Crss colum

Tuesday, November 12, 2019

রক্ষক ১০

                  (১৪)

বজ্র ড্রাগনের দেশ।

হিমালয়ের কোলে এই দেশটিকে বলা হয় প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড ‌। বলা হয়ে থাকে এটি এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে সুখী দেশ। সহজ সরল এই দেশের মানুষরা। জনসংখ্যার অধিকাংশ লোকই হল বৌদ্ধধর্মে র। এই দেশের সত্তর শতাংশ জমি সুন্দর সবুজ ঘন জঙ্গলে ঢাকা। দেশটির নাম ভুটান।

উত্তর দিকে জনপ্রাণী হীন এক অঞ্চল। আদিত্য গুরুদেব তমোঘ্ন র সাথে এগিয়ে চলেছে লামডিং এর সন্ধানে। আশেপাশে একশো কিলোমিটারের মধ্যে কোন জনবসতি নেই। চারিদিকে বিশাল বিশাল উঁচু পর্বতশ্রেণী। প্রতিটি পর্বতের মাথায় সাদা বরফের পুরু আস্তরণ। সেই ধূধূ করা শীতল মরুভূমির  ন্যায় প্রান্তরে দুইটি মানুষ চলেছে এক লুকানো গুম্ফার সন্ধানে। নাম লামডিং। জনশ্রুতি আছে যে এই লামডিং গুম্ফা তৈরি করেছে অশরীরী কিছু অপদেবতা। এই গুম্ফায় যদি কোন মানুষ বা অন্য কোন জীব প্রবেশ করে তবে তার মৃত্যু নিশ্চিত। তারচেয়েও বড় ব্যাপার এই গুম্ফাকে খুঁজে বার করা সহজ নয়। প্রথমে খুঁজে পেতে হবে তর্জনী পাহাড়। সেই তর্জনী পাহাড়ের তর্জনী যেদিকে নির্দেশ করবে সেই পথেই লুকানো রয়েছে লামডিং গুম্ফা।
আদিত্য গুরুদেব কে বললো "গুরুদেব , আপনি সত্ত্বগুণের কূপ সম্পর্কে কিছু উপদেশ দিন। কিছুক্ষণ আগে আপনি বলছিলেন যে প্রথমে আমাদের তর্জনী পাহাড় খুঁজে বার করতে হবে। কি এই তর্জনী পাহাড় ? কেনইবা এটি খুঁজে বার করতে হবে ? সত্ত্বগুণের কূপের সাথে এর সম্পর্ক কি? দয়া করে আমার কৌতুহল নিরসন করুন।"
তমোঘ্ন বললেন " এই পথে আরও কিছুটা যাওয়ার পর দেখতে পাবে এক মুষ্টিবদ্ধ হাতের মত শৃঙ্গযুক্ত অনুচ্চ পাহাড়। সেই পাহাড়ের মাথায় কম উচ্চতার কারণে বরফ জমে না। এছাড়া কম উচ্চতা হওয়ারজন্য সেই পাহাড়ের এর কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত তাকে দূর হতে শনাক্ত করা যায় না। পাহাড়ের চূড়া টি দেখতে অনেকটা যেন মুষ্টিবদ্ধ হাত। আর একটি তর্জনীর মত পাথরের টুকরো যেন মুষ্টিবদ্ধ হাত থেকে একটি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করে আছে। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য সেই তর্জনী পাহাড় খুঁজে বার করা। তারপর সেই তর্জনী পাহাড়ের তর্জনীর নির্দেশিত দিকে এগিয়ে চলতে হবে। যেতে যেতে আমরা একটি ঝর্ণার সন্ধান পাবো। সেই ঝর্ণার কাছেই লুকানো আছে লামডিং গুম্ফা। আর এই লামডিং গুম্ফার মধ্যেই রয়েছে সত্ত্বগুণের কূপ। এই গুম্ফায় প্রবেশ করামাত্র এখানকার রক্ষণ কারী শক্তি মানুষের জ্ঞানের , সত্যনিষ্ঠা র ও দৃঢ়তার পরীক্ষা নেন। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনা তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এখানকার রক্ষণ কারী শক্তির নাম ব্রাহ্মী শক্তি। পূর্বে  রজোগুণের কূপে অবগাহন করার আগে যে দেবী তোমাকে বাধা প্রদান করছিল তিনি ছিলেন নারায়নী শক্তি। আর তমোগুণের কুপের রক্ষাকারী শক্তি হল গৌরী। প্রতিটি শক্তির কাজ হল তিন গুণকে অযোগ্য অধিকারীর হাত থেকে রক্ষা করা। সৃষ্টির প্রারম্ভে বিশ্ব চৈতন্য  নিজের নির্গুণ অবস্থা থেকে সগুণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি করার জন্য নিজের সত্তাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন, যার এক ভাগ পুরুষ ও অন্য ভাগ প্রকৃতি। বিজ্ঞানের ভাষায় বিশ্ব চৈতন্যের পুরুষ রূপ হল স্পেস বা স্থান। আর প্রকৃতির রূপ হল এনার্জি। রজোগুণের কূপ আসলে ম্যাটার বা পদার্থের প্রতীক। তাই রজোগুণের কূপে অবগাহন করে তুমি সমগ্র পদার্থের উপর অধিকার পেয়েছো। রজোগুণের কূপ থেকে তুমি যে অষ্টসিদ্ধি পেয়েছ তার সম্পর্কে বিস্তারিত বলছি ।

অষ্ট সিদ্ধি

1. অণিমা, 2. মহিমা, 3. লঘিমা, 4. গরিমা, 5. প্রাপ্তি, 6. প্রাকাম্য, 7. ঈশিতা, 8. বশিতা

এই আট প্রকার সিদ্ধির বৈশিষ্ট গুলো হলোঃ-

1. অনিমা :-  ইচ্ছা করলেই অনুর মত ক্ষুদ্র আকার ধারন করতে পারেন অথবা নিজেকে শূণ্য রুপে পরিণত করতে পারেন...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "অনিমা"...!!

2. মহিমা :- তিনি ইচ্ছামতো নিজের আকার বাড়াতে পারতেন এবং যে কোনও জড়রুপ ধারণ করতে পারেন...!! এই ধরনের সিদ্ধি অর্জনকে বলে "মহিমা"...!!

3. লঘিমা :- তিনি ইচ্ছামতো দেহের ওজন হালকা করে জলের উপর হেঁটে যেতে বা শূন্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "লঘিমা"...!!

4. গরিমা:- তিনি নিজের ওজন ইচ্ছেমত বৃদ্ধি করতে পারেন...!! এই সিদ্ধি অর্জনকে বলে "গরিমা"...!!

5. প্রাপ্তি :- তিনি যে কোনও স্থান থেকে যা ইচ্ছা, তাই প্ৰাপ্ত করতে পারেন...!! অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞানও নিজের মুষ্টিবদ্ধ করতে পারেন...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "প্ৰাপ্তি"...!!

6. প্রাকাম্য :- কোনও বাসনা চরিতাৰ্থ করতে এবং কখনও নিরাশ না হওয়ার জন্য যে সিদ্ধি অর্জন করতে হয় তাকে বলে "প্রাকাম্য"...!!

7. ঈশিতা :- তিনি কোনও স্থানে কিছু অদ্ভুত জিনিষ সৃষ্টি করতে পারেন বা ইচ্ছানুসারে কোন জিনিস ধ্বংসও করতে পারেন...!! সৃষ্টির নবকিছু আর্বিভাব ও ধ্বংস তাঁর ক্ষমতার আওতায়...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "ঈশিতা"...!!

8. বশিতা :- তিনি জড় উপাদান গুলোকে ইচ্ছা অনুসারে নিয়ন্ত্ৰণ করতে পারেন...!! সৃষ্টির প্রতিটি জীবকে নিজের বশীভূত করতে পারেন মুহূর্তের মধ্যেই...!! এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে "বশিতা"...!!

সুতরাং বুঝতেই পারছ রজোগুণের কূপ তোমাকে জড়জগতের উপর বা ম্যাটারের উপর প্রভুত্ব দিয়েছে। তবে এখানে একটি শর্ত আছে। সাধক যেমন অষ্টসিদ্ধি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন তুমি তেমনি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে না কেবলমাত্র জগতের কল্যাণে তুমি এই অষ্টসিদ্ধি ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে।

এবারে তোমাকে সত্ত্বগুণের কূপে অবগাহন করে পুরুষ বা স্পেসের বা স্থানের উপর অধিকার কায়েম করতে হবে। স্পেসের উপর অধিকার পেলে তুমি যে কোন স্থানে অনায়াসে পৌঁছতে পারবে। সেই সঙ্গে ইচ্ছামত অন্য প্রাণী অথবা বস্তুকে অন্যস্থানে পাঠিয়ে দিতে পারবে। পরবর্তীকালে তমোগুণের কূপে অবগাহন করে তুমি সময়ের ওপর কর্তৃত্ব পাবে যার সাহায্যে প্রয়োজনমতো যেকোনো সময় রেখায়  (স্পেস -টাইমে) গমন করতে পারবে।

এবারে তোমাকে তমোগুণের কূপ সম্পর্কে কিছু কথা বলি। তমোগুণের কূপ আসলে শক্তির (এনার্জি) প্রতীক। এনার্জি বা শক্তি দুই ধরনের। প্রথমত যে শক্তি আমরা সাধারণত দেখতে পাই । এইগুলো শুভশক্তি। দ্বিতীয়তঃ রয়েছে পরাশক্তি বা ডার্ক এনার্জি। এই ডার্ক এনার্জি খুব ভয়ঙ্কর।একে সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে জগতের মঙ্গল হবে কিন্তু এর অপপ্রয়োগের ফলে জগত ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে পারে। তাই তমোগুণের কূপে তোমাকে সর্বোচ্চ পরীক্ষার সামনে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।"

ওই দেখো আমরা তর্জনী পাহাড়ের সামনে এসে গেছি।ওইযে তর্জনীর মত একটি পাথর একটি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করছে। ওই দিকেই রয়েছে লামডিং গুম্ফা। জনপ্রাণীহীন  সেই গুম্ফায় বহু রহস্য অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য। চলো, আরেকটু পা চালিয়ে। 

(ক্রমশ)(অষ্ট সিদ্ধি সম্পর্কিত তথ্যাবলী অন্য জায়গা থেকে সংগৃহীত করা)


1 comment: