Crss colum

Tuesday, August 27, 2019

রক্ষক ৪

                  (৬)
আরেসিবো মানমন্দির।
পুয়ের্তো রিকো।
সময় - ২০২৯ সাল।
[     তথ্যসূত্র -( উইকিপিডিয়া)  ইংরেজি ভাষায়: Arecibo Observatory) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকোর আরেসিবো শহরে অবস্থিত একটি বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র। ৩০৫ মিটার ব্যাসের এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি পৃথিবীর বৃহত্তম একক এন্টেনা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের (জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা) সহায়তায় ১৯৬০-এর দশক থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি এই মানমন্দিরটি পরিচালনা করে। এর অন্য নাম ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড আয়োনস্ফেয়ার সেন্টার বা NAIC, অর্থাৎ "জাতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও আয়নমণ্ডল গবেষণাকেন্দ্র"। অবশ্য NAIC একটি সংস্থার নাম যারা মানমন্দির এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্নেল ইউনিভার্সিটির সবগুলো দপ্তর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত।

এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শাখায় গবেষণা পরিচালিত হয়: বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবহবিজ্ঞান এবং সৌর পদার্থবিজ্ঞান। সৌর জগতের বস্তুগুলোকে রেডারের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করতে এটি ব্যবহার করা হয়। যেসব বিজ্ঞানী এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করতে চান তাদেরকে প্রথমে প্রস্তাব পেশ করতে হয়, সেই প্রস্তাব একটি স্বাধীন বোর্ডের বিচারে উপযুক্ত বিবেচিত হলে তিনি অনুমতি পান।  ]


উইলিয়ামের আজ মেজাজ ভালো নেই ।আসার সময় লরার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে।সামনেই ক্রিসমাস।লরার ইচ্ছা এবার ক্রিসমাসের ছুটিতে ওর বাবা মায়ের কাছে নিউ ইয়র্কে যাবার ।আর উইলিয়ামের ইচ্ছা ক্যালিফোর্নিয়া ঘুরতে যাওয়ার।সদ্য দুই বছর হলো বিয়ে হয়েছে দুজনের। এখনো ছেলে পুলে হয়নি।এই তো ঘোরাঘুরি করার সময়।তা না করে শ্বশুর শাশুড়ির কাছে গিয়ে ক্রিসমাসের ছুটিটা বরবাদ করার কোনো মানে হয় ? এদিকে লরার মনে কষ্ট দিয়ে জোর করে অন্য কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না।
কম্পিউটারের সামনে বসে উইলিয়াম এই সব চিন্তাই করছিলো। সামনে স্ক্রীনে সুদূর মহাকাশ থেকে বিভিন্ন ডাটা আপলোড হয়েই চলেছে। কম্পিউটার সেগুলো নিজে নিজেই অ্যানালাইসিস করে একপাশে রেজাল্ট শো করে অটোমেটিক সেভ করে নিচ্ছে। উইলিয়ামের কাজ নতুন কিছু দেখলে সেটা বিশ্লেষণ করে সকালে সুপারের কাছে রিপোর্ট পেশ করা। কিন্তু নতুন কিছু তো আর রোজ রোজ ঘটে না। দিনের পর দিন একই রিপোর্ট পেশ করতে হয়। বাইরের লোক মনে করেন কতই না রোমাঞ্চকর কাজ। আসলে ঐপুরোটাই বোরিং। দিনের পর দিন একই কাজ।বছর দুয়েক আগে অবশ্য উইলিয়াম একটা নতুন ধুমকেতু দেখতে পেয়েছিলো। সেটাও ছিল এমনই নাইট শিফট। উইলিয়াম ঘড়ি দেখলো । রাত খুব বেশী হয় নি।লরা নিশ্চিত এখনো ঘুমায় নি । কম্পিউটারে বসে নিশ্চিত লেখালেখি করছে।লরা একজন ফ্রী ল্যান্সার আর্টিকেল লেখক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মহাকাশ নিয়ে লেখালেখি করে। এই লেখালেখির সুত্রেই উইলিয়ামের সঙ্গে ইন্টারনেটে আলাপ। দুজনের কমন ইন্টারেস্ট এক হওয়ায় আলাপ গাঢ় হতে বেশী সময় লাগে নি। তারপর কিছুদিন একসাথে ঘোরাঘুরি শেষে বিয়ে। উইলিয়াম লরাকে খুব ভালোবাসে।লরার ইচ্ছে কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।লরার মনে দুঃখ যাতে না হয় এমন কোনো উপায় আছে কি ?
শেষ পর্যন্ত চিন্তা করে একটা উপায় বার করলো।
পকেট থেকে মোবাইল টা বার করে লরাকে ফোন লাগালো। ওদিকে রিং হচ্ছে। একটা পুরনো সিনেমার গান  "এভরিডে আই …" কলার টিউন হিসেবে বাজছে। সিনেমা টি টাইটানিক। গতবার যখন উইলিয়াম নিউইয়র্ক গিয়েছিল তখন একটা মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা টি দেখেছিলো। দারুন রোমান্টিক সিনেমা। খুব ভালো লেগেছিল।
রিং টা অনেকক্ষণ ধরে বাজার পর লরা ধরলো।   

ধরেই বললো "সরি সুইট হার্ট,একটু টয়লেটে ছিলাম।"
উইলিয়াম বললো ,"আচ্ছা ,এক কাজ করলে হয় না? 
ক্রীসমাসের ছুটিটা আমরা ক্যালিফোর্নিয়া কাটিয়ে নিউ ইয়ার টা নিউইয়র্কে তোমার বাবা মায়ের কাছে কাটাবো।"
লরা বললো "এটা দারুন হবে। তবে তাই করবো।"
এই কথা গুলো শুনতে শুনতে উইলিয়ামের চোখ গিয়ে পড়লো কম্পিউটারের স্ক্রিনে। সেখানে কিছু জটিল ডাটা ফুটে উঠেছে। কিছু অজানা তথ্য ভিড় করছে কম্পিউটারের স্ক্রিনে।
উইলিয়াম দ্রুত লরাকে বললো "সুইট হার্ট এখন রাখছি। কম্পিউটারে যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটি যদি আমার ভাবনা অনুযায়ী ঠিক হয় , তবে আমি বিখ্যাত হতে চলেছি। "
লরা বললো "কি দেখছো? "
উইলিয়াম বললো "এখনি বলবো না।আরো একটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর জানাবো। রাখলাম।"
মোবাইল টা বন্ধ করে উইলিয়াম মনোযোগ দিলো কম্পিউটারের স্ক্রিনে।আরো কিছুক্ষন বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ফোন লাগালো সুপারের কাছে।
সুপার ঘুমোচ্ছিলেন। রিং হতে ঘুম চোখে বিছানার পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে বললেন "হ্যালো "।
উল্টো দিক থেকে উইলিয়াম হড়বড় করে বলে উঠলো "স্যার একটা নতুন খবর আছে । একটা বিরাট মহাজাগতিক অবজেক্ট সোজা পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ আগে আমি সেটাকে ট্র্যাক করেছি। পৃথিবী মনে হয় ধ্বংস হয়ে যাবে।"
সুপার বললেন "কবে পৃথিবীতে এসে পড়বে মনে হয়? "
উইলিয়াম বললো "স্যার সঠিক তারিখ এখুনি বলতে পারছি না । তবে মোটামুটি বারো বছর পরে।"
সুপার একটু রেগে গিয়ে বললেন "বারো বছর বাদেই যদি পৃথিবী ধ্বংস হবে , তবে আমার কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে এখনি শোনাবার কি দরকার ছিলো ? যত্তসব"।
সুপার ফোনটা রেখে দিলেন।
উইলিয়াম একটু হতাশ হলো। স্যার ঠিক ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না।
যাই হোক উইলিয়াম একটা ডিটেইলস রিপোর্ট তৈরী তে মন দিলো।কাল সকালে সুপার এলে পুনরায় সব বুঝিয়ে এই রিপোর্ট টা দেখাতে হবে।


তিন মাস পরের কথা।

নিউইয়র্ক টাইমস কাগজের হেডলাইন ' ধ্বংসের পথে পৃথিবী'।
বিশেষ সংবাদদাতা : আজ আরেসিবো মানমন্দির কতৃপক্ষ একটি নিউজ  বুলেটিনে জানিয়েছেন যে তারা মধ্য মহাকাশে একটি অজানা বস্তু পিন্ডকে ট্র্যাক করেছেন এবং তার গতিপথ বিশ্লেষণ করে জেনেছেন যে সেটা সোজা পৃথিবীতে এসে আছড়ে পড়বে। পৃথিবীর সাথে ঐ অজানা বস্তু টির সংঘর্ষ হবে ২০৪২ সালের ২০ শে জানুয়ারি।ঐ অজানা বস্তু টি প্রথম আবিষ্কার করেন উইলিয়াম নামের এক তরুণ মহাকাশ বিজ্ঞানী।তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই বস্তু টি প্রায় ৩০ কিমি ব্যাস যুক্ত গোলোক।এই বিশাল গোলোক টি যদি পৃথিবীতে আছড়ে পরে তবে পুরো পৃথিবী নিশ্চিত ভাবে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।
আরেসিবো মানমন্দির কতৃপক্ষ তাদের রিপোর্টের একটি কপি সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। আগামী মাসে জি ৮ সম্মেলন আছে। আশা করা হচ্ছে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টি নিয়ে ঐ সম্মেলনে আলোচনা হবে।
নিউইয়র্কে র সাধারণ মানুষ অবশ্য এই ধরনের রিপোর্ট কে পাত্তা দিতে রাজী নয়।তারা এর চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে আগামী মাসে আসন্ন বেসবলের ওয়ার্ল্ড কাপ কে।
তাদের বক্তব্য এই ধরনের পৃথিবী ধ্বংসের খবর অনেকবার সামনে এসেছে। কিন্তু পৃথিবী বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই খবর টিও পরে জানা যাবে ভুল তথ্য ছিলো।

আরো এক মাস পরের কথা।
নিউইয়র্ক টাইমস :
পৃথিবী জুড়ে এক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে । সারা পৃথিবীর বিভিন্ন মানমন্দির কতৃপক্ষ ও স্পেস এজেন্সির মারফত নিশ্চিত জানা  গেছে সত্যি সত্যিই এই গোলোক আকৃতির বিরাট অবজেক্ট পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে চলেছে। এই টি পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর অংশে আছড়ে পড়বে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এটি আছড়ে পড়া মাত্রই সমগ্র আফ্রিকা , ইউরোপ ও অর্ধেক এশিয়া সংঘর্ষ জনিত কারণে সেই মূহূর্তে ই ধ্বংস হবে। তারপর বিরাট সুনামী আছড়ে পড়বে পৃথিবীর বাকি অংশে। সেই সঙ্গে হবে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে অনুভূত হবে কুড়ি রিখটার স্কেলে র ভয়াবহ ভূমিকম্প। এই সংঘর্ষ জনিত কারণে বিশাল ধূলিকণা ও বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাস মহাকাশে উত্থিত হবে এবং বলয়াকারে পৃথিবীকে আগামী দশ বছর ধরে ঘিরে রাখবে যার কারণে পরবর্তী  দশ বছর সূর্যের আলো পৃথিবীতে প্রবেশ করবে না।যার ফলে নিরানব্বই শতাংশ উদ্ভিদ সূর্যের আলোর অভাবে মারা যাবে।
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন তারা আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জি ৮ সম্মেলনে এই সমস্যার সমাধানে কথা বলবেন। উক্ত সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নির্বাচিত কিছু মহাকাশ বিজ্ঞানী ও সামরিক উপদেষ্টা সচিব কে  ডাকা হয়েছে।জি ৮ ভূক্ত সবচেয়ে নবীনতম সদস্য দেশ ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ইসরোর বিজ্ঞানী পদ্মনাভ ও চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ অরূপ রায় প্রধানমন্ত্রী র সঙ্গে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
বাকি দেশগুলো নির্দিষ্ট করে কিছু না জানালেও ধরে নেওয়া যায় তাদেরো বড়ো বড়ো বিজ্ঞানী ও সামরিক উপদেষ্টা এই সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করবেন।


No comments:

Post a Comment