Crss colum

Tuesday, September 10, 2019

রক্ষক ৬

              (৯)
স্থান - নিউইয়র্ক, রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতর।
সাল -  ২০৩২ 
রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব  এমিলি স্মিথ  
সাংবাদিক সম্মেলনের  নিউইয়র্ক টাইমস কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে "মিশন লাইফ " এর বিস্তারিত জানালেন।
এমিলি বললেন"   প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল  'মিশন লাইফ ' কে সম্পূর্ণ ভাবে পৃথিবী থেকে পরিচালনা করা হবে। কিন্তু পুরো কর্মকাণ্ড টি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র থেকে ও চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে সংঘটিত হবে। এক্ষেত্রে পৃথিবী থেকে কম্যুনিকেশন করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাবে। এই দেরি টুকু আমাদের পক্ষে ঘাতক হতে পারে। সেজন্য বিজ্ঞানী দের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করা হয়েছে একটি মহাকাশ যানে করে চার জন মহাকাশচারীদের একটা টিম লক্ষ্যবস্তুর যতটা সম্ভব কাছে গিয়ে পুরো অপারেশন টি পরিচালনা করবেন। এই চারজন মহাকাশচারী দের মধ্যে আমেরিকার দুই জন , রাশিয়ার একজন ও ভারতীয় একজন থাকবেন। আমেরিকান দুইজনের নাম যথাক্রমে ফিলিপ গর্ডন ও লুসিয়া টোরি। রাশিয়ার একজন হলেন সের্গেই গ্রিগেরোভিচ এবং ভারতের একজন হলেন নেহা চৌধুরী। চারজনের মধ্যে নেতৃত্ব দেবেন ফিলিপ গর্ডন।
২০৩৬ সালের জানুয়ারি মাসে ওদের   মহাকাশ যান 'শয়তানের চোখের ' উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে।
                    (১০)

পাঠশালা।
হিমালয়ের এক গোপন উপত্যকা।
সময় - ২০৩৪ সাল।
আদিত্য আরো কয়েকজন সমবয়সী ছেলের সঙ্গে মার্শাল আর্টের মধ্য পর্যায়ে শিক্ষা লাভ করছে। গুরুদেব তমোঘ্ন নিজে দাঁড়িয়ে আদিত্যর শিক্ষা তদারকি করছিলেন। সাধারণত উনি উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা করেন। কিন্তু ইদানিং সবাই একটু অবাক হয়ে যাচ্ছে যে গুরু তমোঘ্ন মধ্য পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিজে তদারকি করছেন।
আদিত্য ইতিমধ্যেই মার্শাল আর্টের সব বিভাগে দক্ষ হয়ে উঠেছে।খালি হাতে লড়াইয়ে তার জুড়ি কেউই নেই।এবারে শুরু হয়েছে অস্ত্র শিক্ষা।
প্রথমে লাঠি দিয়ে শুরু। তারপর ধীরে ধীরে তরবারি ও অন্যান্য অস্ত্র।
পাঠশালায় নিয়মের খুবই কড়াকড়ি।
শিক্ষার্থীদের ভোর বেলায় উঠতে হয়। সূর্যোদয় থেকে  টানা তিন ঘণ্টা শারীরিক কসরত। তারপর বিভিন্ন পাঠ নেওয়া। মূলত অঙ্ক , বিজ্ঞান,ও  বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা।


দুপুরে খাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস করতে হয়।এই ক্লাসটা সব শিক্ষার্থী দের খুব প্রিয়।কারণ এই ক্লাসে এই সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে রহস্যময় ও সবচেয়ে বিপদজনক শক্তি গুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ধারণা তৈরী করা হয়। সেই সঙ্গে এটাও জানানো হয় 'পাঠশালা ' র শিক্ষক সম্প্রদায় ও শিক্ষার্থীরা কিভাবে পৃথিবীর মানব সভ্যতা কে সেই সব বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। একদিন গুরু তমোঘ্ন এলেন মধ্য পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীতে।
গুরু তমোঘ্ন যে এই শ্রেণীতে শিক্ষা দিতে আসবে একথা কেউ ভাবতেও পারেনি। উনি শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করতেই সকলে একসাথে উঠে দাঁড়িয়ে প্রণাম জানালো। উনি সবাইকে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতে বললেন।
গুরু তমোঘ্ন বলতে শুরু করলেন "  প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
                আজ তোমাদের আমি বিশেষ এক বিষয়ে  জ্ঞান প্রদান করবো। এই সৌরমণ্ডলের দুইটি গ্রহে ও একটি উপগ্রহে বুদ্ধিমান জীবিত প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। একটি হলো এই পৃথিবী। দ্বিতীয় গ্রহ টি হলো মঙ্গল। এছাড়া বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপা তে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। পৃথিবী ও মঙ্গলে সরাসরি প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল। কিন্তু ইউরোপায় সরাসরি প্রাণের উদ্ভব হয় নি। এই 'মিল্কীওয়ে গ্যালাক্সি' র  কেন্দ্রের কাছাকাছি যেখানে বহু নক্ষত্রের সমাবেশ রয়েছে সেখানে রয়েছে এক বিশেষ রহস্যময় কুয়াশা দিয়ে ঢাকা এক গ্রহ ।এই রহস্যময় গ্রহটির নাম ' মায়া' । 'মায়া ' গ্রহটি দুটি যুগ্ম নক্ষত্র কে ঘিরে আবর্তন করে । ঐ দুইটি যুগ্ম নক্ষত্রের নাম হলো "শ্রী " ও
 " শ্রীপতি " । এই " মায়া "  নামের রহস্যময় গ্রহে খুবই উন্নত প্রজাতির জীব বসবাস করেন। তাদের বলা হয় মাতৃকা।এরা সকলেই নারী। প্রচন্ড মানসিক ক্ষমতা সম্পন্ন এই মাতৃকা জাতি। বলা হয়ে থাকে এই প্রজাতির সব  মাতৃকার উদ্ভব হয় মায়া গ্রহের ভূগর্ভস্থ এক রহস্যময় মন্দিরে সর্বদা জ্বলন্ত এক নীল বর্ণের জ্যোতি যুক্ত গোলক থেকে।তাই মাতৃকা জাতির সব নারীদের ভ্রু মধ্যে অবস্থান করছে ত্রিভূজাকার এক নীলাভ মণি।একে বলা হয় শূন্য মণি। এই শূন্য মণি ওদের তৃতীয় নয়ন স্বরূপ।  বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন কিছু মাতৃকার শূন্য মণি তাদের অতীত ও ভবিষ্যৎ দর্শন করায়। এছাড়া সব মাতৃকাই তাদের শূন্য মণির সাহায্যে খাদ্য , পানীয় ও বাতাসের সাহায্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে।এরা অতি উষ্ণ ও অতি শীতল যে কোনো স্থানেই জীবিত থাকতে পারে। সর্বোপরি এরাই একমাত্র জীব যারা নিজেদের শরীরকে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবহীন করে যে কোনো মাধ্যমে উড়তে পারে। এজন্য তারা কাজে লাগায় তাদের কপালের ভ্রু মধ্যে অবস্থিত   শূন্য মণি কে।
 এই মাতৃকা গণের মধ্যে বিশেষ কিছু জন বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপায় অবস্থান করেন।তারা সেখানে সৃষ্টির এক গোপন সম্পদ পাহারা দেন।মাতৃকা গণ বিবাহ করেন না। তবে বিশেষ কিছু কারণ ঘটলে তারা বিবাহে রাজী হন।তারা স্বামী হিসাবে পৃথিবীর কোনো পুরুষ কে বেছে নেন। এই জন্যই বলা হয় মাতৃকা জাতির সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বহু পুরাতন।এই বিবাহের ফলে যদি কোনো নারী সন্তান হয় তবে সে নতুন মাতৃকা রূপে পরিগণিত হয়। কিন্তু যদি পুরুষ সন্তান হয় তবে সে মাতৃকা ও মানব জাতি উভয়ের গুণ সম্পন্ন হয়।সে পুরোপুরি মানুষ হয় না আবার পুরোপুরি মাতৃকা হয় না। তাদের অর্ধমানব বলে।তারা ভীষণ শক্তি সম্পন্ন অসাধারণ গুণাবলী র অধিকারী হয়। অতীতের বহু মানুষ যারা মহামানব রূপে পরিগণিত হন তাদের মধ্যে অনেকেই অর্ধমানব ছিলেন।
যুগ যুগ ধরে এই অর্ধমানব গণ পৃথিবীকে রক্ষা করেছেন এবং পৃথিবীর ইতিহাসে বিরাট বদল এনেছেন।
এবার তোমাদের বলি 'মায়া' গ্রহের কথা। সবচেয়ে রহস্যময় গ্রহ হলো 'মায়া'।বলা হয় যে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আসল রহস্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে এই 'মায়া' গ্রহে।মাতৃকা জাতি এই মায়া গ্রহের সেই লুকিয়ে থাকা জ্ঞান কে রক্ষা করে চলেছে। একমাত্র কোনো উপযুক্ত অধিকারী যার মধ্যে মাতৃকার বৈশিষ্ট্য বর্তমান তেমন কেউ এই জ্ঞান লাভ করতে পারেন।
হয়তো ভবিষ্যতে তোমাদের মধ্যে কেউ আছে যে উপযুক্ত হয়ে 'মায়া'র আসল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবে।
পরবর্তী কোনো দিন তোমাদের এই সৌরমণ্ডলের তিন জ্ঞান কূপ ও সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র 'পাশুপত' নিয়ে ধারণা প্রদান করবো।
( বাকি অংশ পর্বে।পরের পর্বের নোটিফিকেশন পেতে আমায় অনুসরণ করুন।)


No comments:

Post a Comment