Crss colum

Sunday, November 18, 2018

অলৌকিক তরবারি পর্ব 6

অবিশ্রান্ত ভাবে দু দিন ঘোড়া ছোটাবার পর আজ  দুপুরে প্রথম মানুষের মুখ দেখলো আদিত্য। এই দুই দিনে খাওয়া ও সামান্য সময়ের জন্য বিশ্রাম নেওয়া ছাড়া বাকি সময় শুধু ই  এগিয়ে চলা। খাওয়া বলতে বনের ফল। এতোক্ষণে একজন মানুষের দেখা পেল আদিত্য। একজন কাঠুরিয়া। জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করতে এসেছে।তার কাছ থেকে বিজয় গড় কতদূর জিজ্ঞেস করায়  সে বলল ‘তা অনেক দূর বটে।’কোন দিকে প্রশ্ন করায় সে দক্ষিণ দিক নির্দেশ করলো।
আবার এগিয়ে চলা।বেশ কিছুক্ষণ বাদে ছোট ছোট গ্রাম । তারপর বহুদূর থেকে বিজয়গড় রাজবাড়ীর সুউচ্চ তোরণ দূর থেকে দেখতে পেল আদিত্য। দেখা মাত্রই তার মনের অন্দরে ভেসে উঠলো রাজকন্যা  রত্নমালার  মিষ্টি হাসি।
বিজয় গড় নগরীতে যখন আদিত্য প্রবেশ করলো তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। আদিত্য প্রথমেই রাজবাড়ী গেল না । প্রথমে গেল শূরসেনের বাড়ি। শূরসেনের স্ত্রী ঘরের অলিন্দ থেকে পথের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দূর হতে ঘোড়ায় চড়ে আদিত্য কে আসতে দেখে দ্রুত নেমে বাড়ীর সদর দরজার সামনে দাঁড়ালেন। আদিত্য এসে ঘোড়া থেকে নেমে প্রথমেই মায়ের পদতলে বসে পদধূলি নিলো।শূরসেনের স্ত্রী এতোদিন বাদে পুত্র কে পেয়ে তার কপালে স্নেহ চুম্বন দিলেন। তারপর  দুই জনে গৃহে প্রবেশ করলেন। পরস্পরের কুশল বিনিময়ের পর আদিত্য মাতা কে প্রশ্ন করলো ‘ মাতা , সেনাধ্যক্ষ মহাশয় কোথায় ?’
শূরসেনের স্ত্রী উত্তর দিলেন ,‘ তুমি বোধহয় জানো না আমাদের রাজ্যের সামনে এখন ভয়াবহ বিপদ। খবর এসেছে প্রতিবেশী দুই রাজ্য মালবগড় ও সুন্দর গড় একত্রে আমাদের রাজ্য আক্রমণ করতে চলেছে। তাই মহারাজ ওনাকে ডেকেছেন কিভাবে এই বিপদ থেকে    উদ্ধার  পাওয়া যায় তার মন্ত্রণা করার জন্য।   ’
আদিত্য সব শুনে বললো ,‘ তাহলে আমায় অনুমতি দিন এখনি মহারাজার দরবারে যাওয়ার। এই বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো আমার কর্তব্য।’
শূরসেনের স্ত্রী বললেন ,‘ বেশ যাও তবে রাত্রে বাড়িতে ফিরে আসবে ।যে কয়দিন রাজধানীতে থাকবে আমার কাছে খাওয়া দাওয়া করবে।’
আদিত্য শূরসেনের স্ত্রীর কাছে বিদায় নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে চললো রাজবাড়ী র দিকে। বেশি দূরে নয় । অল্পক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলো রাজবাড়ীর সদর দরজার কাছে। প্রহরীরা আদিত্য কে চিনতে পারলো। আদিত্য একজন প্রহরী কে বললো ‘মহারাজ কে খবর দাও আদিত্য ফিরে এসেছে। মহারাজ এর সাথে দেখা করতে চায়।   ’
একজন প্রহরী মহারাজ কে খবর দিলে তিনি তৎক্ষণাৎ আদিত্য কে মন্ত্রণাগৃহে নিয়ে আসার হুকুম দিলেন।
প্রহরী টি আদিত্য কে  মন্ত্রণাগৃহের কাছে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নিলো।
আদিত্য  মন্ত্রণাগৃহে ঢুকে দেখলো , মহারাজ সূর্য সেন ও সেনাধ্যক্ষ শূরসেন দুজনেই চিন্তিত মুখে একটা গালিচায় মুখোমুখি বসে আছেন।
উভয়েই আদিত্য কে দেখে ভারি প্রসন্ন হলেন।  মহারাজ সূর্য সেন আদিত্য কে দেখে বললেন ,‘ এসো আদিত্য আমার পাশে বসো।’
আদিত্য বসলে শূরসেন বললো ,‘ তুমি কি জানো আমরা এক বিপদের সম্মুখীন হয়েছি।’
আদিত্য  শূরসেন কে বললো ,‘ আমি আপনার গৃহ হতে আসছি।মাতার মুখে সব কিছুই শুনেছি। তবু  আপনাদের কাছে আমি বিস্তারিত ভাবে সব তথ্য জানতে চাই। ’
তখন শূরসেন বললেন,‘ বেশ শোনো,  আমাদের এই ছোট রাজ্যের উপর আমাদের  প্রতিবেশী মালব গড়  রাজ্যের লোভ দীর্ঘ কালের। এর আগেও তারা আমাদের রাজ্য আক্রমণ করেছিল । কিন্তু আমাদের কুশলী সৈনিক দের সাথে পেরে ওঠেনি। এখন সুন্দর গড় রাজ্যের রাজা দুর্জন সিং এর সাথে হাত মিলিয়ে উভয় রাজা দুই দিক থেকে আমাদের আক্রমণ করবে বলে গুপ্তচর মুখে খবর এসেছে। উভয় রাজাই সসৈন্যে আমাদের রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।এখন আমাদের যা সৈন্য শক্তি আছে তাতে যে কোনো এক জন রাজাকে বাধা দিতে পারবো। যদি সৈন্য গণ কে দুই ভাগ করে উভয় কেই বাধা দিতে যাই তবে পরাজিত হওয়া নিশ্চিত। তাই আমরা ঠিক করেছি সব সৈন্য কে রাজধানীতে একত্রিত করে রাজধানী অবরুদ্ধ করে  বাধা দেবো। ’
আদিত্য খুব ধীর মস্তিষ্কের ছেলে। সবটুকু শোনার পর বললো ,‘ মহারাজ আপনি যদি অনুমতি দেন    এবং  সেনাধ্যক্ষ শূরসেন যদি আমার মার্গ দর্শন করেন তবে এই লড়াইয়ে আমি অংশগ্রহণ করতে চাই। আমি আমার  লক্ষ্য পূরণে সফল হয়েছি। আমি অলৌকিক তরবারির অধিকারী হতে পেরেছি। মহারাজ আপনি পূর্বে আমার পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম যে আমার লক্ষ্য পূরণ হলে বলবো। আমি আসলে ক্ষত্রিয় সন্তান। আমার পিতা হলেন সুন্দর গড়ের প্রয়াত মহারাজা প্রতাপাদিত্য দেব, মাতা হলেন মহারানী পদ্মাবতী। আপনারা আমায় সুযোগ দিন যাতে আমি আমার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারি।  ’
এই কথা শুনে শূরসেন আবেগের সাথে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো ‘ তুমি মহারাজ প্রতাপাদিত্য র পুত্র। তোমার পিতা আমার কাছে সহোদর ভাইয়ের মতো ছিলো। তাদের সেই স্নেহ আজো আমার স্মৃতিতে অম্লান।   ’
শূরসেন আদিত্য কে জড়িয়ে ধরে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলেন।
কিছু ক্ষণ পর আবেগ একটু স্তিমিত হলে শূরসেন বললেন ‘ তুমি আজ হতে আমার পরম আত্মীয়। তুমি আমার পুত্র সম। তুমি এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দান করো। ’
আদিত্য বললো ,‘ তা হয় না। আমি এই যুদ্ধে আপনার নেতৃত্বে লড়তে চাই। তা ছাড়া আমি এই রাজ্যের অধিবাসী নই। অন্য  সেনাধ্যক্ষ রা অসন্তোষ জানাতে পারেন।  আপনি ঠিক এই মুহূর্তে শত্রু সৈন্য র অবস্থান আমাকে নির্দিষ্ট করে বলুন ’
মহারাজ সূর্য সেন এবার মুখ খুললেন ,‘ গুপ্ত চর মুখে খবর এসেছে যে দুর্জন সিং তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে আমাদের রাজ্য অভিমুখে সবে রওয়ানা দিয়েছেন।তার  এই রাজ্যে প্রবেশ করতে প্রায় বারো দিন লাগবে। তবে প্রবাল নারায়ণ  এই রাজ্যের সীমান্ত অতিক্রম করে অনেকটা ভিতরে ঢুকে পড়েছে। আগামী পরশু সে  রাজধানী বিজয় গড় কে ঘিরে থাকা বিজয় গিরি পাহাড়ের সরু গিরিপথে প্রবেশ করবে। আর ঐ গিরিপথ পার  হলেই রাজধানী  এক দিনের পথ মাত্র।'
আদিত্য বললো ‘ মহারাজ আপনি আমাকে বাছাই করা পাঁচশত সৈন্য দিন। বাকি সৈন্য রা রাজধানীতে অবস্থান করুক । আমি আপনাকে কথা দিলাম যে কোনো মূল্যে আমি আমার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবো। প্রবাল নারায়ণের বিনাশ করবো।’
সূর্য সেন বললেন ‘ বেশ এই চরম বিপদের দিনে  যদি তুমি আমাকে ও আমার প্রিয় প্রজাদের রক্ষা করো তবে তোমাকে আমি তোমার পিতৃরাজ্য ফিরে পেতে সাহায্য করবো। তুমি কাল প্রভাতে পাঁচশত সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ যাত্রা করো। ঈশ্বর তোমার সহায় হোন। ’

রাজার মন্ত্রণাগৃহ থেকে সবে বাইরে এসেছে এমন সময় এক  অস্ফুট স্বর ভেসে এলো ‘কুমার।’
আদিত্য চেয়ে দেখলো রাজকন্যা র  সহচরী। শূরসেন ও মহারাজ এখনো মন্ত্রণাগৃহে আলোচনা রত। সহচরী বললো‘ কুমার , রাজকন্যা রত্নমালা অধীর আগ্রহে উদ্যানে আপনার জন্য অপেক্ষায় আছেন। ’

উদ্যানের এক প্রান্তে এক ছোট্ট সরোবর। সেই সরোবরের এক সোপানে বসে রাজকন্যা রত্নমালা গভীর চিন্তামগ্ন ছিল। সহচরী দূর হতে রাজকন্যা কে দেখিয়ে দিয়ে বিদায় নিলো। আদিত্য রাজকন্যা র কাছে গিয়ে প্রথমবারের র জন্য মৃদু স্বরে ডাকলো ‘রত্নমালা।’
রত্নমালা মরালের ন্যায় ঘাড় ঘুরিয়ে আদিত্য কে চোখের কোণ দিয়ে দেখে বললো ‘কুমার মনে হয় এই অভাগিনী কে ভুলেই গেছেন। সেটাই স্বাভাবিক।’
আদিত্য রাজকন্যা র পাশাপাশি বসে বললো‘ যার অবস্থান আমার বক্ষে তাকে ভুলে থাকা যায় না। আজকেই বিজয়গড়ে ফিরেছি।এসেই শত্রুর আক্রমণ আসন্ন শুনে মহারাজের কাছে   এসেছিলাম। মহারাজের অনুমতিক্রমে আগামী কাল প্রভাতেই যুদ্ধ যাত্রা করবো। তোমার সাথে দেখা করার জন্য মনটা ছটফট করছিলো। মনে মনে ভাবছিলাম কিভাবে তোমার দেখা পাওয়া যায়। তুমি ডেকে পাঠালে দেখে খুশি হয়েছি।।রত্নমালা এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারলে তোমার পিতা কথা দিয়েছেন তিনি আমার পিতৃরাজ্য উদ্ধারে আমার পাশে থাকবেন।’
রত্নমালা বললো ‘ আর আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই।’
এরপর আকাশের চাঁদ মাঝআকাশে যাওয়া পর্যন্ত অনেক কথা হলো।
রাতে আদিত্য ফিরে দেখলো শূরসেনের স্ত্রী খাবার নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছেন। আদিত্য খেতে খেতে বললো‘ মা সেনাধ্যক্ষ মহাশয় খেয়েছেন ?’
শূরসেনের স্ত্রী বললো‘ তিনি খেয়ে শুয়ে পড়েছেন। তুমি ও শুয়ে পড়ো কাল খুব প্রাতে তোমাদের উভয়কেই ডেকে দেবো।’
পরদিন সকালে রাজপ্রাসাদের সামনের ময়দানে পাঁচশত সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে । তাদের সামনে মহারাজ সূর্য সেন,শূরসেন ও আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে। মহারাজ বললেন 'শত্রুরা আমাদের রাজ্যের দোরগোড়ায় উপস্থিত।হে আমার বীর সৈনিক গণ এখন তোমাদের স্কন্ধে এক গুরুদায়িত্ব যে কোন মূল্যে এই মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার। এই তরুণ যুবক আজ হতে তোমাদের 'নায়ক' পদে অভিষিক্ত করলাম ।এর প্রতিটি আদেশ আমার আদেশ মনে করে মান্য করবে।'
আদিত্য এবার তার সামনে থাকা সৈনিক দের উদ্দেশ্যে বললো ‘ হে আমার প্রিয় বীর সেনানী গণ , এই গুরুতর বিপদের দিনে আমাদের স্কন্ধে দায়িত্ব পড়েছে বিজয় গিরির সরু গিরিখাতে মালবগড়ের রাজা প্রবাল নারায়ণ কে বিনাশ করবার।আর আমরা তা করে দেখিয়ে দেবো।’
সৈন্য রা সোল্লাসে চিৎকার করে বললো‘ জয় বিজয়গড়ের জয়,জয় মহারাজ সূর্য সেনের জয়।’
আদিত্য এবার সব সৈন্য কে আদেশ করলো সবাই পরস্পরের হাত স্পর্শ করার।
সবাই একে অপরের হাত ধরলে আদিত্য তার সম্মুখস্থ এক সৈনিকের কপালে তার মায়া আংটি স্পর্শ করে মনে মনে অলৌকিক তরবারির রক্ষক শিবলিঙ্গ কে স্মরণ করে ধ্যানে পাওয়া অলৌকিক তরবারি সক্রিয় করার মন্ত্র টি পাঠ করলো। মায়া আংটি নীলাভ হয়ে ঝলসে উঠলো।
এক  নীলাভ রশ্মির বন্যা বয়ে গেল সকলের মধ্যে দিয়ে।সকল সৈন্য র গা থেকে নীল রশ্মি ঠিকরে বেরোতে লাগলো।
আদিত্য এবার ঘুরে মহারাজ কে বললো ‘ আমায় এবার যাত্রা শুরু করার অনুমতি দিন।’
মহারাজ সম্মতি সূচক মাথা নাড়লে সকলে ঘোড়ার পিঠে চড়ে রওয়ানা দিলো।


কয়েক প্রহরের ভিতর আদিত্য নগর ছাড়িয়ে  বিজয় গিরির সরু গিরিপথের মূখে পৌঁছে গেলো।

আদিত্য দেখলো ,এক সরু পথ। দুই পাশে খাড়া পাহাড় যা চড়া যে কোন বাহিনী র পক্ষে কষ্টকর।
আদিত্য তার পাঁচশত সৈন্য কে দুই ভাগে ভাগ করলো। প্রথম ভাগে একশত সৈন্য। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হ‌লো তারা গিরিপথের দুই পাশের চূড়ায় উঠে বিভিন্ন মাপের পাথর সংগ্রহ করে লুকিয়ে থাকবে ।আর আদিত্য বাকি চারশো সৈন্য নিয়ে লুকিয়ে থাকবে। শত্রুরা এলে আদিত্য উপযুক্ত সময় দেখে পতাকা সংকেত দেখাবে। তখন উপরে লুকিয়ে থাকা সৈন্য রা  শত্রুর উপর পাথর বর্ষণ করবে।
পাথর বর্ষণ শেষ হওয়া মাত্রই আদিত্য সবাইকে নিয়ে গিরিপথের এক মুখ দিয়ে আক্রমন করবে।
সারা দিন শত্রুর জন্য অপেক্ষা করলেও সেই দিন শত্রু রা এলো না। শত্রু সৈন্য  নিশ্চিন্ত ছিল যে ছোট বিজয়গড়ের পক্ষে এই বিরাট বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস হবে না।
পুরো বাহিনী যখন বিরাট সাপের মতো ঐ সরু গিরিপথ দিয়ে ঢুকে পড়েছে তখন ওপরে চূড়ায় অবস্থিত বিজয়গড়ের সৈনিক রা দেখলো আদিত্য এক পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে এক বিরাট লাল পতাকা আন্দোলিত করছে। অমনি সংকেত পাওয়া মাত্র শুরু হয়ে গেল বৃষ্টির মতো পাথর পড়া। পাথরের আঘাত পেয়ে মালব গড়ের সৈন্য রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো।রণহস্তী গুলো দৌড়াদৌড়ি করে নিজেদের বাহিনীর লোকেদের পিষ্ট করতে লাগলো। ঘোড়া গুলো চঞ্চল হয়ে পৃষ্ঠে সওয়ার নিয়েই উল্টো দিকে দৌড় দিল।
পাথর বৃষ্টি বন্ধ হওয়া মাত্রই আদিত্য অলৌকিক তরবারি জাগানিয়া মন্ত্র পাঠ করে চিৎকার করে আদেশ দিলো "আক্রমণ"।
মালবগড়ের সৈন্যরা শুধু দেখতে পেলো এক নীল ঘুর্নিঝড় এগিয়ে আসছে ।আর তার সামনে এক অস্ত্র ধারী যুবক। যুবকের হাতের তরবারি প্রতি মূহুর্তে হালকা লাল থেকে গাঢ় লাল হচ্ছে। আদিত্য তার ক্ষুদ্র সেনাদল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো মালবগড়ের সৈন্য দের উপর।তার ও তার সৈনিক দের অস্ত্র দ্রুত শেষ করে দিতে লাগল বিপক্ষ বাহিনী কে। আদিত্যর হাতের অস্ত্র দ্রুত উত্তপ্ত হতে লাগলো অতি অল্প ক্ষণের মধ্যে ই অস্ত্রের তাপ চরম মাত্রায় পৌঁছে ঝলসিয়ে , পুড়িয়ে দিতে লাগলো শত্রু দের।যে কয়টি সৈন্য সাহস করে বাধা দিতে এসেছিলো প্রত্যেকেই হয় তরবারির আঘাতে নয়তো পুড়ে মারা গেলো।এক আতঙ্কের সৃষ্টি হলো মালবগড়ের সেনাবাহিনীর মধ্যে।সবাই পালাতে লাগলো।বিজয়গড়ের সৈন্য রা জয়ধ্বনি দিতে শুরু করেছে।
এমন সময় এক কন্ঠস্বর বলে উঠলো ‘যদি প্রকৃত বীর পুরুষ হও তবে অলৌকিক শক্তির ভরসা না করে সাধারণ যোদ্ধা হয়ে আমার মোকাবিলা করো।’
আদিত্য মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলো তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে মালবগড়ের রাজা প্রবালনারায়ণ।

আদিত্য বললো ‘ বেশ তবে তাই হোক।আজ পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবোই।’
প্রবালনারায়ণ বলল‘ আমি কিভাবে তোমার পিতৃহত্যার কারণ হতে পারি ? কে তোমার পিতা ?’
আদিত্য বললো ‘ মনে পড়ে সুন্দর গড়ের মহারাজ প্রতাপাদিত্য কে। আমি তার পুত্র।’
প্রবাল নারায়ণ বললো‘ বেশ তবে তোমাকেও আজ তোমার পিতার নিকট পৌঁছে দেবো।’
তারপর শুরু হলো এক অসাধারণ অসিযুদ্ধ। উভয়েই তরবারি চালনায় দক্ষ। বিদ্যুৎ গতিতে একে অপরকে তরবারি দিয়ে আঘাত হানছে আর অন্য জন দ্রুত প্রতিহত করছে। কিন্তু আজ ভাগ্য ন্যায়ের পক্ষে।একটু পরেই প্রবাল নারায়ণ এর তরবারি ছিটকে পড়লো। তৎক্ষণাৎ আদিত্য র তরবারি বিদ্ধ হলো প্রবাল নারায়ণের বক্ষে।

প্রবাল নারায়ণের মৃত্যুর সাথে সাথেই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলো।মালবগড়ের কয়েকটি সেনাধ্যক্ষ এগিয়ে এলো আদিত্য র সামনে। নতজানু হয়ে নিজেদের তরবারি রেখে দিলো আদিত্য র পদপ্রান্তে।
এক বয়স্ক সেনাধ্যক্ষ বললো ‘ হে বীর আপনি আমাদের মহারাজ কে পরাজিত করেছেন। আমাদের মহারাজ এর কোন সন্তান বা উত্তরাধিকারী নেই।তাই  ন্যায় যুদ্ধের নিয়মানুযায়ী আপনি আজ হতে আমাদের রাজা। সম্পূর্ণ মালবগড়ের প্রজাবর্গ ও সেনাবাহিনীর  পক্ষ হতে আমরা আপনার আনুগত্য স্বীকার করছি। আপনি চলুন আমাদের সাথে সেখানে আপনার রাজ্যাভিষেক হবে।’
আদিত্য বললো ‘ঠিক আছে ।আজ থেকে আমি আপনাদের দায়ভার গ্রহণ করলাম । কিন্তু এখনি আমি মালবগড় যেতে পারবো না আরো কিছু কাজ বাকি। মূল সৈন্যবাহিনী মালব গড় ফিরে যাক।আপনারা কিছু জন  আমার সঙ্গে বিজয় আসুন।’
সেনাধ্যক্ষ রা বললো ‘যথা আজ্ঞা মহারাজ।   ’
এরপর উভয় পক্ষের মিলিত সেনাবাহিনী এগিয়ে চললো বিজয় গড়ের দিকে।আরো এক শত্রু বিনাশ বাকি আছে। (ক্রমশ)


(এরপর অন্তিম পর্ব)

No comments:

Post a Comment