাঁচিলে একটা বড়ো ফাটল আছে। আসলে ফাটলটি নাকি পাঁচিল তৈরীর কিছুদিন বাদেই হয়েছিল। খিড়কির দিকে বলে কেউ আর সারায়  নি। ফাটলটি অবশ্য খুব বড়ো নয় । তবে রিকুর মতো ছোটো রোগা পটকা ছেলেরা আরামসে গলে ভিতরে ঢুকতে পারে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।রিকু পাঁচিলের ফাটলটা দিয়ে সুরুৎ করে ভেতরে চলে এলো।
ওমা ঢুকেই অবাক।একদম চোখ ছানাবড়া। মামার বাড়ি টা পুরোনো ঝরঝরে মার্কা। সেটা দেখেই অভ্যাস। কিন্তু আজ হঠাত মনে হচ্ছে বাড়িটা একটু চকচকে। দেখে ঠিক পুরানো মনে হচ্ছে না।তার ওপর অনেক লোকজন এদিকে ওদিকে কাজ করছে। রান্নাঘরের সামনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে।আজ সকাল পর্যন্ত রিকু হলফ করে বলতে পারে সেখানটা ফাঁকা দেখেছে। কিন্তু এখন দেখছে সেখানে  বিরাট প্যান্ডেল খাটিয়ে রান্না হচ্ছে। প্যান্ডেলের অন্য পাশে চেয়ার টেবিল পেতে খাবার ব্যবস্থা। অনেকেই সেখানে খাওয়া দাওয়া করছে। ওমা একটা নতুন কনে বৌ পায়েস পরিবেশন করছে। পায়েসের বাটিটা যে ধরে আছে তাকে চেনা মনে হচ্ছে।আরে ওটা তো দাদু। দাদুকে রিকু দেখেনি।তার জন্মের এক বছর আগেই মারা গেছেন। কিন্তু রিকু তার ফটো দেখেছে।রিকু একদম নিশ্চিত লোকটা দাদু। তবে ফটোর চেয়ে অনেক কম বয়সী লাগছে। আচ্ছা কনে বৌটা কে । ঘোমটা দেওয়া আছে বলে বুঝতে পারছে না। আচমকা ঘোমটা সরে যেতেই রিকু অবাক।আরে এতো দিদা। তবে এখনকার মতো বুড়ী নয়।একদম কমবয়সী । মায়ের চেয়েও কমবয়সী।গালের বাঁ দিকে লাল তিলটা পর্যন্ত আছে।রিকু নিশ্চিত ওটা দিদা।
একজন বয়স্ক মানুষ বললো “ বৌমা , তুমি এবার ঘরে যাও । বিশ্রাম নাও।”
দিদা ঘাড় হেলিয়ে মাথা নাড়লো।
একজন বয়স্ক মহিলা বললো ‘ চলো নতুন বৌ , তোমাকে ঘরে দিয়ে আসি।’
এদিকে সকলের খাওয়া দেখে রিকুর বেশ খিদে লাগছে। তাছাড়া কি সব উদ্ভট কান্ড হয়ে চলেছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।রিকু ভাবলো ‘আগে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। তারপর সবকিছু একবার ভালো করে ভেবে দেখতে হবে।’ রিকু দিদার ঘরের দিকে হাঁটা দিলো।দিদার খাটের তলায় এটা ওটা খাবার জিনিস রাখা থাকে। যখন খুব খিদে লাগে  বিস্কুট,গুড় আম, আমুল দুধ এইসবের যোগান ওখান থেকেই আসে।রিকু দিদার ঘরে যেতে যেতে দেখলো অনেক অচেনা মানুষ বাড়িতে ঘোরাঘুরি করছে।তারা কেউ অবশ্য রিকুর দিকে মনোযোগ দিলো না।
রিকু দিদার ঘরের সামনে গিয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না।ঘর ফাঁকা পেয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো।আরিব্বাস দিদার ঘরের পুরাতন খাটটির জায়গায় একই ডিজাইনের নতুন খাট। ঘরের ভেতরটা নতুন নতুন জিনিসে ভর্তি।
কেউ একজন আসছে মনে হতেই রিকু দিদার খাটের তলায় সেঁধিয়ে গেলো। খাটের তলায় চেনা বস্তু গুলোর একটাও দেখা পেলো না। তার বদলে একটা গামলায় চাপা দিয়ে রাখা একগাদা রসগোল্লা দেখতে পেয়ে রিকুর খুশী ডবল হয়ে গেলো।

রসগোল্লা খেতে রিকু খুব ভালোবাসে। কিন্তু মামার বাড়িতে রসগোল্লা এলে দুই পিসের বেশি জোটে না। এই সুযোগ ।রিকু মনের সুখে রসগোল্লা সাঁটাতে লাগলো। ইতিমধ্যে ঘরে দুই মহিলা প্রবেশ করলো ।রিকু খাটের তলা থেকে দুই জনের পা ও শাড়ির অংশ দেখতে পেলো। একজনের শাড়ি দেখে বুঝতে পারলো দিদা।অন্যজন সেই বয়স্ক মহিলা টি।
বয়স্ক মহিলা টি বললো‘ নতুন বৌ , তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও। আমি বরং বাইরের কাজকর্ম সামলাই।’
এই বলে মহিলাটি চলে গেলো।
দিদা খাটের ওপরে শুয়ে পড়লো। এই সুযোগে রিকু বাকি রসগোল্লা গুলোতে মনোযোগ দিলো।
এদিকে নতুন বৌ খাটের তলায় খুটখাট আওয়াজ পেয়ে খাট থেকে নিচে নেমে খাটের তলায় উবু হয়ে যেই উঁকি মেরেছে , অমনি রিকু হাতে নাতে পাকড়াও।রিকু তখন মুখে একসঙ্গে দুটি রসগোল্লা ভরেছে।আর একটা রসগোল্লা হাতে নিয়েছে।
দিদা রিকুকে দেখে চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “ এই কে তুই ? বেরিয়ে আয় । নাহলে লোক ডাকবো।”
রিকু ভয়ে ভয়ে উত্তর দিতে গেলো ‘ আমি রিকু।’ কিন্তু গাল ভর্তি  রসগোল্লা থাকায় মুখ দিয়ে বিদঘুটে আওয়াজ বেরোলো ।দিদা ভয়ে চিৎকার করলো  ‘ ও মানদা মাসি , তাড়াতাড়ি এসো , বাড়িতে চোর ঢুকেছে।’
দিদার চিৎকারে বাড়িতে হৈচৈ পড়ে গেলো। সবাইয়ের দৌড়াদৌড়ি র আওয়াজ আসতে লাগলো।
রিকু বুঝতে পারলো ব্যাপারটা সুবিধার নয় ।দিদা তাকে চিনতে পারছে না। বাড়ির সব লোকের মধ্যে দিদাই তাকে সবচেয়ে ভালোবাসে। অথচ সেই দিদাই তাকে চিনতে পারছে না।রিকুর মনে হলো তার দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া উচিত। যেমন ভাবা তেমন কাজ।রিকু খাটের তলা থেকে বেরিয়ে দিদাকে পাশ কাটিয়ে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে দুই জন লোক ‘ কোথায় চোর ?’বলতে বলতে উঠে আসছে।
রিকু তাদের দুই জনকে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে ভাঙ্গা পাঁচিলের দিকে দৌড়তে লাগলো। একবার পিছনে তাকিয়ে দেখলো অনেক জন ছুটে আসছে তাকে ধরবার জন্য।
পাঁচিলের সেই ফাটলের কাছে এসে সাঁৎ করে বাইরে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে তার চেনা একটা গাছের কোটরে লুকিয়ে পড়লো। বেশ কিছুক্ষণ পরে কারো আওয়াজ না পেয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখলো । না কেউ নেই।এই খাঁ খাঁ দুপুর বেলায় কেই বা আসবে ?
এই বার ধীরে ধীরে সদর দরজার দিকে চললো।একটু ভয় ভয় করতে লাগলো।একটু আগেই তার রসগোল্লা চুরির কথা নিশ্চয়ই সবাই জেনে গেছে।দিদা নিশ্চিত সবাইকে বলে দিয়েছে। হাতটা এখনো রসে চটচট করছে। বাগানের একটা পুকুর আছে। তাতে একটা বাঁধানো ঘাট রয়েছে।রিকু সেই ঘাটে নেমে ভালো করে হাত ধুয়ে নিলো। তারপর সদর দরজার দিকে হাঁটা দিল।সদর দরজার কাছে কাউকে দেখতে পেলো না।রিকু সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই মামার মুখোমুখি হলো। মামা বললো ‘ এই রিকু , দুপুর বেলায় কোথায় গিয়েছিলি ?’
রিকু কাঁচুমাচু মুখ করে  অম্লান বদনে মিথ্যে  বললো ‘ ঝন্টু দের বাড়ি। খেলতে।’
মামা বললো ‘ এখন এই দুপুরে খেলতে ? আমি একজায়গায় বেরোচ্ছি । সন্ধ্যায় ফিরলে বই খাতা নিয়ে আমার কাছে আসবি।  তোর পড়াশোনা র অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে তার পরীক্ষা নেবো।’
রিকু মাথা নেড়ে ঘরে ঢুকে পড়লো।
সোজা দিদার ঘরে ঢুকে দেখলো দিদা ঘুমিয়ে আছে। দিদার উপর খুব রাগ হলো। তাকে না চেনার ভান করে মারধর খাওয়াচ্ছিলো। রিকু রাগ দেখিয়ে দিদার পাশটায় মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো।
দিদার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।দিদা তার গায়ে হাত দিয়ে ডাকছে ‘ ও দাদুভাই , এই অবেলায় ঘুমোচ্ছো কেন। উঠে পড়ো । তোমার প্রাইভেট মাস্টার এসেছে।’
দিদার হাতটা রিকুর কপালে ঠেকতেই দিদা চমকে উঠলো ‘ একি তোমার তো গা গরম। সারা দুপুর টো টো করে ঘুরে বেড়াবে। আমাদের কথা একটুও শুনবে না।’
দিদা এবার হাঁক পাড়লো ‘ অন্নদা , অন্নদা।'
অন্নদা মাসি ঘরে এসে বললো ‘ আমাকে ডাকলেন বড়মা?’
দিদা রিকুর পাশটায় শুয়ে রিকুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো ‘ যা , দাদুভাইয়ের প্রাইভেট মাস্টার কে গিয়ে বল দাদুভাইয়ের খুব জ্বর।আজ পড়বে না। ’
অন্নদা মাসি চলে গেলে রিকু দিদাকে বললো ‘ আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো না। তুমি আমায় চিনতে পারলে না।’
দিদা বললো ‘ কখন ?’
রিকু বললো ‘ আজকেই তো।’
দিদা হেসে বললো ‘ তুমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছিলে। এমন কখনো হতে পারে যে আমি আমার দাদু ভাইকে চিনতে পারবো না ?’
দিদা বললো “জানো আজকের তারিখেই আমার বৌভাত হয়েছিল।আর সেই বৌভাতের দিন তোমার বয়সী একটা চোর ঘরে ঢুকে সব মিস্টি খেয়ে নিয়েছিলো।”
রিকু চোখ পিটপিট করে বললো ‘ চোরটা আমি ছিলুম।’
দিদা চকাস করে রিকুর গালে একটা চুমু দিয়ে বললো “ বালাই ষাট , তুমি কেন হবে দাদুভাই ? সেতো তোমার জন্মের আগের কথা। সেটা অন্য চোর ছিলো। তুমি এবার একটু ঘুমাও । আমি তোমার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।” (শেষ)

No comments:

Post a Comment