Crss colum

Sunday, May 14, 2017

বিবর্তন

17  ই   জুন , 2017     |
আমি  পড়তে বসেছিলাম  |  বাবা ডাকলো  ‘রনি এদিকে  আয় তাড়াতাড়ি  |’
আমি পাশের ঘরে গিয়ে দেখি বাবা  টিভি দেখছে | টিভিতে এবিপি আনন্দ চলছে | তাতে দেখাচ্ছে এক জার্মান যুবককে |যুবকটি র কপালে এক অদ্ভুত নীলচে  আলোর আভা  | ঠিক যেন কপালে চামড়ার ভিতর কেউ যেন একটা নীল রংএর এল -ই -ডি জ্বেলে দিয়েছে | ঠিক ভ্রু দুটির মাঝখানে |  ঘোষক বলছেন ‘গত কাল রাত থেকে এই জার্মান যুবকটির কপালে এমন রহস্যময় আলো জ্বলছে |জার্মান বিজ্ঞানীরা এই যুবকটিকে নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন |তারা জানাচ্ছেন এই যুবকটির বুদ্ধি র আশ্চর্য্য রকম উন্নতি হয়েছে |জটিল অঙ্ক থেকে আধুনিক কম্পিউটার সায়েন্স সব বিষয়ে যুবকটির কুশলতা অভাবনীয় |অন্যান্য দের সাথে আমরাও আগ্রহী রইলাম যুবকটির ব্যাপারে |’
রনি খবরটা শুনে বাবাকে প্রশ্ন করলো ‘বাবা এটা আবার কি ?’
বাবা হেসে উত্তর দিলো ‘কিছু কিছু মানুষ প্রকৃতির আজব খেয়ালে অতি উন্নত ও অতীন্দ্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হয় |এটা হয়তো তেমনি একটা ঘটনা |’

9ই সেপ্টেম্বর 2019

আজ দিল্লির এক যুবতীর কপালে ঐ একই প্রকার নীলচে আলো দেখা গেছে |ভারতে এই প্রথম এই ধরণের ঘটনা ঘটলো |জার্মানি তে প্রথম এই ধরণের মানুষ দেখা যায় |তারপরে এই  দুই বছরে অনেক দেশেই এই ধরণের মানুষের সন্ধান  মিলেছে |
রনি র বাবা  কম্পিউটারের সামনে বসে  গুগলে এই আশ্চর্য্য ঘটনা নিয়ে সার্চ করছিলেন | রনি এই বছরেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে  |কম্পিউটারটা বাবা রনির জন্যই কিনেছেন | রনির বাবা ঘরে থাকলে নেটে এটা সেটা সার্চ করে অনেক নতুন তথ্য রনিকে দেন | আজ এই অদ্ভুত বিষয়ে সার্চ করতেই  সাম্প্রতিক এই ঘটনার সব তথ্য জানা গেলো |
বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে বলছেন ‘বিবর্তনের শেষ ধাপ | বা  LAST STAGE OF HUMANITY সংক্ষেপে L.S.H.  |’ মানুষ তার মগজের অতি অল্প অংশই ব্যবহার করে |এই পর্যায়ে মানুষের টোটাল ব্রেন কার্যকরী হয় |এবং মানুষ অতীন্দ্রীয় ক্ষমতার ও অভাবনীয় বুদ্ধির অধিকারী হয় | যে সব মানুষের মধ্যে  এই ঘটনাটা ঘটেছে তাদের বুদ্ধিবৃত্তি অতি শক্তিশালী হয়েছে | কয়েকজন তো বিভিন্ন আবিষ্কার করেছে | সবচেয়ে আশ্চর্য্য এই যে তারা বিভিন্ন মানুষের  সাথে  ভাব বিনিময়ে কোনো শব্দ বা ভাষার সাহায্য নিচ্ছে না | সরাসরি অপরের চিন্তাভাবনা বুঝতে পারছে ও নিজেদের বক্তব্য  অপরের মস্তিষ্কে প্রেরণ করছে |
রনির বাবা রনিকে বললো ‘তুমি যদি ঐ ধরণের ক্ষমতা পেতে ,তাহলে আমি দেখে শান্তি পেতাম | ’ রনি বাবার এই আক্ষেপের কোনো জবাব দিলো না |
11ই মার্চ 2020

রনির বয়স   এখন কুড়ি | এখন নিরানব্বই শতাংশ জীবিত মানুষের কপালে এই নীলচে আলো দেখা যায় | এমনকি রনির বাবা ,মা ,সব বন্ধুবান্ধব সবার কপালে এই নীলচে আলো দেখা যায় | এরা সবাই  LSH বা বিবর্তনের শেষ  ধাপে অবস্থান করছে | রনির এখনো  LSH হয় নি  |
7ই মে 2025
রনির বয়স পঁচিশ .পুরো পৃথিবীর সব মানুষ এখন অতীন্দ্রীয় ক্ষমতার অধিকারী  | শুধু দুজন বাদে  | রনি  ও  ইভা নামের একটি আঠারো বছরের একটি মেয়ে |  কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিদ্যার প্রফেসাররা এদের দুজনকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে এরা দুজনে কেন বিবর্তনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছতে পারলো না ?
গোটা পৃথিবীর চেহারা এখন বদলে গেছে  | পুরো পৃথিবী এখন ভাষাহীন  | ভাষার প্রয়োজন এখন নেই  | সবাই সরাসরি একে অপরের মনের কথা বুঝতে পারে  | খাদ্য ,বস্ত্র, বাসস্থান , করিগরি  ,প্রযুক্তি ইত্যাদি  কোনো দিকেই কোনো সমস্যা নেই  | প্রতিটি মানুষ আবিষ্কারক হয়ে গেছে  | রোগ বলে কিছু নেই  | সবাই সুস্থ | প্রতিটি মানুষ জ্ঞানী হওয়ায় জাতিভেদ ধর্মভেদ আঞ্চলিকতা ইত্যাদি সব মুছে গেছে  |
শুধু দুটি মানুষ একই রকম ঈশ্বর বিশ্বাসী রয়ে গেছে -রনি ও ইভা   |
6ই জুন 2026
ঘটনাটা ঘটেছে আজ সকালে  | আচমকা এক একজন মানুষ হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে  | সব অতীন্দ্রীয় শক্তি সম্পন্ন মানুষ নিজেদের  শক্তি দিয়ে ব্যাপারটা বোঝবার চেষ্টা করছে  | নিজেদের মনো জগতে একের পর এক বার্তা বিনিময় করছে  |
9 ই জুন  2026
খুবই দ্রুত এতো ঘটনা ঘটে গেলো  | পৃথিবীর একটি মানুষ আর দেহে নেই  |  সবাই বাতাসে মিলিয়ে গেছে  |  শেষ তম  মানুষ টি শেষ মুহূর্তে মিলিয়ে যাবার আগে একটা বার্তা পাঠালেন রনি ও ইভার মস্তিষ্কে | 
“আমাদের বিবর্তন শেষ হয়েছিলো  ,তাই প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আমরা শরীর হীন হয়ে শুদ্ধ চেতনায় পরিণত হলাম | তোমরা দুজন রইলে  | আগামী দিনের ভাবী পৃথিবীর তোমরা ই প্রথম পজন্ম | আমরা বিবর্তনের শেষ ধাপে পৌঁছে মনে করেছিলাম আমরাই সব | ঈশ্বর বলে কিছু নেই | কিন্তু এই শেষ মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমরাও ভুল করেছি | মহাকাল ই আসলে ঈশ্বর | অনন্ত সময় যাত্রায় আমরা শুধুই ক্ষণিকের অতিথি মাত্র |
তোমরা নতুন পৃথিবী নতুন ভেদাভেদ হীন জাতি তৈরী কর | শুভ কামনা রইলো | ”
তারিখ ,সময় অজানা |
রনি ও ইভা তাদের ঘরের সামনে ফাঁকা জমিতে ফলা ধান গাছ গুলির দিকে তাকিয়ে আছে | দুজনেই চাষ জানতো না | কিন্তু প্রয়োজন মানুষকে সব কিছুই শিখিয়ে নেয় | কিছু কৃষিকাজ বিষয়ক বই দুজনে খুঁজে পেয়েছিলো  | সেগুলি পড়ে দুজনে চাষ শিখছে |  পাকা সোনালী ধানের দিকে তাকিয়ে দুজনে কোন অজানা স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে তা একমাত্র মহাকাল ই জানে | (শেষ অথবা শুরু )

No comments:

Post a Comment