Crss colum

Sunday, March 12, 2017

বাংলা অনলাইন কল্পবিজ্ঞান - রহস্যময় কালচক্র (প্রথম পর্ব)

মৈনাক ভালো করে চারদিকটা তাকাল.শুধু পাথরের টুকরো ,ছোটো ,বড় .একটু দূরে পাহাড়ের সারি দেখা যাচ্ছে .প্রতিটি পাহাড় শৃঙ্গ বরফ ঢাকা .সন্ধ্যা হয়ে আসছে .দ্রুত কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে.সবার আগে একটা আশ্রয় চাই .এই অজানা উপত্যকায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো উচিত হবে না .মৈনাক একটু দূরে একটা অন্ধকার গুহা মতো দেখতে পেল.দ্রুত পা চালিয়ে ঐ দিকে চললো. কাছে গিয়ে দেখতে পেল গুহা টি বেশ বড়ো. সূর্য প্রায় অস্ত গেছে.পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে আছে.গুহাতে ঢুকে পিঠের রুকস্যাক নামিয়ে প্রথমেই টর্চ বার করে গুহার ভিতরটা দেখে নিলো বেশ বড় গুহা .আলোয় শেষের অংশ দেখা গেলো না . যাই হোক  মৈনাক আজ খুবই ক্লান্ত.সেই সকালে বেরিয়েছে. ব্যাগ থেকে বিস্কুট বার করে খেল.তারপর বোতল থেকে অল্প জল খেলো.কিছুটা জল রেখে দিল .আবার কখন পাওয়া যাবে তার ঠিক নেই তাই ভবিষ্যতের জন্য কিছুটা জল সন্চয় থাক.গুহার একপাশে বিছানা করে শুয়ে পড়ল.এতক্ষণে চাঁদ উঠেছে .সামনের উপত্যকা চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে. আজকের ঘটনা ওর মনে এক এক করে ভিড় করতে থাকলো .ওরা চার বন্ধু - প্রবাল ,রবি ,তমাল,মৈনাক ট্রেকিং এ এসেছিলো. মৈনাক বাদে বাকি তিনজন অনেকবার ট্রেকিং করেছে .মৈনাক এই প্রথম বার এসেছে.জায়গাটা প্রবাল ঠিক করেছে .খুব একটা পরিচিত জায়গা নয় সিকিমে .গ্যংটক থেকে উত্তর পূর্বে তিরিশ কিমি যাবার পর সোটাং বলে একটি গ্রাম সেখান থেকে ট্রেকিং করে উত্তরে বারো কিমি গিয়ে আবার আধখানা চাঁদের মতো বেঁকে গিয়ে অন্য একটি পথে পুনরায় সোটাং ফিরে আসা . ট্রেকিং শুরু হলে মৈনাক ছিলো তৃতীয় জন.প্রথমে দলের নেতা প্রবাল তারপরে রবি তারপর মৈনাক সবশেষে তমাল . দুপুরে এক জায়গায় একটু বিশ্রাম ও খাওয়া .খাবার বলতে বিস্কুট আর চকোলেট .তারপর আবার চলা শুরু .এইবারে মৈনাক রইলো সবার পেছনে .সরু পথ আঁকা বাঁকা ,সামনের সবাই এক একবার চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে .হঠাত্ মৈনাক লক্ষ্য করলো বন্ধুদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না.তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে গেলো. কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ চলার পরেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না .এবারে     মৈনাকের বেশ ভয় করতে লাগলো .আরো একটু এগিয়ে যাবার পর বুঝতে পারলো সে পথ হারিয়েছে .সামনে এক নতুন উপত্যকা এইসব ভাবতে ভাবতে মৈনাক ঘুমিয়ে পড়ল.  সকালের রোদ্দুর মুখে এসে পড়ার পর মৈনাক ধড়পড় করে উঠে পড়লো .খিদে পেয়েছে. গুহার বাইরে বেরিয়ে চারদিকে ভালো করে তাকালো . হঠাত্ একটু দূরে লক্ষ্য পড়লো সরু একটি জলের ধারা পাথরের গা বেয়ে নেমে আসছে .কাল অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় লক্ষ্য পড়েনি .জলের কাছে গিয়ে ব্যাগ থেকে জলের বোতল আর বিস্কুট বার করলো .মুখ হাত ধুয়ে নিলো.এবারে বিস্কুট গুলি খেয়ে পেট ভরে জল খেলো .জলের বোতলে জল ভরে নিলো. তারপর আবার গুহায় ফিরে এলো . ভাবলো চলে যাবার আগে একবার গুহাটিকে ভালো করে দেখে নিই . গুহাটি বেশ বড়. এই দিনের আলোতেও পিছনের দিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না .গুহার শেষ প্রান্তে পৌঁছে  দেখলো কয়েক ধাপ সিঁড়ি নেমে গেছে .ভিতরটা অন্ধকার .মৈনাকের মনে হলো ভিতরের দিকে গুহার আর একটি অংশ আছে. সে ব্যাগ থেকে টর্চ বার করে জ্বাললো . তারপরে আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নামলো . চারদিকে আলো ফেলে দেখলো বেশ বড় জায়গা . ঠিক মাঝখানে একটি শিব লিঙ্গ .এমন শিবের লিঙ্গ মৈনাক আগে কখনো দেখেনি . এত স্বচ্ছ শিব লিঙ্গ হতে পারে ! মনে মনে শিবের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো এক আশ্চর্য্য পাথরের কাঠামো . তিনটি  বালার মতো বৃত্তাকার পাথর পরস্পরের সংলগ্ন .প্রত্যেক টি এক ফুট চওড়া .প্রতিটি বালার মতো পাথরের গায়ে কিছু চিহ্ন খোদাই করা.চিহ্ন গুলি রাশি চক্রের .উপরের বালাটির ও নিচের বালাটির গায়ের খোদিত রাশি চিহ্নগুলি লম্ব ভাবে আছে . কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক মাঝের বালাটি .সেটিও রাশি চক্র খোদাই করা ,কিন্তু সেটি আস্তে আস্তে ঘুরছে .একদম উপরে মেষ রাশির চিহ্ন .নিচের বালাটির গায়েও একই স্হানে মেষ রাশির চিহ্ন .মধ্যের পাথরের বালাটি খুব নিঃশব্দে আস্তে আস্তে ঘুরছে .তার গায়ের খোদিত মেষ রাশির চিহ্নটি যখনই অপর দুইটির সাথে মিলে যাচ্ছে তখনই পাথরের কাঠামোর মাঝের মানুষ গলবার উপযোগী ফাঁকা অংশটি অস্বচ্ছ হয়ে যাচ্ছে .

মৈনাক এই আশ্চর্য্য পাথরের কাঠামোর দিকে চেয়ে ভাবতে লাগলো এটা কি হতে পারে ? হঠাত্ পিছন হতে একটা গম্ভীর শব্দ ভেসে এলো ‘ওটা কালচক্র ‘  .  মৈনাক একমনে তন্ময় হয়ে সেই ঘুরন্ত  পাথরের চক্র গুলির দিকে তাকিয়ে ছিলো .হঠাত্ পিছনের দিক থেকে শব্দ আসায় চমকে তাকালো .দেখল এক সন্ন্যাসী বাইরের গুহা থেকে নেমে আসার সিঁড়ির শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে আছে .উল্টো দিক থেকে আলো পড়েছে বলে মুখ ভালো করে দেখা যাচ্ছে না.এবারে সন্ন্যাসী কাছে এগিয়ে এল.মৈনাক দেখল খুবই বয়স্ক. কিন্তু বয়সের ছাপ মুখ ছাড়া আর কোথাও নেই . এই রহস্যময় আশ্চর্য্য গুহায় সন্ন্যাসীর দেখা পেয়ে মৈনাকের খুবই ভালো লাগলো . সন্ন্যাসী বললো ;তুমি যেটির সামনে দাঁড়িয়ে আছো সেটি কালচক্র .মহাভারতের যুদ্ধের সময় শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ণ বেদব্যাসের অনুরোধে স্বয়ং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা এটি বানিয়েছিলেন .এই কালচক্রের সাহায্যে বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন যুগের যোগী মুক্ত পুরুষরা এই আশ্চর্য্য যুদ্ধ দেখতে এসেছিলো. মহা যুদ্ধের পর বেদব্যাসের  অনুরোধে দেবরাজ ইন্দ্র এই গুহার  মধ্যে লুকিয়ে রাখেন . এইগুহা বারো বত্সর অন্তর তিনদিনের জন্য দৃশ্যমান হয় .এই সময় কোনো একজন উপস্থিত হয় কালচক্রের  ব্যবহারের জন্য.যেমন এখন তুমি উপস্থিত হয়েছো .মৈনাক খুব অবাক হয়ে গেল.এও সম্ভব ! সে বললো  ‘আমি তো পথ হারিয়ে এসে পড়েছি ‘.সন্ন্যাসী উত্তর দিলো “সবাই তাই ভাবে .যুগ যুগ ধরে এটাই হয়ে আসছে.কালচক্র তৈরীর পর দৈববাণী হয়েছিল এটি বারো বত্সরে একবার ব্যবহার করতে হবে নয়তো এর গুণ নষ্ট হয়ে যাবে .সেইজন্য দেবরাজ ইন্দ্র এক মায়ার সৃষ্টি করেন যার সাহায্যে প্রতি বারো বত্সরে একজন উপস্থিত হন .এবং সেই নির্দিষ্ট ব্যাক্তি এটি ব্যবহার না করা পর্যন্ত লোকচক্ষুর অদৃশ্য থাকেন .তাই তুমি এটি ব্যবহার করো .মৈনাক বললো ‘বেশ এটি ব্যবহারের পদ্ধতি দয়া করে আমায় বলুন .’সন্ন্যাসী বললো  ‘প্রথমে ঐ যে শিবলিংগ আছে তাকে প্রণাম করে তার সামনে বসে একুশ বার ‘ ওম নম শিবায়্’ এই মন্ত্র টি জপ কর .তার পর দেখবে ঐ স্বচ্ছ শিবলিংগের গায়ে তোমার নিজের ভাষায় একটি তিন অক্ষরের সংখ্যা ভেসে উঠবে .এরপর কালচক্রের তিনটি পাথরের  চক্রের উর্ধ্ব দিকে মেষ রাশির চিহ্ন হবে তখন মধ্যবর্তী অংশটি অসচ্ছ হবে .ঠিক সেই সময় শিবলিংগের গায়ে দেখা সংখ্যাটি জপ করতে করতে কালচক্রের মধ্যে দিয়ে গলে গেলে অতীত বা ভবিষ্যতের যে কোন সময়ে পৌঁছন যায় .মৈনাক বললো একটা প্রশ্ন আছে .অতীত বা ভবিষ্যত্ কালে গিয়ে যদি আমি বিপদে পড়ি ?তাছাড়া আমি  নিজের সময়ে ফিরবো কি করে? সন্ন্যাসী উত্তরে বললো ,”তুমি নিশ্চিন্তে যাও যে কোন বিপদ থেকে কালচক্র -ই তোমায় আশ্চর্য্য উপায়ে রক্ষা করবে.আর যখন ফেরত আসার ইচ্ছা হবে পুনরায় ‘ ওম নম শিবায়্ ‘এই মন্ত্র টি একুশ বার জপ করলে কালচক্র তোমার সামনে দেখা দেবে .এবং তুমি আগের পাওয়া সংখ্যা টি জপ করতে করতে এর ভেতরে প্রবেশ করলে নিজের সময়ে ফেরত আসবে.                       যাও এখন আমার কথা অনুযায়ী কাজ কর .মৈনাক এবার সন্ন্যাসীর কথা অনুসারে প্রথমে শিবলিংগের সামনে বসে একুশ বার জপ করতে তার সামনে 369 এই সংখ্যা টি ভেসে উঠলো. মৈনাক এবার সন্ন্যাসীকে প্রণাম করে কালচক্রের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো .তারপরে উপরের দিকে তিনটি চক্রের মাথায় মেষ রাশির চিহ্ন আসতেই কালচক্রের মধ্যিখানটা অস্বচ্ছ হলো ঠিক তখন মৈনাক 369 এই সংখ্যা টি জপ করতে করতে কালচক্রের মধ্যে প্রবেশ করলো .একবার শুধু মৈনাকের মনে হলো “ফেরত আসতে পারবো তো ?”

2 comments: