Crss colum

Sunday, March 26, 2017

আটলানটিসের পাথর (দ্বিতীয় পর্ব)

আটলানটিসের আংটি -( দ্বিতীয় পর্ব )
( প্রিয়ব্রতর চিঠি থেকে সুমন আটলানটিসের পাথরের কথা জানতে পারে .আশ্চর্য্য শক্তি এই পাথরের .আটলানটিসের সব জ্ঞান এই পাথরের মধ্যেই লুকিয়ে রাখা আছে .এই পাথরের র যাবতীয় রহস্য একটি পুঁথির মধ্যে গ্রীক ভাষায় লেখা আছে .সেই পুঁথিটির বঙ্গানুবাদ প্রফেসার বাগচীর ভয়ে প্রিয়ব্রত ব্যাঙ্কের লকারে রেখে দেয় . তারপর …..)

পুঁথির অনুবাদ  ---
অবিলম্বে সুমন  ও অর্জুন ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সমেত দেখা করে . ম্যানেজার খুবই ভালো লোক . প্রিয়ব্রত বাবুর দূর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর শুনে খুবই দুঃখ প্রকাশ করলেন.তারপর সুমনের  কাছ  থেকে সব ওয়ারিশন সংক্রান্ত কাগজ পত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র  নিয়ে  চেক করে  সব কিছু সুমনের নামে করার প্রতিশ্রুতি দিলেন .
কয়েকদিন পরের কথা . লকার থেকে মোটা খামে মোড়া পুঁথিটির অনুবাদ আনা হয়েছে .ইতিমধ্যে এক অচেনা ব্যাক্তি সুমনকে ফোনে অনুবাদ টি তাকে দিয়ে দেবার জন্য হুমকি দেয় . সুমন এই উড়ো হুমকিকে গ্রাহ্যই করেনি .গত পরশু রাতে কেউ একজন বাইরের পাঁচিল টপকে গ্রীল ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে .কিন্তু বাড়ীর কাজের লোক অভিরাম সতর্ক থাকায় ও হাঁকডাক করায় পালিয়ে যায় . আজ অয়নবাবু ও অর্জুনের উপস্থিতিতে পুঁথিটি পড়া হবে . অনুবাদটা দিন দুয়েক আগে নিয়ে এলেও সুমন ওটা পড়েনি .আজ সন্ধ্যায় অয়নবাবু ও তার ছেলে  অর্জুন  এলে সুমন গোদরেজ আলমারী থেকে  পুঁথিটির অনুবাদ বার করে নিয়ে এলো .  তারপরে তিনজনে পড়ার ঘরে গিয়ে একটি গোল টেবিলের চারদিকে বসে পড়া শুরু করলো .
" আমি  মেনডিস  , সুদূর মেসিডোনিয়া  থেকে মহামতি আলেকজান্ডারের সাথে  রাজবৈদ্য  হিসাবে এই দেশে আগমন করি .ইহা শুধুই যে কর্মের কারণে তা নয় .তাহার চেয়ে অধিক   জ্ঞান লাভের এবং দেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে .  এই দেশে আসার পর আমি যে   আশ্চর্য্য অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি তা আজ আমি বিবৃত করবো . মৃত্যু আমার শিয়রে . আমি নিজে চিকিৎসক .আমি নিশ্চিত জানি যে ব্যাধিতে আমি আক্রান্ত তার একমাত্র পরিত্রাণের পথ মৃত্যু .মৃত্যুর পদধ্বনি আমি শুনতে পাচ্ছি .তাই এই আশ্চর্য্য অভিজ্ঞতার বিবরণ আমি লিখে রেখে যাচ্ছি .
আমি শিক্ষা লাভ করেছি এথেন্সে .আহা ! আমার সুন্দরী এথেন্স .অসাধারণ গুণী জনের সাহচর্যে আমার শিক্ষা বিকশিত হচ্ছে ,এমন সময় আমার হাতে আসে মহান প্লেটোর একটি বিবরণী .যাতে তিনি এক প্রাচীন সভ্যতা আটলানটিসের কথা লিখেছেন. পরে বীর আলেকজান্ডারের সাথে সিন্ধু নদের উপকণ্ঠে হাজির হলে এখানের এক  জ্ঞানী বৃদ্ধের সাথে আমার পরিচয় হয় .তার কাছে দ্বিতীয়বার আটলানটিসের নাম শুনে আমি চমকে উঠি .সেই বৃদ্ধ আমায় বলেন এখান হতে আরো উত্তরে সিন্ধুর উৎপত্তি স্থানে রয়েছে এক মহান সরোবর  .যার নাম এদেশে মানস সরোবর .সেই মানস সরোবরের পাশেই রয়েছে  অনুপম সূউচ্চ পবিত্র দেবতার বাসভূমি  এক পর্বত .নাম কৈলাস .এই মানস সরোবরের নিম্নদেশে রয়েছে ভূপৃষ্ঠের নিচে এক লুক্কায়িত সভ্যতা .নাম নব আটলানটিস . কৈলাস পর্বত হতে এক জলধারা এসে পড়েছে মানস সরোবরে .ঐ জলধারা ধরে পর্বতের উপরে উঠতে থাকলে এক গুহা মুখের সামনে উপস্থিত হবো .ঐ গুহাই হলো সেই ভূগর্ভ স্থিত সভ্যতার প্রবেশ দুয়ার . আমি মেসিডোনিয়ার অভিজাত বংশের সন্তান . অজানা কে জানার নেশা আমার রক্তে .এই নব আটলানটিসের কথা শুনে তাকে সচক্ষে দেখার নেশায় একদিন বেরিয়ে পড়লাম দুর্গমের পথে .বহু বাধা অতিক্রম করে একদিন হাজির হলাম মানস সরোবরের তীরে .খুঁজে পেলাম সেই গুহামুখ .বিশাল কৈলাস পর্বতের গা বেয়ে নেমে গেছে এক শীর্ণ জলধারা . জলধারা অনুসরণ করে কিছুটা উচ্চতা উঠতেই চোখে পড়লো এক বিশাল পাথরের আড়ালে এক গুহামুখ . পাথর টা থাকায় নিচে থেকে এই গুহাটি কোনো ভাবেই দেখা যায় না . গোল গুহামুখটির উপরে গোল বৃত্তের মধ্যে ত্রিভুজ আঁকা আছে . এই রহস্যময় চিহ্ন দেখে বুঝলাম আমি নব আটলানটিসের প্রবেশ দ্বার হিসাবে যে  গুহাটি খুঁজ ছিলাম এটাই সেটি .সঙ্গে আনা খাবার দিন দুয়েক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো .সন্ধ্যার মুখে গুহামুখ টি খুঁজে পেয়েছিলাম .সেই রাত্রে আর গুহার ভিতর ঢোকার ঝুঁকি নিলাম না . রাত্রে ঝরণার জল খেয়ে শুয়ে পড়লাম .পরের দিন সূর্যের আলো ফোঁটার সাথে সাথে  গুহায় ঢোকার প্রস্তুতি নিলাম .প্রথমে আমার সাথে আনা ছোটো মশাল টি জ্বালিয়ে নিলাম .গুহার ভেতরে অন্ধকার . মশাল সাথে থাকলে দেখার সুবিধা হবে সেই সাথে যদি কোনো জীব জন্তু থাকে তারা আক্রমণের সাহস পাবে না . গুহামুখটি সংকীর্ণ হলেও কিছুটা যাবার পর গুহাটি বেশ চওড়া হয়ে গেছে . লক্ষ্য করলাম গুহার গায়ে অজানা ভাষায় লেখা .বুঝলাম আমি সঠিক জায়গায় এসেছি .এই ভাবে কতক্ষণ চলেছি জানি না .হয়তো বা অর্ধেক দিন  অথবা পুরো দিন .আসলে দুই দিনের ক্ষুধার্ত পেটে চলেছি তাই সময়  জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি .আর পারছিলাম না .গুহার ভিতর দিয়ে নিম্ন অভিমুখে হেঁটেই চলেছি .শেষে মনে হচ্ছিল যে কোনো মুহূর্তে  জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো .ঠিক তখনই একটা মোড় ঘুরেই দেখলাম পথ শেষ .এক বিশাল পাথরের দেওয়াল সামনের পথ জুড়ে .মশালটাও দপ দপ করছে .যে কোনো মুহূর্তে মনে হয় নিভে যাবে .মশালের ক্ষীণ হয়ে আসা আলোয় দেখলাম দেওয়ালের মাঝখানে একটা গর্তের আভাস .বিদ্যুতের চমকের মতো  মনে হলো ওখানে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করার কথা .মনে হওয়া মাত্র ভূমি থেকে একটি পাথর তুলে নিয়ে গায়ের সবচেয়ে জোর প্রয়োগ করে ঐ দেওয়ালের গর্তে আঘাত করলাম .ক্ষুধার্ত শরীরে অতখানি শক্তি খরচ হলে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না .মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম .সেই মুহূর্তে মশালটাও দপ করে উঠে নিভে গেলো .   জ্ঞান  হারিয়ে ফেলার মুহূর্তে শুনতে পেলাম পাথরের দেওয়াল সরে যাবার ঘর ঘর শব্দ.  [ এরপর তৃতীয় পর্বে আটলানটিসের মধ্যে .…]
(দ্বিতীয় পর্ব  সমাপ্ত)


No comments:

Post a Comment