Crss colum

Tuesday, November 27, 2018

অলৌকিক তরবারি (অন্তিম পর্ব)

প্রবাল নারায়ণের মৃত্যুর খবর বিজয়গড়ে আদিত্যরা পৌঁছবার পূর্বে ই এসে গেল। আদিত্য যুদ্ধ জয়ের খবর দিয়ে একজন সৈন্য পূর্বেই বিজয় গড়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।

সদলবলে বিজয় গড়ে পৌঁছানোর পর আদিত্য দূর হতেই দেখতে পেলো মহারাজ সূর্য সেন ,শূরসেন আরো অনেকে রাজপ্রাসাদের বহিঃ তোরণের  কাছে সংবর্ধনা জানাতে এসে দাঁড়িয়েছেন।
মহারাজ সূর্য সেন এগিয়ে এসে বললেন ‘ মালবগড়ের নতুন মহারাজা কে স্বাগতম।’
আদিত্য সকলের প্রশংসায় কিঞ্চিত বিড়ম্বনায় পড়লো।
সব শেষে আদিত্য বললো ‘আমি নতুন কিছু করি নি , যা করেছি তা আমার কর্তব্য বোধ থেকেই করেছি।দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন এটাই শিখেছি।আপনারা আমায় আর্শীরবাদ করুন আমি যেন আমার কর্তব্যে অবিচল থাকতে পারি।   ’
মহারাজ সূর্য সেন বললেন ‘ আদিত্য তুমি আমার পুত্র স্বরূপ।আজ এই দূর্দিনের দিনে তুমি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছো এই ঋণ অপরিশোধ্য । তবু আমি তোমাকে কিছু উপহার দিতে চাই।বলো তুমি আমার কাছে কি চাও ?’
আদিত্য ঈষৎ হেসে বলল ‘ মহারাজ যদি এমন কিছু চাই যা আপনার প্রাণাধিক প্রিয় , তবে আপনি কি তা আমার হাতে দেবেন ?’
সূর্য সেন বললো ‘ তুমি নিঃসংকোচে আমার কাছে কি চাও বলো। আমি নিশ্চয়ই তা তোমাকে দেবো।’
আদিত্য বললো ‘ মহারাজ আমি যখন আপনার কাছে এসেছিলাম  অতি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে। আপনার দয়ায়  আমি আজ এক ভূখন্ডে র রাজা হয়েছি। আপনার আশীর্বাদ থাকলে আমি নিশ্চিত আমার পিতার ন্যায় প্রজাবৎসল ও ন্যায় পরায়ন হতে পারবো। আমি আমার জীবনের এই সন্ধিক্ষণে আপনার কন্যা রাজকন্যা রত্নমালা কে সহধর্মিণী করে পেতে চাই। রাজকন্যা এই বিবাহে অরাজী হবেন না। ’
মহারাজ সূর্য সেন বললো ‘ পুত্র , আমি বৃদ্ধ হয়েছি ঠিকই কিন্তু  আমার কন্যার মনের ইচ্ছা অজ্ঞাত নই। তুমি যদি রাজা নাও হতে তবু ও  আমি আমার কন্যা তোমার হাতে তুলে দিতাম ।কারণ তোমার মতো বীর যোদ্ধা আমার জামাতা হওয়ার উপযুক্ত। তোমাদের দুজনের বিবাহে আমার পূর্ণ সম্মতি আছে। আপাতত এই আসন্য যুদ্ধে র  পর আমি তোমাদের বিবাহের আয়োজন করবো।  ’
আদিত্য এবার মালবগড়ের সেনাধ্যক্ষ দের সাথে মহারাজের পরিচয় করিয়ে দিলো। মহারাজ সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন ‘আপনাদের সকলকে বিজয়গড়ে স্বাগত। এই যুদ্ধ আমরা চাই নি তবুও পাকেচক্রে আমরা এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছি।প্রথমত লোভী অত্যাচারীর শাস্তি দিতে হবে।দ্বীতিয়ত সুন্দর গড়ের প্রয়াত মহারাজা প্রতাপাদিত্য র পুত্র রাজকুমার ও বর্তমানে মালবগড়ের রাজা আদিত্য কে তার পিতৃরাজ্য ফিরিয়ে দিতে হবে। আমি আপনাদের সকলের সহযোগীতা কামনা করছি। ’
উপস্থিত সকলে একসাথে বলে উঠল‘ আমরা সকলেই এই কাজে আপনার সহযোগিতা করবো।’
দিনকয়েক পর এক ভোরে খবর এলো দুর্জন সিং তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে বিজয় গড়ের সীমান্তে হাজির হয়েছ।
সেই দিন রাজার মন্ত্রণাগৃহে আলোচনা সভা বসলো যুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়ে।
উপস্থিত শূরসেন, মহারাজ সূর্য সেন, আদিত্য, ও মালবগড়ের এক বয়স্ক সেনাধ্যক্ষ মঙ্গল সিং।
শূরসেন বললো " শত্রু এই মুহূর্তে রাজ্যের সীমান্তে অবস্থান করছে। এখন প্রশ্ন হলো আমরা কোথায় ওদের বাধা দেবো। সুন্দর গড় বড় রাজ্য । ওদের সৈন্য সংখ্যা আমাদের দ্বিগুণ। প্রায় দুই লক্ষাধিক। সেক্ষেত্রে আমাদের সৈন্য সংখ্যা সর্বোচ্চ এক লক্ষ। যদি মালব গড়ের সৈন্য বাহিনী আমাদের সাহায্য করে তবুও তাদের সৈন্য মিলিয়ে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার সৈন্য হবে । দ্বীতিয়ত ,ওরা রাজ্যের যে সীমান্ত দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তা মূলত সমভূমি। সমভূমি তে যুদ্ধ জয় সৈন্য সংখ্যা র ওপর নির্ভর করে। এখন আমাদের সকলে স্থির করতে হবে কোন কৌশল অবলম্বন করলে শত্রু বিনাশ সম্ভব।"
শূরসেন থামলে মহারাজ সূর্য সেন বললো ‘ ওরা রাজ্যের ভিতরে আরো কিছুটা অগ্রসর হওয়ার আগেই ওদের বাধা দিতে হবে। আমার মাথায় কোন সম্ভাবনা আসছে না। আদিত্য তুমি বলো কি ভাবে এই বিপদের মোকাবিলা করতে পারি।’
আদিত্য বললো ,‘ আমি আপনাদের আশঙ্কা অনুভব করছি। তবে আমি কিছু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। একথা ঠিক  ওদের সৈন্য সংখ্যা বেশি। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের সম্মিলিত দেড় লক্ষ সৈন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সৈন্য।তারা প্রতিদিন যুদ্ধঅভ্যাস করে থাকে। প্রতিটি সৈন্য অন্য যেকোনো রাজ্যের সৈন্য অপেক্ষা দ্বিগুণ শক্তিশালী। উল্টো দিকে সুন্দর গড়ের সৈন্য  দুই লক্ষ হলেও তার মধ্যে পঞ্চাশ হাজার সৈন্য সংগ্রহ করা অথবা জোর পূর্বক ধরে নিয়ে আসা প্রজা ও খনি শ্রমিক। তাদের অস্ত্র শিক্ষা সামান্য।ঐ প্রজা বর্গ দুর্জন সিং কে রাজা হিসেবে পছন্দ করে না।  আমাদের গুপ্তচর বাহিনী খুব কৌশলে যদি তাদের মধ্যে প্রচার করে যে আমি প্রয়াত মহারাজ প্রতাপাদিত্য র সন্তান আদিত্য দেব , তবে নিশ্চিত অধিকাংশ প্রজাবর্গ পালিয়ে এসে আমার সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেবে।  দ্বিতীয় ত যে অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে ওদের আসতে হবে তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো খরস্রোতা নদী সুবলা।সুবলা নদীর যে কোন জায়গা দিয়ে রথ , রণহস্তী, ও অন্যান্য যুদ্ধের রসদবাহী শকট নিয়ে পার হওয়া যাবে না।সুবলা নদী পার হতে পারা যায় কেবলমাত্র অরিদমন গ্রামের কাছে।  অরিদমন গ্রামের দুই দিকে ঘন জঙ্গল রয়েছে।যা বিদেশি দের কাছে অগম্য। তবে আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা জানি ঐ জঙ্গলে কোন স্থানে সৈন্য নিয়ে লুকিয়ে থাকা  যায়। আমাদের সম্মিলিত দেড় লক্ষ সৈন্য র মধ্যে এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে আমি ওদের আশার পূর্বেই অরিদমন গ্রামের প্রান্তে অবস্থান করবো। বাকি পঞ্চাশ হাজার সৈন্যের মধ্যে পঁচিশ হাজার সৈন্য নিয়ে মঙ্গল সিং বাম পাশের জঙ্গলে ও বাকি পঁচিশ হাজার সৈন্য নিয়ে শূরসেন ডান দিকের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে  শত্রু এলে প্রথমে আমি বাধা দেবো । যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর  আমার সৈন্য দের পক্ষ হতে তিনবার জয়ঢাক বাজিয়ে সঙ্কেত প্রদান করলে আপনারা উভয়ে এক সাথে জঙ্গল হতে সসৈন্যে বেরিয়ে শত্রুর দুই পার্শ্বে আক্রমণ করবেন। তিন দিক থেকে আক্রান্ত হলে  শত্রুর দিশেহারা অবস্থা সৃষ্টি হবে ।  আমার সৈন্য বাহিনী মাতৃভূমি রক্ষার জন্য মরিয়া।অন্য দিকে শত্রু সৈন্য অন্যের ভূমিতে একটু হলেও আড়ষ্ট ভাবে থাকবে। তাদের আড়ষ্টতা কাটিয়ে ওঠার আগেই তারা দেখবে তারা তিনদিক হতে আক্রান্ত। তাদের মনোবল তখন তলানীতে অবস্থান করবে। পরাজয় তাদের নিশ্চিত।  ’
আদিত্য তার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করলে সবাই নীরবে তা হৃদয়ে গেঁথে নিচ্ছিল।সবার প্রথমে মঙ্গল সিং বলে উঠলো ‘ অসাধারণ, অসাধারণ আপনার পরিকল্পনা। আমি গর্বিত আপনার অধীনে যুদ্ধ করতে পারবো এই ভেবে।’
এবার শূরসেন ও মহারাজ সূর্য সেন উভয়েই এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিলেন।


সেই মতই সম্মিলিত বাহিনী কে তিন ভাগ করা হলো দুই ভাগ সৈন্য নিয়ে গোপনে মঙ্গল সিং ও শূরসেন আলাদা আলাদা ভাবে রওয়ানা দিলো। গোপনীয়তা প্রয়োজনীয়।কারণ কোথায় শত্রুর গুপ্ত চর ওৎ পেতে আছে ঠিক নেই।
আদিত্য বাকি সৈন্য নিয়ে অরিদমন গ্রামে শিবির তৈরি করে অবস্থান করলো। কিছু অল্প সৈন্য নিয়ে মহারাজ সূর্য সেন রাজধানীতে রইলো।
শত্রু এলো সপ্তম দিন বিকালে। শত্রু রা আশা করেনি যে বিজয় গড়ের সৈন্য রা সুবলা নদী পার করার জায়গা আটকে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। তারা বুঝলো আসল লড়াই এখানেই হবে। এদিকে শত্রুর দুই পাশের জঙ্গলে মঙ্গল সিং ও শূরসেন নিজের নিজের বাহিনী নিয়ে গোপনে লুকিয়ে রইলো। কোনো অবস্থায় শত্রু সৈন্য কে বুঝতে দেওয়া যাবে না তারা তিন দিক থেকে অবরুদ্ধ। 
লড়াই শুরু পরদিন সকালে। শুরু তেই আদিত্য তার সব সৈন্য কে পরস্পরের হাত ধরে রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষার শপথ নিতে বললো। সকলে হাত ধরলে আদিত্য তাদের স্পর্শ করে মায়া আংটি ও অলৌকিক তরবারি জাগানিয়া মন্ত্র পাঠ করলো। আদিত্যর সব সৈন্য মায়া আংটির সুরক্ষা বলয় দিয়ে ঘেরা রইলো। এদিকে গুপ্ত চর বাহিনীর কৌশলী প্রচারে প্রভাবিত হয়ে  অনেক প্রয়াত রাজা প্রতাপাদিত্য র সন্তানের সমর্থন করে বাহিনী হতে পালিয়ে গেল। 
মহারাজ দুর্জন সিং এর কাছে খবর গেলো যে প্রজা ও শ্রমিক দের নিয়ে যে অস্থায়ী বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল তাদের অধিকাংশই পালিয়ে গেছে।আর বাকিরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি করছে। দুর্জন সিং দাঁত কিড়মিড় করে বললো ‘ বিদ্রোহ। ঠিক আছে যুদ্ধ শেষ হোক প্রতিটি বিদ্রোহী কে মৃত্যু দন্ড দেবো।’
আদিত্য ঠিক করলো সেই প্রথম আক্রমণ করবে। রক্ষণাত্মক না থেকে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিলে শত্রু হতচকিত হবে।
যা ভাবা তাই কাজ। দুর্জন সিং কল্পনাতেও আনেন নি যে উল্টে তারা আক্রান্ত হবে। পুরোদস্তর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। দুই পক্ষই এখন সমান শক্তিশালী। কিন্তু আদিত্য র অলৌকিক তরবারি ফারাক গড়ে দিতে লাগলো। সুন্দর গড়ের সৈন্য রা আদিত্য র বিক্রমে কচুকাটা হতে লাগলো। তরবারি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ভয়াবহ বিকিরণ ছড়িয়ে দিতে লাগল। বহু শত্রু সৈন্য উত্তাপে পুড়ে মারা গেলো।এক হাহাকার অবস্থা সৃষ্টি হলো শত্রুর মধ্যে। এই সময়ে আদিত্য র নির্দেশে বাহিনীর পক্ষ হতে জয়ঢাক বাজিয়ে জঙ্গলে অবস্থিত শূরসেনের ও মঙ্গল সিং এর বাহিনী কে সঙ্কেত করা হলো। সাথে সাথেই উভয় বাহিনী ‘ জয় শিব শম্ভু ’ধ্বনি দিতে দিতে উভয় দিক থেকেই আক্রমণ করলো । সামনে ভয়াবহ অলৌকিক তরবারি হাতে আদিত্য র বিশাল বাহিনী আর দুই পাশ হতে আক্রান্ত হয়ে শত্রু সৈন্য অনুভব করলো পরাজয় আজ নিশ্চিত। অবিলম্বে শত্রু রা পালাতে লাগল।আর এই পালানো ক্রমশ সংক্রামক ব্যাধিতে পরিণত হলো।সবাই পালাতে লাগল।
শত্রু সৈন্য যতো কমছে বিজয় গড়ের সম্মিলিত বাহিনী ততো নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে লাগলো।
দুর্জন সিং ধুরন্ধর লোক। তিনি দ্রুত বুঝতে পারলেন তিনি হারতে চলেছেন। তিনি অল্প কিছু বিশ্বস্ত সৈন্য নিয়ে নিজের রাজ্য সুন্দর গড়ের অভিমূখে পালিয়ে গেলেন।
সম্মিলিত বাহিনী বিজয়ের  উৎসব পালন করতে লাগলো। এই বিজয়োল্লাস স্তিমিত হওয়ার আগেই  সব সেনাধ্যক্ষ দের নিয়ে আদিত্য আলোচনা করতে বসলো। আলোচনা য় স্থির হলো আদিত্য র পক্ষে এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। দুর্জন সিং  গুছিয়ে ওঠার আগেই ওকে ধাওয়া করে শেষ করে দিতে হবে। 
সুতরাং আদিত্য ও শূরসেন পঞ্চাশ হাজার ঘোড় সওয়ার নিয়ে দুর্জন সিং এর পশ্চাতধাবন করলো।আর মঙ্গল সিং বাকি সৈন্য নিয়ে পায়ে হেঁটে সুন্দর গড়ে র দিকে এগিয়ে চললো। 
ঠিক হলো আদিত্য যদি রাস্তায় দুর্জন সিং এর দেখা না পায় তবে ঘোড়সওয়ার বাহিনী নিয়ে রাজপ্রাসাদ অবরোধ করবে।আর মঙ্গল সিং বাকি বাহিনী নিয়ে তার সাথে যোগ দেবে। 
পথে দুর্জন সিং এর দেখা পাওয়া গেল না। আদিত্য দ্রুত ধাওয়া করে রাস্তায় দুর্জন সিং কে না ধরতে পেরে রাজপ্রাসাদ অবরোধ করলো। এদিকে সুন্দর গড় রাজ্যের প্রজারা দুর্জন সিং এর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলো।তারা যখন জানতে পারলো তাদের পূর্বতন রাজার পুত্র আদিত্য , তখন তারা দলে দলে আদিত্য র বাহিনী তে যোগ দিলো। তাদের খাদ্য পানীয় দিয়ে সাহায্য করতে লাগলো।
মঙ্গল সিং বাকি সৈন্য বাহিনী নিয়ে আদিত্য র সাথে যোগ দিলো। এক ভয়ঙ্কর অন্তিম লড়াইয়ে র প্রস্তুতি শুরু হলো।
এদিকে দুর্জন সিং তার বিশ্বস্ত বাহিনী নিয়ে দুর্গ রক্ষা র প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজপ্রাসাদে র চওড়া প্রাচীরে ধানুকিরা তীর ধনুকে যোজন করে সতর্ক দৃষ্টি তে প্রহরারত রইলো।গরম তৈল নিয়ে কিছু সৈন্য অপেক্ষায় রইলো। বাকি সৈন্য রা বিশাল রাজ প্রাসাদের প্রবেশ পথ রক্ষা করে ব্যূহ রচনা করে অবস্থান করলো।
আদিত্য সকলের সাথে আলোচনা করছিলো সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে কিভাবে রাজপ্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করা যায়। কিন্তু কোন কূল খুঁজে পাচ্ছিলো না।এমন সময় তার দেহরক্ষী এক সৈনিক এসে বললো এক বৃদ্ধ তার সাথেই দেখা করতে চায় । আদিত্য তাকে তার সামনে আনতে বললো।
সেই বৃদ্ধ এলে আদিত্য তাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। তারপর তার পদধূলি মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করলো।
বৃদ্ধ টি হলো আদিত্য র অস্ত্র শিক্ষা গুরু রঘুবর। 
আদিত্য রঘুবরকে উপযুক্ত আসন প্রদান ও সম্মান প্রদর্শন করে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।সকলেই রঘুবরকে সম্মান জানালো।
আদিত্য গুরু রঘুবর কে সব পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে কি উপায়ে রাজপ্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করা যায় জানতে চাইলো।
রঘুবর বললো ‘ বৎস , উপায় আছে।এক গোপন সুড়ঙ্গ আছে যেখান দিয়ে তুমি অল্প কিছু সৈন্য নিয়ে অলৌকিক তরবারি র সাহায্য নিয়ে ভিতর দিক থেকে প্রাসাদের প্রবেশ পথ আক্রমণ করবে।আর  বাকিরা সামনে থেকে আক্রমণ করবো। তুমি প্রবেশ পথ রক্ষা কারী সৈন্য দের পরাস্ত করে প্রবেশ পথ খুলে দেবে। তারপর সম্মিলিত বাহিনী জলস্রোতের মতো রাজপ্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করে প্রাসাদ দখল করবে।কাল পূর্ণিমা।কাল ভোর রাতে তোমাকে আমি সেই গোপন সুড়ঙ্গ দেখিয়ে দেবো। তুমি পাঁচশত দুর্ধর্ষ যোদ্ধা বেছে তৈরি থাকবে। ’
পরদিন মাঝরাতে পাঁচশত সৈন্য নিয়ে আদিত্য যাত্রা শুরু করলো।রঘুবর পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো।সকলে এসে থামলো এক শিব মন্দিরের সামনে।রঘুবর বললো প্রাসাদের বাইরে এই শিব মন্দির ও প্রাসাদের ভিতরের এক শিব মন্দির তোমার পূর্ব পুরুষ আদিত্য দেব তৈরী করেছিলেন। এই দুইটি শিব মন্দির এক গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে যুক্ত।যাতে বিপদের দিনে এই সুড়ঙ্গ পথে রাজবংশের লোকজন পালিয়ে বাঁচতে পারে। এই সুড়ঙ্গের সন্ধান দুর্জন সিং জানে না। একদিন এই গোপন সুড়ঙ্গ পথে তোমাকে বুকে নিয়ে আমি ও তোমার পিতা শ্যামজী পালিয়েছিলাম ।আজ তুমি পুনরায় এই গোপন পথে প্রবেশ করে রাজপ্রাসাদ দখল করো।
গুরু রঘুবরের আদেশে সকলে শিব লিঙ্গটা সরাতে এক সুড়ঙ্গ দেখা গেল। ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে।।গুরু কে প্রণাম করে আদিত্য মশাল হস্তে নিঃশব্দে পাঁচশত সৈন্য নিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করলো । অনেক ক্ষণ চলার পর এক জায়গায় গিয়ে দেখলো আবার ধাপে ধাপে সিঁড়ি  উপর দিকে উঠে গেছে। সবচেয়ে উপরে একটা পাথর দিয়ে বন্ধ। আদিত্য বুঝতে পারলো এই পাথরের উপর আরো একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। দুই জন সৈন্য বলপ্রয়োগ করে শিবলিঙ্গ টি সরাতে একটি অন্ধকার মন্দিরের ভিতর দৃশ্যমান হলো।সকলে এক এক করে উঠে এলো। এখনো রাতের অন্ধকার কাটেনি। বেশীরভাগ শত্রু সৈন্য ঘুমে অচেতন। দূরে প্রবেশ দ্বার দেখা যাচ্ছে। সেখানে কিছু পাহারাদার সৈন্য জেগে রয়েছে। 
আদিত্যর পুরো বাহিনী  অস্ত্র নিয়ে তৈরী হলো। শত্রু সতর্ক হওয়ার আগেই তাকে পরাজিত করতে হবে।
সকলে প্রস্তুত হলে আদিত্য চিৎকার করে আদেশ দিলো। ‘আক্রমণ।জয় শিব শম্ভু।’
সুন্দর গড়ের সৈন্য রা কিছু বুঝতে পারার আগেই মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছিলো।এর ফাঁকে এক দল বিজয় গড়ের সৈন্য প্রবেশ পথ খুলে দিলো। শূরসেন তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত ছিল। প্রবেশদ্বার খোলা পেয়ে জলস্রোতের মতো বিজয় গড়ের সৈন্য রা ঢুকে পড়ল। ইতিমধ্যেই সূর্যোদয় হয়েছে। সুন্দর গড় রাজপ্রাসাদ অল্পক্ষণেই সম্মিলিত বাহিনী র দখলে চলে এলো। দুর্জন সিং তার অল্প কিছু দেহরক্ষী বাহিনী নিয়ে লড়াই করতে লাগলো। দুর্জন সিং কে সামনে লড়তে দেখে আদিত্য এক ধানুকি সৈন্য র কাছ থেকে তীর ধনুক চেয়ে নিলো। সাধারণ ধানুকিরা প্রায় আশি হাত  দূর পর্যন্ত নিঁখুত লক্ষ্যে তীর নিক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু দুর্জন সিং প্রায় দ্বিগুণ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল। দুর্জন সিং আদিত্য কে দেখতে পেয়েছে। আদিত্য কে তীর ধনুক হাতে নিতে দেখে হা হা করে হাসতে থাকলো। দুর্জন সিং ভাবলো আদিত্য যুদ্ধে অনভিজ্ঞ। এতো দূরত্ব থেকে তীর নিক্ষেপ করা যায় না। কিন্তু সকলকে অবাক করে একটা শাঁই করে তীর নিক্ষিপ্ত হলো। কেউ কিছু বুঝতে পারার আগেই  সকলে দেখলো হাস্যরত একটা মূর্তি ধপ করে পড়ে গেল। একটা তীর তীব্র বেগে গিয়ে দুর্জন সিং এর গলায় বিঁধে গেল। দুর্জন সিং মারা গেলে তার বাকি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো।
বিজয়োল্লাসে সম্মিলিত বাহিনী ধ্বনি তুললো ‘ জয় শিব শম্ভু।জয় মহারাজ আদিত্য র জয়।’
কয়েকদিন পর মহারাজ সূর্য সেন রাজকন্যা রত্নমালাকে সঙ্গে নিয়ে আদিত্য র রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে হাজির হলো । উপস্থিত হলো শ্যামজী। আদিত্য সকলকে সমাদর করে অতিথি সৎকার করতে লাগলো। মালবগড় থেকে রাজ মুকুট নিয়ে  এক বিশাল প্রতিনিধি দল  উপস্থিত হলো।
তারপর এক শুভদিনে শুভ মূহুর্তে রাজকন্যা রত্নমালার সাথে আদিত্য র শুভ বিবাহ সম্পন্ন হলো।এর পর আরেকটি শুভ দিনে সুন্দর গড় ও মালবগড়ের মহারাজ ও মহারানী হিসাবে আদিত্য ও রত্নমালার অভিষেক হলো। ঠিক হলো বছরের প্রথম ছয় মাস আদিত্য সুন্দর গড় হতে ও বাকি ছয় মাস মালবগড় হতে রাজ্যশাসন করবে।  
অতঃপর 
আমার গল্প ফুরালো, 
নটে গাছটি মুড়ালো ,
কেনো রে নটে মুড়ালি ….।

   ( অলৌকিক তরবারি অন্তিম পর্ব শেষ)


No comments:

Post a Comment