Crss colum

Thursday, March 16, 2017

স্বপ্নের সিঁঁড়ি.

  • ব্যাঙ্কে ঢোকার মুখে মেসেজটা এলো.পকেট থেকে চশমা বার করে কাঁচটা মুছে চোখে লাগিয়ে মেসেজটা পড়লো .মেসেজের অর্থ বোঝার পর থরথর করে কাঁপতে লাগলো .রাহুল ব্যাঙ্কের সিঁড়িতেই বসে পড়লো .একজন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল .হঠাত্ রাহুলকে বসেল পড়তে দেখে কাছে এসে বললো ‘কাকাবাবু আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে ?’রাহুল তার দিকে চেয়ে দেখলো সুমনের বয়সী একটি ছেলে . রাহুল চট করে মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে তার দিকে চেয়ে উত্তর দিলো ‘আমি ঠিক আছি .তুমি যাও .’ছেলেটি অবাক চোখে তাকিয়ে উপরে উঠে গেলো.রাহুল আবার মোবাইলটা বার করে মেসেজ টা পড়লো.রাহুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক কোটি দশ হাজার পাঁচশো টাকা জমা পড়েছে . রাহুল আশ্চর্য্য হয়ে গেলো .এত টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা দিলো কে ? ছোটো বেলা থেকেই তাদের কষ্টের জীবন.বাবা চটকলের ক্লার্কের কাজ করতো .বাবা যখন মারা যায় রাহুল তখন সবে বি এসসি পাশ করেছে .এম এসসি ভর্তির আবেদন করেছে.উচ্চশিক্ষা করা আর হলো না .সবাই চটকলের বড় সাহেবকে ধরে বাবার পোস্টে কাজে লাগিয়ে দিলো.সংসারটা তো চালাতে হবে.বছর দুয়েকের মধ্যে মিনতির সাথে বিয়ে তার তিন বছরের মধ্যে সুমন ও রেখার জন্ম .তারপর কত ঝড়ঝাপ্টা গেছে .কতবার মিল বন্ধ হয়েছে.কোনোরকমে সংসার চলেছে .বিয়ের পরেই মিনতিকে নিয়ে রাহুল একবার দীঘা গিয়েছিল.তিনদিন ছিলো .কতো মজা হয়েছিল.রাহুলের মনে আছে সেবার সে মিনতির সাথে কম্পিটিশন করে ফুচকা খেয়েছিলো .রাহুল আটান্নটা ফুচকা খেয়ে মিনতিকে হারিয়ে দিয়েছিলো .তারপর সারারাত হোটেলের ঘরে পেটব্যাথায় ছটফট করেছিলো .মিনতি ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল. আজো সেই সব স্মৃতি রাহুলের মনে ভিড় করে আসে .তারপর থেকে এতগুলি বছর কেটে গেল কোথাও যাওয়া হয় নি .গত মাসে রাহুল রিটায়ার্ড হয়েছে. সামনের মাসে রেখার বিয়ে ঠিক হয়েছে.মিলে পি এফের ফর্ম ফিলাপ করেছিল . রাহুলেরর বন্ধু হরিপদ মেন অফিসের ক্লার্ক .সে বলেছিল ‘তোর চিন্তা নেই দিন কুড়ির মধ্যে টাকা তোর ব্যাঙ্কে ঢুকে যাবে .’ আজ জমানো টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা তুলতে এসেছে. বিয়ের ঘর বুক করতে হবে.পাড়াতেই একটা বাড়ী আছে ,সব অনুষ্ঠানে ভাড়া দেয় .ওটার মালিকের সাথে কথা হয়েছে .বারো চেয়েছিল. শেষে দশে রাজি হয়েছে.আজকেই এডভান্স করে দিতে হবে.তাই সকাল সকাল ব্যাঙ্কে এসেছে .ঢোকার মুখে এই মেসেজ.রাহুল আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ব্যাঙ্কে ঢুকলো.পাশবই খুলে দেখলো এগারো হাজার টাকা আছে .অনেক ভেবে দশ হাজার টাকা তুললো . কিসের টাকা তার নামে জমা হয়েছে না জেনে তোলা ঠিক হবে না .ব্যাঙ্কের কাউন্টার থেকে টাকা আর পাশবইটা হাতে নিয়ে দেখলো তাতেও ব্যালান্স অত টাকাই লেখা আছে . বাইরে এসে একটা রিকশা  নিলো .রিকশায় বসে রাহুল ভাবতে লাগলো এত টাকা তাকে দিলো কে ? পি এফ থেকে এত টাকা পাবার কথা নয় খুব জোর পাঁচ লাখ পাবে .রেখার বিয়ে দিতে এক লাখ লাগবে .ছেলেটি রেখার সাথে একই স্কুলে চাকরী করে .প্রেমের বিয়ে তাই ওরা কিছু চায় নি .কিন্তু মেয়েকে তো সাজিয়ে দিতে হবে .সুমন একটা বেসরকারী চাকরিতে ঢুকেছে . এখনই হাজার দশেক দিচ্ছে .রাহুল ভেবে রেখেছে রেখার বিয়ের পর যা বাঁচবে তা দিয়ে একটা টোটো কিনবে .বাকী টাকা ফিক্সড করে দেবে . এখন হাতে অনেক টাকা  .যদি এই টাকার প্রকৃত মালিক সেই হয় তবে অনেক কিছু করার আছে .মেয়েটার বিয়েটা জমকালো ভাবে দেওয়া যাবে .মিনতির খুব শখ একবার পুরী  যাবে.এতদিন পয়সার অভাবে যাওয়া হয় নি .এবারে শুধু পুরী নয় পুরো উত্তর ভারত বেড়িয়ে আসবে . টোটো কেনার দরকার নেই.মনে মনে হিসাব করলো তিরিশ লাখ টাকা এম আই এসে রাখলে  মাসে চব্বিশ হাজার টাকা সুদ পাবে .তাতে রাজার হালে চলে যাবে .বাকি টাকা চারভাগে ফিক্সড করে দেবে.তার ,মিনতির ,সুমন ও রেখার সমান ভাগ . রাহুলের মনে হলো কোনো দানি ব্যাক্তি গোপনে বিভিন্ন জনকে তার সম্পচত্তি দান  করে দিচ্ছে .সে খুব ভাগ্যবান .এতদিন রাহুল নিজের ভাগ্যকে দোষ দিয়ে এসেছে .আজ মনে হচ্ছে ভাগ্য তাকে শেষ পর্যন্ত ঠকায়নি .বাড়ীর কাছে চলে এসেছে ঠিক তখন ফোনটা এলো .জোরালো আওয়াজে চিন্তার সুত্রটা কেটে গেলো .ফোনটা ধরতে ওপার থেকে একটা গম্ভীর কনঠস্বর বললো ‘আমি একটু রাহুল চক্রবর্তীর সাথে কথা বলতে চাই .’ রাহুল বললো ‘আমি রাহুল চক্রবর্তী কথা বলছি .’এবার ওপারের লোকটি খুব মোলায়েম ভাবে বললো ‘আমি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নন্দী বাবু বলছি  ,আমাদের এক কর্মচারী ভুল করে আপনার

অ্যাকাউন্টে এক কোটি দশ হাজার পাঁচশো টাকা ট্রান্সফার করে ফেলেছে .আসলে আপনার অ্যাকাউন্টে পাঁচ লাখ চল্লিশ হাজার টাকা ট্রান্সফার হওয়ার কথা .আগের টাকা অন্য জনের অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার কথা .একটু আগে ভুলটা ধরা পড়েছে .ইতিমধ্যেই আপনি আপনার পাশবই আপ টু ডেট করে নিয়ে গেছেন .আমরা আন্তরিক দুঃখিতো  .আপনি একবার ব্যাঙ্কে আসুন আমরা একটা সংশোধনী চিঠি তৈরী করেছি তাতে আপনার সই লাগবে .’রাহুল ফোনটা রেখে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো তারপর রিকশাওলাকে বললো ‘রিকশা ঘোরা .একবার ব্যাঙ্কে যাবো .’

No comments:

Post a Comment