Crss colum

Monday, March 27, 2017

আটলানটিসের পাথর (তৃতীয় পর্ব)

[প্রিয়ব্রতর চিঠি থেকে সুমন আটলানটিসের আশ্চর্য্য আংটির কথা জানতে পারে .প্রিয়ব্রতর করা পুঁথির অনুবাদ থেকে জানতে পারে আলেকজান্ডারের রাজ বৈদ্য মেসিডান বহু কষ্টে মানস সরোবরের নিচে অবস্থিত নব আটলানটিসের প্রবেশ দ্বারে পৌঁছায় .ক্ষুধা তৃষ্ণায়  জ্ঞান হারাবার আগে শুনতে পায় পাথরের দেওয়াল সরে যাবার ঘর ঘর শব্দ .তারপর .….]
চোখ খোলার পর আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে গেলো.আবার চোখ বুজিয়ে ফেললাম .কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে তাকালাম .মনে হলো এক বিশাল ঘরের মধ্যে  শুয়ে আছি . ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক কাজ করা শুরু করলো .মনে পড়লো ,‘আমি মেনডিস .’
আস্তে আস্তে উঠে বসলাম .একটা ছোট্ট ঘরের মধ্যে আমি শুয়ে আছি .মাথার উপর একটা আলোর চাকতি .খুবই অবাক হয়ে গেলাম .আমি আমার প্রভু আলেকজান্ডারের সাথে এই সুদীর্ঘ কাল ব্যাপি অভিযানের সময় আশ্চর্য্য বস্তু দেখেছি কিন্তু এমন অদ্ভুত আলো বিতরণ কারী চাকতি কখনোই দেখিনি .দিনে সূর্যের আলো .রাতে মশাল বা প্রদীপের আলো .এছাড়াও এমন অদ্ভুত আলো বিতরণ কারী কোনো অদ্ভুত চাকতি থাকতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না . এইসব ভাবছি হঠাত দরজা খুলে এক জন লোক ঘরের মধ্যে আমার কাছে এলো .গায়ে অদ্ভুত পোশাক . এসে আমার কাছে অজানা ভাষায় কিছু প্রশ্ন করলো .আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না . ভাবলাম আমার নাম জিজ্ঞাসা করছে .আমি বললাম‘ আমি মেনডিস .’
লোকটি এবারে হেসে আমার নিজের ভাষায়  বললো ‘নব আটলানটিসে তোমায় স্বাগত ,বন্ধু .’আমি অবাক হয়ে বললাম ‘আপনি আমার ভাষায় কথা বলছেন কিভাবে ?’লোকটি উত্তর দিলো ‘ সভ্য জগত কে ভাষা আমরাই শিখিয়েছি .তাদের ভাষা ,উন্নতি ,প্রগতি  সব কিছুর খবরই আমরা রাখি . আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি দক্ষিণের আর্য ভূমি হতে এসেছো . তাই সংস্কৃত ভাষায় প্রশ্ন করেছিলাম .কিন্তু তোমার মুখে গ্রীক ভাষা শুনে বুঝেছি তুমি আমাদের আদি ভূমির কাছাকাছি অঞ্চলের মানুষ .  তুমি এতদুরে আমাদের প্রবেশ দ্বারের কাছে কিভাবে এলে ?’
আমি  তখন বললাম‘ আমি সুদূর আথেন্সে বড় হয়েছি .চিকিত্সা বিদ্যায় পারদর্শীতার কারণে মহান সম্রাটের রাজকীয় বাহিনীর ও সম্রাটের ব্যাক্তিগত চিকিত্সক হিসাবে স্থান পেয়েছি .পূর্বেই পড়াশোনার সময়ে মহান প্লেটোর লেখনী পড়ে আটলানটিসের বিষয়ে জানতে পারি .কৌতূহল একটা ছিলোই .একদিন এক  বৃদ্ধের মুখে এই নব আটলানটিসের কথা শুনি .সচক্ষে দেখার আশায় বেরিয়ে পড়ি. ’ লোকটি এবারে হেসে বললো  'আমি এখানকার শাসক .আমায় সবাই ইন্দ্র বলে .তুমি আমাদের এখানে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে  প্রবেশ করোনি .তাই এই নব আটলানটিসের সব রহস্য তোমার জন্য উন্মুক্ত করবো . কিন্তু তোমায় কথা দিতে হবে তোমার নিজের জগতে ফিরে যাবার পর এই নব আটলানটিসের কথা কোথাও প্রকাশ করা চলবে না . এরপর ইন্দ্র আমায় নিয়ে  প্রথমে একটি মিনারে উঠলো .মিনারের সর্ব্বোচ্চ প্রান্তে উঠে আমায় বললো 'এখান হতে তুমি  সম্পূর্ণ নব আটলানটিস শহর কে দেখতে পাবে .দেখলাম মাটির বহু নিচে দিগন্ত ব্যাপি এক শহর চারদিকে কৃত্রিম আলোয় উদ্ভাসিত.চারদিকে বড় বড় প্রাসাদ.আমি দেখলাম তাদের ইতিহাসের ঘর .সেখানে নাকি তাদের সব কিছু সংরক্ষিত আছে .আরো অনেক কিছু বললো ,অনেক কিছু দেখালো .আমি আমার সীমিত বুদ্ধির দ্বারা সব বুঝলাম না .ইন্দ্র বললো ‘সৃষ্টির আদিতে মানুষ যখন আগুনের ব্যবহার শেখে নি .তখন আমরা অতি উন্নত সভ্যতার সৃষ্টি করেছি. আজ আমাদের শেখানো পদ্ধতিতে মানুষ কৃষিকাজ থেকে  নির্মাণ সব কিছু শিখেছে .' এরপর ইন্দ্র আমায় নিয়ে গেলো তাদের শক্তি ঘরে .দেখলাম বিশাল ঘর নীলাভ আলোয় ভরে আছে . ঘরের মধ্যবর্তী জায়গায় একটি মানুষ সমান স্বচ্ছ বেদীর উপর  উপর একটি  নীল পাথর রাখা আছে .  সেই পাথর থেকে ই এই নীল আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে .  ইন্দ্র বললো' আমাদের আদি ভূমি আটলানটিস যখন সমুদ্রের জলোচ্ছাসে ধ্বংস হয় , তখন আমাদের সব কিছুই নষ্ট হয়ে যায় .  সামান্য কিছুজন এই ভয়ংকর ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পায় .সাথে নিয়ে আসে আমাদের সব  জ্ঞানের আকর এই পাথর .বহু দিনের চেষ্টায় আমাদের জ্ঞানীরা এই  পাথরের মধ্যে সব কিছু সংরক্ষণ করে রেখেছেন .এই পাথর স্বয়ং সম্পূর্ণ .এই পাথর এই বিশ্বের সব জীবিত প্রাণীকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে .এই পাথর অশুভ শক্তির হাতে গেলে সম্পূর্ণ বিশ্বের বিপদ হবে.যিনি এই পাথর পাবেন সব প্রাণী তার দাস হয়ে যাবে .আমরা তাই এই পাথর এই বেদীর উপরে রেখেছি .যে কোন সৃষ্টি বা জীবন ধারণের  প্রয়োজনীয় উপকরণ বা কোনো বিপদ ,সর্বক্ষেত্রেই পাথর আমাদের মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান উতপত্তি করে . '  আমি দেখলাম মাটির নীচে কৃষিকাজ .তাদের অস্ত্র ভাণ্ডার দেখলাম .তারা বললো এই অস্ত্রের সাহায্যে সব কিছু তারা ধ্বংস করে দিতে পারে .
বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর  একদিন তারা আমায় এক দ্রুতগামী উড়ন্ত রথে করে লোকালয়ের কাছে পৌঁছে দেয় .আমি তাদের কথা দিই যে তাদের কথা কাউকে জানাবো না . আজ যখন মৃত্যু আমার শিয়রে তখন মনে হচ্ছে আমার জীবনের গুপ্ত কথা লিখে রেখে যাওয়া উচিত .যাতে ভবিষ্যতের মানুষ তাদের উপযুক্ত হলে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে .”
মেনডিসের পুঁথি এখানেই শেষ .পড়া শেষ হলে সুমন অর্জুনের দিকে তাকালো .তারপর অয়নবাবুর দিকে প্রশ্ন করলো ‘কাকাবাবু  ,সবই তো শুনলেন এখন আমাদের কি করা উচিত .’ অয়নবাবু বললেন‘তোমার বাবা প্রিয়ব্রত আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন .তার স্বভাব ছিলো কোনো কাজে হাত দিলে তা সম্পূর্ণ করা .এখন ছেলে হয়ে তোমার উচিত বাবার অসম্পূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণ করা . তবে এই ব্যাপারে আমার বয়স হয়েছে তাই আমি সাহায্য করতে পারবো না .তবে অর্জুন তোমায় সব রকম সাহায্য করবে .আমি চাই তোমরা দুজনে যত তাড়াতাড়ি পার এই নব আটলানটিস অভিযানে বেরিয়ে পড় .
'
এরপর কয়েকদিন দুই বন্ধু এই অভিযানে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিলো .মানস কৈলাস চীন দেশে .সেখানে যেতে গেলে পাসপোর্ট ভিসা ইত্যাদি চাই .সবচেয়ে সহজ যাওয়ার রাস্তা কোলকাতা থেকে কাঠমান্ডু  প্লেনে .সেখান থেকে  পুনরায় প্লেনে গংগার এয়ার পোর্ট তারপরে জীপে করে লাসা .লাসায় একদিন থাকার পর বিভিন্ন আশেপাশের দর্শনীয় জায়গা যেমন পোতালা প্রাসাদ ইত্যাদি আরো কিছু গুম্ফা ও মঠ  দেখে জীপে করে মানস সরোবর .ওখানে পুজো দেওয়ার পর  যমদ্বার পর্যন্ত জীপে .তারপর শুরু হাঁটা পথে কৈলাস পরিক্রমা .
সুমন ও অর্জুন ঠিক করলো এই পথেই যাবে .যখন হাঁটা পথে কৈলাস পরিক্রমা শুরু হবে ওরা দুজনে তখন কোনোভাবে মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে নব আটলানটিসের প্রবেশ দ্বার খোঁজ করবে .
<এরপর চতুর্থ পর্বে যাত্রা শুরু ..>


No comments:

Post a Comment