Crss colum

Tuesday, November 5, 2019

রক্ষক ৯


(১৩)
সহ্যাদ্রি পর্বতমালা।
সহ্যাদ্রি পর্বতমালা সাধারণত পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা নামে পরিচিত। বিশাল বিশাল পর্বতশ্রেণী ভারতের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে একদম দক্ষিণতম বিন্দু পর্যন্ত প্রসারিত। 
পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা র এক নামহীন পাহাড়ী উপত্যকায় দুই জন মানুষ এগিয়ে চলেছেন। ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই অংশে মানুষের  পদক্ষেপ পড়ে না বললেই চলে। কদাচিৎ দুই একটা  দূরবর্তী আদিবাসী সম্প্রদায়ের  মানুষ এখানে শিকারের খোঁজে এসে পড়ে। তবে  তারা যদি বুঝতে পারে তারা ডাইনি বুড়ির আস্তানার কাছে এসে পড়েছে তবে তারা তৎক্ষণাৎ ফিরে যায়। আদিবাসী গ্রামের  মানুষ গুলো ডাইনি বুড়িকে যমের মতো ভয় করে।বংশ পরম্পরায় তারা শুনে এসেছে ঐ দূরের উপত্যকায় কোনো অজানা স্থানে রয়েছে ডাইনি গুহা । সেখানে যেতে নেই। সেখানে যারা যায় তারা আর কখনো ফিরে আসে না।সবাই এড়িয়ে চলে এই রহস্যময় অঞ্চলকে।
আজ সেই নির্জন ঘন হিংস্র শ্বাপদ সঙ্কুল  জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে দুই জন মানুষ। একজন গুরুদেব তমোঘ্ন আর দ্বিতীয় জন আদিত্য।  
সেই নির্জন পথে যেতে যেতে আদিত্যের মনে একটা প্রশ্নের উদয় হলো। সে গুদে কে প্রশ্ন করলো " গুরুদেব, আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে আমরা কেন প্রথমে রজোগুণের কূপের উদ্দেশ্যে চলেছি ?"
একটুও না থেমে গুরুদেব তমোঘ্ন আদিত্যকে উত্তর দিলো " তুমি উপযুক্ত প্রশ্নই করেছো। পৃথিবীতে দুইটি কূপ রয়েছে। সত্ত্বগুণের ও রজোগুণের। কিন্তু অবগাহন করতে হলে প্রথমে রজোগুণের কূপে যাওয়াটাই উচিত। কারণ রজোগুণ আসলে সত্ত্বগুণ ও তমোগুণের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। উভয় গুনের শক্তির  মধ্যে সাম্যতা আনে। মানুষ যদি অতিরিক্ত সাত্বিক প্রকৃতির হয় সেটি যেমন ক্ষতিকর তেমনি অতিরিক্ত তামসিক প্রকৃতির মানুষ ক্ষতিকর। তুমি যদি প্রথমেই সত্ত্বগুণের কূপে অবগাহন করো তবে তুমি অতিরিক্ত সাত্বিক প্রকৃতির হবে। সে ক্ষেত্রে তুমি ঈশ্বর সাধনা ভিন্ন অন্য যেকোনো কাজকে অবহেলা করবে। এবং যে কারণে তোমার জন্মগ্রহণ করা তা থেকে কর্তব্য চ্যুত হবে। তাই প্রথমেই রজোগুণের কূপে অবগাহন করা উচিত। রজোগুণের কূপে অবগাহন করা মাত্র তুমি চিরকালের জন্য নীরোগ হবে। তোমার উপস্থিত বুদ্ধি প্রখর হবে। শুধু বুদ্ধি সাহায্যেই তুমি যেকোনো যুদ্ধে প্রতিপক্ষ থেকে এক কদম এগিয়ে থাকবে। এছাড়া রজোগুণের কূপে অবগাহন করার পর তুমি একটি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হবে।  তুমি অষ্টসিদ্ধি র যাবতীয় গুন লাভ করবে কেবলমাত্র জগত কল্যাণের হেতু। অর্থাৎ যোগী যেমন সাধনার দ্বারা অষ্ট সিদ্ধি লাভ করে নিজের এবং জগতের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে তুমি তেমনি ব্যবহার করতে পারবে না। তবে জগতের প্রয়োজনে তুমি অষ্ট সিদ্ধির  যাবতীয় গুন লাভ করবে। এছাড়া রজোগুণের কূপ তোমাকে একটি বিশেষ অস্ত্রের অধিকারী করবে। এই অস্ত্র হল অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আলোক তরঙ্গ অস্ত্র বা লেজার বিম। তুমি নিজের চোখ থেকে যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে লেজার বিম নিক্ষেপ করতে পারবে।
ওই যে কাছেই পাহাড় টা দেখতে পাচ্ছ ওখানেই  আমাদের গন্তব্য স্থল। ওখানে রয়েছে একটি গুহা। আদিবাসী সমাজে এটা ডাইনি গুহা নামে পরিচিত। কেন এই গুহার নাম ডাইনি গুহা হল সেটা গুহায় প্রবেশ করলেই বুঝতে পারবে। গুহায় প্রবেশ করা মাত্রই গুহার অধিষ্ঠাত্রী দেবী প্রবেশকারী কে সাবধান করে । সাধারণ আদিবাসী জনগণ ব্যাপারটি বুঝতে না পেরে এটিকে কোন ডাইনির ক্রিয়াকলাপ ভেবে ভুল করে ।আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই অঞ্চল এবংওই গুহাকে এড়িয়ে চলে। তার অবশ্য সম্যক কারণ আছে। সেটাও গুহায় প্রবেশ করামাত্র বুঝতে পারবে।শুধু যোগ্য ব্যক্তি এই গুহায় প্রবেশ করতে পারে। অযোগ্যরা মৃত্যুমুখে পতিত হয় ।চলো , পা চালিয়ে চলো কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবো।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনে এক বিশাল পাহাড়ের সামনে উপস্থিত হলো। পার শুরুর দিকে ঢালটা খুব একটা খাড়াই নয়। গুরুদেব  আদিত্যকে নিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করলেন। অল্প কিছুক্ষণ ওঠার পর তারা একটি গুহা মুখের সামনে এসে পৌছলেন। গুহার ওপরে একটা পাথরের উপর একটি ত্রিভুজ চিহ্ন খোদাই করা আছে। ত্রিভুজের মধ্যে একটি বিন্দু চিহ্ন।
গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " এই ত্রিভুজ চিহ্ন টি যে দেখতে পাচ্ছ এটি র তিনটি কোণ তিনটি কূপের প্রতীক। তিনটি বাহু তিনটি গুণের প্রতীক। এবং মধ্যবর্তী বিন্দুটি পাশুপত অস্ত্রের প্রতীক। "
আদিত্য প্রশ্ন করল " গুরুদেব আপনি কি করে এই কূপের সন্ধান পেলেন ?"
গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " আমি নিজে এই তিনটি কূপে অবগাহন করেছি। কিন্তু চেষ্টা করেও পাশুপত অস্ত্র লাভ করতে পারিনি। সেজন্য আমি তোমায় তিনটি কূপে অবগাহন করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারি কিন্তু পাশুপত অস্ত্র তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় পেতে হবে। আমাকে আমার গুরু এই তিনটি কূপের সন্ধান দিয়েছিলেন। যুগ যুগ ধরে পাঠশালার শিক্ষার্থীরা অশুভ বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। গুরু পরম্পরা য় আমরা এই তিনটি কূপের অবস্থানের কথা জানি।আমরা আমাদের উপযুক্ত ও যোগ্য শিক্ষার্থীকে এই বিষয়ে অবগত করি এবং তাদের এই তিনটি কূপে অবগাহন করতে সাহায্য করি । যাতে তারা ভবিষ্যতে যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। পাঠশালার  প্রধান হওয়ার যোগ্যতাই হলো ,এই তিনটি কূপে অবগাহন করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা।
এখন শোনো মনে রাখবে রজোগুণ স্থিতাবস্থা বজায় রাখে। রজোগুণ হলো সত্ত্বগুণ ও তমোগুণের মধ্যবর্তী অবস্থা। উভয় গুনের ভালো অংশটুকু  দিয়ে রজোগুণ  তৈরি হয়েছে। এই গুণ পেতে হলে তোমাকে সবকিছুর মধ্যে মধ্যবর্তী কোন কিছুকে পছন্দ করতে হবে।"
এরপর গুরুদেব তমোঘ্ন একটা মন্ত্র জপ করলে তার হাতে উদয় হলো এক আশ্চর্য তরবারি। সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠলো সেই তরবারি। সেই তরবারি টা আদিত্যর হাতে তুলে দিয়ে গুরুদেব তমোঘ্ন বললেন " এটি গুরু পরম্পরায় চলে আসা মন্ত্রপূতঃ তরবারি। এর একটি বিশেষ গুণ আছে। এই তরবারি যতক্ষণ তোমার হাতে থাকবে ততক্ষণ তুমি ক্লান্ত হবে না। আমার কাজ তোমাকে শুধুই পথনির্দেশ করা।এখন এই গুহার মধ্যে প্রবেশ করে তোমাকে সেই কুপের সন্ধান ও তাতে অবগাহন নিজেকেই করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা বলে ভিতর তোমাকে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। আর এই কাজের জন্য এই পরম্পরাগত তরবারি তোমার বিশেষ প্রয়োজন হবে। এখন যাও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দাও।"
আদিত্য ভক্তিভরে গুরুদেব কে প্রণাম করে তার আশীর্বাদ নিল তারপর তরবারি গ্রহণ করে সেই গুহায় প্রবেশ করলো।
বেশ বড়সড় গুহা । গুহামুখ চওড়া হলেও খানিকটা দূর গিয়ে সরু হয়ে গিয়েছে। ভিতরে অন্ধকার কি আছে দেখা যাচ্ছে না। খোলা তরবারি হাতে নিয়ে আদিত্য এগিয়ে চলেছে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর আদিত্য পিছন ফিরে দেখল গুরুদেব কে দেখা যাচ্ছে না। আদিত্য এগিয়ে চললো। অনেকক্ষণ যাওয়ার পর আদিত্য দেখতে পেলো সরু হয়ে যাওয়া গুহাটি পুনরায় চওড়া হতে শুরু করেছে। আরো কয়েক মিনিট হাঁটার পর আদিত্য একটা বিশাল হল ঘরের মতো জায়গায় এলো। হল ঘরটিতে অনেক উঁচু থেকে সূর্যের আলো ফাটল দিয়ে আসছে। আলোর তীব্রতা বলে দিচ্ছে সূর্য এখন মধ্যগগনে। সেই আলোয় দেখা যাচ্ছে সামনে একটা অতলস্পর্শী খাদ। একটা বিশাল পাথরের টুকরো খাদের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত সেতুর মতো পড়ে আছে। আদিত্য বুঝতে পারল তাকে ওই পাথরের সেতু দিয়ে ওপারে যেতে হবে ওপারে আরো একটি গুহামুখ দেখা যাচ্ছে। আর সেই সেতুর ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে আছে একটি বিশাল সিংহ। আদিত্যকে এগিয়ে যেতে হলে ওই সিংহটির মুকাবিলা করেই যেতে হবে। আদিত্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই একটা নারী কন্ঠস্বর বলে উঠলো " ফিরে যাও। যেখান থেকে এসেছো সেখানে ফিরে যাও। না হলে তোমার মৃত্যু নিশ্চিত।"
আদিত্য চমকে গিয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। নারী কণ্ঠস্বর আবার বলে উঠলো " ফিরে যাও।"
আদিত্য কাউকে না দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো " ফিরে যাওয়ার জন্য আমি আসিনি। তুমি কে সামনে এসো।"
নারী কন্ঠ বলল " আমি এই গুহার অধিষ্ঠাত্রী দেবী।"
আদিত্য বলল " আপনি আমার প্রণাম নেবেন। এই সৌরমণ্ডল কে বাঁচাবার জন্য আমার তিনটি জ্ঞান কূপে অবগাহন করা প্রয়োজন। আপনি আমার কাজে সহায় হোন।"
নারীকণ্ঠ পুনরায় শোনা গেল " তার আগে তুমি তোমার যোগ্যতা প্রমাণ করো। সামনে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত সিংহ কে এড়িয়ে অথবা হত্যা করে সামনে এগিয়ে যাও। সামনে তোমার জন্য আরো পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।"
এদিকে আদিত্যর গলার স্বর ঘুমন্ত সিংহ কে জাগিয়ে তুলেছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে সিংহটি এখন ক্ষুধার্ত। আর সামনে তার খাদ্যরূপে উপস্থিত একটি মানুষ। নাম আদিত্য। সিংহটি ধীরে ধীরে আদিত্য দিকে এগিয়ে আসছে। আদিত্য খোলা তরবারি বাগিয়ে নিয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সিংহটি একটা হাই তুলে আদিত্যর মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। দুই শত্রু পরস্পরের দিকে চোখ রেখে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর সিংহটি লাফ দেয়ার উপক্রম করলো। আদিত্য তার তরবারি টা শক্ত হাতে ধরে সিংহের দিকে চোখ করে সামান্য নিচু হয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে সিংহের লাফ দেয়ার জন্য অপেক্ষায় রইলো। সিংহটি আদিত্য র উদ্দেশ্যে লাফ  দেয়া মাত্রই আদিত্য এক দৌড়ে খানিকটা এগিয়ে সিংহের বুকে শূন্যেই তার তরবারিটা গুঁজে দিলো। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সাইডে লাফিয়ে সরে গেলো। তরবারি টা সিংহের বুকে গোঁজা মাত্রই সিংহটি র মৃত্যু হয়েছিল। সিংহটি পাথরের চাতালে ধপাস করে পড়লো। আদিত্য কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে সিংহের কাছে গিয়ে তার বুকের পাঁজরের ভেতর থেকে তরবারি টা বের করে নিলো। তারপর পাথরের সেতু দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। সামনে আরো একটি গুহামুখ। সেখান দিয়ে খানিকটা এগোবার পর আবার একটি হলঘর। এখানে একটি পাথরের চাতালের উপর সুন্দর সুন্দর সোনালী ধাতুর থালায় বিভিন্ন রকমের ফল সাজানো আছে। কোন থালায় আম, কোনোটিতে জাম, কোনোটিতে কলা, কোনোটিতে নারিকেল, কোনটিতে আপেল , কোনটিতে আঙ্গুর ইত্যাদি। সেই নারী কন্ঠ বলে উঠলো " তুমি যে উদ্দেশ্যেই আমার গুহায় আসো না কেন তুমি আমার অতিথি। আর অতিথি সৎকার আমার পরম কর্তব্য। ওইযে রাশি রাশিফল মূল দেখছো ওর মধ্যে একটি মাত্র তোমার খাদ্য। বাকিগুলি বিষাক্ত। ওই ফল গুলির মধ্যে নিজের জন্য খাদ্য ও পানীয়ের অভাব মিটে যাবে এমন কিছু পছন্দ করো। তুমি তোমার বুদ্ধি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার পরিচয় দাও।"
আদিত্য সব ফলগুলির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর সে নারিকেল টি বেছে নিয়ে  তরবারি দিয়ে সেটি ছাড়িয়ে তার জল পান করলো। এবং শাঁস টি খেলো। নারী কন্ঠ বলে উঠলো " সাধু ,সত্যিই তুমি সাহস ও বুদ্ধিতে অতুলনীয়। এগিয়ে যাও সামনে আরেকটি গুহামুখ আছে। সেই গুহামুখ দিয়ে গেলে তুমি তিনটি কূপ দেখতে পাবে। তার মধ্যে সঠিক কূপটি বেছে নিয়ে অবগাহন করতে হবে। মনে রাখবে ভুল কূপে অবগাহন করা মাত্রই তুমি মৃত্যুমুখে পতিত হবে। তোমার জয় প্রার্থনা করি।"
আদিত্য বললো "ধন্যবাদ দেবী।"
আদিত্য সামনের গুহা মুখ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে একটা খোলা প্রান্তরে গিয়ে পড়লো। সামনে তিনটি  গোলাকার কূপ  রয়েছে। দেখে বুঝা যাচ্ছে বেশি গভীর নয়। তিনটিতেই জল রয়েছে। একদম বামদিকে যেটি রয়েছে তার জলের রং হলুদ। মধ্যে যেটি রয়েছে তার রং লাল। ডান দিকে যেটা রয়েছে তার জলের রং বেগুনি। তিনটি জলাশয়ে নামবার জন্য পাথরের সিঁড়ি রয়েছে।
আদিত্য এবার চিন্তায় পড়ে গেল। দেবী বলেছেন সঠিক কূপটি বেছে নিতে হবে। তিনটির মধ্যে কোনটি সঠিক বেছে নেওয়া মুশকিল। মনে পড়লো গুরুদেব বলেছেন রজোগুণ হল সত্ত্বগুণ ও তমোগুণের মধ্যবর্তী অবস্থা। মনে পড়ল শিক্ষাগ্রহণের  সময় সে শিখেছিলো সূর্যের আলোয় লুকিয়ে আছে সাতটি রং। সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রং বেগুনি আর সবচেয়ে দীর্ঘতম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রং লাল। মধ্যবর্তী তরঙ্গদৈর্ঘ্য হলুদ রঙের। যেহেতু রজোগুণ বাকি দুই গুণের মধ্যবর্তী অবস্থা তাই এক্ষেত্রে আদিত্য স্থির করলো সে হলুদ রঙের জল যুক্ত কূপে অবগাহন করবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।
আদিত্য হলুদ বর্ণের কূপে পাথরের সিঁড়ি বেয়ে নামলো। খুব একটা গভীর নয়। জলের গভীরতা কোমর পর্যন্ত। সে মনে মনে গুরুদেব কে প্রণাম করে জলে স্নান করলো। স্নান করে মাথা তোলা মাত্র মনে হল শরীরের সব দুর্বলতা দূর হয়ে গেছে। শরীরটাকে অনেক হালকা ও ঝরঝরে লাগছে। 
সেই নারী কন্ঠে বলে উঠলো "ধন্য তুমি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো। আশীর্বাদ করি তুমি তোমার কাজে সফল হও।"

আদিত্য যে পথে এসেছিল সেই পথে পুনরায় বাইরে এলো। দেখলো গুরুদেব একটি পাথরের ওপর বসে ধ্যানমগ্ন। আদিত্য এসে তার পদস্পর্শ করে প্রণাম করলো। গুরুদেবের ধ্যানভঙ্গ হলো। তিনি হেসে বললেন "প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলো। এখনো অনেক গুলি বাকি। চলো যাওয়া যাক হাতে সময় বেশী নেই। (চলবে)

No comments:

Post a Comment