Crss colum

Wednesday, May 10, 2017

সর্বধর্ম সমন্বয়

আসুন একটু আলোচনা করি সর্বধর্ম সমন্বয়ের ব্যাপারে .

আজ এক প্রিয়জন আমায় বলছিলেন  আমি এতো হিন্দুত্ব নিয়ে লিখি এটা অনুচিত . হিন্দুরা সব ধর্ম কে সমান চোখে দেখে . সহিষ্ণুতা হিন্দুদের ধর্ম . ইসলাম ধর্মের লোকেরা বেশীর ভাগ অশিক্ষিত তাই তারা ধর্ম ধর্ম করে .কিন্তু হিন্দুদের কাছে মানব ধর্ম সবচেয়ে বড় .
উত্তরে বলি ,
আপনি যেটা বলেছেন আমি তার সাথে একমত .মানুষের কাছে মানব ধর্ম ই সবচেয়ে বড় ধর্ম .ধর্ম তো আর কিছুই নয় ,ঈশ্বরের সাথে মানুষের সেতুবন্ধন  . ধর্ম গুলি সৃষ্টি করা হয়েছে যুগের প্রয়োজনে .মানুষকে সীমাবদ্ধ করে ,উশৃঙ্খল জীবন থেকে শৃঙ্খলা যুক্ত জীবন পদ্ধতি তে মানব জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করার প্রয়োজনে .
এ পর্যন্ত তো শুনতে ভালোই .
জগতে প্রধান যে ধর্ম গুলি বর্তমান তাদের মধ্যে প্রধান খ্রীষ্টান ধর্ম , ইসলাম ধর্ম ,বৌদ্ধ ধর্ম ,হিন্দু ধর্ম ,জৈন ধর্ম ইত্যাদি .
এখন যদি প্রশ্ন করা হয় এদের মধ্যে সবচেয়ে আগ্রাসী ধর্ম কোনটি ?
উত্তর সিম্পল -ইসলাম .
সবচেয়ে অল্প দিন আগে এই ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে .কিন্তু এই অল্পদিনেই অর্ধেক পৃথিবীতে সাম্রাজ্য কায়েম করেছে . কিভাবে ? তরবারির জোরে ,অন্য ধর্মালম্বীদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব সৃষ্টি করে ছলে বলে কৌশলে নিজের মতবাদ গ্রহণে বাধ্য করে তোলা .
আর যদি প্রশ্ন করা হয় সবচেয়ে ক্ষয়িষ্ণু ধর্ম কোনটি ?
উত্তর সিম্পল - হিন্দু ধর্ম .
অখণ্ড ভারতভূমিতে একসময় শুধুই বৈদিক সভ্যতা বা বৈদিক ধর্ম বর্তমান ছিলো . আর্যাবর্ত থেকে দাক্ষিণাত্যে আর্য রা প্রবেশ করলে দ্রাবিড় ধর্ম বৈদিক ধর্মের সাথে মিশে যায় .পরবর্তীকালে এই মিলিত ধর্মীয় রূপ গ্রীক দের আগমনের পর  ' হিন্দু' নাম ধারণ করে . আসলে সেই অর্থে হিন্দু ধর্মের কোনো প্রবর্তক নেই .নেই কোনো নির্দিষ্ট রীতি .লোকাচার ও দেশ কালভেদে হিন্দুরা বিভিন্ন প্রকার রীতি নীতি পালন করে .     যদি কোন হিন্দুকে প্রশ্ন করা হয় 'তুমি কেন  নিজেকে হিন্দু বলছো ?' আমি  নিশ্চিত শতকরা নব্বই শতাংশ হিন্দু উত্তর দিতে পারবে না . সত্যিই তো  খাওয়া দাওয়া ,পূজা পদ্ধতি ,দেবতা ,লোকাচার  সব কিছুতেই আমরা আলাদা আলাদা রকমের .অথচ কাশ্মীরি পন্ডিতরাও হিন্দু , মধ্যপ্রদেশের দলিতরাও হিন্দু ,আবার কেরালার আয়েঙ্গার সম্প্রদায়রাও হিন্দু .তাদের এতো বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও সবাই হিন্দু কিভাবে ?
শুনে রাখুন - আমরা হিন্দুরা সবচেয়ে পবিত্র ও প্রামাণ্য় হিসাবে মানি বেদ.
যা সুপ্রাচীন বৈদিক সভ্যতার নিদর্শন .  বৈদিক সভ্যতা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছে . যে যে গোষ্ঠী বা উপগোষ্ঠী বেদকে প্রামাণ্য় ও অপৌরুষেয়  হিসাবে স্বীকার করেছে তারা হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে.
শিখরা  ,জৈনরা  ,ও বৌদ্ধরা  বেদকে প্রামাণ্য ও অপৌরুষেয় (এর  অর্থ বেদ স্বয়ং ঈশ্বরের সৃষ্টি ,কোনো ব্যাক্তির সৃষ্ট নয় ) হিসাবে স্বীকার করে না .তাই এগুলির  হিন্দু ধর্মের সাথে প্রভূত মিল থাকা সত্ত্বেও এগুলিকে আলাদা ধর্ম বলা হয়.  আপনি জেনে আশ্চর্য্য হবেন যে কেরল  ,বোম্বাই ,দিল্লী ,কাশ্মীর , আসাম ,বাংলা ইত্যাদি যে কোন জায়গায়  সংঘটিত প্রতিটি ধর্মীয় কাজে যেমন - বিবাহ , শ্রাদ্ধ  ,উপনয়ন ,পূজা  সব কিছুতেই বেদ মন্ত্র উচ্চারিত হয়ে থাকে .শুধু আপনি হয়তো আলাদা করে চিনতে পারেন না কোনটি বেদ মন্ত্র .কিন্তু জানবেন বেদ মন্ত্রের মাধ্যমেই আমরা হিন্দুরা একে অপরের সাথে জুড়ে আছি . একসময় হিন্দুরা প্রাচীন পারস্য় থেকে গান্ধার হয়ে কম্বোডিয়া পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছিলো .আজ সেই সব ভূমি তে হিন্দুরা নেই .গোটা বাংলায় একসময় হিন্দুরা ছিলো .আজ বাংলাদেশে হিন্দুরা নামমাত্র  অবশিষ্ট আছে .  কেন জানেন হিন্দুদের এই ক্ষয়িষ্ণু রূপ ? আমাদের এই বৃহত্ মানবিক রূপ . আমরা জন্মগত ভাবে সব ধর্মকে সমান চোখে দেখি .তার সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করেছে পৃথিবীর সবচেয়ে আগ্রাসী ধর্মটি .আমরা যদি তাদের আশ্রয় না দিয়ে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করতাম তবে হিন্দুরা বৃহত্ ভূ খন্ডের আধিপত্য হারাতাম না .  আজ নিজেদের  পূর্বপুরুষের দেশে আমরা যেন পরবাসীর জীবন যাপন করছি .
ওদের কট্টর পন্থার বিরুদ্ধে আমরা যদি নরম মানবিক রূপ ধারণ করি তবে একদিন আসবে ,যখন আমরা সব কিছুর উপর আধিপত্য হারাবো .একবার ভেবে দেখুন বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা .তারা ঐ দেশের প্রাচীন সংস্কৃতির চিহ্ন .তারাই ভূমিপুত্র .অথচ আজ তারা কি অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে আছে . কাল বাকী ভারতের হিন্দুদের একই অবস্থা হবে .
মনে রাখতে হবে লোহা দিয়ে লোহা কাটা যায়.হীরে ই কিন্তু হীরে কাটার কাজে লাগে .কট্টর পন্থী দের বিরুদ্ধে আমাদের আরো বেশী কট্টর পন্থী হতে হবে . এতটুকু নরম মানবতাবাদী মনোভাব দেখালে বাকি ভারত থেকে হিন্দুরা ও অন্যান্য ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে .এই ভারত আমাদের হিন্দুদের শেষ আশ্রয় .এই পবিত্র ভারতভূমি থেকে  আমরা বিতাড়িত হলে আমদেরো ইহুদী জাতির মতো হাজার হাজার বছর ধরে দেশে দেশে ঘুরতে হবে .
হিন্দুত্ত্ববাদ হিন্দুদের শেষ অস্ত্র .এটাই হয়তো একমাত্র অস্ত্র .আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী ধর্মের হাত থেকে বাঁচতে এটাই একমাত্র উপায় .
আর সুপ্রীম কোর্টের সাথে আমি একমত ,হিন্দুত্ব শুধুই ধর্ম নয় এটি আসলে জীবন শৈলী .

No comments:

Post a Comment