Crss colum

Sunday, November 4, 2018

অলৌকিক তরবারি (পর্ব 4)

   (শক্তিক্ষেত্র নগরী)
 আদিত্য চোখ বুজে কম্পন ও আলোর ঝলকানি বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রইলো। কিছুক্ষণ পর কম্পন কমে গেলে আদিত্য চোখ খুললো।চোখ খুলে আদিত্য  অবাক হয়ে গেলো।এ কোথায় এসেছে। উঁচু খাড়াই পাহাড়ে ঘেরা এক উপত্যকা। চারিদিকে সাদার মধ্যে এক টুকরো সবুজ।
সামনে একটা বিশাল সোনালী রঙের দরজা। কোনো প্রহরী নেই। দরজার দুই পাশে দুটি ষাঁড়ের মূর্তি। সূর্যের আলোয় সোনালী ধাতুর তৈরি ষাঁড় দুটির গা চকচক করছিলো।
আদিত্য কে এগিয়ে আসতে দেখে তাকে অবাক করে  বসে থাকা ষাঁড়ের মূর্তি গুলো গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। যেন তারা এই দরজার প্রহরী। তবু আদিত্য ভয় পেলো না । হাতে খোলা তলোয়ার নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। পিছিয়ে যাওয়ার কথা আদিত্য চিন্তা ই করতে পারে না। ধাতব ষাঁড় দুটো বারবার পা গুলো মাটিতে ঠুকে রাগ প্রকাশ করতে লাগলো। তার পর দুটি ষাঁড় মাথা গুঁজে শিঙ বাগিয়ে আদিত্য র দিকে দৌড়ে আসতে লাগলো। প্রথম ঝটকাটা আদিত্য এক পাশে সরে গিয়ে আঘাত থেকে বেঁচে গেলো। তারপর ষাঁড় দুটো ঘুরে গিয়ে  দুজন দু পাশ থেকে আদিত্য র দিকে তেড়ে এলো। এবার মহাবিপদ। দুটো ষাঁড়ের সাথে ধাক্কা যখন নিশ্চিত ঠিক তখনই আদিত্য পুনরায় পাশের দিকে লাফ দিলো বাঁচার আশায়।ঠং করে আওয়াজ হলো যখন আদিত্য মাঝখান হতে সরে যাওয়ার জন্য দুটি ষাঁড় পরস্পর কে আঘাত করলো। দুজনের ধাতুর শিং চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো সেই সুযোগ নিয়ে আদিত্য দৌড়ে খোলা বিশাল দরজা টা পার হয়ে গেলো।
কিছুটা যাওয়ার পর একবার পিছন ফিরে তাকালো ষাঁড় দুটো পিছনে তাড়া করে আসছে কিনা। না ষাঁড় দুটো তাড়া করেনি। এবার নিশ্চিন্ত হয়ে আদিত্য এগিয়ে চললো শক্তিক্ষেত্র নগরীর মধ্যে। কিছু দুর যাবার পর একটা দুটো করে বাড়ি ঘর মানুষ জন নজরে পড়তে লাগলো। বাড়ি ঘর সবই সোনালী ধাতুর তৈরি। আদিত্য র মনে হলো ধাতুটা সোনা। অথবা সোনা দিয়ে তৈরি কোন সংকর ধাতু।
দুই একটা করে মানুষ দেখা যাচ্ছে।নর ও নারী উভয়ের শরীরে এক রকম চকচকে সুতো দিয়ে তৈরি পোশাক। আদিত্য র শরীরের অন্য রকম পোশাক যদিও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলো। কিন্তু তবুও আদিত্য কে তারা কোন বাধা দিচ্ছিলো না। বরং মৃদু হেসে মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে তারা তাকে অভিবাদন জানাচ্ছিল।
এতো সুন্দর নগরী আদিত্য আগে কখনো দেখেনি। রাস্তা ঘাট খুব পরিস্কার ও সুন্দর। কোনো হৈচৈ নেই।সবাই সুশৃঙ্খল ভাবে  বেচাকেনা করছে। দূরে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে কৃষি জমি। আদিত্য র অবাক লাগছে এই ভেবে ঐ পাহাড়ের খাঁজে কৃষিজমি গুলোতে জল সেচের বন্দোবস্ত কিভাবে করা হয়েছে এই ভেবে।
আদিত্য কিছু টা এগোবার পর একজন লোক আদিত্য র সামনে এসে দাঁড়ালো। লোকটির পোশাক দেখে মনে হলো সে একজন সৈনিক। সৈনিক টি আদিত্য কে প্রশ্ন করলো ‘কে তুমি ?’
আদিত্য উত্তর দিলো ‘ আমি সুন্দর গড় থেকে আসছি।’
সৈনিক টি বললো ‘এই গোপন পুরী তে কেউ সহজে আসতে পারে না । তুমি এখানে এলে কি ভাবে ?আর কি তোমার আসার উদ্দেশ্য ?’
আদিত্য উত্তর দিলো ‘ আমি এই গোপন পুরীতে নাগরাজ এর সাহায্যে এসেছি। এখানে আমি   আমার  পূর্বপুরুষের ব্যবহৃত বিশেষ অলৌকিক তরবারি লাভ করার জন্য এসেছি।  ’
সৈনিক টি এবার বললো ‘ তোমার উদ্দেশ্য আমাদের নগরীর পক্ষে হানিকর।তোমায় আমার সাথে যেতে হবে।কাল রাজসভায় তোমার বিচার হবে। এই শক্তিক্ষেত্র নগরীর শাসক কালকেতু তোমার উদ্দেশ্য বিচার করে উপযুক্ত নির্ণয় নেবেন।তার আগে পর্যন্ত তুমি বন্দী হয়ে থাকবে।’
আদিত্য দেখলো এদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে তার অসুবিধা হবে। তার চেয়ে আপাতত বন্দী হওয়া মেনে নেওয়া যাক।কাল ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
আদিত্য সৈনিক টিকে বললো ‘ আপনি যা সঠিক পদক্ষেপ মনে করবেন তাই করুন।’
সেই মতো সৈনিক টি মুখ দিয়ে শিস্ দেওয়ার শব্দ করলো অমনি আচমকা আদিত্য র চোখের সামনে এক সুদৃশ্য রথের আবির্ভাব হলো।
সৈনিকটি আদিত্য কে নিয়ে রথে চেপে রথ চালিয়ে দিলো।রথ চলেছে। আদিত্য এই সুন্দর নগরীর শোভা দেখতে দেখতে চলেছে।
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা ঘাট।সুরম্য প্রাসাদ। সুন্দর সুদৃশ্য বাগান।
অবিলম্বে রথ এসে থামলো এক বিশাল অট্টালিকা র সামনে। আদিত্য বুঝতে পারলো এটাই  রাজপ্রাসাদ।
সেই রাতে আদিত্য র স্থান হলো কারাগারে। যদিও এখানকার কারাগার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।
পরদিন সকালে আদিত্য ছটফট করতে লাগলো কখন মহারাজ কালকেতুর সঙ্গে দেখা হবে এই ভেবে।
মহারাজের দরবারে ডাক পড়লো অপরাহ্ন বেলায়।
কালকের সেই সৈনিকটি নিয়ে গেল মহারাজা র কাছে। আদিত্য মহারাজ কে প্রণাম করল।
মহারাজ কালকেতু বয়স্ক মানুষ। তিনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন উভয়ের দিকে। প্রহরী সৈনিক টি বললো , 'মহারাজ এই যুবক টি ভিনদেশী।কাল নগরে উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে ঘুরছিল দেখে আমি একে আটক করে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। এখন আপনি এর ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নির্ণয় করুন।'
মহারাজ কালকেতু অভিজ্ঞ ব্যাক্তি। তিনি এক ঝলক আদিত্য র সরলতা মাখানো মুখ দেখে বুঝতে পারলেন এই যুবকের থেকে আশঙ্কার কিছু নেই। তিনি ইঙ্গিতে প্রহরী টিকে চলে যেতে বললেন।
প্রহরী চলে গেলে তিনি তার সামনে রাখা বসার আসন দেখিয়ে আদিত্য কে বসতে বললেন। আদিত্য বসলে তিনি বললেন ‘বলো তুমি কে ?আর তোমার আগমনের হেতু কি ?  ’
আদিত্য বললো  ‘আমি সুন্দর   গড়ের রাজপুত্র আদিত্য। আমার এক পূর্ব পুরুষ তার গুরুদেবের কাছ থেকে দুইটি অমূল্য সম্পদ লাভ করেছিলেন। সেগুলির প্রথমটি হলো এক অলৌকিক তরবারি আর দ্বিতীয়টি হলো এক মায়া আংটি। ঐ দুটি বস্তুর সাহায্য নিয়ে তিনি বিশাল সুন্দর গড় রাজ্য স্থাপন করেন। ওনার মৃত্যুর পর ওনার গুরুদেব অলৌকিক তরবারি টি এই শক্তিক্ষেত্র নগরীতে লুকিয়ে রাখেন। এবং তিনি নির্দেশ দেন মায়া আংটি টি এই বংশের মহারানী রা বংশ পরম্পরায় ধারণ করবে। এবং যদি কখনো এই বংশের বিপদ উপস্থিত হয় তবে যেন এই বংশের উপযুক্ত সন্তান মায়া আংটি পরে শক্তিক্ষেত্র থেকে অলৌকিক তরবারি উদ্ধার করে। এবং তার সাহায্য নিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার পায়। বর্তমানে আমি পিতৃহীন, রাজ্যহীন।মাতা আমার পালনের ভার এক বিশ্বস্ত রাজকর্মচারী র হাতে দিয়ে বাণপ্রস্থ নিয়েছেন। সেই কর্মচারী আমায় পুত্র স্নেহে মানুষ করেছেন।তাকেই আমি পিতা রূপে জানতাম। কিছুদিন আগে তিনি আমার কাছে আমার প্রকৃত পরিচয় বিবৃত করেছেন। সেই সাথে জানিয়েছেন আমার মা বাণপ্রস্থে যাওয়ার সময় এই মায়া আংটি আমার জন্য দিয়ে আদেশ করেছেন আমি যেন শক্তিক্ষেত্র   হতে অলৌকিক তরবারি উদ্ধার করে পিতৃরাজ্য পুনরুদ্ধার করি।এটাই আমার আগমনের উদ্দেশ্য। ’
মহারাজ কালকেতু পুরো বক্তব্য মন দিয়ে শুনলেন।
তারপর বললেন , ‘ তুমি যে সত্য কথা বলছো এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। কারণ ঐ  মায়া আংটি না পরিহিত থাকলে তুমি কখনোই   নাগরাজ কে হারিয়ে এই দূর্ভেদ্য নগরীতে প্রবেশ করতে পারতে না।কারণ ঐ নাগরাজ কে মায়া আংটি পরিহিত ব্যক্তি ছাড়া কখনো কেউ হারাতে পারবে না এমন আশীর্বাদ ছিল। যাইহোক আমি তোমায় সাহায্য করবো। এই নগরী বিদ্যাধর দের আবাসভূমি। তুমি বিভিন্ন গ্রন্থে ও প্রাচীন পুঁথি তে এই বিদ্যাধর দের কথা শুনে থাকবে। এই নগরীর সব অধিবাসী বিদ্যাধর। আমরা আসলে এই পৃথিবীর প্রাচীনতম অধিবাসী। আমরা জ্ঞান ও সৃজনশীলতায় বর্তমান মানবজাতির চেয়ে অনেক এগিয়ে।আমরাই মানবজাতিকে  ধর্ম , বিজ্ঞান, সংস্কৃতি,সব কিছু শিখিয়েছি। অলৌকিক তরবারি আমার রাজ্যে সুরক্ষিত রয়েছে। তোমার পূর্ব পুরুষের গুরুদেব এই রাজ্যের আমার পূর্ব পুরুষের গুরুদেব ছিলেন। তিনি এক বিশেষ গোপন স্থানে ঐ অসাধারণ ক্ষমতা শালী তরবারি লুকিয়ে রেখেছিলেন। এবং আদেশ দিয়েছেন যে কোনো দিন মায়া আংটি পরিহিত কেউ যদি নাগরাজ কে হারিয়ে এই রাজ্যে প্রবেশ করে তবে আমি যেন তার পূর্ণ সহযোগিতা করি। তুমি আজ বিশ্রাম করো। সেই অলৌকিক তরবারি অতি সুরক্ষিত ভাবে এক গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখা আছে।তা উদ্ধার করতে তোমায় বীরত্ব র সাথে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে।  ’
এই বলে তিনি তালি বাজালে এক অনুচর হাজির হলো। তিনি আদিত্য কে উদ্দেশ্য করে বললেন ‘যাও এর সাথে ।রাতে রাজকীয় অতিথিশালায় থাকো।কাল খুব প্রভাতে তোমাকে নিয়ে আমি সেই গোপন স্থানে যাবো।’
সেই রাতে উত্তেজনা য় ঘুম আসতে  অনেক দেরি হলেও খুব প্রভাতে ঘুম ভাঙ্গলো আদিত্য র।
আদিত্য মহারাজা কালকেতুর অপেক্ষায় তৈরী হয়ে থাকলো।
কিঞ্চিৎ সময় বাদে মহারাজ এর ডাক এলো।
দুই টি সুন্দর অশ্বে দুজনে  রওয়ানা দিলো। (ক্রমশ)(পরের পর্বে অলৌকিক তরবারি লাভ)

No comments:

Post a Comment