Crss colum

Sunday, March 12, 2017

বাংলা অনলাইন গল্প - ফাঁদ ।

বিপাশা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে .আশেপাশে অনেক মানুষের ভিড়ে তাকে কেউ খেয়াল করছে না  .সকলে পুজো মন্ডপে আনন্দ করতে ব্যাস্ত .এই শরত পল্লী পুজো মন্ডপে এই  কয়েক বত্সর  ভালোই ভিড় হচ্ছে .গত দুই বত্সর নাকি কোন এক বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের বিচারে প্রথম হয়েছে . আজ মহানবমী .শেষের বেলায় ভিড় একটু বেশী .যদি কেউ একটু খেয়াল করতো  তবে দেখতে পেতো একটি মেয়ে সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত আটটা  পর্যন্ত মন্ডপ থেকেব একটু দূরে পার্কের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে . আসলে বিপাশা অনিমেষের জন্য দাঁড়িয়ে আছে . ফোনে কথা হয়েছে .কিন্তু  অনিমেষ এখনো এলো না . মাস কয়েক আগের কথা .বিপাশাদের হোটেলে খুব ভিড় . দুপুর বেলায় বারোটা থেকে দুটো পর্যন্ত ভাত খাবার কাস্টমার বেশী . কলেজ না থাকলে বিপাশা বাবাকে সাহায্য করে .অনিমেষ সেদিন প্রথম দুপুরে খেতে এসেছিল.একটা সবজি ভাত ও ডিমের ওমলেটের অর্ডার দিয়েছিল. বিপাশা ডিমের ওমলেট ভাজতে গিয়ে লক্ষ্য করলো ডিম ফুরিয়ে গেছে .বাবাকে বলতে বাবা বললো তুই নিতাইদার দোকানে ফোন করে দে ওদের কাজের বয়টা এক্ষুণি দিয়ে যাবে .বাবার ফোনটা নিয়ে ফোন করতে গিয়ে দেখলো চার্জ নেই .তখন হোটেলের পিছনের দিকে ওদের থাকার ঘর থেকে নিজের ফোনটা এনে  কথা বলতে গিয়ে দেখলো টকটাইম নেই .তখন বাবাকে বললো ‘ বাবা ব্যালেন্স নেই আমি চট করে টাকা ভরে নিয়ে আসছি .’ওদের এইসব কথা অনিমেষ শুনছিল,সে হঠাত্ নিজে থেকেই বললো ‘কোথাও যেতে হবে না .আমায় আপনার নাম্বার বলুন আমি রিচার্জ করে দিচ্ছি .’ সেই কথা শুরু .তারপর প্রতিদিন অনিমেষের সাথে দেখা হতো দুপুরে .বিপাশা প্রতিদিন বাবাকে সাহায্য করতে আসতো , কিন্তু মন পড়ে থাকতো কখন অনিমেষ আসবে .অনিমেষ আসতো দুটো নাগাদ .লাল বাইকটা হোটেলের বাইরে পার্ক করে এসে কোণের টেবিলে বসতো .মিষ্টি হেসে খাবার চাইতো .বিপাশাই অনিমেষকে সার্ভ করতো. আস্তে  আস্তে পরিচয় ,পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা .অনিমেষ একটা টেলিকম কোম্পানীর মার্কেটিং এজেন্ট .এত অল্পদিনের মধ্যেই বিপাশা এতটা ভালোবেসে ফেলবে বুঝতে পারেনি .কয়েক দিন ধরেই মনে হচ্ছে ওকে ছাড়া জীবন বৃথা .বিপাশা পরশুদিন মাকে অনিমেষের কথা বলেছিল.মা বাবাকে বলতেই অশান্তি শুরু .বাবা কিছুতেই প্রেমের বিবাহ মেনে নেবে না .বাবার ধারণা সব মেয়েরাই বোকা আর ছেলেগুলো ফাঁদ পেতে রেখেছে .কিছুতেই আশান্তি কমে নি উল্টে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে . শেষে বিকেলবেলায় অনিমেষকে ফোন করে সব কথা বলতে বলতে বিপাশা কেঁদে ফেলেছে. অনিমেষ তাকে বলেছে চিরকালের মতো ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে .এই শরত পল্লীর মাঠে তাদের আগেও দেখা হয়েছে তাই এখানেই দেখা করতে বলেছে .আজই অনিমেষের এক বন্ধুর বাড়ী বিয়ে করে তাদের সল্ট লেকের বাড়ী নিয়ে যাবে .অনিমেষ ফোনে জানিয়েছে তার মা বাবা বিপাশাকে মেনে নিতে রাজী .কিন্তু রাত সাড়ে আটটা বাজতে চললো অনিমেষ এখনো আসছে না কেন ?বিপাশা আরেকবার ফোন করলো .ফোনটা ধরে অনিমেষ বললো ‘বিপু আমি পনের মিনিটের মধ্যেই যাচ্ছি .বিয়ের সব আয়োজন করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেলো .পালিয়ে বিয়ে করছি বলে তো আর যেমন তেমন করতে পারি না , যা হবে সব শাস্ত্র মেনেই হবে .’                ফোনটা কেটে দিয়ে অনিমেষ বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটির দিকে চেয়ে বললো ‘লিলি ডার্লিং আবার কালকে দেখা হবে .’ ঘরের বাইরে এসে দেখলো কমলা মাসি দাঁড়িয়ে.কমলা মাসি এই কুঠির সব মেয়ের মালকিন .অনিমেষ তার মনজয়ী হাসি হেসে বললো ‘এখন একটাকে আনতে যাচ্ছি .ওপরে তিনতলার রুমটা রেডী রেখো.আগের মেয়েটার জন্য পেমেন্ট এখনো বাকী রেখেছো এবারে দুটোর ক্যাশ একসঙ্গে চাই .’কমলা মাসি সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো .অনিমেষ ঘরের বাইরে এসে বাইকে স্টার্ট দিলো. (শেষ)

1 comment: