Crss colum

Tuesday, November 17, 2020

রক্ষক ১২

লাদাখ, এক গোপন উপত্যকা।
একটি খুব ছোট মহাকাশযান আকাশে উড়লো। দেখতে অনেকটা অত্যাধুনিক ফাইটার প্লেন এর মতো। তারমধ্যে অপ্রশস্ত জায়গায় দুটি মানুষ বসে আছে। দুজনেই আমাদের পরিচিত। চালকের আসনে বসে আছেন গুরুদেব তমোঘ্ন। তার পাশে অন্য একটি আসনে বসে আছে আদিত্য।
আদিত্য প্রশ্ন করল "গুরুদেব আমরা এখন কোথায় চলেছি ও কী উদ্দেশ্য নিয়ে চলেছি"।
তমোঘ্ন বললেন "এবারে আমাদের গন্তব্য তমোগুণের কূপ। এই যে বিমানটি দেখছো,  এটি এক বিশেষ ধরনের বিমান। মঙ্গল গ্রহের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এটি তৈরি। এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ রাডারে ধরা পড়ে না। সম্পূর্ণরূপে ষ্টেলথ প্রযুক্তি। যা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিমান প্রযুক্তির চেয়েও সর্বাধুনিক। আত্মরক্ষার জন্য এতে লেজার বিম থেকে কনভেনশনাল মিসাইল পর্যন্ত আছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এটি যেমন পৃথিবীর ও অন্যান্য গ্রহের বায়ুমন্ডলে চলাচল করতে পারে তেমনি মহাকাশে এটি যাতায়াত করতে পারে।মহাশূন্যে এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ আলোর 2 শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই গতিবেগ সৌরমণ্ডলের যে কোন গ্রহে খুব অল্প সময়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত। পুরো সৌরমণ্ডলে এত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিমান খুব অল্প সংখ্যক আছে। তোমাকে আগেই বলেছি তমোগুণ এর কূপ রয়েছে তোমার মায়ের বাসস্থান বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপাতে। সেখানে যেতে হলে এটির সাহায্য ছাড়া অসম্ভব। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে মহাশূন্যে গিয়ে পড়বো। সেখান থেকে গতিবেগ বাড়িয়ে চাঁদকে একটি চক্কর মেরে আমরা বৃহস্পতির দিকে সর্বোচ্চ গতিতে এগিয়ে যাব। এই পথ যথেষ্ট বিপদসংকুল। যদিও সর্বাধুনিক কম্পিউটার আমাদের পথকে সুরক্ষিত করার দায়িত্বে আছে, তবুও অ্যাস্ট্রয়েড বেল্ট পেরোনোর সময় যেকোনো বিপদ আসতে পারে। তুমি তো জানো আমার বাসস্থান মঙ্গল গ্রহ ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে বহু গ্রহাণুপিন্ড ঘুরপাক খাচ্ছে। ধারণা করা হয় এই স্থানে একটি গ্রহ বর্তমান ছিল। কিন্তু কোন কিছুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে গ্রহটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সেই গ্রহের টুকরো টুকরো খন্ড গুলি এখনো সূর্যের চারিদিকে ঘুরে চলেছে। এগুলোকে অ্যাস্টরয়েড বা গ্রহাণুপুঞ্জ বলে। 
সামান্য কিছু সময় পরে তাদের মহাকাশযান পৃথিবীর নীল দিগন্তরেখা পেরিয়ে কালো অন্ধকার সাম্রাজ্যে প্রবেশ করলো। চারিদিকে কালো অন্ধকারের মধ্যে পৃথিবীটা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরে সেটা অনেক ছোট হয়ে গেল। এদিকে চাঁদের আকার ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মহাকাশযান চাঁদের অনেক কাছে পৌঁছে গেছে। গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন "তোমার বাম দিকে দেখো  মহাকাশযানের জানালার সঙ্গে একটি টেলিস্কোপ সংযুক্ত করা আছে। সেটা দিয়ে চাঁদকে আরো পরিস্কার ভাবে দেখতে পারবে। আমরা এখন চাঁদের আলোকিত দিকের কয়েক কিলোমিটার উপর দিয়ে উড়ে চলেছি । আমি মহাকাশযানের গতি একটু কম রেখেছি,  যাতে তুমি সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পাও।"
গুরুদেব বললেন "ওই দেখো ঠিক তোমার সামনে চাঁদের মাটিতে একটি পতাকা উড়ছে। টেলিস্কোপে আরেকটু জুম করে দেখো পতাকাটা আমেরিকার। বহুদিন আগে মানুষ প্রথমবার যখন চাঁদের মাটিতে পা দিয়েছিল তখন স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ ওই পতাকাটি ওখানে পুঁতে রেখে গিয়েছিল। চাঁদের বায়ুমণ্ডল প্রায় না থাকার কারণে ওটা এখনো অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এবার আমরা চাঁদের অন্ধকার দিকে কি আছে দেখবো। চাঁদের অন্ধকার দিক এর প্রায় সবকিছুই মানুষের অজানা। এখানে আমাদের মার্শিয়ান জাতির একটি ছোট্ট উপনিবেশ আছে। যদিও আমি এখন সেখানে নামবো না। তবে সেটা তোমাকে মহাশূন্য থেকেই দেখাবো।"
সামান্য সময় পরে আদিত্যদের মহাকাশযান চাঁদের আলোকিত অংশ ছেড়ে অন্ধকার দিকে এগিয়ে চললো। চাঁদের অন্ধকার দিকে আদিত্য প্রথমে কিছু দেখতে পেল না। তারপর চোখ সয়ে গেলে আস্তে আস্তে টেলিস্কোপ এর সাহায্যে সবকিছু নজরে পড়লো। টেলিস্কোপে অন্ধকারে দেখার নাইট ভিশন মোড চালু করে দিল। আলোকিত দিকের থেকে এই দিকে পাহাড় পর্বত অনেক বেশি। অন্ধকারে বেশ কয়েকটি জায়গায় লাল রঙের মনে হচ্ছে। গুরুদেব তমোঘ্ন বুঝিয়ে দিলেন ওগুলো জীবন্ত আগ্নেয়গিরি।লাভা উদগীরণ করছে বলে উত্তপ্ত লাভা লাল রঙের মনে হচ্ছে।
এক বিরাট আগ্নেয়গিরি দেখিয়ে গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " ঐ যে বিশাল আগ্নেয়গিরি দেখছো ওর কাছেই মার্সিয়ান জাতির একটি ছোট্ট উপনিবেশ আছে।আর এই উপনিবেশে র অনেক নিচে আগ্নেয়গিরির ঠিক তলায় গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখা হয়েছে এই গ্যালাক্সির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র পাশুপত। এখন আমরা এখানে নামবো না। তমোগুণের কূপ জয় করার পর তোমাকে এখানে আসতে  হবে। পাশুপত কে লাভ করা সহজ নয়। ভয়ঙ্কর কিছু অজানা পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা  প্রমাণ করে তবেই পাশুপত যেখানে রয়েছে সেই গোপন কক্ষে পৌঁছান যায়। কিন্তু পাশুপত নিজেই চৈতন্য যুক্ত। তাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তবেই তার কৃপা লাভ হবে।
চলো যাওয়া যাক।"
এবার তাদের মহাকাশযান উড়ে চললো বৃহস্পতি গ্রহের অভিমূখে। মহাকাশযান এখন আলোর   দুই শতাংশ গতিবেগে এগিয়ে চলেছে। খুব দ্রুত তারা  পৃথিবীর পরের গ্রহ মঙ্গল পেরিয়ে গেলো। মঙ্গল পেরিয়ে যাওয়ার সময় গুরুদেব তমোঘ্ন তার জন্মভূমির উদ্দেশ্যে প্রণাম করলেন।
এবারে পড়লো অ্যাস্টরয়েড বেল্ট।  সর্বাধুনিক প্রযুক্তি তাদের নিরাপদে ভয়ঙ্কর সেই বলয় পার করে দিলো।
এরপর এগিয়ে আসছে সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। গুরুদেব তমোঘ্ন এবার মহাকাশযানের গতিবেগ একটু একটু করে কম করতে শুরু করলেন। তিনি বললেন" আমরা বৃহস্পতি গ্রহে নামবো না। আমাদের গন্তব্য ঐ যে দূরে দেখা যাচ্ছে সাদা রঙের মিটমিট করা আলোকবিন্দু।
ওটাই ইউরোপা। বৃহস্পতির উপগ্রহ।
ওখানেই তোমার মা আছেন। আর আছে তমো গুণের কূপ।"
ক্রমশ আলোকবিন্দুটি বড় হচ্ছে। মহাকাশযান এগিয়ে চলেছে।(ক্রমশ)


No comments:

Post a Comment